#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২০
[ আজকের পর্ব অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশিই বড় হয়েছে। তাই যারা ফেসবুক লাইট দিয়ে গল্প পড়েন হয়তো এই পর্ব ফেসবুক লাইটে সো করবে না। ]
গোধূলির সময়, পুরো আকাশ লাল রঙ ধারণ করেছে। সূর্য আর্ধেক ডুবে যাচ্ছে। সমুদ্রের শেষ কিনারায় সূর্যের সেই ডুবে যাবার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে জলে। জলের ছবি টা বাতাসে দোল খাচ্ছে। মেহেরিন তার হাত ধরে দেখছে সেই ছবি। সে মেহেরিন’র হাত শক্ত করে ধরে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পেছন থেকে একজন ফটোগ্রাফার সেই ছবি তুলছে।
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে দেখছে সেই ছবি। মেহু কে দেখছে কিন্তু কে তার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে তা বুঝতে পারছে না সে। কারণ ছবি টা পুড়ে গেছে। ছবির অর্ধেক পুড়ে গেছে নাকি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মেহু যার হাত ধরে দাঁড়িয়ে দিয়েছে তাকেই পুড়িয়ে ফেলেছে কিন্তু সম্পূর্ণ ছবি টা পুড়ায় নি। কেন পুড়ালো না। এর মানে কি?
এর মানে কি এটাই, সেই লোকটা এই ছবির মতো তার জীবন থেকেও পুড়িয়ে ছাই করে ফেলেছে সে। নাকি অতীতে ঘটে যাওয়া পুরোনো কোন ক্ষত এটা! কি হয়েছিল? মেহুর অতীত কি খুব দীর্ঘ! খুব কি ভালোবাসতো সে তাকে…
নির্ঝরের বুকে হুট করেই ব্যাথা শুরু হলো। কেন জানি কথাটা তার পছন্দ হয় নি। তার মন এই কথাটা সহ্য করতে পারে নি। নির্ঝর বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। বড় বড় শ্বাস নিল। বুকের ব্যাথা টা একটু হলেও কমেছে। নির্ঝর মুখ খুলে শ্বাস নিচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। ছবিটা হাতে মুষ্টিবদ্ধ করে জলদি বাইরে বেরিয়ে এলো সে। দরজা বন্ধ করে দ্রুত চলে আসে বসার ঘরে।
—–
ফাইলে মুখ গুজে বসে আছে মেহেরিন। অফিসের ব্যস্ততায় লাঞ্চ করা হয় নি তার। অর্ণবের একটা খবর ও নেওয়া হয় নি। খাবার কি খেয়েছে সে? কি করছে এখন?
মেহেরিন ফাইল থেকে মুখ সরিয়ে অর্ণব কে ফোন দিল। কিছুক্ষণ পর’ই অর্ণব কল রিসিভ করল।
“মাম্মি!
অর্ণবের গলার স্বর পেয়ে মেহেরিন’র এতোক্ষণের ক্লান্তি কেটে গেল। মেহেরিন কিঞ্চিত হেসে বলল,
“কি করছ অর্ণব!
“খাবার খাচ্ছি!
“ওহ আচ্ছা! ড্যাডি কোথায়?
অর্ণব ফোন টা নির্ঝরের দিকে দিল। নির্ঝর ফোন টা কানে নিয়ে বলল,
“বলো!
“অর্ণব ঠিক আছে তো!
“আমার সাথে আছে, ঠিক থাকবে না কেন?
“হুম জানি আপনার সাথেই আছে। একটু দেখে শুনে রাখবেন। রাতে ফিরতে দেরি হতে পারে।
“আচ্ছা!
হুট করেই গাড়ির হর্ণ বাজার আওয়াজ আসল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“আপনারা কি বাসায় নেই।
“হ্যাঁ আমরা বাসায়!
“তাহলে গাড়ির হর্ন বাজল যে..
“ওই ফরহাদের গাড়ি। তারা চলে যাচ্ছে।
“ওহ আচ্ছা! আমি রাখছি তাহলে..
“হুম!
নির্ঝর ফোন রেখে সামনে তাকাল। ফরহাদ ওরা অনেকক্ষণ ধরেই হাসি বন্ধ করে রেখেছিল। নির্ঝর ফোন রাখতেই সবাই হো হো হেসে উঠলো। অর্ণব ও দাঁত বের করে হাসল। নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে সিটে আরাম করে বসল। ফরহাদ বলে উঠে,
“মিথ্যে বলার কি দরকার ছিল?
“এমনেই!
ঈশান বলে উঠে,
“এভাবে এভাবে কেউ মিথ্যে কথা বলে নাকি!
নির্ঝর অর্ণবের দিকে তাকাল। পির্জা খেতে গিয়ে তার মুখে চিজ লেগে আছে। নির্ঝর টিস্যু নিয়ে তা মুছে দিল। আরিফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“অর্ণব এসব আনহেলদি খাবার বাইরে এসে খাচ্ছে এটা জানলে মেহেরিন রেগে যাবে তাই!
নির্ঝরের চোখ স্থির হয়ে গেল। সে আরিফের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলল। সেদিনের রাতের কথা, মেহেরিন খুব ভালো ভাবেই বলে গেছে নির্ঝর কে.. তার বিয়ার খাওয়া থেকে শুরু করে সব বাজে খাবার এর সাথে অর্ণবের বার্গার, পির্জা, আইসক্রিম ইত্যাদি ইত্যাদি এসব বন্ধ। মেহেরিন কথা গুলো ভালো ভাবে বললেও নির্ঝরের শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। কারণ তার কথায় ধার ছিল। কিভাবে কথা বলে এ মেয়ে। একটা মেয়ের কথা শুনল কোন ছেলের এমনটা কি হতে পারে। শুধু তাই নয়, নির্ঝর যখন মেহেরিন’র সাথে কথা বলে তখন তার চোঁখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না। ইদানিং এমনটা হচ্ছে। সে জোর করে তাকিয়ে থাকতে চাইলেও তাকিয়ে থাকতে পারে না। এমনটা মনে হয় তার চোখ কিছু বলতে চায় তাকে তবে সেটা শ্রবণ করার ক্ষমতা নির্ঝরের মধ্যে নেই। নির্ঝর শুকনো ঢোক গিলে তখন বলল,
“আ..আচ্ছা!
মেহেরিন এক পা সামনে এগিয়ে আবারো সেই ধারালো কন্ঠেই বলে গেল,
“আচ্ছা বললেই হবে না, বাড়িতে এসব খাবার আসবে না। আর আমি না থাকলে বাইরে গিয়ে এসব খাবার খাওয়া তো ভুলেও চলবে না। মনে থাকবে..
নির্ঝর দ্রুত মাথা নাড়ায়। মেহেরিন কিঞ্চিত হেসে চলে যায়। নির্ঝর যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
ফরহাদের আওয়াজে নির্ঝরের ঘোর কাটল। চোখের পলক দ্রুত ফেলে ফরহাদের দিকে তাকিয়ে রইল। অর্ণবে কিট কিট হাসির শব্দ নির্ঝর পাচ্ছে। তার সামনে পানির গ্লাস টা তুলে ধরল সে।
—–
অর্ণবের কল কেটে মেহেরিন সিটে চোখ বন্ধ করে বসল। কেবিনে কেউ আসার শব্দ পেল তখন। চোখ মেলতে ইচ্ছে করল না তবে সে চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারে এটা নিরব। তাকে চেনার নতুন উপায় ছিল তার পারফিউম। নিরব কি একটা পারফিউম বেশ কয়েকদিন ধরে ব্যবহার করছে। তবে এটার ঘ্রাণ মেহেরিন’র তেমন একটা পছন্দ হয় নি। আর হয় নি বলেই ভালো মনে থাকে। এটা কেমন কথা?
নিরব চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
“না খেয়ে এভাবে বসে আছিস?
“ইচ্ছে করছে না।
নিরবের নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ এলো। মেহেরিন আলসেমি ছেড়ে চোখ মেলে তাকাল। বলে উঠে,
“তুই এখনো লাঞ্চ করিস নি!
“না, ভেবেছি একসাথে করব।
মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। নিরব হেসে বলল,
“সামনেই শপিং মলে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে চল!
মেহেরিন জবাব না দিয়েই পা বাড়াল!
অর্ণব বাচ্চাদের প্লে গ্রাউন্ডে! নির্ঝরের হাতে বিয়ারের বোতল। এক কোনে দাঁড়িয়ে চার বন্ধু বিয়ার খাচ্ছে। সেখান থেকেই নির্ঝর অর্ণবের উপর খেয়াল রাখছে। অর্ণব পারছে না বাকি বাচ্চাদের সাথে মিশতে। তার হাতে একটা খেলনা রোবট। এটা অবশ্য তার। বাসা থেকেই এনেছে। সেটা হাতে আঁকড়ে ধরে বাকি বাচ্চাদের দেখছে সে। তার চোখ ভয়ে ছোট হয়ে আসছে। গলা শুকিয়ে আসছে তার।
একটা বাচ্চা উঠে তার কাছে আসলো। তাকে দেখে অর্ণব ভয়ে তার রোবট টা লুকিয়ে ফেলল। বাচ্চা টা অর্ণবের হাত থেকে সেই রোবট নেবার জন্য’ই উঠেপড়ে লাগল। অর্ণব দু হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ড্যাডি বলে ডাকতে লাগল।
ড্যাডি বলে ডাকার সাথে সাথেই তার মাথায় কেউ হাত বুলাল। অর্ণব উপরে তাকিয়ে দেখল নির্ঝর। সে আবারো তার দিকে তাকিয়ে ড্যাডি বলে ডাকতেই সেই বাচ্চা টা তার হাত থেকে রোবট টা ছিনিয়ে নিল। অর্ণব নির্ঝর কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। নির্ঝর অর্ণব কে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগল। ফরহাদ এসে সেই বাচ্চা কে বলল,
“তুমি ওর খেলনা কেন ছিনিয়ে নিচ্ছ, এটা কি ভাল?
বাচ্চা টা সাথে সাথে উওর দিল,
“এটা আমার রোবট!
আরিফ বলে উঠে,
“আচ্ছা তাই নাকি, তা রোবটের গায়ে কি তোমার নাম লেখা আছে নাকি!
বাচ্চা টা চুপ হয়ে গেল। ঈশান বলে উঠে,
“কারো জিনিস এভাবে ছিনিয়ে নেওয়া কতো বড় খারাপ কাজ জানো। আমি পুলিশ কে বললে সে তোমাকে নিয়ে যাবে। ভালো লাগবে তখন..
বাচ্চা টা আবারো বলে উঠে,
“এটা আমার রোবট!
নির্ঝর অর্ণবের কান্না থামাল। অর্ণব কাঁদো কাঁদো মুখে বাচ্চা টার দিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর তাকে কোল থেকে নামিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিল। কপালে চুমু খেয়ে বলল বাচ্চাটা কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“রোবটের গায়ে তোমার নাম লেখা দেখাও। না দেখাতে পারলে আমি এখন পুলিশ কে ডেকে তোমাকে ধরিয়ে দেব। বলব একটা বাচ্চার কাছ থেকে এটা কেড়ে নিয়েছ। তাকে কাঁদিয়েছো!
নির্ঝরের কথায় বাচ্চা টা ভয় পেয়ে গেল। রোবট টা ফেলে দিয়ে কান্না শুরু করল। আম্মু বলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেল। অর্ণব এসে পড়ে থাকা সেই রোবট তুলে নিল। নির্ঝর হাত ধরে বেরিয়ে এলো সে!
নির্ঝর এক হাত দিয়ে অর্ণব কে শক্ত করে ধরে আছে। অন্য হাত দিয়ে বিয়ার খাচ্ছে আর ঘুরছে। তার সাথে বাকি সবাইও ঘুরছে। নির্ঝর বিয়ারের বোতলে মুখ দিয়ে সামনে তাকাতেই চমকে গেল। অর্ণব সামনে তাকিয়ে জোরে বলে উঠে,
“মাম্মি!
সবাই সামনে তাকাল। বাকি সবাইও চমকে উঠল। নিরব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের কাছে। অর্ণব নির্ঝরের হাত ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে মেহেরিন’র কাছে চলে এলো। নির্ঝর মুখে থাকা বিয়ার খুব কষ্টে গিলল। বলে উঠল,
“মেহু!
মেহেরিন শান্ত ভাবেই তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে।
আর্ধেক খাওয়া বিয়ারের বোতল টা ফেলে দিয়েছে নির্ঝর। খুব খারাপ লাগছে তার। নির্ঝরের হাত ধরে অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে। একবার তাকায় মেহেরিন’র দিকে তো একবার নির্ঝরের দিকে। মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝরের এই চাহনি সহ্য হচ্ছে না।কেন কিছু বলছে না মেহেরিন। সে নিজ থেকেই বলে উঠল,
“সরি!
মেহেরিন দু হাত বাহুতে গুঁজে বলল,
“কেন সরি!
“মিথ্যে বলেছিলাম,বাসায় ছিলাম না আমি।
মেহেরিন হুট করেই হেসে উঠল। বাকি সবাই নিরব দর্শকের মতো তাকিয়ে আছে। মেহেরিন বলে উঠে,
“ভুল শুধু এটা না আরো একটা করেছেন।
নির্ঝর কিছু না বলে অর্ণবের হাত শক্ত করে ধরে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে নিল। মেহেরিন অর্ণবের কাছে এসে গাল হাত রেখে বলল,
“লাঞ্চ এ কি খেয়েছ?
মেহেরিন’র কথায় অর্ণব ও নির্ঝরের মতো হুবহু মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে নিল। মেহেরিন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি মানা করেছিলাম তো তাহলে কেন?
অর্ণব হুট করে নির্ঝরের পেছনে লুকিয়ে পরল। পেছন থেকে তার শার্ট আকড়ে ধরল। নির্ঝর বলে,
“একদিন’ই খেয়েছে!
মেহেরিন বলে উঠে,
“অর্ণব এদিকে আসো!
অর্ণব পেছন থেকে মাথা নাড়িয়ে না না বলে। ফরহাদ এসব দেখে ফিক করে হেসে দেয়। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়।
মেহেরিন কিছু বলতে নিবে তখনই সেখানে কারো উপস্থিতি ঘটল। বাচ্চা টা নির্ঝর কে দেখিয়ে মা
কে বলছে, এই লোক তাকে মেরেছে!
বাচ্চার মা রাগী দৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝরের সামনে এসে অনেক কথা বলল। নির্ঝর হুট করে এমনটা হওয়ায় থতমত খেয়ে গেল। বাকি সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মহিলা টা বলছেন,
“কোন আক্কেল নেই আপনার, একটা বাচ্চা কে কিভাবে কাঁদান আপনি। এরকম লোক আমি আমার জন্মে দেখে নি আমি। কি কুৎসিত মন আপনার। একটা বাচ্চা কে কাদানোর আগে একবার ও খারাপ লাগালো না আপনার। নিজের সন্তানকে কি এভাবে কাঁদান।
নির্ঝর কিছু বলতে নিবে তার আগে মেহেরিন বলে উঠে,
“এই যে মিসেস! একটু বেশি বলছেন না আপনি!
মহিলা টা মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে ককর্শ গলায় বলে উঠে,
“কে আপনি?
“ওয়াইফ হই উনার! আপনি কে আর হয়েছে কি?
“কি হয়েছে নিজের এই বিবেকহীন হাসবেন্ড কে জিজ্ঞেস করুন। শুধু শুধু আমার বাচ্চা কে বকেছে। বলে কি না পুলিশে দেবে। কিসব কথাবার্তা এগুলো। ছোট বাচ্চা কে এসব কে বলে!
মেহেরিন’র কপালে ভাঁজ পরল। সে নির্ঝরের দিকে তাকাল। ফরহাদ বলে উঠে,
“এসব কথা তখন বলে যখন বাচ্চা ভুল করে। আপনার উচিত আপনার বাচ্চা কে শিখানো অন্যের জিনিস না বলে কেড়ে নিতে হয় না। একে তো এসব শিখান না আবার এখানে এসেছেন একথা বলার জন্য!
মহিলা রেগে ফরহাদের দিকে তাকাল। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি পুলিশে দেবার কথা বলেছেন।
নির্ঝর মাথা নাড়ল। অতঃপর বলল,
“আমি এইভাবে বলি নি। তাকে বোঝানোর জন্য বলেছি। অন্যের জিনিস ছিনিয়ে নেওয়া খারাপ কাজ। পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে…
মহিলা আবারো ককর্শ গলায় বলে উঠে,
“বাহ এতো টুকু বলায় আমার ছেলে তাহলে কাদলো। আর কিছু বলেন নি আপনি!
মেহেরিন চোখ বুলিয়ে অর্ণবের দিকে তাকাল। অর্ণব হাতের রোবট টা আকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন’র মনে হলো হয়তো এই রোবট সেই বাচ্চা কেড়ে নিয়েছিল। সে চোখ বন্ধ করে শান্ত গলায় মহিলাকে বলল,
“প্রথমে আপনি নিজের কথা বলার ধরন ঠিক করুন।
“কি বললেন আপনি, আমার কথা বলার ধরন খারাপ।
“খারাপ না বাজে! নিজের বাচ্চার সামনে এভাবে কথা বললে আপনার বাচ্চা আপনার থেকে কি শিখবে! অনেক তো জ্ঞান দিচ্ছেন অন্য কে নিজে কিছু রাখুন।
মহিলা চুপ হয়ে গেল। মেহেরিন ফরহাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কোথায় ঘটেছে এই ঘটনা?
“বাচ্চাদের প্লে গ্রাউন্ডে! অর্ণবের রোবট টা এই বাচ্চা কেড়ে নিয়েছিল। অর্ণব কাঁদছিল। আমরা শুধু বাচ্চা টাকে বুঝিয়ে রোবট দিতে বলেছি!
মহিলা এবার কিছু বলতে নিবে তার আগে মেহেরিন তার সিকিউরিটি কে ডাক দিল। বলল,
“প্লে গ্রাউন্ডের সিসি টিভি ফুটেজ নিয়ে আসো। কি হয়েছিল তা দেখলেই জানা যাবে। কে কি করেছে সেখানে দেখলেই বোঝা যাবে। আসলে দোষ টা কে করেছে দেখতে হবে।
বলেই বাচ্চাটার দিক তাকাল। বাচ্চা টা যথেষ্ট বড়! মেহেরিন’র চাহনি দেখে বাচ্চা টা মায়ের পিছনে লুকিয়ে পড়ল। মেহেরিন হেসে বলল,
“মনে হচ্ছে এবার আপনার বাচ্চা’ই আপনাকে বলবে আসলে কি হয়েছিল। তার দোষ টা কোথায়? আর তা না হলে সিসি টিভি ফুটেজ তো আছে। দেখে নিবেন!
বলেই অর্ণব কে কোলে তুলে নিল মেহেরিন। নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“চলুন!
নির্ঝর এসে মেহেরিন’র পাশে পাশে হাঁটতে লাগল। মহিলাটা তাদের যাবার পানে তাকিয়ে রইল! বাইরে আসতেই মেহেরিন অর্ণব কে কোল থেকে নামাল। ভ্রু কুঁচকে তাকাল নির্ঝরের দিকে। নিরব মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
“রাগ কমা এবার!
মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অর্ণব এসে নির্ঝরের হাতের মাঝে নিজের হাত গুটিয়ে নিল। মেহেরিন হেসে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সাবধানে বাসায় যাবেন।
নির্ঝর মাথা নাড়ল। নিরব এসে গাড়ির দরজা খুলল। মেহেরিন ভেতরে বসল। নিরব অর্ণবের মাথায় হাত রেখে বলল,
“মাম্মি কে রাগিও না অর্ণব!
অর্ণব কঠিন মুখ করে তাকিয়ে রইল। নিরব অর্ণবের মাথার চুল এলোমেলো করে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর মুখ সরিয়ে নিল। নিরব গাড়িতে এসে বসল। অর্ণব তার মাথা ঝাঁকিয়ে চুল গুলো আরো এলোমেলো করল। সবাই ওর কান্ড দেখে হেসে দিল।
—-
অর্ণব নির্ঝরের কাঁধে চড়ে বসে আছে। নির্ঝর তাকে নিয়ে পুরো ঘরে দৌড়াদৌড়ি করছে। লাফাতে লাফাতে নির্ঝর এসে বিছানায় ধপাস করে বসল। অর্ণব খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করল। নির্ঝর তার হাসি দ্বিগুণ করার জন্য শুড়শুড়ি দিতে লাগল। দু’জনে মিলে পুরো ঘর অগোছালো করল। গাড়ির শব্দ আসার সাথে সাথে অর্ণব বিছানা থেকে নামল। মাম্মি এসেছে! কিন্তু এবার আর গাড়ির কাছে গেল না। বসার ঘরে এসে সোফার পিছনে লুকিয়ে পড়ল। নির্ঝর তাকে দেখে মুচকি হাসল। সে বাড়ি থেকে বের হয়ে সদর দরজার দিকে আগাল।
বাইরে এসে দাঁড়িয়ে দেখল নিরব মেহেরিন’র মাথায় হাত রেখে চুল গুলো এলোমেলো করছে। নির্ঝর ভ্রু কুচকালো। আরেক পা এগিয়ে সামনে এলো। নিরব মেহেরিন কে এক হাত দিয়ে হাগ করল। নির্ঝর এবার চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন’র হেসে নিরব কে বিদায় দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখল নির্ঝর। পেছনে উঁকি মেরে বলল,
“অর্ণব কোথায়?
নির্ঝর ঠোঁটের কোনে হাসি টেনে বলে,
“ঘরে লুকিয়ে আছে!
“আচ্ছা!
বলেই মেহেরিন বাড়ির দিকে এগোয়। নির্ঝর নিরবের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। অতঃপর বাড়ির দিকে পা বাড়াল। হুট করেই নিরব ডাকল নির্ঝর কে। নির্ঝর পিছনে ফিরল। নিরব বলে উঠে,
“এক কাপ কফি খাবে আমার সাথে!
নির্ঝর মিন মিন করে বলল,
“আবারো বাড়ির ভেতরে ঢোকার ধান্দা!
নির্ঝর হেসে একটু সরে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বাড়িতে আসতে বলল। নিরব হেসে বলল,
“না বাড়িতে না, অন্য কোথাও? গাড়িতে এসে বসো!
বলেই নিরব এসে গাড়িতে বসল। নির্ঝর মিন মিন করে বলল,
“বাইরে! তার মানে একা কিছু বলবে? এর মানে তো অন্য ধান্দা। মতলব কি এই নিলবের!
নিরব গাড়ির হর্ন বাজাল। নির্ঝর ফোন করে গাড়ির দিকে আগাল। গাড়ির ভেতর বসে মেহেরিন কে মেসেজ করে বলল নিরবের সাথে বের হয়েছে। নিরব এর মাঝেই গাড়ি স্টার্ট দিল। নির্ঝর মেসেজ শেষে ফোনটা রাখল। নিরব বলে উঠে,
“তোমার আগের স্বভাব এখনো আছে?
নির্ঝর ভ্রু কুচকালো। বলে উঠল,
“আগের স্বভাব মানে..
নিরব হাসল। নির্ঝরের মনে হলো তাকে উপহাস করল। নির্ঝর রাগ কমানোর জন্য বাইরে তাকিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল।
টেবিলের এক পাশে নির্ঝর আর অপর পাশে নিরব। ওয়েটার কফি দিয়েছে অনেকক্ষণ! কিন্তু নির্ঝরের খেতে ইচ্ছে করছে না। সে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কফি মগের দিকে। নিরব কফি মগে চুমুক দিয়ে বলল,
“খেয়ে দেখো ভালো লাগবে, আমার খুব পছন্দের জায়গা এটা!
নির্ঝর ভেংচি কেটে বিরবির করে বলল,
“এজন্য আমার পছন্দ না।
নিরব বলে উঠে,
“মেহেরিন’র ও খুব পছন্দ। আর বিশেষ করে এই কফি টা!
নির্ঝর দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে কফি মগে হাত রাখল। নিরব হেসে বলল,
“মনে হচ্ছে তুমি বিরক্ত!
নির্ঝর মাথা তুলে নিরবের দিকে তাকাল। নিরবের মুখ হাসি হাসি! নিরব টেবিলে হাত রেখে খানিকটা ঝুঁকে বলল,
“আমাকে দেখে বিরক্ত তুমি!
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বলে উঠল,
“না!
নিরব চট করে বলে উঠে,
“তবে আমি বিরক্ত!
নির্ঝর একটা ধাক্কা খেল। নিরব আবারো কফি মগে চুমুক দিল। নির্ঝর বলে উঠে,
“কারণ টা কি?
“কারন আমার মনে হয় তুমি মেহু’র জন্য সঠিক না!
নির্ঝর মিন মিন করে বলল,
“আবার মেহু!
নিরবের কথায় নির্ঝর হেসে দিল। এবার কফি মগে চুমুক দিল সে। নিরব বলে উঠল,
“উপহাস করছো?
“তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো বলোতো?
“তুমি ঠিক কি শুনতে চাও!
নির্ঝর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই কথা তো জানো আমি ১ বছর পর চলে যাবো। তবুও এতো ভয় তোমার?
“এই ১ বছর কে ১ যুগ মনে হচ্ছে আমার।
“এতো ভয় থাকলে বিয়ে টা তুমিই করে নিতে!
নির্ঝরের কথার উওর নিরব দিল না। শুধু কফি মগে চুমুক দিয়ে অন্যপাশে তাকাল। নির্ঝর হেসে উঠলো। নিরব মুখ কঠিন করে বলে উঠলো,
“দুরত্ব বজায় রাখো মেহুর কাছ থেকে!
নির্ঝর হাসল কিছু বলল না।নিরব ঠোঁট ভিজিয়ে বলে উঠে,
“একবার এই ভুল করেছি, এবার না। মেহু কে এবার আমি আর কষ্ট পেতে দেবো না।
নির্ঝর মাথা ঝাঁকিয়ে আবারো কফি মগে চুমুক দিল। নিরব মুখ খুলে শ্বাস নিয়ে বলল,
“মেহুর কিছু হলে আমি তোমাকে ছাড়বো না।
নির্ঝর এবার একটু বেশিই হাসল। উঠে দাঁড়াল। নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কফির জন্য ধন্যবাদ! এবার থেকে মেহুর যা পছন্দ আমার পছন্দ তাই হবে।
নিরব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“ইউ!
“নির্ঝর চৌধুরী! মেহেরিন বর্ষা খান এর হাসবেন্ড!
বলেই দাঁত বের করে হেসে চলে গেল। রাগে নিরবের শরীর কাঁপছে। সে রেগে টেবিলের কফি মগ গুলো ছুঁড়ে মেরে টেবিলে বাড়ি মারল। ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগল!
—–
সকাল সকাল মেহেরিন তৈরি হচ্ছে। ইম্পর্ট্যান্টে মিটিং আছে আজ! নির্ঝরের ঘুম আজ একটু আগেই ভাঙল। সে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখল মেহেরিন অর্ণবের কপালে চুমু খাচ্ছে। নির্ঝর মেহু বলে ডাকায় মেহেরিন তার দিকে ফিরল। মিষ্টি একটা হাসি দিল। নির্ঝরের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। মেহেরিন বলল,
“ধন্যবাদ! রাতে অর্ণব কে নিজের কাছে রাখার জন্য। আমার অফিসের বাকি কাজটা আমি শেষ করতে পেরেছি!
নির্ঝর তোয়ালে রেখে বলে উঠল,
“ধন্যবাদ দেবার কিছু নেই। অর্ণব তার ড্যাডির সাথে ঘুমিয়েছে!
মেহেরিন হাসল। নির্ঝর মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল সেই হাসির দিকে। বাইরে থেকে গাড়ির আওয়াজ আসল। মেহেরিন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে যেতে হবে, নিজের খেয়াল রাখবেন আর..
“অর্ণবেরও!
“আসছি আমি!
বলেই মেহেরিন দ্রুত বেরিয়ে গেল। নির্ঝর এসে বেলকনিতে দাঁড়াল। নিরব গাড়ি থেকে বের হয়েছে। মেহেরিন এসে দাঁড়াল গাড়ির সামনে। নিরব তার মাথায় হাত রেখে আবারো চুল গুলো নাড়ল। নির্ঝর রেগে হাত মুঠো করে নিল। নিরব গাড়ির দরজা খুলে মেহেরিন কে ভেতরে বসাল। অতঃপর নিজে বসার আগে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। নিরব গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। নির্ঝর হেসে মাথায় হাত রাখল। চুল গুলো এলোমেলো করে বলে,
“সারপ্রাইজ দিতে আবার বেশ ভালো লাগে..!
#চলবে….