ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-৬

0
1696

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

–” বউফ্রেন্ড..!”

ইশ! আভার মনটা কেপে উঠলো। অদ্ভুত শিহরনে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো ও। আভা একপলক সবার দিকে তাকিয়ে একটু দূরে এসে দাড়ালো। মিহি সুরে বললো,
— ” হুম..।”
— ” রাগ করেছো? ”
— ” কিসের জন্যে? ”
–” এই যে ফোন দেইনি এই কদিন? ”

আভা চোখ বুজে লম্বা করে শ্বাস টানলো। সত্যিই তো! সে তো রাগ করেছিলো। প্রথম দিন কি প্রেম! একদম উতলে উতলে পড়ছিলো। কিন্তু তারপর! একদম নিখোঁজ! রাগ করার কথাই তো! কিন্তু আভা সেসব স্বীকার করলো না।এত সহজ না। ও গলা পরিষ্কার করে বললো,
— ” না। রাগ করিনি। ”

ওপাশ থেকে আহনাফের হাসির শব্দ ভেসে এলো। ইশ! ছেলেটার হাসিটাও কত সুন্দর! আভা চোখ বেটে নিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো হাসির কারণ। আহনাফ হাসি থামিয়ে বললো,
— ” কেনো মিথ্যে বলছো? আমার থেকে নিজেকে আড়াল করছো? ইউ নো দ্যাটস ইম্পসিবল। ”

আভা উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই তারা এসে দাঁড়ালো আভার পাশে। আভা ফোন কান থেকে নামিয়ে তারার দিকে তাকালে তারা ফিসফিসিয়ে বললো,
–” প্রেমালাপ করতে ফোন দেয়নি তোকে। আসতে বল এখানে। ট্রিট নিবো আমরা। ”

আভা পড়লো মহাফ্যাসাদে। এভাবে ট্রিট নেওয়া টা কিরকম দেখায়! আভা ফোন মিউট করে বললো,
–” দেখ,এটা ঠিক না। তোদের আমি আমার টাকায় ট্রিট দিচ্ছি। ও কেনো? ”

তারা চোখ রাঙালো। পুনরায় গলার আওয়াজ নিচু করে বললো,
–” তুই বলবি নাকি তোর আজকে মাথা ফাটামু? লুকিয়ে চুরিয়ে বিয়ে ঠিক করার শাস্তি এটা। এখন বল। ”

আভা আর কোনো উপায় পেলো না। মিউট আবার অফ করে ফোন কানে লাগালো। ওপাশ থেকে আহনাফ ব্যস্ত হয়ে বললো,
–” কিছু হয়েছে? ফোন মিউট করলে যে? ”

আভা বললো,
–” তেমন কিছু না। একটা কথা বলার ছিলো। ”
–” তোমার সব কথা শুনতে এই বান্দা হাজির ম্যাডাম। তো কি কথা বলুন। ”

আহনাফ জানে আভা এখন কি বলবে। তাও আভার মুখ থেকে শুনতে চায় ও। আভা খানিক ইতস্তত করে বললো,
–” আমার ফ্রেন্ডরা বলছিলো আসতে আপনাকে। আসবেন? ”

আভা বলেই চোখ খিচে ফেললো। এমন নির্লজ্জ এর মত কথা ও কি করে বললে ফেললো। ছিঃ! সব ওই বান্দরদের জন্যে। আহনাফ মুচকি হেসে বললো,
–” যদি আসি তাহলে আমি কি পাবো? ”

আভা অবাক হলো। বললো,
–” আপনার কাছে তো সবই আছে। আমার কাছে তো কিছুই নেই। আপনার আবার আমার কাছে কি চাই? ”

— ” ম্যাডাম, আপনার কাছে যা আছে, তা সম্পূর্ণ পৃথিবী খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। বুঝলেন? ”

আভা বুঝলো আহনাফের কথার অর্থ। সে লাজুক হাসলো। আহনাফ বললো,
–“তো বলুন কি পাবো? ”

আভা সুর নিচু করে বললো,
— ” কি চাই আপনার? ”
— ” যা চাই তাই পাবো? ”

আহনাফ ভ্রু বাঁকা করে বললো। আভার বুক ধক করে উঠলো। কি চাই তার? আভা কাপা কণ্ঠে বললো,
— ” দেখুন আপনি….. ”
— ” আমি এমন কিছু চাইবো না যেটা তোমার সাধ্যের বাইরে। এটুকু ভরসা রাখতে পারো। ”

আভাকে কথার পিঠে থামিয়ে বললো আহনাফ। আভা মুচকি হাসলো। হুম! সে এইটুকু ভরসা তো করেই আহনাফকে। আভা বললো,
–” ঠিক আছে। ”

আহনাফের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো। কিছু পাওয়ার হাসি। জয়ের হাসি। আভার বিশ্বাস কিছুটা হলেও সে অর্জন করতে পেরেছে। এই-বা কম কিসের? আহনাফ বললো,
–“ঘড়ি ধরে বিশ মিনিট পর্যন্ত গুনতে থাকো। বিশ মিনিটের ভিতরে আমার চেহারা তোমার সামনে দেখবে। ”

আভা তাজ্জব বনে গেলো। শুনেছে, আহনাফের হসপিটাল থেকে এই জায়গা তো অনেক দূর। আভা অবাক হয়ে বললো,
— ” মাত্র বিশ মিনিটে আপনি কিভাবে আসবেন? ”
— ” সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে। সো, টাইম গুনতে থাকো। আই অ্যাম কামিং। ”

সালাম দিয়ে ফোন কেটে দিলো আভা। আভা ফোন কাটতেই তারা, সিনথিয়া আর রাইমা ওকে এসে ঘিরে ধরলো। আভা তাদের দিকে তাকিয়ে কড়া কণ্ঠে বললো,
— ” আসছে। সব তোদের জন্যে হলো। এভাবে ট্রিট চাইতে গেলি কেনো? ধুর। ”

সিনথিয়া আভার কাছে এসে ওকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আভার গালে গাল ঘষে বললো,
— ” জানু, হবু বরের কাছে এত লজ্জা কিসের?হুঁ? “.

আভা রাগী চোখে সিনথিয়ার দিকে তাকালো। অতঃপর এক ঝটকা দিয়ে সিনথিয়ার হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো,
— ” আঙ্কেলকে বলে তোরও একটা রেডিমেট হবু বরের ব্যবস্থা করছি। তখন বুঝবি লজ্জা কোথা থেকে আসে। ”

সিনথিয়া দাত কেলালো। তারা তো রীতিমত হুইহুল্লোর করছে। আজকে একটা জম্পেশ ট্রিট হবে। ইয়াহু! রাইমা একপাশে দাড়িয়ে আছে। আপাতত ওর এসব মন নেই। সে তো এটাই বুঝতে পারছে না, ওদের আজকে দেখা করার কারণ-টা কি ছিলো? অ্যাডমিশন নিয়ে আলোচনা করা নাকি ট্রিট আদায় করা? আফসোস!

________________________
আহনাফ ফাইল রেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। বুকের কাছের বোতাম দুটো খুলে দিয়ে শার্ট গলার পিছন দিকে নিয়ে গেলো। বড্ড গরম পড়েছে আজ। এসি রুমেও ঘেমে নেয়ে একাকার ও। আহনাফ কেবিন থেকে বেরিয়ে ওর বাবার কেবিনের দিকে পা বাড়ালো।

আজাদ শেখ পেশেন্ট দেখছেন। আহনাফ কেবিনের দরজায় ঠোকা দিলো। ভিতর থেকে পারমিশন পেতেই কেবিনের ভিতরে ঢুকলো আহনাফ। দুজন মধ্যবয়সী পুরুষ আহনাফকে দেখে তার দিকে তাকালো। আহনাফ এদের সালাম দিয়েই বাবার কাছে এসে দাঁড়ালো। আজাদ শেখ সেই দুজন পেসেন্ট দেখে বিদায় দিলেন। অতঃপর আহনাফের দিকে তাকিয়ে বললেন,
— ” কোনো দরকার? ”

আহনাফ নির্লিপ্ত গলায় বললো,
— ” একটা কাজ আছে। যেতে হবে। ”

আজাদ শেখ মৃদু হাসলেন। ড্রয়ার থেকে চাবি বের করে আহনাফের দিকে এগিয়ে দিলেন। আহনাফ চাবি নিলো না। বরং বললো,
— ” বাইক দিয়ে যাবো। গাড়ি লাগবে না। আর শুনো আমার পেশেন্ট গুলো একটু মালিহা খানকে দিয়ে দেখিয়ে দিও। আমার ফিরতে লেট হবে। ”

আজাদ শেখ মাথা দুলালেন। আহনাফ বাবাকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলে পিছন থেকে আজাদ শেখ ডাক দিলেন,
— ” আহনাফ..? ”

আহনাফ পিছন ফিরলো। আজাদ শেখ বললেন,
— ” চুল এলোমেলো হয়ে আছে। গুছিয়ে যেও। নাহলে আবার আভা মা তোমাকে দেখেই পাগল ভেবে ভয় পাবে। ”

আহনাফ কিছুসময় বাবার দিকে তাকিয়ে রইলো। বাবা বুঝলেন কি করে? আজাদ শেখ আহনাফের মুখ দেখে জোরে হেসে দিতেই আহনাফ মাথা চুলকে লাজুক হাসলো। বাবাকে আবারও সালামে দিয়ে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।

______________________
তারা আর সিনথিয়া রাস্তাময় পায়চারি করছে। আভা একজায়গায় বসে আইস্ক্রিম খাচ্ছে। তার আপাতত এসব মন দেওয়ার ইচ্ছে বা দরকার কোনোটাই নেই। রাইমা আভার পাশে বসে মোবাইল দেখছে। তারা একসময় হাত ঘড়ি দেখে ভ্রু কুচকালো। তারপর আভার দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” ওই অলরেডী পনেরো মিনিট হয়ে গেছে। আমার মনে হয়না তোর হবু এত জলদি আসবে। তাইনা সিনথিয়া? ”

সিনথিয়া মাথা নাড়লো। এ অসম্ভব ব্যাপার-স্যাপার বটে। আভা হা বললো না। না-ও বললো না। চুপচাপ তাদের কথায় মাথা নাড়ালো।

একসময় তারা সজোরে চেঁচিয়ে বললো,
— ” বিশ মিনিট হয়ে গেছে। এখন? ”

আভা মাথা তুলে চারপাশে তাকালো। আহনাফ আসেনি?
একটু দূরে একটা বাইক এসে থামলো। ছেলেটা মাথা থেকে হেলমেট নামাতেই আভা অবাক। আহনাফ! আভা এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালো। গলা শুকিয়ে যেতেই এক ঢোক গিললো। আহনাফের চেহারা দেখতেই তার শরীর অসার হয়ে যেতে লাগলো। আহনাফ কাছে এলে কি হবে তাহলে? আহনাফ বাইক থেকে নেমে চারপাশে একপলক তাকালো। দূর থেকে আভার মুখ দেখেই তার ক্লান্ত মুখে হাসি ফুটলো। ও এগিয়ে এলো ওদের দিকে।”

আহনাফকে এদিকেই আসতে দেখে তারাসহ বাকি সবাই আভার দিকে তাকালো। ইশারায় জিগ্গেস করলো ” এ আহনাফ কি-না? ” আভা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালো। তারা আভার পাশে দাড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
— ” ব্যাপক হ্যান্ডসাম তো! এই, এটা আসলেই তোর বর? ”

আভা চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই তারা দাত কেলালো। বললো,
— “এই হ্যান্ডসাম জিজুর কারণে তোর সাত খুন মাফ করে দিলাম। যাহ! জি লে আপনি জেন্দেগী! ”

#চলবে
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/216689867042248/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here