#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৪২_ও_৪৩
[ অন্যদিনের তুলনায় গল্প অধিক বড়। ফেসবুক লাইটে শো নাও হতে পারে ]
অর্ণব কে খুঁজে যাচ্ছে মেহু আর নির্ঝর মিলে। এই তো এখানেই ছিল এখন কোথায় গেলো সে। দু’জনেই বিচলিত হয়ে খুঁজে যাচ্ছে তাকে। ছোট একটা বাচ্চা এতো তাড়াতাড়ি কোথায় যাবে। অস্থির হয়ে উঠল মেহেরিন। নির্ঝর তাকে সামলে খুঁজে যাচ্ছে অর্ণব। কয়েকবার আওয়াজ ও দিচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছ হচ্ছে না। নির্ঝর ভেবে নিল অর্ণবের নিখোঁজের অ্যানাউসমেন্ট করবে সে। হঠাৎ ভিড়ের মাঝে মেহুর চোখ পড়ল এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে অর্ণব। তাকে দেখত পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেল সে। ওপাশে তাকিয়ে দেখল নির্ঝর কাদের সাথে যেন কথা বলছে। মেহেরিন নির্ঝর কে ডাক দিল। নির্ঝর দূর থেকেই জিজ্ঞেস করল অর্ণবের কথা। মেহু হেসে মাথা নাড়ল। নির্ঝর ছুটে এলো। অতঃপর মেহু সামনে তাকাতেই থমকে গেল। চোখ দুটো স্থির তবে দৃষ্টি তীক্ষ্ণ! অর্ণবের সাথে রাফি কে দেখে বুক মুচড়ে উঠলো তার। নির্ঝর তার কাছে এসে আসতেই খপ করে তার হাত খানা ধরল সে। নির্ঝর হতবাক। মেহুকে অনেকটা অস্থির লাগছে তার কাছে। খানিকটা অস্বাভাবিকও বটে! মেহুর শরীর কাঁপছে! কিন্তু কেন?
বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইল সামনের দিকে। অর্ণবের সাথে একজন কে লক্ষ্য করল এতোক্ষণে। অর্ণবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে। অবাকের বিষয় হলো অর্ণবের চোখে মুখে ভয় নেই। শুধু তার দিকে তাকিয়ে আছে সে। মনে হচ্ছে এই যেন কতো বছরের চেনা তারা!
মেহুর হাত শক্ত করে ধরে বলল,
“কি হয়েছে মেহু!
“ওওও..
“কে তিনি? তুমি চেনো তাকে?
মেহু মাথা নাড়ল। কাঁপা কাঁপা গলায় ডাক দিল,
“অর্ণব!
ডাকটা অর্ণবের কানে ভেদ করল। এদিকে ফিরল সে। তার সাথে সাথে সেই লোকটাও ফিরল। মেহুকে দেখে মুচকি হাসল সে। মেহুর ঘৃণা ধরে করল। দাঁতে দাঁত চেপে শুধু তাকিয়ে রইল। মেহুর যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আজ’ই শেষ করে দিত এই লোকটাকে। তার মতে এই লোকটার বেঁচে থাকার অধিকার নেই!
রাফি অর্ণবের হাত ধরে মেহুর কাছে নিয়ে এলো। মেহেরিন’র কাছে আসতেই অর্ণব হাত ছাড়িয়ে মেহুর সামনে দাঁড়াল। মেহু আঁকড়ে ধরল তাকে। রাফি হেসে বলল,
“কেমন আছো মেহেরিন? অনেক বছর পর দেখা আমারদের!
ভ্রু কুন্চিত হলো নির্ঝরের। মেহু কে জিজ্ঞেস করল,
“তোমরা চিনো একে অপরকে!
“নির্ঝর চৌধুরী!
“জ্বি!
“আমি রাফি মল্লিক। হাম মেহেরিন’র জিজু!
কথাটা মোটেও পছন্দ হয় নি মেহুর। রাফি একটা রাক্ষস ছাড়া কিছু মনে করে না সে। নির্ঝরের বুঝতে বাকি নেই মেহুর এই অবস্থা কেন হয়েছে।
“ফ্যামেলি নিয়ে তাহলে শপিং করতে এসেছ! আর এই বুঝি.. বলেই রাফি হাত বাড়িয়ে অর্ণব কে ছুঁতে নিতেই মেহু তাকে সরিয়ে ফেলল। রাফি হেসে বলল, “অর্ণব!
মেহু শুকনো ঢোক গিলল। রিতা শপিং ব্যাগ হাতে রাফির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“বেবী বলছিলাম কি..
মেহু কে দেখে থমকে গেল সে। মেহু অর্ণবের হাত ধরে দ্রুত প্রস্থান করল। নির্ঝর রাফির দিকে তাকাল।রাফি তাকে দেখে মুচকি হেসে বলল, “মনে হচ্ছে আমাকে দেখে খুব শক পেয়েছে! নির্ঝর মুচকি হেসে শুধু বিদায় নিল। রিতা এসে পাশে দাঁড়াল রাফির। জিজ্ঞেস করল,
“মেহু!
“হ্যাঁ, শালিকা কে একটু শক দিলাম আর কি!
রিতা বাঁকা হেসে বলল,”মনে হচ্ছে সারপ্রাইজ টা নিতে পারে নি।
“এই তো সবে শুরু বেব! আরো অনেক সারপ্রাইজ ওয়েট করছে মেহুর জন্য!
জোরে হেসে উঠলো দুজন। রিতা কে আগলে ধরে সামনের দিকে আগাল তারা!
—-
সম্ভবত এই প্রথমবার উচ্চস্বরে কড়া গলায় শাসন করছে মেহু অর্ণব কে। অর্ণব রীতিমতো ভয়ে কাঁপছে। মেহুর চোখে রাগে লাল হয়ে আছে। পুরো শরীর কাঁপছে তার। মেহু’র এতো ভয়ংকর রূপ আগে কখনো দেখেনি অর্ণব। তার কাছে এটা নতুন। কখনো একটু ধমক দিয়ে কথা বলে নি মাম্মি তার সাথে। সেই মাম্মির এই আচরণ হুট করে মেনে নেওয়া টা তার কাছে অবান্তর!
নির্ঝর কে দেখেই তার পিছনে লুকিয়ে গেল। মেহু চেঁচিয়ে বলল, “সাহস হয় কি করে তোমার ওই লোকটার কাছে যাবার। না বলে কেন তুমি এখানে ওখানে চলে যাও। বেশি আদর করি বলে মাথায় চড়ে বসেছো তুমি!
অর্ণব ভয়ে আকড়ে ধরল নির্ঝর কে। নির্ঝর নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মেহু তার অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্ণবের দিকে ফিরল নির্ঝর। ভয়ে শক্ত হয়ে আছে সে। কোলে তুলে খাটে বসাল তাকে। পানি খাওয়ালো। কপালে চুমু খেয়ে কোলে বসাল। অর্ণব এখন কিছুটা হলেও স্বাভাবিক। নির্ঝর তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“অর্ণব সোনা, তোমার মাম্মি তোমাকে তখন না দেখে খুব ভয় পেয়ে গেছিল। তুমি তো জানো মাম্মি তোমাকে কতো ভালোবাসে। একবার তোমাকে না দেখলে পাগল হয়ে যায়। ভেবেছিল মাম্মি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছিল আর কখনো খুঁজে পাবে না তোমায়!
অর্ণব মাথা তুলে তাকাল। নির্ঝর হেসে বলল,
“মাম্মির উপর রেগে আছো!
অর্ণব মাথা নেড়ে না বলল। উঠে দাঁড়াল। গলা জড়িয়ে ধরল নির্ঝরের। নির্ঝর বলে উঠল,
“আচ্ছা নির্ঝর তোমার ভালো লাগবে মাম্মি কে ছাড়া থাকতে!
অর্ণব মাথা নেড়ে না না বলল।
“মাম্মি কে খুব ভালোবাসো!
মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল অর্ণব! নির্ঝর তাকে হেসে আগলে ধরল!
স্টাডি রুমের এক কোনে গুটিসুটি মেরে বসে আছে মেহু। চোখ থেকে অশ্রু ঝড়ছে কোন বাঁধা ছাড়া। অর্ণব কে হারিয়ে না হারানোর ভয় কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তাকে। এই অর্ণব’ই তো তার জীবন। তার জীবন তার থেকে কেড়ে নিলে সে তো নিঃস্ব! ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে মেহু। অর্ণব কে বকে তার মন অস্থির। এটা চাইনি তো সে। বেলী ফুলের ঘ্রাণ নাকে এলো তার। ঘ্রাণ টা খুব তীব্র! আজ অনেকদিন পর এই ঘ্রাণ পেলো সে। মুখ তুলে পাশে তাকানোর আগেই নিরুর গলা ভেসে এলো,
“কাদছিস রে মেহের..
“দি! তুমি এসেছ? এতোদিন পর মনে পড়ল আমায়।
“মনে তো তোকে প্রতিদিন’ই পড়ে মেহের, কিন্তু আমি যে আসতে পারি না। সেই অধিকার নেই আমার। কিন্তু আজ কেন এতো কাদছিস।
“জানো তো দি, অর্ণব কে আজ আমি বকেছি!
“খুব বকেছিস, কেন বকলি। ওকে বকে বেশি কষ্ট তো তুইই পেলি!
“কি করবো বলো, ওই রাফি.. বলেই মিনিয়ে গেল। নিরু হেসে দিল। নিরুর হাসিটা সতেজ। খিলখিলিয়ে হাসছে সে। সে হাসির শব্দ ঘরের চারদিক থেকে আসছে। মেহেরিন এতোক্ষণ চোখে ঝাপসা ঝাপসা দেখছিল। চোখের পানি মুছে তাকাল সে। নিরু হেসে বলল,
“তোর যা ইচ্ছে হয় বল। নাম ধরে ডাকলে ডাকতেই পারিস।
“আমি তাকে জিজু বলে মানি না দি। সে খু/নি। তোকে খু/ন করেছে সে। চিন্তা করিস না আমি এই সত্য প্রমাণ করেই ছাড়বো। তোকে ন্যায় দিবো।
আবারো হেসে উঠল নিরু। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে। শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে। মেহেরিন নিজেকে গুটিয়ে নিল। নিরুর বোধহয় শীত লাগলো না। সে দিব্যি বসে আছে তার পাশে। হঠাৎ বলে উঠল,
“তা মেহের নির্ঝর তো অনেক ভালোবাসে না তোকে!
মেহেরিন লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিল। অদ্ভুত হলেও এটাই সত্য, এমন পরিস্থিতিতে এ কেমন ব্যবহার তার। নিজেই অবাক হয়ে গেল।
“দেখলি তো, কি করম লজ্জা পাচ্ছিস। তোর হাবভাব বলছে তাকে অনেক ভালোবাসিস তুই।
“জানো তো দি, ও অনেক ভালো। খুব কেয়ার করে আমার। অর্ণব কেও অনেক আদর করে। অনেক ভালোবাসে আমায়
“তাহলে আমার বোন ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়েই গেল
শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলল মেহেরিন। বলে উঠল,
“ভালো তো আমি তোমাকেও বাসতাম দি। অনেক ভালোবাসতাম! তুমি তো ছেড়ে চলে গেলে আমায়। ভয় হয় না কোনদিন..
“চুপ! একদম চুপ। এমন অলক্ষণে কথা বলতে নেই মেহের। তোর ভালোবাসা পবিত্র, সুন্দর। কেন পাবি না তুই তাকে।
“তাহলে তোমাকে কেন হারালাম।
“আফসোস করতে নেই মেহের। যা হারিয়েছিস তা তোর ভাগ্যে ছিল না কিন্তু যা পেয়েছিস তা আগলে রাখ না। হারিয়ে যেতে দিস না।
“হারিয়ে ফেলতে কে চায় দি, তবু তো হারিয়ে যায়!
বলতে বলতে চোখ ভরে উঠল মেহেরিন’র। নিরুর চোখেও অশ্রু জলজল করল। ছোট বোনটিকে আগে আগলে রাখতো। এক ফোঁটা চোখের জল নিচে পড়তে দিতো না। সেই বোন আজ তার সামনে বসে কাঁদছে কিন্তু কিছুই করার নেই তার। মেহু নিজের চোখের অশ্রু সংযত করে বলল,
“বুঝলি তো দি, মা তো আমাকে ভালোবাসতো না বাবাও বাসে না।
“এসব কি বলছিস নিরু!
“নাহলে দেখ, তুই তো আমার সাথে এসে তাও দেখা করিস কই বাবা তো একবার এলো না।
নিরু অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। মেহেরিন’র গলা ধরে আসছে। ভারী গলায় বলে উঠলে,
“আমি খুব অলক্ষণে রে দি। সবাইকে শেষ করে ফেলি। জন্মের পর মা, তারপর তুই বাবা এরপর আর কে কে আছে জানি না। সুখ আমার কপালে সহ্য হয় না রে দি। মাঝে মাঝে খুব ভয় হয় অর্ণব কে নিয়ে। আমার মতো জীবন যেন বেচারার না হয়। নির্ঝরের যেন কিছু না হয় আমার জন্য। নিজেকে খুব অপয়া মনে হয়।
কি বলে সান্তনা দিবে বুঝতে পারল না নিরু। মানুষের মনে একবার কষ্ট এসে পড়ল অনেক কষ্ট এসে আঁকড়ে ধরে যার মধ্যে কিছু কষ্টের কোন কারণ নেই। নেই কোন অর্থ, তবুও মনে হয় এটা বোধহয় তার জন্য’ই হয়েছে। মেহের এখন সব কষ্ট একসাথে করছে। সবকিছুর দায় ও নিজেকেই করছে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল মেহু। নিরু হেসে উঠল। তার হাসির শব্দ চারদিক থেকে আসতে লাগল। কান্না বন্ধ করে সেই হাসির দিকে তাকিয়ে আছে মেহেরিন। নিরু উঠে দাঁড়াল। হাত বাড়িয়ে দিল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন বলে উঠল,
“না দি আরো কিছুক্ষণ থাকো না তুমি,এখনি চলে যাবে এই তো এলে। তুমি ছিলে আমার খুব ভালো লাগছিল।
“কিন্তু আমার লাগছে না। তোর এই বিচ্ছিরি কান্না কাটি আমার অসহ্য লাগে। সত্যি তোকে কাঁদলে খুব কুৎসিত লাগে! নে ধর আমার হাত খানা। উঠে দাড়া।
“না তোমাকে ছুঁতে নিলেই তুমি হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে, আমি চাই না তুমি চলে যাও। আমি আর কাঁদবো না যাও.
“না তুই মিথ্যে বলছিস, আবারো কাদবি তুই আমি জানি!
“দি…
“মেহের, মৃ/ত মানুষের জন্য কেউ অপেক্ষা করে না, ভাবে না। যা ভাবে তা সব জীবিত মানুষের জন্য। সবাই শুধু জীবিত মানুষের জন্য’ই অপেক্ষা কর। কেন জানিস তো! কারণ মৃ/ত মানুষ আর কখনো ফিরে আসে না। যদি ফিরে আসে তো জীবিত মানুষ। তাই মৃ/ত মানুষের জন্য আশা করিস না। এই যে দেখছিস হাত বাড়িয়ে রাখছি। এটা তোর আশার কারণ হতেও পারে। যদিও এটা সম্ভব না কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এই হাত ছুঁতে পারবি। শুধু তাই না, দেখবি এই হাত তোর বেঁচে থাকার কারণ হবে। তোকে আগলে রাখবে আজীবন। ছেড়ে যাবে না কখনো। বিশ্বাস কর…
মেহু মলিন চোখে তাকিয়ে আছে। তার চোখের মাঝে এক ধরণের আশা আলো দেখা যাচ্ছে। চোখের পাতা ফেলে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরু আবারো বলে উঠল,
“কি ভাবছিস, হাত বাড়া! বিশ্বাস করিস না আমায় মেহের!
“দি..
“হাত বাড়া মেহের..
মেহেরিন কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের হাত বাড়িয়ে দিল। নিরুর হাতের উপর হাত রাখতেই সে চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেল। মেহেরিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার অবাক আর দীর্ঘ হলো এটা দেখে তার সামনে নির্ঝর দাঁড়ানো। নির্ঝর তার হাত শক্ত করে ধরে আছে। মেহু অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর কিছু বলছে, তার ঠোঁট নড়ছে কিন্তু সেই আওয়াজ মেহুর কানে আসছে না। তার মনে একটা কথাই বাজছে, নিরু বলছিল সে কারো হাত ধরবে আর সত্যি সে কারো হাত ধরেছে। যাকে আগলে বেঁচে থাকার কথা বলছিল সে কি তাহলে নির্ঝর। নিরু কি তবে নির্ঝরের কথাই বলছিল!
নির্ঝরের কথা এতোক্ষণে তার কানে বাজল।
“মেহু! মেহু ঠিক আছো তুমি। কতোক্ষণ ধরে ডাকছি তোমায়। আমার কথা শুনতে পাচ্ছো তুমি।
মেহু মাথা নাড়ল। নির্ঝর মেহুর হাতের উপর হাত রেখে বসল। মেহুর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, অনেকক্ষণ ধরে ডাকছিলাম তোমায়। কোন সাড়াই দিচ্ছিলে না তুমি। শুধু কাঁদছিলে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পর তুমি হাতটা ধরলে নাহলে তো আমিই ভয়’ই পেয়ে গেছিলাম। কেমন লাগছে তোমার এখন, খুব কি খারাপ লাগছে!
মেহু মাথা নাড়িয়ে না না বলল। নির্ঝর কিঞ্চিত হেসে বলল,অর্ণবের কথা ভেবো না। সে এখন ঘুমিয়ে পড়েছে।
“নির্ঝর ও নিয়ে যাবে অর্ণব কে আমার থেকে।
কানে চুল গুলো গুজে দিল। হেসে চুমু খেল কপালে। আঁকড়ে ধরল বুকের মাঝে। বাহু দিয়ে শক্ত করে ধরে বলল, কখনো না, আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মেহু। অর্ণব কে তোমার থেকে আলাদা হতে দেবো না। রাফি তোমার থেকে অর্ণব কে নিয়ে যেতে পারবে না
মেহু জড়িয়ে ধরল নির্ঝর কে। নির্ঝর হেসে উঠল। দু হাত গালে রেখে বলল, আমি তোমার সাথে আছি, সারাজীবন থাকবো। কথা দিচ্ছি আমি। তোমার প্রত্যেকটা পথের সূচনা হবে আমার হাত ধরে আর আমি তার শেষ অবদি থাকবো। তোমার উপসংহার হবো আমি। নিরু দি’র খু/নের রহস্য আমি বের করে ছাড়বো। সবাইকে জানাবো তুমি কখনো তোমার দি’র কিছু করতে পারো না। খুব ভালোবাসো তুমি তাকে। কথা দিচ্ছি আমি..
মেহু এক দৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে রইল। তার প্রত্যেকটা কথা অভিভূত করল তাকে। নিজের মনের মাঝে গেধে রাখল প্রতিটা বাক্য। উঠে দাঁড়াল সে। নিচ থেকে কোলে জড়িয়ে নিল তাকে। মেহু গলা জড়িয়ে ধরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। কিছুটা পথ হেঁটে নির্ঝর তাকাল মেহুর দিকে। চোখ দিয়ে ইশারা করল তাকে। মেহু মাথা নাড়িয়ে বুকের মাঝে মাথা রাখল। নির্ঝর তাকে আগলে নিল! বিছানার এক কোনে ঘুমিয়ে আছে অর্ণব। মেহুকে তার পাশে বসাল। মেহু অর্ণবের হাত জোড়া আঁকড়ে ধরল। চুমু খেল সারা মুখে। ঘুমন্ত অর্ণব কিছুই জানতে পারল না। মেহুর মনে অনেক ক্ষোভ জমে আছে নিজের প্রতি। রাগ হচ্ছে, এতো ছোট বাচ্চা কে কিভাবে বকতে পারল সে। নির্ঝর এসে বসল তার পাশে। মেহু তাকে জড়িয়ে ধরে আবারো কাঁদতে লাগলো। বলতে লাগল, আমি এটা কিভাবে পারলাম নির্ঝর, ওকে কিভাবে বকলাম আমি, কেন বকলাম। ও কি করেছে বলুন তো। এমন হলে আমি কিভাবে একজন ভালো মা হতে পারবো বলুন তো। বাঁচ্চার প্রতি একটু ভালোবাসা দেখাতে পারছি না আমি! নিজের রাগ সামলাতে পারি না!
মাথায় হাত বোলাতে লাগাল নির্ঝর। অনেক কষ্টে কান্না থামাল তার। “তুমি খুব ভাল একজন মা। অর্ণব তার মাম্মির প্রতি এতো টুকু রাগ করে নেই।
মেহু মুখ তুলে তাকাল। নির্ঝর চোখ দিয়ে আশ্বাস দিল। “আচ্ছা এতো কেঁদো না, অর্ণব উঠে যাবে। কান্না থামাও!
মেহু কান্না থামানোর চেষ্টা করছে না কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। কেঁদেই যাচ্ছে সে। নির্ঝর তাকে এখানে রাখল না। কোলে তুলে নিয়ে এলো বেলকনির কাছে। বেতের চেয়ারে মেহেরিন কে কোলে নিয়ে বসল সে। মেহু গুটিসুটি মেরে বসে রইল। আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছে আজ পূর্ণিমা! রাতের জোৎস্না এসে পড়ছে পুরো ভূমিতে। নির্ঝর মুচকি হাসল। মেহুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,”আকাশের চাঁদ টা আজ খুব সুন্দর করে সেজে এসেছে। কিন্তু এখানে আমার চাঁদের এ কি হাল। কাঁদতে কাঁদতে এ তো দেখি পেঁচার মতো মুখ করে ফেলেছে।
প্রভাব পড়ল মেহুর উপর। নির্ঝর কিঞ্চিত হাসল। গভীর ভাবে তার কপালে চুমু গেল। মেহু শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তার শার্টের কলার। নির্ঝর গালে হাত রেখে বলল,
“যত’ই পেঁচার মতো লাগুক না কেন,আমার নিশি কন্যা আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দরী। এই পূর্ণিমা চাঁদেরও অধিক।
মেহুর মুখে হাসি ফোটাতে সক্ষম হলো সে। ঠোঁটের কোনে সামান্য হাসির দেখা গেল। নির্ঝর তাকে নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে নিল। মেহু সেই বুকের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়ল। নির্ঝর দীর্ঘক্ষণ তাকে নিয়ে এভাবেই বসে রইল। অতঃপর তার ঘুম গভীর হতেই তাকে এনে অর্ণবের পাশে শুইয়ে দিল। আর কথা দিল, মেহুর এই দুঃখের ইতি টানবে সে। আর কখনো কষ্ট পেতে দেবে না তাকে!
—–
ঘটনার অনেক মাস পেরিয়ে গেল। সেদিনের পর রাফি মল্লিক কে আর দেখা যায় নি। কোন সন্ধান ও পাওয়া যায় নি তার। তবে সময়ের মতো কিছুই থেমে নেই এখানে। নির্ঝর আর মেহুর প্রেমকথা এখন অনেক দূর অবদি এগিয়েছে। এর মাঝেই নির্ঝর সেই পুরনো নিরুর মৃত্যুর কেস রি ওপেন করেছে। শুধু তাই নয়, রাফির সম্পর্কে অনেক প্রমাণ জোগাড় করেছে সে। আর যাই হোক, রাফি কে এবার দোষী প্রমাণ করতে পারবে সে। ভালো একজন উকিলের সাথে কথাও বলে রেখেছে। পুরো ব্যবস্থা করে রেখেছে নির্ঝর। রহস্য উদঘাটনের সূচনা অবদি করেছে তবে পুরোটা এখনো তার জানার বাইরে। সেই রাতের এমন অনেক কিছুই ঘটেছে যা এখনো জানা যায় নি। তবে এর পেছনে রাফি আছে এটা নিশ্চিত। কারণ পুরনো সেই দাড়োয়ান আর বাড়ির কাজের লোকদের কাছ থেকে অনেক তথ্য জোগাড় করেছে সে। কিছু একটা হয়েছিল এটা নিশ্চিত। নিরু আত্ন/হত্যা করেনি এটাও নিশ্চিত। কিন্তু এতো কিছুর মাঝে একটা জিনিস’ই অদ্ভুত লাগছে আর তা হলো সে এতো কিছু করছে আর তা রাফির কাছে পৌঁছায় নি এটা হতেই পারে নি।
না রাফির কানে কথাটা গেছে। দেরি করে হলেও সে জানে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি তবুও চুপচাপ বসে আছে। ব্যাপারটা হজম করার মতো না। রাফি এমন মানুষ’ই না। তার চুপ থাকা মানে ভয় পাওয়া না। কিছু একটা ভাবছে না। আর তা খুব ভয়াবহ! মেহুর কোন ক্ষতির কথা ভাবছে না তো মেহুর কিছু একটা করে বসবে না তো আমার। না আর ভাবতে পারছে না। মাথা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে তার। খোঁজ লাগাতে হবে। রাফির পরের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানা টা খুব জরুরি।
ঘরে প্রবেশ ঘটল মেহুর। নির্ঝর কে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে বলে উঠল, “কি হয়েছে!
“মাথা ব্যথা করছে!
মেহু ঔষধ নিয়ে কাছে এসে বসল। নির্ঝর তার কোলে মাথা রাখল। মেহু কপালে ঔষধ লাগিয়ে দিল। মাথার চুল বেলি কেটে দিতে লাগল। নির্ঝর চুপচাপ শুয়ে রইল।
“এখন ভালো লাগছে আপনার!
“হুম অনেকটা!
“কি নিয়ে এতো ভাবছিলেন যে মাথা ধরে গেল!
“আমাদের বিয়ে নিয়ে..
“বিয়ে মানে..
নির্ঝর উঠে বসল। মেহুর দুই বাহু শক্ত করে ধরে বলল,
“আমি আবারো বিয়ে করব!
“কি?
“মানে তোমাকেই করবো।
“কেন?
“আরে যা,আমাদের বিয়ের কন্ট্রাক তো শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই না। এর মানে তো আমাদের বিয়ের মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। তাই আমরা আবার বিয়ে করবো।
“এখনো ১ মাস বাকি নির্ঝর!
“তো, আমি বলে দিচ্ছি এবার বিয়ে কিন্তু অনেক ধুমধাম করে করবো আর তার সাথে বাসরও!
“কি!
“কি মানে ভুলে গেলে, তোমার জন্য আমার আগের বাসর রাত খারাপ গেছে কিন্তু এবারের বাসরে তা সুদে আসলে নিয়ে নেব!
“ঘোড়ার ডিম!
বলেই উঠে পড়ল মেহু! নির্ঝর তাকে হিচকে টেনে নিজের কোলে ফেলল। দু হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে নাকের সাথে নাক ঘসে বলল, “বিয়ে তো তোমায় আমাকেই করতে হবে মেহু, বুঝলে!
মেহু মাথা নেড়ে না না করে বলল, না বুঝলাম না!
বাঁকা হেসে নির্ঝর তার দিকে ঝুঁকে বলল,
“দাড়াও বুঝাচ্ছি!
বলেই নির্ঝর তার দিকে আগাতে লাগল। ওমনি ঘরে দৌড়ে আসে অর্ণব। নির্ঝর মেহু কে ছেড়ে দ্রুত সোজা হয়ে বসল। মেহু ধপাস করে উঠে বসল। অর্ণবের হাতে একখানা বল। নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“ড্যাডি!
—-
শেষরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল নির্ঝরের। ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখেছে সে। বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরে গেল বুক ভরে শ্বাস নিতে। স্বপ্নের কথা ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে তার। বুকে ব্যাথা করছে। নির্ঝর বুকে হাত দিয়ে অনুভব করল, কিছু একটা হতে চলেছে। তার অনুভূতি জাগান দিচ্ছে। বলছে ভয়াবহ কিছু একটা হবে।
স্বপ্নটার বেশিরভাগ ভুলে গেলেও কিছুটা মনে আছে তার। স্বপ্নটার শেষ যেখানে মেহু কে সাপে কামড় দিল। আর এর পরেই মেহু আঁধারে হারিয়ে গেল। ঘুম ভেঙে গেল তার। আহ কি ভয়াবহ ছিল এর অনুভূতি। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে নির্ঝরের। মনে হচ্ছে পানির তৃষ্ণায় মারা যাবে সে।
পানি খাবার জন্য আবারো ঘরে প্রবেশ করল। পানির গ্লাস থেকে ঢক ঢক করে পানি খেল সে। বিছানায় কোনো মেহুর স্নিগ্ধ মুখ খানি দেখতে পারছে সে। হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল সেখানে। তার নিশিকন্যাকে ঘুমের মাঝে আরো সুন্দর লাগে। নির্ঝর অলপক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। হাত খানা আলতে ভাবে ধরে বলল, “আমি কিছু হতে দেবো না তোমায়”!
স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে ভাবতে সোফায় বসেই ঘুমিয়ে পড়ল। মেহু ঘুম থেকে জাগাল তাকে। নির্ঝর মুচকি হেসে মেহুর গালে হাত রাখল। “ঠিক আছেন আপনি?
“হুম, কি হবে আমার!
“না, এখানে ঘুমোলেন যে..
“রাতে বিছানায় ছিলাম, ভোরে ঘুমটা ভেঙে গেছিল তখন এখানে এসে বসেছি। চোখ কখন যে লেগে গেল টের পাইনি। আচ্ছা আমি ফ্রেস হয়ে আসছি!
বলছি নির্ঝর চলে গেল। মেহুর মনে হলো নির্ঝর পালিয়ে যাচ্ছে তার থেকে!
সবার আগে গাড়িতে এসে বসে আছে অর্ণব। ভিষণ উত্তেজিত সে। দাদু বলেছে আজ তাকে মেলায় নিয়ে যাবে। অর্ণব আজ অবদি কখনো মেলা দেখেনি। উৎসাহ প্রায় অনেকখানি। শীত চলে বসন্তে এসেছে আজ অনেকদিন হলো। মেলা বসেছে ফাল্গুন মাস উপলক্ষে! মেলায় নাকি অনেক কিছু থাকে। দাদু বলেছে তাকে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি খাওয়াবে। ওহ হ্যাঁ বলা হয় নি অর্ণব এখন রিদুয়ান কে দাদু বলতে শিখে গেছে। উন্নতি হয়েছে আজ কদিন হলো। এই উপলক্ষে মেলায় নিয়ে যাওয়া!
মেহু দাঁড়িয়ে আছে আয়নার সামনে। তৈরি হচ্ছে নির্ঝর, মেহু যে তার পেছন দাঁড়ানো এটা খেয়াল করি নি সে। মেহু দেখছে নির্ঝর কিছু একটা নিয়ে বেশ চিন্তিত কিন্তু সেটা কি?
“নির্ঝর!
মেহুর আচমকা ডাকে হতচকিয়ে গেল নির্ঝর! আয়নার সামনে মেহুর মুখ ভেসে উঠল। পেছনে দাঁড়ানো সে। সামনে ফিরে এগিয়ে এলো মেহুর কাছে। হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরল তাকে। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে। মেহু হেসে বলে উঠে,
“হৃদস্পন্দন চেক করছেন বুঝি!
“হুম
দুজনের মাঝেই নিরবতা। নির্ঝর এখনো জড়িয়ে ধরে আছে মেহু কে। তার ঘাড়ে মুখ গুজে বলল,
“আমি তোমাকে ভালোবাসি মেহু!
কিঞ্চিত হাসল মেহু। নির্ঝর কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমিও আপনাকে ভালোবাসি!
নির্ঝর মুখ তুলল। চুমু খেল প্রেয়সীর কপালে। তার হরিণী চোখ জোড়ার দিকে তাকিয়ে রইল। মেহু দু হাত নির্ঝরের গালে রেখে বলল, কি হয়েছে বলুন!
“তেমন কিছু না।
“তাহলে?
“খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি! দেখেছি আমি…
বলার আগেই মুখে হাত মেহু। বলে উঠল,
“স্বপ্নের কথা বলতে নেই। আল্লাহ’র কাছে দোয়া করব চিনি যাতে আমাদের সব খারাপ কিছু কাটিয়ে দেন!
নির্ঝর মুচকি হাসল। কিন্তু তার মনের অস্থিরতা কোন অংশে কমল না। মেহু হুট করেই চুমু খেয়ে বসল নির্ঝরের ঠোঁটে। নির্ঝরের ভাবনার ছেদ করল। মেহু লজ্জা পেয়েছে খুব। মিনমিনিয়ে বলল, চলুন!
যাওয়া আর হলো কোথায়, সেই তো নির্ঝর তাকে টেনে নিজের কাছে নিয়েই আসল। তার ঠোঁটজোড়া দখল করে নিল মুহূর্তে। মেহু তার শার্ট শক্ত করে ধরে রইল। বেশ খানিকক্ষণ পরে ছাড়ল নির্ঝর। আবারো আঁকড়ে ধরল বুকের মাঝে। ভয় যাচ্ছে না কিছুতেই। অপেক্ষা করে হাঁপিয়ে উঠেছে অর্ণব। গাড়ির হর্ণ বাজিয়ে জাগান দিল সে গাড়িতে অপেক্ষা করছে। নির্ঝর আর মেহু দুজন দুজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হেসে দিল!
পড়ন্ত বিকেল! নির্ঝরের কোন কাজেই মন বসছে না দেখে মেহু তাকে নিয়ে বাইরে চলে এলো। লং ড্রাইভে বের হবার মতন। নির্ঝর গাড়ি চালাচ্ছে আর মেহু তার ঘাড়ে মাথা রেখে বসে আছে। নির্ঝরের মন ভালো নেই সে জানে তবুও নির্ঝরের মুখ হাসি হাসি। সবটাই মেহু কে দেখানোর জন্য। মেহু বাইরের দিকে তাকিয়ে ভাবছে নির্ঝরের মুড কিভাবে ঠিক করা যায়। হঠাৎ চোখ পড়ল দূরে বাচ্চারা আইসক্রিম’র দোকানের সামনে ভিড় জমিয়েছে। নির্ঝরের আইসক্রিম বেশ পছন্দ তার অজানা নয়। মন ভালো করার ফন্দি পেয়ে গেল। দ্রুত গাড়ি থামিয়ে নেমে গেল সে। রাস্তার ওপারে ছুটে আসল আইসক্রিম নিতে। নির্ঝর নামল সাথে সাথে। ভয় তার প্রাণ টা মনে হয় শুকিয়ে যায়!
দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে মাঝারি আকারের একটা ট্রাক। এদিকে রাস্তা খালি পেয়ে নির্ঝর পা বাড়াল। দুই হাতে আইসক্রিম নিয়ে পা বাড়াল মেহুও। নির্ঝর মেহু কে দেখে হেসে দিল।
একবার এপাশে আরেকবার ওপাশে তাকাল। হ্যাঁ রাস্তা খালিই আছে। হঠাৎ পা বাড়াতেই দ্রুত গতিতে চলা ট্রাক টা ছুটে এলো। এতোক্ষণ বোধহয় এটার অপেক্ষায় ছিল সে। মুহূর্তেই চোখের সামনে ঘটে গেল অনেককিছু। হাতে থাকা আইসক্রিম গুলো এখন রাস্তায় পড়ে আছে। মানুষজন হু হু করে ছুটে আসছে। নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন। নিজের চোখ কে যেন বিশ্বাস করা কষ্টকর। ঝাপসা হয়ে আসছে সবকিছু। না এটা তো চায় নি সে। রক্তা/ক্ত দেহটা পড়ে আছে রাস্তার পাশে। মানুষ জনের ভিড়ও জমে গেছে। কেউ কেউ বলছে পুলিশ কে কল করতে, অ্যাম্বুলেন্স এ কল করতে। তাদের কোন দায় নেই তবুও তারা চেষ্টা করছে। কিন্তু যার দায় সবচেয়ে বেশি, তাকে ছাড়া তার জীবন অন্ধকার সে স্থির হয়ে শুধু দাঁড়িয়েই আছে। নিছক স্বপ্ন ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না তার!
আজ প্রায় ২০ দিন পর,
সাদা চাদরের উপর আরাম বেডে শুয়ে আছে একজন। তার হাত দুটো জড়িয়ে ধরে পাশেই একজন বসে আছে। হ্যাঁ সে বেঁচে গেছে কিন্তু জ্ঞান ফিরে নি এখনো। ডাক্তার বলে দিয়েছে মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছে বলে কোমায় যাবার সম্ভাবনা আছে। সার্জারি করানো হয়েছিল মাথায়!
মিটিমিটি করে চোখ খুলল সে। হাত ধরে বসে থাকা ব্যক্তির খুশি বলে ব্যক্ত করার মতো নয়। অস্থির হয়ে উঠল। কিছু কি লাগবে, কোথায় ব্যাথা করছে। ঠিক আছে কি সে… কোন কথা না বলে আশপাশ তাকিয়ে রইল সে। অপরিচিত কারো ছোঁয়া বিভ্রান্ত করছে তাকে। হাত দুটো সরিয়ে নিল হাতের মুঠো থেকে। অবাক হয়ে তাকিয়ে ছাড়া কিছু করার ছিল না তার। এতোটা কষ্ট পায় নি তবু কষ্ট পাওয়ার জন্য এতো টুকু বাক্য যথেষ্ট ছিল, কে আপনি?
#চলবে….