# নানান বরণ মানুষ রে ভাই
২৮ তম পর্ব
বড় গল্প
নাহিদ ফারজানা সোমা
বারো দিন পরে পলাশকে দেখলো মৌরী। ভেবেছিল হাসিখুশি থাকার অভিনয় করবে, পারলো না। পলাশের অবস্থার বেশ অবনতি হয়েছে, মুখ থেকে সমানে লালা পড়ছে। মৌরীকে দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিল।
একটা বিদেশি এনজিও হোমটাকে চালায়। বেশ ভালো, পরিচ্ছন্ন, ছিমছাম।
মৌরী জানতে পারলো, মা পলাশকে এখানে রেখে যাওয়ার পর থেকে সে অবলা,অসহায় জন্তুর মতো ছটফট করছে। অজানা পরিবেশে অপরিচিত মানুষগুলোকে দেখলে ভয়ে সে কুঁকড়ে যাচ্ছে। সবাই তাকে অনেক আদর করছে,খাওয়ানোর চেষ্টা করছে, অভয় দিচ্ছে নানাভাবে, কিছুতেই লাভ হচ্ছে না। সে সারাক্ষণ আকুল হয়ে কাকে যেন খোঁজে, তারপরে হতাশ হয়ে মাথাটা এলিয়ে দেয়। খুব ক্ষিধে পেলে খায়। বারোদিনেও তার কষ্ট, ভয় এতোটুকু কমেনি।
মৌরীর ভীষণ রাগ হলো মায়ের উপরে। ঠিক করলো বড় ভাইয়াকে আজই সে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। পরমুহূর্তেই চুপসে গেলো বেচারা। বাড়িতে এখন খান সাহেব আর বেগম খান থাকেন। পলাশকে নিয়ে গেলে মুখ ভরা মধু নিয়ে পলাশকে তারা বরণ করবেন, তারপরে সুযোগ বুঝে শেষ করে দিবেন। পলাশকে তো সাধে অতি গোপনে মা হোমে রেখে যান নি।তাঁর অবর্তমানে পলাশ যেন নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে থাকে,তার ব্যবস্থা তিনি করে গেছেন।
মা গো, ও মা, নিরাপত্তা আর স্বাচ্ছন্দ্য ই কি সব?দু’বেলা নুন ভাত খেয়েওতো আমরা ভাইয়াকে নিয়ে মহা আনন্দে দিনগুলো পার করতে পারতাম। ভাইয়া খুশিতে বাচ্চাদের মতো হাততালি দিতো,আমরা যখন একে
একে স্কুল -কলেজ থেকে বাসায় ফিরে আসতাম, আনন্দে ভাইয়ার মুখটা জ্বলজ্বল করতো।ভাইয়ার এই আনন্দটুকু তুমি কেন কেড়ে নিলে মা?আমাদের সবার সারাজীবনের আনন্দ তুমি সাথে করে নিয়ে গেছো। কেনো আত্মঘাতী হলে মা?তোমাকে ছাড়া আমরা কিভাবে বাঁচবো?
একদিকে মাতৃশোক, আপার জন্য ভয়াবহ দুশ্চিন্তা, ভাইয়ার তীব্র কষ্ট, পলাশকে নিজের পরিচিত জগৎ থেকে আচমকা নির্বাসনে পাঠানো, সব শোক মৌরীকে চুরমার করে দিল। সে পলাশকে জড়িয়ে ধরে উন্মাদের মতো কাঁদতে থাকলো। ফলাফল স্বরূপ, পলাশের মাথা আরও ঝুঁকে পড়লো, মুখ থেকে আরও বেশি লালা ঝরতে থাকলো।
মৌরী পলাশের পছন্দের অনেক খাবার নিয়ে এসেছে। ভাইকে খাওয়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেও সে সফল হলো না। সিস্টার নরম গলায় বললেন,”রেখে দিয়ে যান, যখন ক্ষিদে পাবে, আমি নিজে আপনার আনা খাবার তাঁকে খাইয়ে দিবো। এ অবস্থা হয়তো আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে, না হলে উনাকে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করবো,নল দিয়ে খাওয়াবো। হঠাৎ সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের টাচে এসে আর পরিচিত প্রিয় মুখ দেখতে না পেরে উনি খুব কষ্ট পাচ্ছেন।আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।”
আস্তে আস্তে ঠিক হলোনা। পাঁচ দিনের মাথায় মৌরীর কাছে হোম থেকে চিঠি নিয়ে লোক এলো, পলাশ নেই। খাওয়ানোর সময় শ্বাসনালীতে খাবার
আটকে চলে গেছে পলাশ। খুবই ট্রেইনড নার্স যত্ন করে খাওয়াচ্ছিলেন, পলাশও সবাইকে অবাক করে শান্ত হয়ে খাচ্ছিলো, তারপরও এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেলো।
পলাশ নিখোঁজ হওয়ার মামলা আগেই তুলে নিয়েছিলেন ওমর সাহেব মৌরীর কথায়। মৌরী সবার আড়ালে তাঁকে নিচু গলায় বলেছিল, “এই মামলা এখনই তুলে নেন। ভাইয়া কোথায় আছে আমি জানি।কোনো একটা হোমে। মা আমাকে কঠিন ভাবে নিষেধ করেছেন আমি যেন কাউকে না বলি। আমাকে আমার ওয়াদা রাখতে দেন।”
পলাশের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে মৌরী জ্ঞান হারালো। সবাই ছুটে এলো। রিয়া আর মুকুল তখন হাসপাতালে শিমুলের কাছে।ওমর বা রিয়াকে শিমুলের কাছে একা থাকতে দেয় না মৌরী,মুকুল,মিথুন। তিনজনেরই কঠিন আশংকা,সুযোগ পেলেই ওমর-রিয়া শিমুলকে মেরে ফেলবে। তারপরে এই বাড়িতে আবার তাদের সাম্রাজ্য গড়ে তুলবে।
মৌরীর পড়ে যাওয়ার শব্দে ছুটে এসেছে সবাই। হোমের প্রতিনিধির মুখেও গভীর বেদনার ছাপ।তাঁর মুখে আবার পুরো ঘটনা শুনে কান্নার রোল উঠলো। ভাইটা বড্ড প্রিয় ছিল সবার।
ওমর খানের নিঃশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছিল। বুকে প্রবল চাপ। পলাশ,তাঁর প্রথম পুত্র, সারা পৃথিবীর উপরে এক বুক অভিমান আর কষ্ট নিয়ে চলে গেলো। সমস্ত স্নেহ, ভালোবাসা, মমতা ঢেলে পলাশ -শিমুলকে বাকি জীবন সুখী করার নিয়ত ছিল তাঁর। অভিমানী ছেলে বাপের করুণা নিলো না। কি কঠিন শাস্তি দিচ্ছে তাঁকে নিয়তি।
শিমুলের এখন-তখন অবস্থা। হাসপাতালে নিজের ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুকে বসিয়ে রেখে ছুটে এলেন রিয়া আর মুকুল। রিয়া খুব কাঁদছেন, মুকুল শোকে পাথর হয়ে গেছে।
ওমর খানের একান্ত ইচ্ছা ছিল, তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানে পলাশকে দাদার পাশে কবর দেওয়া হবে। মুকুল কঠিন মুখে বললো,” ভাইয়াকে মায়ের পাশেই শোয়ানো হবে। আপনার পারিবারিক কবরস্থানে আমাদের কোনো ভাইবোনের কবর হবে না। দরকার হয়, আমাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হবে, নইলে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। আপনাদের কবরস্থানে আপনারাই থাকেন।”
মৌরী রিয়াকে বললো,”আমার ভাই এর জন্য আপনার কান্না পুরোপুরি নকল মনে হচ্ছে। প্লিজ, স্টপ ইট। আপনার মেকি কান্না অন্য কারো জন্য তুলে রাখুন। আর হ্যাঁ, আপার হাসপাতালে আপনি বা আপনার হাসব্যান্ড যাবেন না। সাপকে যদি বা বিশ্বাস করা যায়,আপনাদের দুজনকে নয়। মা গেলো,বড় ভাইয়া গেলো, এখন আপাকে পরপারে পাঠাতে পারলে আপনাদের আর পায় কে? আপাকে দেখার জন্য আমরাই যথেষ্ট। আপনাদেরকে কোনো দরকার নেই আমাদের। মা আর ভাইয়ার খুনী আপনারাই।”
সন্তানদের বলা প্রত্যেকটা কথা চাবুকের মতো এসে পড়ছে ওমর-রিয়ার গায়ে। আত্মজ-আত্মজাদের চোখে কি প্রবল ঘৃণা !
রেখার পাশে কবর হলো পলাশের।
খান বাড়ির সব আনন্দ, উচ্ছ্বলতার চির অবসান হলো রেখা আর পলাশের চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে।
হাসপাতালে তিন মাস মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে জিতে গেলো শিমুল। শরীরে শুধু হাড় আর চামড়া, চুল পড়ে প্রায় ন্যাড়া হয়ে গেছে, খসখসে চামড়া। দু’চোখে শূন্য দৃষ্টি। কাউকে চিনে কিনা বুঝার উপায় নেই, খেতে চায়না, কথা বলে না, শুধু শূন্য দৃষ্টি মেলে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে।
বানু ফুপুর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছেন রিয়া। একসময় তাঁর সাথে উন্নাসিক ব্যবহারের জন্য। ফুপুর কাছে নিজের জীবনের সব কথা যেমন শৈশব -কৈশোর-তারুণ্যের কুশিক্ষা -উন্নাসিকতা-উচ্ছৃঙ্খলায় ভরা নষ্ট জীবনের কথা,বিবাহিত লোককে বিয়ে করা, সতীন ও তাঁর পুত্র -কন্যাদের সাথে নিজের চরম অমানবিক ব্যবহার, পরবর্তীতে শাশুড়িকে মেরে ফেলার চক্রান্ত, ধরা পড়া,জেল খাটা, রেখা ও পলাশের করুণ মৃত্যু, শিমুলের অসুস্থতা, নিজের বাবা-মা,ভাই -ভাতৃবধূদের চরম লজ্জাজনক আচরণ, তাঁর বিষয়ে নিজ সন্তানদের অবিশ্বাস ও চরম ঘৃণা সব কথাই মন উজাড় করে বানু ফুপুকে বললেন রিয়া আকুল হয়ে কাঁদতে কাঁদতে। বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতে সত্যিই বোধোদয় হয়েছে রিয়ার। নিজের পঙ্কিলতায় ভরা কুৎসিত জীবন নিয়ে রিয়া বড্ড ক্লান্ত, অনুতপ্ত। মধ্যবয়সে এসে একটা শুদ্ধ, সুন্দর জীবনের বড় সাধ জাগে। কিন্তু কেউই তাঁকে বিশ্বাস করে না।স্বামী-সন্তানেরা একেবারেই না।
বানুকে সব বললেন রিয়া। শুধু গোপন রাখলেন শিমুলের জীবনের হিংস্র অধ্যায়গুলি। এগুলো তিনি সারাজীবন গোপনই রাখবেন। রেখার মতো ভালোবাসা, মমতা দিয়ে সুস্থ করে তুলবেন শিমুলকে। পলাশের স্মৃতিকে বুকে নিয়ে বাকি ছয় সন্তানকে রেখার মনের মতো মানুষ করে তুলবেন রিয়া। ওমরকে নিতান্ত বাধ্য হয়ে জানিয়েছেন শিমুলের ডায়েরিতে পড়া ভয়ংকর কথাগুলো। শিমুলের দীর্ঘ মেয়াদি মানসিক চিকিৎসা লাগবে। ওমরকে সব কিছু না জানালে তিনি মেয়ের মানসিক অবস্থা কোন্ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কতোটা উন্নত চিকিৎসার দরকার তা বুঝবেন না।
বানু ঘৃণা বোধ করলেন ওমর-রিয়ার প্রতি। একজন ইন্জিনিয়ার, আরেকজন কলেজ টিচার। দু’জনেই অতি উচ্চশিক্ষিত, দু’জনেই সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তাহলে এরা এতো নিষ্ঠুর,স্বার্থপর, অর্থ পিশাচ, বিবেকহীন কিভাবে হলো?এরা বই পড়েছে শুধু পরীক্ষায় টপ করার জন্য, বিদ্যার নির্যাস নিতে পারে নি। এদের বাপ-মায়েরাও তাই। ছেলেমেয়ে ভালো রেজাল্ট করে বড় চাকরি করলেই এরা খুশি। বানু তার ভাশুরের ছেলেটার কথা ভাবলেন। পড়াশোনা বেশি করে নি, কিন্তু কি দায়িত্ববোধ! কি সুন্দর মন মানসিকতা! কতো পরিশ্রমী। বাপ-মা, ভাই-বোন,স্ত্রী -সন্তান, এই নিঃসন্তান বিধবা চাচী,অন্যান্য আত্মীয় বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশী, সবার সুখে দুঃখে পাশে আর কেউ থাকুক না থাকুক,এই ছেলে থাকবেই।
বানু রিয়াকে বললেন,” তুমি যদি সত্যি অনুতপ্ত হও, ভালো কথা।আল্লাহ হেদায়েত করুন তোমাকে আর জামাইকে। সেই বুঝ আসলো,তবে বড় দেরিতে। তোমাদের খামখেয়ালিপনা কতোগুলো জীবনকে তছনছ করে দিলো। মন থেকে তওবা করো। এখন থেকে চেষ্টা করো সত্যিকারের মানুষের মতো বাঁচতে। সংসার ধর্মের পাশাপাশি কিছু আয় রোজগারের চেষ্টা করো। ছাত্র পড়িয়ে, কাপড় সেলাই করে, মোম দিয়ে পুতুল বানিয়ে,মোট কথা যেভাবে হোক,হালাল রুজি রোজগার করো। আর সৎ মেয়েটিকে কখনো ভিন্ন চোখে দেখো না। সব সময় তোমার মাথায় যেন থাকে, তোমরাই মেয়েটার এমন হাল করেছো। ওর মা আর ভাইএর মৃত্যুর জন্যও তোমরাই দায়ী। মেয়েটার মায়ের জন্য ই তোমার ছেলেপুলেরা ভালো আছে,নইলে বানের জলে ভেসে যেতো। আল্লাহ যেন দয়া করে তোমাদের দুজনকে মাফ করে দেন। ”
রিয়ার হাতে বানু একটা বড় বাক্স দিলেন। বললেন,”এটা শিমুলের উসিলায় তোমাকে দিলাম। বিক্রি করে কিছু টাকা পাবে। মেইন রাস্তার সাথে আমার দশ কাঠা জমি আছে।তোমার নামে লিখে দিবো।মেলা দাম পাবে। এই মূলধন দিয়ে সৎ পথে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করো। ”
ফুপুর কথা শুনে এবং বাক্সের ডালা খুলে রিয়া প্রবল ঝাঁকুনি খেলেন। অনেক গয়না। তিরিশ ভরি তো হবেই।
“কি করছেন ফুপু?আমার এসব কিচ্ছু লাগবে না। শুধু দোয়া করবেন। আর খুব খুশি হবো যদি আপনি আমাদের সাথে থাকেন। আপনার মতো পুণ্য বতী মানুষের সংস্পর্শে এলে আমার ছেলেমেয়েরা হয়তো শোক কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবে।আপনি কাছে থাকলে ওরা বিপথে যেতে পারবে না।”
“আমাকে নিয়ে খাওয়াবে কি? শোনো,আমি নিঃসন্তান মানুষ। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন। তোমাকে দেওয়ার পরও আমার অনেক জমি থাকবে,অনেক গয়না থাকবে। আমি খুব সাদাসিধা জীবন যাপন করতাম।তাই তোমরা আমাকে গরীব ভাবতে। কিন্তু আমার শ্বশুর ও স্বামীর বদৌলতে আমি অনেক সম্পত্তি পেয়েছি। চেষ্টা করি বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াবার। তুমি আমার ভাইঝি। তোমাকে আমি দিতেই পারি। তুমি এগুলোকে কাজে লাগাও, দুজনে মিলে সংসারের হাল ধরো, ছেলেমেয়েদের ভালো করে মানুষ করো। যখন নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে, তখন আমি তোমার সংসার,সন্তান দেখে আসবো।”
ওমর নতুন উদ্যমে ব্যবসা শুরু করলেন। বানু ফুপুর ভাশুরের ছেলে নানা ভাবে সাহায্য করলো। ওমর-রিয়া চরম আর্থিক দুরাবস্থা কাটিয়ে উঠলেন।
শিমুলের বিসিএস লিখিত পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছিল পলাশের মৃত্যুর দুই দিন পরে। প্রথম হয়েছিল শিমুল। তার পরম আরাধ্য বিসিএস। শিমুল ক্ষমতাধর হতে চেয়েছিলো। অনেক উপরে উঠতে চেয়েছিলো যেন সে সবার উপরে ছড়ি ঘুরাতে পারে। তার আশা পূরণ হলোনা। প্রিলিমিনারি ও রিটেনে প্রথম হওয়া শিমুল পরবর্তী ধাপগুলোতে আর অংশগ্রহণ করতে পারে নি। যমের দুয়ার থেকে ফিরে এলেও শারীরিক ও মানসিক ভাবে মোটামুটি সুস্থ
হতে তার সময় লেগেছিল পাকা চার বছর।
চলবে।