স্বর্ণাভ সুখানুভূতি। পর্ব-২৪

0
1595

#স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি। (পর্ব-২৪)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

মুশরাফা আলতো হাতে জাওয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। জাওয়াদের চোখ বন্ধ। গায়ের কাঁপুনি তখনো থামেনি, মুখভঙ্গি ও পরিবর্তন হয়নি। মুশরাফার চেহারায় আতঙ্কের রেখা, মনে মনে দোয়া পড়ছে। সে নিশ্চিত মাইগ্রেনের ব্যাথা নয় এটা, মাইগ্রেনেএ ব্যাথায় গায়ে কাপুনি দেয়না। মুশরাফা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে প্রশ্ন করল,
‘ মাইগ্রেনের ব্যাথায় গায়ের কাঁপুনি হয়না। আপনার কী হয়েছে বলুন তো! কোথায় ব্যাথা হচ্ছে? আমাকে বলুন!’

জাওয়াদ নিশ্চল শুয়ে রইল, উত্তর দিল না। মুশরাফা আবার বলল,
‘আচ্ছা আপনি বসেন, আমি জমজমের পানি নিয়ে আসি। ‘

মুশরাফা উঠতে নিল। জাওয়াদ ওর হাত ধরে বসিয়ে বলল, ‘ কিছু আনতে হবে না। এমনিই ঠিক হয়ে যাবে। তুমি মাথা টিপে দাও।’

মুশরাফা আবার বলল, ‘ একবারে খাচ নিয়তে, দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে জমজমের পানি পান করলে মনের আশা পূর্ণ হয়, সেই সাথে রোগ সারে। নিয়ে আসি না একটু!’

জাওয়াদ দিল না। অগত্যা ওকে থাকতে হলো। জাওয়াদের মাথা টিপে দিলে। মিনিট পাঁচেক গড়াল এভাবে। আকস্মিক জাওয়াদ উঠে বসল। বলল,
‘আমি বাসায় যাব।’

মুশরাফা পরখ করল ওকে। ওর চোখ মুখ স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি। মুশরাফা প্রশ্ন করল,
‘আপনার তো আজ থাকার কথা ছিল।’

জাওয়াদ বিরক্তভরা চোখে বলল, ‘তোমাদের এখানে মশাগুলো ঠিক তোমার মতো। ভীষণ বিরক্ত করে। রাতে ঘুম হয় নি। বাসায় গিয়ে ঘুমাব।’

‘আর আসবেন না?’

জাওয়াদ উত্তর দিল না। উঠে তৈরি হয়ে নিল। বিদায় বেলা ওকে দরজা অবধি এগিয়ে দিল মুশরাফা। দরজা বন্ধ করার সময় বলল,
‘ দুপুরে না হলে রাতের খাবারে যোগ দিয়েন। মামা মনে কষ্ট নিবেন।’
‘দেখা যাক।’

জাওয়াদ নিচে না গিয়ে উপরে গেল, অনিকের বাসায়। হেসে বলল,
‘কিরে বিয়াত্তা ভদ্রলোক, কী খবর তোর?’

জাওয়াদ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকাল, ‘বউ নেই বাসায়। কোথায় একটু বন্ধুর বাসায় গিয়ে চিল করব। তার জো নেই। তুই শালা, থাকোস শ্বশুরের মাথার উপর। তোর বাসা বদলা। ‘

অনিক ও হেসে বলল, ‘ তুই এই বিল্ডিংয়ে বিয়ে করার পর ব্যাপক সুবিধা পাচ্ছি। নাজমুল আংকেলের বাসায় ভালো মন্দ রান্না হলেই বক্স ভর্তি খাবার চলে আসে। সেই সাথে ফ্রি দাবাত সাবাত তো আছে। আমার মাসিক খাবার খরচ অর্ধেক বেঁচে যায়। একটা ফ্ল্যাট দেখেছি, খাবার টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনব। তারপর ও এই বাসা ছাড়ব না। ফ্রিতে খেয়ে যাব। এত সুবিধা কই পাব বল? বাসা বদলানো যাবে না। ‘

জাওয়াদ রেগে বলল, ‘আমার চিল উড়াই নিয়ে তুই ফ্ল্যাট কিনবি? কিনাচ্ছি তোরে। আমি আজই মামীকে বলব, তোর ডায়েবিটিস ধরা পড়ছে, মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া মানা। আর পাইলসের সমস্যা বেড়েছে। মশলা জাতীয় খাবার হারাম তোর জন্য।’

অনিক ক্ষুব্ধ হয়ে তাকাল, ‘ অল্প একটু খাবারের জন্য আমাকে পাইলস আর ডায়েবেটিসের রোগী বানিয়ে দিলি! তোর মতো বন্ধু শত্রুর ও না হোক। যাহ খাবো না তোর মামা শ্বশুরের বাসার খাবার। ‘

জাওয়াদ দায়সারাভাবে বলল,
‘খাস না। চল এখন বেরুবো।’
‘কই যাবি।’
‘লং ড্রাইভে যাব।’
অনিক ওকে পরখ করল অন্তর্ভেদী নজরে। তারপর বলল,
‘ তুই কি কোন কারণে আপসেট?’

জাওয়াদ সরাসরি উত্তর দিল না। বিরস মুখে বলল,
‘ কেমন যেন অশান্তি লাগছে। চল কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি।’

অনিক কয়েকবার জিজ্ঞেস করল, জাওয়াদ মুখ খুলল। বার দুয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

নাজমুল সাহেব বাইরে থেকে এসে শুয়েছেন। উঠে জাওয়াদকে নাস্তার টেবিলে জাওয়াদকে খুঁজলেন। মুশরাফা চেয়ার টেনে বসে বলল,
‘নামাজ থেকে ফিরেই উনার শরীর খারাপ হয়ে গেছে। তাই বাসায় চলে গেছেন। নামাজ পড়তে গিয়ে কোন সমস্যা হয়েছিল মামা?’

কথা শুনে দুঃখিত হওয়ার কথা থাকলেও নাজমুল সাহবকে একটুও ব্যথিত দেখাল না। উনি প্রশান্তিময় হাসি দিলেন। তাকে ভীষণ খুশি দেখাচ্ছে। হাসি থামিয়ে বললেন,
‘কিছু হয়নি। বাসায় যাবে বলছিল। গেছে বোধহয়। ফিরে আসবে আবার। ‘

মামা কিছু মনে করেন নি, এতে স্বস্তি ফেল মুশরাফা। খাবার শেষ করে উঠে গেল। ফরিদা স্বামীকে পরখ করে বললন,
‘ তোমাকে এমন খুশি দেখাচ্ছে কেন?’
‘ মেয়ে বিয়ে দেয়ার পর বাবা যখন নিশ্চিত হয়, পাত্রটা ভালো পড়েছে। তার মেয়ের খেয়াল রাখবে। অতীতের কষ্ট ভুলিয়ে দিবে। তখন বাবাদের খুশি হতে হয়।’ আবার হেসে বললেন নাজমুল সাহেব।

ফরিদা চমকালেন। অবাক চোখে চাইলেন স্বামীর দিকে,
‘তুমি সব বলে দিয়েছো?’

নাজমুল সাহেব সে উত্তর দিলেন না। হেসে বললেন,
‘ তখন তুমি যদি ওর মুখভঙ্গি দেখতে, খুশিতে মরে যেতে। আমরা এমন কাউকেই চেয়েছি ওর জন্য।’

অমীমাংসিত রহস্যের সাথে পাল্লা দিয়ে এগুচ্ছে সময়। মুশরাফা এখনো ভেবে উঠতে পারছে না, জাওয়াদের হয়েছেটা কী? বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিষ্ক ও যেন কাজ করছে না। আন্দাজ করতে পারছে না কোন কারণ? কী হতে পারে? এখন কেমন আছে? বেশ কয়েকবার ফোন দিল, জাওয়াদ ধরল না। দুপুরের পর মুশরাফা ভিডিয়ো কল দিল। জাওয়াদ তখন জুম’আর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়েছে। এখানে অনেক মানুষ। জাওয়াদ ফোন ধরল না। মানুষ কমে এলো। ওরা মসজিদ থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরল। মসজিদের সামনে বিশাল খালি মাঠ। চারপাশে গাছ, জায়গাটা নিরিবিলি। জাওয়াদ জায়গাটা পরখ করতে করতে অনিককে বলল,
‘তুই দাঁড়া, আমি কথা বলে আসি।’

অনিক সায় জানাল। জাওয়াদ একটা গাছের নিচে দাঁড়াল। চারদিকে চোখ বুলাল কেউ আছে কি না, নাহ্ নেই। নিশ্চিত হয়ে কল ব্যাক করল। মুশরাফা ওর কলেরর অপেক্ষাতেই ছিল। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে কল ধরল। মিষ্টিসুরে বলল,
‘আসসালামু আলাইকুম। আপনি ঠিক আছেন? কল দিলাম ধরলেন না কেন? এখন কেমন আছেন? মাথা ব্যাথা কমেছে? ‘

উদ্ধিগ্ন হয়ে প্রশ্নঝুলি খুলে বসল মুশরাফা। রোদের চটা পড়ছে। তাকানো যাচ্ছে না। জাওয়াদ চশমা পরে নিল। তারপর ফোন বাকিয়ে তাকাল ফোনের দিকে। অন্তর্ভেদী চোখে মুশরাফার কপালের চিন্তার ভাজ, উদ্ধিগ্ন চোখ পরখ করল। ধীর স্বরে বলল,
‘ আমি ঠিক আছি।’
‘ অন্তত একটা ফোন বা ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে পারতেন।’ কাতর গলায় বলল মুশরাফা। জাওয়াদ বলল,
‘ফোনে চার্জ ছিল না। ‘

মুশরাফা লম্বা শ্বাস নিল। তারপর বলল, ‘খেয়েছেন কিছু? ‘
‘ যাচ্ছি।’
‘খাওয়া শেষে চা কফি, চকলেট ফ্লেভারের কিছু নিবেন না। মাইগ্রেনের ব্যাথা বাড়বে। ‘

মুশরাফা ল্যাপটপ খাটে কোলে বালিশ নিয়ে বসে কথা বলছে। বালিশের উপর কনুই ঠেকিয়ে হাতের তালুতে মুখ রেখে, গালে হাত দিয়ে এটা সেটা বলছে। হাত হাতা হওয়ায় হাতের কনুইর আশপাশে বেশ কটা কালসিটে দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আকস্মিক দাগ গুলোয় চোখ পড়ল জাওয়াদের। তৎক্ষনাৎ চোখে ভাসল মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের বেডে বসে থেকে মুশরাফার চেহারাটা। গা শিউরে উঠল ওর। বলল,
‘ আমার জন্য চিন্তা করতে হবে না। খেয়ে ঘুমাও। ‘

মুশরাফা এলেই নাজমুল সাহেব ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হন। আজ ফাবিহা ও আছে। ভাবলেন সবাইকে নিয়ে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসবেন। দুপুরের খাবার টেবিলে জানালেন খবরটা। মুশরাফার মনে আক্ষেপ জাগল, যদি জাওয়াদ ও যেত! মুখ ফুটে কিছু বললেন না। বিকেলে ওরা ফুলের সমারোহ এক বাগান বাড়িতে ঘুরতে গেল। সবাই আছে, তবুও মুশরাফার একা একা লাগছিল। একজন মানুষের শূন্যতা ওকে পোড়াচ্ছিল। ফাইজা এসেই ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাকিরা সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছে। কিছুক্ষণ হেঁটে নাজমুল সাহেব আর ফরিদা হাঁফিয়ে উঠল। কিছুদূর পর পর বসার বেঞ্চ আছে।
তারা বেঞ্চে বসে পড়লেন। ফাবিহা আর মুশরাফা ঘুরে ঘুরে দেখছে। ফাইজা ও যোগ দিয়েছে ওদের সাথে। ফাইজা জিজ্ঞেস করল,
‘ হানিমুনে যাচ্ছো না আপু?’

মুশরাফা খানিক চুপ থেকে বলল, ‘যাব ইনশা আল্লাহ। ‘

ফাবিহা বলল,
‘জাওয়াদকে কল দিয়ে আসতে বল। নবদম্পতির একটু ঘুরাঘুরি হয়ে যাক। ‘

মুশরাফা কী বাহানা দিবে খুঁজে পেল না। ওকে সাধলে ও আসবেনা। সত্য ও বলতে পারল না, মিথ্যা তো পারলই না। চুপ রইল। খানিক পরে ফাইজা বলল,
‘ তোমার একাকিত্ব কাটাতে ভাইয়া এসে হাজির। ‘

মুশরাফা চমকে তাকাল। জাওয়াদ নাজমুল সাহেব আর ফরিদার সাথে কথা বলছে। মুশরাফা অবিশ্বাস্য চোখে চাইল। উনি সত্যিই এসেছেন! মুশরাফার বোরকাটা দেখলেই ওর মুখ গম্ভীর হয়ে যায়, এখন সেই বোরকার সাথে থাকতে হবে জেনে ও এসেছেন! ফাবিহা বলল,
‘চল ওদিকে।’

সবাই মিলে জাওয়াদদের কাছে গেল। মুশরাফা অবাক চাহনি দিল। জাওয়াদ তাকাল না। ফাইজা চট করে বলে ফেলল,
‘ ভাইয়া এসে গেছে রাফাপু এবার একটু হাসো। ‘
তারপর জাওয়াদের উদ্দেশ্যে বলল,
‘ভাইয়া জানেন, রাফাপু এতক্ষণ মন খারাপ করে ছিল। আপনাকে মিস করছিল।’

মামা মামীর সামনে এভাবে বলায় লজ্জা পেল মুশরাফা। ইতিউতি করল। জাওয়াদ চোখ তুলে তাকাল, মুশরাফার চোখে চোখে রেখে ভ্রু কুঁচকাল। মুশরাফা ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকাল। ফাবিহা মিটিমিটি হাসছে।
নাজমুল সাহেব আর ফরিদা ইতস্ততবোধ করে উঠলেন। নাজমুল সাহেব উঠে বললেন, ‘তোমরা বসো, আমি কিছু অর্ডার দিই।’

একটা ফুচকাওয়ালা দেখা গেল। ফাইজা এক প্রকার লাফিয়ে উঠে বলল, ‘ফুচকা খাব, বাবা।’
নাজমুল সাহেব মুশরাফাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুই কী খাবি?’
মুশরাফাও ফুচকার কথা বলল। সবাইকে জিজ্ঞেস করে অর্ডার দেয়া হলো। তিন প্লেট ফুচকা আর তিন প্লেট চটপটি। খাবার এলো। জাওয়াদ অন্তর্ভেদী চোখে চেয়ে রইল। চারপাশে মানুষের ভীড়। এত মানুষের সামনে মুশরাফা খাবে কিভাবে এটাই দেখার বিষয়।
ফরিদা বেঞ্চে বসা ছিলেন। নাজমুল সাহেব উনার হাতে চটপটি প্লেট তুলে দিতেই উনি দাঁড়িয়ে গেলেন। মুশরাফাকে বসতে বললেন। মুশরাফা চুপচাপ বসে গেল। ফরিদা মুশরাফার সামনে এসে দাঁড়ালেন। চটপটির প্লেট হাতে নাজমুল সাহেব ও ফরিদার পাশে দাঁড়ালেন। ফুচকার প্যাকেট প্লেট হাতে ফাবিহা এসে দাঁড়াল ফরিদার অন্যপাশে। ফাইজাও যোগ দিল। নাজমুল সাহেব জাওয়াদকে মুশরাফার পাশে দাঁড় করালেন। মুশরাফা নিকাব খুলে একটা ফুচকা মুখে নিল। সবার খাওয়া শুরু হলো। জাওয়াদ অবাক হয়ে চাইল। মুশরাফাকে ঘিরে দাঁড়ানো সবাই।ওকে বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না। সবার হাতে খাবার প্লেট, খেতে খেতে কথা বলছে। বাইরে থেকে মনে হবে একটা গ্রুপ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কী চমৎকার পদ্ধতি! মুশরাফার পর্দা রক্ষার জন্য এদের পদক্ষেপটা ভালো লাগল জাওয়াদের। পর্দা রক্ষা করেও পাব্লিক প্লেসে যে খাওয়া যায় আজ না এলে জানতো না ও। কী সুন্দর! মেয়েটা উৎফুল্লতার খাচ্ছে খাচ্ছে, এতে যেন সে অভ্যস্ত। খাওয়া শেষ হলো, মুশরাফা আবার নিকাব করে ফেলল।

সবাই প্রাণখুলে ঘুরছে। সবার মাঝখানে মুশরাফা। হাজার লোকের ভীড়। ধাক্কা লাগছে। নাজমুল সাহেব ডাল হয়ে ওকে পার করছেন, কারো সাথে লাগতে দিচ্ছেন না। ওর পর্দা লঙ্ঘন যাতে না হয় তার খেয়াল রাখছে সবাই। ওকে সবাই আগলে রাখছে। মজা করছে, খাচ্ছে। পর্দা নিকাব কোন বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। এদের দেখে মনে হচ্ছে, পর্দা কোন ইস্যুই না। জাওয়াদ অবাক হয়ে দেখে গেল, শিখে গেল নতুন কিছু। প্রশ্ন জাগল মনে, আমাকে ও এমন ঢাল হওয়া উচিত।

ফাবিহা ওদের স্পেচ দিল। বাবা মাকে ইশারা করে সরে গেল। অন্যদিকে চলে গেল সবাই। মুশরাফা ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
‘ হাঁটবেন আমার সাথে? ‘

জাওয়াদ হাত ধরল না। হাঁটা ধরল। সময় গড়ানোর সাথে সাথে। মানুষের ভীড় বাড়ছে। ভীড়ের কাছে গিয়ে জাওয়াদ নিজেই হাত ধরল। বলল,
‘ একা হাঁটবে না। হারিয়ে গেলে সবাই আমাকে দোষ দিবে।’

মুশরাফা হাসল। হাতে হাত রেখেই এগুলো। ঘুরে ফিরে ওরা রেস্টুরেন্টে গেল। প্রবেশ পথের একটা টেবিলে এক দম্পতি বসে আছে। মেয়েটা শাড়ি পড়েছে, ছেলেটা পাঞ্জাবি। হাতে হাত বসে হেসে গল্প করছে। হুট করেই ওর আফসোস হলো। ও কখনো ওর স্ত্রীর সাথে এভাবে বসে খেতে পারবেন। ওর স্ত্রী তো শাড়িই পরে না, সাজে ও না। এই ইচ্ছেটা বোধহয় অপূর্ণ রয়ে যাবে। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল ও।

এবার গোয়েন্দা চোখে তাকাল। মুশরাফা সবার মাঝে কিভাবে খায় দেখার জন্য। জাওয়াদ একটা টেবিলে বসতে গেলে নাজমুল সাহেব বললেন,
‘ দুই মিনিট অপেক্ষা করো বাবা।’
বলে উঠে গেলেন। কৌতুহল বশত জাওয়াদ ও গেল পিছু। ওকে অবাক করে দিয়ে নাজমুল সাহেব একটা কেবিন বুক করলেন। জাওয়াদ জিজ্ঞেস করল,
‘কেবিন বুক করলেন কেন মামা? টেবিল তো খালিই ছিল।’

নাজমুল সাহেব হেসে বলল, ‘ এখানে বসে খেতে গেলে রাফার পর্দা লঙ্ঘন হবে। নিকাবের ভেতরকে খেতে চাইলে ও স্বস্তিতে খেতে পারবে না। তাই আমরা যখনই আসি কেবিন বুক করে নিই।’ নাজমুল সাহেব কথার ভাজে জাওয়াদকেও একটা ইঙ্গিত দিলেন। জাওয়াদ বুঝল এবার। কেবিনে গিয়ে বসল সবাই। মুশরাফা নিকাব খুলে ফেলেছে। সবার সাথে গল্প করছে। চিকেন শর্মা, চিজ পাস্তা, বড়ো সাইজের পিৎজা অর্ডার করা হয়েছে। অর্ডার এলো। মুশরাফা বাসায় থাকার মতো নিঃসঙ্কোচে খেতে শুরু করল। জাওয়াদ ওর পাশেই বসা। চিকেন শর্মায় কামড় বসিয়ে বলল,
‘এখানকার চিকেন শর্মা ভীষণ মজা। টেস্ট করে দেখুন।’

জাওয়াদ পরতে পরতে নতুন তথ্য জানতে পারছে। রেস্টুরেন্টে বসে এভাবেও খাওয়া যায়? আজ অবাক হওয়ার পালা ওর। বিস্ময়ের সাথে মুখে নিল। আসোলেই টেস্ট ভালো। এই মেয়ের রেস্টুরেন্টে আসা হয় তবে। সাদাফের কথাটা ভুল প্রমাণ হলো।

খাওয়া দাওয়া শেষে রেস্টুরেন্টে বের হলো সবাই। জাওয়াদ মুশরাফা পিছনে আসছে। বাকিরা আগে আগে হাঁটছে। একটা লোক ফোন টিপতে টিপতে এগিয়ে আসছে। কয়েক কদম বাড়ালেই মুশরাফার সাথে ধাক্কা লাগবে। জাওয়াদ দেখল ব্যাপারটা। লোকটা কাছাকাছি আসতেই বলল,
‘ভাই, সাবধানে হাঁটেন।’

লোকটা ফোন থেকে চোখ তুলে তাকাল। পরিস্থিতি বুঝে স্যরি বলে পাশ কাটল। মুশরাফা মুচকি হাসল। বলল,

‘ এখন বাসায় যাবেন না?’
‘না। এক বন্ধুর হলুদ। ওখানে যাব।’
‘ফিরবেন কখন?’
‘রাত হবে।’
‘একটু তাড়াতাড়ি ফিরবেন।’
‘কেন?’
‘আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে?’
‘সারপ্রাইজ! ‘ অবাক হলো জাওয়াদ। মুশরাফা হেসে বলল,
‘হ্যাঁ।’

জাওয়াদ বিড়বিড় করে বলল, ‘ তোমার প্রতি পদে পদে সারপ্রাইজ হচ্ছি। আবার ঘটা করে কী সারপ্রাইজ দিবে? তুমি মেয়েটাই তো একটা সারপ্রাইজ।’

মুখে বলল, ‘কী সারপ্রাইজ! ‘
‘ এলেই দেখতে পাবেন।’

চলবে..

(আজ লিখতে লিখতে সুর হারিয়ে ফেলেছিলাম। ছন্নছাড়া হয়েছে লেখা।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here