#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_২৪
“ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি! আমি তোমাকে ভালোবাসি মেহেরিন! এবার তুমি বলো.. ভালোবাসবে কি আমায়?
গাঢ় গোলাপ হাতে নিয়ে হাঁটু গেড়ে মেহেরিন কে প্রপোজ করল সে। মেহেরিন’র ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে। অনেকদিন ধরেই এটার অপেক্ষায় ছিল সে। তার ভালোবাসার প্রকাশ অবশেষে হয়েই গেল। সে কতোটা ভালোবাসে এবার বলতে পারবে তাকে। মেহেরিন বিলম্ব না করে গোলাপ টা হাতে নিয়ে তার দিকে ঝুকল। তার এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে নেড়ে বলল,
“ভালোবাসি!
সে একটা মিষ্টি হাসির সাথে দাঁড়িয়ে গেল। জড়িয়ে ধরল তাকে। রাতের এই খোলা আকাশের নিচে তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থাকবে। সমুদ্রের পাশ থেকে ঢেউয়ের শব্দ ভেসে আসছে। মেহেরিন দু হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে সেই শব্দ শুনে যাচ্ছে। হুট করেই শীত লাগছে তার। সে আরো গুটিসুটি মেরে তার বুকের মাঝে ঢুকে যাচ্ছে।
গায়ের জ্যাকেট টা খুলে মেহেরিন’র গায়ে দিয়ে দিল সে। সামনেই আগুন ধরানো হয়েছে। মেহেরিন কে সেখানে বসিয়ে গিটার হাতে নিল সে। গিটারের সুর বাজাতে লাগল তার সাথে গান ধরল সে..
“মিলে হো তুম হামকো
বডে নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যানে
কিসমত কি লেকেরোন সে
তেরে মহব্বত সে সাসেই মিলি হৈ
সাদা রেহনা দিল মেং কারিব হোকে
(মিলে হো তুম হামকো
বডে নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যানে
কিসমত কি লেকেরোন সে)…..
সেই দিনের এক গান আজও ভেসে আসছে মেহেরিন’র কানে। সে যাবার পর এই গান আর কখনো শুনে নি সে। ঘুম ঘুম চোখে সেই গান শুনছে সে। কিন্তু কে গাইছে এই গান.. মেহেরিন চোখ মেলে তাকাল। ভোরের আলো ফুটেছে অনেকক্ষণ তাহলে এলার্ম বাজল না কেন? বিছানার পাশে তাকিয়ে অর্ণব কে দেখতে পেলো না সে। বুঝতে বাকি রইল না এটা তার কাজ। অর্ণব প্রায়’ই এমনটা করে। মেহেরিন’র আগে সে উঠে গেলে এলার্ম বন্ধ করে দিবে। ভাবে মাম্মি হয়তো আরো ঘুমাবে। মেহেরিন মুচকি হেসে বিছানা ছেড়ে উঠলো। গানটা এখনো ভাসছে তার কানে। তার মানে এটা তার স্বপ্ন নয়, সত্যি’ই কেউ গাইছে এই গান। ঘরের দরজা খোলা। মেহেরিন গানের গলা অনুসরণ করে হাঁটতে হাঁটতে নিচে চলে এলো। বসার ঘরে নির্ঝর আর অর্ণব গান গাইছে। নির্ঝরের হাতে একটা গিটার। সে গান গাইছে আর অর্ণব তার পিছন পিছন দৌড়াচ্ছে। এই সোফায় উঠে লাফাচ্ছে তো এই গানের সাথে নাচছে। সব সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে তাদের কাহিনী দেখছে। তাদের চোখে মেহেরিন কে পড়তেই যে যার মতো চলে গেল কাজে। নির্ঝর গান শেষ করে অর্ণবের চুল গুলো নেড়ে বলল,
“পছন্দ হয়েছে!
অর্ণব দাঁত বের করে হেসে মাথা নাড়ল। উপরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মাম্মি, মাম্মি!
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে বলে,
“মাম্মি!
অতঃপর উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন সিঁড়ি বেয়ে নামছে। অর্ণব দৌড়ে যায় তার কাছে। মেহেরিন তার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“গুড মর্নিং অর্ণব সোনা!
অর্ণব দাঁত বের করে হেসে বলে,
“গুড মর্নিং মাম্মি!
মেহেরিন হেসে তার চুল গুলো এলোমেলো করে দেয়। অতঃপর তাকাল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর কে দেখে একগাল হাসল সে। তার হাসি দেখে নির্ঝর ও হেসে দিল। তবে এই হাসিতে অদ্ভুত কিছু ছিল না। সহজ সরল একটা মিষ্টি হাসি যা প্রত্যেক সকালকেই সুন্দর করে দেয়। রাতের ঘটনার পর এই হাসি আশা করে নি সে মেহেরিন’র কাছে। তাই হয়তো একটু বেশিই ভালো লাগছে!
—–
নিরব পায়চারি করে মেহেরিন’র কেবিনের বাইরে। ঢুকবে কি না এখন অবদি তা ঠিক করতে পারে নি। বুঝতে পারছে না কি হবে। এই এক পা আগাচ্ছে তো আবারো দু পা পিছিয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন পিএ কে দিয়ে খবর পাঠালো তাকে আসার জন্য। নিরব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুকনো ঢোক গিলে ঢুকল মেহেরিন’র কেবিনে। মেহেরিন’র চোখ ল্যাপটবে।নিরব তার সামনে এসে চেয়ারে বসল। মেহেরিন তার হাতে একটা ফাইল ধরিয়ে দিয়ে বলল,
“একটু চেক কর এটা!
নিরব মাথা নাড়িয়ে ফাইল টা হাতে নিল। ফাইল চেক করার মাঝে তার মন নেই। তার মন মেহেরিন’র দিকে। একটু পর পর’ই তাকে দেখছে। মেহেরিন ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে নিরব কে বলে উঠে,
“আমাকে দেখতে বলি নি, ফাইল চেক করতে বলেছি।
“হুম করছি!
“এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। গতরাতের কিছুই জিজ্ঞেস করব না তোকে।
“কিন্তু মেহেরিন..
“গতরাতের কিছু নিয়েই কথা হবে না।কোন কিছু নিয়েই না গট ইট।
“ওকে!
“যা নিজের কেবিনে গিয়ে চেক কর নাহলে এখানে বসে থেকে অস্থির হয়ে পড়বি।
নিরব বিনা বাক্যে ফাইল নিয়ে উঠে চলে গেল।
—-
অর্ণব কে খুঁজতে খুঁজতে মেহেরিন নির্ঝরের ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। খুব বেলি ফুলের ঘ্রাণ পাচ্ছে। ঘ্রাণটা বেশ জোরালো। মেহেরিন চোখ মেলে চারদিকে তাকাল।স্বপ্ন নয় তো এসব,দি আসবে তাহলে এখন! কিন্তু না তা তেমন কিছু হলো না। মেহেরিন দীর্ঘশ্বাস ফেলল!
পা বাড়াল বেলকনির দিকে। গুন গুন শব্দ ভেসে আসছে সেখান থেকে। মেহেরিন কাছে গিয়ে দেখল, নির্ঝর আনমনে বেলী ফুলে পানি দিচ্ছে। গাছটায় বেলী ফুল ফুটতে ও দেখা যাচ্ছে। মেহেরিন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল সাদা রঙের সেই বেলী ফুলের দিকে। অতীত আবারো আচমকা উঁকি দিল…
সারা বাড়ি মাথায় করে নিরু চেঁচিয়ে যাচ্ছে। শুভ্র খান সকালের পেপার পড়াতে সবে মাত্র মনোযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু নিরুর চেঁচামেচি’তে তা সম্ভব হচ্ছে না। নিরু সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে মেহের মেহের বলে ডেকেই যাচ্ছে। তার আওয়াজে বাড়ির সব সার্ভেন্ট হাজির। কিন্তু যাকে খুঁজছে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। কাউকে জিজ্ঞেস করেও হদিস পেলো না তার। সারা বাড়িতে খুঁজেও যখন মেহের কে পেলো না তখন ছাদে চলে এলো সে।
মেহের এক কোনে বসে তার ছোট্ট হাত দ্বারা বেলী ফুলের মালা গাথছে। ছাদের দরজা খোলার শব্দে উঠে দাঁড়িয়ে গেল সে। নিরু কে দেখে মালা খানা নিজের পিছনে লুকিয়ে ফেলল। নিরু রেগে তার সামনে এসে দাঁড়াল। রাগে ফুঁসছে সে। চিৎকার করে বলে উঠে,
“মেহের তুই আবারো আমার গাছের ফুল ছিড়েছিস!
মেহের দাঁত বের করে হেসে মাথা নাড়ল। নিরু রেখে নাক ফুলিয়ে বলল,
“আবার হেসে বলছিস! তোকে তো আমি..
মেহের পাশ কাটিয়ে এক দৌড় দিয়ে বলল,
“কিছুই করতে পারবে না!
“তবে রে..
নিরুও ছুট তার পিছনে। দু বোন মিলে পুরো ছাদ দৌড়াদৌড়ি করে বাড়ির ভেতর আসলো। বাড়ির ভিতরেও তুমুল ঝড়। একপর্যায়ে মেহেরের হাত থেকে ফুলের মালা টা পড়ে গেল। আর সেই মালাটায় নিরু পাড়াও দিয়ে ফেলল। পুরো মালা নষ্ট হয়ে গেল। মেহের সেই নষ্ট মালা নিয়ে কি কান্না। নিরু দু হাত দিয়ে তাকে কোলে বসিয়েও সেই কান্না থামাতে পারছে না। অবশেষে শুভ্র খান এসে আইসক্রিম খাইয়ে শান্ত করছে তাকে…
ঘাড়ে কারো উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠলো মেহেরিন। তার কল্পনার সমাপ্তি ঘটল। সামনে তাকিয়ে দেখল নির্ঝর তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর আবারো তাকে ঝাঁকিয়ে বলল,
“মেহু!
“হুম..
“তুমি এখানে..
মেহেরিন থমথম খেয়ে গেল। কেন এসেছিল তাও মনে হচ্ছে ভুলে যাচ্ছে। খানিকটা সময় লাগিয়ে বলল,
“আসলে অর্ণব! অর্ণব কে খুঁজতে এসেছি..
“অর্ণব তো এখানে নেই।
“এখানে নেই মানে কোথায় সে! পুরো বাড়িতে খুঁজেছি আমি, কোথায় নেই ও!
“শান্ত হও মেহু, হাইপার কেন হচ্ছো? অর্ণব মিস মারিয়ার সাথে শপিং এ গেছে।
“মিস মারিয়ার সাথে!
“হ্যাঁ, হুট করেই আমার কাছে এসে বলল মিস মারিয়ার সাথে শপিং এ যাবে।
“ও নিজে বলল..
“হুম!
“হঠাৎ কি হলো ছেলেটার!
বলেই আনমনে আবারো তাকাল বেলী ফুলের দিকে। নির্ঝর শান্ত গলায় বলে উঠে,
“মেহু!
“হুম!
“ঠিক আছো তুমি!
মেহেরিন অদ্ভুত ভঙিতে হেসে বলল,
“হ্যাঁ ঠিক আছি আমি, আমার আবার কি হবে?
“না এমনেতেই।
“আচ্ছা আমি যাচ্ছি..
বলেই চলে যেতে নিয়েও মেহেরিন আবারো পিছনে ফিরল। বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল বেলী ফুলের দিকে। নিরু মারা যাবার পর এই ফুল আর কখনো এই বাড়িতে আনে নি সে। এই বেলী ফুলের ঘ্রাণ তাকে বার বার নিরুর কথা মনে করিয়ে দেয়। জাগিয়ে তুলে তার পুরনো আঘাত! মেহেরিন বেলী ফুল থেকে চোখ সরিয়ে নির্ঝরের দিকে তাকাল। শীতল গলায় বলল,
“বেলী ফুলের গাছ টা কার!
নির্ঝর মুচকি হেসে বলল,
“এটা! আমার, খুব পছন্দের। বেলী ফুলের ঘ্রাণ খুব ভালো লাগে আমার। তোমার লাগে না।
মেহেরিন কঠিন গলায় “না” বলে চলে এলো সেখান থেকে। নির্ঝর খানিকটা অবাক হলো। বেলী ফুল কে ছুঁইয়ে বলতে লাগল,
“তোমাকে ভালো না লাগার কারণ কি?
—-
মাঝরাতে…
বিছানার চাদর সরিয়ে টিপ টিপ করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে অর্ণব। একবার এপাশ তাকিয়ে দেখল মেহেরিন ঘুমাচ্ছে। গভীর ঘুম! অর্ণব তবুও চোখের পাতা ফেলে ফেলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ল্যাম্পশ্যাডের আলোয় মেহেরিন’র মুখ ভালোই দেখা যাচ্ছে। অর্ণব উঠে বসে তার মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে যাচ্ছে। না মেহেরিন জাগছে না।
অর্ণব খুব সাবধানে উঠে গেল বিছানা ছেড়ে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০.৫০ বাজে। এ্যালার্ম ঘড়িটা হাতে নিয়ে ১২.০০ টার এ্যালার্ম দিল সে। অতঃপর নির্ঝরকে ফিসফিসিয়ে ডাকতে লাগল,
“ড্যাডি..
নির্ঝরও তখনো ঘুমায় নি। অর্ণব তাকে ছুঁতেই তার দিকে তাকাল সে। চোখ টিপ দিল একটা। অর্ণব দাঁত বের করে হেসে দিল।
রান্নাঘরে এই নিয়ে তৃতীয় বার চামচ পরার আওয়াজ এলো। নির্ঝর আর অর্ণব দু’জনেই চোখ বন্ধ করে নিল। না এই আওয়াজ উপরে পৌঁছিয়ে বলে মনে হচ্ছে না। নির্ঝর ফিক করে হেসে কেক বানানোর মিশ্রণটি তৈরি করতে লাগলো। মিশ্রণটি ঠিক আছে কি না তা দেখার জন্য চামচ দিয়ে খানিকটা নিয়ে চেখে দেখল। অতঃপর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে দিল। অবশেষে বেক করার জন্য ওভেনে রাখা হলো মিশ্রণটি। নির্ঝর দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্ণবের দিকে তাকাল। তাকে কোলে উঠিয়ে টেবিলে বসাল। চকলেটের খানিকটা তার গালে মাখিয়ে দিল। অতঃপর তাকে নিচে নামিয়ে দিল। অর্ণব খানিকটা চকলেট হাতে নিয়ে নির্ঝরের পিছনে পিছনে দৌড়াতে লাগল।
কেক বের করা হয়েছে। চকলেট কেক! দুজন মিলে এবার কেক ডেকোরেট করা শুরু করল। কাজ শেষ হবার পর নির্ঝর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“অর্ণবের মাম্মির কেক রেডি।
অর্ণব হেসে বলল,
“মাম্মি!
হুট করেই উপর থেকে এ্যালার্ম ঘড়ির শব্দ আসতে লাগল। দুজনেই একসাথে ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাল। ১২ টা বেজে গেছে। নির্ঝর হেসে বলে উঠে,
“কাজ শুরু করা যাক।
অর্ণব হেসে জোরে জোরে মাথা নাড়াতে থাকে।
মেহেরিন ঘুম ঘুম চোখে এ্যালার্ম ঘড়ির দিকে হাত বাড়াল। এ্যালার্ম বন্ধ করে তার পাশে হাত দিতেই খালি পেল। মেহেরিন চট করে চোখ মেলে তাকাল। অর্ণব কে আর নির্ঝর কে দেখতে না পেয়ে লাফিয়ে উঠলো সে। উঠে বসে চারদিকে খুঁজতে লাগল।
“কোথায় গেলো এই দুজন!
চোখ পড়ল, ঘরের দরজা খোলা। বিছানা ছেড়ে নেমে পড়ল সে। হাটতে হাঁটতে বসার ঘরে এলো। কিন্তু এখানকার সবকিছুই অন্ধকার। মেহেরিন সাথে করে ফোনটাও আনে নি। আঁধারের মাঝেই সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগল।
“অর্ণব! অর্ণব সোনা কোথায় তুমি? নির্ঝর আপনি কি ওর সাথে আছেন। কোথায় আপনারা?
তার কথায় শায় কেউই দিল না। শেষ সিড়ি বেয়ে নামতেই হাতের সাথে কিছু একটা বাজল। সাথে সাথে তার উপর কিছু পড়ল বলে মনে হলো। আলো জ্বলে উঠলো। মেহেরিন থমতম খেয়ে সামনে তাকাল। নির্ঝর আর অর্ণব দাঁড়ানো। অর্ণবের হাতে একটা কেক। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। অর্ণব কেক হাতে সামনে এসে বলল,
“হ্যাপি বার্থডে মাম্মি…!
মেহেরিন হাঁটু গেড়ে বসল তার সামনে। চোখ পড়ল কেক’র উপর। মেহেরিন কেক হাতে নিয়ে দেখল তাতে লেখা, হ্যাপি বার্থডে মাম্মি! সে হেসে বলল,
“তুমি বানিয়েছ?
অর্ণব মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আমি আর ড্যাডি!
মেহেরিন কেক টা টেবিলে রেখে জরিয়ে ধরল অর্ণব কে। চুমু খেলো তার কপালে। বলে উঠল,
“থ্যাংকু অর্ণব সোনা! মাম্মি খুব হ্যাপি!
অর্ণব দাঁত বের করে হাসল। নির্ঝর এসে সামনে দাঁড়াল মেহেরিন’র। মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। নির্ঝর মুচকি হেসে বলল,
“হ্যাপি বার্থডে মেহু!
মেহেরিন মুচকি হাসল। বলে উঠল,
“থ্যাংকু!
অর্ণব উঠে মেহেরিন’র হাত নাড়িয়ে তাকে ডাকল। মেহেরিন অর্ণবের থিতুনিতে হাত রেখে বলল,
“কি অর্ণব সোনা!
অর্ণব নিজের গালে হাত রেখে বলল,
“ড্যাডি!
মেহেরিন বুঝতে পারল না। সে হেসে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝরও তেমন কিছু বুঝল না। অর্ণব আবারো গালে হাত রেখে বলল,
“ড্যাডি!
মেহেরিন বলে উঠল,
“বুঝছি না অর্ণব!
অর্ণব হায় করে কপালে হাত রাখল। হাত দিয়ে ইশারা করে মেহেরিন কে ডাকল। মেহেরিন হাঁটু গেড়ে বসতেই অর্ণব তার গালে চুমু খেয়ে বলল,
“ড্যাডি, থ্যাংকু!
মেহেরিন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর প্রথমে শকটা খেয়েও এবার ঠোঁট কামড়ে হাসতে লাগলো। অর্ণব আবারো মেহেরিন কে দেখিয়ে নির্ঝরের দিকে ইশারা করল। মেহেরিন থতমত খেয়ে বলল,
“এসব পরে অর্ণব কেক কাটবো। এসো..
বলেই অর্ণবের হাত ধরে টানতেই অর্ণব হাত গুটিয়ে নিল। এসে ধরল নির্ঝরের হাত। মেহেরিন বিরক্ত চোখে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর অর্ণব কে কোলে নিয়ে বলল,
“অর্ণব কেক কেটে নিই!
অর্ণব নির্ঝরের গলা জড়িয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। নির্ঝর আবারো বলে উঠে,
“অর্ণব তো গুড বয় নাহ, তাহলেই অর্ণব এখন কেন রাগ করেছে? মাম্মির জন্মদিনে এমন করে অর্ণব!
অর্ণব নড়েচড়ে উঠলো তবে মুখ ফিরাল না। গম্ভীর হয়ে রইল। মেহেরিন নির্ঝরের কাছে এসে দাঁড়াল। নির্ঝর বলে উঠল,
“মেহু, দু মিনিট দেখো অর্ণব..
মেহেরিন হেসে বলল,
“অর্ণব কে আমার কোলে দিন। অর্ণব মাম্মির কোলে আসো।
অর্ণব মাথা নাড়িয়ে না করল। মেহেরিন একটু জোর করেই কোলে নিল তাকে। অর্ণব মুখটা গম্ভীর করেই রাখল। মেহেরিন হেসে বলল,
“আমার অর্ণব রাগ করলে খুব মিষ্টি লাগে দেখতে। তাই অর্ণব কে একটা মিষ্টি চুমু তো খেতেই হয় তাই না অর্ণব।
অর্ণবের মুখে মিটিমিটি হাসি দেখা গেল। মেহেরিন হেসে তার গাল ধরে চুমু খেল। অর্ণব ফিক করেই হেসে দিল। মেহেরিন আবারো বলল,
“থ্যাংকু অর্ণব মাম্মি কে এতো সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দেবার জন্য!
অর্ণব উঠে মেহেরিন’র গালে চুমু খেল। অতঃপর মেহেরিন তাকাল নির্ঝরের দিকে। সে নির্ঝরের খানিকটা কাছে এসে দাঁড়াল। মুখ খুলে শ্বাস নিয়ে শুকনো ঢোক গিলে কিঞ্চিত হেসে বলল,
“ধন্যবাদ নির্ঝর!
বলেই নির্ঝরের গালের কাছে নিজের ঠোঁট টা এগিয়ে দিল। মেহেরিন’র এভাবে কাছে আসা নির্ঝরের অস্থিরতা বাড়িয়ে দিল। মেহেরিন’র ঘন নিঃশ্বাস নির্ঝরের গালের কাছে পড়তেই তার শরীরে কাঁটার মতো বিঁধে গেল। নির্ঝর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। মনে হলো সময় তার কাছে সেখানেই থেমে গেছে। নির্ঝর শুকনো ঢোক গিলল। মেহেরিন তার উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া কয়েক সেকেন্ডের জন্য তার গালের উপর ছোঁয়াতেই নির্ঝরের দম মনে হলো বন্ধ হয়ে গেল। বুকের ভেতর কোথায় চিন চিন ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো। এ কেমন অনুভূতি, এ অনুভূতি’তে যেমন সে ভালোবাসার স্বাদ পাচ্ছে ও
তেমনি কষ্টও অনুভব করছে। এ কিরকম অনুভূতি!
মেহেরিন নির্ঝরের কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
“সরি!
অতঃপর সামনে ফিরে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর চোখ ফিরিয়ে তাকাল তার দিকে। মেহেরিন খুব সূক্ষ্ম ভাবেই বলল,
“শুধুমাত্র অর্ণবের জন্য!
বলেই হেসে দিল। নির্ঝরের চোখ পড়ল সেই হাসির দিকে। কেন জানি এই হাসি দেখলে তার মনে এক ধরনের শান্তি অনুভব করে সে। নির্ঝরের ঠোঁটের হাসি ফুটল আর সেই হাসির কারণ হলো মেহু!
মেহেরিন শীতল গলায় বলল,
“কেক কাটা যাক!
নির্ঝর হেসে মাথা নাড়ল। অতঃপর এসে মোমবাতি জ্বালাল। মেহেরিন মোমবাতি ফুঁ দিতেই নির্ঝর আর অর্ণব হাত তালি দিল। মেহেরিন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। খুব আনন্দ হচ্ছে তার।
অর্ণব ছুড়ি ধরল, তার সাথে মেহেরিন হাত ধরে কেক কাটল। নির্ঝর পাশে বসে হাততালি দিল। কেক’র প্রথম অংশ অর্ণব নিয়ে তা মেহেরিন কে খাওয়ালো। লাফিয়ে নির্ঝরের কাছে এসে তাকে খাওয়ালো। মেহেরিন কেক’র নিয়ে অর্ণব আর নির্ঝর কে খাওয়ালো। নির্ঝর ও কেক হাতে নিল। তবে তা না খাইয়ে মেহেরিন’র গালে লাগিয়ে দিল। মেহেরিন হা হয়ে তাকিয়ে রইল। সুযোগটা হাতছাড়া করল না অর্ণব। মেহেরিন হেসে কেক হাতে নিয়ে দুজনের পিছনে দৌড়াতে লাগল।
—–
মেহেরিন’র বার্থডে উপলক্ষে এবার পার্টি থ্রু করেছে নিরব। পাঁচতারা হোটেলে সমস্ত আয়োজন করেছে। নির্ঝর আর অর্ণব পাটিতে উপস্থিত। তাদের দুজনেই মেজেন্ডা রঙের স্যুট পড়েছে। ইতিমধ্যে ফরহাদ, ঈশান আর আরিফ চলে এসেছে। তারা এসে অর্ণব কে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগল। নির্ঝর দাঁড়িয়ে পুরো অ্যারেঞ্জমেন্ট দেখছে। খোলা আকাশের নিচে আয়োজন করা হয়েছে সবকিছুর। চারদিক লাইটিং করা। মেহমান ও আসতে শুরু করেছে। ঈশান ফোড়ন কেটে বলে উঠে,
“পার্টি থ্রু করেছে নিরব, মানে এই কাজটা কি তোর করার উচিত ছিল না নির্ঝর!
নির্ঝর কিছু না বলে কঠিন মুখে তাকিয়ে রইল। ফরহাদ হেসে বলল,
“বাদ দে, বেচারা এভাবেই খুব কষ্ট পেয়েছে
নির্ঝর মুখ ভেংচি কাটলো। অর্ণব তা দেখে ফিক করে হাসল। নির্ঝর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসল। বলে উঠল,
“অর্ণব আর তার ড্যাডি মাম্মি কে ফার্স্ট সারপ্রাইজ দিয়ে ফেলেছে। তাই না অর্ণব..
অর্ণব হেসে মাথা নাড়ল। নির্ঝর হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“নিলব তো এখন বাসি সারপ্রাইজ দিচ্ছে!
নির্ঝরের কথা শুনে সবাই ফিক করে হেসে দিল। অর্ণব আরিফের কোল থেকে নেমে গেল। মেহেরিন এসে পড়েছে। সে দৌড়ে চলে গেল তার কাছে। নির্ঝর পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল, মেজেন্ডা রঙের একটা গাউন পড়ে আসছে মেহেরিন। তার পিছনে অফিসের চার পাঁচ জন লোক। তার হাতে একটা ল্যাম্পটব আর কানে ব্লুটুথ। নির্ঝর নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“এই মেয়েটা আজকের দিনেও কাজ নিয়ে আছে!
অতঃপর আবারো কেক কাটলো মেহেরিন। প্রথম কেক টা অর্ণব কে খাওয়ালো। এরপর কাউকেই কেক খাওয়াতে পারল না সে। নিরব এসে কেক খাওয়ালো তাকে। তার গালে লাগিয়ে দিল তা। নির্ঝর দূর থেকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে তার উপর।
হঠাৎ করেই জন আসলো নির্ঝরের কাছে। তার হাতে একটা গিফট। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই জন বলল,
“ম্যাম’র জন্য এসেছে!
“কে পাঠিয়েছে?
“নাম দেওয়া নি!
নির্ঝর গিফট হাতে নিয়ে,
“আচ্ছা যাও!
অতঃপর গিফট নিয়ে এলো মেহেরিন’র কাছে। গিফট বক্স দেখে অর্ণব ও ছুটে আসলো। নির্ঝর মেহেরিন’র হাতে গিফট দিয়ে বলল,
“কে দিয়েছে জানা নেই, গার্ডের হাতে দিয়ে গেছে।
মেহেরিন খানিকটা অবাক হলো। অতঃপর গিফট বক্স টা হাতে নিল। বক্সটা বেশ বড়োই। মেহেরিন এসে তা টেবিলে রাখল। অর্ণব চেয়ারে দাঁড়িয়ে গিফট টা দেখতে লাগল। গিফটের প্যাকেটিং তার বেশ পছন্দ। মেহেরিন অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বলল,
“গিফট টা এখন খুলতে চাও!
অর্ণব জোরে জোরে মাথা নাড়ল। মেহেরিন হেসে অর্ণবের মাথার চুল এলোমেলো করে দিল। নির্ঝর এসে দাঁড়াল অর্ণবের পাশে। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল তাকে। মেহেরিন গিফট বক্স খুলতে লাগল। প্যাকেটিং খুলতেই একটা বক্স দেখল সে। অতঃপর বক্সের মুখ খুলতেই কয়েকটা বেলুন উড়ে যেতে নিল। অর্ণব অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বেলুন গুলোর দিকে। নির্ঝর ভ্রু কুচকালো। মেহেরিন দেখল বেলুনের সাথে একটা কার্ড বাঁধা আছে। মেহেরিন বেলুন গুলো দেখে কার্ডটা ছাড়িয়ে নিতেই বেলুন গুলো আকাশে উড়ে গেল। মেহেরিন বক্সের দিকে তাকিয়ে দেখল, এক পাশে এক শুকনো গোলাপ পড়ে আছে। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তা হাতে নিল। এমন কিছু দেখে নিরব আর নির্ঝরও অবাক। অর্ণব তো তাকিয়ে আছে সেই বেলুনের দিকে। দূর থেকে ফরহাদ ওরা বুঝতে পারল কিছু একটা হয়েছে এখানে।
মেহেরিন আবারো তাকিয়ে দেখল এক কোনে একটা ঘর। ঘরটা কাঠের! তুষার ঘেরা ঘরের চারদিকে। ঘরের দুয়ারের সামনে একজন মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে একজন ছেলেকে। মেহেরিন’র মুখের হাসি এর মাঝেই উধাও হয়ে গেল। নির্ঝর ফরহাদ কে ডেকে অর্ণবকে পাঠিয়ে দিল। তার মনে হচ্ছে কিছু একটা হচ্ছে। মেহেরিন এবার সাহস নিয়ে বক্সের দিকে তাকাল। এক কোনে আংটির বক্স দেখতে পেল। মেহেরিন’র হাত কাঁপছে। সে কাঁপা কাঁপা হাতে আংটির বক্স খুলতেই তাতে একটা আংটি দেখতে পেল। মূহুর্তের তার হাত থেকে পরে গেল তা। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
মেহেরিন ঘামছে, খুব ঘামছে। তার সাথে তার হাত পাও কাপছে। নিরব মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
“মেহু..
মেহেরিন তাকে থামিয়ে দিয়ে আবারো বক্সের দিকে হাত দিল। শেষে কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে। আর তাই হলো। একটা সাদা খাম পাওয়া গেল। মেহেরিন শুকনো ঢোক গিলে সেই খাম খুলল। খামের লেখার উপরে তাকিয়ে রইল,
“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মিষ্টি মেহেরিন। জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা তোমায়। কথা দিয়েছিলাম প্রতি বছর তোমার জন্মদিনে আমাকে মনে করিয়ে দেবো। আজও তার ব্যতীক্রম হলো না। আশা করি আকাশে উড়ে যাওয়া বেলুন গুলোকে দেখেছিলে তুমি। বেলুন গুলো কিন্তু হারিয়ে যাবে এই বিশাল আকাশের মাঝে… যাই হোক। সপ্তাহ খানিক পরেই আমার আর অদিতা’র রিং সেরেমনি! আমি আশা করবো তুমি সেখানে আসবে! ইতি…
আর কিছু লেখা নেই তাতে। মেহেরিন চিঠি টা হাতে মুঠিয়ে নিল। নির্ঝর তার চোখের কোনে কিঞ্চিৎ অশ্রু কণা লক্ষ্য করল। মেহেরিন সেই বেলুনের সাথে থাকা কার্ড টা খুলল। তাতে লেখা ছিল…
“এনগেজমেন্ট সেরেমনি অফ ফাহান হোসেন অ্যান্ড অদিতা আহমেদ!
মেহেরিন এটা পড়ার পর যথেষ্ট নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করলো। তবুও সে দুর্বল হয়ে পড়ল। পড়ে যেতে নিল তখন টেবিল আকড়ে ধরল। নির্ঝর তার কাছে আসতেই নিরব মেহেরিন কে আঁকড়ে ধরল। নির্ঝর সেখানেই থেমে নিল। মেহেরিন’র হাত থেকে কার্ডটা পড়ে গেল। নিরব তাকে ধরে অন্য চেয়ারে বসাল। নির্ঝর নিচে থাকা কার্ড টা হাতে নিল। তাতে ফাহান হোসেন নাম দেখে ভ্রু কুচকালো সে। বির বির করে বলল,
“ফাহান হোসেন! কোথায় জানি পড়েছিলাম এই নামটা!
বলেই চোখ ঘুরাল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন দু হাতে পানির গ্লাস নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে খাওয়ার চেষ্টা করছে। নির্ঝর স্থির দৃষ্টিতে দেখছে তাকে..
#চলবে….