ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-৩০

0
1949

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩০ ( বিয়ে পর্ব)
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ঐশী পুনরায় চোখ মুছে বললো,
— ” আমি মরে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবো না। ”
জুভান তীক্ষ্ম চোখে ঐশীর দিকে তাকালো। বুকে দু হাত গুটিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।ববললো,
— “তাহ, কারণটা জানতে পারি? ”
ঐশী আশপাশে তাকালো। এত মানুষের ভীড়ে এমন কথা বলতে ওর বাধছে। ঐশীর এমন অস্বস্থি দেখে এক হাফ ছাড়লো। আচমকা ঐশীর বাম হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো কোথাও। ঐশী একটু অবাক হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। জুভানের সাথে পা মেলালো। জুভান ঐশীকে একটা রুমে এনে ছেড়ে দিলো। সিটকিনি উপরে তুলে দিয়ে ঐশীর সামনে সোজাসুজি হয়ে দাঁড়ালো। বেশ কয়েক নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো। তারপর ঐশীর দিকে তাকিয়ে মোলায়েম সুরে বললো,
— ” নাও টেল মি দা রিজন? ”
ঐশী কোনোরূপ ভনিতা না করেই বলে দিলো,
— ” আপনি কি ভেবেছেন আপনি সারাদিন সারারাত বাড়িতে সো কলড মেয়েগুলো এনে ফুর্তি করবেন। আর আমি সারা বাড়ি আপনার বউ হয়ে ঘুরে বেড়াবো। আপনি যদি এসব ভেবে থাকেন। তাহলে সেখানেই আটকে যান। এমন হলে আপনাকে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠে না। ”
জুভান ভ্রু নাচিয়ে ঐশীর কথা শুনছিলো। ঐশী সম্পূর্ণ কথা শেষ হবার পর জুভান তীক্ষ্ম চোখে বললো,
— ” এটাই তো সমস্যা? রাইট? ”
ঐশী মুখ বাঁকিয়ে অন্যদিকে ফিরলো। জুভান আঙ্গুল দিয়ে কপাল চুলকালো। তারপরও কোমরে এক হাত দিয়ে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” ওকে দেন। আমরা একটা ডিল করবো। ”
— ” ডিল? ”
— “হ্যাঁ,ডিল। এই বিয়ে একটা সমঝোতা হবে। ”
— ” মানে? ”
ঐশী অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো। জুভান সোজাসুজি বললো,
— ” বিয়ের পর আমি বাড়িতে কোনো মেয়ে আনবো না। এমনকি আমার লাইফেও তুমি ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো মেয়ে থাকবে না। আমরা দুজন একই বাড়িতে থাকবো। কিন্তু আলাদা। তুমি এক রুমে, আমি আরেক রুমে। আমি তোমার লাইফে জবরদস্তি করবো না। তেমন তুমিও করবে না। কিন্তু যদি কখনো তোমার মনে হয় আমাদের একসাথে থাকা উচিত না। দেন একটাই পথ বেছে নেবো। “ডিভোর্স”। অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট যদি কখনো তোমার মনে হয় তুমি আমার প্রেমে পড়েছ, তাহলে ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম। আমি সেদিন তোমায় ফিরিয়ে দেব না। কথা দিলাম।তো বলো। ডিল মঞ্জুর? ”

ঐশী হতবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন ডিল সম্পর্কে ও কখনোই শুনে নি। ঐশী কিছুক্ষণ চিন্তা করলো। শেষ পর্যন্ত সবদিক ভেবে বললো,
— ” ঠিক আছে। আমি আপনাকে বিয়ে করবো। তবে হ্যাঁ, ডিলের কথা যেনো না ভুলেন। তাহলে কিন্তু…”
— ” ভুলবো না। মাইন্ড শার্প আমার। তোমার মতন না। এখন চলো। ”
ঐশী জুভানের কথায় কিছুটা অপমানিতবোধ করলো। জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো,
— ” আপনি কিন্তু আমায় অপমান করছেন। ”
জুভান অবাক হওয়ার ভান করলো। গালে তওবা করার মতো হাত রেখে বললো,
— ” আস্তাগফিরুল্লাহ। জীবনেও না। ”
ঐশী জুভানের কথা বলার ভঙ্গি দেখে হেসে দিলো।

_______________________
অতঃপর দুজনের প্রণয়ের ঘণ্টা বাজলো। ঐশী এবং জুভান বেঁধে গেলো এক অমূল্য সম্পর্কে। ইতিমধ্যে মিডিয়া তোলপাড় হয়ে গেছে ওদের বিয়ের খবরে। একটু আগে যারা ওদের চরিত্রে আঙ্গুল তুলছিলো এখন তারাই তাদের স্বাগতম জানাচ্ছে। জুভানের বন্ধু বিহান গাড়ি চালাচ্ছে। আর বাকি তিনজন অন্য গাড়ি দিয়ে জুভানের বাড়ীতে যাচ্ছে। ঐশী মুখ ভার করে জানালার পাশে সেটে বসে আছে। জুভান ফোন স্ক্রল করছে আর আড়চোখে ঐশীর দিকে তাকাচ্ছে। জুভানের মাথায় ঘুরছে নানা চিন্তা। ” বিয়ে হয়ে গেছে ওদের! ” হ্যাঁ, “বিয়ে”। কিন্তু এই মুহূর্ত এভাবে না আসলেও পারতো। ঐশী যখন তাকে মন থেকে মেনে নিত তখন ধুমধাম করে তার হৃদয়হরিণী কে নিজের ঘরে তুলতো। কিন্তু এখন! এখন সবটাই বিগড়ে যাওয়া এক ঘুড়ির মতন। যার লাটাই একটা তুচ্ছ ডিলের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। জুভান এসব ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

” নিস্তব্দ কুঠির ” বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো ওদের। জুভান আগে নেমে দাড়ালো। ঐশী নামতে ফেলে জুভান বাধা দেয়। সে নিজে ঐশীর পাশে এসে ওর দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দেয়। ঐশী মুখ কুচকে বলে,
— ” কি? ”
— ” আব, নামতে হেলপ করি। ”
— ” ডিলের কথা কি ভুলে গেছেন? ”
— ” না। ভুলি নি। কিন্তু আমার অনেক শখ ছিল নিজের বউকে নিজের হাতে গাড়ি থেকে নামাবো। তারপর একসাথে বাড়িতে পা রাখবো। কিন্তু এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে তুমি আমার বউ। তুমি এই শখ পূরণ না করলে আমার তাহলে আরেকটা বিয়ে করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এখন কি করা যায়?”
জুভান মুখ ভার করে বললো। আরেকটা বিয়ের কথা শুনে ঐশীর মুখ তেতো হয়ে উঠলো। বিয়ের এক ঘন্টা যেতে না যেতেই অন্য মেয়ের চিন্তা করছে। নির্লজ্জ লোক একটা! ঐশী অনিচ্ছাসত্বেও হাত বাড়িয়ে দিলো। জুভান মৃদু হেসে হাত শক্ত করে আকড়ে ধরলো। ঐশী একটু ব্যাথা পেয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো,
— ” আস্তে। ব্যাথা পাচ্ছি। ।”
জুভান হাতের বাধন হালকা করে দিয়ে ঐশীকে গাড়ি থেকে নামালো। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই জুভানের বাকি বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরলো। এদের মধ্যে দুজন মেয়েও আছে। ওরা জুভানকে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। জুভান মুচকি হেসে মাথা চুলকালো। তারপর হুট করে ঐশীকে কোলে তুলে নিলো। ঐশী ত হতবাক। মুখ হা করে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান দুষ্টুমি করে হাতের বাধন হালকা করতেই ঐশী জুভানের গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। জুভান বাকা হেসে বাড়ির চৌকাঠে পা রাখলো। ভিতরের ফটিক দিয়ে ঢুকতে গেলে গেলে ওদের উপর ফুলের লাল পাপড়ি এসে ঝরতে লাগলো। পাশ থেকে জুভানের বন্ধুরা মুখে হাত দিয়ে ” ওয়ে,হয়ে। জিও গায়ক সাহেব” বলে চিল্লাতে লাগলো। ঐশী কিছুটা লজ্জা পেলো। কিন্তু বাইরে কাঠিন্যভাব এনে তাকিয়ে রইলো জুভানের দিকে। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে ঐশীকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো। ঐশীকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে ঠাস করে ওর পাশে বসে গেলো। কয়েকটা দম নিয়ে বললো,
— ” মেয়ে তো নয় যেন বস্তা। বাপরে! ”
ঐশী কটমটিয়ে তাকালো জুভানের দিকে। দাত খিচে বললো,
— ” আমার ওজন মাত্র পঁয়তাল্লিশ কেজি। আমি বস্তা? ”
জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে একটা কিউট করে হাসি দিলো। ঐশী না চাইতেও সেই হাসিতে গলে গেলো। জুভানের দুজন মেয়ে ফ্রেন্ড পুষ্পিতা আর অপর্ণা এসে ঐশীর পাশে বসলো। ঐশীকে একহাত দিয়ে পুষ্পিতা জড়িয়ে ধরে বললো,
— ” জুভান, কেনো লাগছিস ওর সাথে। ছাড় তো। এই বাড়িতে মিষ্টি আছে? ”
জুভান সোফায় পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। বললো,
— ” না। ”
— ” এখন? নতুন বউকে মিষ্টিমুখ করাবি না? ”
জুভান ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” নতুন কই? ওলরেডি ওর বউ হওয়ার পয়ষট্টি মিনিট চল্লিশ সেকেন্ড হয়ে গেছে।”
— ” ধুর। বাজে বকিস না তো। কাউকে পাঠিয়ে মিষ্টি আনা।”
— ” মিষ্টি আছে। ফ্রিজে দেখ। ”
পুষ্পিতা বিরক্ত হয়ে বললো,
— ” তুই কখনো শুধরাবি না। অপর্ণা যা। ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে আয়। ”
অপর্ণা সোফা থেকে উঠে জুভানের পিঠে এক ঘা বসিয়ে চলে গেলো। জুভান পিঠ ঘষতে ঘষতে বিড়বিড় করলো,
— ” এই মেয়েটার হাত চলার অভ্যাস কখনোই যাবে না। দেখবি ও ওর জামাইরেও সেকেন্ডে সেকেন্ডে মারবে। ডাফার! ”
ঘরের বাকি সবাই হেসে উঠলো। বিহান ঐশীর পাশে এসে দাড়ালো। ঐশীর দিকে একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললো
— “ভাবি, এটা আমার পক্ষ থেকে গিফট তোমার জন্যে। শাড়ি। ”
ঐশী মুচকি হেসে প্যাকেট হাতে নিলো।

________________________
অতঃপর নানা ঝামেলা পাড় করে ঐশী রুমে এসে বসলো। জুভানের বান্ধুবিরা ঐশীকে জুভানের রুমে এসে দিয়ে গেছে। ওরা এই বিয়ের ডিল সম্পর্কে জানে না। আর ঐশী চায় না ওরা জানুক। তাই কোনো বাধা দেয়নি। জুভানের সব ফ্রেন্ড আজকে এই বাড়িতে থাকবে। তাই ঐশী এখন জুভানের রুকে ঘুমানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ঐশী বিছানায় বসে আছে ঠোঁট ফুলিয়ে। সবকিছু অসহ্য লাগছে। জুভানকে মেনে নিতে ওর কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যেই ছেলে কাল অব্দি মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াতো, সেই ছেলে বিয়ের পর হুট করে ভালো হয়ে যাবে, তার কি গ্যারান্টি? ঐশী তাই জুভানকে এখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। একটু পর জুভান রুমে এসে প্রবেশ করলো। ঐশীকে বিছানার উপর দেখে ঠোঁটে হাসি ফুটলো। সিটকিনি আটকে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো ও। ঐশী মাথার ঘোমটা সরিয়ে জোরে শ্বাস নিলো। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো এত সময়। এখন শান্তি লাগছে। জুভানকে ওয়াশরুম থেকে বের হতে দেখে ঐশী মুখ ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো। সঙ্গেসঙ্গে ” ছি ” বলে মুখে হাত চেপে ধরলো। জুভান অবাক হয়ে পিছন ফিরলো। বললো,
— ” হোয়াট? ”
ঐশী চোখ খিচে বললো,
— ” পাগল আপনি? এভাবে হাফ এডম হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ”
জুভান একবার নিজের দিকে তাকিয়ে হাসলো। উদোম শরীর শুধু একটা ত্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আছে ও। জুভান বাঁকা হেসে বললো,
— ” তোমারই তো হাসব্যান্ড। দেখলে প্রবলেম নেই।”

#চলবে
শব্দসংখ্যা – ১১০০+

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/199972235380678/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here