#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলাতানা
#২৩
___প্রাপ্তি আর আয়ান রুমে গিয়ে নিজেদের জামা কাপড় গুলো গুছিয়ে নিচ্ছে।আয়েশা বেগম এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে আয়ান তুই আমাদের ছেড়ে যাসনা।আমি আমার ছেলেকে ছাড়া থাকবো কি করে? তোর আব্বুর রাগটা কমে যাক দেখবি তোকে আবার বুকে টেনে নিবে।এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলতে লাগলেন আয়েশা বেগম।আয়ান আয়েশা বেগম কে ছাড়িয়ে গাল দুটো হাত দিয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায়,আম্মু তোমাদের ছেড়ে থাকতে আমারো অনেক কষ্ট হবে,কিন্তু আমি জানি আব্বু কখনোই আমাকে আর এই বাড়িতে থাকতে বলবেনা।আর কখনোই বলবেনা আয়ান অফিসে যাবিনা,বলবেনা লেট আমার একদম পছন্দ না।,তোর কোনো সময়ের জ্ঞান নেই বলে কি আমারও নেই।আকাশ ভাইয়া এসে আব্বুর বুকনি থেকে আমাকে বাঁচাতে হবেনা।এই সব কিছু আমি অনেক মিস করবো আম্মু।মিস করবো তোমার ভালোবাসা।কথাগুলো বলতে বলতে আয়ানের গাল বেয়ে বেয়ে চোখের পানি পড়ে শার্ট ভিজে যাচ্ছে।কথা গুলো বলতে মনে হচ্ছে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।প্রাপ্তিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মা ছেলের দৃশ দেখে সেও কান্না করে যাচ্ছে।
আয়েশা বেগম -(ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে) তুই এখন হঠাৎ এইভাবে মেয়েটাকে নিয়ে গিয়ে কোথায় থাকবি? তোর কাছে তো এখন কোনো টাকাও নেই। এইভাবে রাগ করে গিয়ে থাকা যায়না আয়ন।
আয়ান আয়েশা বেগমের কাছ থেকে সরে গিয়ে চোখ মুছে ব্যাগ টা আটকাতে আটকাতে স্বাভাবিক গলায় বললো চিন্তা করো না মা আমার কাছে কিছু টাকা আছে সেটা দিয়ে কয়েক দিন কেটে যাবে।তারপর একটা চাকরি ব্যবস্থা ঠিক করে ফেলবো।
আয়েশা বেগম বুজে গেছে ছেলেকে বুজিয়ে কোনো লাভ হবে না।আয়ানের রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে, আকাশ! আকাশ!
আকাশ কাছে গিয়ে আম্মু তুমি পড়বে তো তুমি এইরকম করোনা।এইরকম করলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।
আয়েশা বেগম আকাশের হাত ধরে তুই আমার কথা চিন্তা করিস না।তুই পারবি আয়ানকে আটকাতে। ওকে এইভাবে কোথাও যেতে দিস না।
আকাশ -আম্মু তুমি শান্ত হও আমি দেখছি বলে উপরে যাবার জন্য সিঁড়িতে পা দিতেই দেখে আয়ান আর প্রাপ্তি নেমে আসছে।
আয়ান নেমে এসে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে, ভাইয়া আম্মুর দিকে খেয়াল রাখিস,
আকাশ-(অসহায় ভাবে) আয়ান! আর একটা বার ভেবে দেখ।আব্বু রাগের মাথায় কি বলতে কি বলেছে তার জন্য তুই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে চলে যাবি?
আয়ান-(আকাশ কে ছেড়ে দিয়ে) ভাইয়া প্লিজ আবিদ চৌধুরী অহংকার নিয়ে ওনি থাকুক।আর যে বাড়িতে আমার স্ত্রী থাকতে পারবে না।সে বাড়িতে আমিও থাকতে পারবোনা।সবাইকে নিয়ে ভালো থাকিস।সবার খেয়াল রাখিস।
রুমকি দৌড়ে এসে কোলে উঠে মামা তুমি আর আসবে না? তুমি মামনিকে নিয়ে চলে যাবে?তুমি মামনিকে নিয়ে যেও না।
রুমকির কথা শুনে আয়ানের চোখের পানি টলমল করছে,রুমকির মন খারাপ হবে দেখে অন্য দিকে ফিয়ে চোখ মুছে মামাই আবার চলে আসবো। এই কয়দিন আম্মুর সব কথা শুনে লক্ষী মেয়ের মতো থাকবা।আমি আর তোমার মামনি এসেই যেনো শুনি রুমকি সবার সব কথা শুনে।প্রাপ্তি এগিয়ে এসে রুমকিকে কোলে নিলো। আয়ান ঝিনুক আর মিনুর কাছে যেতেই দুই বোন আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো,আয়ানও কাঁদোকাঁদো গলায় কান্না করছিস কেনো? আমিতো আর মরে যাইনি।ঝিনুক কথাটা শুনেই আয়ানের গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে মুখে যাই আসে তাই বলে যাচ্ছিস।তুই এতোই পর ভাবিস আমাদের?ঠিক আছে তোকে আজ আটকাবো না।আমি চাই তুইও আব্বুকে দেখিয়ে দিবি আব্বুকে ছাড়া তুই ও চলতে পারিস।আর কোনো সমস্যা হলে নিহাদ কে জানাস।
মিনু -নিজের দিকে খেয়াল রাখিস।যেখাই যাবি ফোন দিয়ে জানাস।যে মেয়ের জন্য এই বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছিস ওর খেয়াল রাখিস।
আয়ানও ঝিনুকের চোখের পানি মুছে দিয়ে রুমকির দিকে খেয়াল রাখিস।
মিনু! রাহাতের সাথে তুই একদম রাগারাগি করবিনা।
সুমির কাছে এগিয়ে গিয়ে, সুইট হার্ট তোমাকে আর জ্বালানো সহ্য করতে হবেনা।তোমাকে সকাল বেলা আর আমাকে জাগিয়ে তুলতে হবেনা।আর কেউ তোমাকে এই কথা বলে জ্বালাবে না সুইট হার্ট তোমার হাতে কফি না হলে ভালো লাগে না।
সুমি নিজের চোখের পানি মুছে, তুমি এইগুলে জ্বালানি বলছো কেনো? এই গুলো করতে আমার খুব ভালো লাগে আয়ান।সুমি প্রাপ্তিকে আয়ানের কাছে টেনে এনে,প্রাপ্তি এই ছেলেটার সব দায়িত্ব এখন থেকে তোমার। আমার দেখা এই প্রথম কোনো ছেলে একটা মেয়েকে কতোটা ভালোবাসতে পারলে একটা ছেলে এতো অর্থ প্রাচুর্য ছেড়ে অজানা পথে হাঁটতে পারে।প্রাপ্তি! তুমি অনেক ভাগ্যেবান। কারণ ভাগ্যে করেই এইরম স্বামী পাওয়া যায়।
তাই আবারো বলছি নিজের মতো করে ওর একটু যত্ন নিও।
সুমির সব কথা শুনেই প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজালো।
আয়েশা বেগমের মুখে কোনো কথা নেই নিস্তব্ধ হয়ে সোফায় বসে আয়ানে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে।
প্রাপ্তি এসে আয়েশা বেগমকে সালাম করে,(ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে) মা, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আজ আমার জন্যই আপনার ছেলেকে আপনার কাছ থেকে আলাদা হতে হচ্ছে।মা! আমি কখনো চাইনি এই রকম কিছু হোক।
আয়েশা বেগম প্রাপ্তিকে উঠিয়ে, আমার ছেলেটার দিকে খেয়াল রেখো। আজ নিজেকে খুব ভাগ্যেবান মনে হচ্ছে।অনেক গর্বও হচ্ছে কেনো যানো? আমার ছেলেকে আমি ঠিক মতোই মানুষ করতে পেরেছি।সে মেয়েদের সম্মান দিতে জানে।কোনো মা জাতি কে অসম্মান করতে দেয়নি।তোমরা যেইখানেই থাকো ভালো থাকো।
আয়ান গিয়ে আবিদ চৌধুরীর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে,আব্বু আমি চলে যাচ্ছি।আমাকে নিয়ে তোমার আর কোনো অম্মান হবেনা।নিজের দিকে খেয়াল রেখো।আব্বু তুমি কি আমার কথা শুনছো? তোমাকে আর তোমার ছোটো ছেলেকে নিয়ে কোথাও অপদস্থ হতে হবেনা।আম্মুর দিকে খেয়াল রেখো।
আবিদ চৌধুরীর কোনো সাড়া না পেয়ে আয়ান ড্রইংরুম এসে, প্রাপ্তি! চলো।কথাটা বলেই আয়ান আর পিছু ফিরে তাকালোনা। তাড়াতাড়ি করে পা গুলো এগুতে লাগলো এক অজানার পথে। প্রাপ্তিও আয়ানের পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করলো।কেউই জানেনা কথায় যাবে কি করবে। আয়ান শুধু এইটা ভেবেই নিজেকে বুজ দিয়েছে ভালোবাসার মানুষের অসম্মান সে হতে দেয়নি।যদি কোনো একদিন আবিদ চৌধুরী সম্মানের সাথেই তার ভালোবাসার মানুষকে ফিরিয়ে আনবে সেই দিনই আবার এই বাড়ি ফিরে আসবে।
চলবে,,,,,