ধর্ষিতা বউ পর্ব-১০

0
839

#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা

#১০

__ঝিনুক আর মিনু অরণীকে দেখে আসার কথা শুনেই পরের দিনই বাপের বাড়ীতে চলে এলো।মিনুরর ৩ বছর বিয়ে হয়েছে। তার সংসার নিয়ে ভালোই কাঁটছে তার দিন।ঝিনুকের মেয়ে রুমকি বয়স ৫ বছর কিন্তু কথা শুনলে ৬০ বছরকেও হার মানায়।তার দুই বাড়ীতেই রাজত্ব। রুমকির দাদার বাড়ীতে রুমকি ছাড়া আর ছোটো বাচ্চা নেই। নানার বাড়ীতেও তাই।সবার আদরের রুমকি।নানার বাড়ীতে এলে সারাক্ষণ সুমির কাছেই থাকে।তার যতো আবদার সুমি আর আয়ানের কাছেই।আজ রাতে রুমকি সুমির হাতে খাবে বলেই জিদ ধরেছে।ঝিনুক খাবারের প্লেট নিয়ে পিছন পিছন দৌঁড়াচ্ছে,

রুমকি -আম্মু আমি তোমার হাতে খাবো না। মামনি কে ডাকো আমি তার হাতেই খাবো।

মিনু আর আয়েশা বেগম মা মেয়ের কান্ড দেখে হাঁসতে লাগলো।

আয়েশ বেগম -ঝিনুক! ওর সাথে জোরাজোরি করছিস কেনো?একটু পর সুমি আর আয়ান চলে আসবে শপিং থেকে।তারপর সুমি এসেই খাইয়ে দিবে। কথাটা শেষ করতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

মিনু -আম্মু তুমি বসো আমি দরজা খুলছি।

মিনুকে দেখে আয়ান অবাক হয়ে তোরা কখন এলি?

মিনু- কেন তোকে ভাবী বলেনি আমরা এসেছি।

সুমি ভিতরে আসতে আসতে না বলিনি।আমি ছেয়েছি ওকে একটু সারপ্রাইজ দিবো।
ঝিনুক আর মিনু এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে,
ঝিনুক -কেমন আছিস তুই।একটু আমাকে দেখতেই যাস না।ফোনে দুই এক মিনিট কথা বলে দ্বায়িত্ব গুলো ঝেড়ে ফেলছিস।এখনি এই অবস্থা বিয়ের পর তো ফোনই দিবিনা।

আয়ান -আপু তুই আমাকে ভুল বুজছিস।আমি সময় পাই না।(সুমির দিকে তাকিয়ে) ভাবী তুমি বলো আমি সময় পাই?

রুমকি -ছাড়ো তো আম্মুর কথা।তোমার ছোটো আম্মু যে এইখানে দাঁড়িয়ে আছে তা কি তোমার খেয়াল আছে?

আয়ান -আমি একদমি ভুলে গেছি ছোটো আম্মু। তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও।কথাটা বলতে বলতে রুমকিকে কোলে তুলে নিলো।

রুমকি -ওকে ওকে আজকের মতো ক্ষমা করে দিলাম।

আয়েশা বেগম কাজের লোক রফিক কে চা দিতে বললো সবাইকে।আয়ান শুনে বললো আম্মু আমি চা খাবোনা আমাকে কফি দিতে বলো।
মিনু -আম্মুউউউউ!!!! কয়েকদিন পর তোমার আর এতো কিছু খেয়াল রাখতে হবে না।এই বাড়ীতে যে আসছে সেই খেয়াল রাখবে।

আয়ান মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো ছোটো আপু তুই কি মনে করেছিস যে আসছে তার জন্য কি সব পাল্টে যাবে নাকি।আয়ানের কিছুই পাল্টাবে না।

সুমি -ঝিনুক আপু জানো? আয়ানের বউ দেখতে সত্যিই অনেক সুন্দর তবে বড় বোন টা কে আরো বেশী ভালো লাগে।

আয়ান -বড় বোন! বড় বোন আমি তো দেখিনি।তুমি দেখেছো? কিন্তু আমাদের সামনে আসলো নাতো।

সুমি -হ্যাঁ সেটা আমিও ভাবছি।আমি ও দেখতাম না যদি আমি উঠে গিয়ে বাসাটা ঘুরে না দেখতাম। জানো আমি যখন ওর রুমে গেলাম একটাও কথা বললোনা।
মুছকি একটা হাঁসি দিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।পরে মেয়ের ভাইকে জিজ্ঞাস করলাম মেয়েটা কে এবং কথা বললো না কেন?সে বললো আমার বোন ও কারো সাথে কথা বলেনা।জানো কিছু একটা আছে হয়তো আমরা জানি না।

আয়েশা বেগম -সুমি! এইগুলো ভাবার দরকার নেই সবার পরিবারে কম বেশী কিছু ঘটনা থাকে।আজকের পর আর এইসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করার দরকার নেই।
রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে আবিদ চৌধুরী বসতে বললো সবাইকে।

আবিদ চৌধুরী -সবাইকে থাকতে বলেছি কারণ আমি আর আকাশ সন্ধ্যায় মেয়েদের বাড়ীতে গিয়ে পাকা কথা দিয়ে আসছি সামনের সোমবার বিয়ে।মেয়েদের বাড়ীতে একসাথে দুইটো বিয়ে।

ঝিনুক -আব্বু কি বলো আমরা দুই বোন তো এখনো মেয়েই দেখলাম না। আর আজ বুধবার আর মাত্র ৪ দিন পর।

সুমি-আব্বু আমরা কি এতো কিছু এতো তাড়াতাড়ি সামাল দিতে পারবো?
আয়ান মনে মনে ভাবছে কেমন মেয়েরে বাবা! একটা ফোন ও দিলোনা।অন্য কোনো মেয়ে হলে কতো বার যে ফোন দিতো হিসাব ছাড়া।আর এই মেয়ে একটা কথাও বললো না।আচ্ছা শুধু বিয়েটা হতে দাও তারপর দেখাবো আয়ান চৌধুরী কী!

আবিদ চৌধুরী আয়ানের দিকে তাকিয়ে তোমার কিছু বলার আছে?

আকাশ -আব্বু ও আবার কি বলবে? ও শুধু এখন বিয়ে জন্য প্রস্তুত নিবে।
আয়ান কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো।

সুমি -রুমকি চলো আজ তুমি আমাদের সাথে ঘুমাবে।
রুমকি -ওকে মামনি।(সুমির হাত ধরে) টাটা আম্মু গুড নাইট।

আবিদ চৌধুরী ঝিনুক আর মিনুকে বললো,জামাইরা কখন আসবে?

ঝিনুক -আব্বু! ও বলছে বিয়ের আগের দিন ঠিক চলে আসবে।আগেই আসতো কাজের জন্য আসতে পারবেনা।

আবিদ চৌধুরী -মিনু তুমি কিছু বলছো না যে?

মিনু -আব্বু! কলেজ অফ করে তো আর আসতে পারবেনা।আমি বলেছি বিয়ের তারিখ পড়লেই ফোন দিবো ও চলে আসবে।

আবিদ চৌধুরী -ঠিক আছে তাহলে আর কি সবাই ঘুমাতে যাও কথাটা বলেই তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন।

প্রাপ্তিদের বাড়ীতে মেহমানের আনাগোনা তেমনি আয়ান আর সিয়ামদের বাড়ীতেও।প্রাপ্তির মামীরা চাচীরা সবাই কাজ করছে প্রাপ্তির মায়ের সাথে। প্রাপ্তির মনে একটাই চিন্তা আমার ব্যাপারে ভাইয়া কি ওদের সব জানিয়েছে? ভাইয়া তো বলেছে জানাবে। আচ্ছা সেইদিন অরণীর ব্যাপার আমার কাছে ভালো লাগলো না।অরণী কি সিয়াম কে চিনে।আমার বিয়েটা ঠিক হওয়ার পর থেকেই মন মরা হয়ে আছে।যে অরণী আমার বিয়ে নিয়ে কতো প্লান করতো আর সে অরণী আমার সাথেও তেমন কথা বলে না।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে প্রাপ্তি উঠে গিয়ে অরণীর রুমে গেলো।অরণী খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে আর ভাবছে কি করবো আমি? সিয়ামকে আমি কখনো ভুলতে পারবোনা আর ওই আয়ান না কি, ওই ছেলের সাথেও সংসার করতে পারবোনা।প্রাপ্তি অরণী পাশে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রাখতেই অরণী চমকে উঠে বললো আরে আপু তুই?

প্রাপ্তি -হুম আমি! কি ভাবছিস এতো দেওয়ানা হয়ে? মনে হচ্ছে রাজ্যের চিন্তা তোর মাথায়।

অরণী -নাহ্ আপু কিছু ভাবছিনা।তুই কেমনে কেমনে এই রুমে?

প্রাপ্তি দুইদিন পরতো তোর সাথে তেমন সময় কাটাতে পারবোনা। আচ্ছা অরণী সিয়াম কে তুই আগে থেকে ছিনিস তাইনা?

অরণী প্রাপ্তির এমন প্রশ্ন শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আ আ আ পু পু,,,, কি কি,,, ব ব ব লছি স স?
প্রাপ্তি -তুই এইরকম তোতলাচ্ছিস কেনো?
আমি তোকে একটা প্রশ্ন করলাম মাত্র।

অরণী ভাবছে সরি আপু এই মিথ্যা অভিনয়টা আমাকে করতেই হবে।শুধু তোকে ভালো রাখার জন্য।

প্রাপ্তি -কি ভাবছিস এতো?

অরণী -আমি কি করে চিনবো বল? ধুর এই সব বাদ দে। শুননা আপু! তুই ওই বাড়ীতে গেলে তুই আমাকে রোজ একবার করে ফোন দিবি।কি! দিবি তো?

প্রাপ্তি হাঁসি দিয়ে অরণীকে জড়িয়ে ধরে হুম দিবো।আসিফ এসে দরজায় দাঁড়িয়ে বাহ্ ভালোই তো, আমাকে কেউ ফোন দিবেনা? আমাকে পর করে দিলি?
প্রাপ্তি অরণীকে ছেড়ে দিয়ে তুই আমার সব রে ভাইয়া।তুই না থাকলে তো আমি কতো আগেই হারিয়ে যেতাম।

আসিফ -আবার শুরু করলি? খুশীর এই দুইটা দিনে পুরোনো কোনো অতীত নয়।কাল তোদের গাঁয়ে হলুদ আমার কতো কাজ পড়ে আছে তোরা গল্প কর আমি আসছি।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here