লাভ রেইন পর্ব-৭

0
2287

#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ০৭

১৫.
উৎকন্ঠিত মনের চাপাচাপি তে আঁখিদুটির তন্দ্রাভাব কাটাতে বাধ্য হলো সিলিভিয়া।তারপর ও কেন যেনো নিদ্রাপরীরা ডানা দিয়ে ঝাপটা মেরে চক্ষুদ্বয়ে হানা দিচ্ছে। নিষ্পলক দৃষ্টি টানটান করে রাখা দুষ্কর। ভেবেচিন্তে আজকের পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার তাগিদে অনুভব করলো সিলিভিয়া।অকস্মাৎ, নিজের ভাবনটাকে মনের ঘরে স্থান দিলো না।তেহভীন কে দেওয়া কথার খেলাপ করতে রাজি নয় সিলিভিয়া।ভারাক্রান্ত মন,চোখ দুটি নিয়ে রাজ্যের চিন্তা কুশলা মায়াজাল বুনতে লাগলো বসে বসে।
কি হতে পারে আজ? তেহভীন কি অন্যকিছু বলতে চাইছে? আর কিসের এতো ইচ্ছে তার?

কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে দৃষ্টি রেখে তেহভীনের কথা ভাবছিলো সিলিভিয়া। হঠাৎ, একটা সাদা আর লাল সুতোর কাজের একটা শাড়ি চোখে পড়লো সিলিভিয়ার। এই শাড়িটা সায়মন কিনে এনেছিলো সিলিভিয়ার জন্য। লাস্ট সেমিস্টারের পর এক বন্ধুর বিয়েতে যাওয়ার জন্য। জুলিয়া শাড়িটা দেখে হিংসে জ্বলে যায়।যদিও তার জন্যও শাড়ি এনেছিলো।কিন্তু সেটা অন্যরকম। মূলকথা সিলিভিয়ার জন্য যা আনে,জুলিয়ার তা পছন্দ হয়ে যায়। তারপর আগমন ঘটে তুমুল ঝগড়ার একটা পর্ব। সায়মন পরবর্তী সময় এসেও সিলিভিয়ার পক্ষে আওয়াজ তুলে। জুলিয়াকে বিয়ে করাটা জীবনের সবচেয়ে একটা বড় ভুল তা সায়মন হাড়ে হাড়ে টের পায় বিয়ের একমাস গড়িয়ে যেতেই।সেই ঘটনার রেশ ধরে সিলিভিয়া রাগ করে আর শাড়িটা পড়েনি।কিন্তু আজ এই শাড়িটা অন্যসব কাপড়ের তুলনায় বেশি আকৃষ্ট করছে তার দৃষ্টিকে। অতঃপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত উপনীত হয় সিলিভিয়া।এই শাড়িটা পড়েই তেহভীনের সাথে আজকের দিনটার অন্যরকম সূচনা করবে।কি হবে না হবে সব মিলে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে আছে সিলিভিয়া।

রুজিনা মেয়ের কার্যকলাপ দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

— এভাবে সেজে-শাড়ি পড়ে কোথায় যাচ্ছিস?

— ঘুরাঘুরি করবো মা। দোয়া করো আসছি।

সিলিভিয়া তার মাকে জড়িয়ে ধরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। আজ অটো তে না একটা রিকশা নিলো সে।ফোনটা বের করে হাতে নিয়ে দেখলো রাদিফের নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। সিলিভিয়া সেটা দেখার জন্য ওপেন করলো। লেখাটুকু পড়ে বুঝতে পারলো লেখাটা তেহভীন পাঠিয়েছে। ওকে রাদিফদের এলাকায় রাস্তার কাছে দাঁড়াতে বলেছে।

১৬.

ওয়ালেটের সব ডলার বিছানায় রেখে তেহভীন রাদিফের দিকে চেয়ে বলল,

— রাডিফ,আমার কাছে আপাততে দুইশ’দশ ডলার মজুদ আছে। আই হোপ,এতেই আমাদের হয়ে যাবে।

রাদিফ বিস্ময়বিমূঢ় চোখে চেয়ে বলল,

— হবে হবে। কিন্তু ব্রো,তোমার ইনকাম সেলারি তো মামু ব্যাংক থেকে তুলতে দেয় না।এসব কোথায় থেকে?

তেহভীন হাত থামিয়ে রাদিফের দিকে তাঁকালো। রাদিফের চোখেমুখে উৎসুখ্যভাব। রাদিফকে বললে হয়তো কোন সমস্যা হবে না। সেটা ভেবে তেহভীন চাপা নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে বলল,

— মানিবুকার্স থেকে।

রাদিফ মস্তিষ্কে জোর কাটিয়ে ভাবার চেষ্টা করলো।মানিবুকার্স শব্দটার অর্থ কি সেটা বুঝতে পারলো না।তাই রাদিফ বলল,

— মানিবুকার্স কি ভাইয়া?

— মানিবুকার্স হচ্ছে ইউরোপের একটি অন্যতম প্রধান অনলাইনের অর্থ লেনদেনের প্রতিষ্ঠান।

— ওওও! তো এখান থেকে কিভাবে৷ নিয়েছো?

তেহভীন প্যান্টের নিচের অংশ ফোল্ড
করতে করতে বলল,

— রাডিফ, গেম মেইড করেছো কখনো?

— না তো।

— আমি করেছি। একটা গেম মেইড করে নিজের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করলে তখন সর্বমোট আয় হয় ত্রিশ ডলার। ত্রিশ ডলারের অধিক হলে মানিবুকার্স,চেক, বা পেপালের মাধ্যমে ডলার উত্তোলন করতে হয়। আর আমি টুটাল পাঁচশো ডলার ইনকাম করেছি। আমার অন্যান্য খরচগুলো আমি এখান থেকে করছি।যেটা ড্যাড জানে না।

তেহভীন বলেই স্মিথ হাসলো। তেহভীনের জায়গায় সে হলো কবেই সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে যেতো।কিন্তু অবশ্যই মামুর এটা করার কারণও যতেষ্ট রয়েছে। রাদিফ হালকা হেসে বলল,

— বুঝেছি। তুমি এসব করেছো কখন। মানে টাইম পাও?
— টাইম বের করতে হয়।

তেহভীন বসা থেকে উঠে নিজের ব্যাগ থেকে একটা নতুন পারফিউম বের করলো।সেটা রাদিফের দিকে হাত উঁচিয়ে ছুঁড়ে মারলো। রাদিফ হন্তদন্ত হয়ে ক্যাচ ধরলো।সেটা দেখে তেহভীন মৃদ্যু হাসলো। বলল,

— এটা তুমি ইউস করো। অনেক ভালো স্মেল।

রাদিফ পারফিউম বের করে হাতের উপর স্প্রে করলো একটু। স্মেলটা অনেক ভালো।একটু ঝাঁঝালো,কিন্তু সুভাসটা অনেক ভালো।রাদিফ আপত্তি করে বলল,

— এটা না ব্রো,তুমি যেটা ইউস করো সেটা দাও।
ওটার স্মেলটা এতো ইউনিক,ইচ্ছে করে নাকের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখি।

তেহভীন রাদিফের কথায় হেসে দিলো।বলল,

— ওটা ‘ ডিকেএনওয়াই গোল্ডেন ডিলিসিয়াস ফ্র্যাগন্যান্স পারফিউম।’ আমার অনেক ফেভারিট।স্যরি টু স্যে রাডিফ,ওটা তোমাকে দিতে পারছি না।

রাডিফ বলল,

— ঠিক আছে, ঠিক আছে, আমিও একদিন অনেক ধনী হবো। তখন নিজেই কিনে নিবো।

— সেটা অনেক দেরি রাডিফ।তুমি ওয়ান ইয়ার ওয়েট করো। সেইম পারফিউম আমি তোমার জন্য পাঠাবো।

রাডিফ খুশী হয়ে বলল,

— থ্যাংক ইউ ভাইয়া। আমার একটা বড়বোন থাকলে তোমার সাথে বিয়ে দিতাম ভাইয়া। আফসোস,বড়বোন নেই।

ওফ হুয়াইট শার্টটা ইন করে নিলো তেহভীন।এরপর ব্রাউন কালার বেল্টটাও ও পড়লো। জেল দিয়ে চুল সেট করতে করতে বলল,

— রাডিফ,আমি ভাবছি বিয়ে ও করবো না।আই হোপ,ইউ আন্ডার্স্টান্ড।.. হুয়াই?

রাদিফ চুপচাপ তেহভীনের কার্যকলাপ দৃষ্টিবন্দি করতে লাগলো। মানুষটা কতোটা ফ্যাশনেবল সেটা দেখলেই বুঝা যায়। রাদিফ,আফসোস করতে লাগলো। সে তেহভীনের লেভেলে কখনো যেতে পারবেনা ভেবে।তেহভীন রাদিফের কাছ থেকে এক্সট্রা চাবিটা নিয়ে নিলো।এরপর বলল,

— রাডিফ,তোমার কাজ হলো তোমার মায়ের লোকেশন ট্র্যাক করা। আর আমাকে ইনফর্ম করা।

রাদিফ তেহভীনের কথায় সায় জানালো।তেহভীন এ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলো। ভাগ্যিস একটা চাবি বাসায় ছিলো। সেটা ব্যাবহার করে রাদিফ তার একটা ফ্যান্ডকে দিয়ে লক খুলিয়েছে।

অবশেষে হাতছানি দিলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। সিলিভিয়ার অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটলো তেহভীনে চমৎকার ভাবে আগমনে। তেহভীন এগিয়ে আসতে আসতে বলল,

— হাউ আর ইউ প্রিটি লেডি!

— আম গুড,ইউ!

— গুড!

তেহভীন আপাদমস্তক সিলিভিয়ার দিকে তাকালো। এরপর প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি নিক্ষেপ করে বলল,

— ডোন্ড মাইন্ড! তুমি যে ক্লথটা পড়েছো
এটার নাম কি?

তেহভীনের কথা শুনে সিলিভিয়া হেসে ফেললো
বলল,

— শাড়ি!

— ওউ, বিউটিফুল সাড়ি।

সিলিভিয়ার মৃদ্যু হাসলো। বলল,

— তো, কোথায় যেতে চান আপনি?

— প্রথমে তোমার পরিচিত একটা ব্যাংকে নিয়ে
চলো আমাকে।এরপর একটা ভালো রেসট্রনে।

সিলিভিয়া একটা অটো ডাকলো।দুজনে অটোতে বসে সর্বপ্রথম একটা ব্যাংকে গেলো। ওখান থেকে তেহভীন নিজের ডলার প্রয়োজন মতো ভাঙিয়ে বাংলা টাকা নিলো।এরপর সিলিভিয়া একটা ভালো রেসট্রনে নিয়ে যায় তেহভীনকে। যেহেতু তেহভীন এই শহরের পথঘাট চিনেনা। তার পথের সঙ্গী হিসেবে সে সিলিভিয়াকে চুজ করলো। কারণ তার মন বলছে,সিলিভিয়া কখনো তার কাজে বিরক্তবোধ করবে না। যেটা অন্য কেউ করে। রেসট্রনে খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সিলিভিয়া তেহভীনের উপরে দৃষ্টি বুলাচ্ছে। সিলিভিয়ার বুকের স্পন্দনের গতি অস্বাভাবিক রূপ ধারণ করেছে।সিলিভিয়া এই ভয়ে কুঁকড়ে আছে,তার স্পন্দের শব্দ শুনে ফেলছে না তো। কিন্তু তেহভীন সেটা করছে না। তার তাকাতে হলে সম্পূর্ণ দৃষ্টি মেলে সিলিভিয়ার দিকে তাকায়।যা বলার সিলিভিয়ার চোখে চোখ রেখে বলে।মাঝখানে সিলিভিয়া মিঁইয়ে যাচ্ছে বারংবার।
তেহভীন সিলিভিয়া আড়ষ্ট জড়তা আঁচ করতে পারলো।তেহভীন সিলিভিয়ার মাইন্ড
কনভার্ট করতে বলল,

— সিলভার,তুমি আজ চুলে দড়ি বাঁধোনি কেনো?

তেহভীনের কথায় বিষম খেয়ে ফেললো সিলিভিয়া।নাকমুখের খাবার একত্রে ছিঁটকে বেরিয়ে আসলো।তেহভীন অস্থির,উদ্ধিগ্ন হয়ে বসা থেকে উঠে সিলিভিয়ার পাশে এসে টিস্যু হাতে নিয়ে সিলিভিয়ার মুখ মুছে দিতে দিতে বলল,

— হুয়াট হ্যাপেন্ড? আর ইউ ওকে সিলভার?

সিলিভিয়া নাক মুখ মুছে বলল,

— তেহভীন প্রথমত আমার নাম সিলভার নয় সিলিভিয়া। আর দ্বিতীয়; চুলে দড়ি নয় ব্রেইড করা হয়। আমরা বাংলায় ব্রেইডকে বেণী বলি। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার?

— আই নউ, সিলভার। আই ওয়াজ কিডিং।

সিলিভিয়া নাক ফুলিয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে একত্র করে তাকালো তেহভীনের দিকে। সেটা দেখে তেহভীন চমৎকার হাসলো।এরপর বলল,

— অভ্যাস হয়ে গেছে সিলভার,আমি এটা
পরিবর্তন করতে পারবো না।

(চলবে)
আপনাদের রেসপন্স এতো কম কেন? 😒😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here