লাভ রেইন পর্ব-১৮

0
1958

#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ১৮

৪৪.
শাওয়ার শেষে রুমে আসতেই হকচকিয়ে যায় সিলিভিয়া।ক্যাডি আর আমারা বাদে অপরিচিত এক তরুণী দেখে একটু ঘাবড়ে যায় সে। আমারা সিলিভিয়াকে আশ্বাস দিয়ে বলল,

— ডোন্ট’বি এফরেইড সিলিইইভিয়া।
সি ইজ আওয়ার রুমমেট।

সেটা শুনে সিলিভিয়া আপাদমস্তক শ্বেতবর্ণ তরুণীটির দিকে চেয়ে চুল মুছায় মনোযোগ দিলো।হাঁটু সমেত লম্বাচুল শুকাতে একটু কষ্ট হয় তার। সিলিভিয়া আঁড়চোখে আবারও তরুণীটির দিকে তাঁকালো। ভ্রুঁ দ্বরেয় উপর দুইটা করে মোট চারটা রিং লাগানো। ঠোঁটের কোণায়ও। সিলিভিয়া এমন বেশভূষায় মেয়েকে আজ প্রথম দেখছে।ফলে ভেতরে ভেতরে অস্বাভাবিক আতঙ্কের উপস্থিত ও টের পাচ্ছে সে। শেষ মুহূর্তে অসাবধানতার জন্য তরুণীর চোখাচোখি হয়ে যায়। তৎক্ষনাৎ সরিয়ে নিলো সে,কিন্তু তরুণীটি চোখ সরালো না। বসা থেকে উঠে দৃঢ়পায়ে এগিয়ে এসে সিলিভিয়াকে দেখতে লাগলো। সিলিভিয়া ঢোক গিলে মেয়েটির উপস্থিতি সামলালো।

— এই মেয়ে দাঁড়াও৷

ক্যাডি ভ্রুঁ কুঁচকে তাঁকালো,বলল,

— জেরিন্ডেল, ওকে বিরক্ত করো না।
কি লাগবে আমাকে বলো আমি এনে দিচ্ছি।

জরিন্ডেল নামের মেয়েটির ক্যাডির দিকে চেয়ে
বলল,

— আগে ওকে বলো, আমার দিকে তাঁকাতে।
সে আমাকে ভয় পাচ্ছে মে-বি।

সিলিভিয়া সেটা শুনে চট করে দাঁড়িয়ে গেলো। দু’পা পিছিয়ে দাঁড়িয়ে মৃদু হাসলো। জেরিন্ডেল ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকলো সিলিভিয়ার দিকে। অতঃপর হাত প্রসারিত করে সিলিভিয়ার গালে রাখলো। আমারা উঠে এসে ঝট করে সিলিভিয়ার গাল থেকে হাত সরিয়ে বলল,

— তুমি এসেছো মাত্র, রেস্ট করো আগে।
তোমার বেড আমরা পরিষ্কার করে রেখেছি। প্লিজ
ওর সাথে অশালীন আচরণ করো না।

জেরিন্ডেল বলল,

— অশালীন আচরণ? এমনটা কেন
বলেছো তুমি? আমি তোমাদের সাথে অশালীন আচরণ করি?

ক্যাডি মাঝখানে বলে উঠলো,

— তুমি বুঝতে পারো নি। আসলে সিলিইইভিয়া
বেংলাডেশের মেয়ে।এখানকার অনেক কিছুই
ওর অস্বাভাবিক লাগতে পারে।সেটা হয়তো তোমার বিহেভিয়ার ও।

জেরিন্ডেল বুঝলো। মাথা নেড়ে কিছু ভাবলো,এরপর মাথা ঝাড়া মারলো। ক্যাডি আর আমারার দিকে চেয়ে বলল,

— আমি বাইরে যাচ্ছি। স্মোকিং করতে।
তোমাদের সমস্যা হতে পারে।

কথাটা মূলত সিলিভিয়াকে শুনানোর জন্য সে বলেছে। নিঃশব্দে বেরিয়ে গেলো জেরিন্ডেল। সে যাওয়ার সাথে সাথে সিলিভিয়ার স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,

— আমার অনুমান শক্তি অন্যকিছু বলছে ক্যাডি।
তোমরা কি আমাকে সিউর করবে যে…

সিলিভিয়ার অনুমানটা না বলে, আমারা বলল,

— ওর এলজিবিটিকিউ টার্ম আছে।
প্লিজ তুমি খারাপ ভাবে নিও না।জেরিন্ডাল খুব ভালো।

— ইম্পসিবল ‘আমারা,যদি তাই হয় আমি এই
রুমে থাকবো না। প্লিজ।

ক্যাডি সিলিভিয়াকে বুঝাতে বলল,

— তুমি অকারণে ভয় পাচ্ছো।
জেরিন্ডেল খারাপ নয়। ও খুবই অমায়িক আর
হেল্পফুল মানুষ। তুমি অন্যসব বাদ দিয়ে জেরিন্ডেল
মানুষ হিসেবে কেমন সেটা ভাবো। ওর জন্য আমরা সেফ আছি। প্লিজ ওর মনে কষ্ট হয় এমন কোন কথা বলো না ওকে। বন্ধুসুলভ আচরণ করো।

সিলিভিয়া মনে মনে একটু ক্ষ্যান্ত হয়। প্রথম দর্শনে জেরিন্ডেলের অদ্ভুত দৃষ্টি দেখে সিলিভিয়া বুঝে ফেলে জেরিন্ডেল কেমন মেয়ে। এ পর্যায়ে আর কথা বাড়ালো না। মাঝখানে ব্যাঘাত ঘটলো সিলিভিয়ার ফোন বেজে উঠাতে। সিলিভিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সায়মন ওয়াটসএ্যাপ করেছে। কিছু ফটো আসার নোটিফিকেশন এসেছে। আঙুলের চাপে ক্লিক করতেই ছবিগুলো স্ক্রিনের সামনে ভেসে উঠলো। হতবুদ্ধি হয়ে গেলো সিলিভিয়ার। রামিশের বিয়ের ছবি। তাও আবার জিনিয়াকে বিয়ে করেছে সে। তাহলে কিছুদিন আগের সেই পাগলামোর কারণ কি? মানুষ গিরগিটির ন্যায় রঙ বদলায় সেটা আজ প্রমাণিত।কতো সুন্দর হাসিমুখে পোজ দিচ্ছে। সিলিভিয়া ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তাহলে আর দেশে ফিরে রামিশের মুখোমুখি হতে সমস্যা বা জড়তা কাজ করবে না এখন।নিজেকে আর অপরাধী ও লাগবে না।

৪৫.
এই মাস থেকে স্প্রিং সেমিস্টার শুরু। আমারা আর ক্যাডি সেমিস্টারে ভালো ফলাফলে আশায় পড়াশোনায় ব্যস্ত। এরপরের মাসে সিলিভিয়ার সেমিস্টার। আমারা আর ক্যাডি জেরিন্ডেলের কাছ থেকে পড়াশোনায় বিষয়ে যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছে। সিলিভিয়ার প্রয়োজন হয়নি তাই বিষয়টাতে জড়ায়নি। আর সিলিভিয়া অজানা কারণে জেরিন্ডেলের সাথে কথা বলে না। জেরিন্ডেল বার কয়েক কথা বলার চেষ্টা করলেও সিলিভিয়া এড়িয়ে যায় ফলে আর তাদের মধ্যে সখ্যতা হয়ে উঠেনি।

ল্যাপটপে কিছু প্রয়োজনে ডকুমেন্টস সেভ করছিলো সিলিভিয়া। ঠিক সেসময় ক্যাডি এসে পাশে বসলো। সিলিভিয়া একচোট চেয়ে পূনরায় ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ রাখলো। ক্যাডি স্ক্রিনের চোখ রেখে বলল,

— ভেলেন্টাইনে স্পেশাল কোন প্ল্যান আছে
তোমার?

সিলিভিয়া ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,

— ভেলেন্টাইন কখন?

ক্যাডি ভারী অবাক হয়ে বললো,

— তুমি জানো না ভেলেন্টাইন কখন হয়?

— ভেলেন্টাইন কখন হয় জেনে আমি কি করবো।
কোন প্রয়োজন ছিলো না,তাই জানার প্রয়োজন মনে করিনি।

ক্যাডি কিছু সময় চুপ থাকার পর বলল,

— ওই যে একজন তোমার সাথে দেখা করতে
এসেছিলো? সে কোথায়?

তৎক্ষনাৎ বিষাক্ত ব্যথা সিলিভিয়ার মস্তিষ্কে এসে হানা দিলো। এতদিন পর অনাকাঙ্খিত মানুষটির কথা স্মরণ হলো তার। মানুষটাও তো কেমন; আসবে বলে কথা দিয়ে আসেনি।যাক’গে তার কথা।সে অন্য কারো বাগদত্তা। সিলিভিয়া অস্পষ্ট স্বরে বলল,

— সে কোথায় আমি জানিনা।

— জানো না? কিন্তু কেন?

— তুমি জিজ্ঞেস করছো কেন?

— আসলে এমনিই। শুনো ভেলেন্টাইন উপলক্ষে
আমরা ফ্রেন্ড আর কাজিনরা স্পেশাল পার্টির আয়োজন করছি। আমি চাইছি তুমিও আমাদের সঙ্গে পার্টি উপভোগ করো।

— না আমার যাওয়া সম্ভব নয়,থিসিস আছে।

ক্যাডি মন খারাপ করে বলল,

— তোমার থিসিস কখন?

—- পরশু,

— কিন্তু ভেলেন্টাইন ডে তো কাল।
প্লিজ সিলিইইভিয়া না করো না। আমাদের
মম’ড্যাড ও আসবেন।তোমার সাথে পরিচয় হলে
উনারা ভীষণ খুশী হবেন।

সিলিভিয়ার হঠাৎ মনে পড়লো,কাল চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি। পনেরো তারিখ তার থিসিস এর ডেট।
কাল পার্টি এটেন্ড করা যায়। একটা দিন আনন্দ করলে কিছু হবেনা

৪৬.

তেহভীনের পাঠানো মেসেজটা পূনরায় পড়লো তানজিদ। ‘ডেভিড ব্ল্যাকওয়েল হল’। গতকাল সে তেহভীনের কথায় ‘বার্কলে চিটি ক্লাবে এসেছিলো। আর সে এখন ব্যানক্রফট ওয়ে তে দাঁড়িয়ে ডেভিট ব্ল্যাকওয়েল হলটি খুঁজছে।যেখানে তেহভীনের একটা ফ্রেন্ড আছে। ফ্রেন্ডটা মেয়ে নাকি ছেলে বুঝতে পারছে না সে। অতঃপর মেসেজে থাকা নাম্বারটিতে ডায়াল করলো তানজিদ।

অচেনা নাম্বার দেখে সিলিভিয়া সাথে সাথে রিসিভ করলো।কারণ বেশিরভাগ সময় প্রয়োজনীয় ফোন আসতে পারে।সেটা মাথায় রেখে সিলিভিয়া কাজটা করলো।

ফোন রিসিভড হওয়ার পর তানজিদ বলল,

— আমি তেহভীনের ব্রাদার।একটু হলের বাইরে
আসুন।আপনার জন্য একটা পার্সেল আছে।

— পার্সেল? কে পাঠিয়েছে?

তানজিদ মেয়েলি কন্ঠ শুনে চমকে যায়।
নিজেকে সামলে বলল,

— তেহভীন। আপনি এসে নিয়ে যান।

সিলিভিয়া অপেক্ষা করলো না। তেহভীনের পাঠানো পার্সেল শুনেই এক ছুটে বেরিয়ে গেলো। ক্যাডি বোকা চোখে তাকায়ে রইলো তার যাওয়ার পানে। জেরিন্ডেল সবেমাত্র রুমের ভেতরে আসছিলো।সিলিভিয়াকে হঠাৎ-ই এভাবে দৌড়াতে দেখে সেও বিস্মিত হয়। পেছন পেছন সেও গেলো দেখার জন্য।

রাস্তায় আসার পর একটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। পাশে একজন গার্ড,হাতে কিসের একটা ব্যাগ দেখা যাচ্ছে। সিলিভিয়া এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তানজিদ তার দিকে ফিরলো।অচেনা একটা মেয়েকে এগিয়ে আসতে দেখে তানজিদ নিশ্চিত হলো এটাই তেহভীনের বন্ধুটি।পোশাকের ধাঁচ দেখে বুঝা বেঙ্গলি মেয়ে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সিলিভিয়ার দিকে। তানজিদ গার্ডটিকে ইশারা করলো ব্যাগটা মেয়েটিকে দিয়ে দিতে।তানজিদ একপলক সিলিভিয়ার দিকে চেয়ে গাড়িতে গিয়ে ছড়ে বসলো। সিলিভিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে তানজিদের যাওয়া দেখলো। পাঁচ মিনিট অন্তত কথা বলে পরিচিত হওয়া যেতো।হাহ! কতো ইগো। নামীদামী মানুষের ইগো বেশি,সেটা সিলিভিয়া হাড়ে হাড়ে টের পেলো।

গার্ডটি হাতের ব্যাগ সিলিভিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো।
তখনি ঘটলো আকস্মিক ঘটনা। জেরিন্ডেল এগিয়ে এসে গার্ডটির হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে নিলো। উপস্থিত গার্ড আর সিলিভিয়া স্তব্ধ চোখে চেয়ে থাকলো জেরিন্ডেলের দিকে।

(চলবে)
রি-চ্যাক দেওয়া হয়নি।
সবাই রেসপন্স করুন একটু।পেজের রিচ কমে
যাচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here