ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-৫

0
1653

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৫
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

আজ মঙ্গলবার। সেদিনের পর অনায়াসে কেটে গেছে আরো কটা দিন। সময়ের পাল্লা ছুটেছে অবিরাম। এই কদিনে আহনাফ আর আভা কেউ কারো কণ্ঠ শুনেনি। আহনাফ কল দেয়নি,আর আভা আহনাফের কথা মনে করেনি।

আজকে অ্যাডমিশন টেস্ট নিয়ে বান্ধুবিদের সাথে দেখা করার কথা ছিলো আভার। ঘড়ির কাঁটা যখন এগোরটা ছুঁইছুঁই তখন আভা চোখ কচলে ঘুম থেকে উঠলো। বালিশের কাছ থেকে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিন অন করলো। তারার পাঁচটা কল। আভা এতটা কল দেখে ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে পাল্টা মেসেজ করলো, ” ashchi” ।
আভা শরীর থেকে চাদর সরিয়ে হুড়মুড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে টেবিলের উপর চায়ের কাপ দেখলো। হয়তো মা বানিয়ে রেখে গেছেন। আভা মুচকি হেসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে রেডি হতে লাগলো। রেডি হতে হতে এক কাপ চা শেষ করে ব্যাগ কাধে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো রুম থেকে।

আভাকে বের হতে দেখে পিছন থেকে ডাক দিলেন আভার মা,

— ” কোথায় যাচ্ছিস?”

আভা ডাইনিং টেবিল থেকে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বললো,

–” কলেজে। তারারা আসছে। ”
— ” তাড়াতাড়ি ফিরবি। ”

রান্নাঘর থেকে আভার মা চুলায় হাড়ি বসাতে বসাতে বললেন। আভা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে পানি খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
______________________
কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা, সিনথিয়া আর রাইমা। আভা হাসিমুখে ওদের দিকে এগিয়ে গেলো। আভাকে আসতে দেখেই তারা চট করে এক থাপ্পর বসালো আভার কাধে। দাত খিচিয়ে বললো,

–” সবসময় লেট? কবে শুধারাবি তুই? হুঁ? ”

আভা তারার দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বললো,

–” পটল তোলার পর! ”

তারা কটমট চোখে তাকালো আভার দিকে। রাইমা বরাবরের মত আভার পাশে দাড়িয়ে পড়াশোনার ব্যাপারে কথা বলতে লাগলো। আভা একসময় বিরক্ত হয়ে বললো,

–” ওই আঁতেল, তোর এই ফাউল প্যাচাল ফোনে কইস। এখন আমরা মজা করতে এসেছি। বিদ্যাসাগর হইতে না। চুপ থাক। ”

রাইমা অসহায় চোখে সবার দিকে তাকালো। বললো,

–” ওই তোদের কারো অ্যাডমিশন নিয়ে চিন্তা নেই? আমার তো হাত পা কাপে এক্সামের কথা শুনলে। ”

তারা রাইমা মাথায় এক চাটা মেরে বললো,

–“বাসা আছে কিয়ের লায়? এসব চিন্তা করার জন্যে বাসা আর আমাদের মা জননী আছে। এখন এসব বাদ দে। চল ফুচকা খাই। ”

আভা সহ বাকিরা উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। ফুচকার কথা শুনে সবার মুখে পানি চলে এসেছে। রাইমাও মাথা ঘষে সায় দিলো।

সবাই তাদের চিরপরিচিত ফুচকার দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারা ফুচকার মামার সামনে দাড়িয়ে ফুচকা অর্ডার দিতে গেলে হঠাৎ তার কি একটা মনে পড়ে যায়। তারা তাড়াহুড়ো করে আভার সামনে এসে দাঁড়ায়। আভা ভ্রু কুঁচকে তারার দিকে তাকাতেই তারা বললো,

–” এই, তোর নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে? ”

তারার হঠাৎ বলা এমন কথা শুনে বাকি সবাই চোখের আকৃতি দ্বিগুণ করে আভার দিকে তাকালো। আভা নিজেও এতে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো,

–” তোকে কে বলেছে? ”

–” সেদিন আন্টির ফোনে ফোন দিয়েছিলাম।আন্টি বললেন তুই তোর হবু জামাইর সাথে বাইরে গিয়েছিস। তলে তলে তুমি টেম্পু চালাও আর আমরা বললেই হরতাল! ”

আভা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই কোনো দিক চিন্তা না করেই মুখ খিচে বলে ফেললো,

— ” হুম। সাত তারিখ দেখতে এসেছিলো। ”

আভার কথা শুনে সবার চোখ যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। সিনথিয়া আভার দিকে তাকিয়ে দুঃখ দুঃখ গলায় বললো,

–” এই মহিলা, তুই মর। এক্ষুনি মর। বাইচা আসোস কেনো এখনো? ”

আভা মুখখানা ছোট করে সিনথিয়ার দিকে তাকালো। রাইমা খানিক অবাক হয়ে বললো,

–” তাহলে তুই আর পড়াশোনা করবি না? মাঝপথে এসে আটকে যাবি? ”

আভা এই কথার উত্তরে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তারা রাইমার মাথায় সজোরে এক চাটা মারলো। রাইমা চোখ রাঙিয়ে তারার দিকে তাকালে তারা বললো,

–” ওই আঁতেল, বিদ্যা থেকে একবার বাইর হো। আমার এইদিকে মাথায় প্রেশার উঠে যাচ্ছে। এই মহিলা না জানিয়ে বিয়ে নিজের ঠিক করে ফেলেছে। কদিন পর লুকিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে বলবে ” দেখ। এই বাচ্চা বড় হলে তোদের খালামনি ডাকবে। ”

আভা তারার কথা শুনে ফিক করে হেসে ফেললো। বাকি সবাই আভার হাসি দেখে নাক মুখ খিচে আভার দিকে তাকালো। ওদের চোখ রাঙানো দেখে আভা চুপ করে গেলো। ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে অবুঝ চেহারা বানিয়ে ওদের দিকে তাকালো। তারা এদিক ওদিক পায়চারি করে আবার আভার কাছে এলো। আভার দিকে এক হাত বাড়িয়ে বললো,

–” এই তোর ফোন দে। ”

আভা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,

–” কেনো? ”
— ” দিবি তুই? ”

তারা দাত খিচিয়ে বলায় আভা সুরসুর করে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে তারার হাতে তুলে দিলো। তারা খুঁজে খুঁজে ডায়াল লিস্ট থেকে একটা নাম্বার বের করার চেষ্টা করলো। শেষ পর্যন্ত খুঁজে না পেয়ে বললো,

–” তোর হবুর নাম্বার কি নামে সেভ করা? ”

আভা আঁতকে উঠলো। বললো,

— ” কি করবি তুই.?”
–” বলবি তুই? ”

তারার কথা শুনে আভা মিনমিনিয়ে বললো,

— ” A”

তারা সহ বাকি সবাই একসাথে বলে উঠলো,

–” A? ”
–” উনার নাম আহনাফ। তাই A। ”

তারা ফুস করে এক নিঃশ্বাস ফেলে ডায়াল থেকে নাম্বার নিয়ে কল দিলো। তারাকে কল দিতে দেখে আভা তরিগরি করে তারার দিকে এগিয়ে গেলো।” কি করছিস তুই? iya আল্লাহ! ” বলে তারার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেই তারা চোখ রাঙানি দিলো। আভা এতে চুপচাপ পাশ ফিরে দাড়িয়ে রইলো। তারার কানের পাশে সিনথিয়া আর রাইমা কান পেতে দাড়িয়ে রইলো। দুবার রিং হওয়ার পর আহনাফ কল রিসিভ করলো। খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে বললো,

–” ও ম্যাই গড। ইটস মিরাকেল। আজকে তুমি নিজে আমায় ফোন দিয়েছো? কি ব্যাপার? ”

তারা আহনাফের কথা শুনে বড়বড় চোখে আভার দিকে তাকালো। আভা চোখ খিচে একপাশে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারা বললো,

–” জী না A সাহেব। আমি আপনার হবু বউ না। তার তিনমাত্র ফ্রেন্ড বলছি। ”

আহনাফ দমে গেলো। হাতে থাকা ফাইল একপাশে রেখে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিলো। বললো,

–” বলেন শালী সাহেবা। ”

— ” আপনি একটা গুরতর অন্যায় করেছেন। জানেন সেটা?”

আহনাফ মৃদ হেসে বললো,

— ” এক সেকেন্ড আগেও সেটা জানতাম না। কিন্তু এই যে আপনি বললেন আর আমি জেনে নিলাম। তা এই ছোট নাজুক বান্দার অন্যায়টা কি জানতে পারি? ”

–” আপনি লুকিয়ে আমার বেস্টিকে বুক করে ফেললেন। আর আমরা সেটা কেউই জানলাম না। এটা অন্যায় না বলুন? ”

— ” জী। একদম। অত্যন্ত গুরুতর অন্যায় এটা। তা এই মাফ অযোগ্য অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত কি করে করতে পারি? ”

–” সিম্পল। আমাদের একটা ঝাক্কাস ট্রিট দিয়ে। ”

–“মঞ্জুর। তা সময়টা বললে সুবিধা হয়। ”

–” আপনি চাইলে এখনই। ”

— ” এখনই? ”

— ” কেনো কোনো সমস্যা ? ”

— ” আসলে আমি তিনদিন ধরে দম ফেলার সময় পাচ্ছি না। আসলে সামনে এনগেজমেন্ট ত। কাজ আর কাজ আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। এত কাজের ফাঁকে আপনাদেরকে সময় দেওয়া টা একটু ডিফিকাল্ট। ”

তারার মুখখানা চুপসে গেলো। মুখ ভার করে বললো,

— ” ওহ। তাহলে কি আর করার। আজকে ট্রিট বাদ তাহলে।”

আহনাফ মুচকি হাসলো। বললো,

— ” ট্রিট দিতে পারি। যদি..”

তারা সাথেসাথে বললো,

–” বলেন ,বলেন আপনার শর্ত। ”

— ” আপনার নিষ্টুর মনের বেস্টুর সাথে তিনদিন ধরে কথা হয়না। যদি সে বলে আসার জন্যে তাহলে আমি ঝড়ের গতিতে এসে যাবো আপনাদের দোয়ারে। ”

তারা সাথেসাথে বললো,

–” আপনি তো অনেক চালাক। আচ্ছা, দিচ্ছি ওর কাছে। ”

তারা ফোন হাতে এগিয়ে গেলো আভার দিকে। তারা ফোনটা আভার দিকে এগিয়ে দিলে আভা ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে,

— ” কি? ”
— ” কথা বল। ”

আভা মানা করতে গেলে তারা চোখ রাঙায়। আভা না চাইতেও ফোন কানে নেয়। সালাম দিতেই ওপাশ থেকে আহনাফ আলতো গলায় ডাক দেয়,

— ” বউফ্রেন্ড? ”

#চলবে
শব্দসংখ্যা- ১০০০+
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/215929297118305/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here