#শেষ_রাত
#পর্বঃ৩১
#সাইয়ারা_হোসাইন_কায়ানাত
‘অনন্যা তুই কি ধ্রুবকে অবিশ্বাস করছিস?’
বিশ্বাস! বিশ্বাস খুব ছোট একটা শব্দ। তবে এর মর্যাদা রক্ষা করা খুব খুব খুব কঠিন। ঠিক তেমনি কারও মনে নিজের প্রতি বিশ্বাস জাগানোটাও ভীষণ কষ্টকর। ভালোবাসা ছাড়া বিশ্বাস হয়। তবে বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা কিংবা সম্পর্ক কোনোটা-ই হয় না। ধ্রুব আর আমার সম্পর্কটা বিশ্বাস দিয়েই শুরু হয়েছে। ধ্রুব একদিনে আমার মনে তার জন্য বিশ্বাস জাগায়নি। দিনের পর দিন তার ব্যবহারে মাধ্যমেই আমার মনে তার প্রতি বিশ্বাস জাগিয়েছে। এতদিনে একটু একটু করে জন্মানো বিশ্বাস এক পলকের একটা দৃশ্য দেখে কিংবা তার একটা মিথ্যা শুনেই ভেঙে যাওয়া কি ঠিক! অন্য সবাই হয়তো কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করেই পুরনো সকল কথা ভুলে শুধু এবং শুধু মাত্র একটি মিথ্যাকে গুরুত্ব দিয়েই মানুষকে ভুল বুঝে বসে থাকে। আমরা মানুষ জাতি বরই অদ্ভুত। কেউ আমাদের সারাজীবন আগলে রাখলে সেটা আমরা মনে রাখি না। যেই না একদিন মানুষটার কোনো ভুল সামনে আসলো অমনি তার হাজারটা ভালো কাজ ভুলে শুধু খারাপটাই মনে রাখতে শুরু করি। তবে আমি পারলাম না সবার মতো হতে। আমার পক্ষে সম্ভব হলো না ধ্রুবকে অবিশ্বাস করা। বিয়ের পর থেকে আমার প্রতি ধ্রুবর ভালোবাসা, কেয়ার, বিশ্বাস সব কিছু ভুলে শুধু মাত্র একটি মিথ্যাকে গুরুত্ব দিতে পারলান না। আমাকে আমার প্রাক্তনের সাথে দেখেও যে মানুষটা আমাকে অবিশ্বাস করেনি, আমি কীভাবে সামান্য একটা বিষয়ে তাকে অবিশ্বাস করবো! প্রতিদিন একটু একটু করে আমার মনে তিনি নিজের জন্য জায়গায় করে নিয়েছেন। বিশ্বাস তৈরি করেছেন। বিচ্ছেদের দাহনে পুড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া আমিটাকে খুব সুন্দর করে সামলে নিয়েছেন। সেই মানুষটা এত সহজে আমাকে ঠকাবেন এটা মেনে নেওয়া যায় না। কল্পনাও করা যায় না। তিনি মিথ্যা বলেছেন এটা আমি জানি। হয়তো তার পেছনে যথাযথ কোনো কারণ আছে। তুলতুলকে দেখতে না এসে তিনি একটা মেয়ের সাথে বাহিরে হেঁটেছেন এর পেছনেও নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে। খুব বড়সড় কারণ আছে। তা নাহলে তিনি কখনই তুলতুলের অসুস্থতায় নিজেকে আড়াল করতে পারতেন না। যে মানুষ তুলতুলের হাল্কা সর্দিকাশিতে অস্থির হয়ে পরে সে মানুষ কখনোই তুচ্ছ কারণে তুলতুলকে উপেক্ষা করবেন না। হয়তো সঠিক সময় আসলেই তিনি সবটা খুলে বলবেন। মিথ্যার আশ্রয় কেন নিয়েছেন তা-ও বলবেন। এখন শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা। নিজের মস্তিষ্কে জেগে ওঠা প্রশ্নে আমার মন খুব সুন্দর করে উত্তর দিলো-
“নাহ, আমি ধ্রুবকে অবিশ্বাস করছি না। করতে পারি না। ধ্রুবকে অবিশ্বাস করা যায় না। কিছুতেই না। পুরো পৃথিবী আমাকে ঠকালেও ধ্রুব কিছুতেই আমাকে ঠকাবেন না। আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। তাকে অবিশ্বাস করা যায় না। তাকে শুধু বিশ্বাস করা যায়৷ ভরসা করা যায়।”
মন থেকে আসা প্রত্যুত্তরের বিপরীতে আমার মস্তিষ্ক তখন পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো আমার দিকে- “শুধুই কি বিশ্বাস আর ভরসা করা যায়! ভালোবাসা যায় না?”
এই প্রশ্নের জবাবে আমি শুধুই হাসলাম। যে হাসির মানে হতে পারে অনেক কিছু। যে হাসির মানে আমি বের করতে চাই না। যে হাসিকে শুধুই প্রশ্রয় দেওয়া যায়।
————————
‘কিরে কখন আসবি তোরা? আমরা বেরিয়ে গেছি তো।’
ফোন রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে ভাইয়ার দুর্বল কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। আমি কল লাউডস্পিকারে দিয়ে ফোন ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখলাম। আয়নার দিকে চেয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললাম-
‘এই তো রেডি হচ্ছি একটু পরেই বেরিয়ে যাবো।’
‘আচ্ছা জলদি কর। নাহলে আজ সারারাত শপিংমলেই থাকতে হবে। ভাল্লাগে না এসব মার্কেট ফার্কেট করতে। তোরা-ই তো বিয়ে ঠিক করলি তাহলে তোরা একা একা কেন মার্কেট করতে পারবি না! একদম দল বেধে সবাইকে কেন নিয়ে যেতে হবে? আর আমাকেই বা কেন যেতে হবে?’
ভাইয়া আক্রোশ ভরা কন্ঠে একের পর এক কথা বলেই যাচ্ছে। ভাইয়ার রাগ দেখে আমি নিঃশব্দে হাসলাম। বিয়ে নিয়ে ভাইয়া বিব্রতবোধ করছে। সব কিছুতেই অস্বস্তি প্রকাশ পাচ্ছে। আমি সেটা বুঝতে পারছি। হয়তো বিয়ের সময় এমন হওয়াটা-ই স্বাভাবিক। জীবনের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নার্ভাস তো লাগবেই। এটাই স্বাভাবিক। আমি ভাইয়ার অস্বস্তি কিংবা চাপা রাগ কোনটাই পাত্তা না দিয়ে সহজ গলায় বললাম-
‘কারণ বিয়েটা তোর একার হলেও মার্কেট সবার-ই করা লাগবে। আর তুই কি পুরনো জামাকাপড় পরেই বিয়ের দিন ভাবির বাসায় যাবি না-কি!’
‘এই চুপ থাকতো পেত্নি। প্যাচাল না পাইরা জলদি আয়।’
ভাইয়া ক্ষিপ্ত গলায় কথাটা বলেই খট করে ফোন রেখে দিলো। আমি মৃদু হাসলাম। রেডি হয়ে রুম থেকে বের হবো ঠিক তখনই ধ্রুব আমাকে ডাকতে ডাকতে হন্তদন্ত হয়ে রুমে ডুকলেন। আমাকে দেখে আচমকাই থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন তিনি। আমি কৌতূহলী চোখে ওনার দিকে চাইলাম। দরজার সামনে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। চোখের মনিজোড়া স্থির নিষ্পলক। ওনাকে এভাবে দেখে আমি ভ্রু জোড়া নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-
‘কিছু বলবেন?’
আমার প্রশ্নের জবাবে ধ্রুব কিছু বললেন না। আগের মতোই ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে চেয়ে আছেন। আমি কয়েক পা এগিয়ে এসে আবারও মিহি কন্ঠে প্রশ্ন করলাম-
‘কি হলো কিছু বলছেন না কেন?’
ধ্রুব সঙ্গে সঙ্গেই তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। হঠাৎই দরজা বন্ধ করে দিয়ে একদম আমার সামনা-সামনি এসে দাঁড়ালেন। খানিকটা ঝুঁকে এসে মুখোমুখি হয়ে কন্ঠে বিস্ময় নিয়ে বললেন-
‘কালো ড্রেস আর হাল্কা সাজে তোমাকে এত সুন্দর লাগে আগে জানতাম না। অবশ্য না সাজলেও তোমাকে সুন্দর-ই লাগে। তবে আজ একটু ভিন্ন লাগছে। এখন থেকে তুমি সব সময় আমার সামনে কালো জামা পড়ে থাকবে। ঠিক আছে?’
আমি ওনার বুকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে সোজা করে দিলাম। উনি কপাল কুচকে ফেললেন৷ দু-হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাঁজ করে আমার দিকে সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আমি ওনার চাহনি উপেক্ষা করে সন্দিহান কন্ঠে বললাম-
‘একই জিনিস প্রতিদিন দেখতে বা খেতে কখনোই কারো ভালো লাগে না। একটা সময় পর সেই জিনিসটার প্রতি একঘেয়েমি চলে আসবে এটাই স্বাভাবিক৷’
কথাটা বলে আমি চলে যেতে নিলেই ধ্রুব আমার হাত ধরে ফেললেন। আমি পেছন ফিরে তাকাতেই আমার হাত টান দিয়ে আবারও তার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলেন। খানিকক্ষণ স্থির চোখে চেয়ে থাকলেন। ওনার এমন নিষ্পলক চাহনিতে ক্ষীণ অস্বস্তি বোধ করলাম আমি। মাথা নিচু করে আমার দৃষ্টি নামিয়ে নিতেই ধ্রুব তার দু’হাতে আমার গাল ধরে তার মুখোমুখি করে করে অত্যন্ত শীতল কন্ঠে বললেন-
‘তুমি কোনো জিনিস না যে তোমার প্রতি আমার একঘেয়েমি চলে আসবে। তুমি প্রতিদিন কালো জামা পরলেও আমার একঘেয়েমি আসবে না। আর জামা না পড়লেও একঘেয়েমি আসবে না।’
ধ্রুবর কথায় আমার চোখ রসগোল্লার মতো বড় হড় হয়ে গেল। বিস্ফোরিত চোখে ওনার দিকে তাকালাম৷ ওনার বুকে থাপ্পড় দিয়ে নাকমুখ ছিটকে বললাম-
‘ছিঃ আপনি এত নির্লজ্জ টাইপ কথাবার্তা বলেন কিভাবে! অসভ্য লোক।’
ধ্রুব নিজের কথা বুঝতে পেরে থতমত খেয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললেন-
‘আরে এটা তো এমনি কথার কথা বললাম।’
আমি আর কিছু বললাম না৷ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। ধ্রুব মিনিট খানেক সময় ইতস্তত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য গাঢ় স্বরে বললেন-
‘যাইহোক কোথায় যেন ছিলাম! অহহ হ্যাঁ মনে পরেছে। তুমি কোনো জিনিস না যে প্রতি আমার একঘেয়েমি চলে আসবে। বুঝতে পেরেছো! আমি তোমাকে ভালোবাসি মানে তোমার সব কিছুকেই ভালোবাসি। তুমি যেমনই হও না কেন তোমাকেই ভালোবাসি। আর আমার ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। আমি প্রতিদিন তোমাকে নতুন নতুন করে ভালোবাসতে শুরু করি। এসব ড্রেস কিংবা সাজগোছ তো জাস্ট ক্ষনিকের ভালো লাগার জন্য। চোখের মুগ্ধতার জন্য।’
ধ্রুব থামলেন। কিছুক্ষন চুপ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন-
‘অনেক কথা বলে ফেললাম এবার একটা চুমু দিন তো তুলতুলের আম্মু।’
ধ্রুব নিচু হয়ে তার গাল আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি কয়েক মুহুর্ত শান্ত চোখে ওনার গালের দিকে স্থির চেয়ে থাকলাম। এখন আর আগের মতো অবহেলায় বেড়ে ওঠা সেই অবাঞ্ছিত দাঁড়ি গুলো নেই। খুব সুন্দর করে ছাটাই করা খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে ঢেকে আছে তার ফর্সা গাল। বারান্দার দরজা আর জানালা দিয়ে আচমকাই দমকা হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিলো আমাকে। বাতাসের সাথে আসা বেলি ফুলের তীব্র সুগন্ধে সম্মোহিত হয়ে গেলাম আমি। দমকা হাওয়ার মতোই এলোমেলো হলো আমার মনের সকল অনুভূতি। ঝড় বইতে শুরু করলো। অনুভূতিরা মিছিলে নামলো। ধ্রুব নামক মিছিল। এই মিছিল যেন থেমে যাওয়ার নয়। খুব ভয়ংকর একটা কাজের দিকে নির্ভয়েই পা বাড়ালাম আমি। ধ্রুবকে এবং নিজেকে প্রচন্ডরকম অবাক করে দিয়ে সত্যি সত্যিই একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেললাম। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিই আমি এই প্রথম ওনার গালে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলাম। আমার নরম সরম ঠোঁট জোড়া আকষ্মিকভাবেই ওনার নিষ্ঠুর ধারালো গাল ছুঁয়ে দিল। এই প্রথম বুঝি আমি ওনার দিকে পা বাড়ালাম। ধ্রুবর সাথেই তাল মিলিয়ে সম্পর্কের সিড়িতে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলাম। ধ্রুবর কেঁপে উঠেছিল তখন। তারপর হুট করেই আবারও থমকে গেলেন। কিছুক্ষণ সেভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে ঝট করেই কয়েক পা পিছিয়ে গেলেন তিনি। ভূত দেখার মতো অবিশ্বাস্য চোখে আমার দিকে চাইলেন। এমন ভয়ংকর একটা কাজ করে আমি অদ্ভুত ভাবেই নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রূপেই আবিষ্কার করলাম। আমার উচিত ছিল লজ্জায় লাল হয়ে মাথা নুয়ে ফেলা। অথচ আমি স্বাভাবিকভাবেই ওনার বিস্ফোরিত চোখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। মুহুর্তের মধ্যেই যেন কান দুটো লাল হয়ে লজ্জায় মিইয়ে গেলেন তিনি। কি অদ্ভুত! ধ্রুব লজ্জা পাচ্ছে। ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে। তার চাহনিতে স্পষ্ট লজ্জার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তার লাল লাল কান দুটো বলে দিচ্ছে তিনি লজ্জা পাচ্ছেন। ইশ! ভীষণ অনুচিত কাজ কিরে ফেললাম বোধহয়। আমার লজ্জা পাওয়ার কথা ছিল অথচ সেখানে ধ্রুব লজ্জা পাচ্ছে। কি অদ্ভুত! মনে মনে অজানা আনন্দের উপস্তিতি টের পেলাম। আমি হাসলাম ধ্রুবর লজ্জা দেখে। নিজের কাজের জন্য অনুশোচনা কিংবা লজ্জিতবোধ না করে ভেতর ভেতর আমি উল্লাসিত অনুভব করলাম। ধ্রুব হয়তো ভাবেনি আমি সত্যি তার কথা মেনে নিবো।
‘কিরে কই তোরা! আজ কি মার্কেটে যাবি না-কি বাসাতেই বসে থাকবি!’
বাহির থেকে মনি মা’র তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই ধ্রুব অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন। অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে হন্তদন্ত হয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন উনি। আমি তাকিয়ে রইলাম ওনার যাওয়ার দিকে। মুচকি হেসে আমিও ওনার পেছন পেছন গেলাম। ধ্রুবকে দেখে মনি মা তিক্ত গলায় বললেন-
‘অনুকে ডাকতে গিয়ে তুই কোথায় উধাও হয়ে গেছিলি? একটা কাজও কি ঠিক মতো করতে পারিস না!’
ধ্রুব কিছু বললেন না। চুপ করেই দাঁড়িয়ে রইলেন। আব্বু তুলতুলকে কোলে নিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন-
‘তোমার এই গাঁধা ছেলেকে দিয়ে কখনও কোনো কাজ ঠিক মতো হয়েছে সেটা দেখেছো!’
মনি মা আব্বুর কথা পাত্তা দিলেন না। ধ্রুবর দিকে খানিক্ষন তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে থেকে এগিয়ে এসে চিন্তিত গলায় বললেন-
‘ধ্রুব তোর কান লাল হয়ে আছে কেন? আর মুখটাও তো কেমন যেন লাগছে। তোর কি শরীর খারাপ করেছে? এল্যার্জির সমস্যা হয়েছে না-কি!’
মনি মা’র কথা শুনেই ধ্রুব বিষম খেলেন। কাঁশতে কাঁশতে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বললেন-
‘কিছু না মা কিছু না৷ দেরি হয়ে যাচ্ছে তো। জলদি আসো। আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।’
ধ্রুব কথা গুলো বলেই আমার দিকে চেয়ে শুকনো ঢোক গিলে হনহনিয়ে চলে গেলেন। ধ্রুবর এমন হাল দেখে আমার প্রচন্ড হাসতে ইচ্ছে হলো৷ হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে মন চাইলো৷ কিন্তু আফসোস এখন আর তা করা সম্ভব না। আমি নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম। মনি মা আবারও চিন্তিত গলায় বললেন-
‘এই ছেলের কখন কি হয় কিছুই বুঝি না৷’
‘কি আর হবে! তোমার ছেলে তোমার মতোই আধপাগল হয়েছে।’
আব্বুর কথায় মনি মা তেঁতে উঠলেন। আবারও শুরু হলো তাদের কথা কাটাকাটি। আমি সেদিকে মন দিলাম না। ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে ধ্রুবর পিছু পিছু বেরিয়ে গেলাম। আমার পেছনেই মনি মা রাগে গজগজ করে এটা ওটা বলতে বলতে আসছেন। আব্বুও মনি মা’র রাগে ঘি ঢালার জন্য প্রস্তুত হয়েই পেছন পেছন আসছেন। সারা রাস্তা ধ্রুব আর একটা কথাও বলেন নি। আমি পুরোটা সময়েই তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। খেয়াল করছিলাম তার আড়চোখে তাকানো। কিছুক্ষণ পর পরেই আড়চোখে আমার দিকে চাইতেন। আমার চোখাচোখি হতেই লজ্জায় আবারও দৃষ্টি সরিয়ে নিতেন। আমি ধ্রুবকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। আমার চুমু দেওয়াতে তিনি এতটা লজ্জা পাবেন তা ভাবিনি।
‘কেমন আছো ধ্রুব?’
মেয়েলী সুরেলা কণ্ঠস্বর শুনে আমি শাড়ি দেখা বাদ দিয়ে চমকে পেছন ফিরে চাইলাম। হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে সেদিন রাস্তায় ধ্রুবর পাশে দেখা মেয়েটা। ধ্রুব পেছন ফিরে মেয়েটার দিকে চাইলেন। সাথে সাথেই মেয়েটার মুখের হাসি আরও প্রসারিত হলো। ধ্রুব কিছুটা অবাক হয়ে মেয়েটাকে প্রশ্ন করলেন-
‘তুমি এখানে কি করছো লিনা?’
[বিঃদ্রঃ কালকের কমেন্ট গুলো পড়ে আমি আসলেই খুব অবাক হয়েছি। শুধু মাত্র নিজেদের ধারণাতেই আপনারা গল্পের মধ্যে পরকীয়া সহ আরও কত কি ভেবে ফেললেন। আমি জানিনা আপনারা গল্প, উপন্যাস ঠিক কতটা মনোযোগ দিয়ে পরেন। তবে যারা গল্প উপন্যাস মন দিয়ে পরে। তার চরিত্র গুলোকে মন থেকে অনুভব করতে পারে তারাই হয়তো সেই চরিত্রের প্রতিটি কর্মকাণ্ডকে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করে। চরিত্রটার উপর বিশ্বাস রাখে। আর হ্যাঁ হুটহাট করেই গল্পের কোনো চরিত্র সম্পূর্ণ রূপে পালটে যায় না এটা মনে রাখবেন। যাইহোক সবাইকে ধন্যবাদ আর ভালোবাসা।❤️]