#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_১৯
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
শেষ পর্যন্ত ঐশী , জুভান আর তীর্থ এসে পৌঁছাল নাফাখুম জলপ্রপাতের কাছে। চোখের সামনে পাথরের গা বেয়ে বয়ে যাওয়া অবিরাম জলধারা দেখে সবাই আপ্লুত হয়ে আছে। ঐশী মুখে হাত চেপে এক জায়গায় থম মেরে দাড়িয়ে আছে। কথা ফুটছে না ওর মুখে। চোখের রাজ্যের বিস্ময়। জুভান একবার তীর্থর দিলে তাকালো। তারপর দুজনে একসাথে দৌড়ে এগিয়ে গেলো জলপ্রপাতের খুব কাছে। একদম কাছে। ঐশী মুখে হাত চেপে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো ওদের কাছে। জুভান পাথরের উপর হেঁটে হেঁটে এগিয়ে গেল জলের কাছে। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলো স্বচ্ছ জল। তারপর ফোন বের করে ভিডিও করলো। তীর্থ ঐশীকে একপাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
” যাবে পানির কাছে? ”
ঐশী সঙ্গেসঙ্গে বললো,
” হ্যা। যাবো ,যাবো। ”
তীর্থ ঐশীকে নিয়ে গেলো পাথরের কাছে। কিন্তু ঐশী পাথর ডিঙিয়ে পানির কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। তীর্থ ততক্ষণে চলে গেছে পানির কাছে। কিন্তু ঐশীকে প্রান্তে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আবারও পাথর ডিঙিয়ে ঐশীর কাছে এলো। হাত বাড়িয়ে বললো,
” আসো। ”
ঐশী তীর্থর বাড়ানো হাতের দিকে তাকিয়ে কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো। তীর্থর হাত এভাবে ছুবে ব্যাপারটা কিছুটা অস্বস্তিকর। তীর্থ ঐশীকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে হাত আর একটু এগিয়ে বললো,
” কি হলো আসো। ভয় নেই। আমি আছি। আসো। ”
ঐশী কিছুটা ভেবে মৃদু হেসে বললো,
” বাকি জীবনটাতো একা একা পার করতে হবে। তাই এখন থেকেই ট্রাই করা উচিৎ। ”
তীর্থ হাত গুটিয়ে নিল। ঐশী খুব সন্তর্পনে পাথর ডিঙিয়ে পানির কাছে এলো।
পানি দেখে কারো যেনো হুশ নেই। এই পানি ত আর যেই সেই পানি নয়। পাহাড় থেকে বেয়ে আসা জলপ্রপাত।ওরা নিজেকে সামলাতে না পেরে পানি নিয়ে খুব খেললো। শেষ পর্যন্ত ওরা আবারও নিজেদের হোটেলে ফিরে এলো। আজ সারাদিন অনেক ধকল গেছে। তাই জুভান আর ঐশী নিজেদের রুমে এসে বেডে শটান হয়ে শুয়ে পড়ল।
_________________
সকালে জুভানের শুট আছে। ঐশী ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে জুভানের ফোনে কল দিলো। কয়েকবার রিং হওয়ার পর জুভান বেডে হাতড়ে খুঁজে ফোন রিসিভ করে কানে লাগালো। ঘুমঘুম কণ্ঠে বললো,
” হ্যালো … ”
জুভানের ঘুমঘুম কণ্ঠ শুনে ঐশী অনুভূতির বেড়াজালে বন্দী হয়ে চোখ বুজে লম্বা নিঃশ্বাস নিল। নিজেকে সামলে মিহি সুরে বলল,
” স্যার , আপনার শুট আছে দশটার দিকে। নাও ইটস নাইন ফরটিন। ”
জুভানের ঘুম এখনো কাটেনি। ঐশীর কথা কানেই যায়নি ওর। ফোন কানে নিয়েই আবারও চোখ বুজলো। ওপাশ থেকে জুভানের কোনো জবাব না পেয়ে ঐশী জোরালো ভাবে বললো,
” স্যার , স্যার।আপনি জেগে আছেন ? ”
জুভান জেগে উঠে বললো,
” হুম। উঠছি। তুমি রিসেপশনে ওয়েট করো। আই অ্যাম কামিং। ”
ঐশী কিছু বলার আগেই জুভান ফোন কেটে দিলো। ঐশী ফোন কান থেকে নামিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাস নিলো। অতঃপর টেবিল থেকে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
_______________________
শুটিং স্পটে খা খা রোদ্দুর। সেই রোদ্দুরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনমানব। ঐশী একপাশে স্ক্রিপ্ট নিয়ে দাড়িয়ে আছে আর জুভান শট দিচ্ছে।
একসময় ডিরেক্টর তার সহকারী কর্মচারীকে ডেকে বিরক্ত গলায় বললো,
” জুভানের সাইড মডেল হিসেবে যাকে সিলেক্ট করা হয়েছিল সে মেয়ে কই ? আসেনি এখনো ? ”
সহকারী কর্মচারী ফটাফট উত্তর দিলো,
” না, স্যার। উনি জ্যামে আটকে আছেন। ”
ডিরেক্টর ভ্রু কুচকে বললো,
” তুমি কিভাবে জানো ? তুমি দেখেছো ওকে ? ”
কর্মচারী আমতা আমতা করে বললো,
” আসলে স্যার। ফোন দিয়েছিলাম উনাকে। ”
” শাট আপ। ফোন দিয়েছিলেন উনি ! রাবিশ। ওই মডেলকে আমার সিলেক্ট করাই উচিত হয়নি। সবসময় লেট করার রেকর্ড আছে ওর। এখন অলটারনেটিভ খুঁজো। গো। ”
বলেই ডিরেক্টর শুট চেক করা শুরু করলেন। পাশ থেকে কর্মচারী থম মেরে দাড়িয়ে রইলেন। মহা ফ্যাসাদে পড়েছে। এখন হুট করে মডেলের অলটারনেটিভ কোথা থেকে পাবে?
কর্মচারী আমতা আমতা করে বললো,
” স্যার, এখন হুট করে অলটারনেটিভ কোথায় পাবো ? আমরা কি আরও কিছুক্ষণ ওয়েট করতে পারিনা ? ”
ডিরেক্টর ভ্রু কুচকে তাকালেন তার দিকে। জুভান পাশ থেকে ওদের কথোপকথনে অধৈর্য্য হয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। মুঠোফোন পকেটে পুড়তে পুড়তে বললো,
” আজকের শুট ক্যান্সেল করে দাও। আমার ওতো টাইম নেই ওই মডেলের জন্যে অপেক্ষা করার। ”
এই বলে জুভান চলে যেতে নিলে ডিরেক্টর পিছন থেকে ডাক দেন,
” আরে , জুভান।”
জুভান কপালে ভাঁজ ফেলে ফিরে তাকালে ডিরেক্টর বললেন,
” একটু দাড়াও। আমরা একটা উপায় খুঁজে বের করছি। জাস্ট ফাইভ মিনিটস। ”
জুভান একটা হাফ ছেড়ে দিয়ে আবারও চেয়ারে বসলো। ডিরেক্টর হলেন দিশেহারা। জুভান এখন চলে গেলে তো মহা মুশকিল হয়ে পড়বে। একবার আজকের শিডিউল মিস হয়ে গেলে জুভান আর কক্ষণো সেই সিন শুট করবে না। যা
ঘাড়ত্যারা। খুব ভালো করে চিনেন উনি জুভানকে।
হঠাৎ ডিরেক্টরের চোখ গেলো ঐশীর দিকে। বারবার হাত ঘড়ি দেখে বিরক্ত হয়ে সামনে তাকাচ্ছে। ঐশীকে দেখে ডিরেক্টরের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। তিনি নিজে ঐশীর পাশে এসে দাড়ালেন। ঐশী উনাকে দেখে একটু অবাক হলেও মুখে স্মিত হাসি টেনে বললো,
” কোনো দরকার স্যার ? ”
ডিরেক্টর হেসে বললেন,
” একটা রিকোয়েস্ট আছে। মানবে ? ”
ঐশী প্রশ্নবোধক চোখে তাকালে উনি বললেন,
” আজকের সিনের সাইড মডেল হবে ? ”
ঐশী যেনো চমকে উঠলো। মডেল আর ও ! ঐশী মাথা নেড়ে বললো,
” অসম্ভব স্যার। আমি মডেলিং পারিনা। ”
” এটা জাস্ট একটা ছোট সিন। ভেরি সিম্পল। ইউ ক্যান ডু ইট , গার্ল। ভরসা রাখো নিজের উপর। ”
শেষ পর্যন্ত ডিরেক্টরের পীড়াপীড়িতে ঐশী রাজি হলো।
________________________
জুভান চেয়ারে বসে ফোন স্ক্রল করছে। চোখে মুখে বিরক্তি ফুটে আছে। কপালে সূক্ষ্ম তিনটে ভাজ। চুলগুলো উড়ে কপালে লেপ্টে আছে। শার্টের সামনের দুটো বোতাম খোলা। আর এসব একদৃষ্টিতে পরখ করে যাচ্ছে একজন মেকাপ আর্টিস্ট। জুভানের একজন বড় ফ্যান বলা যায়। কিন্তু এত সামনে থেকে দেখেও কখনো একটা কথা বলতে পারেনি জুভানের সাথে। কথা শুরু করলেই জুভানের তীক্ষ্ম চোখের তাকানো ওর সব কথা উলোটপালোট করে দেয়।
প্রায় আধ ঘন্টা পর ঐশী মেকাপ রুম থেকে বেরিয়ে আসে। পড়নে একটা সবুজ রঙের হলুদ পারের শাড়ি। ঐশী শাড়ীর কুচি সামলাতে সামলাতে রুম থেকে বেরোচ্ছে। আর ঠিক তখনই জুভানের চোখ পড়ে ঐশীর দিকে। জুভান থমকে যায়। নিস্তেজ হাতে ফোন নিয়ে অপলক চেয়ে থাকে ঐশীর দিকে। ঐশীর কুচি সমালানো দেখে আরো একবার হার্টবিট মিস করলো ও। এত সুন্দর লাগছে কেন ওকে ? প্রাণ কাপানো সৌন্দর্য্য যাকে বলে। কই ? আগে তো ঐশীকে এতবার কাছ থেকে দেখেছে। এত সুন্দর লাগেনি। নাকি শাড়ি পড়লে সব মেয়েকেই মায়াবী লাগে ? জুভান আপনমনে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পেলো না। তবুও চেয়ে রইলো।
ঐশীর হাঁটতে হাঁটতে একবার চোখ পড়ে জুভানের দিকে। সঙ্গেসঙ্গে দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। জুভান একটু অপ্রস্তুত হয়ে নজর সরিয়ে ফেলে। পুনরায় ফোনে চোখ রাখে। কিন্তু বেহায়া নজর বারবার আড়চোখে ঐশীকে দেখেই যাচ্ছে।
ঐশী আসলে ডিরেক্টর উচ্চস্বরে বললেন,
” এখন সিন শুরু করা যাক। এই সিন একটা ড্যান্স স্টেপ। ঐশীর আঙ্গুল ধরে তুমি ঐশীকে ঘুরাবে। তারপরের স্টেপ হলো তুমি ঐশীর কোমর আর হাত ধরে সফট ড্যান্স করবে। ঠিক তখনই রোল মডেলের এন্ট্রি হবে। গট ইট ? ”
জুভান কিছু না বলে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। আর ঐশী কাচুমাচু হয়ে জুভানের পাশে এসে দাঁড়াল। জুভানের সাথে শুট করবে ভেবেই লজ্জায় আর তীব্র অস্বস্থিতে কুকড়ে যাচ্ছে।
ডিরেক্টর ” অ্যাকশন ” বলতেই জুভান বুকে হাত দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে ঐশীর সামনে। মোহনীয় গলায় বললো,
” ক্যান আই ড্যান্স উইথ ইউ ? ”
ঐশী যথেষ্টই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে হাত বাড়িয়ে দিলো। জুভান ঐশীর হাত আলতো করে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল। ” দ্বিতীয় স্পর্শ ” । ঐশীর মন জুড়ে শিহরন খেলে গেলো। কিন্তু ঐশী নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে সেসব ভুলে শুধু শুটে মন দিল। জুভান ঐশীর হাত ধরে প্রথমে আঙ্গুল ধরে ঐশীকে ঘুরালো। ঐশী খুব নিখুঁত ভাবে স্টেপ ফলো করলো। অতঃপর জুভান ঐশীর কোমরে হাত দিলো। ঐশী এবার তীব্র অস্বস্থিতে পরে গেলো। ওর পক্ষে আর শুটে মন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বারবার নিজের কোমর সংকোচিত করে নিচ্ছে। জুভান ঐশীর মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে পারলো। সে হাতের বাঁধন আরো হালকা করে দিলো। যতটা হালকা করলে ঐশীর অস্বস্থি লাগবে না ততটা হালকা করে নিল। ঐশী এবার যেনো একটু রেহায় পেলো। জুভান ড্যান্স করতে করতে ঐশীর কানের কাছে বিড়বিড় করে বললো,
” আমি কখনোই কোনো খারাপ স্পর্শে আপনাকে কলঙ্কিত করবো না, মিস ঐশী । ভরসা রাখতে পারেন। ”
ঐশী চমকে তাকালো। জুভান ঐশীর কানের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে এনে আবারও স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ড্যান্স করতে লাগলো। ঐশী জুভানের কাধের দিকে তাকিয়ে ড্যান্স স্টেপ ফলো করছে। বুকের ভিতর হার্টবিট দৃমদৃম করে শব্দ করছে। একটু আগে এ কি বললো জুভান !
#চলবে.. শব্দসংখ্যা – ১২০০+
আমি আসলেই অনেক সরি। আমি হয়তো এমন ভালো করে গল্পটা সাজাতে পারছি না, যতটা ভালো করে সাজালে আপনারা গঠনমূলক মন্তব্য করতে পারেন। দু একজন ছাড়া বাকি সবাই নেক্সট,নাইস কমেন্ট করেন। কেনো ? আপনারা গঠনমূলক কমেন্ট করলে আমি গল্প সম্বন্ধে ভালো মন্দ বুঝতে পারবো। শোধরাতে পারবো।