#ধর্ষিতা_বউ
#রাবেয়া_সুলতানা
#২৫
___অরণী অট্ট হাঁসি দিয়ে আমার জন্য কোনো মানা নাই ভাইয়া।যেতেই পারি।
অরণীর কথা শুনে আয়ান নিজেও হাঁসতে শুরু করলো।
অরণী- আচ্ছা তাহলে তোমরা কথা বলো আমি আসছি।সিয়াম আবার একা রুমে বসে আছে।কাল কিন্তু আমরা বিকেলবেলা মেয়ে দেখতে যাচ্ছি এটাই ফাইনাল।
কথাটা বলেই অরণী চলে গেলো।
আয়ান -প্রাপ্তি! তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লো।আয়ান মনে মনে ভাবছে সবেমাত্র কথা বলা শুরু করেছে কোনো কিছু নিয়ে বেশি চাপাচাপি করা যাবেনা।না হলে আবার আগের মতোই হয়ে যাবে।
সকাল বেলা অরণীর ডাকে ঘুম ভাঙলো প্রাপ্তি আর আয়ানের। আয়ান ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে অরণীকে দেখে কি ব্যাপার অরণী কিছু বলবে?অরণী রুমে ঢুকে কয়টা বাজে দেখেছো? (প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে)বাহ্ মহারাণী ও তো দেখছি এখনি আড়মোড়া ভাঙতেছে।
আয়ান হাতের ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে দেখে ৯.২০ বেজে গেছে।ও মাই গড! তুমি এতোক্ষণ ডাকনি কেনো?
অরণী -আচ্ছা সারারাত কি দুজন ঘুমাওনি?
অবশ্য জেগে থেকেই বা কি করবে ঘুমানো ছাড়া।
প্রাপ্তি -তুই একটু চুপ করবি?কখন থেকেই বকবক করে যাচ্ছিস।
(আয়ান তয়ালেটা হাতে নিয়ে হাঁসতে হাঁসতে ওয়াশ রুমের দিকে যাচ্ছে)
অরণী -চুপ থাকতে বলছিস কেন? আপু আমি কিন্তু ছোটো নয় সবকিছুই বুজার বয়স আমার হয়েছে।
প্রাপ্তি -কি বলতে চাইছিস তুই?
অরণী -কথা টা শুনে তুই রাগ করিস না। তবে আমার যা মনে হচ্ছে তাই বলছি।
আমার মনে হয় তোদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্ক থাকে সেটাই তোদের মাঝে নাই।
অরণীর কথা শুনেই আয়ান ওয়াশ রুমের দরজাই দাঁড়িয়ে পড়লো।
আর প্রাপ্তি অবাক হয়ে অরণীর দিকে তাকিয়ে কি বলছিস তুই এই সব?
আয়ান আবার অরণীর আর প্রাপ্তির কাছে এগিয়ে এসে অরণী তোমার এমন কেনো মনে হলো?
অরণী -আগে মনে হয়নি, কাল তোমার কথা শুনেই মনে হলো,আচ্ছা তুমিই বলো কেউ কারো বউয়ের জামা কাপড় চেঞ্জ করতে লজ্জা পায়?
(অরণীর কথা শুনেই প্রাপ্তি আর আয়ান দুইজন দুজনার দিকে তাকিয়ে আছে।)
কথাটা মনে হয় ঠিকি বলছি না হলে দুজন এইভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
আয়ান অরণীকে আর কিছু না বলেই ওয়াশ রুমে ঢুকে গেলো।
প্রাপ্তি -তুই আসলে কি বলতো কথা টা আমাকে আলাদা ভাবেও তো বলতে পারতি।এইভাবে ওনার সামনে না বললেও পারতি।
অরণী -তুই চুপ করতো।দোষ তো তোরই তুই ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস কেনো?একটা মানুষের সাথে দুইটা বছরের বেশি সংসার করছিস এখনো তুমি কথাটা বলতে শিখিসনি।তোর এইসব পাগলামো কিভাবে যে ভাইয়া সহ্য করে আল্লাহ ভালো জানে।সিয়ামের সাথে তোর বিয়েটা হয়নি ভালোই হয়েছে।না হলে আরো আগে তোকে এই বাড়িতে আসা লাগতো।আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে।আমি যেনো তোকে আর না দেখি ভাইয়াকে আপনি করে ডাকছিস।তুমি করে বলবি।এখন ফ্রেশ হয়ে দুইজনে নাস্তা করতে আয়।
প্রাপ্তি বোকার মতো দাঁড়িয়ে কথা গুলো শুনেই যাচ্ছিলো।অরণী চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবছে অরণী সত্যিই বলছে অন্য কোনো ছেলে হলে আমাকে আরো আগেই ডিভোর্স দিয়ে চলে যেতো।কিন্তু আয়ান আমার জন্য নিজের সব কিছু ছেড়ে আমার কাছে পড়ে আছে। শুধু আমাকে ভালোবাসে।এখনকার ছেলেরা শুধু মেয়েদের দেহ টাই বুজে কিন্তু আয়ান কখনো আমাকে কোনো কিছু নিয়ে জোর করেনি।আয়ানের মতো যদি ছেলেরা হতো তাহলে কখনো মেয়েদের এতো অপমান,অপদস্থ, লাঞ্ছিত হতে হতো না।মেয়েরা নিজেদের সম্মান নিয়েই বেঁচে থাকতে পারতো।আয়ান এসে প্রাপ্তির কাঁধে হাত দিতেই প্রাপ্তি চমকে গিয়ে আয়ানের দিকে তাকালো,
আয়ান -কি হলো এইভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
প্রাপ্তি হুম বলেই ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
নিলিমা বেগম টেবিলে নাস্তা দিয়েছে, আয়ান, প্রাপ্তি, অরণী আর আজাদ সাহেব বসেছে নাস্তা করার জন্য।
আয়ান -মা রেশী কোথায়?ভাইয়া আর সিয়াম কেও তো দেখছি না।ওরা নাস্তা করবেনা?
নিলিমা বেগম -আসিফ নাস্তা করেই রেশীকে নিয়ে ওর কলেজে গেছে,বলেছে রেশীকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যাবে।
অরণী -সিয়াম ও খেয়ে অফিসে চলে গেলো।আব্বু তোমার সাথে নাস্তা করবে বলেই সকাল থেকে নাস্তা করেনি।
কথা শুনেই আয়ান লজ্জা পেয়ে গেলো।তার কখনোই ঘুম থেকে উঠতে এতো দেরী হয়না।আজ যে কি হলো বুজলাম না।
আয়ান-সরি আসলে আমি আজ বলতেই পারবো না।
আজাদ সাহেব -আরে কোনো প্রবলেম নাই।আমি এমনিতেই নাস্তা একটু দেরিতেই করি।
কথাটা শুনে আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে, প্রাপ্তি তুমি না আজ শপিং করতে যাও? নাস্তা করে রেডি হয়ে নাও।অরণী তাহলে তুমিও রেডি হয়ে নাও।
প্রাপ্তি -আজকেই যেতে হবে?
আয়ান -হুম আজকেই।(মনে মনে)আজ যখন তোমাকে নিয়ে ঘুরার সুযোগ পেয়েছি এইটা হাত ছাড়া করি কিভাবে?
অরণী -আপু তুই না করিস না।চলনা একসাথে ঘুরে আসি।
প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে।
সবাই নাস্তা শেষ করে তিন জনই শপিং করার উদ্দেশ্য বের হলো।
প্রাপ্তি এই প্রথম আয়ানের সাথে শপিং করতে আসলো। এতো দিন প্রাপ্তির যা কিছু লেগেছে আয়ানই সব কিছু প্রাপ্তি না চাইতেই এনে দিতো।আয়ান কেমন করে সব বুজে যায়। প্রাপ্তির মনে কখন কি চায়।সবকিছু বুজার চেষ্টা করে।হয়তো প্রাপ্তির চোখে চোখ রেখে প্রাপ্তির মনকে পড়তে আপ্রাণ চেষ্টা করে।
আজ অনেক শপিং করলো প্রাপ্তি কিন্তু নিজের জন্য কিছুই নিলো না সব কিছু আয়ান আর নিজের পরিবারের জন্য।রুমকির জন্য তো ড্রেস খেলনা সব কিছুই নিয়েছে।
আয়ান প্রাপ্তির কান্ড গুলো দেখেই যাচ্ছে কিছু বলছেনা প্রাপ্তির মনে কষ্ট পাবে তাই।কিন্তু একটা কথা না বলে পারছেনা। তাই প্রাপ্তির কানের কাছে গিয়ে, আচ্ছা প্রাপ্তি সবার জন্য এতো কিছু নিলে নিজের জন্য কিছু নিচ্ছো না যে।
প্রাপ্তি মুছকি হেঁসে আমার নিজের জন্য নিজে কিনার প্রয়োজন নেই।তুমিই আমার জন্য যে শপিং করো সেই গুলোই শেষ করতে পারিনা।এখন যদি আমিও আমার জন্য নিতে থাকি তাহলে মানুষে কি নিবে।
কথাটা শুনে আয়ানের খুব ভালো লেগেছে,কিন্তু না হেঁসে পারলোনা।
আয়ান -আচ্ছা তাই নাকি?কিন্তু প্রাপ্তি আমাদের বাড়ির সবার জন্য যে নিলে এইগুলো দিবে কি করে?
প্রাপ্তি -ওইটা নিয়ে তোমায় এখন ভাবতে হবে না। বাসায় গিয়ে দেখা যাবে কি করা যায়।
এইদিকে আয়ানও প্রাপ্তিকে না জানিয়ে নিজের পছন্দের দুইটা শাড়ি নিয়ে নিলো।
শপিং শেষ করে তিন জনে একটা রেস্টুরেন্টের উদ্দেশ্য রওনা হলো।আয়ান প্রাপ্তি আর অরণীকে রেস্টুরেন্টের সামনে নামিয়ে দিয়ে,তোমরা গিয়ে বসো আমি গাড়িটা রেখে আসছি।প্রাপ্তি আর অরণী কথা বলতে বলতে দুইজনে গিয়ে বসলো।অরণী বসতেই ফোনটা বেজে উঠলো।
অরণী ফোনটা পার্স থেকে বের করতে করতে সিয়াম মনে হয় ফোন করেছে, তুই এইখানে বস আমি কথা বলেই আসছি।
পাশের টেবিলের একটা লোক বার বার প্রাপ্তিকে দেখছে।প্রাপ্তির নজর পড়তেই অস অসস্থি বোধ হচ্ছে।কিন্তু লোকটাকে কোথায় যেনো দেখেছি।মনে হচ্ছে ওনার সাথে আমার আগেও দেখা হয়েছে।ওনাকে দেখে বাজে লোক মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে ওনিও আমাকে চিনার চেষ্টা করছে।এমন সময় আয়ান এসে প্রাপ্তির পাশে বসতে বসতে কি ব্যাপার অরণী কই? এখনো খাবার অর্ডার করোনি?
কথা গুলো বলতে বলতে আয়ান খাবারে মেনু গুলো দেখছে।কি হলো কিছু বলছনাযে,প্রাপ্তি চুপ হয়ে থাকতে দেখে দুই হাত দিয়ে মুখটা মুছতে মুছতে প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখে সে পাশের টেবিলের দিকে তাকিয়ে আছে।নিজের হাত দিয়ে প্রাপ্তির মাথাটা ঘুরিয়ে, আমার দিকে তাকাও এতোক্ষণ কি জিজ্ঞেস করছি তোমায়?
আর এইভাবে ঘামাচ্ছো কেনো কি হয়েছে তোমার?
প্রাপ্তি নিজের ঘাম গুলো মুছতে যাবে তখনি আয়ান হাতটা ধরে ফেললো।আয়ানের হাত ধরতে দেখে প্রাপ্তি আস্তে করে বললো কিছু হয়নি।এমনি হয়তো ঘামাচ্ছি।
আয়ান অনেকক্ষণ প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে থেকে তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে।ঘামালেও মানুষকে সুন্দর দেখায় এইটা তোমাকে দেখে বুজলাম।এখন আমি তোমার ঘাম খাবো।
প্রাপ্তি -(চোখ মুখ কুঁচকে) কিহ্। আপনার মাথা খারাপ হলো নাকি? কি উল্টা পাল্টা বকছেন? (প্রাপ্তি ভেবেছে আয়ান হয়তো তাকে কিস করা কথা বলছে। এইখানে পাবলিক প্লেসে যে ওনার মাথায় কি ভূত চাপছে বুজতেই তো পারছিনা।)আমি বুজেছি কি বলতে চাচ্ছেন আমরা বাসায় যাই তারপর না হয়,,,,,,
আয়ান -না এইখানেই,,,কথাটা বলেই প্রাপ্তির হাত ছেড়ে দিয়ে প্রাপ্তির কপাল থেকে একটু খানি ঘাম আয়ান মুখে দিয়ে হুম্মম্মম্মম অনেক টেস্ট।
প্রাপ্তি আয়ানের দিকে অবাক চোখে নিস্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।,,,,,,
চলবে,,,,