#লাভ_রেইন
#তারিন_জান্নাত
#পর্বসংখ্যাঃ২১
৫৩.
ফোনটা কানে ঠেকিয়ে হ্যালো বলার আগে
ক্যাথরিন বলে উঠে,
—- টেহভীন! এটা কি করেছো তুমি?
আমি টিফানি ব্র্যান্ডের গিফট এক্সপেক্ট করেছিলাম তোমার কাছ থেকে। কিন্তু তুমি পাঠিয়েছো নরমাল ব্র্যান্ডের একটা রিং।
তেহভীন আঁড়চোখে পাশে থাকা সিলিভিয়ার দিকে
চেয়ে বলল,
— নরমাল ব্র্যান্ড নয় ক্যাথ; এটা প্যারিসের
ব্র্যান্ড কার্তিয়ের রিং। এখন তোমার কাছে নামকরা ব্র্যান্ডের জিনিস ম্যাটার করে? নাকি ব্র্যান্ডেড রিং?
ক্যাথরিন খানিকটা তব্দা খেয়ে গেলো তেহভীনের কথায়,আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো,
— কতো ক্যারেট?
—- ০.৭৫ ক্যারেট। আর তুমি এতো কিছু
জানতে চাচ্ছো কেন? তোমার গিফট ড্যাড কিনেছেন।আমি শুধু পেমেন্ট করেছি।
তেহভীন কথাটা বলে প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে কল কাট করলো। ক্যাথরিনকে গত একবছর ধরে এভাবেই এড়িয়ে এসেছে। তাদের মধ্যে কখনো প্রেমময় কথাবার্তা হয়নি। যা হয়েছে সব ফরমাল কথাবার্তা।সিলিভিয়া তাদের কথোপকথন তেমন কানে তুললো না।সে ভাবছে কিছুসময় আগেকার ঘটনার কথা। হঠাৎ তেহভীনের আগমন,খোলাখুলি ভাবে পছন্দের কথা বলা, তার জন্য চিন্তা।সব যেনো এক জায়গা এসে গুলিয়ে যাচ্ছে। নাকি তেহভীন অন্যরকম? ওপেন আর ফ্রী মাইন্ডের।
তেহভীন পকেটে ফোন রাখতে রাখতে সিলিভিয়ার দিকে চেয়ে বলল,
— আমি আমার পার্সনাল
লাইফের কথা সহজে কারো সাথে
শেয়ার করিনা। কিন্তু তোমার সাথে শেয়ার করেছি।
সিলিভিয়া চুপচাপ শুনলো।
—- আমার একটা রিলেশন ছিলো সিলভার।
তখন আমার এজ সেভেন্টিন। মেয়েটির নাম ছিলো লুইসি।
সিলিভিয়া পাত্তা না দেওয়ার মতো করে মাঝখানে বলল,
— ওউ ওউ, তাহলে আপনার রিলেশন ছিলো?
— ছিলো। অনেক রকমের ম্যাডনেস দেখেছিলাম
লুইসির। ইউ নো, আমিও মনে করতাম আমি ওকে ভালোবাসি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বুঝলাম এটা ভালোবাসা নয় এট্রেকশন। এখন, আমি ড্যাডকে ও ভীষণ ভালোবাসি,সেজন্য ড্যাডকে ছেড়ে চলে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। যার জন্য ক্যাথরিনকে সহ্য করতে হচ্ছে। তোমার কাছে একটা ফেবার চাইবো সিলভার। তুমি আমাকে সাহায্য করবে?
সিলিভিয়া স্মিত হাসলো। মনে মনে বুঝতে পারলো তেহভীন কি বলতে চাইছে।
— আমি কিছু করতে পারবো না তেহভীন। তুমি
ক্যাথরিনের সাথে খুশী থাকো।এটাই কামনা।
তেহভীন তীক্ষ্ণ চোখে সিলিভিয়ার দিকে তাঁকালো। সিলিভিয়া একবারের জন্য মুখ খুলে বলেনি, তেহভীন ভুলে যাও ক্যাথরিন কে। আমি তোমাকে ভালোবাসি।’একটু আগে এতকিছু বলার পর ও কাজের কিছু না হওয়ায় তেহভীন প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হলো। এতক্ষণ ধরে সিলিভিয়াকে বাজাতে গিয়ে, সে নিজে বেজে যাচ্ছে।সিলিভিয়া কি কোনভাবে বুঝতে পেরেছে তেহভীন তার থেকে কথা উগলানোর জন্য এতক্ষণ এতসব বলেছে?
হাঁটতে হাঁটতে ‘গার্ডেন ভিলেজের’ বৃদ্ধাটির হাউজটির কাছে আসতেই তেহভীন থেমে যায়। সিলিভিয়া পেছন ফিরে দেখলো তেহভীন ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।
সিলিভিয়া প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাঁকিয়ে বলল,
— ভেতরে এসো। গ্র্যান্ডমা অনেক ভালো একজন
মানুষ। তোমাকে দেখলে খুশী হবে।
তেহভীন মৃদু হেসে বলল,
— তুমি ভেতরে যাও সিলভার। কোথায়
থাকছো সেটা দেখার জন্য এসেছি।আমি আমার ব্রাদারের কাছে ফিরছি। তুমি যাও ভেতরে।
সিলিভিয়া ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো,বলল,
— তেহভীন তোমার কেন মনে হলো আমি
তোমাকেই ভালোবাসি?
তেহভীন এমন একটা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলো না।তারপরও নিজের শক্ত রেখে সে বলল,
— আমি বুঝতে পারি সিলভার। চোখ ও কিন্তু
মনের কথা বলে।
— ভুল বলে। সবসময় অন্যের দৃষ্টিতে পরোক্ষভাবে কোন অনুভূতি ধরা দেয় না।যদি না সে দিতে চায়।
তেহভীন অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলল,
— আমি ভুল নয় সিলভার। আমি শতভাগ নিশ্চিত।
— তুমি ভুল।তোমাকে আমি শুধুই পছন্দ করি। যেমনটা তুমিও করো।তবে ভালোবাসি না। মোহ আমাকে ছুঁতে পারলেও,ভালোবাসার অনুভূতি আমাকে এখনো ছুঁতে পারেনি। আমি কিছু লুকাচ্ছি না।
তেহভীন অন্যদিকে ফিরে বলল,
— ঠিক আছে বুঝেছি।আমিই তাহলে ভুল।
ভর সন্ধ্যাবেলায় আশপাশ একদম নিরিবিলি। হাউজ এবং স্টোরগুলোর ভেতরে আবচা লাইট বাইরে রাস্তায় এসে মৃদু আলো ছড়াচ্ছে। তেহভীন চলে গিয়েছে অনেক্ষণ হচ্ছে।সিলিভিয়ার ভেতরে যেতে মন চাইছে না আর। কিন্তু আজকের লম্বা দিনটার ক্লান্তি অবশেষে জেঁকে ধরেছে তাকে। বাধ্য হলো নিজের ক্লান্ত দেহখানি কে বিশ্রাম দিতে।
৫৪.
সবেমাত্র বিয়ারের বোতলের চুমুক বসিয়েছে তানজিদ। এসময়টা তার একান্ত। এখন চলছে ডে-বাই শুটিং।তাই সন্ধ্যার পর থেকে সে একদম ফ্রী। বোতলের মুখে দ্বিতীয় চুমুক বসানোর আগে তেহভীন ভেতরে প্রবেশ করে সোজা সোফায় ধপ করে বসলো।তানজিদ তেহভীনের দিকে চেয়ে ক্ষীণ হাসলো। বলল,
— ফ্রেন্ডের জন্য এতো টান। একেবারে
কাজ ছেড়ে চলে এসেছো।
তেহভীন গাঢ় চোখে তানজিদের দিলো চেয়ে বলল,
— ফ্রেন্ডের চেয়ে বেশি। সেটা বাদ দাও কাল
তোমার কি হয়েছিলো সেটা এখন বলো। এক্সপ্লেইন
করো এখুনি।
তানজিদ বোতলের পেট শক্তভাবে চেপে ধরে বলল,
— তোমার ফ্রেন্ডকে আমার পছন্দ হয়েছে। এন্ড
আই ওয়ান্ট টু ম্যারি হার।
তেহভীন সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো তানজিদের দিকে।এরপর
— সে তোমার চেয়ে নয় বছরের ছোট।
সো,লিভ ইট।
তানজিদ মৃদু হাসি দিয়ে বলল,
— আর তোমার চেয়ে?
— চার বছর।
কথাটা বলে তেহভীন বিরস মুখে মাথা নুইয়ে রেখে পায়ের আঙুল গুনতে লাগলো।তানজিদ গাঢ় চোখে তেহভীনের হাবভাব আয়ত্ত করার চেষ্টা চালালো। তারপর বলল,
— শোনো,একটা থ্রিডি মুভির অফার পেয়েছি।
তুমি করবে মুভিতে কাজ।খুব ভালো একটা
সুযোগ এবং প্রস্তাব। পায়ে ঠেলো না।
— হাহ! প্রস্তাব? তুমি হার্টলেস সেজন্য
ড্যাডকে ছেড়ে মিডিয়াতে এসেছো।আমি হার্টলেস
নই। এন্ড আই লাভ হিম ভেরি মাচ। তাই আমি তাঁর কথা অক্ষরের অক্ষরে পালন করছি।
— করো পালন অক্ষরে অক্ষরে, দিন শেষ তুমি
দেখবে ড্যাড তোমাকে কি গোল খাওয়ায়।
তেহভীন তানজিদের কথা আমলে নিলো না।
চুপচাপ ফোন বের করে তাতে চোখ নিবদ্ধ রাখলো।
৫৫.
ফ্রী টাইমে সাউথ রোড ধরে হাঁটাহাঁটি করা রোজকার একটা নিয়ম সিলিভিয়ার। প্রফেসর রুমে থেকে বের হয়ে চারপাশে ঘুরাঘুরি করার জন্য সিলিভিয়া সুযোগের জন্য মুখিয়ে থাকে। আজ হাঁটতে হাঁটতে
‘ওমেন’স ফেকাল্টি ক্লাবে’ চলে আসলো। তিন দিক থেকে তিনটা সিঁড়ি বেয়ে নামতে হয় ক্লাবে প্রবেশ করার জন্য।খানাপিনার আয়োজন বেশ চমৎকার। লাল ইট সমানভাবে বিছিয়ে রাখা সুদৃশ্যমান পথ দিয়ে হাঁটতে বেশ ভালো লাগছিলো সিলিভিয়ার।সবুজ গাছগাছালির মাঝে এমন নীরব পরিবেশ চোখ ধাঁধানো।
আচমকা একটা ফোনকল আসলো। স্ক্রিনের দিকে চেয়ে দেখলো তেহভীনের নাম ভেসে উঠেছে। সিলিভিয়া রিসিভ না করার উদ্দেশ্যে ফোনটা নামিয়ে রাখলো এরপর ক্লাবের ভেতরে প্রবেশ করলো। আজকের লাঞ্চ টা এখানেই সারার চিন্তা করলো সিলিভিয়া। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে তেহভীনের ফোনটা সিলিভিয়াকে রিসিভ করতে হলো।
তেহভীন ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
—কোথায় তুমি?
— আমি ভার্সিটিতে এখন।কেন?
— আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
তুমি বেরিয়ে এসো।কথা আছে।
— আমি এখন আসতে পারবো না।
তুমি চলে যাও।আমি লাঞ্চ করিনি।
তেহভীন একটা চাপা নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
— তুমি এতো সেলফিশ কেন সিলভার?
আমিও তো লাঞ্চ করিনি। আমি খেয়েছি কি-না
জিজ্ঞেস করতে কষ্ট হয় তোমার?
— স্যরি খেয়াল ছিলো না।
— আমার খেয়াল কখনোই থাকবে না তোমার।
বাই দ্য ওয়ে বেরিয়ে এসো।একসাথে লাঞ্চ করবো।
আমি নো শুনতে চাই না।
সিলিভিয়া কথার পিঠে বলার মতো কিছু পেলো না
আর।অগত্যা তাঁকে বের হতে হলো। গেইটের পাশে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো তেহভীন। আজ তেহভীন কালো রঙের পোলো শার্ট পড়েছে। দেখতে অভাবনীয় সুন্দর লাগছে। সিলিভিয়া একবার চেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো। হঠাৎ অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা জেরিন্ডেলকে দেখতে পেলো সিলিভিয়া। নাকে আর কপালে বেন্ডেজ করা। আঘাত তাহলে ভালোই পেয়েছে। জেরিন্ডেলের রাগান্বিত দৃষ্টি দেখে সিলিভিয়ার ইচ্ছে করলো পা থেকে জুতা খুলে ছুঁড়ে মারতে। সবশেষে জেরিন্ডেলের বিকৃতি মস্তিষ্কে উশৃংখল কর্মের কথাটা সিলিভিয়ার মনে গেঁথে থাকবে। সমস্যাটা যেহেতু মানসিক তাই সিলিভিয়া সেটাকে আর ঘাঁটাবে না ভাবলো।
(চলবে)