# নানান বরণ মানুষ রে ভাই
২৭ তম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা
শিমুলের ডায়েরি
” হাসান মামাকে চিনতে এতো ভুল করেছিলাম আমরা! মানুষকে চেনা সত্যি বড় কঠিন। বড় কঠিন। আমি তো নিজেই নিজেকে চিনি না। আমি আঁধার মানবী। কিন্তু হাসান মামা তো কাঁচের মতো স্বচ্ছ। তিনি না থাকলে আমার নিজের,আমার মা-ভাইএর কি পরিণতি হতো তা ভাবলেও শিউরে উঠি। সেই হাসান মামা কি করে এতো জঘন্য একটা কাজ দিনের পর দিন করে যেতেন? সব মানুষের মধ্যেই কি তবে পিশাচ বাস করে? হাসান মামার ঘটনার পরে পৃথিবীর আর কাউকে এতোটুকু বিশ্বাস করতে পারবো না, কখনো না। তবে মা আলাদা। আমার মা’কে শুধু আমি কেন, যে কেউ চোখ বুঁজে বিশ্বাস করতে পারে। জলের মতো স্বচ্ছ আমার মা। আচ্ছা, হাসান মামার সাথে কি মায়ের কোন অন্যরকম সম্পর্ক ছিল? ছি,ছি! কি জঘন্য কথা ভাবছি।
মৌরীটা খুব মা ন্যাওটা হয়েছে। আজ সারাদিন মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদলো। রাতে ঘুমালোও মায়ের সাথে। আহ্লাদী বোন আমার। তোকে উদ্ধার করলাম আমি, আর তুই আঁকড়ে ধরে আছিস মা’কে। ভালোই হলো। মায়ের ভালোবাসায়, বুকের উত্তাপে, আদর মাখা কথায় মৌরীর ক্ষত শীঘ্রই মুছে যাবে জানি। আমার ব্যাপারগুলো যদি এই চান্সে বলতে পারতাম! আমি শিওর, মা তার যাদুর পরশ বুলিয়ে আমার ক্ষতও শুকিয়ে দিত। কয়েকবার বলতে যেয়েও বলতে পারলাম না। কেন আমি আমার কথাগুলো বলতে পারি না? বলতে না পারি, সব জানিয়ে মা’কে চিঠিতো লিখতে পারি।কাগজ টেনে নিয়েও আর লিখতে পারি না। বড় ক্লান্তি লাগে তখন। সেই সাথে অসহ্য রাগ। রাগে মাথাটা ফেটে যায়।সেধে পড়ে অশান্তি নিয়ে বাস করছি আমি।
এতোবড় জঘন্য কাজের পরেও হাসান মামাকে ঘৃণা করতে পারছি না। থাক্!কি দরকার ঘৃণা করার। আমার বুকের মধ্যে এতো,এতো ঘৃণা জমে আছে, এরমধ্যে আর ঘৃণা আমদানির দরকার নেই। ”
পরের তারিখে লেখা, ” হাসান মামা, আপনি চলে গেলেন! আমার আশংকা হচ্ছিল আপনি এমন কাজ করতে পারেন। গুরুতর অন্যায় করতেন আপনি,কোনো সন্দেহ নেই। আত্মহত্যা করলেন কি বিবেকের তাড়নায় না সবার সামনে বিশেষত মায়ের কাছে আপনার দেবতুল্য ভাবমূর্তি ভেঙে যাওয়ায়? মনে হয় দ্বিতীয়টাই। তবে আমি আপনার ভালো দিকটা মনে রাখবো আজীবন। ”
” বড় খাটটায় আমার ছয় ভাইবোন গোল হয়ে বসে কি একটা খেলা খেলছে। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে একেকজনা। পলাশ হাততালি দিচ্ছে। খুশিতে ওর মুখটা ঝলমল করছে। আমার হতভাগ্য প্রতিবন্ধী ভাইটা মায়ের আর আমার ভালোবাসা ছাড়া যে জীবনে আর কারো ভালোবাসা পাবে,তা আমি ভাবতেও পারিনি। খানবাড়িতে আসার পর থেকে ভাইটা আমার খুবই আনন্দে আছে। মা আর আমি জানি,পলাশ বেশি দিন বাঁচবে না। সব ডাক্তারই এই কথা বলেছেন। ওর সারা শরীরটাই সমস্যা দিয়ে ভরা। আগে ভীষণ কষ্ট পেতাম, খুব কান্নাকাটি করতাম, এখন এ বিষয়ে আমার মন ঠান্ডা হয়েছে। পলাশ যেদিন চলে যাবে,আমিও ঐদিন চলে যাবো। যতোদিন বেঁচে আছে,ভাইটা আমার এমন আনন্দেই বেঁচে থাকুক। ”
” আমারতো এখন সুখে থৈ থৈ করে বাঁচার কথা। সবাই আমাকে কতো ভালোবাসে,কতো যত্ন নেয়। আমাদের সংসার এখন ভালোবাসায় উপচে পড়া সংসার। প্রতি রাতে খাওয়া-দাওয়ার পরে মায়ের খাটে সবাই গোল হয়ে বসে, গল্প গুজব করে, মা মৌরী,মিথুন, মুমুর চুলে বেণী করে দেয়, সাধারণ বেণী,কলা বেণী,ফ্রেঞ্চ বেণী। তারপরে আমার বোনদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে কে মায়ের চুল বেঁধে দিবে। তিনজনই বেঁধে দিতে চায়। আমার ঘরে ওদের কথাবার্তা, হাসির আওয়াজ ভেসে আসে। মা সারাদিন বারবার ঘুরেফিরে আমার কাছে আসে, দুধ নিয়ে আসলে আমি বলি খাবো না, চা আনলে বলি,আমিতো এমনিতেই কালিন্দী, চা খেলে আরও কালিন্দী হয়ে যাবো, পকোড়া ভেজে আনলে বলি,ভাজাপোড়া খাবো না, স্কিন নষ্ট হয়ে যাবে, মুড়ি মাখিয়ে আনলে বলি,মুড়ি আমার দু’চোখের বিষ। মা যাই নিয়ে আসুক,আমি রিফিউজ করি। মা মন খারাপ করে। নানা রকম খাবার এনে আমাকে খাওয়াতে চায়।আমি কি খাবো বারবার জানতে চায়। করুণ গলায় বলে,”খেতে হবে শিমুল। না খেয়ে সারাদিন পড়লে চলবে?শরীর ভেঙে যাবে মা। শরীর একবার ভাঙলে সুস্থ হওয়া খুব কঠিন। একটু খা মা। আর সারাক্ষণ বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতে নেই। আয়, আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিই। ছাদে যাবি? ” আমি সবটাতেই না বলি। মা বা মৌরী প্রতিদিন হাজির হয় আমার চুলে তেল দিতে,চুল বাঁধতে। আমি না করে দিই। বিরক্ত গলায় ওদের চলে যেতে বলি,আমাকে শান্তিতে পড়তে দিতে বলি। তারপরও মা বারবার আসে, ওরাও বারবার আসে। একসাথে আড্ডা মারতে চায়,টিভি দেখতে চায়। যথারীতি আমার পক্ষ থেকে একটাই শব্দ -না। কিছুদিন আগে মা আমাকে চুপিচুপি বললো,”শিমুল, তুই কি কাউকে পছন্দ করিস?করলে বল্। কোনো সংকোচ করিস না।” আমি ঠান্ডা গলায় বললাম,”আমি বিয়ে করবো কি ওমর খানের মতো আরেকটা লুম্পেনের কাছে মার খেয়ে মরার জন্য? প্রেম,বিয়ে, এসব আমার জন্য না। আর কখনো বিয়ের কথা বলবে না তুমি।”
আমিই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছি আমার মায়ের থেকে,ভাইবোনদের থেকে। বাড়িতে যেটুকু অশান্তি, তা আমার জন্য ই। আমার কোনো বন্ধু নেই। না স্কুলে,না কলেজে, না ভার্সিটিতে। কারোর সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছা হয়না। প্রচন্ড বিরক্তি লাগে,প্রচন্ড রাগ হয়।”
রিয়া মন্জুর মৃত্যুর তারিখে লেখা পৃষ্ঠাটি খুঁজে বের করলেন।
“আমার মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে। উহ্, আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। এতো রাগ হচ্ছে ! আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়ালে মাথা ঠুকলাম,গোসল করলাম এক ঘন্টা ধরে, তবু স্হির হতে পারছি না। নির্লজ্জ লোকটা আর তার বউ এসেছিল। কতো বড় চশমখোর! কোন্ লজ্জায় আসে এ বাড়িতে? কোন্ লজ্জায় মুখ দেখায় আমাদেরকে? এরা মরে না কেন?পলাশকে আদর-সোহাগ দেখানো হচ্ছে? গোড়া কেটে ফেলে আগায় বালতি বালতি পানি ঢালা? এদের আবার এ বাড়িতে জাঁকিয়ে বসার ইচ্ছা। সেটা কোনদিন আমি হতে দিবো না।
তাও ভালো,দুই দয়াবতী নিচে নেমে তাদের আদর -আপ্যায়ন করে নি। রেখা বেগম আর তার ডান হাতকে যদি ড্রইং রুমে দেখতে পেতাম,তাহলে নিশ্চিত, আমি ঘরটাতে আগুন লাগিয়ে দিতাম।
মন্জু , বছরের পর বছর ধরে তোমাকে গালাগাল করে, সবার সামনে প্রতিদিন অপমান করে, কাজের পর কাজ দিয়ে তোমার পিঠবাঁকা করে দিয়ে শোধ তুলছিলাম, আরও অনেক শোধ তোলা বাকি ছিল। বাকির হিসাব পরকাল বলে যদি কিছু থাকে,সেখানে হবে,কেমন? আপাততঃ শোধ তোলার কাজ শেষ।
কাজ কমপ্লিট। আমি কোন কাজে ব্যর্থ হইনা।”
রিয়া পৃষ্ঠা উল্টালেন।
” মা, তুমি সব বুঝে গেছো, তাই না? আজ তোমার গলার স্বর শুনে আমার শরীর কেঁপে উঠেছিল। এতো হিমশীতল গলা হয় কারো! আমি চমকে তোমার দিকে তাকালাম। কি ঠান্ডা, ভাবলেশহীন চেহারা। সত্যি ই বুঝেছো?আমি কনফিউজড। পুলিশ ডাকতে বাধা দিলে কেন,মা? পুলিশও হার্ট অ্যাটাকই ভাবতো। আমি কাঁচা কাজ করি না। তুমি সত্যি যদি বুঝে থাকো,তাহলে সেটা বিষ্ময়কর একটা ব্যাপার হবে। তোমার নাম রেখা, তোমার চিন্তাও সরলরেখায় চলে। সরল রেখা দিক পরিবর্তন করে বক্র হয়ে উঠলো কিনা বুঝে উঠতে পারছি না। ”
কয়েকদিন পরের লেখা।
” এই বালিশ বালিশ খেলা ভালো লাগছে না। ভেরি সিম্পল। দুই পক্ষের কারোরই কষ্ট হয়না। আলুনি। চার-পাঁচ মিনিট তড়পাও,তারপরে আরাম করে ঘুমিয়ে পড়ো। ফালতু। ”
“আমি নিশ্চিত, মা বুঝে গেছে। পরের ঘটনা আগে বুঝেছে। তারপরে অংক কষে আগের ঘটনাও বুঝে ফেলেছে। মা,তুমি তো অংকে ভালো ছিলে না, হঠাৎ করে এতো উন্নতি? আমার অবশ্য কিছু যায় আসে না, মা অংক কষতে পারবে,কিন্তু প্রমাণ করতে পারবে না। ”
“ইদানিং মা রাতে ঘুম বাদ দিয়ে সারা বারান্দা, এ ঘর,ও ঘর হাঁটাহাঁটি করে। ছিঃ মা! কেমন করে ভাবলে আমি আমার ভাই বোনদের ক্ষতি করতে পারি?”
রিয়া পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকলেন।
“আমি এখন এ বাড়ির মূর্তিমান অশান্তি। আমার ছয় ভাই -বোনই আমাকে ভয় পায়। আমার কারণেই ভয় পায়। আমি জোম্বি হয়ে গেছি। আমি হাসি না, কথা বলি না, ওরা কোনো কথা বলতে আসলে উত্তর দিই না। উত্তর দিলেও সেটা বাঁকা উত্তর হয়। মা অসম্ভব চুপ হয়ে গেছে। আমার ভাইবোন ছয়টা আর আগের মতো গোল হয়ে বসে বাঁধভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠেনা, হৈহৈ করে বাগানে ঘুরে বেড়ায় না,রাতে মায়ের ঘরে জম্পেশ আড্ডা বসে না। সবকিছুর জন্য দায়ী আমি। আমার জন্য মা তিলে তিলে কষ্ট পাচ্ছে। খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, রাতভর পায়চারি পাহারাদারের মতো। মায়ের বিষন্নতা, অসুস্থতা, আমার দুর্ব্যবহার সব মিলে ওরা ছয়জনও মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। আসলেই আমি একটা পিশাচী। ইচ্ছা হয় মা’কে বলি, ” আবার আগের মতো হয়ে যাও মা,আমাকে ক্ষমা করে দাও”, ইচ্ছা করে ওদেরকে বলি,” তোরা সব মুখ গোমড়া করে ঘুরে বেড়াস কেন? আগের মতো খেলাধূলা, গল্পগুজব করতে পারিস না? যা, আজকে একটা ভিসিআর ভাড়া করে আন্, সাথে কয়েকটা ফিল্মের ক্যাসেট। আগে মা’কে জিজ্ঞেস কর মা কোনটা দেখতে চায়।” বলার চেষ্টা করি,পারি না। জীবনটা ভারি দুর্বহ হয়ে যাচ্ছে। পুলিশের কাছে সব বলে দিবো?আমি জানি মা তাহলে আমার প্রতি খুব সন্তুষ্ট হবে। কিন্তু আমার তো আরও অনেক কাজ বাকি। অ্যাট লিষ্ট,তিন জন। ”
” মা,তুমি আমাকে খুব ঘৃণা করো,তাই না? এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তোমার ঠান্ডা চাহনি, তোমার নীরবতা, জগৎ সংসারের প্রতি তোমার নিস্পৃহতা আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়। মা,আমি যা করছি তার উপরে আমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। তাহলে আমার দোষ কোথায় বলো?আমাকে তুমি অন্ততঃ ঘেন্না কোরো না মা।
তোমার ভাইদের বাড়িতে কি ভয়ংকর জীবন কেটেছে আমাদের তিনজনের। পদে পদে অপমান,অবহেলা, গালাগালি,মারধোর। নিজের উপরে অত্যাচার সহ্য করতে পারতাম, কিন্তু ভোর থেকে রাত অব্দি তোমার খাটাখাটনি, নাওয়া-খাওয়ার কোনো ঠিক নেই, এতোটুকু বিশ্রাম নেই, তোমাকে নিয়ে তোমার ভাই বৌদের সারাক্ষণ টিকা টিপ্পনী, তোমাকে তোমার ভাইপো-ভাইঝিদের মিনিটে মিনিটে অর্ডার, তাও ভদ্র ভাবে নয়,ফুপু ডেকে নয়, যেমন -অ্যাই,আমাকে পানি দাও, অ্যাই,মা বলেছে বিন্তির মাছের কাঁটা বেছে দিতে, এসব যে আমাকে কি কষ্ট দিতো মা। পলাশকে নিয়ে যখন সবাই হাসি তামাশা করতো, “ওই লুলা, একটু হেঁটে দেখাতো” বলে পলাশের সাথে সাথে কম করে হলেও পাঁচ -সাতজন ওকে নকল করে হাঁটতো আর বিশ্রী ভাবে হাসতো, ওর প্যান্ট খুলে দিতো, ওদের বাপ-মা রাও ছেলেমেয়েগুলোর অসভ্য আচরণে প্রশ্রয়ের হাসি হাসতো, তখন পলাশের কষ্টভরা দুটি অসহায় চোখ, অপমানিত, লজ্জিত, কান্নাভেজা মুখ দেখে আমার পাগল-পাগল লাগতো। একই সাথে তীব্র কষ্ট, গলায় পাকানো যন্ত্রণা আর অসহায়ত্ব সব মিলে আমার নিঃশ্বাস আটকে আসতো,সারা শরীর কাঁপতো আর দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করতো তোমাদের দু’জনকে নিয়ে।
এক সন্ধ্যায় তোমার বড় ভাই একগাদা ছোটো মাছ কিনে নিয়ে আসলো। তোমাকে বললো,”রেখা, মাছগুলো সব কুটেবেছে রাখ্, আর আম্মা যে ভাবে রাঁধতো, সে ভাবে বাঁশ পাতা আর বাতাসীটা রেঁধে ফেল্। ”
তুমি মাথা নীচু করে মাছ কাটতে গেলে।মৃদু গলায় বললে,”তোমরাও একটু হাত লাগাও,তাহলে তাড়াতাড়ি কাজ হয়ে যাবে।” তোমার বড় ভাবী বললো,”আমরাই যদি হাত লাগাবো,তাহলে দুই ছেলেমেয়ে সহ তোমাকে খাওয়াচ্ছি পরাচ্ছি কেন?তোমার ছেলেইতো দশজনের ভাত গিলে। ”
তোমার বড় ভাই এসে গম্ভীর হয়ে বললো,”সামান্য মাছ কোটা নিয়ে এতো কথা? লাগবে না মাছ।” তিনি এসে লাথি মেরে মাছগুলো ফেলে দিতে চাইলেন। তুমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলে,”ভাইজান,আমি মাছ কাটছি। রান্নাও করে দিচ্ছি। শিমুল, তুই আটটার সময় পলাশকে শাক দিয়ে ভাত খাইয়ে দিস।”
তোমার বড় ভাই দরাজ গলায় বললো,”শিমুল এখন আমার সাথে ঘরে যাবে। কেউ আমাদের বিরক্ত করবা না। পায়ে-পিঠে একটু তেল মালিশ করতে হবে,পারবি না শিমুল? আঙুলগুলাও টেনে দিতে হবে। গিঁটে গিঁটে ব্যথা। কই গো,শিমুলের হাতে তেলের বাটি দাও, তেল গরম করে দিও, একটু রসুন দিও।”
লোকটার ঘরে সে আর আমি। বদ লোকটা বললো, “আগে বুকে তেল মালিশ কর।” করলাম। বললো,”এবারে পেটে কর।” তাও করলাম। এবার লুঙ্গির গিঠ খুলে আমার হাত ওখানে টেনে নিয়ে বললো,”এইবার এখানে মালিশ কর্। এটাই আসল জায়গা।” আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি। আহা, এমন একটা জায়গায় এতো ব্যথা হলো,সে বেচারা কি করবে?আবার আমিই বা কি করবো?অন্যের লজ্জার জায়গায় হাত দেওয়া যায়? তোমার ভাই আমার হাত দিয়ে ঐ জিনিস ধরালো, আর শিখিয়ে দিলো কি ভাবে ওটাকে মালিশ করতে হয়। আমার খুব ঘেন্না লাগছিলো। লোকটা নানারকম অদ্ভুত শব্দ করছিল। আমি ভাবলাম, ব্যথাটা খুব বেশি। আমি আরও যত্ন করে মালিশ করতে লাগলাম। একসময় আমার হাত ভিজে গেলো। ছি ছি, পেশাব করে দিলো নাকি? সাদা রঙের পেশাব। লোকটা হাঁপাচ্ছিলো খুব। উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,মামীকে ডেকে আনবো? লোকটা বললো,কোনো মামীটামির দরকার নেই, আমি বাথরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে যেন আবার তার পশে বসি। বসার পরে সে আমাকে মালিশ করতে চাইলো ও করলো।তার বিবরণ দিতে ইচ্ছা করছে না। আর আমাকে হুকুম দেওয়া হলো,আমি যেন এসব কথা কাউকে না বলি। কাউকে যদি এতোটুকু বলি,তাহলে মা,পলাশ আর আমাকে সে মেরে ফেলবে। বটি দিয়ে টুকরা টুকরা করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে।আমার বয়স তখন সাড়ে সাত। ভয়ে,ঘেন্নায় আমি দিশাহারা। তারপরে এটা হয়ে গেলো আমার অবশ্যকরণীয় নিত্যদিনের একটা কাজ। লোকটা তোমাকে কোন একটা কাজ দিত যেটা করতে অনেক সময় লাগে, আর বলতো, “রেখা, তোর মেয়েরে দিয়া একটু হাত-পায়ের আঙ্গুল টানাই। গাঁটে গাঁটে বিষ।” সে আমার ফ্রকের ভিতর হাত ঢুকিয়ে হাতাহাতি করতো, প্যান্টের ভেতরেও। কি যে কষ্ট মা ! রাতে আমি তোমার বুকের মধ্যে গুটিয়ে শুয়ে থাকতাম, আমার বুক ভেঙে কান্না আসতো,ভয়ে কাঁদতাম না, খুব সাবধানে থাকতাম আমি যেন তোমাকে সব কিছু বলে না দিই। বলে দিলে তোমাকে মেরে ফেলবে বঁটি দিয়ে কেটে,পলাশকে মেরে ফেলবে। কি যে অসহায় লাগতো মাগো। তুমি আমার উপরে মন খারাপ করো না মা।তোমার মেয়েটা জনমদুখী। সুখের মুখ দেখতে শুরু করলাম যখন, তখনই আমার ভয়ংকর রোগটা শুরু হলো। রাগ,অসহ্য রাগ।”
চলবে