#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা
#২০
___ আসিফের ফোন শুনে আয়ানের হাত থেকে ফোন নিয়ে আয়ানের রুমে চলে গেলো। প্রাপ্তি ফোন রিসিভ করে,চুপ করে আছে।
আসিফ -হ্যালো! প্রাপ্তি কেমন আছিস তুই?
প্রাপ্তি-ভালো। তুই কেমন আছিস? অরণী কেমন আছে?আব্বু আম্মু কেমন আছে?
আসিফ -আস্তে আস্তে এতো প্রশ্ন একসাথে করলে আনসার দিবো কি করে? সবাই ভালো আছে।তুই ঠিক আছিস তো?
প্রাপ্তি-জানিস ভাইয়া এই বাড়ীরর সবাই অনেক অনেক ভালো।বড় আপু কাল একটু রাগ ছিলো সকালে দেখি সবার থেকে ওনি আমার হয়ে কথা বলছে?
আসিফ -তাই বেশ ভালো। আমিও চাই আমার বোনটা অনেক সুখে থাকুক।আচ্ছা তোরা কখন আসছিস?
প্রাপ্তি-আমি তো জানিনা।ভাইয়া অরণী আসবে না?
আসিফ -না! সিয়ামের মাকে বলেছি ওনি বলেছে দুইদিন পর।শুন ফোন টা আয়ানের কাছে দে!
প্রাপ্তি -একটু ওয়েট কর দিচ্ছি।প্রাপ্তি ফোন নিয়ে দরজার কাছে আসতেই দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে আছে। ফোনটা এগিয়ে দিয়ে প্রাপ্তি নিছে নেমে চলে এলো।
আয়ান -(প্রাপ্তির চলে যাওয়া দিকে তাকিয়ে থেকে)জ্বী বলুন?
আসিফ -আয়ান! তোমরা আসবে কখন?
আয়ান -আপনাকে একটু পর জানাবো।আম্মুকে আগে বলি তার পর।
আসিফ -আচ্ছা ওনাকে বলে আমাকে জানিও।
অধরা প্রাপ্তিকে আসতে দেখে, এই মেয়ে শুনো।
প্রাপ্তি -আমাকে বলছেন?
অধরা -হুম, তোমাকেই।
প্রাপ্তি অধরার কাছে আসতেই,অধরা বললো পড়াশুনা কতো দূর?
প্রাপ্তি-জ্বী অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
অধরা -ভালোই! আর পড়ার ইচ্ছা নেই?
প্রাপ্তি কিছু বলছেনা কি বলেতে কি বলে পেলে পরে আবার ঝামেলা হবে।সুমি প্রাপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে অধরা আয়ান যদি চায় তাহলে তো পড়বেই।তোমার ওকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে। প্রাপ্তি তুমি রেডি হয়ে নাও। মা বলেছে আয়ান আর তুমি তোমাদের বাড়ীতে যাবে।
প্রাপ্তি সুমির দিকে এগিয়ে এসে, মা বলেছে?
সুমি -হুম মাই তো বললো।যাও রেডি হয়ে নাও।কথাটা শুনে রুমকি এসে প্রাপ্তিকে জড়িয়ে ধরে মামনি চলে যাবে?
রুমকিকে কোলে তুলে নিয়ে ঝিনুকের দিকে তাকিয়ে আপু আপনিও চলেন না!
ঝিনুক -না প্রাপ্তি তুমি গিয়ে ঘুরে আসো আমরা অন্য একসময় যাবো।
প্রাপ্তিও কথা বাড়ালো না,কারণ ওই বাড়ীতে গেলে কে কি বলবে তার কোনো ঠিক নেই। আয়ান এসে তুমি গিয়ে রেডি হয়ে নাও আমি আসছি।কথাটা বলেই মায়ের কাছে রান্না ঘরে চলে গেলো।
পিছন দিক থেকে মাকে জড়িয়ে ধরে আম্মু আব্বু ফোন দিয়েছে?
আয়েশা বেগম -রাতে কথা হয়েছে, আর তো ফোন দেয়নি।কেন কিছু হয়েছে?
আয়ান -না এমনি।আচ্ছা আম্মু প্রাপ্তিকে তোমার কাছে কেমন লেগেছে?
আয়েশা বেগম -ওনি এখন এইখানে আসছেন মায়ের কাছ থেকে বউয়ের গুনো গান শুনার জন্য।এখন আমাকে ছাড় শ্বশুর বাড়ী থেকে আগে ঘুরে আয় তারপর দেখা যাবে।তবে এইটুকু বলতে পারি লক্ষ্মী একটা মেয়ে।এখন যা তো, তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে।
আয়ান -thank you আম্মু!
আয়ান রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি রেডি হয়ে বসে আছে। আয়ান কে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়লো।
আয়ান -তোমাকে যতো দেখি ততো অবাক লাগে একটা মানুষকে এতো সুন্দর কী ভেবে লাগতে পারে?তবে এটাও ভালো লাগছে তোমার অন্য মেয়েদের মতো রেডি হতে এতো সময় লাগেনা।
(প্রাপ্তি অন্য দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছে।)
তুমি একটু ওয়েট করো আমি রেডি হয়ে নিচ্ছি।
একটু পর দুজনেই রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো।
ঝিনুক মুছকি হেঁসে, একদম পরীর মতো লাগছে।(সুমির দিকে তাকিয়ে)কি বলো সুমি?
সুমিও হাঁসি দিয়ে এগিয়ে এসে, ঠিক বলেছো আপু আমাদের বাড়ীর ছোটো পরী।
অধরা বিরক্তিকর ভাবে তাকিয়ে আছে সবার দিকে, এই মেয়ের মাঝে কি এমন আছে সবাই ওকে নিয়ে এতো তামাসা করছে।মনে হচ্ছে এই বাড়ীয়ে শুধু ও একাই আছে। আমি যে এতো দিন পরে এলাম তার দিকে কারো কোনো খেয়ালি নেই।
প্রাপ্তি আয়ানের মাকে আর কাকা কাকী কে সালাম করে নিলো। রুমকিকে কোলে নিয়ে আম্মু সব কথা শুনবে ঠিক আছে।আমি ফিরে এসে তোমাকে অনেক গল্প শুনাবো।বুজেছোতো,,,,,বলেই হাঁসি দিয়ে রুমকির কপালে একটা চুমু দিলো।
রুমকিকে নামিয়ে দিয়ে, মা! আপনার শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন।আয়ান চুপচাপ প্রাপ্তিকে দেখেই যাচ্ছে, প্রাপ্তিকে সে যতো দেখছে ততো সে মুগ্ধ হচ্ছে সবার সাথে কি সহজ ভাবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। কে বলবে কালকেও এই মেয়ে মাঝে অনেক রাগ ছিলো। যার রাগে পুরো বিয়ে বাড়ী কেপেছে,আর সেই মেয়ে আজ কতো ঠাণ্ডা।
সুমি আয়ানের দিকে চোখ পড়তেই, পাশে এসে আস্তে করে বললো,কিইইইইইই,,,,যতো দেখি মন ভরে না তাই না? এইবার কিন্তু চোখ নষ্ট হয়ে যাবে।
আয়ান নিজের চুল গুলো ঠিক করতে করতে সুইট হার্ট বেশী বেশী বলেই হাঁসতে শুরু করলো।
আয়েশা বেগম -বাড়ী এসে অনেক হাঁসতে পারবে এখন যাও। এমনিতেই অনেক বেলা হয়ে গেছে।আর বাসার গাড়ীটা নিয়ে যা।আকাশ ড্রাইভার কে বলে দিয়েছিস তো?
আকাশ আমি আগেই বলে রেখেছি ড্রাইভার কে।
আয়ান -ড্রাইভার কে বলে রেখেছো মানে?
আমি গাড়ী নিয়ে যাবো না।আমার মোটরবাইকে করেই যাবো।
আকাশ -ফাজিল কথাকার! তুই নতুন বউকে নিয়ে মোটরবাইকে যাবি?
আয়ান -হুম যাবো। আর তোমাদেরও চিন্তা করতে হবে না।
কথাটা বলেই আয়ান বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো।
আকাশ -দেখেছো আম্মু! তোমার এই ছেলের কখনোই কি বুদ্ধি হবে না?
সুমি -তুমি এই রকম করছো কেনো।ওর তো একটা স্বাদ আহ্লাদ থাকতে পারে।নিজের সেটা নাই বলে অন্য কাউর থাকবেনা তাতো না?
আকাশ সুমির কথা শুনে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।
আয়ান প্রাপ্তিকে নিয়েই মোটরবাইক প্রাপ্তিদের বাড়ী সামনে এসে থামতেই আসিফ এগিয়ে এসে তাদেরকে বাসার ভিতরে নিয়ে গেলো।প্রাপ্তি এসেছে শুনে আশে পাশের মানুষ আসতে শুরু করলো আয়নকে দেখার জন্য।আয়ান এসে আজাদ সাহেব আর নিলিমা বেগমকে সালাম করলো। নিলিমা বেগম আয়ান কে প্রাপ্তির মামা মামী, কাকা,কাকী, কাজিনদের সবার সাথে পরিচয় করাতে লাগলো।প্রাপ্তি এসে কাউকে কিছু না বলেই নিজের রুমে চলে গেলো।পাশের বাড়ীর রানু কাকী এসেছে, সাথে করে আরো ৭/৮ জন মহিলাকেও নিয়ে এসে কই আসিফের মা তোমাদের নাকি নতুন জামাই আসছে?
আয়ান তাদের দেখে সালাম দিলো।
রানু কাকী -ওয়ালাইকুম সালাম! তো বাবা কেমন আছো? সব ঠিকঠাক তো?
আয়ান -জ্বী, আপনার কথা বুজলাম না।
রানু কাকী -কি আর বুজবা,তোমরা ছেলেরা মেয়ে একটা দেখলে তো পাগল হয়ে যাও।
খুঁজ খবর নিয়ে বিয়ে করেছো নাকি এমনিতেই গলায় ঝুলিয়ে নিয়েছো।
আয়ান -গলায় ঝুলাতে যাবো কেনো। সম্মানের সাথেই আমি ওকে বিয়ে করেছি।আর আপনি কি বলছেন এই সব?
আসিফ -কাকী আপনি এইখান থেকে এখন যান। আমদের টা আমাদের বুজতে দিন।
রানু কাকী -আরে বাবা! আমরা এইখানে থাকতে আসিনি।তোমাদের অপকর্ম তোমরা ডেকে রাখো তাতে আমাদের কী। নিজেদের মেয়েকে তো অসহায় একটা ছেলেকে পেয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছো এখন আমাদের বললেই দোষ। তোমাদের মেয়েকে যে তিন দিন দরে আটকে রেখে কি করেছে না করেছে আমরা তো সবি জানি।কি বাবা তুমি সব জেনে বিয়ে করেছো তো?
আয়ান -আপনারা আর একটাও বাজে কথা বলবেন না।আমি ওর সব জেনেই বিয়ে করেছি।আপনাদের এইটা নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।আপনাদের এতোক্ষণ সম্মান দিয়েই কথা বলছি।যদি আমার বউয়ের নামে আর একটাও বাজে কথা বলেন তখন আমি ভুলে যাবো আপনারা আমার শ্বশুরের এলাকার লোক।
রানু কাকী -এই তোরা চল।আজকাল ভালো কথা বলতে নাই।
সবাই চলে যাওয়ার পরে আয়ান দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে আছে আর গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়ছে।
আয়ান -প্রাপ্তিইইইইইই,,,,
আয়ান প্রাপ্তি বলতেই প্রাপ্তি চোখের পানি মুছে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।
পিছন পিছন আয়ান ও তার রুমে গেলো।
আয়ান -প্লিজ এইভাবে কান্না করোনা।মানুষ তো বলবেই। তাই বলে কান্না করবে।আমি জানি তুমি আমার সাথে কথা বলবে না।কিন্তু আমার দোষ কি বলো?আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি কোনো অসম্মান বা করুণা নয়।লোকে কথা শুনে যদি কান্নাকাটি করো তাহলে এইটা কি ঠিক হবে।
চলবে,,,,,,