#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
— ” পছন্দের কিনা সেটা বলতে পারিনা। তবে একজনকে ভীষন ভালোবাসি। বিয়ে করলে তাকেই
করবো। ”
মিনহাজের কথা শুনে সম্পূর্ণ রুমটায় কয়েক মিনিট নিস্তব্ধ হয়ে গেলো। একে একে সবার চোঁখ মিনহাজের উপর নিক্ষেপিত হলো। মিনহাজ এবার দাদুমনির দিকে তাঁকালো। চোঁখের দৃষ্টি গভীর। মনে আছে, প্রবল ইচ্ছাশক্তি। প্রিয়তমাকে আপন করে নেওয়ার মত প্রবল ইচ্ছাশক্তি। দাদুমনি মিনহাজের থেকে চোখ আলগোছে সরিয়ে নিজের ছেলের দিকে তাকালেন। জুনায়েদ এতক্ষণ মায়ের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। মা তার দিকে তাকাতেই জুনায়েদ গম্ভীর মুখে ভাতের থালায় হাত দিলেন। রুই মাছের তরকারি ভাতের সাথে মাখাতে মাখাতে বললেন,
— ” মেয়েটা কে? নাম-ধাম কি? কি করে? ”
মিনহাজ বাবার দিকে শুঁকনো চোঁখে তাকিয়ে রইলো। কি থেকে কি বলবে কোনো ঠায়-ঠিকানা পাচ্ছে না। বাবা কি রেগে আছেন, নাকি এই সম্পর্ক নিয়ে তার আপত্তি আছে? কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। ছেলেকে চুপ থাকতে দেখে জুনায়েদ ভাত মাখা হাত টেবিলে ভর দিয়ে রেখে মিনহাজের দিকে তাঁকালেন। থমথমে কণ্ঠে বললেন,
— ” মিনহাজ,কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমায়? ”
মিনহাজ এক ঢোক গিললো। বাবাকে যে যথেষ্ট সম্মান করে। তাই বাবাকে আর অপেক্ষা না করিয়ে চাঁপা কণ্ঠে বললো,
–” মেয়েটা আমাদের ভার্সিটির ছিলো।আমি যখন মাস্টারে পড়তাম তখন ও ফার্স্ট সেমিস্টারে ছিলো। এখন একই ভার্সিটিতে থার্ড সেমিস্টারে পড়ছে। নাম আরোহী। খুব ভালো মেয়ে, বাবা। আমাদের সাথে চলনসই। সবথেকে বড় কথা, আমি ওর সাথে সুখে থাকবো। বিয়ে করার জন্যে সেটাই কি বড় কারন নয়,বাবা? ”
জুনায়েদ খুব শান্ত ভঙ্গিতে ছেলের কথা শুনলেন। মিনহাজের কথা শেষ হতেই আবারও খাওয়ায় মন দিলেন তিনি। মিনহাজ বাবার এমন নির্লিপ্ততা দেখে ছোট্ট করে শ্বাস
ফেললো। বাবা কি তবে মেনে নিবেন না? নাকি, সে বাবাকে ভালো করে বুঝাতে পারেনি? নাকি, কি? মিনহাজ একবার দাদুমনির দিকে তাকালো। দাদুমনি নিজেও বাবার এমন ব্যাবহারে নিশ্চুপ হয়ে আছেন। মিনহাজ শেষ ভরসা নিয়ে মায়ের দিকে তাকালো। মিনহাজের মা, রেহেনা ছেলেকে চোখ দিকে আশ্বাস দিলেন। তবে, তিনি নিজেও এই বিষয়ে বেশ সন্দিহান। ওদের বাবা একবার যে সিদ্ধান্ত নেন, তার বিপক্ষে কথা বলার সাধ্য এঘরে কারো নেই। মিনহাজ লম্বা করে একটা শ্বাস টানলো। যা করার, যা বলার তা ওর নিজেকেই করতে হবে। কারো উপর ভরসা করলে চলবে না। মিনহাজ এবার বাবার দিকে তাকালো। মিহি সুরে ডাক দিলো,
— ” বাবা? ”
জুনায়েদ মিনহাজের কথার উত্তরে জবাব দিলেন না। বরং খেতে খেতে বললেন,
— ” আমরা কাল ঢাকা ফিরে যাচ্ছি।”
টেবিলে বসে থাকা সবাই এমন কথায় হতবম্ব হয়ে গেলো। মিনহাজ না চাইতেও ব্যর্থতার নিঃশ্বাস ফেললো। বাবাকে আরো কিছু কথা বলতে যাবে, তবে তা আর বলা হলো না। বাবা তার কথার ফাঁকেই দাদুমনির উদ্দেশ্যে বললেন,
— ” আম্মা, তোমার ব্যাগ রেডি করে রেখো। তুমিও যাবে আমার সঙ্গে। মেয়ে দেখতে যাবো, ছেলের দাদী থাকবে না। সেটা খারাপ দেখাবে। ”
‘ মেয়ে দেখতে যাবো ‘ কথাটা টেবিলে বসে থাকা সবার কানকে জ্বালাপালা করে ফেললো। মিনহাজের রাগ তরতর করে বেড়ে যেতে লাগলো। সে তো একবার বলেছে, তার একজনকে পছন্দ। তবুও বাবা কি করে এমন কথা বলতে পারেন? তবে মনের ভিতরকার রাগ মনের মাঝেই পুষে রাখলো সে। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা তাকে বেয়াদপ হতে দিলো না। মিনহাজ খাবার হাতে বসে রইলো ঠায়। মন চাচ্ছে, টেবিল থেকে উঠে যেতে। কিন্তু পারছে না। মনের বিপক্ষে থাকা বিবেক বাঁধা দিচ্ছে তাকে। জুনায়েদ ছেলের এমন অবস্থা দেখে আড়ালে হাসলেন। অতঃপর ছেলের দিকে চিরচেনা গম্ভীর চাহনি রেখে বললেন,
— ” মেয়েটার বাসার ঠিকানা কি? ”
মিনহাজ স্থব্দ হয়ে গেলো। চোখ বড়বড় করে বাবার দিকে তাকালো। বাবা রাজি হয়ে গেছেন, বিশ্বাস হচ্ছে না তার। জুনায়েদ ছেলের এমন হতবম্ব অবস্থা দেখে খুব মজা পেলেন। আবার খানিক গর্বও হলো তার। তার এহেন আচরনেও ছেলে চুপ থেকেছে। এক রত্তি কথা বাড়ায় নি। ছেলের তার প্রতি বাধ্যতা দেখে চোখটা ভরে এলো তার। তবে সেটা সবাই দেখার আগেই নিজেকে সামলে নিলেন তিনি। কিছুসময় পর জুনায়েদ আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
— ” বলো,ঠিকানা কি? নাকি তুমি মেয়েটার বাসার ঠিকানা জানো না? ”
মিনহাজ হেসে ফেললো। চেয়ার থেকে উঠে এসে বাবাকে জোরে জরিয়ে ধরলো। সেই সাথে চোখ থেকে গড়ালো ছোট্ট এক ফোঁটা জল। অতি সুখের আবেশে সে নিজেকে ঠিক সামলে উঠতে পারছে না। জুনায়েদ নিজেও মুচকি হেসে ছেলের পিঠে হাত রাখলেন। মিনহাজ কিছুসময় পর শান্ত হয়ে চোখ মুছে আস্তে করে বাবাকে ছেড়ে দিলো। চুপচাপ চেয়ারে এসে বসে পড়লো ও। হুট করে বাবাকে জড়িয়ে ধরায় একটু লজ্জা লাগছে। তবে, তার থেকে অধিক শান্তি লাগছে। বাবাকে কখনোই এমন করে জড়িয়ে ধরে নি সে। কখনোই নিজের খুশির খাতা বাবার সামনে খুলেনি। তবে আজ? আজ সব বাঁধা, সমস্ত জড়তা ক্ষয় হয়ে গেলো। অনুভূতির প্রকাশ এতটা মিষ্টি হয়? এতটা শান্তিময় হয়?
______________________
আভা নিজের রুমে বসে আছে। চোখে মুখে অপার আনন্দ খেলা করছে তার। সে কত খুশি, সেটা বলে বুঝাতে পারবে না। অবশেষে ভাইয়ের বিয়ে হতে যাচ্ছে। আভার এখন উরাধুরা নাচতে মন চাইছে।
আভার এসব খুশি খুশি ভাবনার মাঝে তার ফোন বেজে উঠলো। আভা একটু বিরক্ত হয়েই ফোন হাতে নিলো। ফোনের স্ক্রিনে আহনাফের নাম্বার দেখেই আভার সেই বিরক্ত ভাব কেটে গেলো। চোখে মুখে মুগ্ধতা আঁচড় কাটলো। আভা ফোন রিসিভ করে কানে লাগিয়ে অত্যন্ত উচ্ছসিত গলায় সালাম দিলো।
আভার কণ্ঠে উত্তেজনায় ছোঁয়া বুঝতে পেরে আহনাফের মনটা ভরে গেলো। সে জিজ্ঞেস করলো,
— ” কি ব্যাপার? আজকে এত খুশি? ”
আভা হেঁসে হেঁসে বললো,
— ” ভাইয়ার বিয়ে লেগে যাচ্ছে। আপনি বুঝতে পারছেন, আমাদের বাসায় ভাবী আসবে। ওয়াও। গ্রেট হবে ব্যাপারটা, তাইনা? ”
আহনাফ মাত্রই চেম্বার থেকে ঘরে আসলো। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় সটান করে শুয়ে বললো,
— ” শুধু আমারই ফুটা কপাল। কত আগ থেকে বিয়ের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু আমার নির্দয় শশুরমশাইয়ের দয়া হয়না। নিজের কাছে না রেখে মেয়েকে আমার কাছে তুলে দিলেই তো হয়। তার ঘর থেকে মেয়ে এনে আমার ঘরে শোপিসের মত সাজিয়ে রাখতাম। উফ। ভাবতেই বিয়ে করতে মন চাচ্ছে। ”
আভা আহনাফের এমন উদ্ভট কথাবার্তার সাথে পরিচিত। তবুও কেন যেন আহনাফের মুখে বিয়ের কথা শুনতেই লজ্জায় কুকড়ে যায় ও। মন চায়, লজ্জা নামক বস্তুকে কেটে কুচিকুচি করে নদীতে ভাসিয়ে দিতে। এতে যদি রক্ষে হয়! আভা কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
— ” আপনার যত আজগুবি চিন্তা ভাবনা! শুনেন, আমার বাবা খুব দয়ালু। নির্দয় না। বুঝলেন? ”
আহনাফ মুচকি হেঁসে বললো,
— ” ইয়াহ! শুধু আমার বেলায়’ই তার যত নির্দয় কাজ-কারবার। ”
আভা মুচকি হেঁসে চুপ করে রইলো। আজ খুব করে মন চাচ্ছে, শুধু আহনাফের কথা শুনতে। আহনাফের কথার বাইরে কোনো আওয়াজ, কোনো বাঁধা, কোনো শোরগোল না, এমনকি তার নিজের কণ্ঠস্বর না। শুধুই আহনাফের কথা! আজকাল, আহনাফকে নিয়ে ওর অবচেতন মন নানা কল্পনা-জল্পনা সাজায়। লজ্জার বানে ক্ষতবিক্ষত হয়ে আহনাফকে নিয়ে ভাবে। কেনো, কারণ, কিন্তু, কিছুই জানে না । শুধু জানে, তার আহনাফকে ভালো লাগে। আহনাফের একেকটা কথা, রাগ, আচরন সব, সব ভালো লাগে। এই ভালো লাগার কারণ কি? এটা কি নিছক’ই ভালো লাগা নাকি অন্য?
#চলবে
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/232324375478797/?app=fbl