সুখের নেশায় পর্ব-৪৮

0
2263

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা
#পর্ব___৪৮

মাতৃভূমি ছেড়ে পাড়ি জমাতে হচ্ছে আজ সুদূর জার্মানিতে। চারটে লাগেজ টেনে বাহিরে নিয়ে গেল সার্ভেন্টরা। চৈত্রিকা আস্তে আস্তে নিচে নেমে এলো। ধীরস্থির চোখ বুলালো বাড়িটার চারদিকে। আনাচে-কানাচেতে, দেয়ালে নিজের গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। বাড়িতে হইচই নেই। আছে কেবল নিস্তব্ধ, নীরবতা। এ যেন পরিণত হয়েছে এক মৃ’ত বাড়িতে। সুফিয়া বেগমের মৃ’ত্যুর প্রায় একটা মাস ফুরিয়ে এসেছে। বদলে গেছে সবকিছু। একেকটা সেকেন্ড ছিল পরিবর্তনের। উন্মোচিত হয়েছে অনেক অপ্রকাশিত সত্য, যা শুধু সীমাবদ্ধ চৈত্রিকা অবধি। মিনা কাঁদো কাঁদো মুখে দৌড়ে এলো। একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল মেয়েটা। চৈত্রিকা হাত বাড়াতেই আহ্লাদে কেঁদে উঠল ও। জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ একেবারে চলে যাইতেছেন ভাবী। আর আইবেন না?এত বড় বাড়িতে কেমনে থাকমু একা একা? মা’ও মই’রা গেল। শাস্তি পাইল নিজের পাপ কর্মের। চাচীও পাগল হইয়া গেছে। চাচা জেলে। ‘

‘ একেবারে যাচ্ছি কে বললো?আপাতত এমনি যাচ্ছি। হয়ত আবারও ফিরে আসব। চাচী কে নিয়ে এসেছেন উনারা?আর মৌসুমি ফুপি,জেরিন ওরা এসেছে? কাউকে দেখছি না যে?’

‘ চাচীরে ফুপু প্রিয়ন্তী আফার রুমে লইয়া গেছে। মাইয়াডা তো কথা কই না। যদি শেষ বেলা মা’র লগে কথা কইয়া দেশ ছাড়ে আরকি!এ বয়সে কি হইল আফার লগে?বাবা-মার পাপ কর্ম সন্তানের উপর দিয়া গেল। একটা গেল ম’ইরা। আরেকটা ধ*র্ষ’ণ হইল। ‘

চৈত্রিকার সারা মুখশ্রী মলিন বিবর্ণ হয়ে এলো। এমনিতেই যার জীবনে বসন্ত এলেও রং ছুঁয়ে দিতে পারে না,গায়ে আবির মাখিয়ে দিয়ে যেতে হয় অক্ষম তার জন্য বিবর্ণ তা-ই শ্রেয়। বাবা-মা’র অপকর্মের ফল কি-না জানে না চৈত্রিকা তবে খুবই অন্যায় হয়েছে প্রিয়ন্তীর সাথে। কারণ মেয়েটা সদ্য ফোঁটা কোমল,নিষ্পাপ একটা গোলাপ ছিল। মিনা কে ছেড়ে দিয়ে গুটি গুটি পায়ে প্রিয়ন্তীর রুমের সামনে আসল ও। দরজায় করাঘাত করতেই ভিতর থেকে আওয়াজ এলো –‘ কে?’
মৌসুমির গলা শুনে চৈত্রিকা ছোট্ট করে জবাব দিল–‘ আমি ফুপি।’
মৌসুমি দরজার এক পার্ট মেলে দিলেন। চৈত্রিকা ঘরে ঢুকেই দেখে প্রিয়ন্তী রেডি হয়ে জানালার কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। অপরদিকে ওর মা মেঝেতে বসে আঙ্গুল গুণছে,বিড়বিড় করছে। এগুলো এখন উনার নিত্যকার অভ্যেস। চৈত্রিকা সেদিক হতে দৃষ্টি সরিয়ে প্রিয়ন্তীর পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ডাকল ক্ষীণ স্বরে।

‘ প্রিয়ন্তী!’
প্রিয়ন্তী ফিরে তাকালো। ছোট্ট চঞ্চল মেয়েটা আজ নিস্তেজ। চোখের নিচে কাজল লেপ্টে আছে। এই কাজল ধুয়ে ফেললে উঠবে না। কবে উঠবে তা-ও জানা নেই। ভয়াবহ সেই দিনের পর হতে প্রতি রাতে নির্ঘুমের ফলস্বরূপ এই কাজল চোখের নিম্ন অংশের অনেকখানি জায়গা দখল করেছে। হালকা গোলাপি রঙের একটা হিজাব বেঁধেছে মেয়েটা। মিষ্টি লাগছে বেশ। গলার কাছে অজস্র দাগগুলো লুকায়িত হয়েছে। আলতো হাতে প্রিয়ন্তীর এক হাত আঁকড়ে ধরল চৈত্রিকা। রিনঝিনে কন্ঠ। জিজ্ঞেস করলো,

‘ তোমার মা’য়ের সাথে কথা বলেছো?’
প্রিয়ন্তী মৌন মুখে রইল। ঘাড় নাড়ালো। চৈত্রিকা মৃদু হেসে বললো,
‘ ঠিক আছে। কথা শেষ করে নিচে আসো। ফ্লাইটের সময় হয়ে যাবে। ‘
‘ ভাইয়া? ‘
‘ উনি অফিসের কাজগুলো গুছিয়ে আসছেন। রাস্তায় আছেন। ‘
‘ আচ্ছা। ‘

চৈত্রিকা নিজের রুমে ঢুকল। বিছানায় বসে নত মস্তকে সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছাড়ল। মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করে একটা বার স্মরণ করে নিল বিগত একটা মাসের দিন গুলো। ঘটে যাওয়া একেকটা ঘটনা।
দাদির মৃ’ত্যু’র পনেরো দিনের মাথায় চাচা অবৈধ ব্যবসার কারণে গ্রেফতার হন। সিয়াকে মারার পিছনে উনার কোনো হাত নেই। কিন্তু তিনি ও পৃথক দু’জনে মিলে অবৈধ, মাদক/দ্রব্যের বিজনেস করতেন যার কারণে উনাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এতে অবশ্য সাফারাতের হাত আছে। বহুদিন ধরে চাচার কর্ম সম্মুখে আনার চেষ্টা করছিল সে ও দিহান। পরিবারের ঝামেলায় সবাই এতটাই মগ্ন ছিল প্রিয়ন্তীর চলাচলের বিষয় টা নিয়ে মাথা ঘামায় নি কেউ। প্রিয়ন্তী খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে যায়। যার ফলে জীবনের রঙ বিলীন হয়ে যায় পঞ্চদশেই। গোলাপের সকল পাপড়ি ঝরে পড়ে মৃত্তিকায়। গ্যাং রে*পড হয় মেয়েটা। সেই সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে তবুও প্রিয়ন্তী বাড়ি ফিরে নি। তখনই সর্বপ্রথম টনক নড়ে সাফারাতের। উম্মাদ,উদভ্রান্ত ছুটে যায় স্কুলে,কিন্তু সেখানেও গিয়ে দেখে স্কুল বন্ধ। সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করলে জানায় স্কুল সেই দুপুরেই ছুটি হয়ে গিয়েছে। পুরো শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজে শেষ পর্যন্ত বিধস্ত, বস্ত্রহীন অবস্থায় মিলে প্রিয়ন্তীকে এক পরিত্যক্ত, জনপূর্ণহীন স্থানে। প্রিয়ন্তীর তখন শ্বাস চলছিল অল্প স্বল্প। সাফারাত সেদিনও কাঁদে নি। চাচী নিজের ছেলেমেয়ে,স্বামীর পরিণতি,পরিবারের বিচ্ছিন্নতা সইতে না পেরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। উনাকে বাড়িতে রাখা হয় না। ট্রিটমেন্টের জন্য মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চৈত্রিকা অবাক হয় সাফারাতকে দেখে যেই মানুষগুলো ওকে ধুর ধুর করে তাড়িয়ে দিয়েছে তাদেরই ট্রিটমেন্ট করাচ্ছে। মা’য়ের এক আদেশে, চাওয়ায় এত গুরুত্ব?

রুমে কারো পায়ের শব্দে চৈত্রিকার সকল ভাবনা দূর হয়ে গেল। কল্পনার, চিন্তার সুতোঁতে টান পড়ল। সাফারাত গায়ের জ্যাকেট খুলে এক নজর তাকালো চৈত্রিকার দিকে। চৈত্রিকা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি অবলোকন করে উঠে আসতে নিলে সাফারাত গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

‘ আপনি বসুন চৈত্র। আমি আমার কাপড় বের করে নিব। প্রিয়ন্তী রেডি?’
‘ হুম। আপনার জন্য আমি লেবুর শরবত নিয়ে আসছি। বাহিরে গরম ছিল আজ। একটু পরেই আবারও জার্নি করতে হবে। ‘

সাফারাত হাতের তোয়ালে রেখে চৈত্রিকার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসল। গরমে ঘাম ঝরছে ললাট বেয়ে। চৈত্রিকার দু’হাতের ভাঁজে চুমু খেল। গাঢ়, গভীর ছিল উষ্ণ ওষ্ঠদ্বয়ের ছোঁয়া। দৈবাৎ কন্ঠে প্রশ্ন করে,
‘ আপনি আমাকে খু*নি মানেন?’
ভড়কে গেল চৈত্রিকা। হকচকালো তৎক্ষনাৎ। বক্ষস্থল কেঁপে উঠল। মাথা দুলিয়ে ব্যগ্র কন্ঠে বলে উঠল,
‘ না। আমি আপনার উপর সেদিন সন্দেহ করি নি। আপনার জায়গায় থাকলে আমি এর চেয়েও কঠিন হতাম। আরো কঠোর শা*স্তি দিতাম। আগুনে পুড়িয়ে মারতাম। যেমন করে পুড়েছিল সিয়া মা’র দেহ টা। ‘

সাফারাত তুখোড় দৃষ্টি জ্ঞাপন করলো চৈত্রিকার চেহারার দিকে। দুই কপোল ফুলে আছে। চিকনচাকন গড়নের মেয়েটার অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শরীরের পরিবর্তন হয়েছে। মোটা হয়েছে একটুখানি। গালে লালের আস্তরণ। সাফারাত সরব করে বলে উঠল,

‘ এত উত্তেজিত হবেন না। রক্তিম রূপে আপনাকে দারুণ লাগে চৈত্র মাস। তবে আমি যে চাই আমার সন্তান গম্ভীর হোক,শান্ত হোক। তাই আপনার রক্তিম হওয়া বারণ। ‘

চৈত্রিকা বিস্ময়কর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আরো একটা সাফারাত? না,না। এরকম গম্ভীর মানুষ আর সহ্য করতে পারবে না ও। এবার একটা চঞ্চল মানুষ আসুক। ওর বাচ্চা টা অস্থির,চঞ্চল স্বভাবের যেন হয়।
_______________

জার্মানির রাজধানী বার্লিন। বৃহত্তম একটা নগরী। হাজারো রোমান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টেন্ট খ্রিস্টানদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে চৈত্রিকা ও প্রিয়ন্তী। এয়ারপোর্টে মানুষের সমাগম অত্যাধিক। তবে সবই দু’জন থেকে ভিন্ন। তাদের চেহারার গঠন,গায়ের রঙ,ড্রেসআপ, ধর্ম,ভাষা সবকিছুই ভিন্ন। তবে অচেনা এ দেশে চৈত্রিকার চেনা মানুষ বলতে এই মুহুর্তে শুধু সাফারাত ও প্রিয়ন্তী। এয়ারপোর্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন। সাফারাত এই শহরেরই একজন পরিচিত জার্মান ড্রাইভারের সঙ্গে কথোপকথনে ব্যস্ত।

জার্মানির আবহাওয়া পূর্বাভাস পাওয়া যায় না সহজে। প্রায়শই এখানে ঝরঝরে বৃষ্টি হয়। ঝড়ও হয়। এমনকি বজ্রধ্বনি সিজনের প্রারম্ভে ঘনঘন সংঘর্ষ হয়। এমনই এক পরিবেশ, আবহাওয়ার দেখা মিলছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁয়ে যাচ্ছে পিচ ঢালা রাস্তায়। ঠান্ডা,হিমেল হাওয়া বইছে। চৈত্রিকা গায়ের জ্যাকেট টা ভালো করে টেনে নিল। চেনা সুবাসে মুগ্ধ হয়ে গেল মন। গা থেকে খুলে অতি যত্নসহকারে প্রিয় মানুষ টা জড়িয়ে দিয় গেছে ওর অঙ্গে।

বাংলাদেশ ছেড়ে আসার মুহুর্তে চৈত্রিকার মনে হচ্ছিল মিম,মাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম যে ব্যতিক্রম। তাদের নিজস্ব জীবন আছে,সংসার আছে। তবে সাফারাত বলেছে ফাহমিদাকে খুব শীগ্রই এখানে নিয়ে আসবে। সাফারাত এখানকার নাগরিকত্ব পেলেও চৈত্রিকা ও প্রিয়ন্তীর পাওয়া এখনও অনিশ্চিত। বিজনেস আগে থেকে এখানে সেট থাকায় সাফারাত আবারও এখানে ফিরে আসে। এখানে থেকেই বিজনেস সামলাবে। বাংলাদেশ ফিরে গেলেও সবসময় থাকার মন মানসিকতা আর নেই তার। চৈত্রিকাও চায় সাফারাত সকল প্রতা/রণা, কষ্ট ভুলে যাক। নতুন করে বাঁচুক। হয়ত এজন্যই এদেশে থাকার চিন্তা ভাবনা।

আলো বেগম, সিনথিয়া,আয়ান,আয়মান সবাই সুফিয়া বেগমের মৃ’ত্যুর পর পরই জার্মানি চলে আসে। আলো কাল রাতেও ফোন করেছিল। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো সাফারাত ফোন টা ধরতে দেয় নি। প্রথমে ব্যপক চমকায় চৈত্রিকা পরমুহূর্তে এটা শুনে খুশি হয় আলো জানেন না ওদের ফ্লাইট কবে, উনি হঠাৎ দেখলে সারপ্রাইজড হবেন।

সাফারাত ফিরে আসে গাড়ি নিয়ে। তবে তার পড়নের গেঞ্জি টা হালকা ভিজে গেছে বৃষ্টির ফোঁটায়। চুল লেপ্টে কপালে পড়ে আছে। চৈত্রিকার বুক টা ধ্বক করে উঠল। কি করে বুঝাবে সে এই পুরুষকে ঠিক কতটা মোহনীয় লাগছে এই অভ্যন্তর বেসামাল করা রূপে?প্রিয়ন্তী গাড়িতে বসে পড়লে সাফারাত চৈত্রিকাকে ইশারা করল বসতে। চৈত্রিকা বসল না। বরং বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শরীরের ওড়না টা খুলে সাফারাতের মাথায় দিয়ে দিল। কপালে ভাঁজ পড়ল সাফারাতের। ঠোঁটে ফুটল মৃদু হাসি। চৈত্রিকা চারপাশে নজর বুলিয়ে চট করে গাড়িতে বসে পড়ল। গায়ে বড়সড় একটা জ্যাকেট থাকার কারণে ওড়নার প্রয়োজন নেই। জার্মানির এই বার্লিন শহরে এসে এক অজানা সুখে সিক্ত হয়ে পড়ল ওর মন, অন্তর। নিঃশ্বাস ফেলেও যেন শান্তি মিলছে। সাফারাত পাশে বসে সিটে মাথা রেখে চোখ বুঁজল। অনেক ধকল গেছে এই একটা মাস। চৈত্রিকার কাগজপত্র রেডি করা এবং শেষ সময়ে এসে প্রিয়ন্তীর ভিসা রেডি করতে অনেক বেগ পোহাতে হয়েছে।

প্রিয়ন্তী বাহিরের দিকে চেয়ে নতুন দেশ,নতুন পরিবেশ,বার্লিনের সৌন্দর্য দেখতে বিভোর,অন্তঃপ্রবিষ্ট। এই সুযোগ টা লুফে নিল চৈত্রিকা। সাফারাতের বুকে মাথা রাখল। চক্ষুদ্বয় বুঁজে রেখেই ওকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল সাফারাত। শ্রবণগ্রন্থির নিকটস্থে দু ঠোঁট ছুঁয়ে ফিচেল স্বরে বললো,

‘ নতুন দেশে রোমাঞ্চকর হাওয়া লেগেছে?আহ্!এখন তো আমার লাভ-ই লাভ। ডজন ডজন বাচ্চার বাপ হবো। জার্মানির চ্যান্সেলর আমাকে এওয়ার্ড দিবেন ডজন বাচ্চা-কাচ্চার বাপ হওয়ার জন্য। ‘

চৈত্রিকার কর্ণ গহ্বর গরম,তপ্ত হয়ে আসলো। রাঙা হয়ে উঠল মুখ। তবুও সাফারাতের বুকে মাথা রেখে উপলব্ধি করতে থাকে এক আকাশ সমান সুখ।
______________

জনবহুল শহুরে এলাকা হলেও গাড়ি টা এমন একটা বাড়ির সামনে থামল যেখানে আশেপাশে মাত্র দু’টো বাড়ি। তাছাড়া খোলা রাস্তা ছাড়া কিছুই নেই। চৈত্রিকা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। সামনের দিকে দৃষ্টি মেলতেই দেখে সিনথিয়া, আলো,আয়মান ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসছে। আয়মান মাঝ পথেই দৌড় দিল। ঝাপটে ধরল চৈত্রিকাকে। হঠাৎ আক্রমণে চৈত্রিকা বেসামাল হয়ে পড়ে যেতে নিলে আঁতকে উঠে সকলে। আতংকিত চোখে তাকায়। দুর্ঘটনা ঘটার আগেই সাফারাত পিছন থেকে চৈত্রিকাকে জড়িয়ে ধরলো। আয়মান অপরাধী দৃষ্টিতে চেয়ে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। সিনথিয়া অনবরত বকছে ওকে। চুপচাপ গম্ভীর মুখে ছেলেটা মা’য়ের বকবকানি হজম করছে নয়ত বা এক কান দিয়ে ঢুকাচ্ছে অপর কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে। আলো চৈত্রিকার কপালে চুমু খেল। খুশিতে কেঁদে দিলেন উনি। আয়মানের মাথায় হাত বুলিয়ে চৈত্রিকা আদুরে কন্ঠে বললো,

‘ চলো আয়মান। ‘

আয়মান এক পাও নড়লো না। সাফারাত ওর চুলে আঙ্গুল চালনা করলো। মায়াময় কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
‘ কি হলো স্মার্ট বয়?মামি মণি ব্যাথা পায় নি। তাহলে আপসেট কেন?মাম্মা বকেছে বলে?’
আয়মান শান্ত, গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল,
‘ নো। আমার কারণে সুখ ব্যাথা পেতে যাচ্ছিল তাই। ‘
চৈত্রিকা,প্রিয়ন্তী, সাফারাত অবাক চাহনি নিক্ষেপ করলো। আলো বেগম আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ সুখ?সে কে?’
আয়মান ব্যথিত চক্ষে তাকালো। কন্ঠনালিতে গম্ভীরতার ছাপ রেখেই প্রতুত্তর করে,
‘ মামি মণির পেটে যে আছে তার নাম-ই তো সুখ। মাম্মা বলেছে ও আমার সুখ। তাই আমি ওকে সুখ বলে ডাকব। ‘

সিনথিয়া জিভ কাটল। ছেলে ওকে এভাবে ফাঁসিয়ে দিবে ভাবতেই পারে নি। এত গম্ভীর, বজ্জাত ছেলে ওর পেটে কেমনে হলো!সাফারাত শান্ত শিষ্ট আয়মানের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ ছেলে হবে নাকি মেয়ে তা জানা হলো না,তার আগেই তুমি সুখে ভাগ বসিয়ে দিলে স্মার্ট বয়। নামটা পছন্দ হয়েছে। আসলেই ও সুখ নিয়েই আসবে এই ধরণীতে। ‘

#চলবে,,,!
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here