#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_২২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ঢাকা ফিরে যাচ্ছে আভাদের পুরো পরিবার। নিজের ছেলের জেদে আভার দাদুমনি লেংড়া পা নিয়ে গাড়িতে চড়েছেন। বার্ধক্যের ভারে ঝুলে পড়া মুখেতে বিশাল অভিমান। নিজের সাজানো-গোছানো বাড়ি, নিজের মরা স্বামীর কবর সব ফেলে আসায় ছেলের উপর রেগে আছেন। তবে, ছেলের জেদের কাছে হার মানতে হলো।
আর একটু পরই মেয়ে দেখতে বের হবে আভারা। আভা রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলো। কোমর অব্দি চুল ছেড়ে কাঁধের দুপাশে রাখা। পরনে মেরুন রঙের কামিজ। সেই সাথে কাজল আর নুড লিপস্টিক। সাজ এটুকুই। আভা ভাইয়ের রুমে এসে একবার উঁকি দিলো। মিনহাজ রেডি হয়ে গায়ে পারফিউম স্প্রে করছে। আভা দরজার সামনে থেকে একবার চেঁচিয়ে বললো,
— ” চারদিকে কি প্রেম প্রেম গন্ধ ছড়াচ্ছে। আহা! কি সুভাস! ”
মিনহাজ আভার কথা শুনেও নির্লিপ্ত ভাবে পারফিউমের বোতল ড্রেসিং টেবিলে রেখে দিলো। শার্টের কলারটা একটু ঝাঁকিয়ে আয়নায় একবার দেখে নিলো, সব ঠিক আছে কিনা। সব কাজ শেষে মিনহাজ চেয়ারে বসলো, জুতো লাগানোর জন্য। জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে আভার উদ্দেশ্যে বললো,
— ” কিছু বলবি? ”
মানে? ভাই কি তার একটু আগের বলা কথা শুনে নি? এমন ভাবলেশহীন ভাব করছে কেনো? ধ্যুর! শুনবে না কেনো? শুনেই এমন ভাব করছে। অসহ্য! আভা ভাইয়াকে আর জ্বালালো না। আস্তে করে মিনহাজের রুমের দরজার সামনে থেকে সরে গেলো।
অতঃপর সবাই চললো মেয়ের দেখতে। আহনাফের পরিবারকে একবার বলা হয়েছিলো মেয়ে দেখার কথা। তবে আহনাফের বাবা খুব অমায়িক সুরে মানা করেছেন। তার ভাষ্যমতে, বিয়ের কথা আগে পাঁকা হোক। তারপর নাহয় তিন পরিবার একসাথে বিয়ের আমেজ উপভোগ করবে। আভার বাবা,জুনায়েদ এতে আর আপত্তি করেননি।
মেয়ের বাড়ি খুব সিমসাম ধরনের। পাঁচ তলা এক বাড়ির তিনতলায় ভাড়া থাকেন তারা। আভা নিচ থেকে একবার তিনতলায় চোখ দিলো। বারান্দায় নানা রঙের ফুলের গাছ লাগানো। বারান্দার গ্রিলে লতানো গাছ পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে নিজের জায়গা দখল করে আছে। ব্যাপারটা দারুন! মেয়েদের পরিবার খুব শৌখিন বলা চলে।
দরজায় কলিংবেল বাজাতেই সেকেন্ড তিনেক পর একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে দরজা খুলে দেন। আভাদের সবাই লোকটাকে সালাম দিলো।
মিনহাজদের পরিবার দেখে লোকটার মুখে সৌজন্যমূলক হাসি টেনে ভিতরে আসতে বললেন। ড্রয়িং রুমে এসে বসলো আভাদের পরিবার। ড্রয়িং রুমটা বেশ সুন্দর! দুটো লম্বা আর একটা ছোট হাতিলের সোফা। একটা কাঠের কেবিন জুড়ে নানারকম শৌখিন শোপিস। দেয়ালে কোনো ময়লা বা মাকড়সার জাল নেই। পরিবারের মেয়েরা খুব পরিষ্কার, বলাবাহুল্য! আভা ভাইয়ের পাশে এসে বসলো।
মধ্যবয়সী লোকটা মেয়ের বাবা, তা মাত্রই জানা গেলো। মেয়ের বাবার পাশে বসে আছেন একজন গুরুগম্ভীর এক ভদ্রলোক। জানা গেলো, ভদ্রলোক মেয়ের চাচা। তবে এখনো মেয়ের মায়ের দেখা মিলেনি।
মিনহাজের বাবা, জুনায়েদ খুব অমায়িক সুরে সবার সাথে কথা বলছেন। সবার হালচাল জিজ্ঞেস করছেন। মেয়ের বাবার মুখ দেখে মনে হচ্ছে, ছেলের বাবার এই নরম ব্যাবহার তার খুব পছন্দ হয়েছে। মিনহাজ নিজেও তাদের একটি দুটো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।
একটু পর মেয়ের বাবা ভিতরে লোক পাঠালেন, মেয়েকে নিয়ে আসার জন্যে। আভার মনে মনে এক উত্তেজনা কাজ করছে। সেদিন রিকশায় মেয়েকে ভালো করে দেখা হয়নি। আজ দেখবে। একমাত্র ভাইয়ের বউ বলে কথা!
পর্দা সরে গেলো। একটা শাড়ি পড়া মেয়ে মাথা নিচু করে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো। হাতে চায়ের ট্রে। চোখে মুখে লজ্জার আঁকাবাকা আঁচড়! আভা জানে, মেয়েটার মনের ভিতরে এখন কি চলছে। তারও তো একবার এই মেয়ে দেখানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে। মেয়েটা সবাইকে চা দিলো। মেয়ের বাবা মেয়েকে নিজের পাশে বসালেন। মেয়ের মা’ও এসে দাঁড়ালেন মেয়ের পাশে। মেয়ের মা দেখতে অসম্ভব সুন্দর বলা চলে। যৌবন কালে উনার চেহারা যে ঘায়েল করার মতো ছিলো , সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। মেয়ের নাম জিজ্ঞেস করা হলে মেয়েটা অস্ফুট স্বরে বললো, আরোহী। জুনায়েদ এবং রেহেনা মেয়ের হালচাল জিজ্ঞেস করলেন। কোথায় পড়ে, কি পছন্দ, মিনহাজকে তার কেমন লাগে? এমন কিছুই!
আভা ভাইয়ের দিকে একবার তাকালো। মিনহাজ আরোহীর দিকে তাঁকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। আরোহী চোরা চোখে মিনহাজের দিকে একবার তাকিয়ে সঙ্গেসঙ্গে চোখ সরিয়ে নিলো। মিনহাজ ইচ্ছে করেই আরোহীকে লজ্জায় ফেলছে, সেটা আভা হলপ করে বলতে পারে। ভাই তার বহুত বজ্জাত আছে।
অতঃপর পাত্র আর পাত্রীকে একা কথা বলতে পাঠানো হলো। বড়দের কথামত, মিনহাজ আর আরোহী এসে দাঁড়ালো সেই ফুল গাছ সমৃদ্ধ বারান্দায়।
মিনহাজ গ্রিল গেসে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখের দৃষ্টি আরোহীকে লজ্জায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছে। আরোহী চোখ তুলে তাকাতে পারছে না মিনহাজের দিকে। এবার মিনহাজ আরোহীর দিকে আরও একটু ঘন হয়ে দাঁড়ালো। আরোহীর নত হয়ে থাকা মাথার দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” কাল কি যেনো বলছিলে ? আরেকবার বলো ত! ”
আরোহী এবার দাঁত দিয়ে জিভ কাটলো। মিনহাজ এখনো কথাটা ভুলেনি! উফ! না জানি এখন ওর কি হাল করে? আরোহী মাথা তুললো। মিনহাজের দিকে তাঁকিয়ে নিষ্পাপ এক চাহনি রেখে বললো,
— ” আসলে.; আমি..; সরি! ভুল হয়ে গেছে! আর হবে না। সরি! ”
মিনহাজ আরোহীর নিষ্পাপ চাহনি পরোয়া করলো না। বরং ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— ” নো ওয়ে, আজকে তোমার ইনোসেন্ট চাহনিতে আমি গলছি না। দোষ করেছো, শাস্তি প্রাপ্য! কিন্তু, এখন চিন্তার বিষয়, কি শাস্তি দেওয়া যায়? কি শাস্তি দেওয়া যায়, বলো তো? ”
আরোহী এক ঢোক গিললো। গলাটা তবু শুকনো’ই রয়ে গেলো। অদ্ভুত! চোখে নিষ্পাপের মেলা বসিয়ে মিনহাজকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিনহাজ এক আরোহীর কোমরে রাখল। আরোহী সঙ্গেসঙ্গে কেঁপে উঠলো। কি করছে,মিনহাজ? মিনহাজ ধীরে ধীরে আরোহীর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
— ” তোমার শাস্তি হচ্ছে, তোমার শাস্তি হচ্ছে,.. তোমার শাস্তি…”
মিনহাজ এরপর কি বললো শোনা গেলো না। আরোহী ভয় পেয়ে ইতিমধ্যে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। মিনহাজ মুচকি হেসে আরোহীর বন্ধ চোখের পাতায় চুমু খেয়ে আরোহীর কপালে কপাল ঠেকালো। আরোহী ধীরে ধীরে চোখ খুললো। মিনহাজ কপালে কপাল ঠেকিয়ে চোখ বন্ধকর অবস্থায় বললো,
— ” শাস্তিটা বিয়ের পরের জন্যে তোলা রইলো, মিসেস মিনহাজ। ”
#চলবে
লেখিকার কথা – গল্প আমার লিখতে মন চায়। কিন্তু আপনাদের জন্য লেখার ইচ্ছেটাই কমে যাচ্ছে। গল্প লিখে কি হবে, কেউ একটাও গঠনমূলক কমেন্ট করে না। nice, next, sundor এসব একটা রাইটারকে মোটেও উৎসাহিত করে না, বরং নিরুৎসাহিত করে। কিন্তু আপনারা সেটা বুঝতে চান না। যদি গল্প ভালো না লাগে, তবে তা বলুন। আমি জলদি শেষ করে দিবো গল্পটা। তবে এভাবে ছোট ছোট কমেন্ট করে আমাকে নিরুৎসাহিত করবেন না, দয়া করে। আমি এতে লেখার খেই হারিয়ে ফেলি। গল্প সম্বন্ধে দু- চার লাইন কি একদমই লেখা যায়না? সত্যিই আমি আপনাদের এমন ব্যাবহারে নিরাশ হলাম।
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/233067432071158/?app=fbl