#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
— ” পাগল আপনি? এভাবে হাফ এডম হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ”
জুভান একবার নিজের দিকে তাকিয়ে হাসলো। উদোম শরীর শুধু একটা ত্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে আছে ও। জুভান বাঁকা হেসে বললো,
— ” তোমারই তো হাসব্যান্ড। দেখলে প্রবলেম নেই। ”
” হাসব্যান্ড! ” ঐশীর বুক ধক করে উঠলো। যাকে এতবছর নিজের কল্পনায় ভেবে এসেছে, সেই মানুষটা আজ তারই স্বামী। কিন্তু নিয়তি বলেও একটা কথা আছে। নিষ্টুর, নির্দয় এই নিয়তি তাদের মাঝখানে একটা অদৃশ্য দেয়াল তুলে রেখেছে। কবে ভাঙবে এই দেয়াল? নাকি এই দেয়াল কখনোই ভাঙবার নয় ?
— ” হেই? ”
ঐশীর সামনে চুটকি বাজিয়ে বললো জুভান। ঐশী ধ্যান ভেঙে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান দুহাত ঐশীর দুপাশে রেখে ওর দিকে ঝুঁকে আছে। ঐশী জুভানকে এতটা কাছে দেখে এক ঢোক গিললো। থতমত হয়ে বললো,
— ” আপনি এত কাছে কেনো? ডিলের কথা.. ”
ঐশীর কথার মাঝখানে জুভান সরে এলো ওর থেকে। ফুস করে এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” ইয়াহ। ডিল। ম্যাই ব্যাড লাক। ”
ঐশী ভ্রু কুচকে তাকালো জুভানের দিকে। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা ত্রি পিস বের করে ঐশীর দিকে এগিয়ে দিলো। বললো,
— ” দৃশ্য ড্রেস এনেছিল তোমার জন্যে। ফ্রেশ হয়ে আসো। ”
ঐশী মাথা হেলিয়ে চটপট জুভানের কাছ থেকে প্যাকেট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
______________________
আষাঢ়ে সকাল। সকাল থেকেই হঠাৎ রোদ, তো আবার হঠাৎ বৃষ্টি ঝড়ছে আকাশ থেকে। ঐশী এখনো বেঘোর ঘুমে। কাল রাতে অচেনা জায়গায় ঘুমোতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে ওর। তাই এখনো বিছানায় শটান করে শুয়ে আছে। জুভান মুখ হাত ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। বিছানার দিকে চোখ যেতেই ওর চোখ স্তব্ধ হলো। পানির নয় বরং অজানা এক ত্তৃষ্ণা পেলো। জুভান গুটিকয়েক ঢোক গিলে ঐশীর পায়ের কাছে বসলো। প্লাজো পায়জামা পড়ায় ঐশীর পা এখন অনেকখানি দৃশ্যমান। মেয়েলি ফর্সা পা দেখে জুভানের ভিতর তোলপাড় হয়ে উঠলো। তবে এই তোলপাড় কোনো কামনার প্রকাশ নয় বরং পবিত্র ভালোবাসার ফলস্বরুপ। কিন্তু জুভান নিজেকে সামলাতে জানে। সে কখনোই চাইবে না ঐশীর মতের বিরোদ্ধে যেতে। ও চায়, তার মেঘবালিকা হাসুক , বাঁচুক। একসঙ্গে ওরা বার্ধক্যের আকাশ দেখুক। জুভান সারাজীবন তার মেঘবালিকার পবিত্র মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে অনায়াসে কাটিয়ে দিয়ে পারবে। জুভান সেসব ভেবে মাথা ঝাড়া দিলো। খুব আলতো হাতে ঐশীর পায়জামা ঠিক করে দিলো। ঐশীর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে শিহরণ খেলে গেল ওর মনে। এতটা পবিত্রও কেউ হয়? এতটা মায়া কারো মুখে থাকে? জুভান মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বুকে হাত দিয়ে লম্বা এক নিঃশ্বাস নিলো। বিড়বিড় করে বললো,
— ” উফ! মনে রীতিমত ভূমিকম্প ডেকে আনলো।মিস ভয়ংকরী! ”
সকালের নাস্তার জন্যে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। ঐশী একপাশে মাথায় ওড়না দিয়ে কিছু একটা চিন্তা করছে আর প্লেটে অযথাই আঁকিবুকি করছে। হঠাৎ জুভান ঠাস করে এসে ঐশীর পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। ঐশী কিছুটা অবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকালো। জুভান সেসব পাত্তা না দিয়ে প্লেট হাতে নিলো। সার্ভেন্ট নাস্তা বেড়ে দিতে লাগলো। পুষ্পিতা খেতে খেতে আচমকা বলে উঠলো,
— ” ঐশী রাতে কোনো সমস্যা হয়নি তো? ”
ঐশী হতবাক হয়ে তাকালো পুষ্পিতার দিকে। জুভান পুষ্পিতার মাথায় চাটা মেরে বললো,
— ” মুখ সামলে কথা বল , মেরি মা। তোর কি মনে হয় আমি ওর সাথে কিছু করেছি, যে ওর ঘুমাইতে প্রবলেম হবে? ”
পুষ্পিতা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,
— ” হ্যাঁ। সেটাই। ”
জুভান থমথমে মুখে তাকালো ওর দিকে। দৃশ্য ফিচেল হেসে বলে উঠলো,
— ” ওই জানস, কাল রাতে বিহান আর আমি তোদের রুমে পাহারা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বেচারি ঐশী ভাবির কথা ভেবে আর দেইনি। আমার একমাত্র ভাবি। তাকে কি লজ্জা দেওয়া যায়? উহু। ”
সবাই মিটমিটিয়ে হাসলো। আর ঐশী লজ্জায় মাথা নিচু করে খেতে লাগলো। যেমন সে , তেমন তার বন্ধুবান্ধব। একটার মুখেও লাগাম নেই। জুভান ঐশীকে পর্যবেক্ষণ করে ওদের দিকে তাকালো। বললো,
— ” আরে বাদ দে। বেচারীকে আর কত লজ্জায় ফেলবি।
তোদের লজ্জা শরম নাই। ওর তো আছে। অফ যা এখন। ”
সবাই জুভানের কথা শুনে একসাথে বলে উঠলো,
— ” ওয়ে,হয়ে। কি আন্ডারস্ট্যা্ডিং। বাহ্। ”
ঐশী এদের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিলো। আর জুভান সেই হাসির দিকে তাকিয়ে রইল অপলক। মুগ্ধ হলো তার দুচোখ। উজ্জ্বলতা খেলে গেলো চোখের মণিতে মণিতে।
_________________________
ঐশী ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। ফোন বের করে অনলের নাম্বারে কল দিলো। দুবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে কেউ বিচলিত গলায় বললো,
— ” হ্যালো ঐশী। তুমি ঠিক আছো? এসব কি শুনছি? আর ইউ ওকে? ”
ঐশী এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” আমি ঠিক আছি। ”
— ” আমি কাল থেকে কতবার তোমায় ফোন দিয়েছি। কিন্তু একবারও ফোন রিসিভ করো নি তুমি। আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল। জানো তুমি? ”
— ” এসব কথা ছাড়ো। শুনো তুমি সাজ্জাদ হোসেনের কিছু তথ্য পেয়েছো? ”
অনল এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,
— ” না। এখনো পাইনি। ওই ব্যাটা সিকিউড়িটি গার্ড ছাড়া ঘর থেকেই বের হয়না। রাবিশ! ”
— ” দেখো মাথা গরম করলে চলবে না। আমাদের ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে হবে। হি ইজ সো ডেঞ্জারাস ম্যান। ”
— ” জানি। তুমি একবার দেখা করো। আমরা দুজন একসাথে ওর তথ্য বের করবো। আই থিঙ্ক সেটাই ভালো হবে। ”
ঐশী থমথমে গলায় বললো,
— ” আমি এখন মহা ফ্যাসাদে পড়েছি। জুভান স্যারের প্রত্যেক রুমে সিসি টিভি ক্যামেরা। আমি এখন ওয়াসরুমে দাড়িয়ে তোমার সাথে কথা বলছি।আমার এখন এমন কিছু করা যাবে না যেটাতে জুভান স্যারের সন্দেহ হয়। বুঝতে পারছো কি বলছি?”
অনল কপাল চুলকে বললো,
— ” এখন? ”
ঐশী এক হাফ ছেড়ে বললো,
— ” আমি দেখছি কোনো উপায় বের করা যায় কি-না। ”
— ” ওকে। আমি এদিকটা খেয়াল রাখছি। ”
— ” ওকে। এখন রাখছি। ”
ঐশী ফোন কেটে দেয়। বেসিন থেকে পানি নিয়ে মুখে এক আজলা পানি ছিটিয়ে ওয়াশরুমে থেকে বেরিয়ে যায়।
ঐশী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে। তখন জুভান বাইরে থেকে ঐশীর নাম ধরে ডাকতে ডাকতে ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। ঐশী মুখ ঘুরিয়ে জুভানের দিকে তাকালে জুভান হাত ঘড়ি ঠিক করতে করতে ব্যস্ত গলায় বলে,
— ” আমি বেরোচ্ছি এখন। তোমার যদি কোনো কাজ থাকে তুমি করে নিতে পারো। আমার আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে। ”
ঐশী মাথা হেলিয়ে সায় দেয়। জুভান যাওয়ার আগে ঐশীর মুখের দিকে একঝলক তাকায়। ঐশীর মুখ খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। জুভান ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা বুঝার কথা চেষ্টা করে। একটু পর ঐশীর কাছে এসে ঐশীর গালে আলতো করে হাত রাখে ও। ঐশী অবাক হয়ে জুভানের দিকে তাকায়। জুভান আদুরে গলায় বলে,
— ” ভয় পেও না। বাসায় অনেক সার্ভেন্ট আছে। ওরা তোমার খেয়াল রাখবে।আমি খুব জলদি আসার চেষ্টা করবো। ”
ঐশী সেসব কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়। জুভানের এসব আদুরে কথা শুনে ঐশীর মন না চাইতেও গলে যায়। এই মানুষটা আসলেই অদ্ভুত। খুব বেশি রহস্যময়। একেক সময় তার একেক রূপ। কখনো খুব রাগী , আবার কখনো এক পাগলা প্রেমিক। ঐশী জুভানের দিকে তাকিয়ে মাথা হেলিয়ে সায় দেয়। জুভান ঐশীকে বিদায় দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
_____________________________
দুপুর হয়ে এসেছে। বসার ঘরের জানালা ভেদ করে এক টুকরো আলো এসে গড়াগড়ি খাচ্ছে ঐশীর কোল জুড়ে। ঐশী সোফায় বসে টিভি দেখছে। ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠে।ঐশী এগিয়ে যায়। সার্ভেন্ট দরজা খুলে দেয়। কে এসেছে দেখতে ঐশীর এগিয়ে যায় সেদিকে। তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। সার্ভেন্ট ওদের আসার কারন জিজ্ঞেস করলে একলোক বলে উঠলো,
— ” আমাদের জুভান স্যার পাঠিয়েছেন। বাড়ির সব সিসি টিভি ক্যামেরা খোলে ফেলার জন্য। ”
#চলবে
শব্দসংখ্যা -১০০০+
আজকের পর্ব হয়তো এতটা সুন্দর হয়নি। তারাহুরো করে লিখেছে।এইজন্যে। কিন্তু কাল আপনাদের রেসপন্স দেখে খুশির ঠেলায় আজ একটা পর্ব দিয়ে দিলাম। এখন আপনাদের পালা। গঠনমূলক কমেন্ট করে আমার দিল খুশ করে দিন। হ্যাপি রিডিং
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/200808748630360/?app=fbl