ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-৩৬

0
1263

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৩৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

‘ তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা
তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা
আমি তোমাকে গড়ি, ভেঙেচুরে শতবার! ‘

রুফটপে গান বাজছে। সকল মেয়েজাতি নেমেছে রং খেলায়। বাচ্চাদের হাতে লম্বা লম্বা কালার গান। সবার মুখে আনন্দ-উচ্ছাস! আভা ও তার সঙ্গপাঙ্গ একপাশে দাঁড়িয়ে। এতক্ষণ রং খেলতে খেলতে ক্লান্ত তারা। হাসাহাসির এক পর্যায়ে আভা বলে উঠলো,
— ” আমি ড্রেস চেঞ্জ করে আসছি। তোরাও চেঞ্জ করে আমার রুমে চলে আসিস। গল্প করা যাবে। ”
সবাই সায় দিলো আভার কথায়। আসলে, কারোর শরীরেই এখন আর শক্তি অবশিষ্ট নেই। সব নিঃশেষ হয়ে শূন্যের কোটায়। আভা জামার রং ঝাড়তে ঝাড়তে নিচে নেমে গেলো।
আহনাফের রুম পেরিয়েই আভার রুম। আভা অন্যমনস্ক হয়ে আহনাফের রুম পেরিয়ে নিজের রুমে যাচ্ছিল। কিন্তু, হুট করে ঘটলো এক বিপত্তি। আচানক, আহনাফের রুমের দরজা খুলে গেল। আভা সেদিকে তাকাতেই আহনাফ হাত বাড়িয়ে আভাকে হেচকা টান দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে এলো। আভা যখন সম্পূর্ণ অবাক, তখন আহনাফ দরজায় সিটকিনি আটকে দিলো। সিটকিনির শব্দে আভার ঘোর ভাঙলো। কি হচ্ছে, সবই ধীরে ধীরে বোধগম্য হলো। আভা আহনাফের দিকে তাকালো। চোখে রাগ ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পড়ছে। এই লোকের কবে বুদ্ধি হবে? কখন কোন কাজ করতে হয়, সেটা কখন বুঝতে শিখবেন? এই যে একটু আগে, ওভাবে টেনে নিয়ে আসলো, কেউ দেখে ফেললে? ছিঃ! আভা বললো,
— ” আপনি কি কখনোই শুধরাবেন না? কেউ দেখে নিলে কি হতো? আপনার তো কিছু না, নাক কাটা যাবে আমার! ”
আভার কণ্ঠ থেকে রাগ বালির মত ঝরে ঝরে পড়ছে। তবে, আহনাফ স্বভাবসুলভ সেসব পাত্তা দিলো না। বরং, আভার দিকে পূর্বের চেয়ে আরো একটু ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
— ” সবাই আমার বউকে রং মাখালো। শুধু আমিই বাদ পড়ে গেলাম। বিষয়টা খারাপ দেখায়। তো, এখন আমি…? ”
— ” এখন আপনি? ”
আভা ভ্রু উচুঁ করে বললো। আহনাফ আভার কোমরে নিজের এক হাত গলিয়ে দিলো। আভার কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলেও, মুখখানা থমথমে করেই রাখলো। আহনাফ আভার চোখের দিকে তাকিয়ে অন্য হাত দিয়ে পাশে থাকা রঙের ঢালায় হাত ডুবিয়ে দিলো। পুরুষালি হাতে মাখামাখি হলো, গোলাপি রং। আহনাফ সেই রঙ মাখা হাত নিজের দুগালে ছোঁয়ালো। আভা ভ্রু কুঁচকে আহনাফের একেকটা গতিবিধি লক্ষ্য করছে। কি করতে চাইছে এই লোক? বুঝা মুশকিল! আহনাফের গাল ভর্তি রঙ। যেনো মাত্রই রঙের নদীতে গোসল সেরে এসেছে ও। রঙ মাখা অবস্থায় আহনাফকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে। আভার কুঁচকালো ভ্রু ক্রমশ স্বাভাবিক হলো। চোখে ভর করলো, প্রেমিক পুরুষ নামক মুগ্ধতা! আহনাফের গায়ে জড়ানো সাদা রঙের টিশার্ট রঙের ছোপ ছোপ ছিঁটে’তে গোলাপি হচ্ছে। আহনাফ আভার দিকে তাকিয়ে আছে, নিস্পলক! চোখের পল্লব ফেলছে ধীরে ধীরে। আহনাফ ধীরে ধীরে নিজের মুখটা আভার দিকে এগিয়ে আনলো। আভা কিঞ্চিৎ ভয় পেলো। তবে, আহনাফের প্রতি জন্মানো এতদিনের বিশ্বাস আভার ভয়কে কাবু করে ফেললো। আভা আলগোছে বুজে রাখা চোখ নিয়ে বললো,
— ” ক.কি ক.ক.করছেন? ”
আহনাফ উত্তর দিল না। আসলে, কথাটা কানে প্রবেশ করে নি তার। মত্ত হয়ে গেছে সে আভাতে। আহনাফ চোখ বন্ধ করে নিজের গাল আভার গালে ঘষলো। আভা কেঁপে উঠে চোখ খিঁচলো। আহনাফের গালের খোঁচা খোঁচা দাড়ি ফুটছে আভার গালে। আভা এতে ব্যথা পাচ্ছে। তবে, সেই ব্যথা চাপা পড়ছে সুপ্ত এক ভালোলাগায়। মনে হচ্ছে, আভা নিজের মাঝে নেই। আড়াল হয়ে গেছে এই পৃথিবী থেকে। মত্ত হয়ে গেছে তার ‘ উনাতে ‘ ! আহনাফ আভার অপর গালেও নিজের গাল ঘষলো। আভা আবারও কেঁপে উঠলো। চোখ খিঁচে খামচে ধরলো আহনাফের বুকের কাছের টিশার্ট। আহনাফ মুচকি হাসলো। ধীরে ধীরে সরে এলো আভার থেকে। তাকালো আভার খিঁচে রাখা চোখের দিকে। আভার গালে লজ্জার রঙ! তাতে মেশানো দু’ফোঁটা আবির! উফ! মারাত্মক সুন্দর সেই মুখশ্রী। আভা ধীরে ধীরে চোখ খুললো। আহনাফ আভার কানে ফিসফিসালো,
— ” যাও, রাঙিয়ে দিলাম তোমায়, আমার রঙে। আমার ভালোবাসার রঙে! যে রঙ কখনোই ক্ষয় হওয়ার নয়। যে ভালোবাসা কখনো নিঃশেষ হওয়ার নয! ”
আভা আহনাফের চোখে আর তাকিয়ে থাকতে পারলো না। আহনাফের বুকে ধাক্কা দিয়ে তাকে একদমে সরিয়ে ফেললো। অতঃপর, এক দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো সেই হৃদ কাঁপানো ঘর থেকে। আহনাফ সেদিকে তাকিয়ে শুধু হাসলো। মাথার ঘন চুলে হাত চালিয়ে বিড়বিড় করলো,
— ” তুমি ফেঁসে গেছো, বউফ্রেন্ড! এবার শুধু মুখে বলার পালা। আমি অপেক্ষা করছি, সেই সুন্দর মুহূর্তের! খুব করে অপেক্ষা করছি! ”
_____________________
আজ হলুদের দিন। আগামীকাল বিয়ে। তারপরই, সব আয়োজন ফিকে। মিনহাজের ঘরে আসবে টুকটুকে এক নারী! তার ছোট্ট দুনিয়া মেতে উঠবে সেই নারীরা নূপুরের ঝনঝনাতে। তার এলোমেলো দুনিয়া আবারও গোছালো হবে,সেই কোমলবতি নারীর নরম নরম হাতে। মিনহাজ রেডি হয়ে নিচে নামলো।
হলুদের স্টেজে কনে আর বর পাশাপশি বসবে। মাঝখানে থাকবে হলুদ রঙের পর্দা। এই পর্দা দ্বারাই কনে,বরকে আলাদা করা হবে। দারুন নিয়ম! কিন্তু নিয়মটা যে মিনহাজের ভালো লাগলো না। কে বের করেছে এই অদ্ভুত নিয়ম? পাশাপশি বসবো, কিন্তু মুখ দেখব না। এ কেমন অত্যাচার! মিনহাজ মুখখানা হুতুম পেঁচার মত করে বসে রইলো।
হলুদের দিনে, আজ সবাই হলুদ আর সাদার মধ্যে লেহেঙ্গা পড়েছে। মেয়েরা সাদা টপস, হলুদ ঘাগড়া, সাথে জর্জেটের হলুদ ওড়না। ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবি, তার উপর হলুদ কটি, সাথে সাদা পায়জামা। সবাই ম্যাচ করে জামা-কাপড় পড়েছে। আভা একহাত দিয়ে লেহেঙ্গা সামলিয়ে হেঁটে আসলো স্টেজে। ভাইকে দুগালে হলুদ লাগিয়ে দাঁত কেলালো,
— ” হলুদ লাগলাম।এবার দোয়া দাও। ”
মিনহাজ ভ্রু উচুঁ করে ডান হাত আভার মাথার উপর রেখে হাবিজাবি বিড়বিড় করে বললো,
— ” যা দিলাম। এবার বিদায় হ। ”
আভা মাথার ওপর থাকা মিনহাজের হাত এক টানে সরিয়ে ফেললো। মুখ ফুলিয়ে বললো,
— ” তোমার মুখে বলা দোয়া চায়নি। এত কষ্ট করে তোমাকে হলুদ লাগালাম। দোয়া হিসেবে, টাকা দাও। ”
মিনহাজ বিরক্ত চোখে তাকালো। মুখে কৃত্রিম রাগ নিয়ে বললো,
— ” কোনো টাকা না। ফুট এখান থেকে। ”
আভা মুখ কালো করে সেখান থেকে প্রস্থান করলো। যাওয়ার আগে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে কালো মুখে বললো,
— ” তোমার মানিব্যাগ ফাঁকা হোক, তোমার বউ তোমাকে ফতুর করে দিক। আমিন, আমিন। ”
আভা চলে গেলো। মিনহাজ কিছু বললো না, হাসলো শুধু!

আভা গল্প করছে কয়েকটা মেয়ের সাথে। দূরে একপাশে দাড়িয়ে আহনাফের মা, আভার মা, আরো দুজন মহিলা গল্প করছেন। এই বিয়েতে অ্যাটেন্ড করার কারণে, আহনাফ, আর ওর বাবা হসপিটাল কদিন অন্যের দায়িত্বে রেখে এখানে এসেছেন। তবে, এখানেও তাদের ডিরেকশনের কাজটা অনলাইনে করতে হচ্ছে। আর পেশেন্ট দেখার কাজ, এ কদিন অন্যের দায়িত্বে দিয়ে এসেছেন। তবে, সবকিছু এত সহজ মনে হলেও, ব্যাপারটা মোটেই সহজ না। এজন্যে, দুজনকেই বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। তবে, আভার বাবার অতি মাত্রার অনুরোধের কাছে তাদের সব কাজ হার মানতে বাধ্য হয়েছে।
আভা সবার সাথে গল্প করলেও তার চোখদুটি আহনাফকে খুঁজছে! কোথায় গেলেন উনি? আভা চারপাশে তাকালো। নাহ, নেই তো! আভা হতাশ হয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো,
— ” আমার তৃষ্ণা পেয়েছে। ঠান্ডা কিছু খেয়ে আসি। তোরা গল্প কর। ”
আভা চলে এলো ওদের থেকে।
দুজন স্টাফরা সবাইকে কোল্ড ড্রিংকস সার্ভ করছে। আভা ওদের থেকে এক গ্লাস কোল্ড ড্রিংকস নিয়ে হাঁটা ধরলো সামনে। একসময় পা স্থির হলো আভার। দাঁড়ালো একপাশে। আহনাফ দাড়িয়ে আছে, একটু দূরে। নিজের বাবার সাথে কথা বলছে। আহনাফকে কথা বলতে দেখে আভা আর এগুলো না। হেঁটে অন্যপাশে চলে গেলো।

— “তোমায় ভয়াবহ ‘ আমিময় ‘ লাগছে, মিস বউফ্রেন্ড! ”
কানের কাছে আহনাফের ওমন ঝুঁকে কথা বলতে দেখে আভা তৎক্ষণাৎ সরে দাঁড়ালো। খানিক ভয় পেয়ে তাকালো আহনাফের দিকে। আহনাফের ঠোঁটে ঘায়েল করা মুচকি হাসি। যা দেখে, আভা অজান্তেই গলে গেল। কোল্ড ড্রিংকসে ঠোঁট দ্বারা চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— ” ‘ আমিময় ‘ মানে? ”
আহনাফ আভার দিকে আরও একটু ঘন হয়ে দাঁড়ালো। আভার ছটফটে চোখে চোখ রেখে বললো,
— ” আমিময় মনে আমার একান্ত ব্যক্তিগত নারী, আমার সর্বস্ব, আমার বুকের স্পন্দন, আমার নিঃশ্বাস, আমার হৃদয়রানী।আমিময় মানে, আভা নামক এই আস্ত মেয়েটাই। যার অস্থিত্ব আমার মনের প্রতিটা অঞ্চল জুড়ে। ”

আভা পুনরায় কাঁপলো। আহনাফ ওমন করে কথা বলেন কেনো? সে কি জানে না, তার ওমন কথা শুনে আভার দম বন্ধ হয়ে আসে। বুকের ভিতর তবলা বাজে। নৃত্য করতে থাকে তার মনের প্রতিটা উচুঁ নিচু স্তর। হয়তো সে জানে। আর জানে বলেই তার এমন ব্যবহার! আভাকে নিজের ওমন কথা দ্বারাই মেরে ফেলতে চান, পণটা যেমন এরূপ!

— ” হ্যাই, রাত্রি! ”
পিছন থেকে পুরুষালি ভরাট কণ্ঠস্বর শুনে আভা আর আহনাফ দুজনই পিছন ফিরলো। কে ডাকলো আভাকে?

#চলবে
গল্পটার রেসপন্স ধীরে ধীরে কমছে। হয়তো, গল্পটা আগের মত ততটা ভালো হচ্ছে না। তাই, আপনাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। তবে, আমি চেষ্টা করবো, গল্পটাকে আবারও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে। গল্পটাকে এত ভালোবাসা দেওয়ার জন্যে, সবাইকে ধন্যবাদ!

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/246286277415940/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here