ইচ্ছের উল্টোপিঠ পর্ব-৩৬

0
1810

#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৩৬
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

ব্যয়বহুল গাড়ি এসে থামলো একটা অর্ধনির্মিত বিশ তলা এক বিল্ডিং এর সামনে। এখনো বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। সিমেন্টের কালচে রং-ই শুকোয় নি। জেনি সাজ্জাদ হোসেনকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। সাজ্জাদ হোসেন মাথা তুলে সম্পূর্ণ বিল্ডিংটা একবার নিজ চোখে পরখ করে নিলো। লোকেশন ভালোই। সচরাচর উনি লাভ ছাড়া কোনো প্রজেক্টে হাত দেন না। সেক্ষেত্রে একে লাভ প্রজেক্টই বলা যায়।তার সচেতন ব্যবসায়ী মনোভাব বিল্ডিংটা দেখে খুশি হলো। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আধুনিক জামা কাপড় পরিহিত জেনির গালে চুমু দিয়ে বললো,
— ” ইটস মার্ভেলাস। ”
জেনি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সাজ্জাদের গলা জড়িয়ে ধরলো। সাজ্জাদের ঠোঁটে এক মিষ্টি চুমু খেয়ে বললো,
— ” আমার এই বাড়ীটা চাই। কিনে দিবে ? ”
সহসা সাজ্জাদ হোসেন গলে গেলেন মেয়েলি স্পর্শে। মুখে মানা করার জো হলো না তার। মুচকি হেসে বললো,
— ” অবশ্যই কিনে দিবো। কিন্তু এখানের মালিক কই? ”
— ” আসছে আর কিছুসময়ের মধ্যে। ”
— ” ততক্ষণ আমরা নাহয় একটু প্রেম করে ফেলি। ”
সাজ্জাদ হোসেন লোকালয়ে জেনির ঠোঁটে আকড়ে ধরলো। জেনি সাজ্জাদের সাথে মিশে গিয়ে চোখ খুলে সতর্ক চোখে একপাশে কি একটা ইশারা দিলো।

— এক্সকিউজ মি স্যার? ”
পিছন থেকে গলা কেশে বললো ঐশী। মাথা নত করা। চোখে একটা সাদা চশমা। পরনে কালো পারের সাদা শাড়ি। সাজ্জাদ হোসেন হলেন বিরক্ত। জেনির ঠোঁট ছেড়ে পিছন ফিরে ঐশীকে দেখে সেই বিরক্তি ভাবটা অনেকটাই কেটে গেলো। ঐশীকে আগাগোড়া নিরীক্ষণ করে মুখে লোলুপ ভাব এনে বললেন,
— ” গর্জিয়াস। ”

ঐশী স্বাভাবিক ভঙ্গীতে তাকালো সাজ্জাদ হোসেনের দিকে। মুখে মুচকি হাঁসি। বললো,
— ” থ্যাংকস ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট স্যার। আমি ফারহানা। ”

সাজ্জাদ হোসেন ঐশীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একঝলক তাকালো। মেয়ের নেশায় জিহ্বা দিয়ে লালা পড়ছে যেনো। তিনি ঠোঁটের কোনে এক আঙ্গুল বুলিয়ে বললেন,
— ” আমি মুগ্ধ। ”

ঐশী কিছুটা অস্বস্থিতে পরে নাক থেকে চশমা চোখে তুললো। জেনি ঐশীকে দেখিয়ে বললো,
— ” শি ইজ ফারহানা। এই বিল্ডিং এর যাবতীয় দেখাশুনা ইনি করেন। ”
সাজ্জাদ হোসেন হ্যান্ডশেকের জন্যে হাত বাড়িয়ে দিলো ঐশীর দিকে। বললেন,
— ” আমি সাজ্জাদ। সাজ্জাদ হোসেন। এই বিল্ডিং টা আমিই কিনবো। ”

ঐশী কাচুমাচু হয়ে তাকালো সাজ্জাদ হোসেনের বাড়ানো হাতের দিকে। এভাবে হাত ধরতে তার বাঁধছে। সে মুখ ফুটে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই অনল হুট করে সেই জায়গায় উপস্থিত হয়ে সাজ্জাদের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। সাজ্জাদ খানিক ভরকে গেলেন অনলের এমন আকস্মিক আগমনে। অনল সাজ্জাদ হোসেনের হাত শক্ত করে ধরে মুচকি হেসে বললো,
— “হাই। আই অ্যাম মৃদুল। নাইস টু মিট ইউ স্যার। ”

সাজ্জাদ হোসেনের মেজাজ চটে গেলো। তবুও মুখে জোরপূর্বক হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
— ” নাইস টু মিট ইউ টু। কে তুমি? ”
— ” ম্যানেজার। ”
— ” ওহ। ম্যানেজার! ”
সাজ্জাদ হোসেন মুখ কুচকে তাচ্ছিল্যের সহিত বললেন।
অনল এখনো সাজ্জাদের হাত ধরে রেখেছে। বারবার হাত মুচড়ে ধরছে। সাজ্জাদ হোসেন এতে যারপরনাই বিরক্ত হলেন। দ্রুত অনলের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে কোর্টের হাত মুছলেন। এমন ভাবখানা যেনো অনলের হাতে ময়লা ছিলো। অনল সেটা লক্ষ্য করে বাঁকা হাসলো। ভাবলো,ব্যাটা এক নম্বরের ধান্দাবাজ।
— ” যাওয়া যাক তাহলে। ”
ঐশীর কথায় সবাই বিল্ডিংয়ের ভিতরে প্রবেশ করলো।

সম্পূর্ণ অন্ধকার, থমথমে বিল্ডিং। দিনের বেলায়ও আলোর কোনো ছিটেফোঁটা নেই। এমনকি একটা কর্মচারীও নেই। বিল্ডিংয়ের কাজ আপাতত স্থগিত হয়ে আছে। সাজ্জাদ হোসেনের এতে প্রশ্ন জাগলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ঐশীকে,
— ” কাজ বন্ধ কেনো? ”
ঐশী হাঁটতে হাঁটতে বললো,
— ” স্যার, আমাদের কাজ ছিল এই বিল্ডিংকে একটা শেপ দেওয়া।আমরা আমাদের কাজ করেছি। এখন বাকিটা আপনার দায়িত্ত্ব। বিল্ডিং কিভাবে বানাবেন, কিভাবে সাজাবেন সব আপনি মেইনটেইন করবেন, স্যার। ”
— ” ওহ। ”
সাজ্জাদ হোসেন চারিদিকে দেখে হাঁটতে লাগলেন।

সদরদরজা খুলে ছাদে প্রবেশ করলো সবাই। সাজ্জাদ হোসেন ঘুরে ঘুরে ছাদের আশপাশ দেখতে লাগলেন। সূর্যের কারণে কপালে ভাঁজ ফুটে উঠলো। সবসময়ে শীতল বাতাসের নিচে থাকা সাজ্জাদ ভ্রু কুচকে কপালের ঘাম মুছলেন। কিন্তু পরক্ষণে আবার ঘেমে উঠলো তার কপাল, গলা। কালো শরীরে সেই ঘাম চকচক করতে লাগলো।

একদম আচমকা নিজ ঘাড়ে সুচের আভাস পেতেই চমকে উঠলো সাজ্জাদ। ঘাড়ে এক হাত রেখে ডান দিকে মাথা ঘুরাতেই ঐশীর মুখ দেখলেন তিনি। হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে সাজ্জাদের দিকে। চোখ থেকে যেনো আগুনের ফুলকি ঝরছে। ঐশীর এমন রুপ দেখে তার বিস্ময়ের সীমা রইল না। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া করতে পারলেন না তিনি। তার আগেই ঘাড়ের সূক্ষ্ম যন্ত্রণায় চোখ খিচে ফেললেন। তার কিছুসময়ের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে নেতিয়ে পড়ে গেলেন অনলের ঘাড়ে।

ঐশী আর অনল ধরাধরি করে সাজ্জাদকে একজায়গায় বসালো। ঘামের স্যাঁতস্যাতে গন্ধে ঐশীর বমি পেয়ে যাচ্ছে। ঐশী নাকে হাত রেখে অনলের উদ্দেশ্যে বললো,
— ” এই ব্যাটা কি গোসল করে না? কি গন্ধ! ছি! ”
অনল হেসে বললো,
— ” সবাইকে কি তোমার জুভান স্যার পেয়েছো? ঘণ্টায় ঘণ্টায় গোসল করবে? ”
ঐশী চোখ রাঙিয়ে তাকালো অনলের দিকে। এই ছেলে অনেক বেশি ফাজিল! সুযোগ পেলে টিটকারী করতে ছাড়ে না।
অনল সাজ্জাদ হোসেনের পেটে একটা লম্বা ইলেস্টিকের দড়ি বেঁধে দিলো। অতঃপর লোকটার ভারী শরীর টানতে টানতে নিয়ে বিল্ডিং থেকে নিচে ফেলে দিলো।

না। মরে নি সে। দড়ির এক প্রান্ত বিল্ডিং এর ছাদ থেকে শক্ত করে ধরে রেখেছে অনল। এবার লোকটার জ্ঞান ফেরার পালা।
সূর্য মাথার উপরে তির্যক আলো ছড়াচ্ছে। সেই উত্তপ্ত আলো সাজ্জাদ হোসেনের টাক মাথায় পড়তেই জ্বলে উঠলো জায়গাটা। চোখের পলক হালকা নড়ে উঠলো তার। দুয়েকবার পলক ঝাড়া দিতেই চোখ খুললো সাজ্জাদ। চোখ খুলতেই নিজেকে ভাসমান দেখতেই সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে উঠলো। ভয়ে গলা শুকিয়ে মরভূমি হয়ে যাচ্ছে। বারবার হাত পা ছড়াছড়ি করে বাঁচার জন্যে হাক ডাকছে।

— ” টুকি। ”

ছাদের উপর থেকে উকি দিয়ে বললো ঐশী। সাজ্জাদ হোসেন ঐশীকে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেললেন। তাড়াহুড়ো করে বললেন,
— ” উঠাও আমাকে।আমি মারা যাচ্ছি। কি হলো উঠাও। ”

অত্যাধিক ভয় পেয়ে তার শব্দগুলো একে অপরের সাথে মিশে যাচ্ছে। এবার অনল পাশ থেকে উকি দিয়ে বললো,
— ” টুকি স্যার। ”

সাজ্জাদ হোসেন দুহাতে দড়ি ধরলেন শক্ত করে। উপরে তাকিয়ে বললেন,
— ” ব্যাটা, বজ্জাত। উঠা আমাকে। আর তোদের শেষ দেখে ছাড়বো আমি। উঠা বলছি।”

ঐশীর মুখ রক্তিম হলো ধীরে ধীরে। দড়ি ছেড়ে দেওয়ার ভান করতেই সাজ্জাদ হোসেন চিৎকার করে বললেন,
— ” না না। দড়ি ছাড়বে না। কিছু করবো না আমি। দড়ি ছেড়ো না। দয়া করো। ”
— ” কিছু করতে পারবিও না তুই। এত সহজ আমাদের মারা? ”

ঐশী মুখ বাঁকিয়ে বললো। ভয়ে হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেল সাজ্জাদ হোসেনের। জিহ্বা দিয়ে ফেটে চৌচির হওয়া ঠোঁট ভিজিয়ে বললেন,
— ” কি চাও তোমরা? আমার সম্পদ? সব দিয়ে দিবো তোমাদের। সব। তবুও আমাকে মেরো না। দয়া করো। ”

ঐশী দড়ি হাতের মুঠোয় আড়াআড়ি ভাবে পুড়ে নিলো। এতে সাজ্জাদ হোসেন নিচ থেকে কিছুটা উপরে এলেন। ঐশী দাত কিরমিরিয়ে বললো,
— ” না আমার তোর সম্পদ চাই , আর না তোর টাকা চাই। আমার তো তোর জান চাই। বিশাল পাপের ভারে কালো হয়ে যাওয়া তোর হৃদপিণ্ড চাই। আর বাকি রইলো দয়ার কথা। সেটার ত প্রশ্নই উঠে না। বুজলি। ”

ঐশী ভয় দেখাতে দড়ির বাঁধন কিছুটা হালকা করে দিলো। সাজ্জাদ হোসেন এতে নিচের দিকে ছিটকে পড়লেন। চিৎকার করে উঠলেন মরণ ভয়ে। ঐশী হাসলো। আচমকা দড়ি আবার হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো। সাজ্জাদ এতে আবারও কিছুটা উপরে আসলেন। বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নিতে লাগলেন অনবরত। একটু হলে মারা পড়তেন তিনি। খুব বাঁচা বেচেছেন। সাজ্জাদকে সস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখে ঐশী শান্তি পেল না। মা বাবার মুখ চোখের সামনে ভাসতেই রাগে ঐশীর মুখ লালাভ রং ধারণ করলো। শরীর কেপে উঠলো সেই রাগের প্রাদুর্ভাবে। কেপে উঠা কণ্ঠস্বর নিয়ে বললো,
— ” ভয় পা। আরো ভয় পা। মরার আগে মৃত্যুর দোয়ার দেখে যা। কিন্তু চিন্তা নেই। এত সহজে তোকে মারবো না। তোকে তো আমি তিলে তিলে মারবো। একটু একটু করে তুই মরণ যন্ত্রণা ভোগ করবি। তোর আজরাইল হবো আমি। আজরাইল! ”

#চলবে

খুশি তো?

শব্দসংখা- ১০০০+
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/204220094955892/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here