#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_২২
#Saji_Afroz
.
.
বাসায় এসে মায়ের কাছে প্রশ্ন ছুড়লো রাফসান-
তুমি এটা কেনো করলে?
.
রাফসানের মা আহসানা খাতুন অবাক হয়ে বললেন-
কি করলাম?
-তুমি জানোনা কি করেছো?
-ওহ বুঝেছি আমি! নিশ্চয় ওই আফিয়া জান্নাত আমার বিরুদ্ধে তোকে কিছু বুঝিয়েছে । তা কি বলেছে শুনি?
-নয়নের চাকরী নেই এটা বলতে তুমি নিষেধ করোনি?
.
প্রশ্নটা শুনে ঘাবড়ে গেলেন তিনি । আসলেই তিনিই নিষেধ করেছিলেন । রাফসানের ভালোর জন্য একটা আবদার রেখেছেন তিনি, আর আফিয়া জান্নাত কিনা সেটা জানিয়ে দিলো!
রাফসান চেঁচিয়ে বলে উঠলো-
তোমার জন্য, শুধুমাত্র তোমার জন্য ছোঁয়াকে অন্যের বাড়িতে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে, এলাকা ছাড়তে হয়েছে । আমাকে জানালে এসব হতে দিতাম?
-অন্যের বাসায় কাজ করছে মানে! আমি এসবের কিছুই জানিনা রাফসান ।
-জানলে কি করতে তুমি? যা করার তো করেই ফেলেছো ।
-রাফসান তুই ভুল বুঝছিস আমাকে । আমি কখনো তোর বা ওদের খারাপ চাইনি ।
-ভালোও চাওনি ৷ আমার ভালো কিসে তুমি জানোনা? বলো মা জানোনা?
.
নিশ্চুপ আহসানা খাতুনকে দেখে রাফসান বললো-
তৈরী হয়ে নাও । এখুনি ওবাড়ি যেতে হবে তোমায় ।
-কেনো?
-নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হওয়া উচিত বলে তোমার মনেহয়না?
.
রাফসান ভেতরের দিকে যেতেই আহসানা খাতুন সোফার উপরে বসে পড়লেন । নিজের মাকে অন্যের কাছে ছোট হতে বলতে বিবেকে বাঁধা দিচ্ছেনা রাফসানের? কেমন হয়ে গেলো তার ছেলেটা!
.
.
ক্লাস করানোর সময় বেশ কয়েকবার মুশফিকের ফোন এসেছিলো, কিন্তু রিসিভ করেনি তোহা । ক্লাস করানোর সময়ে অহেতুক সময় নষ্টা করা পছন্দ করেনা সে ।
ক্লাস শেষে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মুশফিকের নাম্বারে ডায়েল করলো সে ।
-হ্যালো তোহা?
-কেমন আছেন?
-ভালো । ফোন কেনো ধরছিলেন না?
-ক্লাসে ছিলাম । এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন আমি একজন শিক্ষিকা, এই সময়ে আমার ক্লাস থাকতে পারে?
-ভুলিনি । রিসিভ করে তো বলতে পারতেন আপনি ক্লাসে ।
-এইযে ফ্রি হয়ে কল ব্যাক করলাম । কথা বলে নিই একেবারেই ।
-হু ।
-জরুরী কিছু বলবেন?
-আসলে আমি আপনাকে মাথা থেকে ফেলতে পারছিনা ।
-মানে?
-সোজা সাপ্টাই বলবো?
-অবশ্যই ।
-এর আগেও এমন অনেক মেয়ের সাথে দেখা করেছি আমি । কিন্তু এমন ফিলিংস কাজ করেনি, যেটা আপনাকে দেখার পর করছে । মনেহচ্ছে প্রেমে পড়ে গিয়েছি আপনার । বুকের মাঝে একধরনের ছটফট অনুভব করছি । যেটা আপনি অফ করতে পারবেন । আসলে আমি বোঝাতে পারছিনা…
-আমি বুঝেছি ।
-তাহলে আমার বুকের ছটফটানি বন্ধ করতে সাহায্য করবেন আপনি?
.
মুশফিকের কথা শুনে তোহা হাসলেও কিছু বলতে পারছেনা । মুশফিক তাকে পছন্দ করেছে, এটা তার জন্য খুশির খবর । কেননা তারও মুশফিককে ভালো লেগেছে । কিন্তু পরশ? ও যে ছোঁয়াকে এখনো কিছু বলতে পারেনি । এদিকে দুই পরিবারের সবাই কতো আশা করে বসে আছে । আর ছোঁয়া যদি পরশের প্রস্তাব গ্রহণ না করে, তখন কি হবে? তখন সে নিজেই সবার কাছে খারাপ হয়ে যাবে ।
এখন কি করতে পারে সে?
-হ্যালো তোহা? কিছুতো বলুন?
-আসলে নীলার কথায় আমি দেখা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু এতোকিছুতো ভাবিনি । আর আপনি হঠাৎ করেই এসব বললেন….
-সময় নিন আপনি । যদিও আমার তাড়া ছিলোনা । কিন্তু আপনাকে দেখার পর…. আসলে গুছিয়ে বলতে পারছিনা আমি । আপনি ভেবে আমাকে সিদ্ধান্ত জানান প্লিজ ।
.
তোহা ফোন রাখতেই নীলার মুখোমুখি হলো ।
নীলা বললো-
মুশফিক ভাইয়া তোমায় পছন্দ করেছে! আমি তো অনেক খুশি। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্যামিলির সাথে কথা বলো ।
.
তোহার মলীন মুখটা দেখে নীলা বললো-
কোনো সমস্যা?
-আমার বাসায় পরশের সাথে বিয়ে ঠিক করে রেখেছে ।
-কিন্তু পরশ তো অন্য কাউকে ভালোবাসে ।
-সেই অন্য কেউ পরশকে ভালোবাসে কিনা তা সে জানেনা ।
-মানে! ওই মেয়েটা পরশকে রিজেক্ট করলে তুমি তার লাইফে যেতে ইচ্ছুক?
-এমন কিছু নয় । পরশ আমাকে বলেছিলো ওর বাসায় বিয়ের জন্য জোরাজোরি করছে । তাই যতদিন না ছোঁয়াকে নিজের মনের কথা জানাতে পারছে ততদিন পর্যন্ত না জানাতে, আমরা বিয়েটা করতে পারছিনা ।
আসলে পরশ চায় ছোঁয়াও ওর প্রেমে পড়ুক, বাসার সকলের মন জয় করুক । সে তাড়াহুড়ো করতে চায়না ।
-সে শুধু নিজের কথায় ভাবছে । তোমার কথা ভেবেছে সে?
-কিছুদিনের ব্যাপার নীলা! আর কিছুটা দিন পার হলেই ছোঁয়াকে সব জানাবে পরশ । নিজের বাসায়ও সব বলবে ।
-ছোঁয়া রাজি নাহলে সে তোমাকেই বিয়ে করবে । এটা বলতে চাইছো তুমি? তার মানে মুশফিককে নিষেধ করে দিবো?
-আমি এমন কিছু বলছিনা নীলা ।
-কি বলছো? মুশফিককে অপশন রাখতে চাইছো?
.
নীলার কথা শুনে তোহার রাগ হবার কথা হলেও হলোনা সে । আসলেই তো! কি চায় সে? সে কি আশা করে পরশ তার কাছে আসুক? কেনো করে! যেখানে পরশ অন্যকাউকে ভালোবাসে । সে নিজেও পরশকে ভালোবাসেনা । মায়ার টানের জন্য এমন হচ্ছে কি তার সাথে?
নিজেকে স্বাভাবিক করে তোহা বললো-
আমি মুশফিকের সাথেই কথা বলবো । বলতে পারি কি?
-কেনো নয়! তবে এমন কিছু বলোনা যাতে সে কষ্ট পায় । আমিই তো পরিচয় করিয়ে দিলাম তোমাদের । আমার ভাই এর খারাপ লাগলে কিন্তু আমারো লাগবে । তাই যা বলবে ভেবেচিন্তে বলো ।
-মাথায় রাখবো তোমার কথা নীলা ।
.
.
রাফসানের সাথে তার মা এলো ছোঁয়াদের বাসায় । বাগানে দেখা হয়ে গেলো পরশের সাথে ।
পরশকে দেখে রাফসান স্বাভাবিক ভাবেই কথা বললো ।
পরিচয় করিয়ে দিলো নিজের মায়ের সাথে । এমন সময় নয়নতারাও হাজির হলো । সে আহসানা খাতুনের পায়ে ধরে সালাম করতেই তিনি বললেন-
থাক থাক মা! বিয়ের পরেই করো এসব । এখনো ছেলের বউ হতে সময় আছে ।
.
নয়নতারা তাদের ভেতরে নিয়ে গেলো । পরশের মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটলো । তার মানে নয়নতারার সাথে রাফসানের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে! তাইতো তাকে ভাইয়া বলে ডাকে সে । আর সে কিনা তখন এমন একটা ব্যবহার করলো! ইশ! ভুল করে ফেলেছে সে ।
দ্রুতপায়ে পরশ নিজের বাসায় আসলো । ছোঁয়াকে খুঁজতে খুঁজতে ডাইনিং রুমের পাশে লাগানো বারান্দাটায় পেলো সে । চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে ছোঁয়া।
পরশ বললো-
রাগ করেছো?
-নাতো । আপনি আমার মালিক, দু-একটা কথা শোনাতেই পারেন ।
-আমি অনেক দুঃখিত ছোঁয়া । তোমার সাথে তখন ওমন করা আমার উচিত হয়নি । তবে ভুলতো মানুষই করে ।
-এভাবে বলার কিছু নেই । বাদ দিন ।
-তোমার রাফসান ভাইয়ার মা এসেছেন । আমার মনেহয় তোমার ওখানে যাওয়া উচিত ।
-আপনি কিভাবে জানেন?
-দেখেছি । রাফসানই পরিচয় করিয়ে দিলো ।
-ওহ ।
-তুমি যাও, সমস্যা নেই ।
-সিউর?
-হু ।
.
ছোঁয়া যেতে চায়লে পরশ বললো-
এখনো রাগ করে আছো?
.
ছোঁয়া মৃদু হেসে বললো-
প্রিয় ব্যক্তির সাথে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যায়না । এটা জানেন তো?
.
কথাটি বলেই ছোঁয়া চলে গেলো । পরশের খুশি দেখে কে! ছোঁয়া যে তাকে প্রিয় মানুষ বলেছে…
.
চলবে
.