#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৮
মেহেরিন দুই হাত বাহুতে গুঁজে পার্কে দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি হচ্ছে পার্কের গেটের দিকে। হয়তো কারো আশার কথা। এর মাঝেই পার্ক খালি হয়ে যাচ্ছে। হবারই কথা! আকাশে যে সন্ধ্যা নেমে গেছে। গোধূলি বেলা শুরু হলো যে। মেহেরিন হাতের ঘড়ির দিকে চোখ বুলাল। “ইশ ঘন্টার কাটা ৬ দিকের ছুঁই ছুঁই। অথচ তার আসার কথা ছিল ৫ টায়। এতোটা দেরি কি মানুষে করে। বেশি থেকে বেশি হলে ১০ মিনিট। পুরো এক ঘন্টা দাড় করিয়ে রাখল আমায়! টাইমসেন্স বলে কি কিছু নেই।”
রাগে কম্পিত হলো মেহেরিন’র পুরো শরীর। চট করেই ফোন টা বেজে উঠলো। চোখ বুলিয়ে দেখল অর্ণব। ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে অর্ণবের বিষণ্ণ স্বর এলো তার কানে,
“মাম্মি..
“কি হয়েছে অর্ণব সোনা!
“মাম্মি..
“এই তো মাম্মি এখনি এসে পড়বে! অর্ণব সোনা কি রাগ করেছে?
অর্ণব ফোন টা রেখে উঠে গেল। ঘরের দরজা ওপাশ থেকে ধপাস করে বন্ধ করে বসে রইল। খুব রেগে আছে সে। মিস মারিয়া পড়ে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে কানের কাছে নিতেই ওপাশ থেকে মেহেরিন বলল,
“খুব কি রেগে আছে!
“জ্বি ম্যাম! কখন থেকে খেতে বলছি কিছু খাচ্ছে না। ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।
মেহেরিন চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি আসছি, তুমি একটু দেখে রাখো!
“জ্বি ম্যাম!
ফোনটা ব্যাগে রেখে সামনে তাকাল। অনেকক্ষণ হলো বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। অর্ণবের সাথে একটু কথাও হয় নি তার। ইশ ভারী অন্যায় হয়ে গেছে। অর্ণবের ছোট মনটা খুব কষ্ট পেয়েছে।
মেহেরিন আবারো ঘড়ির দিকে তাকাল। পুরো ৬ টা ৩০
সেকেন্ড হলো। মেহেরিন ঠিক করে নিল আর মাত্র ৫ মিনিট’ই দাঁড়াবে সে। এরপর আর না। মেহেরিন বেঞ্চে এসে কঠিন মুখ করে বসে রইল।
১ মিনিট হবার আগেই কাউকে ঢুকতে দেখা গেল। সে দৌড়ে আসছে মেহেরিন’র কাছে। তাকে চিনতে ভুল হলো না তার। উঠে দাঁড়িয়ে গেল মেহেরিন। সে এসে মেহেরিন’র সামনে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো। মেহেরিন সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তার দিকে। খানিকক্ষণ পর মেহেরিন’র সামনে এসে দাঁড়াল। মেহেরিন মুখ ঘুরিয়ে নিল।
মেহেরিন’র থিতুনি তে হাত রেখে খানিকটা ঝুঁকে বলে উঠে,
“মিলে হো তুম হামকো, বরে নাসিবো সে! চুরাইয়া হেই ম্যানে কিসমত কি লাকিরো সে..
এ সময় এমন গান শুনে মেহেরিন’র রাগী মুখেও হাসির রেখা দেখা দিল। সে এবার দু লাইন গান গাইতে গাইতে মেহেরিন’র হাত ধরে ঘুরিয়ে নিল। অতঃপর দু’হাত তার কোমরে রেখে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে রইল।
মেহেরিন শীতল গলায় বলে উঠে,
“হেসেছি মানে এই না আমার রাগ কমে গেছে।
ভ্রু কুন্চিত হলো তার। বলে উঠে,
“তুমি রেগে আছো কেন?
“এটা আবার জিজ্ঞেস করছো?
“না মানে..
মেহেরিন হাতের ঘড়ি টা তার দিকে এগিয়ে বলে উঠে,
“দেখো কয়টা বাজে, ৬ টা বাজে। আসার কথা ছিল কখন, ৫ টায়. পুরো এক ঘন্টা এখানে বসিয়ে রাখলে তুমি!
সে নিজের ঘড়ি মেহেরিন’র দিকে ঘুরিয়ে বলে উঠে,
“কোথায় এই দেখো? ৫ টাই তো বাজে।
মেহেরিন ঘড়ির দিকে তাকাল। অতঃপর তার মুখের দিকে তাকাল। আঁধারের মাঝে উপরে জ্বলে থাকা লাল রঙের বাল্বতে তার চেহারা দেখা যাচ্ছে। মেহেরিন বাঁকা হেসে বলল,
“তুমি ঠিক কতোটা বোকা ভাবো আমায় বলো তো। আসার আগে নিজে যে ঘড়ির টাইম বদলে আসো নি তা কি আমার কাছে অস্বীকার করছো!
সে এবার লজ্জিত হলো। লজ্জা মাখা মুখে হেসে দিল। মেহেরিন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল সে হাসির দিকে। ইচ্ছে করছে আবারো তার প্রেমে পড়তে। হাসতে হাসতে উষ্ণ গলায় বলে উঠে,
“সরি! আমি বুঝতে পারি নি তুমি এতো তাড়াতাড়ি ধরে ফেলবে। খুব ভালো বুঝো তুমি আমায়। আর এজন্যই তো তোমায় এতো ভালোবাসি!
“হয়েছে রাখো তোমার এসব। দেরি করেছ এখন শাস্তি পাবে।
“জো হুকুম মেরি জান!
“বাসায় দিয়ে আসো আমাকে।
মুখটা মলিন হয়ে গেল তার। বলে উঠে,
“আমি তো এটা আশা করি নি। এখনই তো এলাম আর এখন’ই চলে যাচ্ছো।
“যেতে হবে,অর্ণব এখনো কিছু খায় নি। দরজা বন্ধ করে বসে আছে। আমি না যাওয়া অবদি কিছু মুখে তুলবে না সে
“এতো ছোট বাচ্চার এতো রাগ!
“কার ছেলে দেখতে হবে তো।
বিরক্তি’র ছলে কথাটা বললেও মেহেরিন তা বুঝতে পারল না।
“হ্যাঁ তাই তো। তাহলে তুমি এখন ওর জন্য আমাদের ডেট নষ্ট করছো।
“উফ! তুমি বেশি কথা বলছো চলো তো!
বলেই মেহেরিন তার হাত ধরে টেনে গাড়ির কাছে আনল। মেহেরিন বুঝতে পারল না তার মনে কি চলছে। সে অর্ণবের প্রতি ভারী ক্ষিপ্ত। এই ক্ষিপ্ততা এক দিনের নয়। বহু দিনের.. এতো দিনের জমিয়ে রাখা ক্ষিপ্ততা কখন যে বড় আকার ধারণ করে বিস্ফোরিত হবে তার ক্ষতি সম্পর্কে মেহেরিন’র তখনো কোন ধারণা নেই। কোন বাচ্চা’র প্রতি এতো রাগ কেউ পুষিয়ে রাখতে পারে বলে মেহেরিন’র জানা নেই।
গাড়ি ড্রাইভ করছে সে, আর তার বাহু জরিয়ে ঘাড়ে মাথা রেখে বসে আছে মেহেরিন। গাড়ি চলছে নিজ গতিতে। একটু পর পর সে তাকাচ্ছে মেহেরিন’র দিকে। আর মেহেরিন সামনে আয়নার দিকে। সব লক্ষ রাখছে সে। মেহেরিন বলে উঠে,
“সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে হয় স্যার, নাহলে এক্সিডেন্ট করবেন।
সে গাড়ির সামনের আয়নার দিকে তাকাল। মেহেরিনকে দেখে হেসে বলে উঠে,
“দু’জনে একসাথে মরলে সমস্যা হবে না ম্যাডাম।
“আমার কথা রিপিট করছো।
“কই না তো।
“হ্যাঁ হ্যাঁ করছো?
মেহেরিন ভেংচি কেটে মুখ সরিয়ে ফেলল। সে হাত দিয়ে তার মুখ ঘুরিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকতে বলল। পক্ষান্তরে মিস মারিয়া কল করেই যাচ্ছে। মেহেরিন ফোন রিসিভ করে বলেছে সে কাছেই আছে। এসে পড়বে। এ কথা দরজার ওপাশ থেকে বলার পরও দরজা খুলল না অর্ণব। সে দৌড়ে এসে বেলকনিতে দাঁড়াল। ছোট ছেলের মন টা মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকল।
গাড়ি টা এসে বাড়ির সামনে দাঁড়াল। মেহেরিন বিদায় দিয়ে গাড়ি থেকে নামতে নিলে সে হুট করেই মেহেরিন’র হাত ধরে তার কাছে টানল। মেহেরিন অবাক চোখে তাকাল। কপালে ভাঁজ পারল তার। সে চোখের পাতা ফেলে ফেলে তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র ঠোঁটের দিকে। বুঝতে অসুবিধা হলো না কি তাইছে সে। মেহেরিন হাত মুচরাতে মুচরাতে বলে,
“কোন মতে না! ছাড়ো আমায়। এভাবেই অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।
“আর দু মিনিট হলে কিছু হবে না।
“দু মিনিট! ( হেসে ) আমি ৩০ সেকেন্ড ও দেরি করছি না। দেখো ছাড়ো আমায় বলছি।
সে টুক করে হাতটা ছেড়ে দেল। বলে উঠে,
“যাও দিলাম!
মেহেরিন হেসে যেই না গাড়ির দরজা খুলতে যাবে অমনি বুঝতে পারল গাড়ি লক করা। সে তার দিকে তাকিয়ে রইল। সে বাঁকা হেসে তাকাল মেহেরিন’র দিকে।
“যাও যাও এখন..
মেহেরিন একটু কাছে এসে যেই না আনলক করতে নিবে অমনি সে গাড়ির চাবি খুলে ফেলল। এক হাত দিয়ে তা দূরে সরিয়ে ফেলল। মেহেরিন অসহায় দৃষ্টি তার দিকে নিক্ষেপ করল। কিন্তু তার মন গলল না।
“আহ ছেড়ে দাও না।
“হুম হুম না। তোমার জন্য আজ আমার ডেট নষ্ট হয়েছে।
“আমার জন্য! দেরি করে এসেছিলে তো তুমি।
সে চোখ ছোট ছোট করে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন’র চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে হাত রাখল তার গালে। অতঃপর ধীরে ধীরে তার কাছে যেতে লাগল। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে নিল। সে মেহেরিন’র কাছে আসছে। তার শ্বাস পড়ছে মেহেরিন’র উপর। দুজনেই খুব কাছাকাছি! হুট করেই তখন মেহেরিন’র ফোনটা বেজে উঠল। দুজনেই লাফিয়ে উঠলো। সে সিটে হেলান দিয়ে কপালে হাত দিল। মেহেরিন এই সুযোগ গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে গাড়ি আনলক করে বেরিয়ে গেল। অতঃপর বাইরে দাঁড়িয়ে টা টা দিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকতে নিল।
ঠিক তখনই গাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলো সে। গাড়ির উপর এক হাত রেখে মেহেরিন কে ডেকে বলল,
“মেহেরিন! কিছু কি ভুলে যাচ্ছো না তুমি!
মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে পিছনে ফিরল। সে গাড়ি থেকে একটু সামনে এসে দাঁড়াল। মেহেরিন দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরল তাকে। সেও খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরল। অতঃপর তাকাল উপরের দিকে। বেলকনিতে দাঁড়ানো অর্ণব সব দেখছিল। তার কাছে মনে হয় এই অর্ণবের কোন সমস্যা নেই।আর বাকি ৫ টা বাচ্চার মতো না হলেও অনেকটা চালাক সে। আর এই চালাকি তার পছন্দ না। অর্ণব কে সহ্য হয় না তার।
পরক্ষণে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা অর্ণবের মনে হয় এই লোকটা পঁচা। সে এসেছে তার থেকে তার মাম্মি কে কেড়ে নিতে। এসবের মাঝে মেহেরিন, যে কি না অন্ধের মতো শুধু ভালো বেসেই গেল। মুখ তুলে তাকাল তার দিকে। বলে উঠে,
“কখনো এই ভালোবাসা কমতে দিও না। আজ পর্যন্ত যাকে যাকে ভালোবেসেছি সবাইকে হারিয়েছি। তুমি হারিয়ো না।
সে মেহেরিন’র কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“কখনো না। আমার আর তোমার ভালোবাসা মাঝে কাউকে আসতেও দেবো না।
বলেই উপরের দিকে তাকাল। মেহেরিন’র কাছে মনে হলো এই একটা মানুষ যাকে ভরসা করে বেঁচে থাকবে সে। তার হাত ধরেই বাকিটা পথ চলবে কি। কিন্তু এই দরুন পরিস্থিতি হবে কে জানতো। সে তো পথ চলতে শুরু করার আগেই হাত ছেড়ে চলে গেল। হায় ভালোবাসার কি নির্মম পরিহাস হলো।
—–
চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল বালিশে। ঘুমের মাঝেই কাঁদছে সে আর বির বির করে চলছে,
“যেও না, আমাকে ছেড়ে যেও না।
কিন্তু সে চলে গেল। হারিয়ে গেল এই আঁধারের মাঝে। চট করে চোখ মেলে তাকাল সে। তার এই কল্পনা, স্বপ্ন, ভাবনা সবকিছু তার পুরনো ক্ষত কে জাগিয়ে তুলে। বুকে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করছে সে। পাশে তাকিয়ে দেখল অর্ণব কে। সে এখনো ঘুমাচ্ছে। কেমন একটু উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। গায়ে চাদরটা এখন আর গায়ে নেই। মেহেরিন উঠে বসল। তাকে ঠিক করেই শুইয়ে দিল। গায়ে চাদরটাও টেনে দিল। অতঃপর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল,
“আমার সব তো এখানে। কাকে পাওয়ার মিথ্যে আশা করছি আমি। এই তো আমার জীবন। এখানেই তার শুরু আর এখানেই শেষ।
——
নির্ঝর ঘুম থেকে উঠলো বেশ বেলা করে। অনেকক্ষণ ঘুমালো আজ। অতঃপর ফ্রেস হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। তার কাছে সব কিছু শান্ত আর নিরব লাগছিল। এমনটা কেন?
মেহেরিন’র ঘরে কড়া নাড়ল। না দরজা কেউ ঘুরল না। নির্ঝর হাত দিয়ে ধরতেই ঘরটা নিজ থেকে খুলেই গেল। নির্ঝর ভেতরে আসার পর বুঝতে পারল ঘরে কেউ নেই। ব্যাপার কি সবাই গেলো কোথায়?
নিচ থেকে আওয়াজ আসছে। হয়তো মিস মারিয়া রান্না ঘরে কাজ করছে। নির্ঝর মাথার চুল গুলো এলোমেলো করতে করতে নিচে নামল। মিস মারিয়া নির্ঝর কে দেখে বলল,
“গুড মর্নিং স্যার!
নির্ঝর হেসে বলল,
“গুড মর্নিং!
মিস মারিয়া এক কাপ কফি তৈরি করে নির্ঝরের কাছে এনে রাখল। নির্ঝর কফি হাতে নিয়ে বলল,
“ম্যাম কোথায়?
“অফিসে চলে গেছেন।
“এতো সকালে..
“স্যার আপনি লেট করে উঠেছেন। অর্ণব বাবা গিয়েছিল ডাকতে কিন্তু আপনি ঘুমাচ্ছিলেন বলে ম্যাম মানা করে দিয়েছে।
“ওহ আচ্ছা!
হুট করেই কলিং বেল বেজে উঠলো। নির্ঝর কফি মগে চুমুক দিল। মিস মারিয়া গিয়ে দরজা খুললেন। একজন ছেলে ঢুকল। নির্ঝরের ওতোটা খেয়াল করল না। কিন্তু যখন মিস মারিয়া ছেলে টাকে নিয়ে তার সামনে এনে দাঁড়াল নির্ঝর তখন ছেলেটার দিকে মনোযোগ দিলেন,
কালো রঙের একটা স্যুট পড়া। চুল গুলো বেশ পরিপাটি। আর তার সাথে ছেলেটা বিনয়ী। নির্ঝর কে দেখেই সালাম দিলো। নির্ঝর ও উওর দিলো। মিস মারিয়া বলে উঠেন,
“স্যার, এ আপনার পার্সোনাল সিকিউরিটি গার্ড। সবসময় আপনার সাথেই থাকবে। আপনার কার ড্রাইভ থেকে শুরু করে সবকিছুই ও দেখবে।
নির্ঝর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আহ তোমার নাম কি?
“জ্বি, জয়নুল হোসেন!
নির্ঝর কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। অতঃপর বলে উঠে,
“তোমার নামের সাথে তোমাকে মিলাতে পারছি না। আমি তোমাকে আজ থেকে জন বলে ডাকবো ঠিক আছে তো।
“জ্বি স্যার।
“ভালো ড্রাইভ করতে পারো তো।
“জ্বি স্যার!
মিস মারিয়া মাঝে বলেন,
“স্যার, ম্যাম তার সমস্ত কিছু চেক করেই দায়িত্ব দিয়েছেন।
“আচ্ছা!
বলেই নির্ঝর তার গাড়ির চাবি তাকে দিলেন। মিস মারিয়া আর কিছু লাগবে কি না জিজ্ঞেস করলেন। নির্ঝর না করে কফি হাতে উঠে গেল।
সিঁড়ি দিয়ে উঠছে আর ভাবছে,
“পার্সোনাল সিকিউরিটি হিসেবে একটা ছেলে কেন ঠিক করলো। মেয়ে ঠিক করলে কি হতো। আমার পাশে একটা মেয়ে কে কি মানাতো না। মেহু এমনটা কেন করল! কিছু একটা গন্ডগোল লাগছে।
নির্ঝর ফোন বের করে মেহেরিন কে কল করল। মেহেরিন’ও রিসিভ করল সাথে সাথে। নির্ঝর কিছু বলবে তার আগে মেহেরিন বলে উঠে,
“দেখা করছেন?
“কার সাথে?
“যাকে পাঠিয়েছি!
“ওহ হ্যাঁ দেখেছি।
“হুম খুব বিশ্বস্ত। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
“আচ্ছা মেহু!
“হুম..
“তুমি একটা মেয়ে কেন ঠিক করলে না বলো তো। আমার মতো একটা ছেলের সাথে একটা ছেলে মানাবে!
ওপাশ থেকে কোন উওর এলো না। নির্ঝর উওরের আশায় কফি মগে চুমুক দিল। তৎক্ষণাৎ ওপাশ থেকে শীতল গলায় মেহেরিন বলল,
“অন্য মেয়েদের হাতে কি নিজের গায়ের আর্ধেক থাকা শার্ট খোলাতে চান!
নির্ঝর সাথে সাথে বিষম খেলো। হাত থেকে ফোনটা ধপাস করে নিচে পড়ে গেল। নির্ঝর দাঁতের সাথে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে গেল। এতোক্ষনে বুঝল মেহেরিন কেন এই ছেলে কে ঠিক করেছে। কপালে হাত দিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।
কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে মিস মারিয়া ছুটে এলেন।
“স্যার আপনি ঠিক আছেন তো?
“মিস মারিয়া! হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। আসলে আমার ফোনটা পড়ে গেছে।
মিস মারিয়া দাঁড়িয়ে ফোন খুঁজতে লাগলেন। তা পেয়েও গেলেন। ফোনটার তেমন কিছুই হলো না!
—
অর্ণবের কথা ভাবতে ভাবতে নির্ঝর ঘরে এসে বসল। এখন পুরোই একা লাগছে তার। মেহু অর্ণব কে তো রেখে যেতেই পারতো। নির্ঝর বিছানার পাশে ছোট টেবিলের দিকে তাকাতেই একটা কাগজ দেখতে পেল। সেটা হাতে নিয়ে দেখল তাতে বড় বড় করে লেখা,
“ড্যাডি!
এর পাশে তার কল্পনার ড্যাডি আঁকা। নির্ঝরের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। ছোট এই অর্ণবের হৃদয়ের খানিকটা দখল করেছে সে। সকাল থেকে এই ছোট অর্ণবের মুখ টা দেখা হয় নি। হয় নি তার মুখে ড্যাডি ডাক টা শোনার। নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। ভেবে নিল এখন অর্ণবের সাথে দেখা করতে যাবে। অর্ণব নিশ্চিত তাকে মিস করছে!
জন কে ডেকে আনল নির্ঝর, তাকে যেন তৈরি হতে সাহায্য করে সে। অতঃপর তৈরি হয়ে বের হয়ে গেল নির্ঝর!
#চলবে….