#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_২০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
ভালোবাসা আর প্রেম দুটো যেনো নদীর এপার আর ওপার। ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যাকে একবার ছুঁয়ে দেয় সেই মানুষটা তখন জীবনকে উপলব্ধি করতে শিখে যায়। অপরপাশে মানুষটার ছোট থেকে ছোট ব্যাপারে মুগ্ধতা খুঁজে নেয়। আর প্রেম ! সেতো সাময়িক এক অনুভূতি। ঘাসফুলের উপর জমে থাকা শিশির ফোঁটার ন্যায় ঠুনকো। নিমিষেই রোদে শুকিয়ে যায় নয়তো বাতাসের হালকা ঝাপটায় গড়িয়ে পড়ে।
সেই চমৎকার অনুভূতি জুভান একটু একটু করে অনুভব করতে পারছে। কিন্তু সেই মিষ্টি অনুভূতিগুলোর কোনো স্থায়ী নাম দিতে পারছে না। জুভান জানেনা তার অস্থির মন কি চায়? জুভান সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে। হাত দুটো একসাথে করে কপালে ঠেকানো। এসব নিরন্তর ভাবনার মধ্যে জুভানের ফোনে কল এলো। জুভানের ধ্যান ভঙ্গ হলো। সে সোফা থেকে উঠে টেবিল থেকে ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে শাহাদাত “হ্যালো” বলতেই জুভান থমথমে গলায় বলে,
” হুম। বলো। ”
” স্যার , বান্দরবানের দিকে একটা মেয়ে অ্যারেঞ্জ হয়েছে। আজ রাতে আপনার কাউকে লাগবে ? লাগলে আমি ওই মেয়েকে পাঠাতে পারি। ”
মেয়ের কথা শুনে জুভানের চোখ বুজে নিল। কিন্ত! কিন্তু ! জুভানের বন্ধ চোখে ঐশীর হাসিমাখা ছবি ভাসলো কেনো? কেনো ভাসলো ? জুভান কিছুটা অবাক হলো।
” স্যার , পাঠাবো ? ”
ওপাশ থেকে আবারও একই কথা শুনে জুভান চোখ বুজে লম্বা নিঃশ্বাস নিলো। অতঃপর বললো,
” না। এখন থেকে কোনো মেয়েই আর পাঠানো লাগবে না , শাহাদাত। ”
এই কথা শুনে যেনো শাহাদাতের বিস্ময় যেনো আকাশ ছুঁলো। চোখ বড়বড় করে বললো,
” আর ইউ সিওর, স্যার ? আপনি ঠিক আছেন ? আপনি এম..”
জুভান শাহাদাতের কথার পিঠে ভ্রু কুচকে বললো,
” নো মোর ওয়ার্ডস। আমি যেটা বলেছি তাতে কোনোরূপ প্রশ্ন উঠানো আমার পছন্দ না। গট ইট ?”
” সরি, স্যার।”
জুভান ফোন কেটে দিলো। অতঃপর এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেডে গা এলিয়ে দিলো। সঙ্গেসঙ্গে চোখে ভর করলো রাজ্যের ঘুমপরি।
_________________________
ঐশী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে হালকা মেকাপ করে নিলো। এমনিতেই সে খুব একটা মেকআপ করা পছন্দ করে না। কিন্তু আজ একটা স্পেশাল মিশন আছে। কাউকে ইমপ্রেস করা দরকার। খুব বেশীই দরকার। রেডি হওয়ার পর ঐশী পার্স ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
বুকের ভিতরের জানা শঙ্কাকে সামলে নিয়ে ” পিংক মাসালা ” ক্যাফের ভিতর প্রবেশ করলো ঐশী। কাউন্টারের দিকে এগিয়ে গেলে হুট করে সামনে আসে তন্ময়। ঐশী কিছুটা থমকে পিছিয়ে যায়। তন্ময় ঐশীকে আগাগোড়া নিরীক্ষণ করে বলে,
” হাই.ই, বিউটিফুল লেডি। ”
ঐশী মেকি হেসে বলে,
” হ্যালো, স্যার। ”
” আজ এত তাড়াতাড়ি এসে গেলে ? ওয়ার্ক টাইম তো তিনটা থেকে শুরু। ”
” আসলে , ফার্স্ট ডে তো। ইমপ্রেশন খারাপ করতে চাইনি। ”
” ওহ। গুড, গুড। ”
অতঃপর কিছুক্ষন নিরবতা। ঐশী তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
” স্যার , আমি এবার যেতে পারি। ”
তন্ময় হেসে বললো,
” ইয়াহ , অফ কোর্স। গো, গো। ”
ঐশী হালকা হেসে কাজে লেগে পড়লো। তন্ময় একটা চেয়ারে বসে অপলক তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে। কাজের করার সময় ঐশীকে দেখতে তার অনেক আবেদনময়ী লাগছে। তন্ময়ের শরীর ,মন চাঙা হয়ে যাচ্ছে। একসময় ঐশীর পাশে এসে দাঁড়াল তন্ময়। ঐশী তখন খাবার ট্রেতে রাখছিল। তন্ময় ঐশীর দিকে তাকিয়ে হুট করে ঐশীর হাত আকড়ে ধরলো। ঐশী চমকে উঠলো। ঝটপট তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে হাত সরাতে গেলে তন্ময় আরো জোরে হাত আকড়ে ধরে বলে,
” আজ কাজ থাক। কি বলো ? ”
ঐশী নিজের হাত স্থির রেখে বললো,
” কিন্তু কেনো, স্যার ? ”
” চলো না। আজ ঘুরে আসি কোথাও। তুমি আর আমি, একলা একলা। যাবে ? ”
ঐশী মনে মনে হাসলো। এটাই তো চাই তার। তন্ময়ের মন জয় করতে হলে ওকে নিয়ে বেড়াতে হবে। ঐশী তাই অকপটে রাজি হয়ে পড়লো।
____________________
তন্ময় আর ঐশী একটা রেস্টুরেন্টে। খুব নামিদামি রেস্টুরেন্ট। তন্ময় ঐশীকে একটা চেয়ার টেনে দিল ঐশী মুচকি হেসে সেই চেয়ারে বসলো। তন্ময়ও ঐশীর পাশ গেসে একটা চেয়ারে বসলো। খাবার অর্ডার দিয়ে ঐশীর দিকে তাকালো। মুখে মধু ঢেলে বললো,
” ভূমি ,তোমার সম্পর্কে কিছু বলো। ”
ঐশী তন্ময়ের দিকে তাকালো। লাল টকটকে চোখ নিয়ে বললো,
” আমার পরিবার সম্পর্কে জেনে কি করবেন ? ”
তন্ময় ঐশীকে রেগে যেতে দেখে ভরকে গেলো। শান্ত হয়ে বললো,
” কুল , ভূমি। বলতে না চাইলে সমস্যা নেই। ”
ঐশী হালকা হাসলো। বললো,
” আরে। আমি মজা করছিলাম। আমার পরিবার আছে। ওরা সবাই গ্রামে থাকে। আমি একা একা বান্দরবানে থাকি। আসলে আমার পরিবারের টাকার খুব দরকার। তাই আমি চাকরী করতে এসেছি এখানে। ”
তন্ময় মনে মনে বাকা হাসলো। ভাবলো ” হায়। অবলা মেয়ে। একে হাতে আনা তো পানির মত সহজ। ”
ঐশী তন্ময়ের মুখের অভিব্যক্তি দেখে বললো
” স্যার , স্যার। ”
তন্ময় স্তম্ভিত ফিরে পেয়ে বললো,
” হুম। বলো। বলো। ”
” খাবার এসে গেছে। ”
তন্ময়ের টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো খাবার রাখা। তন্ময় বললো,
” তাহলে, শুরু করা যাক। ”
ঐশী হাসলো। খাবারে হাত দিতে গেলে তন্ময় হুট করে ঐশীকে থামিয়ে বললো,
” আব। আমি তোমায় খাইয়ে দেই ? ”
ঐশীর রাগ লাগলো। তবে তা প্রকাশ করলো না। সৌজন্যমূলক হেসে বললো,
” কেনো নয়। আমি রাজি। ”
তন্ময় খাবার মেখে ঐশীকে খাইয়ে দিতে লাগলো। খাবার খাইয়ে দেওয়ার সময় বারবার তন্ময়ের হাত ঐশীর ঠোঁটে ইচ্ছেকৃত ভাবে স্পর্শ করছিল। ঐশী তখন রাগে জ্বলে উঠলেও বাইরে তা প্রকাশ করলো না। ওর প্ল্যান সফল হওয়া দরকার। তাই অযথা এসব ছোটখাটো ব্যাপারে রাগ ঝেড়ে সাজানো গোছানো ব্যাপারটা নষ্ট করে লাভ নেই।
খাবার খাওয়া সময় ঐশীর ফোন বেজে উঠলো। ঐশী মুখের খাবার চিবুতে চিবুতে মুখ ঘুরিয়ে ফোনের দিকে তাকালো। জুভানের ফোন। ঐশী ফোন কেটে দিয়ে খাবার খাওয়ায় মন দিলো।
খাবার খাওয়া শেষ হলে ওরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে এলো। তন্ময় ঐশীর দিকে ফিরে বললো,
” আমি তোমাকে পৌঁছে দেই ? ”
ঐশী এবার মানা করলো। বললো,
” লাগবে না, স্যার। আজ আমি পেট পুড়ে খেতে পেরেছি এই অনেক। আজকের দিনের জন্যে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ”
ঐশীর কথা শুনে তন্ময় মাথা চুলকে লাজুক হাসলো। অতঃপর ঐশীকে একটা রিকশায় উঠিয়ে দিলো তন্ময়।
____________________
” কোথাও ছিলে ? ”
রেস্টুরেন্ট থেকে এসে রুমের লক খোলার সময় জুভানের প্রশ্নের মুখোমুখি হয় ঐশী। ঐশী লক না খুলে কার্ড হাতে নিয়ে জুভানের দিকে ফিরলো। জুভান বুকে হাত গুটিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে। ঐশী বললো,
” এমনিই কাজ ছিল। তাই বেড়িয়েছিলাম। ”
জুভান হাসলো। সোজা হয়ে দাড়িয়ে ঐশীর দিকে কিছুটা এগিয়ে এসে বললো,
” কাজ ? তা কি কাজ ছিলো ? যার জন্যে একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে একসাথে খাবার খাওয়া লাগলো। ”
ঐশী এবার কিছুটা থতমত খেয়ে গেলো। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
” আসলে স্যার…”
” ডোন্ট লাই। অযথা আম আম করো না। সত্যি বলার সাহস না থাকলে মুখ খোলার দরকার নেই। ”
ঐশী মাথা নিচু করে লম্বা নিঃশ্বাস নিল। কোনো উত্তর না দিয়েই আবার রুমের লক খোলায় মন দিলো। ঐশীর এই চুপ থাকাই জুভানের রাগ তুঙ্গে তুলে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ট ছিলো। জুভান ঐশীর দিকে তেড়ে এসে বললো,
” আমরা কাল চলে যাচ্ছি। ব্যাগ রেডি রেখো। ”
ঐশী যেনো থমকে গেলো। কার্ড হাতে নিয়েই দাড়িয়ে রইলো। জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
” কি ব্যাপার , ঝটকা খেলে ? সো স্যাড। সো স্যাড। ”
ঐশী মুখ জুড়ে তখন চিন্তার রেশ। এবার কি হবে ? ওর প্ল্যান কি করে সফল হবে ?
#চলবে..
শব্দসংখ্যা – ১০০০+। বেড়াতে এসেছি। কাল প্রায় ৩ ঘণ্টা জার্নি করেছি। তাই ক্লান্ত ছিলাম। এইটুকুই লিখতে পেরেছি। পর্ব কিন্তু ছোটো নয়। স্বাভাবিক পর্ব।
রিচেক দেইনি। গল্প কেমন লেগেছে জানাবেন।