#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৩৮
“ততোটুকু আপনার জন্য যথেষ্ট কি?
নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে ফিরল। নিজেকে মানসিক ভাবে শান্ত রাখছে। তার মন অস্থির। ইচ্ছে করছে না বলতে তবুও আজ বলবে সে। হারাতে চায় না মেহু কে। বোঝাতে চায় খুব ভালোবাসে তাকে। নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহুর দিকে। এক পা এগিয়ে এলো সে। তার চোখ মুখ স্থির। যন্ত্রের মতো বলে উঠল,
“আমি জানি ফাহানের কথা!
মুহূর্তেই মুখটা মলিন হয়ে গেল তার। মেহু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। মনের কোনে পুড়নো ক্ষত যেন জেগে উঠল। কেঁপে উঠলো তার বুক। ঠোঁট জোড়া কেঁপে উঠল। তবুও স্থির চোখে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে।
নির্ঝর আবারো এক পা এগিয়ে এসে বলল,
“আমি জানি তুমি খুব ভালোবাসতে ( থেমে গেল। ঠোঁট জোড়া কেঁপে উঠল। ) এখনো ভালোবাসো কি না জানি না তবে খুব ভালোবাসতে! ফাহান তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে কেন, তাও জানি। জানি তোমার দি’র কথা! তোমার বাবা’র কথা তোমার জিজু… আমি সবটা জানি মেহু!
মেহু পিছিয়ে গেল। পড়ে যেত নিল। নির্ঝর এসে তার বাহু ধরল। মেহেরিন’র চোখে অশ্রু জমতে লাগল। গলা ধরে আসছে তার। নির্ঝরের চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“না নির্ঝর আপনি জানেন না, কিছু জানেন না আপনি!
“মেহু আমি..
“নির্ঝর আপনি জানেন না ভালোবাসার তীব্রতা কতোটুকু। একটা মানুষ কতোটা ভালোবাসলে তাকে পাবার জন্য পাগল হয়ে থাকে। ভালোবাসার মানুষের জন্য নিজের মনে কতোটা অনুভূতি থাকে। জানেন না ভালোবাসার তিক্ততা কি ভয়ানক। কতোটা কষ্ট হয় ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো হতে দেখলে। আপনি জানেন না নির্ঝর, এসব কিছু জানেন না!
নির্ঝর ভেঙ্গে পড়ল না শক্ত হলো। বলে উঠল,
“ভালোবাসার তিক্ততা জানি না তবে তার তীব্রতা জানি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার জন্য আমার মনের অনুভূতি অসীম! আমি চাই না সেই অনুভূতি কষ্টে পরিণত হতে। চাই না ভালোবাসার তিক্ততা পেতে। আমি শুধু তোমাকে চাই!
মেহু কিছু বলতে নিল। নির্ঝর তাকে জড়িয়ে ধরল তৎক্ষণাৎ। বলে উঠল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি মেহু, শুধু চাই তোমাকে। কথা দিচ্ছি কষ্ট পেতে দেবো না তোমায়। আগলে রাখবো সারাজীবন।
মেহেরিন’র চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। কঠিন গলায় বলে উঠল,
“নির্ঝর ছাড়ুন আমায়!
নির্ঝর ছাড়ল না বরং আরো জোরালো ভাবে ধরল। বলে উঠল,
“না, আজ তোমাকে ছেড়ে দিলে সারাজীবন’র জন্য হারিয়ে ফেলবো। আমি তা পারবো না মেহু!
সময় পেরিয়ে গেল। দু’জনেই নিশ্চুপ, মেহেরিন শুকনো ঢোক গিলল। কিছু একটা বলা উচিত তবু পারছে না সে। কোথাও আঁটকে যাচ্ছে। বাতাসের শো শো শব্দ পাওয়া গেল। আবারো সেই ঠান্ডা বাতাস, শরীর শিউরে উঠল! নির্ঝর এবার শব্দ করে শ্বাস ফেলছে। মেহুর চোখের জল শুকিয়ে গেছে। নির্ঝর ছেড়ে দিল মেহু কে! মেহেরিন শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এক পা পিছিয়ে যাবার চেষ্টা করতেই নির্ঝর আবারো তার বাহু ধরে ফেলল। মেহু চোখ তুলে তাকাল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর তাকিয়ে রইল তার চোখের দিকে। চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা। কিছু কি বলছে তাহলে সে। দুজন তাকিয়ে আছে দু’জনের চোখের দিকে। মেহুর চোখ জোড়ায় আবারো হারিয়ে যাবার ভয় দেখছে সে। কাকে হারানোর ভয়!
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে সেই চোখের দিকে। চোখ যেন বলে দিচ্ছে, “আপনিও আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন নির্ঝর”!
নির্ঝর মুখ ফুটে বলে উঠলো,
“কখনো না!
অতঃপর আঁকড়ে ধরল মেহুর ঠোঁট জোড়া। মেহুর পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। নির্ঝর আঁকড়ে ধরে আছে তাকে। মেহু নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে আছে। কি হচ্ছে তা বোধ হতে কয়েক সেকেন্ড লাগলো তার। বোধ হতেই নির্ঝর কে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই নির্ঝর তার হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে রইল। মেহু নড়াচড়া কমবার নয়। নির্ঝর নিজেই ছেড়ে দিল তাকে। চোখ নামিয়ে রাখল। মেহু এক পা পিছিয়ে গেল। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। চোখ তুলে তাকাল নির্ঝরের দিকে। হাত তুলতে সময় লাগল না তার। নির্ঝর গালে হাত দিয়ে মেহুর দিকে তাকানোর আগেই ছুটে চলে গেল সে।
মেহেরিন ছুটে চলে এলো ঘরে। ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগল। দু চোখ বন্ধ করে দরজায় হেলান দিল। যা হয়েছে তা হবার কথা ছিল না। যা হচ্ছে তা ঠিক না। তার মন আকুল হয়ে আছে। অস্থিরতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। নয়নযুগল দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল তার।
—-
সারারাত ছাদে ছিল নির্ঝর! দোলনায় ঘুমিয়ে থেকেই রাত পার করল। ভোরের আলো ফুটতে দেখে চোখ দুটো মেলল কিন্তু ঘুমের রেশ কাটেনি তখনো। আবারো ঘুমিয়ে পড়ল সে। অতঃপর খানিকক্ষণ বাদে ঘুম ভাঙল অর্ণবের ডাকে। অর্ণব তাকে “ড্যাডি ড্যাডি” বলে ডেকেই যাচ্ছে। নির্ঝর চোখ মেলে তাকাল। অর্ণব কে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসল। অর্ণব তার জামা ধরে টানছে। নির্ঝর হেসে উঠে দাঁড়াল। চোখ কচলাতে কচলাতে বলল,
“গুড মর্নিং অর্ণব সোনা!
অর্ণব খিলখিলিয়ে হাসল। নির্ঝরের কোলে উঠার বায়না করল। নির্ঝর তাকে কোলে নিতেই গালে চুমু খেয়ে বলল,
“গুড মর্নিং ড্যাডি!
নির্ঝর হাসল। অর্ণবকে জিজ্ঞেস করল,
“মাম্মি কোথায় তোমার?
“মাম্মি
বলেই বাড়ির দিকে ইশারা করল। নির্ঝর হেসে বলল,
“নিচে যাওয়া যাক, চলো!
নির্ঝর অর্ণব কে কোলে নিয়ে নিচে নামল। রান্না ঘরে নাশতা বানাতে ব্যস্ত মেহেরিন। তার কাজে সাহায্য করছে মিস মারিয়া। অর্ণব নির্ঝরের কোল থেকে নেমে দৌড়ে সোফায় উঠে দাঁড়াল। নির্ঝর আর মেহুর চোখাচোখি হলো। মেহু চোখ নামিয়ে কাজে মনোযোগ দিল আর নির্ঝর গালে হাত দিল। গতরাতের চড় টা এতোটা জোরে লাগে নি। বুঝতে পারছে না কি রিয়েক্ট করবে সে!
আজ অফ ডে বিধায় কেউই বাড়ি থেকে বের হয় নি। মেহেরিন ঘরের টুকটাক কাজ করে যাচ্ছে। প্রায়ই এটা করে সে। অর্ণব মেঝেতে বসে ড্রয়িং করছে। নির্ঝর মেহু কে দেখার মাঝে মাঝে ফোন টিপছে। মেহু রান্না ঘরে এসে উপর থেকে কিছু নেবার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। হাত বাড়িয়ে তা নিল। মুচকি হেসে মেহুর দিকে দিল। মেহু হাত থেকে ছুই মেরে নিয়ে গেল। তার কাজে মনোযোগ দিল। নির্ঝর ভয়ে ভয়ে এসে তার পাশে দাঁড়াল। নির্ঝরের আভাস পেয়ে কোন কারণ ছাড়াই সবজি কা/টতে শুরু করল মেহু। নির্ঝর সবজি কা/টা দেখে ঢোক গিলল। এমন মনে হচ্ছে নির্ঝর কে ধমকাচ্ছে সে !
নির্ঝর আমতা আমতা করতে করতে বলল,
“মেহু!
মেহু সবজি ধীরে ধীরে কাটতে লাগল। মেহু ঠিক কতোটা রেগে আছে তার ধারণা নির্ঝরের আছে। কিন্তু ভয় পেলে চলবে না। আর যাই হোক নির্ঝর চৌধুরী মেঘ এতোটাও ভিতু না। মনোবল শক্ত করল। বলে উঠল,
“মেহু আমি আসলে বলতে চাইছিলাম ক…
মেহু তাকাল নির্ঝরের দিকে। চোখের চাহনি দেখে নির্ঝর চোখ ঘুরিয়ে ফেলল। মেহু উষ্ণ গলায় বলে উঠল,
“কি বলতে চান!
নির্ঝর মাথা নিচু করল। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“ভাবছিলাম কি?
“কি ভাবছেন?
নির্ঝর থমতম খেয়ে গেল। এতো কড়া কড়া কথা কেন বলছে মেহু। দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল মেহুর দিকে। মেহেরিন আবারো সবজি কাটায় মনোযোগ দিল। নির্ঝর মেহুর কাছে এগিয়ে গেল। কিছু বলতে নিবে তার আগেই মেহেরিন তার দিকে ফিরল। ভ্রু কুচকালো। নির্ঝর হেসে বলল,
“বিরিয়ানি রাঁধবে আজ!
“আচ্ছা!
বলেই আবারো সবজি কাটায় মনোযোগ দিল। নির্ঝর হাঁফিয়ে বাঁচল। বলার চেষ্টা করল,
“গতকাল রাত..
মেহু হুট করে এসে ছুরি টা নির্ঝরের গ/লায় ধ/রল। নির্ঝর চুপসে গেল। বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল মেহুর দিকে। মেহু একটু কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল,
“একটা কথা বলবেন না!
নির্ঝর চোখ অন্যদিকে সরাল। হাসার চেষ্টা করল। বলে উঠল,
“এই ছুরিতে আমার গলা কে/টে যাবে!
মেহু গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর হাত দিয়ে খুব সাবধানে ছুরি টা সরালো। মেহু শব্দ করে দম ফেলল। নির্ঝর হেসে ফেলল। বুঝতে পারল মেহু হার মেনে গেছে। মেহু আবারো ভ্রু কুঁচকে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর মুখ টিপে হাসতে লাগলো। মেহু রেগে ছুরিটা আবারো গ/লায় ধরল! নির্ঝর হেসে মেহুর কোমর ধরে ফেলল। মেহেরিন চোখ বড় বড় করে তাকাল। নির্ঝর ফিসফিসিয়ে মেহেরিন’র কানে বলল,
“যদি মা/রার হতো তাহলে প্রথমবার’ই মেরে ফেলতে। দ্বিতীয় বার এসে ধরতে না।
মেহু রেগে নির্ঝরের হাত কোমর থেকে সরাল। বলে উঠল,”খুব বেশি বেশি করছেন আপনি”!
নির্ঝর মেহুর হাত থেকে ছুরি টা নিল। ছুরি দিয়ে মেহুর সামনের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কিঞ্চিত হাসল। হঠাৎ করেই দুজনের মনে হলো কেউ তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। দু’জনেই পিছু ফিরতে দেখল অর্ণব দুজনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। দু’জনেই একটু সরে দাঁড়াল। অর্ণব আবারো তার ছবি আঁকায় মনোযোগ দিল!
—
বিকেল বেলা, মেহেরিন তৈরি হচ্ছে যাবার জন্য। নির্ঝর বসার ঘরে বসে অপেক্ষা করছে মেহুর জন্য। সেও যাবে তার সাথে। অর্ণব ঘুমাচ্ছে! মেহেরিন নিচে নামল তৈরি হয়ে। বেশ পরিপাটি সে। নির্ঝরের খানিকটা হিংসে হতে লাগল। কেন জানি মনে হচ্ছে তাকে আজ একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তবে ব্যাপারটা আসলেও তেমন না। মেহেরিন বাইরে বের হবার আগেও সাথে করে কিছু কাগজপত্র নিয়েছে যাতে নিরবের সাথে এগুলো নিয়ে কথা বলা যায়। মেহেরিন নির্ঝর কে বলে বের হয়ে যায়। কিন্তু নির্ঝর তার দিকে একবার ফিরেও তাকায় না। বিষয়টা বোধগম্য হলো না। নির্ঝরের অস্বাভাবিক আচরণের কারণ কি!
মেহেরিন বের হলো, গাড়ি ড্রাইভ আজ নিজেই করবে। নিরব কে জিজ্ঞেস করে ঠিকানা পাঠাতে বলল। এদিকে নির্ঝর দৌড়ে গেল অর্ণবের ঘরে। তাকে ঘুমাতে দেখে মিস মারিয়াকে তার খেয়াল রাখতে বলে দ্রুত বের হলো। এসে দেখে মেহেরিন গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেছে। গাড়ির কাছে এসে পকেটে চাবি না পেয়ে একগাদা বিরক্ত নিয়ে আবারো বাড়িতে ঢুকে। মিস মারিয়া নির্ঝরের এমন ছোটাছুটি দেখে কানাকানি অবাক হয়।
নির্ঝর ফলো করছে মেহু কে। একটা খোলা পার্কে নিরব আসতে বলেছে তাকে। পার্কে আসতে বলায় মেহু তেমন একটা অবাক না হলেও নির্ঝরের ব্যাপারটা হজম হলো না। মেহেরিন গাড়ি থামাল। কিছুটা দূরে গাড়ি থামাল নির্ঝর। সামনে তাকাতেই দেখল নিরব এসে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছে। মেহেরিন বের হতেই নিরবের সাথে চলে গেল। নির্ঝর গাড়ি থেকে বের হবার আগে মাথায় টুপি আর মুখে মাস্ক পড়ল যাতে মেহু তাকে চিনতে না পারে।
নিরব আর মেহেরিন দুজনেই হাঁটছে তার পিছু পিছু আসছে নির্ঝর। পার্কে মানুষও বেশ! সরকারি ছুটি হওয়ায় পার্ক আজ মানুষে ভর্তি। মেহেরিন ফোনের মাঝে নিরব কে কিছু দেখানোর চেষ্টা করছে। নিরব তার থেকে মেহু কেই বেশি দেখছে। দূর থেকে এসব দাঁড়িয়ে দেখছে নির্ঝর। রাগে পুরো শরীল জ্বলে যাচ্ছে তার।
নিরব মেহু কে পার্কের বেঞ্চে বসিয়ে বলল,
“একটু বস আমি আসছি!
মেহেরিন দ্বিধা না করে বসে পড়ল। সামনে তাকিয়ে দেখল এক কোনে একটা পরিবার এসেছে। তাদের দুটো সন্তান। একজন ছেলে আর মেয়ে। তাদের দুজনের আবদার মেটাতে মেটাতে বাবার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হুট করেই মনে পড়ল অর্ণবের কথা। ফোনের স্ক্রিন অন করে অর্ণবের হাসি মাখা মুখটা দেখতে লাগল মেহু। অজান্তেই তার ঠোঁটের কোনে হাসি দেখা গেল।
নিরব এসে হাজির হলো বাদাম নিয়ে। মেহু বাদাম দেখে হেসে ফেলল। নিরব বলে উঠল,
“তোর মনে আছে, বাদাম কতো ভালোবাসতি তুই!
মেহেরিন বাদাম হাতে নিয়ে বলল,
“সব মনে আছে, ক্যাম্পাসে আমাদের বন্ধুদের আড্ডা, ক্যান্টিনে গান বাজনা। ভুলি কি করে এসব।
“তোকে আজ আরেকবার মনে করিয়ে দেই আমি!
“মানে..
“ওপাশে দেখ!
মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে ওপাশে তাকাল। অবাক হয়ে গেল মূহুর্তে। পুরোনো বন্ধুরা সব দাঁড়িয়ে আছে এখানে। মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। বলে উঠল,
“রিপা, নওশাদ, মিহা, শালিনী, আর ইতাফ! তোরা সবাই!
সবাই একসাথে বলে উঠল,
“সারপ্রাইজ!
মেহেরিন কাছে এসে সবাইকে জরিয়ে ধরল। পেছনে দাঁড়িয়ে নিরব হাসতে লাগলো। মেহেরিন বলে উঠল,
“গাইস কতোদিন পর তোদের সাথে দেখা বল!
রিপা মেহেরিন’র গালে হাত রেখে বলল,
“শেষবার দেখেছিলাম আমার বিয়ের দিন। এরপর তোর তো আর দেখাই নি।
“ইশ মনে হয় তোরা ছিলি। ( নওশাদ কে চিমটি কেটে) আমার জিজু তো তোকে নিয়ে হাওয়া হয়ে গেছিল। তা ফিরলি কবে!
“এই তো দুদিন হলো!
শালিনী, ইতাফ আর মিহা কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তা তোদের খবর বল, এলি কবে…
কথা চলতে থাকল পুরোনো বন্ধুদের মাঝে। নির্ঝর দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল। হিসাব মিলছে না। সে যা ভেবেছিল তা তো হচ্ছে না। নাকি সেই ভুল ভেবেছে। নির্ঝর মাথায় হাত দিয়ে তাকিয়ে রইল। একটু বেশিই ভেবে ফেলেছে হয়তো। ভাবল বাড়িতে ফেরা যাক। কিন্তু হঠাৎ কি মনে করে নিরবের দিকে ফিরল সে। ভ্রু কুঁচকে গেল তার। নিরবের হাসি মাখা মুখ বলে দিচ্ছে আজ কিছূ একটা ঘটবে। মন মানল না নির্ঝরের। দাঁড়িয়ে গেল সে। শেষ টা না দেখা অবদি এখান থেকে যাবে না সে!
এদিকে মেহেরিন আর তার বন্ধুরা গল্প করতে করতে পার্কের আরো ভেতরে এসে পৌঁছাল। হঠাৎ কি মনে করে মেহেরিন পিছনে ঘুরল। নির্ঝর তাকে দেখেও না দেখার ভান করে হাঁটতে লাগলো। খানিকক্ষণ’র জন্য মেহেরিন’র মনে হয়েছিল নির্ঝর হয়তো এখানে। কিন্তু তাকে দেখতে না পেয়ে আবারো সামনে ঘুরল সে। নির্ঝর হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।
মিহা মেহেরিন’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“দেখলি তো আমাদের ছোট মেহেরিন কিন্তু অনেক বড় হয়ে গেছে।
“এই একদম বড় দের মতো কথা বলবি না। তুই আর আমি কিন্তু একই ব্যাচের।
ইতাফ বলে উঠে,
“আহ ভুল কি বলেছে, এতো বড় কোম্পানি একাহাতে সামলিয়ে যাচ্ছিস এটা কি কম!
মেহেরিন হেসে বলল,
“আমি একা না বুঝলি, এর মাঝেও একজনের হাত আছে। আর ও হচ্ছে আমার এই গুলোমুলো বেস্ট ফ্রেন্ড! নিরব! কিন্তু যাই হোক আজ এভাবে দেখা হওয়াটা কাকতালীয় কিন্তু মনে হচ্ছে না।
শালিনী বলে উঠল,
“তা তো বটেই, তোর বেস্ট ফ্রেন্ড’র প্ল্যান এসব। আগের কিছু স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আর কি!
মেহেরিন খিলখিলিয়ে হেসে নিরবের দিকে তাকাল। নিরব কিঞ্চিত হেসে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইল সেই হাসির দিকে। হঠাৎ করেই মেহেরিন’র কেমন এক অনুভূতি হলো। সে দাঁড়িয়ে গেল। আবারো পিছনে ফিরল। কালো টুপি পড়া ছেলেটার দিকে নজর গেল তার। ছেলেটা তার পাশ দিয়েই গেল কিন্তু তার দিকে ফিরল না। মেহেরিন’র শরীর শিউরে উঠল। কেন জানি মনে হতে লাগল এই নির্ঝর।
নিরব এসে হাত রাখল ঘাড়ে। ঘোর ভাঙল। নিরব বলল,
“দাঁড়িয়ে পড়লি যে, চল!
মেহেরিন হেসে মাথা নাড়িয়ে টা বাড়াল তার সাথে সাথে। মিহা আর শালিনী হঠাৎ করে নিরব টেনে নিয়ে বলল,
“ব্যাপার কি বলতো?
“কিসের ব্যাপার?
“এই যে তুই আর মেহেরিন এখানে। মনে হচ্ছে তুই কিছু একটা আজ করবি!
নিরব হেসে বলল,
“করলে তো দেখবিই, চল এখন!
মিহা বলে উঠল,
“বুঝলি নিরব আজ কিছু একটা করবে?
“হ্যাঁ সেই কবে থেকে শুনেই যাচ্ছি, ভার্সিটি অবদি শেষ হলো কিন্তু ওর বলা এখনো হলো না।
“তোর কি মনে হয় মেহেরিন মানবে!
“বুঝতে পারছি না দেখা যাক। আমরা তো শুনলাম কার সাথে জানি বিয়ে হবার কথা ছিল কিন্তু তা তো হলো না, ভেঙ্গে গেল! তবে আবারো তো বিয়ের তোড়জোড় উঠল…
মিহা ঠোঁট উল্টে বলল,
“দেখা যাক!
কথাগুলো কানে গেল নির্ঝরের। তার ভাবনা যে মিথ্যে নয় এতোক্ষণে বুঝে গেছে সে!
প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই অনেক আড্ডা দিল তারা। মেহেরিন এর মাঝে মাঝেই দেখছে সেই ছেলেটা তাদের পিছু পিছু আসছে। বিষয়টা চোখে পড়ছে তার। সন্ধ্যা গড়িয়ে এসেছে। এখন বাসায় ফেরার পালা। পার্ক ছেড়ে বের হলো সবাই। হাঁটতে লাগল সবাই ফুটপাতে। রাস্তার গাড়িঘোড়া কমে গেছে। রাস্তায় তেমন কোন চলাচল নেই তাদের! কিছুক্ষণ পরেই আকাশ ঢেকে যাবে রাতের আঁধারে।
মেহেরিন রাস্তার এপারে আর ওই ছেলেটা রাস্তার ওপারে। মেহেরিন ঠিক দেখছে ছেলেটা তাদের পিছন পিছন’ই আসছে। এখন তাতে আর সন্দেহ নেই। তবে এটা কি নির্ঝর! বার বার নির্ঝরের উপস্থিতি কেন দিচ্ছি ও। তবে কি সত্যি ও নির্ঝর নাকি আমার অনুভূতি। কিন্তু আমার অনুভূতি কেন বার বার ওর জাগান দিচ্ছে, নাকি আমি বেশি ভাবছি!
চিন্তায় পড়ে গেল মেহেরিন। হঠাৎ করেই তারা সবাই দাঁড়াল চায়ের দোকানে। টং এ দাঁড়িয়ে চা খাবে সবাই। নিরব হেসে সামনে এগিয়ে গেল ফুলের দোকানের কাছে।নির্ঝরের চোখ হারালো না তা। সে বেশ দেখতে পাচ্ছে নিরব একটা গাঢ় গোলাপ কিনছে। নির্ঝরের বুকে হঠাৎ করেই ব্যাথা অনুভব করল। সে বুকে হাত দিয়ে থমকে দাঁড়াল। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে এখন। ইচ্ছে করছে মুখের মাস্ক টা খুলে ফেলতে। ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারছে না সে। হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠলো তার। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল মেহুর ফোন। ফোনটা হাতে নিয়ে সামনে তাকাল দেখল মেহু তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নির্ঝর এবার ফুটপাত ছেড়ে রাস্তায় নামল। মেহুর দিকে তাকিয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে দিল। রাস্তায় দু একটা গাড়ি চলাচল করছে তখন। নির্ঝর ধীরে ধীরে এক পা এক পা করে এগিয়ে সামনে আসছে। মেহু বলে উঠল,
“নির্ঝর! আপনি কোথায় ?
নির্ঝর তার কোন জবাব দিল না। শুধু তাকিয়ে রইল নিরবের দিকে। গোলাপ নিয়ে মেহেরিন’র কাছে এগিয়ে যাচ্ছে সে। এদিকে মেহু ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে তার কোন ধ্যান নেই। মেহু হারিয়ে ফেলবে এটা ভেবেই বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব হলো তার। হাতের ফোনটা হুট করেই পড়ে গেল রাস্তায়। নির্ঝর এখন মাঝ রাস্তায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ নিরবের দিকে। মনে হচ্ছে সময় এখন তার কাছে থমকে গেছে। সবকিছুই ঘোলাটে লাগছে। নির্ঝরের চোখ বুজে আসছে। চোখ ঘুরিয়ে দেখল মেহুর দিকে। মেহু কিছু বলছে তাকে কিন্তু তার কোন কথার আওয়াজ তার কানে পৌঁছাচ্ছে না। মেহেরিন কে স্পষ্ট দেখছে না সে। ঝাপসা ঝাপসা লাগছে চোখের সবকিছু। হঠাৎ করে দেখল মেহু কে তার কাছে দৌড়ে আসতে। নির্ঝর চোখ মেলে রাখার খুব চেষ্টা করল তবুও যেন চোখ বুঝে যাচ্ছে।
মেহু দৌড়ে এসে নির্ঝরের হাত ধরে মাঝ রাস্তা থেকে সরাল। কি হলো, কিভাবে হলো কেউই বুঝতে পারল না। সবাই শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। গাড়ি থেমে গেল নির্ঝরের পাশে দিয়ে। নির্ঝর হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। তার সামনে বসে আছে মেহু। মুখের মাস্ক খুলে গালে হাত দিয়ে ডেকে যাচ্ছে তাকে। নির্ঝর কেঁপে কেঁপে হাত রাখল মেহেরিন’র গালে। মুখ দিয়ে শুধু বলে উঠল,
“মে..হু…
—–
নির্ঝরের জ্ঞান ফিরার পর তাকে নিজের ঘরে আবিষ্কার করল। তার পাশে বসে আছে অর্ণব! নির্ঝর তার দিকে তাকাতেই “ড্যাডি” বলে ডেকে উঠলো সে। নির্ঝর মুচকি হেসে তার গালে হাত রাখল। অর্ণব বিছানা ছেড়ে নেমে দৌড় দিল। মেহেরিন রুমে ঢুকল খানিকক্ষণ পর। নির্ঝর তাকে ছেড়ে উঠে বসল। মেহুর পিছু পিছু একে একে সবাই ঢুকল। নিরব কে দেখতে পেল সাথে। মেহু এসে পাশে নির্ঝরের। তার হাতে সুপের বাটি। নওশাদ বলে উঠল,
“এখন কেমন লাগছে!
নির্ঝর মুচকি হেসে বলল,
“বেটার!
মিহা হেসে বিছানার পাশে বলল,
“তেমন কিছু হয় নি, বেশি স্ট্রেস নেওয়ায় পেশার বেড়ে গেছিল। এখন ঠিক আছো। ডাক্তার বলে গেছে বেড রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
নির্ঝর হেসে মেহুর দিকে তাকাল। তার মুখটা এখনো গম্ভীর! চামচে সুপ নিয়ে নির্ঝরের মুখের সামনে ধরল। নির্ঝর খেতে লাগল। রিপা বলে উঠল,
“আর যাই বলো, খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিল তুমি। আর তোমার অবস্থা দেখে মেহুর যা হাল হয়েছিল তা বলার বাইরে।
নির্ঝর আবারো তাকাল মেহুর দিকে। তার মুখটা এখনো গম্ভীর! চামচে সুপ নিয়ে আবারো নির্ঝরের মুখের সামনে ধরল। নির্ঝর মেহুর চোঁখের দিকে তাকিয়ে সুপ মুখে দিল। অর্ণব এসে বিছানার উপর বসল। নির্ঝর তাকে নিজের কোলে বসাল।
ইতাফ বলে উঠল,
“আচ্ছা আমাদের পরিচয় দেওয়া যাক, আমি ইতাফ!
“আমি শালিনী!
“আমি মিহা!
“নওশাদ
“আর আমি রিপা!
অর্ণব বলে উঠে,
“অর্ণব!
সবাই ফিক করে হেসে দিল। নির্ঝর অর্ণবের কপালে চুমু খেয়ে বলল,
“অর্ণব সোনা!
অর্ণব দাঁত বের করে হেসে দিল। মেহুর মুখ তবুও গম্ভীর। কোন কিছুতেই আগ্রহ নেই তার। নিরব ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,
“কিন্তু নির্ঝর, তুমি সেখানে গিয়েছিলে কেন?
নির্ঝর ঢোক গিলল। অতঃপর হেসে বলল,
“আমার একটু কাজ ছিল, কিন্তু আমি জানতাম না তোমরাও সেখানে ছিলে!
শালিনী বলে উঠে,
“আচ্ছা থাম এবার, নির্ঝর কে রেস্ট নিতে দে। বাকি কথা পরে হবে। ওকে একা ছেড়ে দে। চল আমরা নিচে যাই!
নিরব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বের হয়ে গেল। রিপা অর্ণব কে ডেকে কোলে নিল। বলল,
“তোমাকে আইসক্রিম খাওয়াবো চলো!
অর্ণব নির্ঝরকে টাঠা দিয়ে বের হয়ে গেল। নির্ঝর আর মেহেরিন কে একা রেখে সবাই বেরিয়ে গেল। মেহু চামচ ধরল নির্ঝরের মুখে। নির্ঝর তার হাত ধরে ফেলল। মেহু হাত সরিয়ে নিল। উঠে যেত নিল। নির্ঝর তার হাত ধরল। মেহু সুপের বাটি টা রেখে হাত ছাড়াতে চাইলে নির্ঝর তাকে টেনে নিজের কাছে বসাল। মেহু নির্ঝরের দিকে ফিরে তাকাল না। চোখ সরিয়ে নিল। নির্ঝর মেহেরিন’র থিতুনিতে হাত রেখে মুখ তুলল। মেহু তবুও চোখ সরিয়ে নিল। দাঁতে দাঁত চেপে মুখ শক্ত করে নিল। নির্ঝর কিঞ্চিত হাসল। থিতুনি থেকে হাত সরিয়ে নিল। মেহুর গালে হাত রাখল। মেহু রীতিমতো কেঁপে উঠল। সে উঠে যেতে চাইলে নির্ঝর তার হাত চেপে ধরল। মেহু এবার চোখ তুলে তাকাল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর হেঁসে বলল,
“যাক এতোক্ষণ পর তাকালে আমার দিকে!
মেহু ভ্রু কুঁচকে নিল। নির্ঝর হেসে মেহুর কাছে আসল। বলে উঠল,
“আচ্ছা সরি!
“…
“বললাম তো সরি, কথা বলো!
“…
“মেহু!
” হাত ছাড়ুন!
“আমি কি জানতাম বলো এমন কিছু হবে!
নির্ঝরের হাত ছাড়িয়ে উঠে গেল মেহু! নির্ঝর বলে উঠে,
“ভালোই হতো না বলো!
মেহু দাঁড়িয়ে গেল। কি সম্পর্কে কথা বলছে সে। নির্ঝর বলে উঠল,
“আমি মরে গেলে খারাপ কি হতো, তোমাকে বিরক্ত করার তো কেউ আর থাকতো না বলো।
মেহু শব্দ করে শ্বাস ফেলল। নির্ঝর বিছানা ছেড়ে উঠলো। মেহুর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“তুমি খুব ভয় গিয়েছিল নাহ!
মেহু নিশ্চুপ! নির্ঝর তার দিকে ঝুকল। মুচকি হাসল। বলে উঠল, “খারাপ হতো না, আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস অবদি তোমাকেই দেখতে চাই। বেশি কিছু না, আমার শেষ সময়ে শুধু আমার চোখের সামনে থেকো। ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে বিদায় দিয়ো আমায়। ব্যস এতো টুকু যথেষ্ট আমার জন্য!
মেহু দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। হাত উঠিয়ে আবারো চড় মারল নির্ঝরের গালে। নির্ঝর হেসে উঠল। মেহুর বিরক্ত হয়ে গেল। রেগে নির্ঝরকে মারতে গালল। বলে উঠল, “ম/রার এতো শখ হলে আমাকে বলতে পারতেন, আমিই মে/রে দিতাম আপনাকে!
নির্ঝর মেহুর দুই হাত চেপে ধরে নিজের কাছে আনল। হাত দুটো দিয়ে নিজেকে আঁকড়ে ধরিয়ে মেহুর কপালে নিজ কপাল ঠেকিয়ে বলল, “আমি এভাবেই আধ/মরা হয়ে আছি। একটু ভালোবাসলে ভালো বৈ খারাপ হতো না!
মেহু কিছু না বলে শক্ত হুট করেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল নির্ঝর কে। নির্ঝর মেহুর মাথায় হাত রেখে বলল,
“আজ আমি সার্থক মেহু!
#চলবে….