গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
পর্ব-৪৯+৫০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রক্তাক্ত অবস্হায় রাস্তায় পড়ে আছে কাজল। কাজলর রুদ্রিকের দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের কাছে ডাকে। রুদ্রিজ কাজলের কাছে গিয়ে,কাজলকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কান্নার সুরে বলে,
—“কাজল তুই কথা বলছিস না কেন? প্লিয় একটু কথা বল? ”
আমার চোখজোড়া খুলতে যেনো খুব কষ্ট হচ্ছে। শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে আমি কোনোরকম উঠে বসতে গিয়ে, পড়ে যেতে নিলে রুদ্রিক আমাকে ধরে তার কোলে আমার মাথা রাখে। রুদ্রিকের চোখের জলটুকু আমি মুছিয়ে দিয়ে বলি,
—–“তুমি এইভাবে কেঁদো নাহ রুদ্রিক। তোমাকে এইভাবে দেখলে তো আমার বড্ড কষ্ট হয়। ”
এইদিকে,
দিয়া ইশানির থেকে বাচ্ছাটা কেড়ে নিয়ে, ইশানির গালের ঠাস করে চর লাগিয়ে বলে,
—-“তুই কি সত্যি মানুষ আপাই? ছিহ এতোটা খারাপ তুই। তোকে যত দেখি আমি অবাক হয়ে যায়। মানুষ এতোটা খারাপ কী করে হয়? শেষে কিনা নিজের প্রতিশোধের জন্যে একটা ছোট্ট বাচ্ছাকেও ছাড়লি নাহ।
সিথি এসে কটাক্ষ করে বলে,
—-“কাকে কি বলছো? এই মহিলা কি আদোও মানুষ?”
ইশানি শেখ তাদের কটাক্ষ করা কথা শুনে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া করলো নাহ। বরং নীচে নেমে চলে গেলো। ইশানি শেখকে যেতে দেখে লাজুক বলে উঠে,
—“ইশানি শেখ আবার পালিয়ে যাচ্ছে নাহ তো? ”
লাজুকের কথা শুনে সাদি বলে উঠলো,
—-“তাহলে তো আমাদের এখুনি মহিলার পিছনে যেতে হবে। ”
সাদি ইশানি শেখের পিছনে ছুটলো। লাজুক,দিয়া ও সিথি বাচ্ছাটাকে নিয়ে পিছনে ছুটলো।
ইশানি শেখ গেটের কাছে এসে থেমে যায়।
সিথি দিয়া লাজুক ও সাদি কাজলকে রক্তাক্ত অবস্হায় দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। সিথি মুখ চেপে কেঁদে উঠে।
সিথির কাছে নিজের বাচ্ছাকে দেখে আমি মুখ থেকে কষ্ট করে হলেও আওয়াজ বের করতে চেস্টা করলাম। অবশেষে বলে উঠলাম,
—-“আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো? ”
কাজলের প্রশ্নে সবাই অবাক হয়। এই অবস্হাতেও নিজেত সন্তানের কথা একটিবারও ভূলেনি। হয়তো মা একেই বলে
রুদ্রিক ও কাজলের মেয়ে অনাবরত কেঁদে যাচ্ছে।
মেয়েটাকে কাঁদতে দেখে রুদ্রিক ও কাজলের দুজনের বুকটা মোচর দিয়ে উঠে। রুদ্রিক পড়েছে বিপাকে। একজায়গায় তার ভালোবাসা অন্যজায়গায় তার সন্তান।
দিয়া সিথির থেকে বাচ্ছাটা নিয়ে বলে উঠলো,
—–“কাজল কোনো চিন্তা করিস নাহ। তোর বাচ্ছা সেফ আছে। ”
দিয়া পিপির কথা শুনে আমি যেনো নিশ্চিন্ত হয়ে রুদ্রিকের বুকে শক্ত কড়ে আকড়ে ধরলাম। রুদ্রিক আমাকে জড়িয়ে ধরে।
পেটে ভেজা অনুভব করতেই রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে কাজলের পেট থেকে রক্ত চুয়ে চুয়ে পড়ছে। রুদ্রিক ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
—“কাজল, তোর সার্জিরা করা জায়গায়তে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ”
রুদ্রিক চিৎকার করে সকল নার্সদের ডাকতে থাকে। ওয়ার্ডবয় এবং নার্সসহ ডক্টররা চলে আসে।
ডক্টররা এসে বলে,
—–“ওহ মা গড! উনার মাথা থেকে এবং সিজার করা জায়গা থেকে অনাবরত রক্ত ছিটকে পড়ছে। মনে হয় পড়ে যাওয়ার কারনে সিলিগুলো কেটে গেছে। উনাকে দ্রুত আবারোও, ওটিতে নিয়ে যেতে হবে।
রুদ্রিক ডক্টরের কথা শুনে কাজলকে উঠাতে যেয়েও থেমে যায়। কাজলের রক্তমাখা দেহের দিকে তাঁকিয়ে থাকা রুদ্রিকের পক্ষে সম্ভব নাহ। রুদ্রিক ঠোট কামড়ে কেঁদে উঠে।
ওয়ার্ডবয় কাজলকে স্টেচারে উঠিয়ে নেয়। নার্সরা কাজলের মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে দেয়।
রুদ্রিককে ঘাবড়ে যেতে দেখে আমি নিজের অক্সিজেন মাক্সটা খুলে ফেলে। ডক্টরা বললেন,
—-“কি করছেন কি মিসেস শেখ?
রুদ্রিক আমার কাছে এসে মিয়ে যাওয়া গলায় বলে,
—-“কাজল, তুই কি পাগল হয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিস। ”
আমি রুদ্রিকের হাতটা আরো শক্ত করে ধরে বলি,
—-“ভয় পেয়ো নাহ রুদ্রিক। তোমাকে তো শক্ত হতে হবে বলো? আমাদের মেয়েটার কী হবে? তুমিই তো আমাদের মেয়ের এখন সব। আমি যদি না থাকি তাহলে…….
রুদ্রিক আমার মুখ চেপে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—–❝তুই প্লিয চুপ কর। একদম মেরে ফেলবো কাজল তোকে। একটাবার যদি এইসব কথা মুখে আনিস।
তুই রাফসিন শেখ রুদ্রিককের প্রতিটা হ্রদস্পন্দন আছিস। তুই আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসে রয়েছিস। একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে তোকে বাঁচতে হবে। আমাকে আমাদের পরীর জন্যে হলেও তোকে বাঁচতে হবে। ❞
রুদ্রিকের কথা শুনে আমার চোখজোড়া বন্ধ হতে শুরু করে দিলো। হয়তো আমি নিজের জ্ঞান ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছি। তবুও রুদ্রিকের হাতটা শক্তকরে চেপে ধরে রাখলাম।
কাজলের চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে রুদ্রিক ডক্টরদের উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন ছুড়ে বলে,
—–❝আমার কাজলের চোখ বন্ধ হয়ে গেলো কেনো? কি হলো আমার কাজলের? ডক্টরস আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেন? ❞
কাজলের মুখে পুনরায় অক্সিজেন মাক্স লাগিয়ে ডক্টর বলে উঠেন,
—-“আপনার ওয়াইফ জ্ঞান হারিয়েছে।
অলরেডী অনেক ব্লাড লস হয়ে গেছে। এখন যদি দ্রুত ওটিতে নিয়ে না যাওয়া হয়, তাহলে আরো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ”
ডক্টর ওয়ার্ডবয়দের ইশারা করে কাজলকে নিয়ে যেতে। কাজলের হাত আলগা হয়ে যেতেই রুদ্রিক অসহায় হয়ে কাজলের হাত শক্ত করে চুমু খায়।ডক্টরের কথা শুনে ওয়ার্ডবয় কাজলকে নিয়ে যেতে থাকে। রুদ্রিক কাজলের যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে থাকে।
কাজলকে নিয়ে যেতেই ইশানি শেখ জোড়ে জোড়ে হেঁসে বলে উঠে,
—-“কি মজা কি মজা কাজল এখন ঠিক মরবে। রুদ্রিক এইবার বুঝবে মজা। কি মজা। মাহির তুমি শুনতে পারছো? আমি তোমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছি কি মজা। ”
ইশানি শেখ জোড়ে জোড়ে হাত তালি দিতে লাগলো। দিয়া, সাদি, লাজুক ও সিথি ইশানি শেখের অবস্হা দেখে বুঝতে পারছে ইশানি শেখ সত্যি একজন সাইকো হয়ে উঠেছে।
রুদ্রিকের নাকের ঢগা লাল হয়ে উঠেছে রাগে। রুদ্রিক আর সহ্য করতে না পেরে ইশানি শেখের গলা চেপে ধরে বলে,
—-“তোর জন্যে আমার কাজল এতোটা কষ্ট পাচ্ছে। আমার একদিনের বাচ্ছাটা তার মাকে পাচ্ছে নাহ। তোকে জাস্ট খুন করে ফেলবো ইশানি শেখ। তোকে আমি বাঁচতে দিবো নাহ।, ” (লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
রুদ্রিককে ভয়ংকর পরিমানে রেগে আছে। সাদি ও লাজুক এগিয়ে যায় রুদ্রিককে আটকাতে। কিন্তু তারা ব্যর্থ। রুদ্রিককে তারা কিছুতেই আটকাতে পারছে নাহ।
সাদি বলে উঠে,
—-“রুদ্রিক ছেড়ে দে এইভাবে করলে কিন্তু মারা যাবে। তুই জেলে চলে যাবি। কাজলের তখন কি হবে? ”
রুদ্রিক ইশানি শেখের গলা আরো চেপে ধরে বলে,
—“গেলে যাবো কিন্তু এই মহিলার বেঁচে থাকার অধিকার নেই। আমার কাজল আজ শুধু এই নিকৃষ্ট মহিলার জন্যে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। ”
লাজুক আর না পেরে বলে,
—–“জাস্ট সটপ রুদ্রিক! পুলিশ আসছে। পুলিশ উনাকে উনার যোগ্য শাস্তি দিবে। ”
লাজুকের কথায় কোনোরকম কাজ হলো নাহ। অবশেষে পুলিশ এসে রুদ্রিককে ছাড়িয়ে নিলো। ইশানি শেখ গলা ধরে কাঁশতে তবুও তার হাঁসি থামে নাহ।
সে হেঁসেই যাচ্ছে। হয়তো পাগল হয়ে গেছে বলে
পুলিশ তাকে একপ্রকার টেনে হিচড়েই নিয়ে
। রুদ্রিক রাগে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছে।
ইশানি শেখকে মেরে ফেললে হয়তো রাগটা কমতো।
___________________
ও.টিতে কাজলের অপরাশেন চলছে।
কাজলের বাবা-মা, রুদ্রিকের বাবা-মা এসেছে। কাজলের বাবা-মা অনাবরত কেঁদে চলেছে। রুদ্রিকের বাবা-মা তো মুখও দেখাতে পারছে নাহ ইশানির কর্মজান্ডে। দিয়ার কোলে বাচ্ছাটা এখনো কেঁদে যাচ্ছে।
ছুটকিও কেঁদে যাচ্ছে।
রুদ্রিক এক কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। সাদি রুদ্রিকের কাঁধে হাত রেখে আছে।
ডক্টর ওটির থেকে বাইরে এসে বলে,
—-“পেশেন্ট এর অবস্হা ভালো নাহ। দুদুবার অপারেশন করা হচ্ছে। তারমধ্যে মাথাতেও গভীর ক্ষত হয়ে রয়েছে। প্রচন্ড ব্লাড লস হয়ে গেছে
ও পজিটিভ রক্ত লাগবে। না হলে রোগীকে বাঁচানো যাবে নাহ। তারমধ্যে আমাদের কাছে এখন ও পজিটিভ রক্ত ও নেই।”
কথাটা শুনে সকলে আরো ভয় পেয়ে যায়। তনয় এসে বলে,
—-“আমার রক্তেত গ্রুপ ও পজিটিভ। আমি রক্ত দিব। ”
তনয়কে দেখে সবাই অবাক হয়। ছুটকি তয়নের দিকে তাঁকায়। হ্যা ছুটকির ইনফরমেশনে তনয় এসেছে। কাজলের বাব-মা তনয়ের কাছে এসে বলে,
—“বাবা তুমি এসেছো? কিন্তু তোমাকে কে জানালো?”
—-“আপাতত সেসব কথা না হয় বাদ দেই। এখন রক্ত দেওয়াটা বেশি প্রয়োজনীয়। ”
কথাটি বলে তনয় ডক্টরের সাথে চলে যেতে নিলে। রুদ্রিক তাকে চোখের ইশারায় তাকে ধন্যবাদ জানায়।
_______
হসপিটালে শেষ প্রান্তে ছুটকি কেঁদে যাচ্ছে কান্না যেনো তার থামছেই নাহ। নিজের বোনকে এই অবস্হায় দেখে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে। তনয় রক্ত দিয়ে এসে দেখে ছুটকি কাঁদছে। তনয় ছুটকির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
—-“তুমি এখনো সেই ছিচকাদুনি রয়ে গেলে। চিন্তা করোনা সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
প্রায় ২ঘন্টা হয়ে গেলো ভিতরে অপরেশন চলছে। নার্স বাইরে আসতেই লাজুক ও সিথি তার কাছে গিয়ে বলে,
—-“ভিতরে কি অবস্হ এখন? ”
নার্স বললেন,
—“এখনো অপারেশন চলছে। খুবই ক্রিটিকাল পেশেন্ট। ডক্টর নিজে কিছু না বললে কিচ্ছু বলা যাচ্ছে নাহ। ”
রুদ্রিকের ধৈর্য্যের বাঁধ যেনো পড়ছে। রুদ্রিক সরাসরি নার্সকে টপকিয়ে অপারেশন থিয়েটায়ে যেতে নিলে, নার্স আটকে বলে,
—-“স্যার কী করছেন কি? অপরাশন চলছে। ”
রুদ্রিক চোখ রাঙ্গিয়ে বলে,
—-“আই ডোন্ট কেয়ার ওকে? আমি দেখবো আমার ওয়াইফের এখন কি অবস্হা। প্রায় ৪ ঘন্টা হতে চললো। আই কান্ট ওয়েট এনিমর
আমি আর কিছুতেই ওয়েট করবো নাহ।”
কথাটি বলে রুদ্রিক অপারেশন থিয়াটারে চলে গেলো। সিথি সাদির কাছে এসে বলে,
—“ভাইয়ূ কি করছে,? ভাইয়ূকে তো আটকাতে হবে। ”
সাদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
—-‘বলে লাভ নেই। কেননা রুদ্রিক এখন নিজের মাঝে নেই। ‘
রুদ্রিক থিয়াটার রুমে প্রবেশ করতেই সকল ডক্টররা তার দিকে তাঁকায়। ডক্টর এগিয়ে এসে বলে,
—-“আপনি এই অপারেশন থিয়াটারে কীভাবে ঢুকলেন? ”
ডক্টরের প্রশ্নের কোনোরকম জবাব না দিয়ে রুদ্রিক কাজলের দিকে এগিয়ে যায়। কাজলের শরীরের সাথে কাটা-ছেড়া করা হচ্ছে। কাজলের হার্টব্রিটও একেবারে স্লো হয়ে গেছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে এইরকম অবস্হায় দেখে রুদ্রিক নিজেকে আর সামলাতে পারলো নাহ। সে একপ্রকার ছুটে বেড়িয়ে গেলো। রুদ্রিককে ছুটে বেড়িয়ে যেতে সবাই হতবাক!
_____
হসপিটালের করিডোরে গিয়ে ধপ করে চিৎকার করে কান্না করে বসে পড়ে রুদ্রিক। কে বলেছে ছেলেরা কাঁদে না? ছেলেরাও কিন্তু কাঁদে। দিনশেষে নিজের প্রিয়মানুষের কাছে নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে সকলেই বড্ড অসহায়। এই ভালোবাসার যেকোন মানুষকে অসহায় করে দেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। আজ রাফসিন শেখ রুদ্রিকও কাঁদছে তার কাজলের, জন্যে তার শুভ্ররাঙাপরীর জন্যে। তার ভালোবাসার মানুষটির জন্যে। রুদ্রিক একপলক তাঁকিয়ে দেখে গোধূলীর বেলা পড়ে গেছে,কিন্তু আজও গোধূলীর আকাশে মুগ্ধতা নেই কোনো সিদুরমাখানো রংয়ের স্পর্শ। আছে শুধু এক রাশ ধূসর বিষন্ন আকাশ। হয়তো সেই আকাশে মেঘ জমবে, হয়তো প্রকৃতিও মন খুলে কাঁদবে আজ রুদ্রিকের সাথে।
রুদ্রিক হাটু গেড়ে কাঁদছে তখনি কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পায়। রুদ্রিক তাঁকিয়ে দেখে সিথি। কোলে রুদ্রিক ও কাজলের সেই ছোট্ট পরী। সিথি বলে উঠলো,
—“ভাইয়ূ তুই না সেই গ্রেট রাফসিন শেখ রুদ্রিক? তুই আজকে কাঁদছিস? তুই ভেঁঙ্গে পড়লে কীভাবে হবে বল? ”
রুদ্রিক কান্নামাখা গলায় বলে,
—-“কি করবো বল? আমি যে পারছি নাহ রে বোন। আজ নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে। ”
সিথি বলল,
—“ভাইয়া একটিবার নিজের পরীটার দিকে তাঁকিয়ে দেখ। তোর এবং কাজলের ছোট্ট পরী।
এক দিনের শিশু এখনো পর্যন্ত নিজের মায়ের স্পর্শ নিজের মাকে কাছে পাইনি। তুইতো ওর বাবা
এখন তুই-ই’ তো ওকে আগলে রাখবি তাইনা? মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতিটি বিপদ দিয়ে প্রতিটা পদে পরীক্ষা নেন। তাই বলে কি আমাদের ভেঙে পড়লে চলবে? ”
সিথির কথা শুনে রুদ্রিক নিজের মেয়েকে কোলে তুলে নিলো। অদ্ভুদ ব্যাপার বাবার কাছে আসতেই মেয়ে কান্না থামিয়ে দিলো। একেই বলে রক্তের টান!
রুদ্রিক নিজের মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
—“আমার পরী মা। তোমার বাবা আছে। তুমি কেঁদো নাহ প্লিয। তোমার মা ঠিক সুস্হ হয়ে ফিরবে দেখো। ”
সিথির চোখে ও জল।
আড়াল থেকে সবকিছুই দেখছে দিয়া, লাজুক ও সাদি। তাদের চোখেও যেনো আজ জল। রুদ্রিকের এমন অবস্হা কারো কাম্য নয়। তখনি ডক্টর বেড়িয়ে এসে বলে,
বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে কি?
[পরীক্ষার মধ্যেও বড় করে দিছি। জানি অনেক অগাছোলো বাট সবাই কমেন্ত করে দিয়েন ওকে 🥺]
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি
#গোধূলী_বেলার_স্মৃতি (Unexpected Story)
#পর্ব- ৫০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
রুদ্রিক রান্নাঘরে মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। কাজল এইবার নিশ্চিত তাকে বোকা দিয়ে বাড়ি মাথায় তুলবে। বাচ্ছার জন্যে করা সুজি সব পুড়ে গেছে। বলতে গেলে রুদ্রিক নিজেই আগ বাড়িয়েই তার ছোট্ট পরীর জন্যে সুজি রান্না করতে এসেছিলো,কিন্তু তার পরিনয়ে আজ সুজিটা পুড়ে গেলো। রান্নাঘর থেকে কিছু পুড়ে যাওয়ার গন্ধ আসতেই, রুদ্রিকের মা ও সিথি ছুটে আসলো রান্নাঘরে। রুদ্রিক একেবারে মাসুম মানুষের মতো দাঁড়িয়ে আছে। সিথি রাগি কন্ঠে বলে,
—-“তোকে কি বলেছিলাম ভাইয়ূ? বলেছিলাম নাহ তুই পারবি নাহ। তুই আমার কোনো কথা শুনতে চাস নাহ। এখন আমাদের কুহুপাখি কি খাবে? ”
রুদ্রিকের মা এইবার রুদ্রিককে সরিয়ে পুড়ে যাওয়া সুজিটা ফেলে বলে,
—” আবারো রান্না করতে হবে। আমার নাত্নীটা কখন ধরে না খেয়ে আছে।
এই ছেলেকে বারণ করলে কোনো কথা শুনেনা। ইচ্ছে করে দু তিনটে দেই কানের নীচে। ”
—-” কে আমার রুদ্রিককে বকছে শুনি? ”
দিয়া শাড়িটা কোনোরকম সামলাতে সামলাতে ঢুকছে। দেখেই মনে হচ্ছে শাড়ি পড়ে বেশ হিমশিম খাচ্ছে দিয়া। পিছন পিছন লাজুক দিয়ার শাড়ির আচল ধরে রেখেছে। নতুন বউ বলে কথা। এইটুকু তো করতেই হবে।
দিয়াকে দেখে সিথি ছুটে গিয়ে দিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে,
—“পিপি তুমি এসেছো? জানো আমি তোমাকে কতটা মিস করেছি। এই দুইমাসে তো আমার কোনো খবরই রাখো নাহ তুমি। ”
দিয়া সিথির হাত ধরে বলল,
—–“কি করবো বল? নতুন সংসার। একটু গুছিয়ে নিতে হয় আর এই তোদের লাজুকের আংকেল তো একটা অলস! সারাদিন শুধু আলসেমি করে। আমাকে একটুও হেল্প করেনা।”
লাজুক কিছুটা অবাক হয়ে বলে,
—-“এইটা তুমি বলতে পারলে জান? তোমাকে আমি কতটা ভালোবাসি আর তুমি বাপের বাড়ি এসে আমার নামে বদনাম করছো? ইটস নট ফেয়ার। ”
রুদ্রিক ও রুদ্রিকের মা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।
লাজুকের কথা শুনে সিথি মুখ চেপে হাঁসে।
দিয়া লাজুকের পেটে হাল্কা করে ধাক্কা দিয়ে বলে,
—–“সত্যি তোমাকে নিয়ে আমি পারিনা কখন কি বলতে হয় তুমি সত্যি জানোনা। ”
লাজুক হেঁসে উঠে।
রুদ্রিকের মা দিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,
—“দিয়া তুই শাড়ি পড়েছিস কেন? তুই তো শাড়ি হ্যান্ডেলই করতে পারিস নাহ। ”
দিয়া মুখটা কালো করে বলে,
—” কি করবো? শ্বাশুড়ি মায়ের হুকুম বলে কথা। নতুন বউ এই কয়েকটাদিন নাকি শাড়ি না পড়লে হবেনা হুহ। পাড়া-প্রতিবেশি খারাপ ভাববে।”
রুদ্রিক তার পিপির কাঁধে হাত রেখে বলল,
—-‘ কারো কথা শুনার দরকার নেই বুঝেছো?যেই ড্রেস পড়লে তুমি নিজেকে কনফর্মটেবল ফিল করো। সেই ড্র্বেসটাই পড়বে। রুদ্রিকের দিয়া পিপি তুমি বুঝেছো? প্রতিবেশির কথা এতো কানে দেওয়ার কোনো মানে হয়? ”
দিয়া লাজুকের দিকে তাঁকাতেই লাজুক বললো,
—“আমিও তো দিয়াকে কতবার বলি। সে কি শুনে আমার কথা? সারাদিন শুধু কি কি ভাবলো তা নিয়ে চিন্তা। মার সাথে থাকতে থাকতে তোমাদের দিয়া পিপিও সেকালের হয়ে গেছে। ”
—-“আচ্ছা এতোদিন পরে আসলাম একটা সেল্ফি না তুললে কি করে হয়? কাজলকে কেউ ডাক ভাই। কাজলকে ছাডা কি আর সেল্ফি হয়?
দিয়া এইবার ফোনটা হাতে নিয়ে সেল্ফি তুলতে গিয়েও থেমে গেলো। লাজুক দিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলল,
—-” কি করছো কী দিয়া তুমি কি সব ভূলে গেলে? ”
দিয়া রুদ্রিকের দিকে তাঁকিয়ে অসহায় হয়ে বলল,
——“আমি সরি রুদ্রিক।আমি সত্যি ভূলেই যাই। কি করবো বল? কাজল তো আমাদের সবার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। এখন ও না থাকলে কোনোকিছুই ভালো লাগেনা। ”
কাজলের কথা উঠে যাওয়াডক রুদ্রিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—“দিয়া পিপি আমি বরং একটু উপরে যাই। আমার
কুহুর এখনো খাওয়া হয়নি। ”
রুদ্রিক তার মায়ের থেকে সুজির বাটিটা নিয়ে উপরের দিকে চলে গেলো।
মুহুর্তেই পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেলো। রুদ্রিকের যাওয়ার পানে তাঁকিয়ে সিথি চোখের জল ফেললো।
রুদ্রিক রুমে গিয়ে দেখে তার ছোট্ট মেয়ে কুহু কাঁদছে। রুদ্রিক তার মেয়েকে কোলে তুলে নিয়ে কান্না থামাতে থামাতে বলে,
—-“ওরে আমার মা টা খুব খিদে পেয়েছে তাইনা? এইতো বাবা এসে গেছে। দাঁড়াও এখুনি তোমাকে খাওয়াচ্ছি নাহ হলে তোমার মা তো আমাকে আবার বকা দিবে নাহলে।”
রুদ্রিক তার মেয়েকে খুব যত্ন করে খায়িয়ে দিয়ে, কাজলের কাছে গিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে,
—“এইযে ম্যাডাম আপনার মেয়েকে সময়মতো খায়িয়ে দিয়েছি হুহ। এখন কিন্তু আমাকে আর বকতে পারবি নাহ বুঝেছিস? মেয়েটাযে কাঁদছিলো সে খেয়াল আছে নিজের মতো ঘুমিয়ে যাচ্ছিস। ”
রুদ্রিকের করা কোনো কথাই কানে যাচ্ছে নাহ কাজলের। কেননা সে তো এখন কোমায়। কোমায় থাকা রোগী কী কখনো কোনো কথা বলতে পারে? কিংবা কোন কিছু শুনতে পারে?
হ্যা কাজলের ঘটে যাওয়া সেই র্ঘটনার ১০ মাস হয়ে গেছে। কাজল এখন কোমায় রয়েছে। রুদ্রিক নিজের ঘরেই চিকিৎসার সকল সরঞ্জাম এনে কাজলের চিকিৎসার ব্যবস্হা নিজের ঘরেই করে রেখেছে রুদ্রিক। এই ১০ মাসে সবকিছুই পাল্টে গেছে। রুদ্রিকের বিশ্বাস কাজল ঠিক সুস্হ হয়ে ফিরবে।
দিয়া ও লাজুকের বিয়ে হয়েছে ২ মাস হলো। যদিও দিয়া কাজলকে ছাড়া বিয়েটা করতে চাইনি,কিন্তু রুদ্রিকের জন্যে ঘরোয়াভাবে করে নিয়েছে।
কাজলের থেকে কোনোপ্রকার উত্তর না পেয়ে, রুদ্রিক আশাহত হয়। তখনি তার কানে তার মেয়ের কান্নার আওয়াজ আসে। রুদ্রিক ছুটে তার মেয়ের কাছে গিয়ে তার মেয়ের কান্না থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ১০ মাস ধরে রুদ্রিকই তার মেয়েকে সামলিয়ে যাচ্ছে। রুদ্রিক ও কাজলের মেয়ের নাম কুহু শেখ। কাজলের নামের সাথে মিলিয়েই রুদ্রিক তার মেয়ের নাম রেখেছে।
মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে কাজলের দিকে এক পলক তাঁকিয়ে রুদ্রিক বারান্দায় চলে গিয়ে, রুদ্রিক এক প্যাকেট সিগারেট বের করে। স্মোকিং করতে করতে
গুন গুন করে গাইতে থাকে,
সবকিছু বদলে গেলো এক রাতের নিমিষে
তুমি হারিয়ে যাবে বলেছিলে কবে?
আজ তোমায় হারিয়ে আমি একা এই রাতে
ভাবনাতে তোমাকে খুঁজেছি কি তবে?
ভাবি তুমি আসবে ফিরে
ধরবে হাতগুলো
বলবে তুমি কেঁদো না
ফিরে এসেছি এই দেখো
আর বলবে কেঁদো না তুমি
এবারই তো শেষ কান্না
বসে আছি আমি তোমার জন্যে…
আসোনা, ফিরে আসোনা
আসোনা, ফিরে আসোনা
ফিরে এসেছি, ভালোবেসে
তোমায় আমি প্রতিটিবার
সব ব্যথা ভুলে, সব কষ্ট ফেলে
এসেছি আজি আমি তোমার কাছে
তবু তুমি নেই আজ আমার পাশে
হারিয়ে গেছো তুমি বহুদুরে
রুদ্রিকের গানের প্রতিটা বেদনা প্রতিটা সুর তার কাজলকে ঘিড়ে। আজ যেনো রুদ্রিক তার গানের মাধ্যমে তার এতোদিনের জমানো কষ্টগুলো প্রকাশ করছে। আজ সত্যি কাজল থেকেও যেনো নেই। আজ কাজল রুদ্রিকের কাছে থেকেও বড্ড দূরে
দরজার বাইরে থেকে সবকিছুই শুনতে পারছে সিথি। সাদি সিথির পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
—“আজ রুদ্রিকের গানের প্রতিটা শব্দের পিছনে রয়েছে এতোদিনের লুকিয়ে থাকা কান্না। যা রুদ্রিক শক্ত মুখে এতোদিন সহ্য করে গেছে। আমাদের রুদ্রিক কতটা চাপা স্বাভাবের হয়ে গেছে তাইনা? ”
সিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
—-“আমার ভাইটা নিজের কষ্টগুলো লুকিয়ে কীভাবে দিব্যি ঠোটে হাঁসি ঝুলিয়ে থাকে তাইনা? ভাবতে খুব অবাক লাগে। ”
সিথির কথা শুনে সাদি মাথা নাড়ায়।
গানটা গাইতে গাইতে রুদ্রিক কাজলের কাছে গিয়ে, কাজলের হাতদুটো ধরে কান্নার সুরে বলে,
—‘জানেমান রে আমি আর পারছি নাহ সত্যি। সারাদিন মিথ্যে হাঁসি ঝুলিয়ে রাখতে রাখতে আমি সত্যি আজ ক্লান্ত। আমার যে কতটা কষ্ট হয় আমি সত্যি বলে বুঝাতে পারবো নাহ। আচ্ছা এমনটা তো আমরা কেউ আশা করেনি বল? আমাদের একটি মিষ্টি সংসার হওয়ার কথা ছিলো তাইনা? তাহলে আজ এইরকমটা হলো কেন বল নাহ কাজল? আজ ১০ টা মাস হয়ে গেলো আমাদের মেয়ে এখনো তোর স্পর্শ পায়নি? কেনো হলো এইসব? সবকিছুই যেনো আজ এলোমেলো হয়ে গেলো।”
আফসোস আজকে রুদ্রিকের আর্তনাদ আজ কাজলের কানে পৌঁছাচ্ছে নাহ।
রুদ্রিক কাজলের হাত জোড়া নিজের গালের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চোখের জল ফেলতে থাকে।
_____________
রুদ্রিক, সিথি ও সাদি রুদ্রিকের রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ডক্টর কাজলকে চেক করছে। প্রতি-সপ্তাহে ডক্টর এসে কাজলকে চেক করে যায়। তখনি হঠাৎ ডক্টর চিৎকার করে উঠে।
বাকীটা আগামী পর্বে….
চলবে কী?
[গাঁয়ে জ্বর নিয়ে লিখেছি। ভূল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন]