গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story) পর্ব- ৪৫+৪৬

0
3169

গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
পর্ব- ৪৫+৪৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

রুদ্রিককে দেখেই জেনি রুদ্রিকের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। নিজের স্বামীর বুকে অন্য কাউকে দেখে আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। রুদ্রিকের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জেনি কেঁদে উঠলো। আমি নিজের সামনে সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখতে পারছি । ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ছুটে গেলাম বাইরের দিকে।
রুদ্রিক কাজলকে দেখতে পেলো। তাই সে নিজের থেকে তাড়াতাড়ি জেনিকে ছাড়িয়ে কঠোর গলায় বলল,

—“কি করছো কি জেনি? বিহেভ ইউর সেল্ফ!
কাজল বোধহয় আমাকে ভূল বুঝলো। ”

জেনি অনুনয়ের চোখে তাঁকিয়ে বলল,

—“আমি আসলে বুঝতে পারিনি। সরি রুদ্রিক। আমি আসলে ইমোশোনাল হয়ে পড়েছিলাম। ”

রুদ্রিক আর অপেক্ষা না করে কাজলের পিছনে ছুটে চলল।

এইদিকে,

আমি এলোমেলো হয়ে হেঁটে চলেছি। হাটতেও কষ্ট হচ্ছে। রুদ্রিককে অফিসে যাওয়ার পরে, অফিসের একজন স্টাফ আমাকে যখন খবর দেয় জেনি অফিসে এসেছে,তখনি আমিও অফিসে যায়।বিষয়টা দেখার জন্যে,কিন্তু বিষয়টা দেখতে এসে এতো বড় সারপ্রাইজড হয়ে যাবো ভাবিনি। জেনি আবারোও রুদ্রিককের জীবনে ফিরে এসেছে। তাইতো রুদ্রিকের আচরণ এতোটা পরিবর্তন।
সবটাই আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি। আমার ভাবনার মাঝেই রুদ্রিকের গাড়িটা আমার সামনে আসে। আমি থেমে যাই। রুদ্রিক গাড়ি থেকে নেমে আমার কাছে এসে, আমার গালে হাত দিয়ে বলে,

—“জানেমান, তুই এইভাবে চলে আসলি কেনো?তুই জানিস? আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এতোটা দায়িত্বহীন কীভাবে তুই আমাকে বল? তুই কি ভূলে গেলি এখন তুই একা না আমাদের বেবী ও আছে তোর সাথে। ”

রুদ্রিকের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাঁসি মুখে ফুটে উঠলো। আমি রুদ্রিকের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,

—“তাই বুঝি? তোমার মনে আছে? আমাদের সাথে এখন আমাদের বেবীও আছে। যদি তাই থাকতো তাহলে জেনীকে তুমি নিজের লাইফের আবারো এলাও করতে নাহ রুদ্রিক। ”

রুদ্রিক আমাকে কিছু বুঝাতে চাইবে,আমি আবারোও বলে উঠলাম,

—-“রুদ্রিক আমাকে কিছু বুঝাতে এসো নাহ। আমি সবকিছু নিজের চোখে সবকিছু দেখে ফেলেছি। সো তুমি আমাকে বুঝাতে এসো নাহ। আসলে ভূলটা আমারই ছিলো যে, আমি ভেবেছি তুমি হয়তো পরিবর্তন হয়ে গিয়েছো,কিন্তু আমি ভূল। ”

কথাটি বলে আমি কেঁদে উঠলাম।

রুদ্রিক আমার কথা শুনে তেমন একটা প্রতিক্রিয়া করলো নাহ।

কেননা সে জানে কাজলের প্রতিটা কথায় রয়েছে অভিমান। এই অভিমান দূর করতে অনেক কাঠখড় পুরাতে হবে।

রুদ্রিক নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,

—-“চোখের দেখা যে সত্যি নয়, তা তো তুই খুব ভালো করে জানিস কাজল। আমি জানি তুই চোখের দেখাটা বিশ্বাস করিস নাহ।
তাহলে তবুও জোড় করে বিশ্বাস করছিস কেন?”

আমি কাঠকাঠ গলায় বললাম,

—“আমার থেকে তুমি আমাকে চিনো বেশি? ”

—-“হুম তুইতো শুধু আমার ভালোবাসার মানুষ তো নয় তুই আমার স্ত্রীও। সংসার করছি,অথচ নিজের স্ত্রীকে চিনবো নাহ। ভালোবাসলেই তো আর একজন মানুষকে চিনা যায়না তাইনা? আগে তাকে পুরোপুরিভাবে চিনতে হলে, তার সাথে সংসার করতে হয়।”

—–“তাইতো আমি তোমাকে চিনতে পারলাম নাহ রুদ্রিক। ”

—-“সত্যি চিনতে পারিস নি? ”

রুদ্রিকের কথায় কোনো জবাবা দিলাম। দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটতে লাগলাম। রুদ্রিক ও আমার পিছন পিছন হাঁটতে লাগলো।

আমি রাগ নিয়েই বাড়িতে হেঁটে চলে এলাম। বাড়িতে এসেই কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমের দিকে রওনা দিলাম। আমার পিছন পিছন রুদ্রিক ও বাড়িতে চলে এলো।

রুদ্রিকের মা রুদ্রিককে ইশারা করে বলে ‘কাজলর হঠাৎ কি হলো? ‘

রুদ্রিক মাথা নাড়িয়ে বলল,

—“সব ঠিক আছে মা। ”

রুদ্রিক সিথির কাছে গিয়ে বলল,

—“তোকে রাস্তায় আসার পথে যা যা করতে বলেছিলাম, করেছিলি? ”

সিথি রুদ্রিককে ভরসা দিয়ে বলে,

—“তুই নিশ্চিন্ত থাক ভাইয়ূ। তুই এখন আমার অবুঝ
ভাবিকে গিয়ে বুঝাও। ”

রুদ্রিক উপরে গিয়ে দেখে,কাজল নিজের মতো বিড়বিড় করছে আর কাপড় সব ব্যাগে গুছিয়ে নিচ্ছে।

রুদ্রিক দেখে আমি মুখ ফুলিয়ে আবারো কাপড় গুছাতে শুরু করলাম। রুদ্রিক বলল,

—-“কোথায় যাচ্ছিস? ”

—-“আমি নিজের বাড়ি চলে যাচ্ছি। কেউ যেনো আমাকে না আটকায়। ”

রুদ্রিক কিছু না বললো নাহ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলে জেল দিতে লাগলো। আমি রুদ্রিককে দেখে খানিক্টা অবাক হলাম বটে। এই মানুষটা আমার যাওয়ার কথা শুনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো নাহ কিংবা আমাকে আটকাতেও চাইলো নাহ। এতোটা পরিবর্তন কীভাবে?
আমার এখন গলা ফাঁটিয়ে কান্না করতে ইচ্ছে করছে। আমি রুদ্রিকের দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে, বেড়িয়ে গেলাম। সিড়ির কাছে আসতেই রুদ্রিক আমাকে কোলে তুলে নিলো। আমি কিছুটা হচকিয়ে গিয়ে বললাম,

—“কি হচ্ছে কি? ”

রুদ্রিক আমাকে কোলে তুলে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নীচে নামিয়ে দিয়ে বলল,

—“সিড়িতে তেল ছিলো পড়ে গেলে আমার বেবীর ক্ষতি হতো। তাই আর কি নীচে নামিয়ে দিয়ে গেলাম। এখন তুই যেতে পারিস।

কথাটি বলে রুদ্রিক চলে গেলো।

আমি রুদ্রিকের যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে রইলাম। এই মানুষটাকে আমি চিনতে পারছি নাহ।
মা বাইরে চলে গেছে। তাই এই সুযোগেই আমি বেড়িয়ে গেলাম।

কাজল বেড়িয়ে যেতেই সিথি রুদ্রিকের কাছে এসে বলল,

—“ভাইয়ূ কাজল তো একা চলে যাচ্ছে। ”

—-“আপাতত আটকাস নাহ। ”

—-“কিন্তু ভাইয়ূ……

সিথির বলার মাঝেই রুদ্রিক বলল,

—-“আমি ড্রাইভারকে কাজলের পিছনে পাঠিয়ে দিয়েছি। সমস্যা হবেনা।”

সিথি একটা কথা ভেবে বলল,

—-“আমি শুধু একটাই কথা ভাবছি যে, আমাদের বুদ্ধিমতী কাজল এমন ছেলে-মানুষ কীভাবে হয়ে গেলো? ”

সিথির কথার মাঝেই রুদ্রিকের মা এসে বললেন,

—-“মেয়েদের এই সময় মুড সুইং হয় বুঝেছিস? তারা সন্তানকে গর্ভ ধারণ করার সময় নিজেরাই বাচ্ছা মানুষ হয়ে উঠে। ”

রুদ্রিকের মাকে দেখে রুদ্রিক বলল,

—-“মা! তুমি? ”

রুদ্রিকের মা রুদ্রিকের গালে হাত দিয়ে বলল,

—“রুদ্রিক বউমাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো। জানিনা তোমাদের মাথায় কি চলছে কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখবে হিতে যেনো বিপরীত না হয়ে যায়। ”

লকাপে বসে আছে ইশানি। একজন মহিলা এসে বলে,
—“আপনার হাজবেন্ডের মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়েছে।”

ইশানি কিছু না বলে পুলিশ মহিলার পিছন পিছন হাঁটতে লাগলো। ইশানির চোখের নীচে কালি পড়ে গেছে। গোছানো ইশানি কেমন যেনো অগাছালো হয়ে গেছে। ইশানিকে মর্গে নিয়ে আসা হলো। ইশানি দেখেই মাহিরের লাশের থেকে সাদা চাদর দিয়ে আবৃত মাহিরের মুখখানা বের হয়ে গেলো। দীর্ঘ ৭মাস লড়াই করে অবশেষে মাহির মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়ে আজ মারা গেলো। ইশানি এগিয়ে এসে,মাহিরের কপালে হাত বুলিয়ে আবারো মাহিরের মুখে চাঁদর দিয়ে আবৃত করে দিলো। ইশানির চোখ দিয়ে এক ফোটা জল ও গড়িয়ে পড়লো নাহ। সবাই অবাক দৃষ্টিতে ইশানির দিকে তাঁকিয়ে আছে। যে মানুষ নিজের স্বামীকে এতোটা ভালোবাসে, সেই ইশানির নিজের স্বামীর মৃত্যুতে এতোটুকুও চোখে জল নেই। ইশানি আকাশের দিকে তাঁকিয়ে বলল,
—“ভালো থেকো মাহির। অনেক ভালো থেকো।”

একজন পুলিশ এগিয়ে এসে বলল,

—“আমার মনে হয় উনার পরিবারকে খবর দেওয়া উচিৎ। ”

পরিবারের কথা শুনে ইশানি রক্তচক্ষু দিয়ে পুলিশের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

—“একদম নাহ। কাউকে খবর দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ”

পুলিশ মহিলা বলে উঠেন,
—“কি বলছেন কি….

মহিলাকে থামিয়ে ইশানি কঠোর গলায় বলল,

—-“আমি মানা করেছি। জানানো হবেনা মানে হবেনা। মাহিরের দাফনের ব্যবস্হা করুন। ”

কথাটি বলে ইশানি মাহিরের দিকে তাঁকিয়েই রইলো।

ইশানি হাবভাব দেখে সবার কেমন যেনো খটকা লাগছিলো।

_________

আমাকে হঠাৎ বাড়িতে দেখে মা এসে বলল,

—-“কাজল, তুই হঠাৎ? ”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,

—-“কেনো আমি আসতে পারিনা? ”

—-“নাহ। আমি আসলে বলতে চেয়েছিলাম যে, তুই একা জামাই কোথায়? ”

মায়ের কথা শুনে রাগ হচ্ছে নিজের বাড়িতে আসতে কী এখন একে ওকে নিয়ে আসতে হবে?

আমি রাগ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম। মা হয়তো কিছুই বুঝলো নাহ আমার মতিগতি।

_________
আমার কথা সব কথা শুনে ছুটকি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

—-“তোর কী মনে হয় আপাই? রুদ্রিক ভাইয়ের জেনির সাথে কিছু আছে। ”

আমি ছুটকির দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

—-“আমি জানি রুদ্রিক এমন কিছু করবে নাহ। এর পিছনে অন্য গল্প রয়েছে।
রুদ্রিকের উপর আমার ভরসা আছে। ”

—-“বাবাহ এতেটা বিশ্বাস? ”

—-“হু। কেননা ভালোবাসার মূল মন্ত্র হলো বিশ্বাস,ভরসা। রুদ্রিককে ভালোবাসি অথচ বিশ্বাস করবো নাহ? তার উপর ভরসা করবো নাহ? ”

ছুটকি বলল,

—-“তাহলে হঠাৎ রাগ করে এলে যে? ”

আমি থমথমে গলায় বললাম,

—-“রাগ হয়েছিলো প্রচন্ড। নিজের স্বামীর বুকে অন্য কাউকে কখনোই সহ্য করা যায়না। আমি সেখানে কীভাবে সহ্য করবো বল? যার বুকে আমি মাথা রেখে ঘুমাই, সেই বুকে অন্য কেউ মেয়েকে সত্যি সহ্য করা যায়না। যাক অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়। ”

কথাটি বলে আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। যদিও আমি জানি আজ রাতে আমার ঘুম আর আসছে।

রুদ্রিক কাজলের ছবির দিকে হাঁসলো। কাজলকে ছাড়া আজকে তার সত্যি ঘুম হবে নাহ। তাই রুদ্রিক আকাশপানে তাঁকিয়ে আনমনে গাঁইতে লাগলো,

—-“খোঁলা জানালা দখিনের বাতাসে ঢেকে যায় পর্দার আড়ালে

কখন তুমি এসে হেঁসে বলে দাও আমি আছি তোমার পাশে। ”

চলবে….

বাকীটা আগামী পর্বে ❤️

#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected story)
#পর্ব- ৪৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)

ভোরের আলো মুখে পড়তেই আমি নিজেকে গাড়িতে আবিষ্কার করি। আমি তো নিজের বাড়িতে ছিলাম,গাড়িতে এলাম কীভাবে? আমার ভাবনার মাঝেই রুদ্রিক ড্রাইভ করতে করতে বলল,
–“ম্যাডাম আপনার ঘুম ভাঙলো তাহলে?”
রুদ্রিককে দেখে আমি আরেকদফা চমকে যাই। আমি চারপাশে তাঁকিয়ে দেখি আমরা থেকে ঢাকা থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি।
ভোর হয়ে গেছে। পাখিরা তাদের নীড় ছেড়ে দুরপ্রান্তে পাড়ি জমাচ্ছে নতুন কোনো ঠিকানা পাওয়ার আশায়। ভোরের আলো চারদিকটাকে যেনো সৌন্দর্যকে তুলে ধরছে। আমি সবকিছু ভূলে গিয়ে নিজের চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে দিলাম। ভোরের নির্মল বাতাস আমার চুলগুলোকে বার বার ছুঁয়ে দিচ্ছে যা হয়তো রুদ্রিকের নজর ও কেড়ে নিয়ে নিয়েছে। কেননা রুদ্রিক ড্রাইভিং এর মাঝে মাঝে আমাকে আড়চোখে দেখে নিচ্ছে। যা আমার চোখ পড়েছে।
আমি মুখ বেঁকিয়ে চুলগুলো বাঁধতে নিলে, রুদ্রিক
গাড়ি থামিয়ে দিলো। রুদ্রিক ড্রাইভিং সিট থেকে বেড়িয়ে আমার পাশে এসে বসলো। আমি রুদ্রিকের থেকে দূরে সরে যেতে নিলে, রুদ্রিক হেঁচটা টান দিয়ে আমার চুলগুলো পুনরায় ছেড়ে দিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,

—-“তুই জানিস জানেমান? আমার চোখ কত ঘুম?
কিন্তু তোর সৌন্দর্যের নেশার পড়ে গেলে ঘুম একেবারেই চলে যায়। আর তুই নিজের সৌন্দর্য ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়লি? সো ব্যাড। এখন যদি ড্রাইভ করতে গিয়ে, আমি ঘুমিয়ে যাই তখন কী হবে?

আমি রুদ্রিকের কিছুটা সরে এসে থমথমে গলায় বললাম,

—–“আমি তো নিজের বাড়িতে ছিলাম। এখানে কী করে এলাম?”

রুদ্রিক আড়মোড়া হয়ে বলল,

—“আমি নিয়ে এসেছি। তোকে ছাড়া রাত কাটছিলোই নাহ। তাই ভোরে গিয়েই তোকে কোলে তুলে আমার গাড়িতে নিয়ে আসি।”

—-“আমাকে কেনো নিয়ে এসেছেন? আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এখন? ”

রুদ্রিক ঠোটে বাঁকা হাঁসি ঝুঁলিয়ে বলল,

—“তা সময় আসলে ঠিক দেখতে পাবে। ”

রুদ্রিক আমার হাত ধরে বাইরের দিকে নিয়ে গেলো।

জায়গাটা শহরের থেকে বেশ দূরে মনে হচ্ছে। নিজের পাশে রুদ্রিককে না দেখে আমি আমি আশে-পাশে তাঁকিয়ে দেখি, রুদ্রিক একটা স্টোল থেকে পানির বোতল কিনে নিয়ে মুখে পানির ছিটা দিচ্ছে। আমিও ভাবলাম সামনের দিখে যাবো,কিন্তু রুদ্রিক হাত নাড়িয়ে আমাকে আসতে বারণ করলো। তাই আমিও থেমে গেলাম। রুদ্রিক এগিয়ে এসে আমার পানির বোতল ধরিয়ে দিয়ে বলল,

–“এই অবস্হায় এতো হাটাহাটি করা ঠিক নয়। বেবীর ক্ষতি হতে পারে। ”

আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,

—-“তাই বুঝি? তাহলে আপনি আমাকে এখানে এতোদূর নিয়ে এসেছেন কেনো? ”

রুদ্রিক আমার মাথায় হাল্কা গাট্টা মেরে বলে,

—“তুই এখন বুঝবিনা। গেলেই বুঝতে পারবি।আচ্ছা
তুই আমাকে আপনি করে বলছিস কেন? ”

—-“আমি আপনার সাথে রাগ করেছি হুহ। ”

—-“বাবাহ এতো রাগ? আমার শুভ্ররাঙাপরীর? ”

আমি শ্বাস ফেলে দমে যাওয়া গলায় বললাম,

—“রাগ হওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয় রুদ্রিক? তুমি বুঝতে পারছো? তোমার বুকে অন্য কাউকে দেখতে পেলে আমার কষ্ট হয় বুঝেছো? ”

কাজলের কথায় রুদ্রিক কাজলের দিকে তাঁকালো।

—“হুম আর কিছু? ”

আমি রুদ্রিকের শার্টের কলার চেপে ধরে বললাম,

—-“আজকে সহ্য করেছি রুদ্রিক, কিন্তু সবসময় আমি সহ্য করবো নাহ। তোমার বুকে শুধু আমি মাথা রাখতে পারবো। কেননা এইটা আমার অধিকার।

কথাটি বলে আমি গাড়িতে গিয়ে মুখ ঘোমড়া করে বসি পড়ি। রুদ্রিক মুচকি হাঁসল।

রুদ্রিকও গাড়িতে বসে আমার দিকে আচারের বাটি এগিয়ে দিলো। আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে রুদ্রিকের দিকে তাঁকাতেই, রুদ্রিক গাড়ির মিররের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

—“তোর মা অথার্ৎ আমার শ্বাশুড়ির মা দিয়েছেন। রাস্তায় তোর যদি বমি পায়। এসময় নাকি এইসব স্বাভাবিক তাই দিয়ে দিলো। ”

আমি আচার খাওয়া শুরু করে দিলাম। রুদ্রিক আমার দিকে তাঁকিয়ে ড্রাইভিং এ মন দিলো।

__________

গাড়ির ব্রেক মারতেই আমি কিছুটা ঝুঁকে গেলাম। আচার খেতে খেতে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। খেয়াল নেই।
সামনের দিকে তাঁকাতে দেখি রুদ্রিক নেই। রুদ্রিক আবার কোথায় গেলো?
আমি আশ-পাশ ভালো করে পরোখ করে দেখি আমি এখন সেন্টমার্টিনে। রুদ্রিক আমাকে ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিনে নিয়ে আসলো কেনো? রুদ্রিককে দেখতে না পেয়ে আমার এখন খুব করে ভয় করছে। আমি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালাম। এখন গোধূলীর বেলা। সেই ভোর বেলায় ঘুমিয়ে ছিলাম এখন গোধূলীর বেলাতে আমার ঘুম ভাঙলো।

আমি খেয়াল করে তাঁকিয়ে দেখি, দ্বীপের পাশে ছোট্ট ছোট্ট জাহাজ। তেমন লোক ও নেই।
একজন লোক জাহাজ থেকে এগিয়ে এসে বলল,

—“ম্যাম আপনি আসুন। ”

[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]

কিছু না ভেবে আমি উনার সাথে মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম জাহাজের দিকে। ছোট খাটোর মধ্যে বেশ সুন্দর জাহাজ। সাদা পর্দা দ্বারা জাহাজের এক অংশে ডেকোরেট করা। আমার বুঝতে বাকি রইলো নাহ। রুদ্রিকের কান্ড এইসব। আমি সামনে আসতেই
দেখি দিয়া পিপি , লাজুক আংকেল, সিথি, সাদি ভাইয়া ও আছে।

দিয়া পিপি ও লাজুক আংকেলকে দেখে আমি বলে উঠলাম,

—-“তোমরা কবে এলে পিপি? তোমরা এলে অথচ আমি জানিনা? ”

দিয়া পিপি মুচকি হেঁসে বললেন,

—“সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই জানাতে পারিনি।”

আমি কিছুটা প্রশ্নের সুরেই বললাম,

—-“উনি কোথায়? ”

—“উনি টা কে রে কাজল? ভাইয়ূ? মানে ভাইয়ূকে খুঁজছিস তুই? ”

মুখ টিপে হেঁসে বলল কথাটি সিথি। সাদি ভাইয়ার সিথির সাথে তাল মিলিয়ে বলল,

—-“আজ-কাল কাজলের চোখ শুধু আমাদের রুদ্রিককেই খুঁজে। ”

লাজুক আংকেল সাদি ভাইয়ার কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

—“আমারোও কিন্তু তাই মনে হচ্ছে। ”

দিয়া পিপি আলতো হেঁসে আমার দিকে তাঁকিয়ে বললেন,

—“সামনের দিকে যা কাজল। রুদ্রিক সামনেই আছে।”

পিপির কথা শুনে আমি আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলাম

সামনে এগোতেই গিটারের টুনটান শব্দ কানে আসলো। আমি সামনে তাঁকিয়ে দেখি,

রুদ্রিক গিটারে সুর তুলছে। আমাকে দেখে রুদ্রিক উঠে দাঁড়ালো।

আমি বলে উঠলাম,

—-“রুদ্রিক! ”

রুদ্রিক বাঁকা দাঁতের হাঁসি দিয়ে আমাকে পাশে বসতে বললো। আমিও পাশে বসে পড়লাম।

আমার দৃষ্টি সমুদ্রের নীল জলের দিকে। মনে হচ্ছে নীল জলের যেন বিছানানা। মাথার ওপরে গোধূলীর আলোর হাতছানি, পায়ের নিচে বালুকণার সুড়সুড়ি, তার মধ্যে সমুদ্রের মৃদু ঠান্ডা নোনা পানির মিশেলে দিব্যি গোধূলীর বেলার আরোহণ। সাথে হাল্কা গিটারের টুনটান শব্দ।

রুদ্রিক গিটার বাজাতে বাজাতে গাইতে লাগলো,

ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই
আর তুই ছাড়া গতি নেই

রুদ্রিক উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। আমিও মুচকি হেঁসে রুদ্রিকের হাত বাড়িয়ে দিলাম।

ছুঁয়ে দে আঙুল
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা
কথা দেয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাইরে না
ছুঁয়ে দে আঙুল
ফুঁটে যাবে ফুল, ভিজে যাবে গা
কথা দেয়া থাক
গেলে যাবি চোখের বাইরে না

সিথির দূরে দাঁড়িয়ে মুচকি হাঁসছে গাঁয়ে তার সবুজ রংয়ের শাড়ি। আজ তাকে অতিরিক্ত মাত্রায় সুন্দর লাগছে। সাদি সিথির হাত ধরে নিজের মুঠোয় নিয়ে বলল,

—“এইযে ম্যাডাম আপনি একটু কম হাঁসুন।আমার বড্ড প্রব্লেম হচ্ছে। ”

সিথি সাদির প্রশ্নে ভ্রু কুচকে তাঁকায়। যার অর্থ সাদির কথা সে কিছুই বুঝেনি।

—-“তোমার হাঁসির প্রতিটা প্রতিধ্বনি আমার হার্টব্রিটটাকে দ্বিগুন করে তুলছে। হয়তো প্রেমরোগে ধরেছে বলে। ”

সাদির কথায় সিথি লজ্জা পায়।

সাদি হাল্কা হেঁসে সিথির দিকে ঝুঁকে হাল্কা সুরে গাইতে থাকে,

—-“তোরই মতো কোনও একটা কেউ
কথা দিয়ে যায়, ছায়া হয়ে যায়
তোরই মতো কোনও একটা ঢেউ
ভাসিয়ে আমায় দূরে নিয়ে যায়।

দিয়া জাহাজের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পোজ দিচ্ছে আর সেল্ফি তুলছে। লাজুক দুর থেকে তাঁকিয়ে হাঁসছে। দিয়া হাত নাড়িয়ে লাজুককে কাছে ডাকছে সেল্ফি তুলে দিতে। লাজুক নিজের ক্যামেরটা নিয়ে দিয়ার কাছে চলে গেলো। লাজুক আসতেই দিয়া ভ্রু কুচকে বলল,

—“এইযে আমার পারসোনাল নাকবোচা ক্যামেরাম্যান এতো দেরী লাগে? ”

লাজুক চোখগুলো ছোট ছোট করে বলল,

—“এখন ক্যামেরা ম্যান ও হয়ে গেলাম। ”

দিয়া লাজুকের কাছে এসে লাজুকের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল,

—“হুম শুধু আমার পারসোনাল ক্যামেরাম্যান তাও সারাজীবনের জন্যে। ”

লাজুক সাদুরে গ্রহন করে বলল,

—“দিয়া ম্যাম সারাজীবনের জন্যে আপনার ক্যামেরাম্যান হওয়ার জন্যে আমি প্রস্তুত। ”

দিয়া হাঁসলো।

এদিকে,

রুদ্রিক আমাকে পিছনে ঘুড়িয়ে আমার ঘাড়ে আলতো করে চুমু খেয়ে আমার হাতে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে গাইতে থাকে,

-আটকে তোকে রাখতে চাইছি খুব
সকালে আমার, বিকেলে আমার
তুই ডাক না দিলে থাকবো আমি চুপ
দিনেতে আমার দুপুরে আমার

ঠিক এমন এভাবে
তুই থেকে যা স্বভাবে
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই
আর তুই ছাড়া গতি নেই

রুদ্রিকের গান থামিয়ে গেলো।

রুদ্রিকের গানের প্রতিটা কথা এতোটাই মহোনীয় যে
আমার দুচোখ ভরে উঠলো খুশির জলে।

মায়া কুঞ্জের মুসকানসহ সকল বাচ্ছারা এসে গানের সাথে তাল মিলিয়ে হাত তালি দিতে লাগলো। বাচ্ছাদের দেখে আমার মুখে হাঁসি ফুটে উঠে।

মুসকান আদো আদো গলায় বললো,

—“তালপ্রালাইত। ”

—-কিসের সারপ্রাইজ মুসু সোনা? ”

মুসকান ঠোট উল্টিয়ে বলল,

—-“কেনো তুমি জানোনা? নিউ বেবী আসতে তাল একটা ওয়েলকাম পার্টি লাগবে নাহ? তাই তো আমলা আজকে ওয়েলকাম পার্টি করবো। বাট তোমাল জন্যে তালপ্রাইত ছিলো। ”

মুসকানের পড়নে ছোট্ট বারবির ড্রেস। অনেক কিউট লাগছে ছোট্ট মুসকানকে।

রুদ্রিক মুসকানকে কোলে নিয়ে নিয়ে আলতো করে চুমু খায়। আমি মুসকানের গালদুটো টেনে বললাম,

—“বাবাহ আমার মুসু সোনাটাও আজকাল আমাকে সারপ্রাইজ দিচ্ছে। তোমার তো একটা গিফ্ট পাওয়ার দরকার। ”

কথাটি বলে আমিও মুসুর গালে চুমু খেলাম। রুদ্রিক আমার কানের কাছে আস্তে করে বলে উঠলো,

—-“আমারও কিন্তু গিফ্ট পাওয়া বাকি। আমিই কিন্তু সব পার্টির আয়োজন করেছি। ”

আমি রুদ্রিকের বুকে মৃদ্যু ধাক্কা দিয়ে হেঁসে উঠি।

রুদ্রিক মুসকানকে নীচে নামিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,

—-“ফাইনালি তুই হাঁসলি? বাবাহ আমার তো তোর অভিমান কাটাতেই এতো আয়োজন।”

—“মানে? ”

আমার প্রশ্নে জেনি হাঁসিমুখে এগিয়ে এসে বলল,

—“মানে টা আমি তোমাকে বলছি কাজল। ”

জেনিকে দেখে আমি কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেলাম। আমার আবারোও মনে পড়ে গেলো রুদ্রিকের বুকে কীভাবে জেনি লেপ্টে ছিলো।

জেনি আমার কাছে এসে কিছুটা অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বললো,

—“আমি সত্যি দুঃখিত কাজল কালকের আচরনের জন্যে। আমি তো নিজের লাইফে একেবারে সব কিছু হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজের পাপকর্মের জন্যে।
তোমার ক্ষতি করতে গিয়ে আমার সবকিছু হারিয়ে গিয়েছিলো আমার। রুদ্রিক আমাকে আমার শাস্তি দিয়েছে,কিন্তু রুদ্রিক আমার আর্থিক অবস্হা খারাপ দেখে আবারোও আমাকে আমার ক্যারিয়ার ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই আমি এতোটা ইমোশোনাল হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম সরি অনস মোর। আমি নিজে দেখেছি রুদ্রিক ঠিক কতটা তোমাকে খুব ভালোবাসে। কাজল ওকে কখনো ভূল বুঝো নাহ। ”

জেনির কথা শুনে আমি কি বলবো বুঝতে পারছি নাহ। আমি শাড়ির আঁচলে মুখ গুজে জাহাজের কিনারে চলে গেলাম।

জেনি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে রুদ্রিকের দিকে তাঁকালো। রুদ্রিক বলল,

—“আমি ওইদিকটা দেখছি জেনি। তুমি থাকো কেমন? ”

আমি গোধূলীর আকাশের দিকে তাঁকিয়ে কেঁদে উঠলাম।
কাজলের চোখে জলের বিন্দু। রুদ্রিক কাজলের জলটুকু মুছিয়ে ওষ্টদ্ধয় দ্বারা কাজলের চোখে চুমু খেয়ে বলল,

—“একদম কাঁদবি নাহ। গোধূলীর লগানে শুভ্ররাঙাপরীদের কাঁদতে নেই। কেননা শুভ্ররাঙাপরীর মায়াবী চোখের ফোঁটায় গোধূলীর রঙ যে ধূসর রংহীন হয়ে উঠে। আমার শুভ্ররাঙাপরী কাঁদলে আমি কিন্তু সহ্য করবো নাহ।”

আমি রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে বললাম,

—“আমি সত্যি সরি রুদ্রিক।

—“ডোন্ট সরি। ”

আমি কান্নামিশ্রিত গলায় বললাম,

—-“আমি খুব বাজে রুদ্রিক। সেদিন রাগের মাথায় কত কথা বলে ফেলেছি। আমি আসলে খুব খারাপ। ”

আমার ঠোটে আঙুল দিয়ে রুদ্রিক থামিয়ে দিয়ে বলে,

—“হয়েছে আর কিচ্ছু শুনতে চাইনা। কে বলেছে তুই খারাপ। আমি তো জানি তুই আমার কতটা ভালোবাসিস। তুই আমার জীবনে আমাকে এতো বড় একটা খুশি এতো মূল্যবান বাবা হওয়ার অনুভুতিটুকু আমার দিচ্ছিস আমার আর কি চাই বল?”

রুদ্রিক আমাকে নিজের সাথে চেপে বলে গোধূলীর দিকে তাঁকিয়ে মিহি কন্ঠে আস্তে করে বলে উঠলেন,
“Now i can realised that
Life is such a beautiful… Very beatiful..
But not without you…”
(এখন আমি বুঝতে পারছি। জীবনটা সুন্দর খুবই সুন্দর..। কিন্তু তোমাকে ছাড়া নাহ।)

কথাটি শুনে আমার চোখ থেকে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো….। উনি আমাকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন…।

এই মানুষটার প্রতিটা কথা এতোটা মায়া এতোটা মোহনীয় হয়ে থাকে যে নিজের চোখের পানি আটকানো হয়ে মুশকিল হয়।

তখনি পিছন থেকে সাদি ভাইয়া মুচকি হেঁসে বলে,

—“এইযে রুদ্রিক বাবু সবাই তোমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে তো। ”

সাদি ভাইয়ার কথা শুনে আমি রুদ্রিককে ছেড়ে দেই। রুদ্রিক ‘আমি আসছি ‘ কথাটি বলে সামনের দিকে যেতে নিলে, আমার পেটে হঠাৎ ব্যাথা করে উঠলো।

আমি জোড়ে ‘রুদ্রিক ‘ বলে চিৎকার করে বসে পড়লাম।

কাজলের চিৎকারে রুদ্রিক দৌড়ে কাজলের কাছে এসে বলল,

—“কাজল, কি হয়েছে তোর? কষ্ট হচ্ছে আমাকে বল? ”

আমি রুদ্রিকের শার্ট খামছে ধরে বললাম,

—-“আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি নাহ। আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। ”

বাকিরা ও চলে আসে।
আমি ব্যাথা আর সহ্য করতে পারছি নাহ। রুদ্রিক আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

—-“কাজল, তোর কি খুব কষ্ট হচ্ছে আমাকে বল?”

আমি ব্যাথায় কান্না করে দিয়ে বলি,

—“অনেক কষ্ট হচ্ছে রুদ্রিক। আমি বুঝতে পারছি নাহ হঠাৎ করে কিসের ব্যাথা শুরু হলো? ”

পিপি কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে বলে,

—“রুদ্রিক কাজলের অবস্হা বেশ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় কাজলকে এখুনি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। ”

পিপির কথা শুনে রুদ্রিক সায়। এদিকে কাজল ব্যাথায় চিৎকার করে কাঁদছে। কাজলের এমন অবস্হা দেখে রুদ্রিকের দিশেহারা অবস্হা।

বাকীটা আগামী পর্বে…

চলবে কী?

[এইযে পরীক্ষার মাঝে এতো বড় পর্ব দিলাম। কমেন্ত না করলে কাত্তি 😤]

লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here