আমার_গল্পে_তুমি ৩৩_পর্ব

আমার_গল্পে_তুমি ৩৩_পর্ব
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)

,
আর্দ্র বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ইয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো এতটা পথ আসলো একসাথে এর মাঝে ইয়ানা একবারও আর্দ্রর সাথে কথা বলেনি, আর্দ্র অবশ্য ইয়ানাকে এটা ওটা জিগাস করছিলো কিন্তু ইয়ানা একদম চুপ করে বসে ছিলো,, আর্দ্র ইয়ানাকে নিয়ে সোজা ওদের রুমে গিয়ে ইয়ানাকে বিছানায় বসায়ে দিলো,, তুমি একটু বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি, খবরদার বিছানা থেকে একদম নামবে না কিন্তু।

ইয়ানা তাচ্ছিল্য করে হেসে বলল, জুতা মেরে গরু দান,, আজকে আমার এই অবস্থার জন্য আপনি দায়ী প্রথমে তো অবিশ্বাস করলেন মারলেন তারপর এখন আবার ভালোবাসার নাটক করছেন,,। যখন শুনলেন আমি আপনার ভাবির জন্য এতোটা করেছি ঠিক তখনি আপনার আমার প্রতি ভালোবাসা উতলে উঠেলো ব্যাপারটা হাস্যকর না??

ইয়ানার কথায় আর্দ্র ভীষণ কষ্ট পেলো তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,, আমার ভালোবাসা তোমার কাছে নাটক মনে হচ্ছে?? তুমি আমার ভাবিকে আর তার বেবিকে বাঁচিয়েছো বলে আমি তোমাকে ভালোবাসিনি আমি তোমাকে সেই প্রথম থেকেই ভালোবেসে আসছি হমম প্রথম প্রথম আমি নিজেও বুঝতাম না কিন্তু পরে সময়ের সাথে সাথে বুঝেছি,, এটা সত্যি যে তোমাকে কখনো বলা হয়নি তবে ভালো আমি তোমাকেই বাসি সেটা তুমি নাটক বলো আর যাই বলো,, তুমি না মানলে আমার ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যাবে না।

আপনি যে এতো কথা বলছেন আমায় আচ্ছা আমায় একটা কথা বলুন তো, সাপোজ আমি যদি সেদিন রাস্তায় এক্সিডেন্ট করতাম বা সুহাগ ভাইয়া যদি আমাকে হসপিটালে না নিয়ে যেতো, আমি যদি ওই দিন মরে যেতাম তাহলে আপনি কি করতেন??

স্টপ কি সব আজে বাজে কথা বলছো আর কখনো এসব কথা বলবে না, আরে আমি বলছি তো আমার ভুল হয়েছে আর মানুষ মাএই ভুল করে তো এর জন্য কি আমায় ফাঁসিতে চড়াবে?? বলো কি করতে হবে আমি ভুল যখন করেছি তখন তো শাস্তি পেতেই হবে বলো তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নেবো।

আমার ক্ষিদে পেয়েছে খেতে দিন আমায় সেই কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছে আমি যে এদিকে ক্ষিদেই মরে যাচ্ছি ওনার কোনো হুশই নেই,, মুখ ফুলিয়ে বলল ইয়ানা।

ইয়ানার কথায় আর্দ্র পুরাই বোকা বনে গেছে নিজেই প্রথমে কথা তুলে এখন নিজেই আমায় কথা শুনাচ্ছে, আর্দ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুম থেকে চলে গেলো৷

মিস্টার আর্দ্র আপনি আমায় শুধু শুধু মেরেছেন যেখানে আমার মা কখনো আমার গায়ে হাত তুলেনি সেখানে আপনি বিনাকারণে আমায় চড় মেরেছেন এর মাশুল তো আপনাকে দিতেই হবে,, আপনাকে আমি প্রতিটা পদে পদে বুঝিয়ে দেবো যে ভালোবাসার মানুষকে অবিশ্বাস করলে তাকে আঘাত করলে কেমন লাগে ,, বাঁকা হেসে কথাগুলো বলল ইয়ানা।

ওদিকে বাড়িতে কেউ না থাকায় আর্দ্র কে নিজেরই রান্না করা লাগছে আজকে বিকেলে সবাই আসবে ভাবিকে নিয়ে,, আর্দ্র কোনো রকমে নুডলস বানিয়ে নিয়ে গেলো নুডলস বানাতে গিয়ে হাতে ফোসকাও বানিয়ে ফেলেছে একটা বাটিতে করে নুডলস নিয়ে ইয়ানার কাছে গেলো,,, আমি বেশি কিছু রান্না করতে পারি না যে টুকু পারি সেটুকুই করে এনেছি নাপ হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

ছিঃ আপনার কি মনে হয় আমি পিছট?? মুখ না ধুয়েই খাবো, আমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে চলুন মুখ ধুবো তারপর খাবো,

ও হ্যাঁ তুমি তো মুখ ধৌওনি চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি,, তারপর আর্দ্র ইয়ানাকে কোলে তুলে নিলো ইয়ানা আর্দ্রর গলা জড়িয়ে ধরে মনে মনে বলল,, দ্যা গ্রেট আর্দ্র চৌধুরী আপনাকে তো আমি নাকানি চুবানি খাইয়েই ছাড়বো আমাকে চড় মারা কত্তবড় সাহস, তারপর আর্দ্র ইয়ানাকে ফ্রেশ করিয়ে নিয়ে আবার বেডে বসিয়ে দিলো,, এই বার নাও হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

তার কোনো দরকার নেই মিস্টার আর্দ্র আল্লাহ আমার দুইটা হাত দিয়েছে আমি নিজের হাতেই খেতে পারবো, ইয়ানা আর্দ্রর হাত থেকে নুডলস এর বাটিটা নিয়ে নিজের হাতে খেতে লাগল,, আড় চোখে তাকিয়ে দ্যাখে আর্দ্র মন খারাপ করে বসে আছে দেখে মনে হচ্ছে যেনো কোনো বাচ্চা ছেলের হাত থেকে তার সবচেয়ে প্রিয় খেলনা কেউ কেরে নিয়েছে, ইয়ানা বাঁকা হেসে চোখ সরাতে গেলেই দেখলো আর্দ্রর হাতে ফোঁসকা পড়ে গেছে।

এটা হলো কি করে দেখে কাজ করতে পারেন না?? জ্বলছে খুব তাই না??

তুমি ফুঁ দিয়ে মলম লাগিয়ে দাও তাহলে ঠিক হয়ে যাবে।

ইয়ানা আর্দ্রর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে হাতে ফুঁ দিতে লাগল তারপর মলম লাগিয়ে দিয়ে বলল,, ভাববেন না যে আমি আপনাকে ভালোবেসে এসব করছি,, আপনার হাতে যদি এমন ফোঁসকা থাকে তাহলে আমায় কোলে নিবে কে তাই মলম লাগিয়ে দিলাম এর আবার অন্য মানে বার করবেন না।

আর্দ্র ইয়ানার দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি হাসলো।
,,,,,,,,,,
রান্না হলো?? সেই সকালে নুডলস খাইছি আর কিছুই তো খেতে দিলেন না,,, না খাইয়ে মারবেন নাকি?? সেই তখন থেকে রান্না ঘরে কি করছে,, কে জানে বলি আমি কি আজকে খাবার পাবো?? বেডরুম থেকে চেঁচিয়ে বলল ইয়ানা।

এই তো হয়ে গেছে আর পাঁচ মিনিট,, রান্না ঘর থেকে বলল আর্দ্র,, কি দিন আসলো তোর আর্দ্র শেষে কিনা তুই রান্না করছিস?? আর কি কি যে কপালে তা আল্লাহ জানে, কি খেয়ে যে বউকে চড় মাড়তে গিছিলাম তা কে জানে,, বিরবির করে বলল আর্দ্র।

পাঁচ মিনিট বলে বলে তো ১ ঘন্টা লাগিয়ে দিলেন তাও তো কিছুই হলো না,, ইয়ানা আস্তে করে বেড থেকে নেমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সিঁড়ির কাছে গেলো তারপর আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নেমে রান্নাঘরের সামনে গিয়ে হা হয়ে গেলো,, কেননা আর্দ্রর সারা গায়ে ময়দা আর ফ্লোরে সবকিছুর খোসা পড়ে আছে আর তার মধ্যে আর্দ্র বসে বসে সবজি কাটছে।

এসব কি??

আরে তুমি এখানে আসতে গেলে কেনো আমি তো বলছি যে এখনি হয়ে যাবে তুমি আবার কষ্ট করে আসতে গেলে কেনো।

হুমম সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি কেমন রান্না হচ্ছে ,, আর এভাবে ফ্লোরে বসে সবজি কাটছেন কেনো??

তো আমি কি এসব পারি নাকি? না কখনো করেছি, আমি শুধু পারি কীভাবে মিটিং হ্যান্ডেল করতে হয় কীভাবে ডিল করতে হয় কীভাবে অফিসে সামলাতে হয়।

শুধু এসব কাজ পারলেই হয়না সাথে ঘরের কাজও শিখে রাখতে হয়,, দেখি সরুন আমি রান্না করছি।

একদম না তুমি বরং এখানে বসে আমায় বলে দাও আমি সেই সেই মতো সবকিছু করছি তাহলেই তো হয়ে গেলো।

ওকে,, তারপর ইয়ানা আর্দ্র কে সবকিছু বুঝিয়ে দিলো কীভাবে কি করতে হবে আর্দ্র ও ইয়ানার কথা মতো রান্নার করতে পারলো ,, অবশেষে রান্না শেষ হলো,, চলো তোমাকে রুমে নিয়ে যাই।

আর্দ্র ইয়ানাকে কোলে নিয়ে রুমে গেলো তারপর বেডে বসিয়ে দিয়ে বলল, তুমি এখানে বসো আমি গোসল করে আসছি।

আরে আজব নিজে তো গোসল করতে যাচ্ছেন আমি যে গোসল করেনি সেদিকে খেয়াল আছে কারো??

ইয়ানার কথায় আর্দ্র বাঁকা হেসে বলল, তাহলে তো ভালোই হলো চলো দুজনে একসাথে গোসল করি তাহলে এককাজে দুই কাজ হয়ে যাবে।

কখনোই না আমি আপনার সাথে জীবনেও গোসল করবো না,,কিন্তু কে শোনে কার কথা আর্দ্র ইয়ানকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো আর ওদিকে ইয়ানা চেঁচিয়েই যাচ্ছে,,, গোসল শেষে আর্দ্র ইয়ানাকে চেঞ্জ করিয়ে মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে বেডে এনে বসিয়ে দিলো আর ইয়ানা তো রেগে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে, তখনি কলিং বেল বেজে উঠল, তুমি এখানে বসো মনে হয় সবাই চলে এসেছে আমি দরজা খুলে দিয়ে আসছি।

চলবো,,,,,,???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here