#অনুভূতিতে_তুমি 💖
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে)
#পর্ব_৫১ ( #উপসংহার )
[ পর্ব অধিক বড়! ফেসবুক লাইটে শো নাও হতে পারে! ]
পুরো বাড়ি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে নির্ঝরের। কেমন একা হয়ে পড়েছে সে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। মেহেরিন তাকে ছেড়ে চলে গেছে আজ তিন দিন। এই তিন দিন অন্ধকার ঘরে বসে ছিল সে। কারো সাথেই কোন যোগাযোগ নেই তার। এখন আর কোন কষ্ট নেই তার, সব ঠিক আছে। কিন্তু এটা সত্যি নাকি তার ভ্রম। তবে একা কেন লাগছে তার। গত তিন দিনে নীলিমা আর রিদুয়ান এসে বার বার ফেরত চলে গেছে। ফরহাদ ওরা এসেও কোন কাজ হয় নি। ঘর থেকে বের হওয়া তো দূর ঘরের দরজা অবদি খুলে নি নির্ঝর।
তবে আজ বের হয়েছে নির্ঝর। তার পুরো ঘর জুড়ে বিয়ারের বোতল। দিনরাত জেগে থাকার কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে তার। শরীরও দুর্বল লাগছে খানিকটা। মেহেরিন কে ছেড়ে ভেবেছিল ভালো থাকবে সে কিন্তু না সে ভালো নেই।
আজ মেহেরিন’র ঘরে এসেছে সে। পুরো ঘরটা সাজানো আছে। কিছুই বদলায়নি। নির্ঝর খুব সাহস নিয়ে এই ঘরে এসেছে। বিছানায় বসেছে। কিন্তু মনে হলো বালিশের নিচে কিছু একটা আছে। নির্ঝর হাত দিয়ে দেখল অর্ণবের ট্যাপ! অর্ণব কি তবে এটা রেখে গেছে। নির্ঝর ট্যাব টা হাতে নিল। অন করতেই মেহেরিন, অর্ণব আর তার একসাথে একটা ছবি দেখল। নির্ঝর হাত দিয়ে সেই ছবি ধরল। গ্যালারি তে ঢুকতেই অনেক ছবি দেখতে পেল সে। নির্ঝর উঠে বসল। তার আর মেহেরিন’র অনেক ছবি এখানে। নির্ঝর ট্যাব হাতে বের হলো। একটা ছবি ছিল রান্না ঘরের কাছে। তা অনুসরণ করে রান্না ঘরের কাছে এলো সে। রান্না ঘরের দিকে তাকাতেই নিজেকে দেখতে পেল সে। হ্যাঁ সে আর মেহেরিন এখানে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব দৌড়ে এসে তাদের ছবি তুলছে। এরকম আরো নানা স্মৃতি ভেসে উঠলো তার চোঁখের সামনে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসার ঘরে বসল নির্ঝর। মেহেরিন কে খুব মনে পড়ছে। অর্ণব কেও দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু তারা কোথায় জানা নেই তার। কি মনে করে ফরহাদ কে কল করল নির্ঝর। জানা গেল নিরবের বাসায় তারা। অতঃপর নিরবের বাসার ঠিকানা নিয়ে সেখানে গেল নির্ঝর। আর যাবার কারণ হিসেবে অর্ণবের ট্যাব হাতে নিল। যাতে বলতে পারে এটা দিতেই এখানে এসেছে।
কিন্তু সেখানে এসে মেহেরিন’র সামনে যাবার সাহস হলো না নির্ঝরের। দূর থেকেই দেখতে লাগল সে। বাগানে নিরব আর অর্ণব খেলছে পানির পাইপ নিয়ে। একজন আরেকজনকে পানি মারছে। মেহেরিন দূর থেকে বসে দেখছে সবটা। তার মুখে হাসিও দেখা যাচ্ছে। নির্ঝর দু চোখ ভরে দেখছে সেই হাসি। সেই হাসি দেখে আর সামনে যাবার সাহস হলো না তার। নির্ঝরের মনে আছে তার সাথে থাকার সময় শুধু মেহেরিন কে কাঁদতে দেখেছে সে। এখন যদি তার থেকে দূরে সরে গিয়ে ভালো থাকে তাহলে থাক না। কেন আসবে শুধু শুধু তাকে কাদাতে, কষ্ট দিতে!
ট্যাব টা সেখানে রেখেই চলে গেল নির্ঝর। নিরব আর অর্ণব অনেকক্ষণ খেলল। নিরব হাঁপিয়ে এসে বসল মেহেরিন’র পাশে। মেহেরিন বলে উঠল, পরশু তাহলে আমাদের ফ্লাইট!
“হুম! কিন্তু তুই কি আরেকবার ভেবে দেখবি।
“ভেবে দেখার আর কিছু নেই নিরব!
বলেই উঠে গেল সে। অর্ণবের সাথে খেলতে লাগল। নিরব তাকালো অর্ণবের দিকে। বাচ্চা টা এই কারণেই খুশি কারণ সে জানে না তার মাম্মি তার ড্যাডি থেকে এক বারের জন্য আলাদা হয়ে যাচ্ছে। মেহু তাকে এটা বলে এনেছে তারা বেড়াতে যাচ্ছে আর তারা সেখানে গেলেই ড্যাডি কে দেখতে পাবে। ড্যাডি তাদের জন্য সারপ্রাইজ রেখেছে। ছোট অর্ণবের কাছে এটা খেলা ছাড়া আর কিছু না। সে ভাবছে সত্যি সত্যি বোধহয় এটাই হবে।
মেহু কে মাঝে মাঝেই কাঁদতে দেখে নিরব। রাতে এখন আর ঘুমায় না মেয়েটা। সারারাত জেগে বসে থাকে। মেহু নামের মেয়েটা একটা মুখোশধারী মেয়ে। সবার সামনে নিজেকে যতোটা একজন সুখি মানুষ হিসেবে দেখাতে চায় ভেতরে ভেতরে সে ততোটাই অসুখী!
—
বিকেল বেলায় নিরব মেহেরিন’র ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই মেহেরিন কে দেখে থেমে গেল সে। মেহেরিন কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল সে। মনটা কি তার খারাপ নাকি! মেহুর হাতে একটা ট্যাব। কিন্তু নিরবের মনে আছে এই ট্যাব মেহুর বাসায় ছিল। মেহু সাথে করে আনে নি তা। এজন্য অর্ণবের মন ভীষণ খারাপ ছিল তাই নিরব নতুন একটা ট্যাব কিনে দিয়েছে অর্ণব কে। তবে এট এখানে কি করে এলো। নির্ঝর এনেছে!
নিরব ছুটে ঘরে এলো। সিসি টিভি ক্যামেরায় চেক করতেই নির্ঝর কে দেখতে পেল সে। রেগে গেল সে। দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষোভ জমিয়ে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে।
নির্ঝর মেহেরিন আর অর্ণবের ছবি ফ্রেম বাঁধানো ছবি গুলো দেখছে। মেহেরিন একটা ছবি ও নিয়ে যায় নি এখান থেকে। হঠাৎ করেই কলিং বেল বেজে উঠল। নির্ঝর নিজেই উঠল কারণ সব সার্ভেন্ট কে ছুটি দিয়ে দিয়েছে সে। কাউকে ভালো না তার। কিন্তু এখন কে আসল!
নির্ঝর দরজার কাছে এলো। দরজা খুলতেই নিরব কে দেখতে পেল সে। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নিরব তাকে ঘু*সি মারল। নির্ঝর ছিটকে দূরে এসে পড়ল। নিরব কোন কথা ছাড়াই মা*রতে লাগল তাকে। নির্ঝর কিছুই বুঝতে পারল না। প্রথম প্রথম তাকে থামানোর চেষ্টা করল কিন্তু নিরব কিছু শুনতে রাজী না। অতঃপর সেও মা*রতে লাগল নিরব কে। ঘরের সব জিনিসপত্র ভেঙে তছনছ করে ফেলল দুজন। অতঃপর একসময় দুজনেই হাঁফিয়ে গেল। মেঝেতে বসে হাঁফাতে লাগলো লাগল। দু’জনের মুখে, হাতে গলায় দাগ বসে গেছে।
—-
নিরব দাঁড়িয়ে আছে নির্ঝরের ঘরের বেলকনিতে। নির্ঝর এসে দাঁড়াল সেখানে। বলে উঠল, আমার ঘরে কি করছো তুমি!
“একসময় এই ঘরটা খুব পছন্দ ছিল আমার।
বলেই নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর হাতের বিয়ারের বোতল টা কেড়ে নিয়ে বলল, কিন্তু তুমি এসে আমার সব পছন্দের কিছু কেড়ে নিল।
নির্ঝর হেসে ঘরের ভেতর গেল। বিয়ারের বোতল নিয়ে আবারো বেলকনিতে এলো। নিরব মেঝেতে বসে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিচ্ছে। নির্ঝর তার পাশে বসে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিয়ে বলল, কিন্তু সব তো এখন পেয়েই গেলে তুমি!
নিরব হেসে বলে উঠল, জানো আগের নির্ঝর থেকে এই নির্ঝর কে খুব ভালো লাগে আমার।
“তোমার পছন্দের জিনিস এখন আর কেড়ে নেয় না বলে!
নিরব আবারো হাসল। আকাশের দিকে তাকাল সে। বলে উঠল, মেহু কে আমি অনেকদিন ধরে ভালোবাসি তবে আমি এটা কখনো বুঝতে পারি নি আমার ভালোবাসা এক তরফা ছিল। তোমার আর আমার মাঝে এই নিয়ে অনেক কিছু হয়ে গেছিল। একবার তো আমি প্ল্যান করেছিলাম মেহু কে প্রপোজ করব বলে। কিন্তু তুমি যে কোথা থেকে চলে এলে আর এসেই সব ভেস্তে দিলে। রাস্তার মাঝেই জ্ঞান হারালে আর মেহু! সে তো তোমাকে বাঁচানোর চক্করে রাস্তার মাঝে চলে গেল। পাগলের মতো ডাকতে লাগল তোমায়। ভাগ্যিস রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া তেমন ছিল না। শুধু একটা গাড়ি এসে তোমার পাশ দিয়ে চলে গেল। কিন্তু কিছু হয় নি তোমার। খুব আফসোস হয়েছিলো তখন আমার!
নির্ঝর হাসল। বিয়ারের বোতলে চুমুক দিয়ে বলল, আমি মরে গেলে বুঝি খুব খুশি হতে।
“মেহু কে পেয়ে যেতাম যে।
“তুমি জানো তোমার মুখে মেহু ডাকটা শুনলে অনেক রাগ হয় আমার।
“আমারো হয়! আমি ছাড়া মেহু কে কেউ এই নামে ডাকলে।
“আমি ডাকতাম নাকি..
“তুমি যা করতে.. ( দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিরব ) ভালোবাসা বরই অদ্ভুত। আমি যাকে ভালোবাসি সে আমাকে ভালোবাসে না আর সে যাকে ভালোবাসে সে তাকে ভালোবাসে না।
“অনেক জটিলতা!
“তা তো বটেই!
“কিন্তু এখন তো তোমার রাস্তা ক্লিয়ার!
নিরব হাসল। আবারো বিয়ারের বোতলে চুমুক দিল। বলে উঠল, মেহু কে কখনো ছুঁয়ে দেখার সাধ্য হয় নি আমার। আমি কখনো মেহু কে নিজের সামনে কাঁদতে দেখে নি। তবে তুমি আসার পর ও বার বার আমার সামনে কাঁদতো। সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিল যেদিন প্রথমবার তুমি চিনতে তাকে অস্বীকার করেছিলে আর সেদিনও অনেক কেঁদেছিল। এই তো এই বাগানে। কেঁদে কেঁদে আমাকে বলছিল দ্বিতীয় ভালোবেসে ভুল করেছে সে। তোমাকে ভালোবাসা কখনো উচিত হয় নি তার।
আবারো দীর্ঘ শ্বাস ফেলল নিরব। নির্ঝর বিয়ারের বোতলে চুমুক দিচ্ছে। নিরব তার দিকে তাকিয়ে বলল, সেদিন অনেক ইচ্ছে করছিল তাকে জড়িয়ে ধরে বলতে আমি আছি তার সাথে। কপালে একটা চুমু খেতে খুব ইচ্ছে করছিল কিন্তু আমি কিছুই করি নি। শুধু জড়িয়ে ধরে আগলে রেখেছিলাম তাকে। আর সেদিন! সেদিন ফোনে কথা বলতে বলতে শুনি ওর শরীর ভালো নেই। একথা বলার পর’ই জ্ঞান হারালো মেহু। আমি ছুটে এলাম। রান্না ঘরে পড়ে থাকতে দেখলাম তাকে। ডাক্তার ডাকিয়ে দেখালাম। প্রেসার নাকি খুব লো। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে নি বলে শরীর খুব দুর্বল। ডাক্তার কিছু ঔষধ দিল। আমি মেহু কে খাইয়ে দিলাম। ঔষধ খাওয়ার পর সোফায় শুইয়ে পড়ল সে। আমি বললাম উপরে গিয়ে শুতে ও বলল না নির্ঝর আসবে! তোমার অপেক্ষা করছিল সে। কিন্তু কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে গেল টের পেলো না। খুব লোভ হলো তখন। আটকাতে পারলাম না নিজেকে। কপালে চুমু খেলাম তার তবে সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল। তোমার টাইমিং খারাপ নির্ঝর। সময়মতো আজ পর্যন্ত আসতে শিখলে না তুমি!
নির্ঝর থমকে গেল। মাথা নিচু করে ফেলল সে। নিরব দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। শীতল গলায় বলে উঠল, আমার ভালোবাসা কখনোই বোঝে নি মেহু। আমাকে আজীবন একজন ভালো বন্ধুই ভেবে গেল ও। তবুও আফসোস নেই আমার!
নির্ঝরের দিকে তাকাল। সে নিশ্চুপ। নিরব নিজ থেকেই বলে উঠল, তোমাকে মারলা*ম কেন তা জিজ্ঞেস করবে না?
নির্ঝর ফিরে তাকাল। ঢোক গিলে বলল, কেন?
“কারণ তুমি আবারো ভুল করেছ? বাসায় যখন গেলে একবার দেখা তো করে আসতে মেহুর সাথে। তা না করে ট্যাব টা রেখে চলে এলে।
“মুখোমুখি হতে চাই না আর।
“তুমি বিশ্বাস করো তোমার স্মৃতি ফিরে আসবে।
“জানি না তবে আশা করবো কখনো যেন না ফিরে আসে।
“কেন?
“ভয় হয়?
“ভয়ের কারণ! যদি জানতে পারো যাকে এতো অবহেলা করো তাকেই খুব ভালোবাসতে!
“হারানোর কষ্ট দ্বিতীয় বার পেতে চাই না!
“স্বীকার করছো মেহু কে হারিয়ে ফেলেছ!
“এটা কি সত্যি নয়!
“পরশু বিকেল ৫ টায় ফ্লাইট আমাদের। আমরা চলে যাচ্ছি কানাডা!
“আমাকে এসব কেন বলছো?
নিরব উঠে দাঁড়াল। নির্ঝর মাথা উঁচু করে তার দিকে ফিরল। নিরব মৃদু হেসে বলল,
“কারণ তোমার কাছে সুযোগ আছে। আমি জানি এয়ারপোর্ট এ দাঁড়িয়েও মেহু তোমার অপেক্ষা করবে। যদি তুমি একবার এসে বলো তাকে ভালোবাসো তাহলে সে থেকে যাবে।
“থাকার কি দরকার? তোমার সাথে থাকলেই তো ভালো। আমি আবারো কষ্ট দেবো তাকে। নিজেও কষ্ট পাবো।
“তাহলে এখন বলছো ভালো আছো!
নির্ঝর কিছু না বলে বিয়ারের বোতলে চুমুক দিল। নিরব হেসে বলল, এখন তুমি উদ্দেশ্যহীন একটা জীবন পা দিয়েছ। কিছুই নেই তার।
নির্ঝর মুখ ফিরে তাকাল নিরবের দিকে। ভ্রু কুঁচকে বলল, তোমার লাভ কি এতে? তুমিও তো মেহু কে ভালোবাসো। তোমার সাথে থাকলে তো তোমারও ভালো লাগবে তা নয় কি?
“আমার ভালো লাগা কি সব। তোমার মতো আমিও চাই মেহু ভালো থাকুক, আর আমি জানি মেহু কোথায়ও ভালো থাকবে।
“আমার সাথে থাকলে সে কষ্ট’ই পাবে।
“যে ভালোবাসতে জানে, সে কষ্টও দিতে জানে আবার আগলেও রাখতে জানে!
নির্ঝর চোয়াল শক্ত করল। তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। আজকের আকাশ টা অনেক সুন্দর। নিরব বলে উঠল, মেহু কে আমি যতোটা না ভালোবাসি তার থেকে বেশি চাই মেহু খুশি থাকুক। আর আমি জানি তার খুশি টা কোথায়!
নির্ঝর ভ্রু কুঁচকালো। নিরবের দিকে ফিরল। তবে ততোক্ষণে সে প্রস্থান করার জন্য পা বাড়িয়েছে। কথা গুলো এর আগেও শুনেছে সে। কিন্তু কোথায় তা মনে পড়ছে না তার!
—-
দেখতে দেখতে এক দিন পেরিয়ে গেল। নির্ঝর বুঝল সে স্বাভাবিক আছে। মনস্থির করে ফেলল এয়ারপর্ট যাবে না সে। মেহেরিন কে আর কষ্ট দিতে চায় না সে। শুধু শুধু মনে দ্বিধা রেখে তো আর ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসায় সংশয়ের কোন স্থান নেই। তবে অর্ণব কে খুব মনে করছে। তার ড্যাডি ড্যাডি ডাকটা কান ভাসছে তার। মনে হচ্ছে এই আছে তার আশেপাশে!
মেহেরিন আশায় আশায় বুক বাঁধছে। তার মন বলছে নির্ঝর হয়তো আসবে। আসবে তাকে ফিরিয়ে নিতে! কিন্তু কবে? কাল যে ফ্লাইট তার। চলে যাবে সে। এরপর কি আর কখনো দেখা হবে তাদের!
নিরব দাঁড়িয়ে দেখছে ক্যালেন্ডারের পাতা। তার মন বলছে নির্ঝর আসুক আরেক দিকে মাথা বলছে নির্ঝর যেন না আসে। না আসলে খুব কি অসুবিধা হবে বরং তার’ই তো ভালো। আবার মন বলছে তার ভালো তে কি হবে। দিনের পর দিন তার ভালোবাসার মানুষটি তো আর ভালো থাকবে না। ভালোবাসা কি শুধু তার একার জন্য নাকি!
পরদিন সূর্যের আলোয় আলোকিত হলো ঘর। সকাল হয়ে গেছে। সেই আলো এসে ছুঁইয়ে দিল নির্ঝর কে। মেঝেতে পরে থাকা নির্ঝর চোখ মেলে তাকাল। এ যেন এক নতুন সকালের সূচনা। উঠে দাঁড়াল সে! মাথা ধরে আছে তার। দিনরাত ড্রিংক করতে করতে তার শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে! ঘরের বাইরে বের হলো। নিজে নিজেই কফি বানালো। কফি মগে চুমুক দিতেই পাশে থাকা ফোনটা বেজে উঠল তার। ফরহাদের ফোন! নির্ঝর ফোন উঠালো না। ফোনর রিংটোন শুনতে লাগল। এই ব্যাপারটা খুব ভালো লাগে তার। দেখতে দেখতে ১০৩ বার মিসকল দিলো ফরহাদ। মেসেজ তো এর সাথে ফ্রি! কিন্তু নির্ঝর ফোন উঠালো না। হঠাৎ করেই গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল। নির্ঝর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠল। ফরহাদ সেই কখন থেকে কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে কিন্তু নির্ঝরের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই এতে!
ক্লান্ত হয়ে ফরহাদ এলো বেলকনির কাছে। যেই না ডাকতে যাবে নির্ঝর কে অমনি দেখল নির্ঝর বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বিয়ার খাচ্ছে। ফরহাদ চেঁচিয়ে বলল,
“কখন থেকে বেল বাজাচ্ছি শুনতে পারছিস না।
“পাচ্ছি!
“তাহলে দরজা খুলছিস না কেন। আর তোর ফোন? ফোন কোথায়? কতোবার কল করেছি জানিস।
“১০৩ বার।
“তুলিস নি কেন?
“ইচ্ছে হয় নি।
“তুই জানিস মেহেরিন আজ চলে যাচ্ছে।
“বিকেল ৫ টায় ফ্লাইট।
“তুই আটকাবি না ওকে।
“কি দরকার!
“নির্ঝর!
“চলে যা!
বলেই নির্ঝর ঘরে ঢুকল। ফরহাদ আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না। নির্ঝরের মনটা ভীষণ খারাপ। সবটা ভুলতে চেয়েছিল সে কিন্তু কিছুই ভুলতে পারল না। তার মন এটাই মানতে পারছে না সেই মেয়েটা মেহেরিন। মেহেরিন’কেই ভালোবাসতো সে। নিজের সম্পর্কে যথেষ্ট জানে সে। কোন মেয়েকেই এতোটা ভালো লাগে না তার। তবে মনে হয়েছিল অনামিকা’ই ছিল সে একজন কিন্তু তার সেই ভ্রম ও ভেঙে গেল। কিন্তু কেউ তো আছে কিন্তু কে সে!
নির্ঝর ছাদে উঠলো। কখনো ছাদে উঠা হয় নি তার। কেন জানি ছাদ টা একটু পরিচিত লাগছে। ছাদের এক কোনে বসে পুরো ছাদ কে দেখতেই মনে হলো একেক কোনে দাঁড়িয়ে আছে সে আর মেহেরিন। মেহেরিন কে দুই বক্ষে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর এসব দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আফসোস হচ্ছে তার! মেহেরিন কে সেই রাতে কতো সব ভুলভাল কথা বলেছে। এজন্য একবার সরি বলা উচিত তার। এজন্য কি একবার যাবে তার কাছে।
আরে না এসব কি ভাবছে। সরি বলার জন্য গিয়ে আবার চলে আসবে। মেহেরিন’র তখন তো আরো কষ্ট হবে।
দুপুর অবদি সেখানেই বসে রইল। চারদিক ছমছমে শান্ত নিরব! হঠাৎ তার কানে অর্ণবের গলার স্বর এলো। ড্যাডি ড্যাডি বলে তাকেই ডাকছে সে। নির্ঝর ছটফট করতে লাগলো।দৌড়ে নিচে নেমে এলো সে। পুরো বসার ঘরের দিকে চোখ বুলাল সে। নাহ কেউ নেই। বাড়ির দরজা তো বন্ধ কেউ কিভাবে আসবে ঘরে। এটা তার ভ্রম ছিল আর কিছু না। নির্ঝর ছটফট করতে লাগলো। খুব অস্থির লাগছে তার নিজেকে।
এসে ঢুকল মেহেরিন’র ঘরে। তার মনটাও শান্ত হয়ে গেলো। ভালোই লাগছে তার। কতোক্ষণ বসে রইল এখানেই! অতঃপর বিছানাতেই ঘুমিয়ে পড়ল সে! আজকে আবারো সেই স্বপ্ন দেখলো সে। মেয়েটার হাত ধরে নির্ঝর তাকে বলছে, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, খুব! কথা দিচ্ছি তোমায় কখনো কষ্ট পেতে দেবো না সারাজীবন আগলে রাখবো তোমায়!
নির্ঝর খুব চেষ্টা করছে মেয়েটার মুখ দেখার জন্য। আজ যেভাবেই হোক মেয়েটার মুখ দেখবেই সে। ঘুমের মাঝেই ছটফট করছে সে তার মুখ দেখার জন্য। হুট করেই ঘুম ভেঙ্গে গেল তার। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে সে। তার মুখ থেকে বেরিয়ে সেই নাম। মেয়েটার মুখ আজ দেখেছে সে। মেয়েটা আর কেউ না মেহুই ছিল। নির্ঝরের খুব মনে আছে মেয়েটা মেহু। হাতে হাত রেখে এই নাম’ই নিয়েছে নির্ঝর। তবে কি সেই মেয়ে মেহু! মেহুর অস্তিত্ব কি তবে এখানে। ঘড়ির দিকে তাকাল নির্ঝর। ৫ টা বাজতে মোটে এখন ১ ঘন্টা বাকি। নির্ঝরের এখান থেকে যেতে ১ ঘন্টার মতোই লাগবে। আর দাঁড়াল না সে। ছুটে বের হলো সে। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে নির্ঝর। না আজ যে করেই হোক মেহু কে এই কথা বলতে হবেই তার। মেহু কে যেতে দিতে পারে না।
অনেকক্ষণ ধরেই জ্যামে বসে আছে নির্ঝর। বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। মনে হচ্ছে সময় আজ বেশ দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। না আর এভাবে বসে থাকা যাচ্ছে না। নির্ঝর বের হলো গাড়ি থেকে। এই জ্যাম মনে হচ্ছে না আধ ঘন্টা আগে ছাড়বে কিন্তু তার যে হাতে সময় নেই। দেরি করল না নির্ঝর। ছুটতে লাগলো রাস্তার ফুটপাত দিয়ে।
মেহেরিন এখনো অপেক্ষা করছে নির্ঝরের। অ্যানাউসমেন্ট হয়ে গেছে। অর্ণব এসে হাত ধরে জিজ্ঞেস করল ড্যাডির কথা। মেহেরিন কিছুই বলতে পারল না। শুধু তাকিয়ে রইল। নিরব এসে অর্ণব কে নিয়ে গেল। আবারো একবার বুঝি মন ভাঙতে চলেছে মেহেরিন’র। না আর থাকা যায়। স্টাফ এসে অবদি বলছে যাবার জন্য। মেহেরিন পা বাড়াল। ওমনি পেছন থেকে সেই চিরচেনা ডাক ভেসে এলো তার কানে। নিরব হেসে পিছন ফিরল। বোধহয় সে জানতো নির্ঝর আসবে। মেহেরিন পেছন ফিরে দেখল নির্ঝর দাঁড়িয়ে হাফাচ্ছে। তার পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে। নির্ঝর কে এখানে দেখে সবচেয়ে বেশি অর্ণব। সে নিরবের কোল থেকে নেমে যেই না যেতে যাবে অমনি মেহেরিন ডেকে উঠল তাকে। অর্ণব দাঁড়িয়ে গেল। নির্ঝর হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, আজ আমি দেরি করি নি। ৫ মিনিট আগেই পৌঁছে গেছি!
“কি কারণে এসেছেন এখানে আপনি!
নির্ঝর থমকে গেল। ঠিক কি বলবে বুঝতে পারছে না সে। মেহেরিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে তার দিকে। নির্ঝর ঠোঁট ভিজিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। মেহেরিন অর্ণব কে ডেকে বলল, চলো অর্ণব যাবার সময় হয়ে গেছে।
“এই না না দাঁড়াও!
“কেন দাঁড়াব। আর কেন এসেছেন আপনি।
“কারণ আমার কিছু বলার আছে।
“সত্যি! কি বলার আছে আপনার!
নির্ঝর ঢোক গিলল। অতঃপর বলে উঠল, তুমি এভাবে যেতে পারি না।
“কেন পারি না!
“কারণ তুমি আমাকে ডির্ভোস দেও নি তাই!
মেহেরিন’র কপালে ভাঁজ পড়ল। নিরব হতবাক হয়ে গেল। একি বলছে নির্ঝর। টেনশনে তার মাথাই পাগল হয়ে গেছে। মেহেরিন হেসে বলল, নির্ঝর আপনি হয়তো ভুলে গেছেন বিয়েটা একটা কন্ট্রাক ছিল। তাই আমি ডির্ভোস দেই বা না দিই এটার কোন মানেই হয় না।
নির্ঝর বিচলিত হয়ে গেল। টেনশনে তার কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। মেহেরিন সামনে ফিরতে যাবে ওমনি নির্ঝর খানিকটা এগিয়ে এলো। বলে উঠল, দাঁড়াও!
“কেন?
নির্ঝর অর্ণব কে নিজের কাছে আনল। অতঃপর বলল, অর্ণব যেতে চায় না, তাই তুমিও যাবে না।
মেহেরিন বিরক্ত হলো। তবুও ঠান্ডা গলায় বলল, অর্ণব কে ছাড়ুন নির্ঝর!
“না অর্ণব যাবে না। তুমি জিজ্ঞেস করো। অর্ণব তুমি যাবে? ড্যাডি রেখে তুমি কি চলে যাবে।
অর্ণব মাথা নেড়ে বলল না।
মেহেরিন চোখ রাঙিয়ে বলল, অর্ণব!
অর্ণব নির্ঝর কে জড়িয়ে ধরল। মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ঠিক আছে দরকার নেই। আমি একাই চলে যাচ্ছি। নিরব চল!
নির্ঝর আতঙ্কিত চোখে নিরবের দিকে তাকাল। নিরব হেসে পা বাড়াল। মেহেরিন পা বাড়াতেই নির্ঝর ছুটে এসে তার হাত ধরে আটকালো। মেহেরিন থমকে গেল। নির্ঝর বলে উঠল , আমার কথা তো শুন একবার!
“অনেক শুনেছি নির্ঝর আপনার কথা আর না! হাত ছাড়ুন এবার আমার!
এদিকে স্টাফ বলে উঠল, ম্যাম লেট হচ্ছে। এরপর আপনাদের না নিয়েই ফ্লাইট ছেড়ে দেবে। আপনারা কি আসতে চান!
মেহেরিন বলে উঠল, হ্যাঁ আমি যাবো!
বলেই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই নির্ঝর তাকে হুট করে জড়িয়ে ধরল। মেহেরিন হতচকিয়ে গেল। দম নিল নির্ঝর। অতঃপর বলে উঠল, প্লিজ যেয়ো না মেহু।
“আপনার কি সব মনে পড়েছে নির্ঝর!
নির্ঝর মেহেরিন কে ছাড়ল। তার বাহু ধরে মাথা নাড়িয়ে বলল, না কিছু মনে পড়ে নি তবে আমি অনুভব করতে পারছি তোমায়।
“কিভাবে?
“আমি স্বপ্নের সেই মেয়েটা কে দেখেছি আজ! সে আর কেউ না তুমি ছিলে মেহু! আমি বুঝতে পেরেছি আমার সেই অনুভূতি তুমি। তোমাকে ছাড়া আমি বেঁচে থাকতে পারবো না।
মেহেরিন কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। শুধু তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর আলতো করে জড়িয়ে ধরল তাকে। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল, আই’ম সরি মেহু। তুমি কি পারবে ন একটিবার আমায় ক্ষমা করে দিতে। আরেকবার সুযোগ দিতে আমাকে!
মেহেরিন ঢোক গিলল। ঠিক কি বলবে তার জানা নেই। নির্ঝর আবারো বলে উঠল, আমি তোমাকে ভালোবাসি মেহু! এই নির্ঝর হয়েই বলছি তোমায়, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমার কাছে। প্লিজ মেহু, আর একটিবার!
মেহুর মনের ছটফটানি কমল। ঠিক এই কথাটা শোনাবার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছিল সে। শুধু মাত্র এই একটি কথা সব ঠিক করে ফেলতে পারতো। আর আজ মেহু তা পেয়ে গেছে। মেহু মুচকি হেসে হাত রাখল নির্ঝরের গালে। শেষ হাসিটা বোধহয় নির্ঝর’ই হাসল। স্টাফ বলে উঠল, ম্যাম!
নির্ঝর বলে উঠল, ম্যাম যাবে না!
এদিকে নিরব বলে উঠল, তবে স্যার যাবে। চলুন!
মেহেরিন অবাক হয়ে গেল। নির্ঝর কে ছেড়ে পিছনে ফিরল সে। নিরব চলে যাচ্ছে। মেহেরিন তাকে ডাক দিল। নিরব পিছনে ফিরে হেসে বলল, কানাডার কোম্পানি যাবতীয় কাজ দেখতে তো একজন কে যেতে হবে তাই না মেহু!
মেহু কিছু বলতে চাইলো কিন্তু নির্ঝর তাঁকে থামিয়ে দিল। বলে উঠল, যেতে দাও! নতুন ভাবে ও কি শুরু করবে না!
মেহেরিন থেমে গেল আর ডাকল না তাকে। নিরব নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। অর্ণব এসে হাত ধরল নির্ঝরের। তিন জন একসাথে বিদায় দিল নিরব কে! নিরব যেতেই মেহেরিন আবারো জড়িয়ে ধরল নির্ঝর কে। নির্ঝর হেসে বলল, তবে আর যাই বলো তোমার থেকে বেশি আমি কিন্তু অর্ণবকেই মিস করেছি!
মেহু ভ্রু কুঁচকালো। অর্ণব এসে কোলে চড়ল নির্ঝরের।
—
আজ ২ বছর পর…
নির্ঝরের স্মৃতি ফিরে এসেছে সেই ঘটনার ঠিক ৬ মাস পর’ই। তার জীবনে এখন সবটা স্বাভাবিক। চলছে বৈশাখ মাস! আমের ঘ্রাণে মো মো করছে চারদিক। এর তবে একটা কারণ আছে। নীলিমা আমের আচার তৈরি করছে। তার পিছু পিছু ঘুরছে আমাদের সেই ছোট অর্ণব। যদিও এখন খানিকটা বড় হয়ে গেছে সে। তার সাথে দায়িত্ব এসেছে তার কাঁধে। হ্যাঁ তাই! অর্ণব এখন বড় ভাইয়ের দায়িত্ব নিয়েছে। যদিও আগের থেকে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক সে। রোজ স্কুলে যায়, কয়েকটা বন্ধু বান্ধব ও জুটিয়ে ফেলেছে সাথে।
সকাল থেকেই তোড়জোড় করছে মেহু। আজ কানাডা থেকে ফিরার কথা নিরবের। প্রায় ২ বছর পর দেশে ফিরছে সে। এদিকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ যেন থামছেই না। হুম অনবরত কেঁদে চলেছে নীরা! মেহু আর নির্ঝরের দ্বিতীয় সন্তান। নির্ঝর তাকে কোলে করে মেহুর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। মেহু কাজে মগ্ন। নির্ঝর বলে উঠল,
“উহু একটু দেখো না, ও তো থামছে না!
“নির্ঝর ওর ঘুম পেয়েছে।
“না ক্ষিদে পেয়েছে
“আমি একটু আগেই খাইয়ে দিয়েছি ওকে। এতো তাড়া কিভাবে ক্ষিদে লাগবো।
নির্ঝর তাকে কোলে নিয়ে থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সে থামতেই চাইছে না। মেহু রেগে বলে উঠল ,
“নির্ঝর! একটা ৫ মাসের বাচ্চা কে থামাতে পারেন না আপনি। এই ড্যাডি হয়েছেন!
“তুমি এভাবে একদম চেঁচাবে না। নীরা হবার পর তুমিও অনেক খিটখিটে হয়ে গেছো।
“কি কি বললেন আপনি!
“যা বলেছি ঠিক বলেছি!
অতঃপর দুজনের ঝগড়া আবারো শুরু। নীলিমা রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে হেসে যাচ্ছে । অর্ণব উঁকি মেরে আচার দেখতে চাইছে। নীলিমা অর্ণব কে পাঠালো তাদের কাছে।
এদিকে দু’জনের ঝগড়া দেখে শান্ত হয়ে তাকিয়ে আছে নীরা। তারা দুজন চুপ হয়ে তার দিকে তাকাতেই আবারো কান্না শুরু করে দিল সে। অর্ণব এসে সোফায় দাঁড়িয়ে লাফাতে লাগলো। আর বার বার ডাকতে লাগল নীরা কে। অর্ণবের ডাক শুনেই শান্ত হয়ে গেল সে। নির্ঝর অর্ণবের কাছে এসে নীরা কে নিয়ে বসল। মেহু মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠল, যা আপনি করতে পারেন নি তা অর্ণব করিয়ে দেখেছিয়েছে। সত্যি নির্ঝর আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
“অর্ণব মিটিমিটি হাসল। তার দেখাদেখি নিরাও হাসল। নির্ঝর মুখ ভেংচি কেটে বলল, আমার ছেলে তো তাই!
“ওহ আচ্ছা, ছেলে মেয়ে ভালো করলেই সে আপনার আর মন্দ করলে আমার ছেলে এটা করেছে আমার মেয়ে এটা করেছে তাই না!
অর্ণব আর নীরা দুজনেই চুপ হয়ে তাকিয়ে রইল নির্ঝরের দিকে। তাদের বিশ্বাস নির্ঝর এখন কিছু একটা বলবে। কিন্তু তাদের আশা ভঙ্গ করে দিয়ে নির্ঝর মুখ ফিরিয়ে নিল। কলিং বেল বেজে উঠল। মিস মারিয়া এসে দরজা খুলল। ফরহাদ, আরিফ আর ঈশান একে একে প্রবেশ করল। মজার কথা হলো তারা কেউই এখনো বিয়ে করে নি। একদম পিউর সিঙ্গেল!
ঘরের সবকিছু তৈরি। মেহু অপেক্ষা করছে নিরবের! তার এক্সসাইডেট আজ অনেক বেশি। তার ধারণা হচ্ছে নিরব নিশ্চিত কোন মেয়ে কে তার সাথে করে আনবে। মেহু’র এতো এক্সসাইডেট দেখে নির্ঝরের কপাল কুঁচকে গেল!
অপেক্ষার অবসান ঘটল। নিরবের গাড়ি এসে থামল খান বাড়িতে! মেহেরিন দৌড়ে এলো। তবে তার আশা ভঙ্গ করে দিয়ে নিরব একাই নামল গাড়ি থেকে। আজ অবদি কোন মেয়েকেই পটালো না সে। মেহুর মুখ ভার এতে মুচকি মুচকি হাসল নির্ঝর!
“এটা কি সত্যি কোন কাজ করলি তুই! একটা মেয়ে পটাতে পারলি না। এরপর তোর মতো বুড়ে কে কোন মেয়ে বিয়ে করবে শুনি!
নিরব হেসে বলল, ভাবলাম একাই কাটিয়ে দেবো!
মেহুর হতাশার অভাব রইল না। নিরব অর্ণবের মাথায় হাত রেখে বলল, কেমন আছে অর্ণব সোনা!
“অনেক ভালো!
নিরব হেসে তার হাতে চকলেট দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে জড়িয়ে ধরল। নির্ঝরের সাথে কুশল বিনিময় করল। নির্ঝর হেসে তার কোলে দিল নীরা কে। নীরা দেখে নিরব বেশ খুশি হলো। খুব সুন্দর দেখতে সে। পুরো মেহুর মতোই হয়েছে। নিরব হেসে বলল, না এবার দেখছি বিয়ে করাই লাগবে। তারপর একটা ছেলের জন্ম দিয়ে তার বিয়ে করাবো তোর মেয়ের সাথে!
মেহু হেসে বলল, আহ কি সাধ!
“না সত্যি মেহু, নিজের ছেলে বউ তো আমি ওকেই করবো!
নির্ঝর বাঁকা হেসে বলল, আসছে! আমার মেয়ে কে পটানো এতো সহজ হবে না।
ফরহাদ বলে উঠল, তা নাও হতে পারে। বাপ যা করতে পারে নি, বাপের ছেলে তাও করতে পারে!
নিরব আর নির্ঝর দুজনেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। হেসে উঠলো বাকি সবাই। মাঝখান দিয়ে ভ্রু কুঁচকে নিল অর্ণব। কথাটা একদমই পছন্দ হয় নি তার। তার বোন কে কি না নিয়ে যাবার কথা বলছে তারা। কিন্তু কেন? বোন কে তো খুব ভালোবাসে সে। কেন দিয়ে দেবে তাকে সে। বোন কে নিজের কাছেই রেখে দিবে। কাউকে দেবে না। হুহ! বলেই দুই হাত বাহুতে গুঁজে নিল! নির্ঝর হেসে তার মাথায় হাত রেখে বলল, আমি আছি তোমার সাথে অর্ণব। বোন কে কোথায় যেতে দেবো না। অর্ণব ড্যাডি বলে ডেকে জড়িয়ে ধরল তাকে।
সমাপ্ত –
[ আলহামদুলিল্লাহ! অবশেষে গল্প শেষ হলো। যদিও রি চেক করা হয়নি। ভুল গুলো বরাবরের মতো ক্ষমার চোখে দেখার অনুরোধ রইল। আশা করি সবার ভালো লেগেছে গল্পটা। কমেন্টে অবশ্যই সবাই আজ তার মন্তব্য জানাবেন। ধন্যবাদ সবাইকে! আসসালামুয়ালাইকুম! ]