#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যা১৯
৪৭.
— কে দিয়েছে? বয়ফ্রেন্ড?
— তুমি কেন নিয়েছো।
আমার জিনিস আমাকে ফেরত দাও জেরিন্ডেল।
— তোমার জিনিস? দেখতে হচ্ছে তো
কি আছে এতে।
— আমার রাগ উঠে যাচ্ছে।
তুমি আমার হাতে আমার জিনিস ফেরত
দিবে? নাকি আমি আমার হাত উঠাবো?
সিলিভিয়া মুখে এ কথা শুনে জেরিন্ডেল মৃদু হাসলো।আপাদমস্তক সিলিভিয়ার দিকে নিষ্পলক দৃষ্টি ছুঁড়লো। তীর্যক চাহনিতে চেয়ে নিচু স্বরে বলল,
— আমার রাইট হ্যান্ডে থাকা জিনিসটা যদি তুমি
নিতে চাও তাহলে তোমাকে আমার সাথে ডেটে যেতে হবে। আর ইউ এগ্রি সুইটি।
জেরিন্ডেল কথা শুনে সিলিভিয়ার গা গুলিয়ে আসতো চাইলো হঠাৎ। দু’কদম পিছিয়ে জেরিন্ডেলের হাতের দিকে দৃষ্টি ছুঁড়লো। একহাতে পার্সেল, অন্যহাত প্যান্টের পকেটে গুঁজানো। সিলিভিয়া তৎক্ষনাৎ এগিয়ে এসে শক্তভাবে জেরিন্ডেলের দু’কান মুচড়ে ধরলো। এরপর শক্ত রাস্তার দিকে তাক করে টান মারলো।আকস্মিক আক্রমণে জেরিন্ডেল হতভম্ব হয়ে যায়,হাত থেকে প্যাকেটটি ছিঁটকে রাস্তার ধারে পড়ে যায়। আর মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যায় সে। সিলিভিয়া হাঁটু নামিয়ে বসে জেরিন্ডেলে রঙিন চুলের গুচ্ছ মুঠোয় শক্তভাবে খামচে ধরে বলল,
— সাহস কি করে হয় আমাকে এমন একটা জগন্য প্রস্তাব দেওয়ার।আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি শারিরীক ভাবে মেয়ে হলেও, মানসিকভাবে নিজেকে একজন ছেলে ভাবো। তোমাকে আমি এতদিন ধরে এজন্যই এড়িয়ে যাচ্ছিলাম। ইউ…
সিলিভিয়া জেরিন্ডেলের মাথা তুলে মাটিতে ধাক্কা দিতে যাবে তার আগে সিলিভিয়ার হাত মুচড়ে ধরলো জেরিন্ডেল। সিলিভিয়া পা দিয়ে আঘাত করতে যাবে হঠাৎ কেউ একজন এসে সিলিভিয়ার হাতটা জেরিন্ডেলের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো, অন্যজন জেরিন্ডেলকে ধরে ফেলে। সিলিভিয়া প্রচণ্ড ক্রুধ নিয়ে চোখ তুলে তাঁকালো।মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক লাগানো অজ্ঞাত ব্যাক্তিকে দেখে ভ্রুঁ কুঁচকালো। এরপর জেরিন্ডেলের দিকে তাকাতেই দেখে ‘সেই গার্ডটি জেরিন্ডেলকে ধরে রেখেছে। তারমানে…
সিলিভিয়াকে টেনে সরিয়ে তানজিদ খাঁটি বাংলায়
বলে উঠলো।
— কি করতে যাচ্ছিলেন আপনি? পুলিশ
কেস হতে পারে আপনার মারপিটের জন্য। সমস্যা টা কি আমাকে বলুন।
এতদিন পর কারো মুখে নিজের দেশের ভাষা শুনে অদ্ভুত একটা সাহস এসে আঁকড়ে ধরলো সিলিভিয়াকে।কেমন যেনো আপন আপন লাগছে তার।সিলিভিয়া জেরিন্ডেলের দিকে আঙুল তাক করে বলল,
— সমস্যা এই মেয়েছেলের মধ্যে।আমার কোন
সমস্যা নেই।সে আমাকে বিরক্ত করছিলো।
তানজিদ একবার সিলিভিয়ার দিকে তাকালো। আরেকবার জেরিন্ডেলের দিকে।কেমন অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিলিভিয়ার দিকে।চোখে কোন ক্রোধ নেই। সিলিভিয়ার কথা মূল অর্থ হঠাৎ বুঝতে পেরে তানজিদ সিলিভিয়ার দিকে চেয়ে বলল,
— আপনি আপনার ব্যাগ গুছিয়ে চলে আসুন। মনে হচ্ছে আপনার উপর আরো বিপদ আসবে। তাই আমার সাথে আসুন।
সিলিভিয়া তানজিদের দিকে চেয়ে বলল,
— আপনার সাথে কেন যাবো আমি?
এই মেয়েছেলের ভয়ে আমি পালাবো? ইম্পসিবল।
এর কতো সাহস আমি দেখবো।
তানজিদ এবার একটু বিরক্ত হলো।শুধু শুধু গাড়ি থেকে নামতে গেলো এই মেয়েটার জন্য।এমন মুখের উপর জবাব ছুঁড়বে জানলে কখনো হেল্প করতে আসতো না। তানজিদ চলে আসতে আসতে বলল,
— ওকে ইউ ক্যারি ওন।
তানজিদ চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াবে তার আগে একটা ফোন আসলো। তানজিদ ফোন বের করে দেখলো তেহভীন ফোন দিয়েছে। তাই সে তড়িঘড়ি করে ফোনটা তুলল। এবং গাড়ি কাছাকাছি যেতে যেতে সে তহভীনকে সংক্ষেপে এতক্ষণ ঘটে যাওয়া ঘটনা বলে দিলো।
রেসট্রনে যাওয়ার জন্য সবেমাত্র ডরমিটরি থেকে বের হচ্ছিলো ক্যাডি। গেটের বাইর এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখে ভড়কে গেলো সে। তড়িৎ গতিতে এগিয়ে এসে জেরিন্ডেলের কাছে গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিলো। সিলিভিয়া সেটা দেখে না দাঁড়িয়ে ভেতরে গিয়ে নিজের ব্যাগ আর বাইরে থাকা কাপড়-প্রয়োজনীয় সমস্ত সামগ্রী ব্যাগে ভরে ডরমিটরির একজন ম্যানেজারকে বলে সিলিভিয়া বের হয়ে আসলো।
সিলিভিয়া বের হয়ে দেখলো ক্যাডি বা জেরিন্ডেল কেউ নেই।গার্ডটি ও নেই।শুধু তানজিদ দাঁড়িয়ে আছে।সিলিভিয়াকে দেখে সে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল,
— আপনার বন্ধু ফোন দিয়েছে।
কথা বলুন তার সাথে।
— আমার কোন বন্ধু নেই। আমি এ শহরে একা এসেছি,একা থাকছি। তাই কোন বন্ধু পাতানোর সময় আমার হয়নি। আপনার ভাইকে বলুন সে যাতে আমার জন্য বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে কোন উপহার না পাঠায়। আমি চিনি না তাঁকে।
সিলিভিয়া কথাটি বলে আর দাঁড়ালো না।দুই তিন দিন পর ডরমেটরিতে ফিরে অন্য রুমে শিফট হবে। এখন আপাততে ‘গার্ডেন ভিলেজে’ এক পরিচিত ওল্ড গ্র্যান্ডমাদারের বাসায় যাবে সিলিভিয়া। একদিন সকালে মর্নিং ওয়াল্ক করার সময় সিলিভিয়ার সাথে তাঁর পরিচয় হয়। সে থেকে কয়েকবার যাওয়া আসা হয়েছিলো সিলিভিয়ার সেখানে। বৃদ্ধ মহিলা ডিভোর্সি,এবং নিঃসন্তান। এজন্য বাচ্চা থেকে শুরু করে সকলকেই উনি বেশ স্নেহ করেন।
রাস্তার অপজিটে একটি এনিমেল হসপিটালে উনি চাকরি করেন। সিলিভিয়ার মহিলাটিকে বেশ ভালো লাগে। বিশেষভাবে সিলিভিয়াকেও উনি স্নেহ করেন।
৪৮.
‘মাফ্ফিট লাইব্রেরীর’ সামনের ভিউটা খুবই চমৎকার লাগে সিলিভিয়ার। লাইব্রেরী থেকে বসে দেখার চেষ্টা করলে মনে হবে কোন ছবির দৃশ্য দেখা হচ্ছে। আর সিলিভিয়ার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হচ্ছে কাঠের তৈরি ব্রিজটি।ছায়াযুক্ত স্থান,ব্রিজের পাশে বেগুনি রঙের ফুলের বাগান,নিচে ছোট একটা স্বচ্ছ পানির ছড়া।সিলিভিয়া দাঁড়িয়ে ‘বায়োকেমিস্ট্রি’ হলের দিকে চেয়ে আছে। আমারা আর ক্যাডি গ্যাটলির সহ আরো কয়েকজন ছেলেমেয়ের সঙ্গে দল বেঁধে বসে আছে। কোন একটা ট্রপিক নিয়ে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছে। সিলিভিয়া একটা চাপা নিঃশ্বাস ফেললো।কাল একটু বেশিই রেগে গিয়েছিলো সে। তেহভীনের গিফটটার জন্য ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো তখন। সবশেষে যখন মনে পড়লো তেহভীন নাম্বার থাকার সত্ত্বেও কখনো একটা ফোন অথবা মেসেজ দেয়নি। কাল হঠাৎ তার দেওয়া একটা গিফট সে কোন আক্কেলে নিতে যাচ্ছিলো। এটা একটা নির্বোধ মানুষের কাজ।কাল চলে যাওয়ার পথে প্যাকেটটা কুড়িয়ে নিলেও এখনো অবধি খুলেও দেখেনি সিলিভিয়া। এতোটা প্রয়োজন হয়নি অন্য একটা মেয়ের ফিয়ন্সের দেওয়া গিফট সে নিবে।
সুনশান পরিবেশে থেমে সোরগোলের আবচা কন্ঠস্বর সিলিভিয়ার কর্ণভেদ করছে। এই সোরগোল কিসের সেটা বেশ ভালেভাবে বুঝতে পারছে সিলিভিয়া। হয়তো এই আজকের ভেলেন্টাইন ডে তে দুটি মনের মিল হয়। প্রেমনিবেদন হয়। হয়তো কারো বিয়েও হয়। সিলিভিয়া একটু চুপ থেকে কিছু একটা ভাবলো। পড়াশোনার ফাঁকে সময় কাটানোর জন্য বই পড়া হয়েছে,হাতের অনেক কাজ করা হয়েছে সিলিভিয়ার।কিন্তু একটা প্রেম করা হয়নি।
আজকের এই মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশে কেউ যদি হুট করে এসে প্রেমের নিমন্ত্রণ জানায়। তাহলে সিলিভিয়া সেটা ফিরিয়ে দিবে না। জীবনে একটা প্রেম হয়নি। যাও একজনকে মনে ধরেছিলো সে ও অন্যকারো।তাই মাইন্ড কনভার্ট করার জন্য এমনটা করা যেতেই পারে।
৪৯.
ছোট্ট চারকোণা বিশিষ্ট বাক্সটির উপরের অংশ তুলার পর চোখের সামনে সাদা চকচকে হীরের আন্টিটা দৃশ্যমান হলো। ক্যাথরিন অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে আন্টিটা তুলে হাতের অনামিকা আঙুলে পড়লো। সুন্দর আন্টিটার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে হঠাৎ ক্যাথরিনের দৃষ্টি শিথিল হয়ে যায়। আরে বাক্স,আর ব্যাগ ফিরোজা নীল রঙের নয়।তারমানে এটা টিফানি ব্র্যান্ডের রিং নয়?
চোখমুখে অদ্ভুত ভাবে আঁধার নামে ক্যাথরিনের। তার এনগেজমেন্ট রিংটা টিফানি ব্র্যান্ডের ছিলো। সে নিজে তার আঙ্কেল অর্থাৎ টেহভীনের ড্যাডকে সাথে নিয়ে গিয়ে কিনেছিলো।
ক্যাথরিন সাথে সাথে ফোন লাগালো তেহভীনের ফোন। শোনা গেলো; আনরিচিবল।পরে মি.মেথেউ এ্যাসফোর্ডের ফোনে কল দিলো ক্যাথরিন। সেটাও সুইচওফ। রাগ উঠতে লাগলো ক্যাথরিনের। এতো ব্যাংক-ব্যালেন্স কিসের জন্য যদি হবু স্ত্রী দামী ব্র্যান্ড থেকে উপহার দিতে না পারে।ফ্র্যান্ড,কলিগ সবার সামনে লজ্জায় পড়তে হবে যদি জানে তার ফিয়ন্সের দেওয়া গিফট টিফানি ব্র্যান্ডের নয়।
ক্যাথরিন আবারও তেহভীনের ফোনে কল দিলো।
তেহভীন তখন ফ্লাইট থেকে নামছিলো। ক্যাথরিনের কলটা দেখেও রিসিভ করলো না সে।
৫০.
জেনারেল ডিক্লারেশন কপি ও পাসপোর্ট দেখানোর পর ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তেহভীনকে আমেরিকায় প্রবেশের অনুমতি দেয়। সে ফ্লাইট জার্নি শেষ করে সরাসরি ইউএসএ প্রবেশ করছে। হাতে সময় তিনদিন।যদিও তার এখানে আসার সময় ছিলো আরো তিনমাস পর। কিন্তু কালকের ঘটনাটার জন্য তেহভীন নিজেকে আঁটকাতে পারছিলো না। সিলিভিয়া তার সাথে কথা বলেনি,তাঁকে চিনে না।এসব বলার কারণটা না জেনে সে থাকতে পারছিলো না। তাই চলে আসতে হলো। বিমান চালানোর দায়িত্বটা কো-পাইলট আর পাইলট অফিসার হাতে দিয়ে এসেছে।
আজ একটা স্পেশাল ডে। ভেলেন্টাইন ডে। স্পোশাল ফ্রেন্ডকে,স্পেশাল দিনে সারপ্রাইজ দেওয়ার মজাটা ও আলাদা। তেহভীন তানজিদের কাছে না গিয়ে সোজা সিলিভিয়ার ডরমেটরিতে চলে যায়। কারণ এই সময়ে ভার্সিটি বন্ধ হয়ে যায়।তাই সিলিভিয়া এখন ডরমিটরিতে, সেটা ভেবে তেহভীন সেখানে চলে যায়। কিন্তু সবচেয়ে বড় চমকপ্রদ তথ্য হলো,যখন জানলো সিলিভিয়া ডরমেটরির ছেড়ে ব্যাগ নিয়ে কোথাও চলে গিয়েছে গতকাল।সেটা শুনে শান্তিপূর্ণ মেজাজটা বিগড়ে গেলো তেহভীনের। মনে মনে ভাবতে লাগলো সিলিভিয়ার কার সাথে ভেলেন্টাইন সেলিব্রেট করতে গিয়েছে।
(চলবে)
আলহামদুলিল্লাহ এখন একটু সুস্থ বোধ করছি।
রি-চ্যাক দেওয়া হয়নি।আপনারা দিয়ে দিন একটু।