#ইচ্ছের_উল্টোপিঠ
#পর্ব_৪০
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
— ” স্যার-স্যার, ঐশী ম্যামকে পাওয়া যাচ্ছে না বিকেল থেকে। ”
জুভান স্থির হয়ে গেলো। কানে জ্বালা করছে এই নিষ্ঠুর বাক্য শুনে। গলার কাছে অনেকগুলো শব্দ সাজানো। কিন্তু মুখ ফুটে কথা বেরুচ্ছে না। কি আশ্চর্য! জুভান কাপা গলায় বললো,
— ” ভালো করে খুঁজো দেখো। পেয়ে যাবে। ঘর ছেড়ে কোথাও যাবে ও? ”
— ” স্যার, আমরা সম্পূর্ণ ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজেছি। কিন্তু ম্যাম কোথাও নেই। ”
জুভান ফোন কেটে দিলো। জলদি ডায়াল নাম্বারে প্রবেশ করে অনলের নাম্বার ডায়াল করলো। ওর হাত কাপছে। যদি অনলও জানেনা ঐশীর খবর। তখন? এক রিং বাজতেই অনল ফোন রিসিভ করলো। জুভান তাড়াহুড়ো করে বললো,
— ” অনল, ঐশী কি তোর সাথে? ”
অনল কিছুটা অবাক হলো। বললো,
— ” না তো। কেনো? ঘরে নেই ও? ”
জুভানের কপালে ভাঁজ পড়লো। পাশে থাকা দেয়ালে ঘুষি মারলো সজোরে। হাত লাল হলো। রক্ত জমাট বাঁধলো হাতে। কিন্তু সেই ব্যথা নিতান্তই তুচ্ছ। ঐশীর চিন্তায় তার বুকের ভিতরটা জ্বালা করছে। তাহলে ওরা কি নিয়ে গেছে ঐশীকে? ওপাশ থেকে অনল বারবার বলতে লাগলো,
— ” জুভান,তুই ঠিক আছিস? ঐশী ত ঘরেই আছে। ভালো করে খুঁজে দেখ। ”
— ” না। ঐশী ঘরে নেই। শোন, তুই এক্ষুনি আমার বাড়িতে চলে আয়। ”
— ” কিন্তু..”
— ” কোনো কথা না অনল। আমিও আসছি। ”
জুভান ফোন কেটে দিলো। কোনো দিক-অদিক চিন্তা না করে গাড়ীর দিকে ছুঁটে গেলো। পিছন থেকে প্রোডিউসার দৌড়ে আসলেন। জুভান গাড়িতে উঠে ঝটপট গাড়ির ইঞ্জিন চালু করলে প্রোডিউসার হাপাতে হাপাতে গাড়ির জানালার পাশে এসে দাঁড়ালেন। জুভান ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকালে প্রোডিউসার বললেন,
— ” কোথাও যাচ্ছো? শো ত এখনো বাকি। ”
জুভান গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বললো,
— ” পার্সোনাল প্রবলেম হয়ে গেছে। এক্ষুনি যেতে হবে। ”
— ” দেখো জুভান , তোমার পার্সোনাল প্রবলেম তোমার প্রফেশনাল লাইফকে হেম্পার করছে। শো ছেড়ে তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না। ইট উইল বি এ মিসটেক। ”
জুভান গাড়ি বন্ধ করে উনার দিকে তাকালো। ভ্রুতে ভাজ ফেলে বললো,
— ” হেম্পার করলে করুক। আই ডোন্ট কেয়ার। ”
অতঃপর প্রোডিউসারকে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে জুভান শো শো আওয়াজ তুলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। প্রোডিউসার জুভানের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে জোরে হাফ ছাড়লেন। এই ছেলেটা এমন ঘরত্যারা কেনো হলো? কারো কথা শুনে না, কাউকে পরোয়া করে না। কিন্তু কিছু করার নেই। জুভানের যা ফ্যান ফলোয়ার তাতে ওকেই সবসময় হায়ার করতে হয়। নাহলে মানুষ রীতিমত হামলে পড়ে ওদের উপর। সবই কপাল!
___________________
জুভান আর অনল বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করলো। কিন্তু খুব অদ্ভুত ভাবে সব সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করছে না। জুভান আর অনল একে অপরের দিকে তাকালো। অনল অবাক হয়ে বললো,
— ” ঐশী বললো ,তুই নাকি বাড়ির সব সিসিটিভি ক্যামেরা খুলে ফেলেছিস। তাহলে এই ফুটেজ-গুলা কিসের? ”
জুভান আবারও কম্পিউটারে মন দিলো। কীবোর্ডে কি একটা করতে করতে বললো,
— ” যে ক্যামেরাগুলো খুব বড় ছিল । ঐশী যেগুলো দেখে নিয়েছিলো আমি সেগুলো খুলে নিয়েছি। তার বদলে মিনি সাইজের সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছি। তুই কি করে ভাবলি ঐশীকে আমি এভাবে নজরবিহীন খোলা ময়দানে ছেড়ে দিবো? ”
অনল খুব একটা অবাক হলো না এই কথা শুনে। জুভান ঐশীকে কতটা ভালোবাসে সে এই কদিনে খুব ভালো করে বুঝে গেছে। ঐশী যাতে সেফ থাকে তাই অনলকে ঐশীকে সাহায্য করার জন্যে পাঠিয়েছে। পপ্রতিনিয়ত অনল ঐশীর জন্যে জুভানের পাগলামি দেখেছে।
— ” শিট, আজকের কোনো ফুটেজ-ই নেই।ওরা সব ফুটেজ ডিলেট করে দিয়েছে। ”
— ” এখন?
— ” অন্য কোনো উপায় বের করতে হবে। ”
— ” কি উপায়? ”
জুভান কপালে হাত রেখে কতক্ষণ চিন্তা করলো। ওর বুকটা ধকধক ধকধক শব্দ তুলছে। জীবনের প্রথম কোনো বিষয় নিয়ে ও এতটা ভয় পাচ্ছে। ঐশীকে সে হারাতে পারবে না। জীবনে সবকিছু হারাতে পারবে কিন্তু ঐশীকে নয়। ঐশী-বিহীন সে নিঃস্ব। ঐশীকে হারানোর চিন্তা তার ভিতরটা ধুকেধুকে খাচ্ছে। জুভানের চোখের কোনায় জল জমা হলো। কিন্তু কেউ দেখার আগেই খুব কৌশলে সে আঙ্গুল দিয়ে জলটুকু মুছে নিলো। তাকে একদমই দুর্বল হওয়া চলবে না।
— ” আমাদের সড়কের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে হবে। সেখান থেকে কোনো ক্লু পাওয়া যেতে পারে। ”
— ” ওয়াও। এটা খুব ভালো আইডিয়া। ”
জুভান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। নিজে যেতে চাইলে অনল হাত দিয়ে আটকে দেয়। জুভান অবাক হয়ে তার দিকে তাকালে অনল বলে,
— ” তুই থাক। আমি যাচ্ছি। ”
জুভান অনলের হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। গমগমে সুরে বলে,
— ” তুই ভাবলি কি করে, তুই যাবি আর আমি এই জায়গায় শান্তিমতে বসে থাকবো। যতক্ষণ না জানবো ঐশী কোথাও ততক্ষণ আমার বুকে পানি আসবে না। ছাড় আমাকে। ”
জুভান অনলের বাঁধা উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়লো। অনলও কোনো উপায় না পেয়ে জুভানের পিছু পিছু আসতে লাগলো।
____________________
— ” হাই, মিস লেডি ডন। ”
কারো কথা শুনে ঐশী চোখ খুলে তাকালো। অজ্ঞান হওয়ার ইনজেকশনের পাওয়ার ধীরে ধীরে কমতে লাগলো। কিন্তু ঘাড়ের দিকটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। নাড়াতে পারছে না যন্ত্রনায় কারণে। ঐশী ঘাড় উঠাতে চাইলে ব্যাথায়” আহ্” করে আবারও নামিয়ে ফেলে। কোনক্রমে চোখ খানিক উপরে তুলে সামনে থাকা লোকটার অবয়ব দেখার চেষ্টা করে। ঐশীর সামনে মহেন্দ্রলাল বাগতি দাড়িয়ে আছে। ওর বাবা মায়ের চতুর্থ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খুনি। ঐশী তাকে দেখেই আবারও চোখ বুজলো। ক্লান্ত থাকার ফলে আর তাকানো সম্ভব হলো না। চোখের পাতা আনমনে দমে এলো। মহেন্দ্রলাল ঐশীর পাশে চেয়ার টেনে বসলো। ঐশীর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। তারপর আচমকাই ঐশীর নাক বরাবর দিলো এক ঘুষি। ঐশী চমকে উঠলো। নাকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরলো। ঐশী যন্ত্রণায় হাত পা নাড়াতে লাগলো। কিন্তু বাধা থাকায় কিছুই করতে পারলো না। মহেন্দ্রলাল ঐশীর দিকে বাঁকা হেসে তাকালো। কিছুক্ষণ মন ভরে ঐশীর ছটফটানি দেখলো। অতঃপর ঐশীর নাক থেকে আঙ্গুল দিয়ে রক্ত এনে বললো,
— ” ইশ! কত কত রক্ত ঝরছে। ”
ঐশী নাকের রক্ত মুখে, ঠোঁটে গড়াগড়ি খেলো। নাক বন্ধ হয়ে গেছে। শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না। তাও ঐশী মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলো। মহেন্দ্রলাল খুব মনযোগ সহকারে দেখলো ঐশীর একেকটা কার্যক্রম। ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” বাঁচতে চাস? ”
ঐশী হা না উত্তর দিলো না। ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলো। মহেন্দ্রলাল রাগে ঐশীর গালে চটাস করে এক থাপ্পর বসালো। থাপ্পড়ের চোটে ঐশীর ঠোঁট ফেটে রক্ত বেরুলো। মহেন্দ্রলাল রাগে গড়গড় করতে করতে বললো,
— ” মাইয়ার জেদ দেখছো? হ্যাঁ? এইটুকু মাইয়ার কি জেদ! মাইরা ফালামু তোরে আজকে, শালী। ”
মহেন্দ্রলাল রাগে ছুরি হাতে নিলে পাশ থেকে একজন তার হাত আটকে নেয়। মহেন্দ্রলাল চোখ গরম করে তার দিকে তাকালে মধ্যবয়স্ক লোকটা বলে,
— ” মাথা গরম কইরা না। এই মাইয়ারে মাইরা ফেললে ওর সাথীর খোঁজ করবা কেমনে? ওরে বাঁচানো লাগবো। আমাগো স্বার্থের লাগি। বুজলা? ”
উনার কথা শুনে মহেন্দ্রলাল কিছুটা নিভে এলেন। ছুরি ছিটকে মাটিতে ছুড়ে ফেললো। তারপর ঐশীর দু গাল ধরলো শক্ত করে। এতে ঐশীর গালে তার নখ খানিক দেবে গেলেও ঐশী চিৎকার করলো না। কটমট চোখে তাকালো মহেন্দ্রলালের দিকে। মহেন্দ্রলাল চোখ গরম করে বললো,
— ” তোর সাথীর নাম কি? বল? ”
— ” বলবো না। যা করার করে নে। ”
ঐশী দাত চেপে বললো। মহেন্দ্রলাল ঐশীকে ছেড়ে গড়গড় করলো রাগে। আচমকা পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক লোকের গলা কেটে ফেললেন ধারালো ছুরি দিয়ে। লোকটা গলায় হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ফিনকে দিয়ে রক্ত ঐশীর মুখে এসে পড়লো। ঐশী চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। মহেন্দ্রলাল আবারও ঐশীর গাল চেপে ধরলো। বললো,
— ” এর মত তোরেও মাইরা ফালামু। ভয় থাকলে বইলা দে তোর সাথীর নাম কি? কো বলছি? ”
ঐশী পুনরায় বললো,
— ” মেরে ফেল। তাও বলবো না। ”
মহেন্দ্রলাল রাগে গজগজ করলো। ঐশীকে ছেড়ে দিয়ে পাশে দাড়িয়ে থাকা লোককে বললো,
— ” এই মাইয়ের তেজ কমা তোরা। থার্ড ডিগ্রি টর্চার কর এরে। মুখ থেকে কথা ফুটানো লাগবো আইজ। ”
মহেন্দ্রলাল চলে গেলো। রেখে গেল ঐশীকে এই নরক যন্ত্রণার ভিতর।
#চলবে
শব্দসংখ্যা- ১০০০+
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/208174191227149/?app=fbl