অনুভূতিতে তুমি 💖পর্ব-৫০

0
3949

#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৫০

[ পর্ব অধিক বড়। ফেসবুক লাইটে শো নাও করতে পারে ]

“তোর সমস্যা কি বল তো নির্ঝর, কি চাইছিস কি তুই!

“আজ এতোদিন হয়ে গেল না আছে তোর কোন দেখা আর না কোন ফোন।

“কল দিলেও তুলিস না বরং কেটে দিস। কি হয়েছে তোর। এতোটা বদলে গেলি কিভাবে!

চোয়াল শক্ত করল নির্ঝর। তার সামনে বসা ফরহাদ, আরিফ আর ঈশান একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে তাকে। তবে কোনটার জবাব না দিয়ে সোজা বলে উঠল,

“অনামিকার কোন খোঁজ পেয়েছিস তোরা।

ফরহাদের মেজাজ গেল ভিড়কে। ইচ্ছে করছে কিছু কুৎসিত কথা বার্তা বলতে। দাঁত কামড়ে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিল। আরিফ ফরহাদের ঘাড়ে হাত রাখল। মাথা ঠান্ডা করতে বলল। ঈশান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, এতোটা বদলে গেলি তুই!

“আমি বদলাই নি। আগে যেমন ছিলাম তেমনি আছি

“তুই আটকে আছিস নির্ঝর। তোর কাছে মনে হয় সময় সেখানেই আটকে গেছে, যেখান থেকে তুই শুরু করেছিলি। কিন্তু সত্যি বলতে মোটেও তেমন না। আগেরকার তুই আর এখনকার তুই’র মাঝে অনেক তফাৎ। আর আমাদের কাছে তোর এই তুই টাকে ভালো লাগছে না। আগের নির্ঝর কে’ই বেশি ভালো লাগতো।

“কিসব কথাবার্তা বলছিস। আমি আগেও যেমন ছিলাম আজও তেমন আছি আর ভবিষ্যতে থাকবো। আগেরকার আমি আর এখনকার আমি’র মাঝে কোন তফাৎ নেই।

ফরহাদ চট করে বলে উঠে,
“আছে! মেহেরিন কে ভালোবাসার পর এই নির্ঝর সেই নির্ঝর ছিল না। সে ঠিক ভুল বুঝতে পারতো। শুধু নিজের মজার কারণে কাউকে কষ্ট দিতো না।

“সোজা সাপ্টা বলে দে তোরা মেহেরিন’র জন্য তরফদারি করতে এসেছিস।

“ওর জন্য কেন করবো! যা সত্যি তাই বলছি!

আরিফের কথায় রেগে উঠলো নির্ঝর তবে প্রকাশ করল না। মুখ বুঁজে রইল। বুঝতে পারে না এই মেয়েটা কে কেন সবাই এতো বেশি ভালোবাসে।

ফরহাদ চেয়ারে আরাম করে বসে বলে, বাই দ্যা ওয়ে। অনামিকা কে খুঁজে লাভ নেই। নিউ বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ভালোই আছে সে।

“ওহ আচ্ছা এখন তাহলে এই কথা। ভালোই কথা বলতে পারিস তোরা আর সবচেয়ে বেশি তো মিথ্যে কথাটা। একদম গুছিয়ে বলতে শিখে গেছিস।

ফরহাদ রক্তবর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর তার দৃষ্টি উপেক্ষা করল না। স্পষ্ট ভাষায় বলল, কি এখন মারবি আমায়। এই এমন একটা মেয়ের জন্য এখন আমার বন্ধুতে প্রশ্ন তুলবি তুই।

ফরহাদ চোখ সরিয়ে ফেলল। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ছেড়ে দে। তোকে বলে লাভ নেই। যখন হারিয়ে ফেলবি তখন ঠিক’ই বুঝবি।

নির্ঝর কথার পিঠে বলল, এগুলো হারিয়ে ফেলাই ভালো। আর তা না হলে আর তো একদিন। এরপর সবকিছুই শেষ হয়ে যাবে। আর আজকের কথা আমিও মনে রাখবো!

বলেই বিয়ার হাতে উঠে পড়ল। আরিফ পেছন থেকে বহুবার ডাকল তবে শায় দিল না নির্ঝর। কয়েক পা আগাতেই দিশা কে দেখল সে। দিশা তাকে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে নির্ঝর নির্ঝর নিজেই ডাকল তাকে।

“দিশা!

হতচকিয়ে গেল দিশা। নির্ঝর হেসে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলল, কেমন আছো? অনেক দিন পর দেখলাম তোমায়!

দিশা দৃষ্টি অবাক! নির্ঝরের স্মৃতি চলে গেছে এটা সে শুনেছিল তবে এতোটা গুরুত্ব দেই নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে গুরুত্ব দেওয়া উচিত তার! দিশা মিষ্টি হেসে বলল, ভালোই আছি, তোমার খবর বলো। শুনলাম এক্সিডেন্ট করেছিলে নাকি।

“হ্যাঁ তবে এখন পুরো সুস্থ আছি।

“যাক ভালো।

“তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

“বলো!

“অনামিকার কোন খোঁজ জানো তুমি?

“অনামিকা!

“হুম এই ধরো ফোন নাম্বার কিংবা বাড়ির ঠিকানা।

“না এসব তো নেই তবে তুমি এসব কেন খুজছো! অনামিকা তো প্রায়ই আসে এখানে।

“কি বললে?

“হ্যাঁ গতকালও তো এসেছিল। আমরা খানিকক্ষণ কথাও বললাম, আড্ডা দিলাম।

“আর আজ! আজ আসে নি।

“ঠিক বলতে পারছি না তবে তুমি খুঁজে দেখতে পারতো।

নির্ঝর আর দাঁড়াল না। তন্ন তন্ন করে খুজতে লাগল সে। প্রথম ফ্লোর, দ্বিতীয় ফ্লোর করতে করতে এমনকি ছাঁদ অবদি চলে গেল সে। তবে অনামিকার কোন খোঁজ পেলো না। হঠাৎ করেই ছাঁদ থেকে অনামিকাকে দেখতে পেল সে। গাড়ির কাছে দাঁড়ানো সে। নির্ঝর কয়েকবার ডাকল তাকে তবে সে শুনতে পেলো না। দেরি না করে দৌড়ে নিচে নামল সে। তবে ততোক্ষণে অনামিকা চলে গেল। নির্ঝর হাঁফিয়ে উঠল। বেশ রাগ হচ্ছে তার। যাকে এতো দিন ধরে খুঁজে চলছে সে তার চোখের সামনেই ছিল অথচ তাকে দেখতে পেলো না নির্ঝর। তবে ফরহাদ?! ফরহাদ, আরিফ আর ঈশান তো জানতো অনামিকার কথা তবুও তাকে বলল না কেন। এমনটা হতেই পারে না ওরা এখানে আসে নি আর অনামিকা কে দেখেনি। দেখেছে ঠিক’ই তবে তাকে বলে নি। বলে নি কেন তাকে? রাগে মাথা ধরে যাচ্ছে নির্ঝরের।

ঘাড়ে কারো ছোঁয়া পেল নির্ঝর। পেছন ঘুরে ফরহাদ কে দেখল।

“কি হয়েছে তোর?

নির্ঝর রেগে ফরহাদের কলার চেপে ধরল। আরিফ আর ঈশান হতচকিয়ে গেল। নির্ঝর কে সরানোর চেষ্টা করল তারা। নির্ঝর চেঁচিয়ে বলতে লাগল, বল! বল তুই জানতি না?

“কি জানতাম?

“কি জানতাম না, আর এতো রেগে আছিস কেন?

নির্ঝর রেগে ফরহাদ কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। অতঃপর বলে উঠল, অনামিকা প্রতিদিন’ই এখানে আসে। তুই সবটা জানতি তবুও আমাকে কেন বললি না এসব বল কেন? এই তুই আমার বন্ধু! এভাবে বন্ধুত্ব রাখছিস।

ফরহাদ উঠে দাঁড়াল। অতঃপর শান্ত গলায় বলল, হ্যাঁ আমি জানতাম। আমি ইচ্ছে করেই তোকে বলি নি।

“কেন বলিস নি বল কেন?

“কারণ আমি তোর বন্ধু। তোর ভালো চাই আমি। তাই বলি নি।

“মেহেরিন! আমি জানি তুই এমনটা ওর জন্য করেছিস। কি তাই তো!

“হ্যাঁ তাই! কারণ ও তোর জন্য ঠিক।

রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে নির্ঝরের। রাগে ফুসফুস করতে করতে চলে এলো। ইচ্ছে করছে আর কথা বাড়াতে। মেহেরিন! মেহেরিন! আর মেহেরিন! নামটার প্রতি এখন ঘৃণা জমে গেছে। তার জন্য সবাই তাকেই ভুলে গেছে। ওর দিকটাই সবাই ভাবছে অথচ তাকে নিয়ে ভাববার সময় কারো নেই।

দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে নির্ঝর। রাগে তার মাথা ধরে গেছে। কিছুই ঠিক বলে মনে হচ্ছে না তার। ফরহাদ, ঈশান আর আরিফ তার গাড়ির পিছু পিছু আসছে। মাঝে মাঝে হর্ণ বাজিয়ে নির্ঝর কে গাড়ি থামানোর কথাও বলছে। কিন্তু নির্ঝর কিছুই শোনার জন্য প্রস্তুত নয়। রাগের বশে উল্টাপাল্টা কিছু না করে বলে নির্ঝর। ফরহাদ নিজের গাড়ির গতি বাড়িয়ে নির্ঝরের সমকক্ষে নিল। নির্ঝরকে ডাক অবদি দিল। কিন্তু নির্ঝর তা পাত্তা না দিয়ে দ্রুত গতিতে চলে গেল। অতঃপর ফরহাদ গাড়ির গতি বাড়ানোর আগেই থামিয়ে দিল। কারণ লাল সিগন্যাল পড়ে গেছে!

খান বাড়িতে ঢোকার আগেই নির্ঝরের গাড়ি থেমে গেছে। গাড়ির তেল শেষ। এরকম শেষ মুহূর্তে এসব মোটেও ভালো লাগে নি তার। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটা ধরল সে। চাবি দিয়ে জন কে পাঠালো গাড়ি আনতে। ঘরের সদর দরজা খোলাই ছিল। তবে একজনের গাড়ি পার্কিং করতে দেখে নির্ঝরের রক্ত যেন মাথায় উঠে গেল। নিরবের গাড়ি! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত ১২ টা বাজে। এই ছেলেটা এখনো এই বাড়িতে কি করছে। এতো রাত অবদি এই বাড়িতে থাকার মানে কি?

মাথা ঠান্ডা করার চেষ্টা করল নির্ঝর। তার’ই বা কি! কে আসল কে গেলো এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন ইচ্ছা নেই তার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরের ভেতর ঢুকল নির্ঝর। ঘরের দিকে তাকাতেই তার মাথা আবারো গরম হয়ে গেল। নিরব চুমু খাচ্ছে মেহেরিন’র কপালে। নির্ঝর হাতে তালি দিয়ে জোরে জোরে বলল, বাহ!

নিরব এদিকে ফিরল। নির্ঝর কে দেখে উঠে দাঁড়াল সে। নির্ঝর বলে উঠল, আহ দাঁড়িয়ও না, যা করছিলে করো। এসব করতেই তো এখানে এসেছ তুমি নাকি ঢেকে আনা হয়েছে তোমাকে!
মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে কথা টা বলল নির্ঝর। যদিও মেহেরিন’র সেদিকে খেয়াল নেই কারণ সে ঘুমিয়ে আছে। নিরব পা বাড়িয়ে নির্ঝরের কাছে এলো। শান্ত গলায় বলল, যা ভাবছ তা না।

নির্ঝর হাসল। জোরে জোরে হাসল। তার হাসির শব্দে মেহেরিন’র চোখ মিনিমিনি করতে লাগল। নির্ঝর বলল, তাই হবে। আমি যা ভাবছি তোমরা তার থেকেও এগিয়ে আছো।

“নির্ঝর ভদ্র ভাবে কথ বলো।

“বাহ! অভদ্রতামি করবে তোমরা আর আমি বললেই দোষ।

“ফালতু কথা বন্ধ করো। আর যাই হোক একটা মেয়ে কে সম্মান দিতে শিখো।

“মেয়েদের সম্মান দিতে আমি জানি তবে তুমি হয়তো জানো না সব মেয়েরা সম্মান পাওয়ার যোগ্য হয় না।

মেহেরিন”র ঘুম ভাঙল।‌ নির্ঝর হেসে তার কাছে এসে বলল, নাও উঠে গেছে এনি!

মেহেরিন মাথায় হাত রেখে সামনের দিকে তাকাল। তার মাথা অসহ্য যন্ত্রনা। তবুও শান্ত গলায় বলল, কি হয়েছে নির্ঝর!

“হবার আর কি বাকি রেখেছ তুমি।

“মানে?

নিরব এসে বলল, নির্ঝর চুপ করো। এসব ফালতু কথার কোন মানে হয় না।

“আমি যাই বলি না কেন তা তো ফালতুই মনে হবে আর তোমরা। তোমরা যা করছিলে তা। এসব কি ছিলো!

নিরব রেগে এসে নির্ঝরের কলার চেপে ধরল। মেহেরিন উঠে দাঁড়াল। নিরব রেগে বলতে থাকল, এতটা নিচ কিভাবে হও তুমি। যে মেয়েটা তোমাকে এতো ভালোবাসে তাকে নিয়ে এতোটা নিচ মানসিকতা কিভাবে হয় তোমার। এই বলো তুমি ভালোবাসো মেহু কে। এই ভালোবাসা তোমার। তোমার জন্য আজ মেহুর এই অবস্থা তবুও তাকেই তুমি নোংরা কথা বলছো।

নির্ঝরও নিরবের কলার চেপে ধরল, রেগে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো। নিরবও তাই। মেহেরিন দুজন কে ছাড়ানোর চেপে করছে। এক পর্যায়ে চেঁচিয়ে উঠে সে। নিরব হাত ছেড়ে দেয়। নির্ঝর ও হাত ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ায়। মেহেরিন নিরব কে সরিয়ে নির্ঝরের সামনে দাঁড়িয়ে বলে, এমন ভাবে রেগে আছেন কেন আপনি! কি হয়েছে কি?

“ওহ আচ্ছা! তাহলে এখন তোমাদের কান্ডকারখানা আমি এখন ঢোল পিটিয়ে বলবো। বাহ!

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকালো। নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে বলল,এতো ন্যাকামি করো না। এসব তোমাকে মানায় না। সারাদিন তো বলো আমাকে ভালোবাসো। আর রাত হতেই অন্যজনের সাথে। বাহ!

“নির্ঝর…

“কি নির্ঝর কি? ভুল কি বলেছি আমি। মিথ্যে নাকি সব। গতকাল তুমি জড়িয়ে ধরো নি ওকে। কি ধরোনি। ভেবেছিলে আমি কিছুই দেখবো না। আর আজ! আজ তো একদম বাসার মধ্যে এনেই…

বাকি কথা বলার সাধ্য হলো না নির্ঝরের। মেহেরিন খুব জোরে চড় মেরে চুপ করালো তাকে। ফরহাদ, ঈশান আর আরিফ এসে এমন কিছু দেখতে পাবে বলে আশা করে নি। দরজার কাছেই থমকে গেল তারা। মেহেরিন বলে উঠল, চুপ করুন। আপনাকে ভালোবাসি বলে আপনার সব কিছু সহ্য করতে পারি কিন্তু তাই বলে নিজের চরিত্র ভুলতে পারি না আমি।‌ কে আপনি আমার চরিত্রে আঙুল তোলার।

নির্ঝর দাঁতে দাঁত নিজের ক্ষোভ জমিয়ে রাখল। মেহেরিন’র চোখের পানি জলজল করছে। আর যাই হোক নির্ঝরের থেকে এমনটা আশা করি নি সে। মেহেরিন তার কাছে আসল। তার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।নির্ঝরের চোঁখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভালোবাসতাম আর ভবিষ্যতে ভালোবাসবো। কি বলুন তো নির্ঝর, মানুষ বদলায় কিন্তু ভালোবাসা বদলায় না। আমার ভালোবাসা এতোটা তুচ্ছ না যে এতো তাড়াতাড়ি তা হারিয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ এটা ঠিক। আজকের ঘটনার পর আপনার সাথে আর আমি থাকছি না। শুধু মাত্র কালকের দিন। এরপর আপনি আপনার রাস্তায় আর আমি আমার। সবসময় চাইতাম আপনি যেন সবটা মনে করতে পারেন। কিন্তু এখন চাইবো আপনার সেই হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো যেন আর মনে না পরে। তাহলে আর বেঁচে থাকতে পারবেন না। তিলে তিলে নিজেকেই শেষ করে দিবেন। নিজের এই কুৎসিত মানসিকতা বেঁচে থাকতে দেবে না আপনাকে।

শ্বাস ফেলে সরে আসল মেহেরিন। নির্ঝর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ জমিয়ে রাখছে। মেহেরিন চোখের পানি মুছল। শক্ত গলায় বলল, কালকের পর এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন আপনি!

বলেই মেহেরিন পেছন ঘুরতে নিল। ফরহাদ ওরা পা বাড়াল নির্ঝরের দিকে। হঠাৎ করেই নির্ঝর বলে উঠল,‌ কিন্তু বাড়ি তো আমার নামে নাহ!

নির্ঝরের এই কথাটা সবাইকে হতবাক করে দিল। মেহেরিন হাসল! তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, তাহলে আমি বের হয়ে যাবো!

নিরব পেছন থেকে ডাক দিল, মেহু!

মেহেরিন তার উদ্দেশ্যে বলল, রাত হয়ে গেছে। বাড়ি চলে যা। আর কিছু নিয়ে ভাবতে হবে না তোকে। আমি এতোটা দুর্বল নই। একজন এখনও আছে যার জন্য আমার বেঁচে থাকতে হবে। আমার অর্ণব!

বলেই আর দাঁড়াল না মেহেরিন। সামনে ফিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে পা বাড়াল নিজের ঘরের দিকে। নিরব আর দাঁড়াল না। চলে এলো সেখান থেকে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। কি চাইলো আর কি হলো। সবটা ঠিক করতে চেয়েছিল সে কিন্তু এখানে সবটা আরো বিগড়ে গেল। ফরহাদ নির্ঝরের কাছে এসে দাঁড়াল। নির্ঝর চুপ করে সামনের দিকেই তাকিয়ে আছে। মেহেরিন সবার সামনে চড় মেরেছে তাকে।‌ এই অপমান নিতে পারছে না সে!

—–

ভোর হতেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল নির্ঝর। মেহেরিন সারারাত ঘুমায় নি, তবে ঘুমটা তার দরকার ছিল। একরাত না ঘুমিয়ে আরো অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। তার ক্লান্ত দেহ টা যেন চলাচলের শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নির্ঝর কে চলে যেতে দেখে বিছানায় এসে শুইয়ে পড়ল সে। তৎক্ষণাৎ ঘুমিয়ে পড়ল মেহেরিন।‌ কখন যে চোখ দুটো লেগে গেল বুঝতে পারল না।

সারাদিন পেরিয়ে গেল। নির্ঝর এখন অবদি বাসায় ফিরে নি। মেহেরিন বিকেল বেলায় অর্ণব কে চৌধুরী বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে। নিরব কে বলে কানাডার ভিসাও তৈরি করতে বলেছে। এই দেশে আর থাকছে না সে। সবকিছু থেকে দূরে চলে যাবে!

অনেকক্ষণ ধরেই ড্রিংক করছে নির্ঝর তবে তার নেশা হচ্ছে না।‌ ফরহাদ ওরা এসে বসেছিল তবে কেউই কিছু বলার সাহস হয় নি। নির্ঝরের রাগ এখন অবদি কমে নি। অতঃপর ব্যর্থ হয়ে চলে গেল তারা। নির্ঝর কে একা বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এলো দিশা।

“মন খারাপ নাকি হ্যান্ডসামের!

“না!

“কি বলছো না, কখন থেকেই তো দেখছি এখানে বসে আছো। ড্রিংক ও করছে তবে নেশা হচ্ছে না। ব্যাপারটা কি?

“নেশা করতে চাইছি কিন্তু হচ্ছে না!

দিশা হাসল। নির্ঝরের ঘাড়ে হাত রেখে বলল, আমি কিন্তু চাইলে একবার ট্রাই করতে পারি। কথা দিচ্ছি অনেক নেশা হয়ে যাবে তোমার।

নির্ঝর চোখ তুলে তাকাল দিশা’র দিকে। দিশা তার গালে হাত রেখে বলল, এতো দেখছি ব্যর্থ প্রেমিকের চোখ!

নির্ঝর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নিচু করে ফেলল। দিশা হেসে তার কোলে এসে বসল। গলা জড়িয়ে ধরল তার। নির্ঝর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করল। দিশা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। কানে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, আমি তৈরি নির্ঝর! তুমি শুধু একবার হ্যাঁ বলো!

নির্ঝর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। দিশা হেসে ফেলল। নির্ঝর তাকে কোলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। পাবের রুম গুলোর একটাতে নিয়ে এলো তাকে।‌ দিশা শক্ত করে জড়িয়ে বসে আছে। নির্ঝর তাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। অতঃপর উঠে যেতে নিতেই দিশা তার কলার চেপে ধরল। চুমু খেল নির্ঝরের গালে। নির্ঝরের অস্বস্তি লাগছে। দিশা কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল সে। কিন্তু দিশা তার হাত ধরে ফেলল। নিজের হাত তার গালে রাখল সে। নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল দিশার মুখের দিকে। কেন জানি মনে হচ্ছে এরকমটা এর আগেও করেছে সে। দিশার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এটা সেই চোখ না যাকে খুঁজছে সে। মেহেরিন’র চোখ জোড়ার কথা খুব মনে পড়ছে তার। দিশা ডাক দিল, নির্ঝর!

নির্ঝর চমকে উঠল। ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে রইল দিশার। হাত দিয়ে তার ঠোঁট দুটো ছুঁতেই মেহেরিন কে মনে পড়ল তার। মেহেরিনের সেই বৃষ্টির রাতে ঠোঁটের স্পর্শ মনে করিয়ে দিচ্ছে তাকে। এ কি? দিশার সাথে থেকেও কেন মেহেরিন কে মনে পড়ছে তার।

দিশা আবারো নির্ঝরের কাছে এগিয়ে আসতেই নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। না এখানে থাকা সম্ভব না। পকেট থেকে টাকা বের করে বিছানায় রাখল সে। অতঃপর হন হন করে হেঁটে চলে এলো। দিশা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল!
এ কি করতে যাচ্ছিল সে। এতোক্ষণে বোধ ফিরল নির্ঝরের। না যা করছিলো তা একদম ঠিক কাজ নয়। তবে দিশা কে ছুঁতেই কেন বার বার তার মেহেরিন’র কথা মনে পড়ল। কেন?

এসব ভাবতে ভাবতে কারো সাথে ধাক্কা গেল নির্ঝর। তার দিকে ফিরে সরি বলতেই থমকে গেল সে। আরে এতো অনামিকা। অনামিকার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্ঝর। অনামিকা তাকে দেখে মুচকি হাসল। অতঃপর চলে যেতে নিলে নির্ঝর তার হাত চেপে ধরল। অনামিকা হতভম্ব হয়ে গেল। নির্ঝর জড়িয়ে ধরল তাকে। বলে উঠল, তুমি জানো না কতোদিন ধরে খুঁজছি আমি তোমায়। কোথায় ছিলে তুমি এতোদিন? বাড়ি কবে চেঞ্জ করেছ আর তোমার ফোন নাম্বার। কি হচ্ছে কি এসব অনামিকা!

নিজের থেকে নির্ঝর কে ছাড়াল অনামিকা। অবাক গলায় বলল, তুমি এসব কি বলছো।

“আমি কি বলছি মানে! অনামিকা তোমার কি হয়েছে?

“আমার কি হবে নির্ঝর, তোমার কি হয়েছে তুমি সেটা বল। এরকম অদ্ভুত আচরণ কেন করছো তুমি।

“অনামিকা আমি তোমার ভালোবাসি!

অনামিকা ভ্রু কুঁচকালো। হেসে বলল, নির্ঝর! আমাদের মাঝে তো সব শেষ হয়ে গেছিল তাই না

“তুমিও বলছো এই কথা! অনামিকা আমি…

হুট করেই পাশ থেকে কেউ বলে উঠল, বেবী!

নির্ঝর থমকে গেল। অনামিকা নির্ঝরের হাত সরিয়ে দিল। ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল, বেবী! আমি আসছি!

অতঃপর চলে যাবার আগেই নির্ঝর আটকালো তাকে। বলে উঠল, এসব কি হচ্ছে অনামিকা। আর এই ছেলেটা..

“আমার বয়ফ্রেন্ড।

“অনামিকা তুমি এমনটা কিভাবে করতে পারো।

অনামিকা কিছু বলবে তার আগেই ছেলে টা এসে নির্ঝরের হাত সরালো। অনামিকার হাত ধরে বেরিয়ে এলো তাকে নিয়ে। নির্ঝর সেখানেই থমকে দাড়িয়ে গেল। এ কি হচ্ছে? অনামিকা কিভাবে অন্য ছেলের সাথে। নাহ এমনটা হতে পারে না। নির্ঝর ছুটলো তার পিছনে। বাইরে এসে পেছন থেকে ডাক দিল।

“অনামিকা!

অনামিকা দাঁড়িয়ে গেল। তার বয়ফ্রেন্ড তাকিয়ে রইল তার দিকে। নির্ঝর কে কিছু বলতে নেবার আগেই অনামিকা তার বয়ফ্রেন্ড কে চলে যেতে বলল। নির্ঝরের সাথে কিছু কথা বলার আছে তার। সে চলে গেল। অনামিকা হেঁটে এলো নির্ঝরের কাছে।

“এসব কি হচ্ছে আমার সাথে অনামিকা।

“যা হবার ছিল তাই নয় কি?

“কেন? কিভাবে? তুমি কিভাবে পারো অন্য জনের সাথে থাকতে।

“যেভাবে তুমি পারো অন্য জনকে বিয়ে করতে।

“অনামিকা আমি…

“নির্ঝর! আমি শুনেছিলাম তোমার এক্সিডেন্ট হয়েছে এটাও শুনেছিলাম তোমার স্মৃতি চলে গেছে। তাই বলে যে এখনো ফিরে আসে নি এটা ভাবতে পারি নি।‌ তোমার হয়তো মনে নেই আমরা শেষবার কথা বলেছিলাম তোমার এনগেজমেন্ট’র দিন। সেই রাতে তোমার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করেছিলাম আমি।

“অনামিকা আমি ভালোবাসি তোমায়।

“ভুল! তুমি কখনো আমাকে ভালোবাসো নি। আমি শুধু তোমার জেদ ছিলাম। যাকে সবার সামনে নিজের গার্লফ্রেন্ড করতে চেয়েছিলে তুমি। তবে হ্যাঁ এটা সত্যি আমি ভালোবেসেছিলাম তোমায় কিন্তু তুমি বাসো নি। কারণ আমাকে ভালোবাসলে তুমি মেহেরিন কে কখনো ভালোবাসতে না। তোমার মনে আছে নির্ঝর, এখানে একটা পার্টি থ্রু করেছিলে তুমি। সেখানে বলেছিলে তোমার বউ সবচেয়ে সুন্দরী।

নির্ঝর হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। বলে উঠল, কিছু মনে নেই আমার। কিছু মনে নেই। আমার শুধু এতো টুকু মনে আছে একজন কে ভালোবাসতাম আমি। আমার স্বপ্নে সেই মেয়েটা আসতো। আর সেটা তুমি ছিলে!

“তুমি কি সত্যি আমাকে স্বপ্নে দেখেছিলে!

নির্ঝর থমকে গেল। অনামিকা হেসে নিচু হয়ে বসে বলল, তুমি কি সত্যি আমাকেই দেখেছিলে নির্ঝর। আচ্ছা আমার আর তোমার কোন স্মৃতি আদৌও মনে পড়ে তোমার। যদি তা না হয় তাহলে কিভাবে ভেবে নিলে তুমি তুমি আমাকেই ভালোবাসো। নির্ঝর তুমি মেহেরিন কে ভুলতে পারো তবে মেহু কে না। তোমার ভালোবাসা ছিল সে। তোমার স্মৃতি ঠিক’ই হারিয়ে গেছে তবে ভালোবাসা নয়। এখনো তোমার মনে হয় একজন কে ভালোবাসো তুমি। তাহলে স্বীকার কেন করছো না ও মেহেরিন ছিল। তোমার মেহু! নির্ঝর তোমার ভালোবাসা তো মনে আছে তবে ভালোবাসার অনুভূতি ভুলে গেছো তুমি। সেই অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করো। অনুভব করতে শিখো। কাকে অনুভব করছো তুমি, কে আছে তোমার সেই অনুভূতিতে!

নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অনামিকার দিকে। অনামিকা উঠে দাঁড়াল। হেসে বলল, ভুল পথে হাটছো তুমি। সময় আছে নিজের পথ বদলে ফেলো। নাহলে সবকিছু হারিয়ে ফেলবে।

অতঃপর চলে গেল অনামিকা। নির্ঝর অসহায়ের মতো সেখানে বসে রইল। খুব অসহায় লাগছে তার নিজেকে। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।

মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে প্রচুর ড্রিংক করল নির্ঝর। নিজের অসহায়ত্ব বুঝতে পারছে সে। কেউ তো একজন আছে তার অনুভূতিতে কিন্তু কে সে। মেহেরিন! সত্যি কি তাই। নাহলে সবাই কেন তার কথাই বলছে তাকে। কিছু বুঝতে পারছে না নির্ঝর কিছু না। মেহেরিন নামের মেয়েটা তার মাথায় ভর করে আছে। তার মাথায় পুরো জুড়ে আছে সেই মেয়েটা!

রাত একটার দিকে বাড়ি ফিরল নির্ঝর। মেহেরিন তার আশায় বসে ছিল। নির্ঝর কলিং বেল চাপ দিতেই মেহেরিন দরজা খুল। মাতাল অবস্থায় ঘরে ফিরেছে নির্ঝর। মেহেরিন এটা আশা করেছিল। নির্ঝর মেহেরিন কে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। বলে উঠল, তুমি এখনো জেগে আছো।

“ভিতরে আসুন!

বলেই তাকে ধরে ভিতরে আনল। দরজা বন্ধ করে তার দিকে ফিরতেই নির্ঝর তার বাহু জোড়া শক্ত করে ধরল। তাকিয়ে রইল তার চোখের দিকে। মেহেরিন বলে উঠল,
“ছাড়ুন নির্ঝর।

নির্ঝর বলে উঠল,কি আছে তোমার এই চোখের মাঝে। তুমি জানো তুমি সবসময় আমার মাথায় ভর করে থাকো। আজকে একটা মেয়ের সাথে ছিলাম আমি। খুব কাছে ছিলাম ওর। কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকাতেই তোমার কথা মনে পড়ছিল আমার। কে তুমি? কেন করছো আমার সাথে এসব!

মেহেরিন’র গলা ভারি হয়ে আসছিল। তবুও নিজেকে সামলে বলল, নির্ঝর আপনার নেশা হয়ে গেছে। ঘরে চলুন।

“আমি তো নেশা আজ করলাম কিন্তু তুমি তো সবসময় আমাকে আসক্ত করো।
মেহেরিন কে ছেড়ে দিল নির্ঝর। ধপাস করে পড়ে গেল সে। মেহেরিন ছুটে এলো। নির্ঝর কাঁদতে লাগলো। বলে উঠল, অনামিকার সাথে দেখা হয়েছিল আজ। তুমি জানো এখন সে অন্যকারো। ও কি আমাকে বলছিল আমি নাকি কখনো ভালোবাসি নি ওকে। তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। আচ্ছা তুমিই বলো না এটা কি সম্ভব। তোমাকে ভালোবাসলে কিভাবে ভুলে যাবো আমি তোমাকে।

“নির্ঝর!

নির্ঝর মুখ তুললো। মেহেরিন’র গালে হাত রেখে বলল, তুমি জানো, তুমি আমার সাথে থাকলে খুব কষ্ট হয় আমার। আমার মাথায় খুব যন্ত্রণা হয়। মনে হয় আমি তখন’ই মারা যাবো। কিসব ভেসে উঠে আমার চোখের মাঝে। শুধু তোমাকেই দেখতে পাই আমি। সইতে পারি না আমি সেসব। তাই তোমাকে চলে যেতে বলি। কিন্তু যখন তুমি চলে যাও। তখন আমার এই বুকের মাঝে প্রচুর ব্যাথা হয়। আমি বুঝতে পারি না কেন হয়। তুমি থাকলেও আমার কষ্ট হয় না থাকলেও আমার কষ্ট হয়। কি করবো আমি!

মেহেরিন কেঁদে উঠলো। নির্ঝরের এসব কষ্ট অনুভব করতে পারছে না। নির্ঝর নিজে বুঝতে পারছে না তবে মেহেরিন বুঝতে পারছে। নির্ঝর তাকে কষ্ট দিয়ে নিজেও সুখে নেই।

নির্ঝর আবারো বলতে শুরু করল, রোজ রাতে একটা মেয়েকে স্বপ্নে দেখে আমি। প্রতিদিন আমি তাকে বলি আমি তাকে ভালোবাসি। জানো আমি ভেবেছিলাম মেয়েটা বুঝি অনামিকা কিন্তু অনামিকা বলল মেয়েটা ও না। মেয়েটা তুমি। আচ্ছা সত্যি কে সে তুমি!

“নির্ঝর আপনি উঠুন এখান থেকে!

“না তুমি বলছো না কিছু। কিছুই বলছো না তুমি।

“আমি বললেই কি আপনি বিশ্বাস করবেন। এতো দিন ধরে তো বলেই যাচ্ছি আমি। বিশ্বাস করেছেন কি আপনি!

নির্ঝর মেঝেতে বসে পড়ল। চুপ করে রইল খানিকক্ষণ। অতঃপর উঠে দাঁড়ালো কিন্তু ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারল না। মেহেরিন তাকে এসে ধরল। নির্ঝর তার দিকে ফিরে বলল, তুমি চলে যাবে কাল। আগামীকাল আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তুমি। খুব দূরে চলে যাবে। আমি চাই না কাউকে, চাই না!

“আচ্ছা চলে যাবো আমি। তখন কি ঠিকমতো থাকতে পারবেন আপনি!

নির্ঝর ঢোক গিলল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে। তার চোখের জল মুছিয়ে বলল, কাঁদছো কেন তুমি। আমি তো তোমাকে কিছু বলি নি। বলেছি চলে যেতে নাহলে আমি বার বার অপমান করবো তোমায় আর তুমি কষ্ট পাবে। কারণ আমি মনে করতে পারছি না তোমায়।

দুই হাত দিয়ে মেহেরিন’র গাল আঁকড়ে ধরে বলল, কিছু তো ছিলে তুমি। আমার জীবনে অস্তিত্ব আছে তোমার। কিন্তু আমি মনে করতে পারছি না কেন আমি জানি না। তবে তুমি ছিলে। কোথাও না কোথাও ছিলে তুমি।

মেহেরিন আবারো কেঁদে উঠলো। নির্ঝর তার চুল গুলো কানে গুঁজে দিল। হাত দিয়ে স্পর্শ করল তার ঠোঁট জোড়া। খুব পরিচিত লাগছে ঠোঁট জোড়া। মেহেরিন চোখ মেলে তাকিয়ে দেখল নির্ঝর তার কাছেই আসছে। নির্ঝরের শার্ট আকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিল সে। নির্ঝর চুমু খেল তার ঠোঁটে। মেহেরিন শেষবারের মতো নির্ঝর কে আঁকড়ে ধরল। চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল তার। কিছুক্ষণ পরই নির্ঝর ছেড়ে দিল তাকে। পেছন ফিরে যেতেই ধপাস করে পড়ে গেল সোফায়।‌ মাতাল অবস্থায় সেখানেই শুইয়ে পড়ল। মেহেরিন কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে! যদি জানতো তাঁদের ভালোবাসার পরিণতি এমনটা হবে তবে কখনোই ভালোবাসতো না সে!

—–

ভোরে ঘুম ভাঙল নির্ঝরের। চোখ মেলে তাকাল সে। খুব মাথা ধরেছে সে। নিজেকে সোফায় আবিষ্কার করল। তার গায়ে একটা চাদর ও টানা। নির্ঝর পাশে ফিরতেই দেখল অর্ণব দাঁড়ানো। নির্ঝর হাসার চেষ্টা করল। অর্ণব দৌড়ে চলে গেল।

খানিকক্ষণ পর লেবু জল নিয়ে ফেরত এলো অর্ণব। এসেই ড্যাডি বলে ডাক দিল সে। নির্ঝর তার হাত থেকে লেবু জল নিয়ে খেল। মাথা ধরা একটু হলেও কমেছে তার। হঠাৎ করেই কলিং বেল বেজে উঠল। মিস মারিয়া এসে দরজা খুলল। প্রায় অনেকদিন পর আজ মিস মারিয়া কে দেখল নির্ঝর। দরজা খুলতেই নিরব কে দেখতে পেল নির্ঝর। সিঁড়ি বেয়ে কেউ নামছে। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল সার্ভেন্ট ব্যাগ নিয়ে নামছে। নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। মেহেরিন নামছে তৈরি হয়ে ‌ তবে কি চলে যাচ্ছে সে। গতরাতের কথা মনে আছে নির্ঝরের। সে সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল মেহেরিন’র কাছে। মেহেরিন মৃদু হেসে বলল, চলে যাচ্ছি। মুক্তি দিয়ে যাচ্ছি আপনাকে!

নির্ঝর নির্বাক হয়ে গেল। মেহেরিন তার পাশ দিয়ে যেতেই নির্ঝর তার হাত ধরল। ইচ্ছে করল বলতে “যেও না” কিন্তু নির্ঝর তা বলতে পারল না। মেহেদি শ’ রং দিকেই তাকিয়ে রইল।

মেহেরিন হেসে হাত ছাড়িয়ে বলল, কন্ট্রাক শেষ তো নির্ঝর। এখন আর না!
বলেই নির্ঝরের হাত ছাড়িয়ে দিল সে। কিছু বলতে পারল না নির্ঝর। মেহেরিন নিচে নেমে অর্ণবের হাত ধরল। নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাঁদের দিকেই। নিরব মেহেরিন’র ব্যাগ হাতে আগে আগে বের হচ্ছে। পেছন ফিরে তাকাল না মেহেরিন। অর্ণব হাত নেড়ে নির্ঝর কে বিদায় দিচ্ছে ‌। কি জানি ছোট বাচ্চা টা কি ভাবছে, সে কি জানে বরাবরের মতো তার ড্যাডি কে ছেড়ে চলে যাচ্ছে সে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here