অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤️পর্ব___৩৭

অতঃপর_প্রেমের_গল্প❤️পর্ব___৩৭
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন

আজ ভোরে পাখির কলকাতানও সংকেত দিচ্ছে এইতো সময় ঘনিয়ে এসেছে ‘টাঙ্গুয়ার হাওর’ এ যাওয়ার। পিটপিট করে চোখ খুললো আফরা। মুখে ওপর পূব দিকের বারান্দা ভেদ করে আছড়ে পড়ছে রৌদ্দুর। সকাল বেলা সীমান্তবর্তী এই পূর্ব দিকটা অনন্য সুন্দর মনে হয় আফরার কাছে। রৌদ্দুরের আনাগোনা দেখলে মনে হয় যে সূর্য বুঝি বাংলাদেশে ওপারে থাকা ভারতের মেঘালয় এর পাহাড়গুলো সাথে রৌদ্রময়ী লুকোচুরি খেলছে। এসব কিছু দেখেই আফরার মন প্রসন্ন হয়ে গেলো।টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়ার ডেট পিছিয়ে গিয়েছে বিশেষ কারনে। আর এর মধ্যে হয়ে গিয়েছে অনেক কিছু । অনেকদিন পর ও একটা শান্তির ঘুম দিয়েিলো। । ফারহানের সাথে কাটানো সময়গুলো খুবই সাধারন প্রক্ষাপটের ভিত্তিতে মনে হলেও ওর কাছে এগুলো অনেক বিশেষ স্মৃতি। আফরা হতদন্ত ভাবে উঠে ফ্রেস হয়ে নিলো। ইলার রুমে গিয়ে দেখলো ইলাও ঝড়ের গতিতে রেডি হচ্ছে। মেয়েটা বরাবরই লেট লতিফ। কোনো কাজ সময়মতো করা একেবারে অসম্ভব ওর জন্য। ইতিমধ্যে ফাহিম আর মারুফ থেকে বেশ কয়েকটা ঝাড়িও খেয়ে ফেলেছে। আফরা তপ্তশ্বাস ফেলে ইলার উদ্দেশ্যে বললো,

-তুমি জানো যে লেট করলে ফাহিম তোমায় বকবে। তাহলে এত লেট করলে কেনো?

-আর আপু বলোনা। ঘুমটা কাটাতেই পাচ্ছিলাম না।

-আর কতক্ষণ লাগবে তোমার,, ফাহিম ডাকছে তো?

-এইতো হয়ে গিয়েছে। তুমি নিচে যাও ওদের কাছে। আমি আসছি।

আফরা তারপর নিচে ড্রইংরুমে পা বাড়ালো। আজ আফরা একটা বেগুনি রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে। এই জামাটি আফরা নিয়েছে ইলার কাছ থেকে। আফরা সালোয়ার কমামিজে অভ্যস্ত না। ওর মনেও পড়েনা ও লাস্ট সালোয়ার কামিজ কবে পড়েছিল। তবে এই বেগুনি রঙটা ওর ফর্সা গায়ে মারাত্নকভাবে ফুটে ওঠেছে। সিড়ি বেয়ে আফরা নামার সময়ই ওর চোখাচোখি হলো ফাহিমের সাথে। ফাহিম কিছুক্ষণ আফরার এই রূপে বিমূঢ় হয়ে ছিলো। তবে আফরা চোখ সরিয়ে ফেললো ফাহিম থেকে। সেদিন রাতে মিসেস নাবিলা আর মিঃ ইফাজের কথার সাপেক্ষে ফাহিমকে এড়িয়ে যাওয়াটাই ওর জন্যে ভালো। আসলে সেদিন রাতে ফারহানের সাথে বাড়িতে ফেরার পর রাতে মিসেস নাবিলা আর মিঃ ইফাজ এসেছিলো আফরার কাছে। আফরা তখন খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুটিয়ে আনমনে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রল করছিলো। তখন উনাদের একসঙ্গে নিজের ঘরে দেখে খানিকটা বিস্মিত হয় আফরা। তবুও সেটা আফরা প্রকাশ করলো না। ভদ্রতার খাতিরে বললো,

-দাঁড়িয়ে আছেন কেনো আঙ্কেল আন্টি? বসুন।

মিঃ ইফাজ আর মিসেস নাবিলা বসে পড়লো খাটের একপ্রান্তে। মিঃ ইফাজের মধ্যে খানিকটা জড়তা কাজ করছে দেখে আফরা ভ্রু কুচকালো। বললো,

-এত অকওয়ার্ড ফিল করছেন কেনো আঙ্কেল? কিছু বলতে চান? বললে বলে ফেলুন। আমি শুনছি।

-আসলে,,,,,,,,,,

মিঃ ইফাজ এতটুকু বলে থেমে গেলেন। আফরা আবার বললো,

-আসলে কি আঙ্কেল?

চরম বিরক্ত হচ্ছেন মিসেস নাবিলা নিজের স্বামীর এমন গর্দেভ টাইপ ব্যবহারে। এমন জরুরি কথা যদি এভাবে ছন্নছাড়া হয়ে বলতে থাকে তাহলে কে-ই বা গুরুত্ব দিবে উনার কথায়। মিসেস নাবিলা ভাবলেন , না! এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা স্বামীর আশায় রেখে দিলে চলবে না। উনাকে নিজেই কথাটি এগোনোর ব্যবস্থা করতে হবে। বলেই মিসেস নাবিলা এবার আফরাকে জিজ্ঞেস করলেন,

-তোমার বাবার সাথে কথা হয়েছে তোমার আফরা?

-কথাতো আমার ড্যাডের সাথে প্রতিদিনই হচ্ছে। কিন্ত কেনো আন্টি?

মিসেস নাবিলা এবার ভনিতা না করে বলে ফেললেন,

-আসলে আফরা , আমি তোমায় শুরু থেকেই অনেক পছন্দ করেছিলাম আমার ছেলে ফাহিমের জন্য। আর এখন আমরা আর তোমার ফ্যামিলি এ বিষয়ে এগিয়ে যেতে চাইছি আরকি। আমরা তোমার মতামত জানতে চাই। তুমি এর আগেও বলেছিলে যে ফাহিমকে তোমার পছন্দ। তো এখন এ ব্যাপারে তোমার কি মতামত আফরা?

আফরা স্তব্ধ হয়ে ছিলো কিছুক্ষণ। গলার স্বর ক্রমশ আটকে এসেছে। নিষ্পলক ভাবে সে তাকিয়ে রইলো মিসেস নাবিলার দিকে। আর যাই হোক বিয়ে নিয়ে ওর মস্তিষ্ক বরাবরই শূণ্যের কোঠায় চলে যায়। আর ও ভাবতেও পারেনি যে মিসেস নাবিলা এভাবে আফরাকে ফাহিমের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসবে। আফরার সন্দেহ হয়েছিলো, শুরুতেই কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো যখন ওর ড্যাড, এমনকি মিসেস নাবিলাও ফাহিম সম্পর্কে ওকে এমন ধরনের প্রশ্ন করেছিলো। তবে আফরা স্বভাবতই প্রতিউত্তর দিলো সবাইকে। এর মুখ্য কারন একজন ব্যাক্তিত্ববান মানুষ হিসেবে ফায়িমকে ওর ভালোলাগে, দ্যাটস ইট। এর বেশি ও ফাহিমকে একবিন্দুও কল্পনাও করতে পারেনি। আর কল্পনা করবেই বা কিভাবে যেখানে ওর মন মস্তিষ্ক জুড়ে ফাহিমেরই আপন চাচাতো ভাই ফারহান বাসা বেঁধে ছিলো? তবে ফারহানকে নিয়েও ও কখনও বিয়ের মতো সম্পর্ক করার ব্যাপারটা নিয়ে ভাবেনি। সেখানে মিসেস নাবিলার এতোটা এগিয়ে যাওয়া রীতিমতো চুপসে দিয়েছে ওকে।

আফরা জিভ দিয়ে শুষ্ক ঠোঁটজোড়া ভিজালো। ওর স্নায়ু ক্রমশ উত্তল হয়ে পড়েছে। কথাটা জিভের আগায় এসে পড়লেও সাজিয়ে বলতে পারবে কি-না ঘোরতর সন্দেহ। আফরা তপ্তশ্বাস ছাড়লো। মিসেস নাবিলার উদ্দেশ্যে বলে ওঠলো,

-আমি……আমি এ ব্যাপারে ফাহিমের সাথে একান্তে কথা বলতে চাচ্ছি আন্টি।

মিসেস নাবিলা আর মিঃ ইফাজ আর কথা বাড়ালেন না। প্রস্থান করলেন আফরার পরিপাটি ঘরটি। আফরার শরীর উত্তেজনায় আর রাগে রীতিমতো রি রি করছে। এখানে আসার পর প্রথম,, এই প্রথম নিজ থেকে কল দিলো মাকে। আফরা কোনোমতে নিজের রাগ চেপে রেখেছে। ওর মম কল রিসিভ করা মাত্রই আফরা কাট কাট গলায় বলে ওঠলো,

-হোয়ার আর ইউ মম? আই ওয়ানা টক উইথ ইউ। ইটস আর্জেন্ট।

-বলতে পারো। আমি পুরো ফ্রি।

-মিসেস নাবিলার সাথে কি কথা হয়েছে তোমার আর ড্যাডের?

-ওহ্! উনি তবে তোমায় বলেছে সব কথা?

আফরার মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে ওঠলো। চিৎকার করে বলে উঠলো,

-হাউ ডেয়ার ইউ মম উইদআউট মাই পার্মিশন তুমি আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করছো? যেদিকে আমিই আমার বিয়ে নিয়ে ভাবিনি তুমি ভাবার কে হও আমার বিয়ে নিয়ে?

-মুখ সামলে কথা বলো আফরা। বেয়াদবির একটা সীমা আছে।

-বুলশিট স্টপ করো প্লিজ। আর তুমি ভাবলে কি করে তুমি বললেই আমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাবো, আমার ফ্রীডম আমি নিজ হাতে কেড়ে নিবো? ফাহিম ছেলে হিসেবে অনেক ভালো। তাই বলে বিয়ে,,,,নেভার এভার। অ্যামেরিকায় থাকাকালিন কতগুলো রিলেশন করেছি আমি। তখনকার টাইমে যদি এরিকের মতো একজনকে রিজেক্ট করতে পারি তবে ফাহিম ক্ষতি কি?

-ফাহিম আর এরিক এক না অ্যাফি।

থমথমে গলায় বললেন মিসেস নীলু। আফরা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে ওঠলো,

-এক হবে কেনো,,,,এরিক ছেলে হলে ফাহিম কি মেয়ে যে এক হবে না?

মিসেস নীলু কোনোমতে নিজের রাগ সংযত করে রেখেছে। মেয়েটার মধ্যে টু পরিমাণেও ভদ্রতার ছিটেফোটা নেই। অন্যের সাথে ভদ্রতার সহিত থাকলেও নিজের মমের সাথে আফরার আচরণ একেবারেই স্বাভাবিক না। তবে আফরার কাছে এবার স্পষ্ট হতে শুরু করলো সবকিছু। কেনো ওর মা ওকে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে, কেন মিসেস নাবিলা এতদিন ওকে জোর করছে ফাহিমের সাথে একান্তে সময় কাটানোর জন্য। এর মানে এসব কি পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো? আফরা কানে মোবাইল রেখেই ধপ করে খাটে বসে পড়লো। ওর কাছে স্পষ্ট হওয়া শুরু করেছে ফাহিমের প্রথম দিনের ব্যবহার, অগোচরে স্মিত হাসি। ওর এত যত্ন করা, ফারহানের কারনে আফরার মনক্ষুন্ন হলে হাসানোর চেষ্টা করা। তার মানে ফাহিম প্রথম থেকেই আফরাকে পছন্দ করতো যা বিন্দুমাত্রও টের পায়নি সে। আর পাবেই বা কিভাবে যেখানে ওর জীবন ফারহান নামক এক মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে ছিলো? ফারহানের সাথে ওর সূত্রপাত হয় তিক্ত ঘটনাসূহ নিয়ে। ওদের সূচনা হয়েছিলো খুবই অন্যরকম। ফারহানের ওভার এটিটিউট, দাম্ভিকতা এসব বিরক্তির চরম সীমান্তে নিয়ে যেতো আফরাকে। আর এই বিরক্তিটাই আস্তে আস্তে হৃদয়ে গভীরত্ব লাভ করে এতটাই ছড়িয়ে পড়ে এখন মন মস্তিষ্কে কেবল মাত্রই ফারহানের বসবাস। যার দরুন ফাহিমকে নিয়ে ভাবার চিন্তাও করেনি ও। তবে আফরা চুপ রইলো। বিন্দুমাত্র অপরপ্রান্তে থাকা মাকে বুঝতে দিলো না এ কথাগুলো। তারপর পট করে কল কেটেই বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো।

ওর নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। বুক উঠানামা করছে বারবার। দৃষ্টি নিবদ্ধ ঘূর্ণায়মান সিলিংয়ের ফ্যানটির দিকে। এই বিয়ে থামানো ওর কাছে ব্যাপার না তবে বড় ব্যাপার হলো ফারহান। কেউ যদি জানতে পারে যে ও ফাহিমকে না ফারহানকে পছন্দ করে , এমন একজন মানুষ যার জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই, এসব কিছু কিভাবে সামলাবে আফরা?
.
.
ঘটনাটির পরের দিনই আফরা সরাসরি কথা বললো ফাহিমের সাথে। ফাহিম যেদিকে ছিলো ওর প্রতিউত্তরের অগাধ অপেক্ষায়, একজন পাষাণ শ্রেণির মানুষের মতো আফরা সরাসরি প্রতয়াখ্যান করলো ফাহিমকে,,যেমনটা এরিককে করেছিলো। পার্থক্য শুধু একটাই, এরিক যেখানে ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিল, ফাহিমের মুখে তখনও ছিলো প্রানবন্ত একটা হাসি৷ আফরা তবে ঠিকই ওর মনের চাপা কষ্টটা দেখতে পেলেও রইলো নির্বিকার। নিজের ওপর বড্ড রাগও হলো আফরার, যে এতদিন সে কেনো ফাহিমের এই মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটি বুঝতে পারেনি ৷ সবচেয়ে অবাক করা আরও একটি বিষয় হলো যে এ ব্যাপারে ফারহানের একেবারেই ধারনা নেই। মিসেস নাবিলা চাননি যে ফারহান এ ব্যাপারে ওদের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াক। চায়নি আফরাও। কেননা ফারহান যদি একবার জানতে পারে যে আফরা আর ফারহানেরই নিজের আপন চাচাতো ভাই ফাহিমের ব্যাপারটি বিয়ে পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছিলো তবে ফারহান আর যাই হোক-আফরার কাছাকাছি কখনোই আসার চেষ্টা করবে না। পেরিয়ে গেলো ৪৮ ঘন্টা। কিন্ত আফরা আর ফাহিমের সাথে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি। তবে ফাহিমের মনে খচখচানি ছিলো যে ঠিক কোন কারনে আফরার অমত হয়েছিলো এই বিয়েতে? ও তো চাইলে সময় নিতে পারতো, কিন্ত সরাসরি নাকচ করাটাই বেশ ভাবিয়ে তুলেছে ফাহিমকে। তবে সে আফরাকে জিজ্ঞেস করলো না এ ব্যাপারে।

ফাহিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মনে মনে আওড়িয়ে নিলো এমন জিনিসের প্রতি নজর দিতে নে যেটা কখনোই ওর হবে না। তারপর নিজেকে সহজ করে আফরার উদ্দেশ্যে বললো,

-আপনি রেডি আফরা?

-হুম।

-মারুফের সাথে বাহিরে চলুন তাহলে , ফারহান বাহিরেই আছে।

______________________

স্নিগ্ধ সকালের এই সময়ে বাতাসটা অত্যন্ত ফুরফুরে থাকে। ফারহান প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রগুলো এক এক করে গাড়িতে উঠিয়ে নিলো। টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়া হবে সকালেই উঠেছে ফারহান। সকালে উঠেছে বললে ভুল হবে, ফযরের মুহুর্তেই সাব্বির আর শামসু তাকে এসে ডেকে তুলেছে। সাব্বির আর শামসুও যাবে ওদের সাথে টাঙ্গুয়ার হাওরে। এর জন্য কেউ খুশি হোক না না হোক , বেজায় খুশি হয়েছে চঞ্চলা ইলা।ফারহান সবকিছু গাড়ির পেছনে রেখে এবার গাড়িতে একটু হেলে দাঁড়িয়ে রইলো। দৃষ্টি নিবদ্ধ অপেক্ষারত মানুষগুলোর আসার দিকে। অবশেষে সেই প্রহর কাটিয়ে সর্বপ্রথম এলো বেগুনি সালোয়ার কামিজ পরনে এক অপরূপা নারী, ফারহান একবার তাকিয়েই আর চোখ সরাতে পারলো না। ওর বোধ অনেক পরে আন্দাজ করতে পেরেছে যে মানবীটি কে। ঘাড়ের একটু নিচ পর্যন্ত ঢেউ খেলানো খোলা চুল , কোণে সুন্দর করে সিথী করা , হাতে কহিনূরের মতো ঝকঝক করা ব্রেসলেট আর সেই লোভনীয় রূপ। ফারহানের হৃদয়ের কম্পন বন্ধ হয়ে গিয়েছে ক্রমশ। আফরাকে সালোয়ার কামিজে এতটা সুন্দর লাগতে পারে এ নিয়ে ওর ধারনা ছিলোনা বিন্দুমাত্র।

আফরা বুঝতে পারছে ফারহানের এই দৃষ্টি , তবুও ওর মধ্যে লাজুক ভাবটা টেনে আনতে পারলো না। ওর বেহায়া দৃষ্টি বারবার ফারহানের বিমুগ্ধ চোখগুলোতে ডুবে যেতে চাইছে। অজান্তেই ফারহান শীতল কন্ঠে বলে ওঠলো,

-সুন্দর!

এছাড়া আর কোনোরূপ কথা হলোনা ওদের মাঝে। আফরা একটা জিনিস ভালোমতই খেয়াল করেছে, ওদের মধ্যে কথাবার্তা খুব বেশি একটা হয়নি। তবুও মন দুজনকে খুব কাছাকাছি টেনে নিয়ে এসেছে , এই প্রণয়ের পরিণয় আদৌ হবে কিনা কে জানে? ফাহিম ইলা রৌশিন আসা সাপেক্ষেই শুরু হলো ওদের যাত্রা। প্রথম শাহ্জালাল মাজার পেরিয়ে সুনামগঞ্জ , তারপর সুনামগঞ্জের বড় ব্রিজের থেকে তাহিরপুর নৌকা ঘাটে। গাড়ির একেবারে পেছন সিটে আফরা আর রৌশিন বসে ছিলো। দুজনের মধ্যে অনেক আলাপ-চারিতা হয়েছে আবার মাঝেমাঝে ডুবেও গিয়েছে সকালের এই বর্ণীল সৌন্দর্যে। তারপর সাড়ে আটটা নাগাদ ওর পৌঁছুলো সুনামগঞ্জের তাহেরপুর নৌকা ঘাটে। নৌকা আগেই ভাড়া করে রেখেছিলো ফাহিম , তাই খুঁজে পাওয়া আর দরদাম নিয়ে তেমন একটা বেগ পেতে হয়নি। একে একে নৌকায় উঠে পড়লো ফাহিম ,ফারহান রৌশিন , সাব্বির, শামসু, মারুফ আর ইলা। শুধু দাড়িয়ে রইলো আফরা। এত উচু আর ঢেউয়ের তালে নাচানো নৌকাতে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। ফাহিম খেয়াল করেছিলো বিষয়টা, অতঃপর আফরার উদ্দেশ্যে হাত বাড়ানোর আগেই ফাহিনকে চরম অবাক করে দিয়ে হাত এগিয়ে দিলো ফারহান। আফরা কিছুক্ষণ ওর হাত বাড়ানো দেখে প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে রইলো। যার দরুন নিচু হলো ফারহান৷ আড়ষ্ট ভঙ্গিমায় বলে ওঠলো,

-আমার হাত ধরুন আফরা। আমি আপনার সাথে আছি।
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ

আজ অনেক অনেক বড় একটি পর্ব দিয়েছি। এখন কেমন হয়েছে জানাও পাঠক-পাঠিকাগণ’স, অপেক্ষায় আছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here