#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৩০
মাঝরাতে খুব সাবধানে বিছানা ছেড়ে বসল নির্ঝর! অর্ণবের হাত সরিয়ে উঠতে গেলেই টের পেল অর্ণব ঘুমের মাঝে তার শার্টের পিছনের দিক আকঁড়ে আছে। নির্ঝর প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে নিঃশব্দে অর্ণবের হাত সরাল। অতঃপর পা টিপে টিপে বের হলো ঘর থেকে। দরজা আলতো ভাবে লাগিয়ে দিয়ে রওনা দিল রান্না ঘরের দিকে।
অনেকক্ষণ ধরেই ইচ্ছে করছে আইসক্রিম খাওয়ার জন্য। কিন্তু মেহেরিন তাকে রাতের বেলায় আইসক্রিম খেতে দিবে না। কারণ সে খেলেই অর্ণব খাওয়ার জন্য বায়না ধরবে। এদিকে অর্ণবের শরীর টাও আজ একটু একটু গরম লাগল। ভয় হচ্ছে না জ্বরে পরে যায়! তাই অর্ণব থেকে আড়াল হয়ে এই মাঝরাতে আইসক্রিম খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্ঝর। সিদ্ধান্ত টা খারাপ বলে মনে হচ্ছে না তার। নির্ঝর ফ্রিজ খুলে তার সামনে বসে রইল। মুখে চামচ নিয়ে ভাবছে কোন আইসক্রিম খাবে। ভ্যানিলা না চকলেট। নির্ঝর চামচ টা হাতে নিয়ে ভ্যানিলা বক্সে বারি দিয়ে বলে,
“ভ্যানিলা খাবো!
বক্স হাতে নিয়ে সামনে ফিরতেই কানে অর্ণবের আওয়াজ এসে বারি খেলো। “ড্যাডি” বলে ডেকে উঠলো সে। নির্ঝর শুকনো ঢোক গিলে পিছনে ঘুরে দেখল অর্ণব চেয়ারে বসে আছে। তাকে দেখে হাত নাড়াল। নির্ঝর হতচকিয়ে উঠলো। অর্ণব দাঁত বের করে হেসে বলল,
“চকলেট আইসক্রিম!
দুঃখে কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে তার। এই ছেলে কিভাবে জেগে গেল সেটাই ভেবে পাচ্ছে না। তবুও তার মন রাখতে চকলেট আইসক্রিম বক্স টা বের করলো সে। নিজের বাটিতে আইসক্রিম বেশি আর অর্ণবের বাটিতে আইসক্রিম কম নেওয়ায় সে ভ্রু কুঁচকালো। নির্ঝর তার নাক টেনে বলে,
“যখন বড় হবে তখন বেশি আইসক্রিম খেয়ো। এখন আপাতত এতো টুকু খাও, নাহলে তোমার মাম্মি জানলে আমাকে এই মাঝরাতে ঘর থেকে বের করে দেবে!
মুখ ভেংচি কেটে আইসক্রিম বাটি টা নিজের কাছে নিল। চামচ দিয়ে একটু পর পর হেলেদুলে আইসক্রিম খেতে লাগল। নির্ঝর উঁকি মেরে তাকিয়ে আছে তার আইসক্রিম ‘র দিকে। নিজের আইসক্রিম দ্রুত শেষ করে অর্ণবের আইসক্রিম ও ভাগ বসাল। যাতে সবটা সে খেতে না পারে। অর্ণব চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর দাঁত বের করে বলল,
“তাড়াতাড়ি করে দুজন খেয়ে শেষ করে ফেলি নাহলে মাম্মি এসে পড়ে।
বলেই আবারো অর্ণবের ভাগের আইসক্রিম খেতে লাগল। দেখতে দেখতে অনেকখানি খেয়ে ফেলল। অর্ণবের বুঝতে বাকি রইল না কি চলছে। হুট করেই সে হাত তুলে ওদিকে ইশারা করল। নির্ঝর সেখানেই নজর দিতেই অর্ণব আইসক্রিম’র বাটি নিয়ে দৌড়। নির্ঝর বেশ কিছুক্ষণ লাগল এটা বুঝতে। তবে সে বুঝতে বুঝতে অর্ণব সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেছে। নির্ঝর তার পিছনে ছুটল।
ঘরে এসে দুজনে ছুটছে। নির্ঝর ভয় পাচ্ছে কখন না মেহেরিন জেগে যায়। আর এই অর্ণব, তার কাছে এটা খেলা ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না। সে এখন মেহেরিন’র কাছে এসে দাঁড়াল। নির্ঝর দম ছেড়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
“অর্ণ সোনা মাম্মি জেগে যাবে, এদিকে আসো।
অর্ণব পেছনে তাকিয়ে মেহেরিন কে দেখল। নির্ঝর এই ফাঁকে তার হাত থেকে আইসক্রিম বাটি কেড়ে নিল। অর্ণব তা নিয়ে নির্ঝরের সাথে কাড়াকাড়ি করতে লাগলো। হুট করেই নির্ঝর আইসক্রিম বাটি সহ মেহেরিন’র উপর পড়তে নিল। কিন্তু পরক্ষনেই বিছনায় হাত রেখে সামলে নিল সে।
মেহেরিন গভীর ঘুমে মগ্ন। নির্ঝর তার ঠিক উপরে। পিছনে তাকিয়ে অর্ণব কে দেখতেই সে ফিক করে হেসে দিল। নির্ঝর আফসোস করে মাথা নাড়িয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। ল্যাম্পশ্যাডের নিভো নিভো আলোয় মেহেরিনকে দেখছে সে। চোখের পাতা ফেলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। খুব শান্ত ভাবেই ঘুমিয়ে আছে মেহু। নির্ঝরের দৃষ্টি এসে পড়ল তার ঠোঁট জোড়া’র দিকে। মলিন এই ঠোঁট জোড়া’র নেশায় পড়ছে সে। মুচকি হেসে সামনে তাকাতেই তার চক্ষু স্থির, হাতের আইসক্রিম’র বাটি বাঁকা হয়ে আছে, আর তা থেকে আইসক্রিম গলে জড়ো হচ্ছে পড়ার জন্য। সে দ্রুত বাটি সোজা করে নিল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ কিছুটা আইসক্রিম মেহেরিন’র ঠোঁটের উপর পড়ল।
নির্ঝর বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন নড়েচড়ে উঠল। দ্রুত সোজা হয়ে অর্ণব’র হাত ধরে বিছানার এপাশে চলে এলো। আইসক্রির’র বাটি খাটের পেছনে রেখে অর্ণব কে কোন শব্দ ছাড়া বিছানায় বসিয়ে দিয়ে নিজে বসল। মেহেরিন ঘুম ঘুম চোখেই বিছানা ছেড়ে বসলো। অর্ণব আর নির্ঝর দ্রুত দুজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর ভান করল।
ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও দু চোখের পাতা মেলল সে। দু”ঠোঁট দিয়ে স্বাদ নিতেই চকলেট’র স্বাদ পেল। হাত দিয়ে ঠোঁট ছুঁতেই কিছু আছে বলে অনুভূতি হলো। মেহেরিন এবার বিরক্ত হলো। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখল দুজন দুজনকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। চাদর টাও তাদের গা’য়ে নেই। মেহেরিন বিছানা ছেড়ে উঠলো। কিছু একটা বিরক্ত করছে তাকে। ঘরের দরজাও খোলা। সবাই ঘুমালে বাইরে গেল কে?
মেহেরিন দরজার কাছে আসতেই নির্ঝর এক চোখ আর অর্ণব দু’চোখ উঁকি দিল। মেহেরিন পিছু ফেরার সাথে সাথেই দুজন আগের অবস্থায় এসে পড়ল। বসার ঘরে এসে পর্যবেক্ষণ করল সে। টেবিলের উপর এক আইসক্রিম বাটি আর দুই আইসক্রিম’র বক্স। ফ্রিজের দরজাও খোলা। মেহেরিন ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে খেল। আইসক্রিম বক্স গুলো ফ্রিজে রেখে সিঁড়ির উপরে তাকাল। এই কাজ বাড়ির দুই চোরের। তাদের ছাড়া আর কারো না। রাগ হচ্ছে আর তার সাথে চিন্তা। দিনরাত এমন ভাবে আইসক্রিম খেতে থাকলে অর্ণব অসুস্থ হয়ে পড়বে। কিন্তু কথা হলো এখানে আইসক্রিম কি একজন খাচ্ছিল না দুজন। কারণ বাটি তো একটা।
এই হিসাব মিলাতে পারল না সে। অর্ণব আর নির্ঝর দুজনেই চোখ বুঝে একে অপরের জরিয়ে ধরে আছে। মেহেরিন ঘরে আসার উপস্থিত দুজনেই পেল। মেহেরিন দরজা বন্ধ করল। তাদের গায়ে চাদর টেনে দিল। নির্ঝর কাছে এসে চাদর ঠিক করে দিতেই খাটের পিছনের বাটি চোখে পড়ল তার। হিসেব মিলে গেছে এতোক্ষণে। এমন বোকামি দেখে না হেসে পারল না। নিজের জায়গায় এসে অর্ণবের কপালে চুমু খেল। ওপাশ হয়ে শুয়ে দু চোখ বন্ধ করল। যা করার কাল সকালে করবে।
অর্ণব চোখ মেলে নির্ঝরের দিকে তাকাল, নির্ঝর তার দিকে তাকাতেই দুজনেই দাঁত বের করে হেসে দিল। মাম্মি কে বোকা বানাতে পেরে দুজনেই খুশি। মেহেরিন ল্যাম্পশ্যাডের আলো নিভিয়ে দিল। নির্ঝর হাসি বন্ধ করে অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে তাকে আলতো করে জরিয়ে ধরল।
ব্রেকফাস্ট টেবিলে মিস মারিয়া কে আইসক্রিম আনতে বললে, সে উওর দিল,
“বাড়িতে কোন আইসক্রিম নেই স্যার।
নির্ঝর অবাক কন্ঠে,
“কি বললে?
মেহেরিনর ইশারায় মিস মারিয়া রান্না ঘরে গেলেন। মেহেরিন জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে বলল,
“গতকাল রাতে চোর এসে আইসক্রিম খেয়ে গেছে!
একথা শুনতেই অর্ণব অবাক হয়ে গেল। তার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছিল। নির্ঝর বিষম খেল। মেহেরিন হাতের গ্লাস এগ এগিয়ে দিল। মেহেরিন বলে উঠল,
“আমিও এটাই ভাবছি, এতো কিছু থাকতে শেষে কি না আইসক্রিম। খুব বোকা ছিল চোর গুলো!
নির্ঝর বিস্ফোরিত চোখে তাকাল। মেহেরিন বলে উঠল,
“মানে বলছি চোর কি একটা এসেছিল নাকি। নিশ্চয়ই দুজন কিংবা তিনজন এসেছিল নাহ!
নির্ঝর কাশতে কাশতে অর্ণবের দিকে তাকাল। অর্ণব মুখ শক্ত করে বসে আছে। মেহেরিন মুখ টিপে হেসে বলল,
“তো অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে, বের হতে হবে আমাদের। অর্ণব, ব্রেকফাস্ট শেষ করো তাড়াতাড়ি। আর নির্ঝর আপনিও। আমি গাড়ির কাছে অপেক্ষা করছি।
মেহেরিন যেতেই দুজনেই শব্দ করে দম ফেলল। অর্ণব বলে উঠল,
“ড্যাডি!
নির্ঝর হেসে বলল,
“আমিও এটাই ভাবছি, তোমার মাম্মি জানলো কিভাবে? এ তো দেখছি আমরা বুনো উল হলে মেহুও বাঘা তেঁতুল!
অর্ণব কিছু না বুঝতে পেরে ভ্রু কুঁচকে তাকাল। নির্ঝর হেসে মাথা নেড়ে বলল,
“তোমার মাম্মি আমাদের থেকে বেশি চালাক বুঝলে!
অর্ণব হেসে মাথা নেড়ে বলল,
“মাম্মি!
—
অর্ণব কে কালো রঙের স্যুট পড়িয়ে দিয়ে খাটে বসাল মেহেরিন। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“মাম্মি রেডি হবে, তুমি ড্যাডির কাছে যাও!
অর্ণব খুশিতে গদগদ হয়ে ড্যাডির কাছে দৌড় দিল। মেহেরিন শব্দ করে শ্বাস ফেলল। কালো রঙের একটা গাউন পরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়াল। খুব করে সাজল আজ। গাঢ় লাল রঙের রাঙালো ঠোঁট দুটো। চোখে হালকা করে কাজল ও দিল। চোখ পড়ল ডেসিন টেবিলে থাকা কার্ডের উপর। হাতে নিয়ে ফাহান আর অদিতি নামের উপর হাত বোলাতে লাগলো। হয়তো এখানে একসময় তার নাম’ই ছিল। বিয়েটাও বোধহয় তার সাথেই হতো।
অদিতি নামের মেয়েটা হলো ফাহানের এসিস্ট্যান্ট! মেয়েটা প্রথম থেকেই ফাহান কে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল। একদিন ফাহানের কেবিনে গিয়ে দেখল ঘুমন্ত ফাহান কে খুব কাছ থেকে দেখছে সে। মেহেরিন যেতেই সরে গেল সে। ফাহানও হতচকিয়ে উঠলো। সেদিন’ই ফাহান কে বলে কাজ থেকে বের করল তাকে। ফাহানের সাথে অন্য মেয়ে কে সহ্য হতো মেহেরিন’র।
ফাহান আর মেহেরিন’র ঝগড়ার পর হুট করেই একদিন মেসেজ এলো ফাহানের কাছ থেকে। মেহেরিন খুব সাহস নিয়ে তা চেক করল। ফাহান তাকে হোটেলে আসতে বলেছে। মেহেরিন প্রথমে ভাবলে যাবে না। এটাই মনস্থির করে ফেলল। তবুও রাতের প্রহর শেষে হাজির হলো হোটেলে। হোটেলে এসে রুমের দরজার সামনে দাঁড়াল সে। কিন্তু নক করার সাহস হলো তার। অস্থির লাগছে তার কাছে। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের দরজা নক করল। প্রথম বার নক করে আবারো হাত বাড়িয়ে নক করল সে। ওপাশ থেকে দরজা খোলার শব্দ আসছে কানে। মেহেরিন মুখ নিচু করে শ্বাস নিচ্ছে। দরজা খুলতেই এক জোড়া পা চোখে পড়ল তার। পা দুটো কোন ছেলের না মেয়ের। সে ভ্রু কুঁচকে মুখ তুলে সামনে তাকাতেই অদিতি কে দেখে চমকে উঠলো। আরো অবাক হলো এটা দেখে সে ফাহানের শার্ট পড়ে আছে।শার্ট চিনতে কষ্ট হলো না তার। এটা সে নিজেই পছন্দ করে কিনে দিয়েছিল তাকে। পায়ের নিচের মাটি সরে গেল মনে হচ্ছে। এমনকি তার পরনেও পোশাকও ঠিক নেই। খুব শর্ট ধরনেরই প্যান্ট পড়ে আছে সে। অদিতি তাকে দেখে শার্টের কলার টা ঠিক করল। মেহেরিন’র দম মনে হলো বন্ধ হয়ে আসছিল। তার শরীর কাঁপতে লাগল।
ওপাশ থেকে ফাহানের গলার স্বর পেল সে। ফাহান জিজ্ঞেস করছে, “কে এসেছে?
অদিতি বাঁকা হেসে বলল,
“হাম একজন খুব পরিচিত মানুষ।
“তোমার!
“হ্যাঁ বলতে পারো। তোমার কিছু লাগবে বেবি!
ফাহান বলে উঠল,
“না, আমি নিজেই দেখছি!
অদিতি হুট করেই দরজা খুলে ফেলল। মেহেরিন তাকিয়ে ফাহান কে দেখল পিছ থেকেই। তার পরণে শুধু একটা প্যান্ট,গা উদাম। মেহেরিন কয়েক পা পিছিয়ে গেল। দ্রুত হেঁটে চলে এলো সেখান থেকে। লিফট’র কাছে এসে বার বার বোতাম টিপতে লাগল।শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। মুখ খুলে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। মনে হচ্ছে তার পুরো দুনিয়া উল্টে গেছে। লিফট টাও আসছে না দেখে মেহেরিন সেখান থেকে হেঁটে এসে এপাশে এলো। দেওয়ালে হাত রেখে শক্ত হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু শক্ত হতে পারছে না। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। হঠাৎ করেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠল,
“খুব কষ্ট হচ্ছে?
অদিতির স্বর চিনতে কষ্ট হলো না। মেহেরিন নিজেকে সামলে রেখে সামনে ফিরল। অদিতি এবার পোশাকের উপর একটা লং কোট পড়ে এসেছে। অদিতি হেসে বলল,
“ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেলে কিন্তু অনেক কষ্ট হয়। তবে এখানে তো তুমি নিজে তাকে ছেড়ে দিয়েছ!
মেহেরিন চোয়াল শক্ত করে নিল। স্থির চোখে তাকিয়ে রইল। অদিতি হেসে বলল,
“তোমার এই এটিটিউড কিন্তু আমার বেশ লাগে মেহেরিন। বলতে হবে ফাহান স্যার কিন্তু তোমার এমন এটিটিউড দেখেই প্রেমে পড়েছিল।
মেহেরিন মুখ সরিয়ে নিল। অদিতি তার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“কি হলো বলো আমাকে সরিয়ে দিয়ে, ফাহান স্যার কিন্তু নিজেই এসেছে আমার কাছে। এখন কি করে বলি তোমায় কি কি হয়েছে তখন। ( মেহেরিন’র কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল ) এখন আমার গায়ের শার্ট দেখেই বুঝে নিত পারো। একটা কথা শুনে রাখো তুমি বরাবরে মতো হারিয়ে ফেলেছ ফাহান স্যার কে। ফাহান স্যার শুধু এখন আমার, শুধু আমার!
মেহেরিন ঠোঁট ভিজিয়ে হেসে তার দিকে ফিরল। অদিতি ভ্রু কুচকালো। মেহেরিন বলে উঠল,
“কনগ্রেচুলেশন তোমাকে আর তোমার ফাহান স্যার কে।
“আহ ধন্যবাদ! তোমার থেকে এটাই আশা করেছিলাম। খুব তাড়াতাড়ি বুঝে গেলে তুমি!
“আফসোস আরো আগে বুঝলে একটু বেশিই ভালো হতো!
বলেই আসতে নিলে অদিতি বলে উঠল,
“তবে হ্যাঁ এটা ভেবো না ফাহান স্যার তোমাকে ডেকেছে। তার ফোন থেকে তোমাকে মেসেজ আমিই করেছিলাম যাতে তুমি..
পুরো কথা শোনার ইচ্ছা হলো না তার। হন হন করে হেঁটে চলে এলো। লিফটে না চড়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগল সে। চোখ মুখ শক্ত করে গাড়িতে এসে বসল সে। গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগল গতি বাড়িয়ে। কাঁদছে সে, খুব কান্না পাচ্ছে তার। একসময় গাড়ি এসে থামিয়ে দিল। নিজের হাত কামড়ে ধরল কান্না থামানোর জন্য। এতো জোরেই কামড় দিল যে তার হাত থেকে রক্ত পড়তে লাগলো। মেহেরিন হাঁফিয়ে উঠল। হ্যাডেলে মাথা রেখে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো সে..
—–
কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে হাতের কার্ডটা নিচে পড়ে গেল। মেহেরিন কেঁপে উঠল। তাকে সামনে ঘুরাতেই চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল নির্ঝর দাঁড়ানো তার সামনে। চোখের অশ্রু মুছিয়ে দিল সে। মেহেরিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর নিচে কার্ডের দিকে তাকতেই বুঝল কি হয়েছে। নির্ঝর মেহেরিন’র গালে হাত রাখল। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে। সেই হরিণী চোখের জল অবাধ্য করে তুলছে তাকে। সে ঠোঁট বাড়িয়ে চুমু খেল তার কপালে। নির্ঝরের ছোঁয়া মেহেরিন’কে অস্থির করে তুলল। নির্ঝরের হাতের উপর হাত রাখল সে। আঁকড়ে ধরল নখ দিয়ে! দম নিতে কষ্ট হচ্ছে এখন তার। খুব ঘন ঘন করে শ্বাস নিচ্ছে সে। নির্ঝর এগিয়ে আসছে তার’ই দিকে। কিছু কি তবে হতে চলেছে। কিন্তু না এটা তো হয় না। তবুও সরে যেতে পারছে না সে। পা দুটো বোধহয় আটকে আছে জমির সাথে। দ্রুত চোখ বুঝে ফেলল সে। হঠাৎ করেই পিছ থেকে অর্ণব ডেকে উঠলো,
“ড্যাডি!
#চলবে….