আর একটিবার পর্ব-৫

0
1534

#আর_একটিবার
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৫

গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে সাগরিকার চোখ লেগে গিয়েছে। ইর্তেজা গাড়ি চালাচ্ছে আর আয়না দিয়ে সাগরিকাকে বার বার দেখছে। তার চিন্তা হচ্ছে ভীষণ মেয়েটার জন্য। শ্রাবণ আজ কী করবে কে জানে। বাড়িতে পৌঁছে ইর্তেজা গাড়ি থেকে বের হলো। ঘুরে গিয়ে পেছনের দরজার খুলে সাগরিকাকে ডাকতে নিলো। মেয়েটার ঘুমন্ত চেহারা দেখে তার ইচ্ছে করছে না ডাকতে। কিন্তু ডাকতে তো হবেই। ইর্তেজা নিচু স্বরে সাগরিকাকে ডাকলো। বেশীক্ষণ হয়নি সাগরিকা ঘুমিয়েছে। দুবার ডাক দিতেই সে উঠে গেল। দু-হাত দিয়ে চোখ ডলে ইর্তেজাকে দেখে বিরক্ত হয়ে বলল- “তোমার সাহস কি করে হলো আমার ঘরে এসে আমাকে ডাকার?”
“ম্যাম আপনি এখন গাড়িতে।”
সাগরিকা চারপাশে চোখ বুলালো। সত্যি তো সে গাড়িতে। হঠাৎ তার বাবার কথা মনে আসতেই তার বুক ভারী হয়ে আসলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল- “আমার বাবা কি সত্যি মারা গিয়েছে ইর্তেজা?”
প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করার সময় সাগরিকার কন্ঠ কাঁপছিল। চোখের কোনায় তার পানি জমে আছে। ইর্তেজার মন খারাপ হয়ে গেল। সে মাথা নিচু করে ফেলল। সাগরিকার গাল বেয়ে পানি পরতেই সাথে সাথে চোখ মুছে নিলো।
“একটা হেল্প করবে প্লিজ?”
ইর্তেজা সাগরিকার দিকে তাকাল। সাগরিকা মাথা নিচু করে বলল-
“আমার পরিবারে এখন আমার ভাই ছাড়া আর কেও নেই। বাবার জানাজা এশার পর। আমার ভাই একা এতকিছু পারবে না। ও খুব ছোটো। তুমি কি যাবে প্লিজ ওর সাহায্য করতে?”
ইর্তেজার বুক কেঁপে উঠল। বাবার মৃত্যু সাগরিকাকে এত বদলে দেবে ইর্তেজা কল্পনাও করেনি। সাগরিকা উত্তর না পেয়ে ইর্তেজার দিকে তাকিয়ে বলল- “তোমার সমস্যা হলে যাওয়া লাগবে না।”
“না ম্যাম, আমি যাব আপনার বাবার জানাজায়। আপনি চিন্তা করবেন না।”
সাগরিকার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ইর্তেজা মুচকি হাসলো তার হাসি দেখে। সাগরিকা গাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ির ভেতরে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরলো। ইর্তেজা দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে একা যেতে দিতে ভয় করছে তার। সাগরিকা তার ঘরে গেল। শ্রাবণ ইজি চেয়ারে বসে আছে সিগারেট হাতে নিয়ে। সাগরিকা ভেতরে আসতেই সে চোখ ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল। সাগরিকা কিছু না বলে খাটের উপর ব্যাগ রেখে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালো। তখনই শ্রাবণ প্রশ্ন করলো- “কোথায় ছিলে?”
সাগরিকা বিরক্ত ভাব নিয়ে শ্রাবণের দিকে তাকাল। শ্রাবণ তার চাহনি দেখে রেগে গেল। হাতে থাকা সিগারেট নিভিয়ে উঠে সাগরিকার সামনে এসে দাঁড়াল। সাগরিকা এখনো বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল- “কিছু জিজ্ঞেস করছি তোমাকে।”
“তোমাকে উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই।”
“তুমি বাধ্য কি-না তা কী এখন বুঝাবো?”
“কী করবে শুনি? মারবে আমাকে? শ্রাবণ আমি মরতে ভয় পাই না। আমার জীবন এমনিতেও জাহান্নাম।”
শ্রাবণ সাগরিকার হাত চেপে ধরলো। সাগরিকা ব্যাথায় ছটফট করছে। শ্রাবণ তার চোখে চোখ রেখে বলল- “তোমার ন্যাকা সহ্য করতে করতে আমি ক্লান্ত। সহ্যের সীমা পাড় করে ফেললে… ”
“আরে বাদ দাও, তুমি মারধর ছাড়া কিছুই করতে পারবে না আমি জানি। আর নাহলে জোর করে আমার দেহ ভোগ করবে। প্র্যাকটিস হয়ে গেছে যা মন চায় করো।”
শ্রাবণের মাথা গরম হয়ে গেল। সজোরে সাগরিকার গালে চড় মেরে দিলো। সাগরিকা টাল সামলাতে পারলো না। পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকালো। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের করলো না। হাত মুঠো শক্ত করে সে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রাবণ সাগরিকার দিকে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল- “আমি ভেবে নিয়েছিলাম আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলবো না। কিন্তু তোমার ব্যবহার আমাকে বাধ্য করেছে আজ। বলো এখন কোথায় গিয়েছিলে?”
সাগরিকা মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। শ্রাবণের রাগ বেড়েই চলেছে। সে উঁচু স্বরে বলল-
“ওই ইর্তেজাকে তো আমি ছাড়বো না। ওকে কল করেছি অনেকবার ধরেনি। টাকার লোভ দেখিয়েছো ওকে তাই না? ও তো টাকার গোলাম।”
সাগরিকার গা কাঁপছে রাগে। রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্রাবণের দিকে। সাগরিকার চাহনি দেখে শ্রাবণ রাগে সাগরিকার চুলের মুঠো শক্ত করে ধরলো। সাগরিকা ব্যাথায় নিঃশব্দে কাঁদছে আর নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় আছে। শ্রাবণ সাগরিকার মুখ চেপে ধরে বলল-
“তুমি কোথায় গিয়েছিলে তার খবর তো আমি পেয়েই যাব। মাই ডিয়ার ওয়াইফ, আজ থেকে তোমার বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ। অনেক হয়েছে পড়াশোনা। অনেক দিয়েছি ছাড়। কিন্তু আর না।”

তখনই দৌড়াতে দৌড়াতে ইর্তেজা আসলো। সে ঘরের দরজা খোলা পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই এমন দৃশ্য দেখে থমকে গেল। শ্রাবণ ইর্তেজাকে দেখে সাগরিকাকে এক ঝটকায় ছেড়ে ইর্তেজার দিকে হনহন করে আসলো। ইর্তেজার দৃষ্টি সাগরিকার দিকে। সাগরিকা দু হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণ কিছু বলার আগেই ইর্তেজা বলল- “বস আপনার ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছে।”
কথাটা বলার সময়ও ইর্তেজার দৃষ্টি সাগরিকার দিকে ছিলো। শ্রাবণ অবাক হয়ে বলল- “বলছো কী? কোন ফ্যাক্টরিতে?”
ইর্তেজা শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বলল- “বাড়ি থেকে কিছুটা দূর যেটা। খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি। আপনি যদি সেখানে গেতেন ভালো হতো।”
শ্রাবণ জবাব দিলো না দৌড়ে চলে গেল। ইর্তেজা জানে শ্রাবণ টাকাকে কত ভালোবাসে। তার জন্য তার সম্পত্তি সবার আগে। ইর্তেজা সাগরিকার দিকে তাকাল। সাগরিকা দ্রুত মাটিতে বসে নিজের মাথা চেপে ধরলো। এমনিতেই কান্না করায় মাথা ব্যাথা। এখন চুলের মুঠো ধরায় আরো ব্যাথা করছে। সাগরিকা ধীরে ধীরে চোখ তুলে ইর্তেজার দিকে তাকাল। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইর্তেজা বলল- “সত্যি আগুন লেগেছে। আর এটা কো-ইন্সিডেন্স না। আমি করিয়েছি এই কাজ। সেই ফ্যাক্টরির এক কর্মী আমার খুব ক্লোজ। তাকে বলায় সে চুপি চুপি আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। বেশী ক্ষতি হবে না। এখনকার পরিস্থিতি সামলানোর জন্য এই আইডিয়াই মাথায় এসেছিল।
“আমি তো কিছু জিজ্ঞেস করি নি।”
ইর্তেজা জবাবে মুচকি হাসলো। সাগরিকা তাকিয়ে রইল ইর্তেজার দিকে। তখনই চারপাশে এশার আযান ভেসে আসলো৷ ইর্তেজা হাসিমুখে বলল- “আমি আপাতত আপনার ভাইয়ের কাছে যাই। আর চিন্তা করবেন না৷ বস যখন ফিরবে একদম পরিবর্তন হয়ে ফিরবে। মাফ পর্যন্ত চাইবে আপনার কাছ থেকে।”
“কী করবে শুনি?”
“তেমন কিছু না। আচ্ছা আসি, আল্লাহ হাফেজ।”
ইর্তেজা চলে গেল। সাগরিকা কিছুক্ষণ বসে থেকে উঠে দাঁড়াল। মাথা ব্যাথা করছে তার। ধীরপায়ে হেটে গিয়ে আলমারি থেকে জামা বের করে বাথরুমে চলে গেল।
.
.
সাগরিকার বাবার জানাজায় এসে ইর্তেজা সূর্যের প্রত্যেক কাজে সাহায্য করলো। সূর্য দেখতে পুরো তার বোনের মতোই৷ সাগরিকা বলেছে সূর্য ছাড়া এখন আর কেও নেই তার। সাগরিকার মা কোথায়? ইর্তেজার মনে প্রশ্নটা অনেকক্ষণ ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে। কবরস্থান থেকে ফিরে সবাই চলে গেল ইর্তেজা বাদে৷ ছেলেটা অনেক ছোটো। সে ভাবলো কিছুক্ষণ তার সাথে থেকে যাক। ড্রইংরুমে বসে আছে তারা। ইর্তেজা চারপাশে চোখ বুলালো। তিন রুমের একটি ফ্ল্যাট। দেখতে ভীষণ সুন্দর৷ এখন থেকে সূর্য একা থাকবে এই পুরো বাড়িতে। ইর্তেজার খারাপ লাগলো। সূর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল- “আপনাকে ধন্যবাদ আপনি আমার অনেক সাহায্য করেছেন।”
“ধন্যবাদ দিতে হবে না। সূর্য তোমাকে নিয়ে আমার টেনশন হচ্ছে। তুমি একা থাকতে পারবে?”
“পারবো, বাবা তো সারাদিন নেশায় ডুবে থাকতেন। আমিই ঘর সামলাতাম।”
“পড়াশোনা করো না?”
“করতাম, কিন্তু এখন আর করি না।”
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি যদি কিছু মনে না করো।”
“করুন”
“তোমার মা কোথায়?”
“বাবা নেশা করতো বলে মা অনেক আগেই উনাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গিয়েছে। শুনেছি দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। এখন হয়তো স্বামীর বাসায়।”
ইর্তেজা আর কিছু বলল না। সূর্যের সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে বেরিয়ে পরলো। এখন ফ্যাক্টরি যেতে হবে। শ্রাবণের মাথা থেকে রাগের ভূত নামিয়ে বাসায় যাবে৷ ইর্তেজার খুব জানতে ইচ্ছে করছে শ্রাবণের সাথে সাগরিকার দেখা কিভাবে হলো? সূর্য তো হসপিটালে বলেছিল তার বাবা টাকার লোভে তাকে বিয়ে দিয়েছে। ইর্তেজা ফ্যাক্টরি এসে দেখে চারপাশে লোকজন। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিভিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই। অর্ধেকের মতো জিনিসপত্র জ্বলেছে। শ্রাবণ পুলিশের সাথে কথা বলছে। ইর্তেজা সেখানে গেল। পুলিশ ফ্যাক্টরির সম্পর্কে সব ডিটেইলস নিয়ে চলে গেল। শ্রাবণের চেহারায় কষ্ট স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ইর্তেজার কলিজা যেন ঠান্ডা হয়ে গেল। খুব শান্তি লাগছে তার। সে শ্রাবণের কাঁধে হাত রেখে বলল- “বস, আপনি চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি খুব ভালো বিজনেসম্যান৷ আমি জানি আপনি আবার সব আগের মতো করে ফেলবেন।”
শ্রাবণ ইর্তেজার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে এক ঝটকায় ইর্তেজার হাত সরিয়ে বলল-
“তোমাকেই খুঁজছিলাম। এখন সত্যি সত্যি জবাব দাও সাগরিকাকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”
“আজ ভার্সিটিতে একটা দূর্ঘটনা ঘটেছে তাই আসতে দেরি হয়েছে।”
“কি দূর্ঘটনা?”
“ম্যামের ফ্রেন্ড ভার্সিটির এক স্যারের সাথে রিলেশন করতো। এটা তার পরিবার জানায় মেয়েটাকে খুব বকাঝকা করে। শুধু তাই না। তারা ম্যামের উপর সন্দেহ করে যে ম্যামও এইসব বিষয়ে জানতো এবং মেয়েটাকে সাহায্য করেছে। প্রচুর তামাশা হয়েছে এই নিয়ে। আর আপনি তো জানেন ম্যাম কত সাহসি। উনি নিজেকে সত্য প্রমাণ করেছে। তাই দেরি হয়ে গিয়েছিল। আই এম সরি।”
“আমার বউয়ের উপর এত বড়ো অপবাদ? কারা করেছে এই কাজ, নাম বলো। এখনই নাম বলো।”
“বস আপনার অবস্থা দেখেছেন? ঠিক এই কারণে আমি আপনাকে কল করি নি। আর আপনি অকারণে ম্যামের সাথে…”
ইর্তেজা মাথা নিচু করে ফেলল। শ্রাবণ নিজের চুল চেপে ধরলো। বলল- “আমি ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু আমাকে ও কিছু বলেনি।”
“বললেও আপনি উনার সাথে এমনটাই করতেন। বলুন বস ঠিক বলছি না?”
শ্রাবণ করুণ দৃষ্টিতে তাকাল ইর্তেজার দিকে। ইর্তেজা মুচকি হেসে বলল- “উনার মন জেতার জন্য আপনাকে অনেক নরম মনের মানুষ হতে হবে। কথায় কথায় রাগ করলে হারিয়ে ফেলবেন উনাকে।”
“এভাবে বলো না। আমি ওকে হারাতে পারবো না।”
“তাহলে যান, গিয়ে মাফ চেয়ে নিন।”
শ্রাবণ একটা লম্বা নিশ্বাস নিয়ে ফেলে বলল-
“ঠিক বললে আমাকে ধৈর্য সহকারে সব সামলাতে হবে। বাসায় যাই তাহলে। তুমিও যাও।”
ইর্তেজা মাথা নাড়াল। শ্রাবণ চলে গেল। ইর্তেজা দাঁড়িয়ে আছে। আজ অনেক বড়ো মিথ্যে বলেছে সে। শুধু মাত্র সাগরিকার জন্য। এমনিতে মিথ্যে বললে তার নিজেকে অপরাধী মনে হয়৷ কিন্তু আজ মিথ্যে বলেও তার শান্তি লাগছে।
.
.
খুব অস্বস্তি হচ্ছে ইরিনার। সাঈদ যাওয়ার পর থেকে তার মন খারাপ ছটফট করছে। তার উচিত হয়নি ছেলেটাকে এসব বলা। এখন সে কি করবে বুঝতে পারছে না। সাঈদকে কল দিতে চেয়েও দিচ্ছে না। আচ্ছা কল করা কি ঠিক হবে? ইরিনা নিজের চুল চেপে ধরলো। মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে তার৷ তখনই দরজা খোলার শব্দ আসলো। ইরিনা এগিয়ে গেল হুইলচেয়ার নিয়ে৷ বাহিরে গিয়ে দেখে ইর্তেজা আর সাঈদ প্রবেশ করলো। ইরিনা সাঈদকে দেখে কিছুটা অবাক হলো। রাত বাজে ১০ টা, সে এখানে আসলো কেন? ইর্তেজা সাঈদকে বসতে বলে ঘরে চলে গেল৷ সাঈদ অন্যদিকে তাকিয়ে থেকেই বলল- “আসসালামু আলাইকুম”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, তুমি এই সময়?”
“মাফ করবেন আবার আসার জন্য। ইর্তেজা রাস্তায় দেখে আমাকে জোর করে নিয়ে আসলো।”
ইরিন জবাব দিলো না। সাঈদ একবারো তার দিকে তাকাচ্ছে না। অভিমান হলো ইরিনার। সাঈদ আবার বলল-
“আমি জানি আপনার ভালো লাগে নি আমি আসায়৷ আপনার ভাই কতটা জেদি তা তো জানেনই। তাই আসতে বাধ্য হলাম।”
ইরিনার মন আরো খারাপ হয়ে গেল। সে মুখ ফুটে বলতে পারছে না তার কতটা ভালো লাগছে সাঈদকে দেখে। সকাল থেকে মনে কষ্ট চেপে বসে ছিলো। এখন সাঈদকে দেখে তার শান্তি লাগছে। কিন্তু সাঈদ হয়তো অভিমান করেছে তার সাথে। কিছুক্ষণ পর ইর্তেজা আসলো। পুরোটা সময় কেও কারো সাথে কথা বলেনি। ইর্তেজা এসে সাঈদের পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে বলল-
“সো ব্রো হাউ আর ইউ?”
“রাখ তোর ব্রো, কয়বার এসে ফিরে গিয়েছি তুই জানিস?”
“সরি দোস্তো, নতুন কাজ তাই ব্যস্ত থাকি।”
“কি এমন কাজ করিস জানতে পারি?”
ইর্তেজা তার বোনের দিকে তাকাল। ইরিনা এক ভ্রু উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইর্তেজা হাসতে হাসতে সাঈদের দিকে তাকিয়ে বলল- “তোমরা আমার উপর সন্দেহ করছো?”
“হ্যাঁ করছি, কি কাজ করিস যে আমাদের বলা যাবে না?”
“সময় আসলে বলবো।”
“তুই চাইলে আমাকে বলতে পারিস। দেখ আমি তো তোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু।”
ইরিনা সাঈদের দিকে তাকাল। সাঈদ ইরিনার চাহনি দেখে বলল- “ইয়ে মানে, এভাবে দেখার কী আছে? আপনি ওর বড়ো বোন হয়তো লজ্জা পাচ্ছে বলতে। আমাকে বলুক, আমি তো ওর বেস্টফ্রেন্ড।”
ইর্তেজা বিরক্ত হয়ে বলল- “বেশি বলছিস এখন। আমি এমন কোনো কাজ করছি না যার দ্বারা লজ্জিত হবো।”
“আমাদের বল তাহলে।”
“এখন না, আচ্ছা তোমরা বসো আমি খাবার সাজাই।”
বলেই ইর্তেজা চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি আবার অস্বস্তিকর হয়ে উঠলো। ইরিনা, সাঈদ দুজনই চুপ। সাঈদ বার বার আড়চোখে ইরিনাকে দেখছে৷ ইরিনার দৃষ্টি তার ওড়নায়। সে তার ওড়না আঙুলে পেচাচ্ছে আবার খুলছে। সাঈদ দু’বার কেশে বলল-
“আপনি না-কি ডাক্তারের কাছে যেতে চান না চেকআপের জন্য।”
ইরিনা মাথা তুলে বলল- “ভালো লাগে না। ইর্তেজাকে অনেকবার বলেছি এখন এসব করে লাভ নেই।”
“আপনি সবসময় অতিরিক্ত ভাবনা চিন্তা করেন। তাও নেগেটিভ। পজিটিভ ভাবতে পারেন না?”
“তুমি বুঝবে না।”
বলেই ইরিনা মাথা নিচু করলো। সাঈদ মুচকি হেসে বলল-
“আমি সব বুঝি, তাই তো চাই আপনি তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যান। আপনি যখন সুস্থ হবেন সেদিন আমরা তিনজন দূরে কোথাও ঘুরতে যাব। আপনার সমুদ্র খুব পছন্দ তাই না? আমরা সমুদ্র দেখতে যাব।”
ইরিনা চোখ তুলে সাঈদকে দেখলো। সাঈদ হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইরিনা চেষ্টা করছে নিজের দৃষ্টি সরানোর কিন্তু পারছে না। সাঈদও অপলকভাবে তাকিয়ে আছে ইরিনার দিকে। যেন একে অপরকে শত বছর ধরে দেখে না। এখন দেখে সব তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। হঠাৎ সাঈদ খেয়াল করলো ইরিনার চোখের সামনে একটা পাপড়ি ভেঙ্গে পড়ে আছে। সাঈদ ধীরে ধীরে ইরিনার কাছে যেতে লাগল। ইরিনা অবাক না হয়ে পারলো না। তার হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে গেল মিনিটেই। সাঈদ আলতো করে পাপড়িটা নিলো। সাঈদের ছোঁয়া পেয়ে ইরিনা চোখ বন্ধ করে ফেলল। তার মনে হচ্ছে তার হৃদয়ে বিস্ফোরণ ঘটবে। সাঈদ মুটকি হেসে বলল- “পাপড়ি, নিন নিজের ইচ্ছা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রকাশ করুন।”

ইরিনা চোখ খুলল। সাঈদের মুখে থাকা হাসি ইরিনাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। সে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল- “উনার কাছে ইচ্ছে প্রকাশ করতে হয়? উনি তো সবার মনের খবর রাখেন। যেটা সঠিক সেটাই করেন আমাদের জন্য।”
“হ্যাঁ, একদম ঠিক বললেন। ফেলে দেই তাহলে।”
বলেই সাঈদ পাপড়িটা ফেলে দিতে নিলো। সাথে সাথে ইরিনা তার হাত খোপ করে ধরে ফেলল। সাঈদ অবাক দৃষ্টিতে তাকাল ইরিনার দিকে। ইরিনা মুচকি হেসে সাঈদের হাত ছেড়ে নিজের হাত মুঠো করে সাঈদের দিকে এগিয়ে দিলো। সাঈদ ইরিনার হাতের উপর পাপড়িটা রাখল। ইরিনা এক নজর পাপড়িটা দেখে চোখ বন্ধ করে নিলো। চারপাশ অন্ধকার। সে কী চাইবে ভাবতে পারছে না। হঠাৎ করে অন্ধকার চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল। তার চোখের সামনে ভেসে উঠল সাঈদের চেহারা। ইরিনা সাথে সাথে চোখ খুলে ফেলল। সাঈদ ইরিনার চাহনি দেখে হেসে বলল- “কি হলো? চেয়েছেন কিছু?”
ইরিনা জবাব দিলো না। তার দৃষ্টিতে হাজারো প্রশ্ন। সাঈদ আবার বলল- “চাওয়া হয়ে গেলে ফুঁ দিন।”
ইরিনা আস্তে করে ফুঁ দিয়ে সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলল। হঠাৎ তার ভয় করছে, খুব ভয়। চোখ দুটো চেপে বন্ধ করে নিজেকে বুঝাচ্ছে সে যা অনুভব করছে সব মিথ্যে৷ ইরিনা ধীরে ধীরে চোখ খুলল। কান্নায় গলা ধরে আসছে তার। কেন নিজের মনকে কাবু করতে পারছে না। সে যে সব সীমা অতিক্রম করার চেষ্টায় আছে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here