ধর্ষিতা বউ পর্ব-১৬

0
727

#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা

#১৬

___সবাই প্রাপ্তির জন্য কান্নাকাটি করছে এতে প্রাপ্তির কোনো কুরুক্ষেপ নেই।প্রাপ্তি মনে মনে ভাবছে নিজের যে বিপদ যে নিজে ডেকে আনতে পারে সেটা এই ছেলেকে না দেখলে বুজতামই না।মিঃ আয়ান আপনি হয়তো বড়লোক বাবার ছেলে বিয়েটা আপনার কাছে ছেলে খেলা হয়তো মনে হয়েছে।নাকি নিজেকে সবার কাছে মহৎ সাজার জন্য বিয়ে করেছেন সেটা আল্লাহ ভালো জানে।আয়ান প্রাপ্তির কানের কাছে এসে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো মিসেস আয়ান চৌধরী আপনি মনে মনে যা ভাবছেন তা ঠিক নয়। আমি কারো কাছে মহৎ সাজার চেষ্টা করিনি।আপনাকে ভালোবেসেই বিয়েটা করেছি।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে তাকিয়ে,এই কি করে জানলো আমি কি ভাবছি?মানুষের মনের কথা পড়তে পারে নাকি?

আকাশ আসিফকে ডেকে এনে বললো, আসিফ এমনিতে অনেক দেরী হয়ে গেছে। এইবার তো আমাদের যেতে হবে।আমাদের গাড়ী এসে গেছে প্রাপ্তিকে বিদায় দেওয়ার ব্যবস্থা করো।

আসিফ -হ্যাঁ ভাইয়া দিচ্ছি।

সুমি, ঝিনুক, মিনু যে বিয়ে নিয়ে এতো আনন্দ ছিলো সেই বিয়েতে তারা মন মরা হয়ে আছে।

রুমকি ঝিনুককে চুপচাপ থেকতে দেখে নিহাদ কে বলতে লাগলো,বাবাই এই নতুন বউটা ভালো না?সবাই কেনো এমন কররছে?

নিহাদ -না মা! নতুন বউটা অনেক ভালো।নতুন বউ এখন আমাদের সাথে চলে যাবে তাই সবার মন খারাপ।

সুমি এসে প্রাপ্তির হাত ধরে এসো আমার সাথে আসো, সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্রাপ্তিকে গাড়ীতে বসালো সুমি।নিলিমা বেগম মেয়ের নিস্তব্ধতা দেখে আজাদ সাহেবকে বললো দেখোছো মেয়ে কেমন জানি হয়ে গেছে।বিয়েটা দিয়ে কোনো ভুল করলাম নাতো? মেয়েটা কারো সাথে একটা কথাও বললো না।

আজাদ সাহেব আয়ানকে জড়িয়ে ধরে বাবা আয়ান তোমাকে বিশ্বাস করেই কিন্তু মেয়েটা তোমার হাতে তুলে দিলাম।তুমি তো সবি জেনেছো এবং জেনে শুনেই বিয়ে করেছো মেয়েটা অনেক গম্ভীর কাউকে শত কষ্টেও মুখ ফুটে কিছু বলেনা তাই বলছি মেয়েটার দিকে একটু খেয়াল রেখো। প্রাপ্তির বাবার কথা শুনে আয়ান বললো আপনি চিন্তা করবেন না।

সুমি মুছকি হাঁসি দিয়ে,আংকেল আপনি চিন্তা করবেন না আমরা সবাইতো আছিই।

আসিফ -ভাবী প্লিজ একটু খেয়াল রাখবেন।

সুমি -বললাম তো আসিফ কোনো চিন্তা করো না।আমরা সবাই মিলেই দেখবো।
প্রাপ্তি গাড়ীর ভিতরেই বসে চোখের পানি গুলোকে লুকানোর চেষ্টা করছে,আসিফ গাড়ী ভেতরে ঢুকে প্রাপ্তির চোখ গুলোকে মুছে আমি জানি তুই রাগ করে আছিস আমার উপর তাইনা? প্রাপ্তি বিশ্বাস কর আমি সবসময় চাই তুই ভালো থাকবি তুই সুখে থাকবি।আমার মনে হচ্ছে তোকে ভালো রাখার মানুষের কাছেই তোকে তুলে দিলাম।তুই আমার কথা কোনো একদিন মিলিয়ে নিস তোকে এই মানুষ টাই তোর অতীতকে ভুলিয়ে দিবে।(প্রাপ্তি কিছু বলছে না শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।)প্রাপ্তি! লক্ষ্মী বোন যাওয়ার আগেও আমার সাথে কথা বলবিনা? রাগ করেই থাকবি? কথাটা বলতেই প্রাপ্তি আসিফ কে জড়িয়ে ধরে ভাইয়া! আমি তোকে ছেড়ে যেতে পারবোনা। তুই ছাড়া আমাকে কেউ বুজেনা।(আসিফ প্রাপ্তির মাথা উঠিয়ে চোখ মুছে) কাঁদতে কাঁদতে কি করেছিস চেহারাটার।
আকাশ গাড়ীর সামনে এগিয়ে এসে, আসিফ আমাদের তো এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে একটু তাড়াতাড়ি করো।

আসিফ প্রাপ্তিকে বসিয়ে নিজে বেরিয়ে এসে আয়ান তুমি বসো।
সব গুলো গাড়ী আগেই চলতে শুরু করলো।শুধু আয়ানের গাড়ীটাই বাকী ছিলো। আয়ান উঠে বসতেই সেটাও চলেতে শুরু করলো।গাড়ী পিছন পিছন আসিফ এগুতে থাকলো প্রাপ্তি পানি ভরা একজোড়া চোখ গাড়ী বাহিরেই তাকিয়ে ছিলো যতক্ষণ আসিফ কে দেখা যায় ততক্ষণ।
তারপর চুপ করে বসে ছিলো আয়ানদের বাড়ী আসা পর্যন্ত। আয়ান ও কিছু বলেনি।

আয়েশা বেগম অপেক্ষায় বসে আছে কখন ছেলের বউ আসবে।মিনু অবশ্য একবার ফোন করে বলেছিলো কি সব ঝামেলার কথা।তারপর কি হলো একবার জানালো না।সুমিদের গাড়ী এসে থামতেই আয়শা বেগম এগিয়ে দরজার দিকে গেলো।ঝিনুক রুমকিকে কোলে নিয়ে মন খারাপ করে বাসায় ঢুকেই সোঝা নিজের রুমেই চলে গেলো।আয়শা বেগমের সাথে একটা কথাও বললো না।সুমি ও এসে, একি মা! আপনি দরজায় দাঁড়িয়ে কেনো বউকে বরন করতে হবে তো।ওরা পিছনের গাড়ীতেই আছে হাতে বেশী সময় নেই।

আয়েশা বেগম -এতো উতালা হওয়ার কি আছে? আসুক না আগে।কিন্তু ওই বাড়ীতে কি এতো ঝামেলা হয়েছে সেটা বল? ঝিনুকও কিছু না বলে মন খারাপ করে রুমে চলে গেলো কি হয়েছে মা বলনা?

সুমি আস্তে করে আয়েশা বেগমের কাছে গিয়ে, মা! এখন এতো কথা বলার সময় নয় আমি তোমাকে পরে সব বুজিয়ে বলবো।আর শুনো বউকে এইখানে রাখা ঠিক হবেনা।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আয়ানের রুমে দিয়ে দেওয়াটা ভালো হবে।

আয়েশা বেগম -তুমি কি বলছো আমি তো কিছুই বুজতেছিনা।

কথাটা বলতেই গাড়ী থেকে আয়ান নেমে এসে, ভাবী তুমি গিয়ে ওকে নিয়ে আসো, আয়ানের কথা শুনে সুমি মুছকি হেঁসে, হুম নিয়ে আসছি।
সুমি গিয়ে প্রাপ্তিকে নিয়ে এসে দরজায় দাঁড়াতেই আয়েশা বেগম প্রাপ্তিকে দেখে,মাসাল্লাহ্ আমার ছোটো ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে।সুমি আয়ানের মায়ের সামনে প্রাপ্তিকে দাঁড় করিয়ে, প্রাপ্তি ইনি আমাদের শাশুড়ি মা! শাশুড়ি বললে ভুল হবে, মা,বন্ধু, যা থাকে একটা সম্পর্কের মাঝে সবটা! প্রাপ্তি পা ছুঁয়ে আয়েশা বেগমকে সালাম করতে যাবে তখনি আয়েশা বেগম প্রাপ্তিকে উঠিয়ে আরে আরে পাগলি মেয়েটা কি করছে? পা ছুঁয়ে সালাম করতে হবে না।এই বাড়ী সবার ছোটো তুমি তাই আজ থেকে তুমি আমার ছোটো মেয়ে। কি বুজেছোতো?আর আমাকে মা বলে ডাকবে, শুধু মা না বুন্ধুও ভাববে এইটাও বুজেছোতো,,,,,বলে হা হা হা করেই হাঁসা শুরু করলো।
প্রাপ্তি সারাটা দিন মন খারাপ করে থাকলেও আয়ানের মায়ের কথা শুনে না হেঁসে পারলো না।মুছকি হাঁসি দিয়ে হ্যাঁ বুজালো।

এইদিকে সবাই প্রাপ্তিকে দেখেতে ড্রইংরুমে ভিড় জমিয়েছে।সুমি প্রাপ্তিকে নিয়ে মোটামুটি পরিচয় করিয়ে দিলো।আয়েশা বেগম মিনু আর সুমি কে সব সামলাতে বলে নিজে রুমে গেলো আবিদ চৌধুরী ফোন দিয়েছে কথা বলার জন্য।আবিদ চৌধুরী বার বার ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করছে বিয়ের সব কিছু আকাশ সামলাতে পারছে কিনা। সুমি মিনুকে ডেকে নিয়ে বললো, এক কাজ করো মিনু! প্রাপ্তিকে আপাদত তোমার রুমে নিয়ে যাও।মাকে তো এখনো কিছু বলা হয়নি প্রাপ্তির ব্যাপারে।লোকজনকে দেখো সবাই কানাঘুষায় নেমেছে মনে হচ্ছে ওদের কানাঘুষার জন্য বেতন ভুক্ত কর্মচারী রাখা হয়েছে।

মিনু -ভাবী কিছু করার নাই এরা বলবেই কারণ বলার জন্য আমার ভাই নিজের হাতে বদনাম গুলো ওদের মুখে তুলে দিয়েছে। আর যতোই চেষ্টা করো এইগুলো থামাতে পারবেনা।

সুমি -আরে আমি সেই কথা বলছিনা।মা সবার মুখ থেকে জানার আগে আমরা বলে দিলে ভালো হয় না?

মিনু-আচ্ছা ঠিক আছে আমি নিয়ে যাচ্ছি। তবে মহারাজা কথায় গেলেন মহারানীকে রেখে? আমাদেরকে এখন ঝামেলার মধ্যে ফেলে নিজেই উধাও।
প্রাপ্তি সোপায় বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে।চারপাশ থেকে লোকজন একেকজন একেক কথায় বলে যাচ্ছে।প্রাপ্তি তাদের কথা গুলো নিজের শরীরের সাথে তেমন মাখছেনা।কারণ এই কানাঘুষা শুনা তার জন্য নতুন কোনো ব্যাপার নয়। এইগুলো শুনতে শুনতে সেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মিনু এসে বললো উঠে দাঁড়াও! প্রাপ্তি দাঁড়াতেই প্রাপ্তির হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে খাটের উপর বসালো।মিনু প্রাপ্তির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে মেয়েটাকে খারাপ লাগছেনা।আয়ানের পছন্দ আছে মানতে হবে।

প্রাপ্তি মিনুর দিকে চোখ পড়তেই, আপু আপনি কিছু বলবেন?

মিনু প্রাপ্তির কথা শুনে একটু চমকিয়ে,আরে না না! তুমি বসো আমি আসছি।
সুমি আয়েশা বেগমের রুমের দিকে পা এগুতেই কাজের লোক রফিক এসে, ভাবী! যে রান্নাটা বসিয়েছি যদি একটু দেখে নিতেন তাহলে ভালো হতো।

সুমি -আচ্ছা চলো পরে না হয় মায়ের কাছে যাবো।

আয়েশা বেগম ফোনে কথা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে পিছনে ফিরে দেখে আয়ান দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।কিরে বাবা তুই দরজায় দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ভিতরে আয়।
আয়ান ভিতরে এসে আয়েশা বেগমকে বসিয়ে পা দুটো জড়িয়ে কলে মাথা রেখে নিচে বসলো।
আয়েশা বেগম -কিরে বাবা! কি হয়েছে? মন খারাপ করে আছিস মেয়ে তো তোর পছন্দ করা মেয়ে তাহলে মন খারাপ কেনো?
আয়ান -আম্মু আমি যদি তোমাকে না জানিয়ে কোনো ভুল করে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেতো?

আয়েশা বেগম -আমি জানি আমার আকাশ আর আয়ান কখনো কোনো ভুল করতে পারে না।যদিও কোনো ভুল করে সেটা কারো না কারো ভালোর জন্যই করবে।

আয়ান -আম্মু আজ আমি একটা ভুল করেছি অবশ্য এইটা ভুল কিনা আমি জানি না কারো ভালো হয়েছে কিনা আমি তাও জানি না শুধু জানি আমার ভালোবাসার জয় হয়েছে।

আয়েশা বেগম -কি হয়েছে বাবা আমি তোর কথা কিছুই বুজতেছিনা।তুই এতো পেছিয়ে না বলে সোজাসুজি ভাবে বল বাবা?

আয়ান -আম্মু ঠিকি বলেছো তোমাকে কথাটা সোজাসুজি ভাবেই বলা উচিত। আসলে আব্বু যে মেয়েকে ঠিক করে এসেছে এই মেয়ে সেই মেয়ে নয়। কিন্তু সেই দিন আমি ওকে পছন্দ করে ছিলাম ওই মেয়েকে নয়।

আয়েশা বেগম -তাতে কি হয়েছে তোর পছন্দ বড় কথা।

আয়ান -আরো একটা কারণ আছে আম্মু,এইমেয়ের জীবনে অনেক বড় একটা দুর্ঘটনা আছে সেটা শুনলে তো আব্বু কখনো মেনে নিবেনা আম্মু।

আয়েশা বেগম-কি হয়েছে বলতো?

আয়ান আমতা আমতা করে, আাাাাম্মুুুুুুুুুুুুুুও ও ও সুমি এসে আয়ানকে তোতলাতে দেখে, আয়ান আমি বলছি। আসলে মা ওই মেয়ে ধর্ষিতা।সুমি কতো সহজে কথাটা বলে পেললো দেখে আয়ান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সুমির দিকে।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here