লাভ রেইন পর্ব-১১

0
2389

#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ১১

২৭.
সিলিভিয়ার কথা শুনে ফিসফিস শব্দ তুলে হেসে ফেললো রামিশ। সিলিভিয়া ভ্রুঁ কুঁচকালো।অতঃপর ক্ষীণ নিঃশ্বাস ছেড়ে রামিশের মুখের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে বলল,

— আই থিংক ইউ আর রাইট রামিশ।

রামিশ সিলিভিয়ার কথায় হকচকিয়ে হাসি থামিয়ে ফেললো। চোখেমুখে বিমূঢ় ভাব ফুটিয়ে বলল,

— সত্যি? তুই সত্যি বলছিস?

— ভেতরে আয়, বসে কথা বলি?

রামিশ নাকচ করলো না।ঝটপট সিলিভিয়ার রুমে প্রবেশ করলো,সোজা গিয়ে বসলো সিলিভিয়ার বিছানায়। তা দেখে নাকমুখের বিকৃতরূপ ধারণ করলো সিলিভিয়ার।আগের মতো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলে সিলিভিয়া স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতো।কিন্তু রামিশ তার সিদ্ধান্তের বাইরে চলে গিয়েছে৷

মোক্ষম সুযোগ সামনে পতিত হলো আজ, এই মুহূর্তে। এটাকে এমনি-এমনি হাত ছাড়া হতে দিবেনা সিলিভিয়া।রামিশ সিলিভিয়ার মুখের দিকে চেয়ে হাসলো। প্রতিউত্তরে সিলিভিয়াও হাসলো। রামিশের পাশে বসে বলল,

— বিয়েটা কখন করবি?

— তুই বললে আজ-ই।

সিলিভিয়া স্মিথ হেসে বলল,

— এখন সম্ভব না রামিশ।আমাকে একটা মাস
সময় দিতে হবে।আমার স্টুডেন্টের পরীক্ষা সামনের মাসে।আমাকে ওকে সময় দিতে হবে।আমি চাই না এখন বিয়ের ঝামেলায় জড়িয়ে ওর পরীক্ষা খারাপ হোক।

রামিশ নিজের ভাবুক দৃষ্টি শিথিল করলো।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,

— ঠিক আছে।একমাস কিন্তু।
এরপর আর কোন বাহানা আমি মানবো না।

সিলিভিয়া মাথা উপর-নিচে নেড়ে সায় জানালো।
রামিশ তৃপ্তিকর নিঃশ্বাস ফেলে,চলে যেতে যেতে বলল,

— ভালোই হলো সময়ের আগের বুঝে গিয়েছিস।
মরিচীকার পেছনে না ছুটে এই বাস্তব আমি-টাকে গ্রহণ করে নিচ্ছিস।

সিলিভিয়া নিগূঢ় হেসে রামিশের গমনপথের দিকে চেয়ে রইলো।মনে মনে কিঞ্চিৎ আশা পুষে রাখলো।

২৮.
গম্ভীর চোখজোড়া বইয়ে ডুবিয়ে রেখেছে সিলিভিয়া। রাদিফ তার সামনে ভদ্রভাবে বসা। রাইসাকে ছুটি দেওয়া হয়েছে মিনিট দশ-পনেরো আগে। শুধু রাদিফকে বসিয়ে রেখেছে সিলিভিয়া। বই থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাদিফের দিকে চেয়ে কি-যে জিজ্ঞেস করবে সেটা ভেবেই কাহিল অবস্থা সিলিভিয়ার। সংকুচিত মুখ স্বাভাবিক রাখার প্রয়াস চালিয়ে সিলিভিয়া শেষ পর্যায়ে দৃষ্টি তুললো। রাদিফ তখন আশেপাশে তাকাচ্ছিলো। সিলিভিয়াকে তাকাতে দেখে সে যথেষ্ট হাতের কলমের দিকে রাখলো।
সিলিভিয়া হালকা হেসে বলল,

— পরীক্ষার ভয়ে তো একদম মিঁইয়ে গেছো
দেখছি।টেনশন করো না। অবশ্যই সব পরীক্ষা
ভালো হবে তোমরা।

— সিলি আপু, পরীক্ষার বাকি আরো পঁচিশ
দিন মতো।আমার এখন থেকে বুক কাঁপছে।

— বি স্ট্রং রাদিফ। মন দিয়ে পড়ো অবশ্যই
ভালো রেজাল্ট আসবে। আই উইল প্রে ফর ইউ।

রাদিফ জবাব মৃদ্যু হাসলো সিলিভিয়ার দিকে চেয়ে।সিলিভিয়া বই ভাঁজ করে টেবিলে রাখলো। একচোট কিচেনের দিকে চেয়ে বলল,

— তোমার ওই ফুফি? মানে তায়্যিবা আন্টি,
উনারা কোথায় থাকেন?

রাদিফ সাবলীল কন্ঠে বলল,
— স্কটল্যান্ডে!

— সেটা আমি জানি রাদিফ।স্কটল্যান্ডে কোথায়?

রাদিফ সিলিভিয়ার প্রশ্নের গভীরতা মাপতে চাইলো না।সরল মনে জবাব দিলো,

— এডিনবার্গের নিউ টাউনে।

উত্তর পেয়ে প্রসন্নবোধক হাসলো সিলিভিয়া।মনে মনে আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানালো।বাকিটা এখন আল্লাহর উপর ভরসা।সিলিভিয়া
পূনরায় বলল,

— তোমার ওই আপু’ অর্থাৎ তামান্না?
উনি কি করেন?

রাদিফ দু’হাত গালে রেখে একটু ঝুঁকে কিচেনের দিকে তাকালো।এরপর বলল,

— সিলি আপু,ওরা তিনভাই বোন চমৎকার মানুষ।
তিনজনেই বিমানের কর্মকর্তা। তানজিদ ভাইয়া স্কোয়াড্রন লিডান,তামান্না আপু পাইলট অফিসার,তেহভীন ভাইয়া হচ্ছেন পাইলট। দেখো, কতো স্ট্যাবলিশ তারা।আর মেথেউ মামু তো এয়ার চিফ মার্শাল।আগেই বলেছি তোমাকে। মাঝখানে ফুফি একটা ইউনিভার্সিটির লেকচারার।

— তানজিদ নামের লোকটা এখানে এসেছে?

— এসেছিলো আগে।পরে মামুর সাথে কিসের নাকি
জামেলা হয়েছিলো তাই এবারে আসেনি।

এতটুক বলে রাদিফ কথা থামিয়ে ফেললো। তার মা রুভাইয়াতের কানে যদি এসব কথা যায় তাহলে নিশ্চিত ঝাড়ু দিয়ে পেটাবে। যদিও রাদিফ এসব খবর কান আলগা করে লুকিয়ে শুনেছিলো। তায়্যিবা যখন তার মাকে বলছিলো।

সিলিভিয়া একটা তৃপ্তিকর নিঃশ্বাস আঁকড়ে নিলো নিজের মধ্যে। নিজের আগামী লক্ষ্য স্থির করে তৎক্ষনাৎ। রাদিফের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলো সিলিভিয়া। অতঃপর রাদিফকে ছুটি দিয়ে সিলিভিয়া বেরিয়ে গেলো নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

২৯.
রাতের ভোজন সমাপ্তির পর নিজের ঘরে মেঝেতে বসে ফোনের দিকে চোখ নিবদ্ধ রাখলো সিলিভিয়া।
স্ক্রিনের উপর তাক করা দৃষ্টি সরানোর কিঞ্চিৎ পরিমান ইচ্ছেও নেই এই মুহূর্তে সিলিভিয়ার। সে গাঢ় চোখে স্ক্রিনে ভেসে আসা একুশ বছরের তাগড়া যুবকের সুদৃশ্যমান অভিনয় দেখতে ব্যস্ত। সর্বশেষ পর্ব চলছে এখন।কেমন যেনো লোমহর্ষক। মুভির নামকরণ যেমন,অভিনয়ও তেমন। শেষপর্যন্ত এ্যালসন নামক চরিত্রটি হাসিমুখে প্রিয়তমার কাছ থেকে পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় নিয়েছিলো।সিলিভিয়া যতবার এই সিনটা দেখেছিলো, ততবার কেঁদেছে।আজ ও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। চোখের পানি একদম টুইটুম্বুর। একটা অদ্ভুত টান জন্মেছিলো প্রথম প্রদর্শনে। এবং তা দিন কে দিন প্রচণ্ডরূপ ধারণ করতে লাগলো।
ফোনের লাইট নিভিয়ে নিভৃত মনে কিছু একটা ভাবতে লাগলো সিলিভিয়া। অতঃপর চোখমুখে খিঁচে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো সিলিভিয়া। নতুন বছরে দু’টো প্রাপ্তি পেয়েছে সিলিভিয়া। প্রথমত, আইইএলটিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার খবর,আর দ্বিতীয় ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়াতে’ স্কলারশিপের মাধ্যমে মাস্টার্স করার সুযোগ। মূলত রোদের কথায় সেখানে এপ্লাই করেছিলো সিলিভিয়া।আর আজ ভাগ্যের জোরে স্কলারশিপটা পেয়েও গিয়েছে সিলিভিয়া। এতে এতো খুশীর সংসবাদের মাঝে খুশী হতে পারছে না সিলিভিয়া।

২৯.

পূর্বাহ্নের হরিদ্রাভ রশ্মি জানালা দিয়ে এসে হানা দিলো বসার ঘরে।আজ কুয়াশার অনুপস্থিতিতে মিষ্টিরোদ ঘরে জায়গা করে নিতে পেরেছে। তন্মধ্যে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে আজকের সকালের আড্ডাখানায়।আকবর সাহেব, সায়মন,রুজিনা,জুলিয়া সকলের মুখশ্রীতে বিমূঢ়তা লেপটানো। আকবর সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,

— সিলিভিয়া কি বলেছিস তুই এটা?আবার বলতো?

সিলিভিয়া বাকিদের দিকে আঁড়নজরে চাইলো।
এরপর মৃদুস্বরে জোর দিয়ে বলল,

—- আমার ভাগের জমিটা বিক্রি করে টাকাগুলো আমাকে দাও। আমি পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাই।যদিওবা স্কলারশিপে,কিন্তু আমার নিজের হাতটাও শক্ত রাখতে হবে বাবা।খালি,ফাঁকা হাতে আমি অসহায় হয়ে পড়বো।

সায়মন বলল,

— তুই বিদেশে পড়তে যেতে চাস? ঠিকাছে। আমি তোর সব খরচ দিবো।কিন্তু তোর কথার মানে হচ্ছে তুই একেবারে আমাদের ছেড়ে চলে যেতে চাইছিস।এটা আমি কিছুতেই মানবো সিলি।

সিলিভিয়া নাবোধক মাথা নাড়িয়ে বলল,

— আমি তোমাদের উপর চাপ দিতে চাইছিনা ভাইয়া। আমার যাওয়াটা প্রয়োজন।এখন যদি আমি বাইরে গিয়ে তোমার উপর আলাদা একটা খরচ চাপিয়ে দেই, তাহলে সংসারে ঝামেলা সৃষ্টি হবে।আমি চাই না এটা হোক।

এতক্ষণে জুলিয়া চুপ থাকতে না পেরে বলল,

— সিলি একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না করো?
সংসারে ঝামেলা বলতে তুমি আমাকে বুঝিয়েছো সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি আর এ সংসারে ঝামেলা বাঁধাবো না। তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।

জুলিয়ার কথা শেষ হলে রুজিনা বলে উঠলেন,

— জায়গা-জমি যেভাবে আছে সেভাবে থাকুক সিলি।আমি আমার গয়না গুলো বিক্রি করে টাকা এনে দিবো।ওই জমি তোর বিয়ের জন্য রেখেছি।

সিলিভিয়া স্মিথ হাসলো,এরপর বলল,

— মা আমি তো বিয়ে-ই করবো না।তো জমি রেখে কি করবে।আমি আপাততে আর কিছু বলতে চাই না।আমার টাকা প্রয়োজন, সেটা আমি জমি বিক্রি করেই নিবো। অন্য কোন অপশন আমি চাই না।

(চলবে)

কেমন হচ্ছে একটু জানান। আজকের পর্বে তেহভীন মিসিং!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here