#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৯
বাগানে পাশেই নির্ঝর আর অর্ণব ফুটবল খেলছে। এর কাছে নারকেল গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে দুজনকে দেখছে মেহেরিন। অর্ণব কে এভাবে হাসি খুশি দেখতে খুব ভালো লাগে তার। তার এই হাসি মনে করিয়ে দেয় নিরুর কথা। নিরুর হাসিও অবিকল এমন। মা’র এই গুনটা ভালো মতোই রপ্ত করেছে অর্ণব।
অর্ণবের জন্মের পর মেহেরিন তাকে কোলে নিয়ে নিরুর পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। নিরুর জ্ঞান ফিরেছিল, অর্ণব কে দেখে আদর করে আবারো ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। মেহেরিন ঘাড় ঘুরিয়ে অর্ণবের দিকে তাকাল। নামটা তার’ই দেওয়া। দু বোন মিলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল ছেলে হলে নাম দিবে অর্ণব!
মেহেরিন দাঁড়িয়ে নিরুর সাথে কাটানো দিন গুলোতে উঁকি দিচ্ছিল। তখনই গাড়ি পার্ক করার আওয়াজ এলো। নির্ঝর আর অর্ণব খেলা বন্ধ আরে পেছনে ফিরল মেহেরিন’র সাথে। কে এসেছে এখন? শাড়ি পড়া একটা ভদ্রমহিলা কে দেখা যাচ্ছে হেঁটে আসছে। অর্ণব মুখ ফুটে বলে উঠে,
“ডঃ রাহেলা!
ডঃ রাহেলা হেসে বলেন,
“অর্ণব!
মেহেরিন এগিয়ে এসে ডঃ রাহেলা কে জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছেন?
“এই তো ভালো। এখান দিয়েই যাচ্ছিলাম ভাবলাম তোমাদের সাথে দেখা করি!
অতঃপর মুখ ফিরলেন নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে মাথা নাড়লেন। ডঃ রাহেলা হেসে বলেন,
“নির্ঝরের কারণে এখন তো অর্ণব আর আমার কাছেই আসে না।
অর্ণব হেসে নির্ঝরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে,
“ড্যাডি!
“হ্যাঁ হ্যাঁ জানি এটা তোমার ড্যাডি!
মেহেরিন হেসে ডঃ রাহেলা কে ঘরে নিয়ে যান। নির্ঝর আর অর্ণব নতুন করে খেলা শুরু করে তাদের।
ডঃ রাহেলা গরম চায়ের কাপে ফু দিয়ে চুমুক দেন। অতঃপর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলেন,
“অর্ণব কে নিয়ে তো তোমার আর চিন্তা করতে হচ্ছে না মেহেরিন।
“চিন্তা করবো না কেন?
“আহ, দেখছো না নির্ঝরের সাথে কেমন মিশে গেছে।
মেহেরিন হেসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলে,
“নির্ঝরের সাথে মেশার সাথে সাথে সবার সাথে যদি কমফোর্টেবল হতো তাহলে চিন্তা থাকতো না।
“বেশি ভেবো না। অর্ণবের গ্রোথ দেখে মনে হচ্ছে খুব জলদিই রিকোভারি করতে পারবে সে।
“এমনটা হলে তো ভালোই।
“তুমি বেশি দুঃশ্চিন্তা করছো!
মেহেরিন হেসে চায়ের কাপে আবারো চুমুক দিল। পেছন থেকে নিরবের আওয়াজ পাওয়া গেল। দরজার সাথে হেলান দিয়ে বলে উঠে,
“দুঃশ্চিন্তা সাথে করে নেওয়া মেহুর অভ্যাস হয়ে গেছে।
“আরে নিরব যে!
“কেমন আছেন ডঃ রাহেলা?
নিরবের প্রবেশ ঘটল ঘরে। মেহেরিন’র পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ল সে। ডঃ রাহেলা মুচকি হেসে বলে,
“তোমার বন্ধু কে দুঃশ্চিন্তা থেকে বাঁচানোর লোক তো এসে পড়েছে। তা এবার নিজের টা কিছু ভাবো।
নিরবের কপালে ভাঁজ পড়লো। রাহেলা হেসে উঠেন। বলেন,
“তুমি তো দেখি বুঝতেই পারছ না। আমি নির্ঝরের কথা বলছি।
নিরবের চেহারায় বিষণ্নতা দেখা গেল। তবে এটা নিয়েই হেসে দিল সে। মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে হাসার চেষ্টা করল। ডঃ রাহেলা মাঝখানে বলে উঠেন,
“হাসলেই কি হবে নাকি। নিজের টাও কিছু ভাবো।
“না আমার তেমন কেউ নেই।
মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকাল নিরবের দিকে। বলে উঠে,
“কিন্তু তুই তো বলেছিলি..
“হাম সেটা অতীত মেহু।
“তা অতীত নিয়ে কতোদিন আকড়ে থাকবে। মেহুর মতো আবারো সব শুরু করো!
রাহেলা কথা মেহেরিন’র কানে পৌঁছাল। সে চায়ের কাপে চুমুক দিতেই তার সামনে মনে হলো অতীত ভেসে উঠলো!
——-
অতীতে…
“এই মেহেরিন চা খাবে নাকি কফি!
মেহেরিন ফাইল থেকে উঁকি দিয়ে রান্না ঘরে তাকাল। সে রান্না করতে ঢুকেছে কিন্তু তাকে দিয়ে কিছুই হবে না। কারণ সে পারে না। তবুও চেষ্টা করবে। ইউটিউব থেকে চা বানানোর রেসিপি বের করেছে। এটা ভাবতেই হাসি পাচ্ছে মেহেরিন। মেহেরিন হালকা কেশে বলল,
“হাম চা, না কফি খাবো।
“আহ বলো না জলদি!
“তুমি বরং কফি বানাও..
“আচ্ছা!
বলেই চুলোয় পানি গরম করতে যাবে তখন’ই মেহেরিন বলে উঠে,
“বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। এই সময় এক কাপ গরম চা পেলে বেশ ভালো হতো।
“আচ্ছা তাহলে আমি চা বানাচ্ছি!
মেহেরিন মিটিমিটি হেসে এবার উঠে দাঁড়াল। রান্না ঘরে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“কিন্তু আমার মাথা ধরেছেন আর তুমি তো জানো মাথা ধরলে কফি না খেলে আমার মাথা ধরা কমবে না।
সে সব কিছু থেকে সরে এসে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি কি ঠিক মতো কিছু ডিসাইড করবা।
“আহ আমি কনফিউজড, সাহায্য করো। তোমার হাতের প্রথম রান্না খাবো। বিশেষ কিছু হওয়া চাই তাই নয় কি!
সে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে আমি বিশেষ কিছু বানাচ্ছি!
মেহেরিন চমকে উঠলো।দ্রুত রান্না ঘরে এলো। দেখল সে নিচে বসে কিছু একটা করতে চলেছে। মেহেরিন তার পিছনে দাঁড়িয়ে গুঁতো দিয়ে বলল,
“এই কি করছো তুমি!
সে উঠে দাঁড়াল। সামনে ফিরে বলল,
“বিশেষ কিছু বানাবো বলে ভাবছি।
“আচ্ছা তো কি সেই বিশেষ কিছু!
সে মেহেরিন’র কোমর জরিয়ে ধরল। মেহেরিন তার ঘাড়ে দুটি হাত রেখে হাঁটতে রাখল। সে বলে উঠে,
“সেটাই ভাবছি। কি জানি তোমারে ভালো লাগবে কি না।
“কি সেটা?
“টেস্ট করতে চাও!
“বলোই না!
সে মেহেরিন কে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। মেহেরিন’র বুঝতে বাকি রইল না কি হতে চলেছে। সে এই বাঁধন থেকে বের হতে চাইলো। কিন্তু ততোই আকড়ে ধরল তাকে।
“ঠিক হচ্ছে না বলে দিলাম।
“কিছুই তো করলাম না আমি?
বলেই মুখ টিপে হাসল। লজ্জায় মেহেরিন লাল হয়ে গেল। উষ্ণ গলায় বলে উঠে,
“দেখো আমি বলছি তুমি…
কিছু বলার আগেই সে তার উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া দ্বারা আঁকড়ে ধরল তাকে। এর মাঝেই হুট করেই কলিং বেল বেজে উঠলো। সে মেহেরিন কে ছেড়ে দিয়ে সরে আসলো। বিরক্ত মুখে তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন হাসতে হাসতে একাকার। মুখ ফুলিয়ে বলে উঠে ,
“হাসবে না একদম, কে এলো এখন? আমার রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে দিল।
মেহেরিন হেসে দরজার কাছে যেতে যেতে বলল,
“আমার ছেলে!
বলেই মেহেরিন এসে দরজা খুলল। অর্ণব মেহেরিন কে দেখে একগাল হেসে তাকে জড়িয়ে ধরল।
“মাম্মি!
তার সাথে মিস মারিয়া ও ঘরে এলো। সে দূর থেকে দাঁড়িয়ে এসে এসব দেখতে লাগাল। বুঝতে পারে না এই ছেলে কেন মেহেরিন কে মাম্মি বলে ডাকে। আপন মা তো নয়। এর কি তার বোঝার ক্ষমতা নেই নাকি…
—-
বর্তমানে…
“মেহু! মেহু!
মেহেরিন’র ভাবনায় ছেদ ঘটল। সামনে তাকিয়ে দেখে ডঃ রাহেলা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নিরবও তাকে দেখছে। কিন্তু এখনো সেই আওয়াজ পাচ্ছে সে। কে ডাকছে তাকে। অতঃপর আরেকটা ডাক পেলো সে..
“মাম্মি…
মেহেরিন পেছনে ঘুরল। তাকিয়ে দেখল নির্ঝর আর অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে। এতোক্ষন ধরে তাহলে তারাই ডেকে যাচ্ছে তাকে। মেহেরিন এবার জবাব দিল। নির্ঝর বলে উঠে,
“আমি আর অর্ণব শাওয়ার নিতে যাচ্ছি!
“আচ্ছা!
বলেই নির্ঝর অর্ণবের হাত ধরে পা বাড়াল। কিন্তু তার তীক্ষ্ণ চোখ খানা তখন নিরব কে দেখল। সাথে সাথে কেমন একটা বিরক্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হলো। কে জানি এই নিরব কে মেহুর সাথে দেখলে তার ভালো না। নির্ঝর মিনমিন করে বলতে লাগল,
“এই নিলব কি করছে এখানে?
ডঃ রাহেলা মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রাখলেন। মেহেরিন চমকে উঠলো। ডঃ রাহেলা বলে উঠে,
“ঠিক আছো তুমি!
“হ্যাঁ আসলে ঠিক আছি..
“আচ্ছা, খেয়াল রেখো নিজের আমি আজকে তাহলে উঠছি।
“আচ্ছা আবার আসবেন।
নিরব ও সাথে সাথে উঠে পড়ে। মেহেরিন তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“চলে যাচ্ছিস।
“হুম, আসলে পরশু মিটিং নিয়ে কিছু কাজ করার আছে। তোর সাথে আলোচনার দরকার ছিল
“হ্যাঁ তো চলে যাচ্ছিস কেন?
“আমার মনে হয় আজকে আলোচনা করার দরকার নেই। তুই রেস্ট নে। আমরা আগামীকাল এই নিয়ে কথা বলবো।
অতঃপর ডঃ রাহেলা’র দিকে তাকিয়ে একসাথে বেরিয়ে পড়ে সে। পেছন থেকে মেহেরিন বলে উঠে,
“পরশু দিনের মিটিং টা কিন্তু অনেক ইম্পর্ট্যান্টে!
“আমি জানি..
বলেই মুচকি হাসল নিরব। অতঃপর চলে গেল তারা। মেহেরিন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথায় হাত রেখে বসে পড়ল। খুব মাথা যন্ত্রণা করছে তার। সে ভাবতে চায় না এসব কিছু কিন্তু ততোই যেন তার অতীত আঁকড়ে ধরে তাকে। রাগে মেহেরিন’র ঠোঁট কাঁপছে। মাথার যন্ত্রণা তীব্র হচ্ছে। সামনে টেবিলে থাকা চায়ের কাপ গুলো রাগে উল্টে ফেলল সে। অতঃপর উঠে গেল সেখান থেকে। কিন্তু ভাঙার আওয়াজ পেয়ে মিস মারিয়া ছুটে এলেন…
—-
অনেকক্ষণ ধরে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে নির্ঝরের বাথরুমের সামনে। বাথরুমের ভেতর থেকে অর্ণবের আওয়াজ আসছে। সে পানি দিয়ে খেলছে আর হাসছে। মেহেরিন সেখানে দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিল,
“অর্ণব অনেক হয়েছে এবার বের হয়ে আসো। এতোক্ষণ পানির নিয়ে খেললে সর্দি লেগে যাবে। জ্বর আসবে একটা কান্ড বাধাবে তুমি!
মেহেরিন’র আওয়াজে তেমন কোন প্রভাব হলো না। অর্ণবের হাসির শব্দ আরো জোরে পাওয়া গেল। মেহেরিন খানিকটা বিরক্ত হয়ে দরজায় কড়া নেড়ে বলল,
“অর্ণব মাম্মি রেগে যাচ্ছে!
ভেতর থেকে এবার আর হাসির শব্দ পাওয়া গেল না। মেহেরিন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। পায়ের পাতা বার বার মেঝেতে ঠেকাল। পানির আওয়াজ বন্ধ হয়েছে অনেকক্ষণ। অর্ণব এখনো বের হয়নি।
খানিকক্ষণ পর’ই দরজা খুলল। একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে অর্ণব বের হলো। মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। অর্ণব মেহেরিন কে দেখে আবারো বাথরুমে ঢুকতে নিল। মেহেরিন তখনই অর্ণব কে ধরে ফেলল। তার হাত শক্ত করে ধরে বলল,
“কোথায় যাচ্ছ?
অর্ণব মাথা নিচু করে ফেলল। মেহেরিন খেয়াল করল তার কান লাল হয়ে গেছে। মেহেরিন মুচকি হেসে বলল,
“অর্ণবের লজ্জা করছে!
অর্ণব দ্রুত মাথা নাড়ল। মেহেরিন অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
“মাম্মির কাছে লজ্জা!
অর্ণব জোরে ডেকে উঠলো,
“ড্যাডি!
ভেতর থেকে নির্ঝর বলল,
“আসছি!
মেহেরিন হেসে অর্ণব কে কোলে তুলে বিছানায় রেখে বলল,
“জলদি চেঞ্জ করে বাইরে আসো। মাম্মি তোমার জন্য মিল্কশেক বানাচ্ছে ওকে।
অর্ণব দাঁত বের করে হেসে মাথা নাড়ল। মেহেরিন তার ভেজা চুল গুলো হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে দিল।
—
রান্না ঘরে মেহেরিন মিল্ক শেক বানাচ্ছে আর মিস মারিয়া কফি! উপর থেকে কারো আসার শব্দ পেয়ে মেহেরিন সিঁড়ির দিকে তাকাল। দেখল অর্ণব নামছে। লাল রঙের একটা টি শার্ট আর কালো রঙের ট্রাউজার পড়া সে। এতে অবাক হবার কিছু ছিল না। কিন্তু তার পিছন পিছন যখন নির্ঝর কে একইরকম টি শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে আসতে দেখল মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো!
ড্যাডি আর অর্ণব এসে ধপাস করে সোফায় বসে পড়ল। টিভি অন করল। মেহেরিন মিল্ক শেক এনে টেবিলে রাখল। তার পিছু পিছু মিস মারিয়া কফি এনে রাখল। দু’জন কে একসাথে দেখে মিস মারিয়া হেসে আবারো রান্না ঘরে গেলেন। মেহেরিন দাঁড়িয়ে দুজনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অর্ণব মিল্ক শেক’র গ্লাস হাতে নিয়ে মুখে দিয়ে মেহেরিনের দিকে তাকাল। অতঃপর নির্ঝরকে খোঁচা দিল। নির্ঝর অর্ণবের দিকে তাকালে অর্ণব হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
“মাম্মি!
নির্ঝর কে মেহেরিন কে বলল,
“তোমার আবার কি হয়েছে?
“এসব কি?
বলেই সোফায় বসল। নির্ঝর তার দিকে ফিরে বলল,
“কোন সব?
“তোমার দু’জন একরকম ড্রেস!
নির্ঝর হেসে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলে,
“গতকাল ড্যাডি আর অর্ণব শপিং এ গিয়েছিল আর এইরকম ড্রেস কিনেছে। তাই না অর্ণব!
অর্ণব হেসে মাথা নাড়ল । দুজনেই একসাথে হাইফাইভ করল। মেহেরিন দাঁড়িয়ে বলল,
“বাহ! আর মাম্মি! মাম্মির কথা ভুলে গেলে অর্ণব!
নির্ঝর আর অর্ণব দু’জনেই তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে চলে গেল!
—–
নির্ঝরের চুলে কতো গুলো রঙিন কাগজ আটকে আছে। অর্ণব একটু পর পর আঠা দিয়ে এগুলো ওর মাথায় লাগাচ্ছে। এদিকে নির্ঝর কাগজের প্ল্যান বানাতে ব্যস্ত যার কারণে অর্ণবের কোন কান্ড কারখানা সে বুঝতে পারছে না। মেহেরিন হাতে স্যুট নিয়ে বের হয়েছে অফিসে যাবার উদ্দেশ্যে। বাইরে এসে এমন কান্ড দেখে সে নিরব দর্শকের মতোই তাকিয়ে রইল। বুঝতে পারছে না অর্ণব কি করছে। অর্ণব কি নির্ঝর কে কোন গাছ বানাতে চাইছে নাকি।
বাইরে থেকে গাড়ির আওয়াজ আসল।মেহেরিন চোখের পলক ফেলে অর্ণব কে বলল,
“মাম্মি চলে যাচ্ছি অর্ণব!
অর্ণব মেহেরিন’র দিকে না তাকিয়েই মাথা নাড়ল। মেহেরিন আবারো বলে উঠল,
“নির্ঝর অর্ণবের খেয়াল রাখবেন, আমি যাচ্ছি!
নির্ঝরও অর্ণবের মতোই মাথা নাড়ল! মেহেরিন কিছুক্ষণ অদ্ভুত ভঙিতে তাদের কার্যকলাপ দেখল। তারা তাদের কাজের মধ্যেই আছে। সে বিদায় দিয়ে বেড়িয়ে গেল। কিন্তু মনে হলো না তার কথা কেউ শুনতে পেরেছে।
বহু কষ্টে একটা প্ল্যান বানাতে সক্ষম হলো নির্ঝর। এটা হেসে অর্ণবের হাতে দিল সে। অর্ণব নির্ঝরের মাথার চুল ছেড়ে সেটাই উড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কলিং বেল বেজে উঠল। মিস মারিয়া বাসায় নেই, বাইরে গেছে। নির্ঝর নিজেই উঠলো দরজা খোলার জন্য। সে দরজা খুলতেই দেখতে পেলো ফরহাদ, আরিফ আর ঈশান দাঁড়িয়ে আছে। তারা নির্ঝর কে দেখে হাসির বন্যা বানিয়ে ফেলল। নির্ঝর ফ্যাল ফ্যাল রয়ে চেয়েই রইল। তাদের হাসির রহস্য তার মাথায় ঢুকলো না।
“এতো হাসির কি আছে?
“তুই কি ক্রিসমাস ট্রি সেজেছিস নাকি!
“মানে..
ফরহাদ নির্ঝর কে টেনে ঘরে নিয়ে এলো। আয়নার সামনে দাড়ঁ করালো। নির্ঝর নিজেকে নিজে দেখেই গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। সবাই মিটিমিটি হাসছে। নির্ঝর চুল থেকে একটা কাগজ সরানোর পর সবাই কে উদ্দেশ্য করৈ বলে,
“এতে হাসির কি আছে, যখন তোরা বাপ হবি তখন বুঝবি!
বলেই আয়না থেকে সরে আসল। অর্ণব দৌড়াতে দৌড়াতে ফরহাদের কাছে আসল। ফরহাদ অর্ণব কে কোলে তুলে নিল। আরিফ হেসে বলল,
“অর্ণব তার ড্যাডি কে একটা ক্রিসমাস ট্রি বানাতে চেয়েছিল তাই তো অর্ণব!
অর্ণব হেসে মাথা নাড়ল। বলে উঠে,
“ড্যাডি!
নির্ঝর হেসে অর্ণবের দিকে তাকাল। তাকে কোলে তুলে নিল সোফায় বসাল। সবাইকে বসতে বলে রান্না ঘরে চলে গেল। কিছু কোল ড্রিক আর নাস্তা এনে দিল সবাই কে। এর সাথে অর্ণবের খাবার।
ঈশান বলে উঠে,
“মেহেরিন কোথায়?
নির্ঝর বলে,
“হাম ঘরে হয়তো!
আরিফ বলে উঠে,
“খানিকক্ষণ আগে দেখলাম গাড়ি নিয়ে চলে যেতে আর তুই বলছিস ঘরে!
অর্ণব চামচে করে খাবার মুখে দিয়ে নির্ঝরের দিকে তাকাল আর নির্ঝর অর্ণবের দিকে। কখন গেল মেহেরিন? তারা কেউই টের পেলো না। আদৌও সম্ভব এটা। বাপ ছেলের এমন চাহনিতে পুরো রুম জুড়ে হাসির শব্দ পাওয়া গেল!
ফরহাদ, ঈশান আর আরিফ এবার কাজে লেগে গেছে।অর্ণবের সাথে বসে তিন জনই লেগো দিয়ে টাওয়ার বানাতে ব্যস্ত। নির্ঝর কোল্ড ড্রিক খাচ্ছে আর ওদের তিন জনকে দেখছে। এখানে অনেক গুলো মার্বেল ও পড়ে আছে। নির্ঝর ভাবতে লাগল এগুলো এভাবে পড়ে থাকলে অর্ণব হাঁটতে গিয়ে পড়ে যাবে। তখন আরেক অঘটন ঘটে যাবে। সে একটা বাটি নিয়ে এগুলো একত্র করতে লাগলো।
সব গুলো মার্বেল’ই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নির্ঝর এগুলো একটা একটা করে টোকাতে নিল। একটা মার্বেল কোন একটা ঘরের নিচ দিয়ে ভেতরে চলে গেল। নির্ঝর উঠে সেই ঘরের দিকে তাকিয়ে রইল। স্টোররুম এইটা। এই ঘরের দিকে তাকিয়ে রইল সে। এই ঘরটা কখনো দেখে নি সে। দেখবে কি করে। বাড়ির একদম শেষের দিকে এই ঘর। কখনো আসা হয় নি এই ঘরে। নির্ঝরের কৌতুহল হল। ঘরের দরজাটা খুলে প্রবেশ করল সে। ঘরটা অন্ধকারে আচ্ছন্ন। নির্ঝর ঘরে আলো জ্বালালো। মূহুর্তের সামনে থাকা ছবির ফ্রেম টা নজর কারল তার। মেহু আছে সেখানে। তার সাথে শুভ্র আর নিরু। কিন্তু নির্ঝর এদের কাউকেই চিনে না তবুও ধরে নিল সে।
নির্ঝর এগিয়ে ছবিটার দিকে হাত বাড়াল। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ছবিটার দিকে। তেমন কিছু নেই এই ঘরে। নির্ঝর চারদিকে চোখ বুলাল। আবারো একটা ছবি পেলো সে। একটা কাগজের ভিতরে সেই ছবি টা। ছবির কিছুটা অংশ বেরিয়ে আছে। নির্ঝর ছবি টা বের করল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে ছবিতে। দুজনকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে। নির্ঝর ছবিটার দিকে তাকিয়ে হুট করেই বলে উঠে,
“মেহু!
#চলবে….