শেষ রাত পর্ব-৫

0
1857

#শেষ_রাত
#পর্বঃ৫
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত

‘তোর ফোন বন্ধ কেন অনু! খেয়াল কই থাকে তোর?’

আমি ভাইয়ার প্রশ্ন অগ্রাহ্য করে তুলতুলকে কোলে তুলে নিলাম। সাথে সাথেই মেয়েটা খিলখিল করে হাসতে লাগল। কত সুন্দর প্রাণবন্ত হাসি। ওর এই হাসি দেখেই যেন পুরো ধরনী প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে। তবে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো তুলতুল কিছুটা আমার মতো দেখতে হয়েছে। ধ্রুবর কথা মতো তুলতুলের ঠোঁটের উপরের তিলটাও একদম আমার সাথে মিলে যায়। যে কেউ দেখলেই বিশ্বাস করে নিবে তুলতুল আমার মেয়ে। হ্যাঁ, আমারই তো মেয়ে৷

‘সানি তোকে কল দিয়েছিল৷ তোর ফোন বন্ধ পেয়ে আমার কাছে কল দিয়েছে। এই নে ফোন। কল দিয়ে এখন কথা বলে নে সানির সাথে।’

আমি হাত বাড়িয়ে ভাইয়ার কাছ থেকে ফোন নিয়ে বললাম-

‘তুই এখন যা। আমার কথা বলা শেষ হলে তোকে ফোন দিয়ে আসবো।’

‘এত তাড়া নেই। তোর যখন ইচ্ছে ফোন দিয়ে আসিস। এখন আমি যাই ফ্রেশ হয়ে আসি। ধ্রুব ভাইকে পাঠিয়ে দিস নাস্তার জন্য।’

ভাইয়া ঘুম ঘুম চোখে ঢুলতে ঢুলতে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। আমি সেদিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে তুলতুলের উদ্দেশ্যে আদুরে গলায় বললাম-

‘তোমার ঘুম ভালো হয়েছে মামুনি?’

তুলতুল হাসতে হাসতে দুই হাতে একত্র করে তালি দিতে লাগলো। আমার গালে নাকমুখ লাগিয়ে ঘষতে ঘষতে পর পর কয়েকবার মাম্মা মাম্মা বলল। বেশির ভাগ ছোট বাচ্চারাই ঘুম থেকে উঠে সাধারণত কান্নাকাটি করে৷ কিন্তু তার ক্ষেত্রে ভিন্ন। তুলতুলের মেজাজ দেখাচ্ছে ফুরফুরে। আমি পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখলাম ধ্রুব ঘুম থেকে উঠে আধশোয়া হয়ে বসে আছেন। তার শান্ত শীতল চাহনি আমার দিকেই স্থির। আমার চোখাচোখি হতেই তিনি দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন। অগোছালো চুল গুলো হাতের সাহায্যে পেছনে ঢেলে দিলেন যত্ন করে। বিছানা থেকে নেমে নিঃশব্দে ওয়াশরুমে চলে গেলেন তিনি। আমি ছোট করে একটা শ্বাস ফেললাম। তুলতুলকে কোলে নিয়েই বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। ভাইয়ার ফোন দিয়েই কল দিলাম সানিয়াকে। এক বার রিং বাজতেই ফোন রিসিভ হলো।

‘হ্যালো অনু!’

‘হ্যাঁ শুনছি বল।’

সানিয়া কিছুটা সময় চুপ থেকে নিম্ন স্বরে প্রশ্ন করল-

‘কেমন আছিস অনু?’

সানিয়ার কথায় আমার ভ্রু জোড়া ঈষৎ কুচকে এলো। কিছুটা বিস্মিত হলাম মনে মনে। এই মেয়ে সাতসকালে ফোন দিয়েছে আমি কেমন আছি তা জানার জন্য? আমাদের দুজনের মধ্যে তো কখনই এমন ফর্মালিটি দেখানোর মতো সম্পর্ক ছিল না। কেমন আছি না আছি এসব অহেতুক প্রশ্ন করে কখনই সৌজন্যতা রক্ষা করিনি। আমাদের কথা শুরু হতো ঝগড়াঝাটি আর গা’লি দিয়ে। আমি সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন করলাম-

‘তুই সকাল সকাল ভাইয়ার ফোনে কল করেছিস আমি কেমন আছি তা জিজ্ঞেস করার জন্য?’

আমার প্রশ্নের প্রতিত্তোরে ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ ভেসে আসলো। চুপ করে রইলো অপরপ্রান্তের মানুষটা। সানিয়ার নিশ্চুপ থাকা দেখে বুঝতে পারলাম ও কিছু একটা নিয়ে ইতস্তত বোধ করছে। আমার সাথে কিভাবে কথা বলবে তা নিয়ে ভাবছে। আমার সাথে কথা বলতে ওর এখন ভেবেচিন্তে বলতে হচ্ছে!! তবে কি আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে জড়তা এসেছে পরেছে! কোনো কারনে কি আমি দূরে সরে যাচ্ছি আমার আশেপাশের মানুষদের থেকে? সবার সাথে আমার সম্পর্ক পালটে যাচ্ছে!

‘তোর ফোন হয়তো অফ করে রেখেছিস। তোকে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পাচ্ছিলাম তাই ভাইয়ার ফোনে কল দিয়েছি।’

সানিয়ার কথায় মনে পরল গত পাঁচ দিন যাবত আমার ফোন বন্ধ। সাদাফকে কল দিতে দিতে ক্লান্ত হয়েই ফোন অফ করেছি। খুব যত্ন করে আলমারিতে তালা দিয়ে রেখেছি। ফোনটা চোখের সামনে দেখলেই আমার মন অস্থির হয়ে ওঠে। বেহায়া হয়ে ওঠে আমার মন। নিরাশ হতে হবে জেনেও আমার এই বেহায়া মন বার বার সাদাফকে কল দিতে চায়। নিজের বেহায়া মনের প্রতি অসহ্য হয়েই ফোনকে বন্দী করে রেখেছি চোখের আড়াল করে। আমি ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে তুলতুলের দিকে চাইলাম। তুলতল আমার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। হয়তো আমার কথা বলার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় বললাম-

‘হ্যাঁ ফোন এখনও বন্ধ করে রেখেছি। এসব বাদ দিয়ে বল কল করেছিস কেন?’

‘তুই ঠিক আছিস তো অনু! সব কিছু জেনেও তোকে এই প্রশ্ন করাটা এক প্রকার বোকামি আমি জানি। তবুও জিজ্ঞেস করছি তুই কেমন আছিস?’

তুলতুল আমার কোল থেকে নেমে রুমে চলে গেল। আমি সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রেলিঙের উপর হাত রেখে অলস ভঙ্গিতে দাঁড়ালাম। দূর আকাশে আমার ক্লান্ত চাহনি স্থির করে ক্ষীণ স্বরে বললাম-

‘আমি ভালো আছি কি-না জানি না৷ তবে আমার উপর অনেক দায়িত্ব আছে এখন। দু পরিবারের সবাইকে ভালো রাখতে হবে৷ তুলতুলকে ভালো রাখতে হবে। তাদের জন্য হলেও আমার নিজেকে শক্ত করতে হবে সানি৷ তুলতুলের জন্য হলেও আমার বাঁচতে হবে।’

‘সাদাফ ভাই ফিরে আসলে কি হবে দোস্ত? ওনাকে শান্তশিষ্ট মানুষ দেখা যায় কিন্তু তোকে কি অন্যকারো পাশে দেখে ঠিক থাকতে পারবে?’

আমি কন্ঠে চাপা রাগ নিয়ে বললা-

‘সেটা ওর আগে ভাবার উচিত ছিলো। আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওর সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছি। সম্পর্ক কখনও একজনের প্রচেষ্টায় টিকে না। দু পক্ষ থেকেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। সাদাফের উড়নচণ্ডী স্বভাবের জন্যই আজ আমাদের এই পরিনতি। আমি এখন অন্য কারও কিন্তু এখনও এই খবর সাদাফ জানে না। ওর কি উচিত ছিল না আমার প্রতি আর এই সম্পর্কে প্রতি একটু দায়িত্ববান হওয়া!’

—————

‘সানি কে? তোমার প্রাক্তন না-কি অন্য কেউ?’

ধ্রুবর কথায় আমি সরু চোখে তাকালাম তার দিকে। তার কোলেই তুলতুল বসে আছে। আর তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে তুলতুলের চুলে জুটি বেধে দিচ্ছেন। তাদের দু’জনের দৃশ্যটা দেখে ভালো লাগলো। তবে ওনার প্রশ্নটা মাথা থেকে বের হলো না৷ আমি টেবিলের উপর ভাইয়ার ফোনটা রাখতে রাখতে ক্ষীণ স্বরে বললাম-

‘বিয়েতে আমার পাশে যে মেয়েটা ছিল ওর নাম সানিয়া। আমি সানি বলে ডাকি।’

ধ্রুব মাথা তুলে পূর্নাঙ্গ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। বরাবরের মতোই শান্ত শীতল চোখ তার। খানিকক্ষণ স্থির চেয়ে থেকে ছোট করে ‘অহহ’ বলে আবারও ব্যস্ত হয়ে পরলেন তুলতুলের চুল বাধতে। আমি ধীর পায়ে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে আসলাম। ওনার পাশে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে বললাম-

‘তুলতুলকে আমার কাছে দিন। আমি ওর চুল বেধে দিচ্ছি।’

ধ্রুব কপাল কুচকে তাকায়। চোখ ছোট ছোট করে সন্দিহান কন্ঠে বলে,

‘আপনার কি মনে হচ্ছে আমি ওর চুল বাধতে পারবো না!’

‘নাহ তা কেন মনে হবে! তুলতুল তো এতদিন আপনার কাছেই ছিল এসবে আপনি অভ্যস্ত হতেই পারেন। কিন্তু এখন তো আমি আছি তাই আমার কাছে দিন আমি ওর চুল বেধে দিচ্ছি। আপনি বরং এখন যান। সবাই হয়তো আপনার জন্য অপেক্ষা করছে নাস্তার টেবিলে।’

ধ্রুব মাথা নাড়িয়ে তুলতুলকে আমার কলে দিয়ে দিলেন। আমার দিকে চেয়ে হাল্কা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

‘বউ পানির গ্লাসটা একটু দাও তো।’

ধ্রুবর কথায় আমি বিষম খেলাম। গলার মাধ্যেই খাবার আটকে গেল। আমি আড়চোখে আশেপাশে তাকাল। আম্মু তুলতুলকে খাওয়াচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে। আব্বু আর ভাইয়াও দেখছি ঠোঁট চেপে হাসছে। লজ্জায় আমার মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ধ্রুব আগের মতোই স্বাভাবিক। চোখের ইশারায় আবারও পানির গ্লাস চাইলো। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ধ্রুবর দিকে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিলাম। তিনি গটগট করে পানি খেয়ে বেসিনে হাত তুলে চলে গেলেন। আর আমাকে ফেলে গেলেন লজ্জা আর অস্বস্তির বিশাল সমুদ্রে। আমি ঝটপট করে নাস্তা শেষ করে নিজের রুমে চলে আসলাম। রুমে এসেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। তখনই পেছন থেকে ধ্রুব শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললেন-

‘সরি তখন তুমি করে বলার জন্য। আমি চাই না আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে আশেপাশের মানুষ মন খারাপ করুক। তাই এখন থেকে তুমিও চেষ্টা করো সবার সামনে স্বাভাবিক বউদের মতো আচরণ করতে।’

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম। ধ্রুব এবার চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় ডাকল,

‘শোনো বউ!’

ওনার ডাকে বিস্ময়ে আমার চোখজোড়া বড় বড় হলো। ধড়ফড়িয়ে উঠলো আমার বুক। আমার লজ্জা দেখেই হয়তো ধ্রুব ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন। হাসতে হাসতে অত্যন্ত সহজ গলায় বললেন-

‘একটা কথা না বলে পারছি না। লজ্জা পেলে তোমাকে ভীষণ কিউট লাগে। তুলতুল একদম তোমার মতোই কিউট হয়েছে।’

কথাটা বলে উনি হাসতে হাসতেই রুম থেকে চলে গেলেন। আমি এখনও ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম৷ আমার হতচকিত ভাব এখনও কাটিয়ে উঠতে পারলাম না। এই লোকটা ইচ্ছে করেই আমাকে লজ্জায় ফেলতে চাচ্ছেন। তার ভেতরের চঞ্চলতার রূপ এখন আস্তে আস্তে বের হতে লাগল।

ফাল্গুনের গোধূলি বিকেল। দুপুরের উত্তপ্ত সূর্যটা শান্ত হয়ে ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে ঢলে পরতে শুরু করেছে। প্রাণচঞ্চল শহরটাতে নেমেছে মানুষের হুল্লোড়। বাচ্চারা ছুটোছুটি করছে পার্কের সর্বত্র জুড়ে৷ চারপাশ মেতে উঠেছে তাদের প্রাণোচ্ছল হাসির শব্দে। পার্কের রাস্তা ধরে পাশাপাশি হাঁটছে কিছু লাজুক প্রেমিক-প্রেমিকা। বেঞ্চি গুলো দখল করে মধ্যবয়স্ক কিছু মানুষ কথার ঝুড়ি খুলেছে। এত হাসিঠাট্টার আর আনন্দমুখর পরিবেশে আমি হাঁটছি ভাবলেশহীন ভাবে। আমার পাশেই সানিয়া তুলতুলকে কোলে নিয়ে হাঁটছে। কিছুটা সামনে ভাইয়া আর ধ্রুব এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে বলতে এগুচ্ছে। হাল্কা বাতাস এসে উড়িয়ে দিচ্ছে আমার উন্মুক্ত চুল। তা দেখেই তুলতুল একটু পর পর খিলখিল করে হেসে উঠছে। আমার চুলের প্রতি মেয়েটার ভীষণ ঝোঁক এসেছে। সব সময়ই আমার চুলের প্রতি তার আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই আমি থামকে দাঁড়ালাম। স্তম্ভিত হয়ে স্থির চেয়ে রইলো সামনের বেঞ্চিটার দিকে। এই বেঞ্চিতে বসেই সাদাফের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল৷ এখানেই সমাপ্তি হয়েছিলো সব কিছুর। এই জায়গাটা জুড়ে আছে আমাদের বিচ্ছেদের স্মৃতি। আমি আর হাঁটার মতো শক্তি পেলাম না। পুরো শরীরে নেমে আসলো অসাড়তা। আচমকাই তুলতুল চেচিয়ে উঠলো। পার্কের পাশের দাঁড়িয়ে থাকা ফেরিওয়ালার কাছে বেলুন দেখে অস্থির হয়ে একনাগাড়ে বলতে লাগল-

‘মাম্মা আমি চায়, আমি চায়…’

বেলুন চেয়ে বায়না করতে করতেই সানির কোল থেকে নেমে গেল। ছোট ছোট পদক্ষেপ ফেলে ছুটে যেতে লাগলো সেই দিকে। সানিও তুলতুলের পেছন পেছন যাচ্ছে। আমি আগের মতোই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। নির্বিকারভাবে দেখছি তুলতুলের বায়না করা। তুলতুল কিছুটা দূরে যেতেই দেখলাম ধ্রুবও সেদিকে যাচ্ছে। আমি স্থির তাকিয়ে রইলাম। আচমকাই আমার কাধে কারও হাতের স্পর্শ পেলাম৷ আমি ঘাড় বাকিয়ে পাশে তাকালাম। ভাইয়া উদাসীন ভঙ্গিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। তার চোখদুটো যেন কিছু বলতে চাইছে। আমি মুখ ফুটে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারলাম না। ভাইয়া আমার হাত ধরে সামনের সেই বেঞ্চিটাতে গিয়ে বসলেন। মিনিট খানেক সময় পাড় হলো নিরবতায়। অবশেষে ভাইয়া নিরবতা ভেঙে মলিন কন্ঠে বললো-

‘হাতে গুনে পুরোপুরি তিন বছর একদিনের বড় আমি তোর থেকে৷ তবুও সব সময় চেয়েছি তোর সাথে ফ্রেন্ডলি চলতে৷ হ্যাঁ আমি মানছি ছোট থেকেই আমরা অনেক ফ্রেন্ডলি ছিলাম। বড় ছোট ব্যাপারটা কখনোই আমাদের মাঝে ছিল না। কিন্তু তুই তোর জীবনের সব থেকে বড় কথাটাই আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখলি। কি ভেবেছিলি তুই তোর ভাই বেপরোয়া! সারাক্ষণ তোর সাথে দুষ্টুমি করি, ঝগড়া করি, তোকে রাগাই। তাই বলে কি আমি আমার বোনের দিকে নজর রাখবো না! আমার বোন কি করছে না করছে তার খোঁজ খবর নিবো না!’

ভাইয়া থামলো। আমি আগের মতোই মাথা নিচু করে বসে আছি। ভাইয়া কি বলতে চাচ্ছে তা হয়তো আমার মস্তিষ্ক কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে। ভাইয়া একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত গলায় বলল-

‘আমি অনেক আগেই সাদাফের সঙ্গে তোকে এখানে বসে থাকতে দেখেছি। সেদিনই আমি ওই ছেলে সম্পর্কে সব খোঁজ খোঁজ খবর নিয়েছি৷ যতটুকু জেনেছি সাদাফ খুব ভালো ছেলে। তেমন কোনো বাজে স্বভাব কিংবা বাজে কোনো রেকর্ড নেই। তাই আমি তোর সাথে এই বিষয়ে কোনো প্রকার কথা বলিনি। আমি অপেক্ষা করছিলাম তুই নিজেই আমাকে সব কিছু বলবি সেদিনের। কিন্তু তার আগেই তোর বিয়ের কথা শুরু হলো। আর আমাকে অবাক করে দিয়ে তুই নিজেও বিয়েতে রাজি হয়ে গেলি। আমি সানির কাছে থেকে সব জেনেছি। ও বলতে চাচ্ছিলো না। তবুও আমার জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়েছে। আমি বুঝতে পারছি না সাদাফের মতো শিক্ষিত মানুষ এতটা বেপরোয়া কিভাবে হয়। এত কিছু হয়ে গেল অথচ এখনও তার কোনো খোঁজ খবর নেই। যাইহোক সেই কথা। আমি জানি তুই এই বিয়েটা শুধু মাত্র তুলতুলের জন্য করেছিস। তবুও আমি চাই তুই সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু কর। ধ্রুব ভাই খুব ভালো একজন মানুষ। উনি তোকে ভালো রাখবেন নিশ্চিত। অতীত ভুলে যাওয়ার চেষ্টা কর অনু।’

আমি মনে মনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম। ভাইয়া তো জানেই না ধ্রুব আর সাদাফ একই ধাঁচের মানুষ। যে কিনা বিয়ের আগেই আমাকে নানান রকম শর্তে বেধে দিয়েছেন সে কিভাবে আমাকে ভালো রাখবেন?

‘বাহ! দুলাভাইয়ের প্রশংসা হচ্ছে এখানে?’

সানিয়ার কন্ঠে আমি পেছন ফিরে চাইলাম। সানিয়া হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে ওর পাশেই ধ্রুব তুলতুলকে কোলে নিয়ে দাঁড়ানো।

চলবে…

[আপনারা হয়তো বুঝতেই পারছেন রমজান মাস বলে গল্প দেওয়ায় অনিয়ম হচ্ছে। একদিন পর পর গল্প দিচ্ছি বলে আপনাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সে জন্য আমি দুঃখিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে রেসপন্স করছে অবশ্যই। সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here