স্মৃতিতে তোমারবন্দনা পর্ব-৩৪

0
1984

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৩৪
#Saji_Afroz
.
.
ছোঁয়ার রুমে এলো নয়নতারা । মাত্র ঘুম থেকে উঠে বিছানা গোছাচ্ছে সে । নয়নতারাকে দেখে বলল-
আপু তুমি উঠে গিয়েছ? আজকের সকালের নাস্তা আমি বানাতে চাচ্ছিলাম । আলুপরোটা করব ভাবছি ।
-তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে ।
-হ্যাঁ আপু বলো?
-কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা । মানে বিষয়টা কিভাবে নিবি তুই…
.
নয়নতারার অবস্থা দেখে তার পাশে এসে হাতটা ধরে ছোঁয়া বলল-
আমি তোমার বোন আপু! এত ফর্মালিটির কি প্রয়োজন?
-তবে শুন, মা সুইসাইড করতে চাননি । সবটায় ছিল নাটক ।
.
কথাটি শুনে ছোঁয়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো । সে চোখ জোড়া বড়বড় করে জিজ্ঞাসা করলো-
মানে?
শুরু থেকে সবটা ছোঁয়াকে খুলে বলল নয়নতারা ।
সে শুনে যেন বোকা হয়ে গেল!
মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছেনা তার ।
নয়নতারা তার কাঁধে হাত রেখে বলল-
ছোঁয়া?
.
অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে ছোঁয়া বলল-
এসব তুমি কি বলছো আপু! আমি রাফসান ভাইয়ার সাথে বিয়েতে রাজি হয়েছি দুটো কারণে।
বলেছিলে তুমি রাদিব ভাইয়াকে পছন্দ করো, আমি তোমার কথা ভেবেছি । আর মা সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে । তাই আর দেরী না করে রাজি হয়ে যাই । শেষ করে দিই তুষারের সাথে সব সম্পর্ক আমার । আজ এটা তুমি কি বললে আপু? কি শোনালে আমায়! সবটায় মিথ্যে ছিল! রাফসানের জন্য তুমি আমার এতবড় ক্ষতিটা করলে?
.
কান্নায় ভেঙে পড়লো ছোঁয়া । নয়নতারা বলল-
আমিও তো রাফসানকে ভালোবাসি । ও নিজের ক্ষতি করবে বলে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম রে । এখনো পর্যন্ত এসব তোকে জানাতাম না ।
-তবে আজ কেন জানালে?
-পরশের জন্য । সে বলেছে তুষারকে তুই ভালোবাসিস । আমাকে বোঝালো, তোকে সব জানিয়ে দেয়ার জন্য ।
-তিনি সব জানেন কিভাবে?
.
ছোঁয়াকে সব খুলে বলল নয়নতারা । শুধু চেপে গেল একটি কথা । পরশ ভালোবাসে ছোঁয়াকে ।
সব শুনে ছোঁয়া বলল-
আমি একটু আসছি ।
.
ছোঁয়া বেরিয়ে গেল । নয়নতারা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজেরমনে বলল-
ছোঁয়াকে পরশের কথাটি জানালাম না । সে ভালোবাসে তুষারকে । নতুন করে আর কোনো ঝামেলার সম্মুখীন সে হোক আমি চাইনা । এমনিতেই আমার জন্য এতদিন মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে ।
.
.
নিজের রুমে বসে আছে পরশ । এই রুমটা থেকে বেরুতে যেন ইচ্ছেই করেনা তার এখন ।
হঠাৎ ছোঁয়ার আগমন ঘটলো ।
তাকে দেখে পরশ বলল-
আজ এত সকালে চলে এলে?
-আপনার কাছে এসেছি আজ ।
-আমার কাছে?
-হু । ধন্যবাদ ।
-কেন?
-আপনার জন্য আজ আমি সত্যিটা জানতে পেরেছি ।
.
নয়নতারা সব জানিয়েছে জেনে পরশের মুখে হাসি ফুটলো ।
সে বলল-
ধন্যবাদের কিছু নেই । তুমি সুখে থাকো এটাই আমি চাই ।
এবার তোমার রাফসানের সাথে কথা বলা উচিত ।
-উনার সাথে কথা বলার রুচিটায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে আমার ।
-তাও বলতে হবে । তুমি সত্যিটা জেনেছ এটা তাকে বলতে হবে ।
-হু ।
-কি সিদ্ধান্ত নিলে? রাফসানের কাছেই থাকবে? নাকি তুষারের কাছে ফিরে যাবে?
-তুষারের কাছে যাব কিনা জানিনা, কিন্তু রাফসান ভাইয়ার সাথে থাকার প্রশ্নই উঠেনা!
-তুষারের কাছে যাবে কিনা কেন জানো না?
-আমি তুষারকে কষ্ট দিয়েছিলাম । এতদিন পর কোন মুখে ফিরে যাব আমি?
-তুমি যেমন সত্যিটা জানতেনা সেও জানেনা । তাকে সবটা জানানো উচিত ।
-কিন্তু সে কি মেনে নিবে?
-ভালোবাসো তুমি তুষারকে?
-অনেকটা ।
-ভরসা নেই নিজের ভালোবাসার উপরে?
-আছে ।
-তাহলে?
-ভয় করছে ।
-কোনো ভয় নেই । তুষারকে সবটা জানাও । সে যদি রাজি হয়, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে দিব তোমাদের ।
.
পরশের কথা শুনে ছলছলে করে উঠল ছোঁয়ার দুচোখ । কে বলেছে মানুষ স্বার্থপর? স্বার্থহীন মানুষও আছে, যার উদাহরণ পরশ!
.
.
বাসায় এসে ছোঁয়া দেখলো, নয়নতারা ও আফিয়া জান্নাত কথা কাটাকাটি করছেন । এক পর্যায়ে আফিয়া জান্নাত, নয়নতারার গায়ে হাত তুলতে চায়লে ছোঁয়া এসে বাঁধা দিলো । ছোঁয়া অবাক হয়ে বলল-
এতবড় মেয়ের গায়ে কেউ হাত তুলে মা?
-এই মেয়ের জন্য সব ভেস্তে গেল । কাল রাদিব দেশে আসবে আর এই মেয়ে কি বলে? সে ভালোবাসে রাফসানকে । তোকে সব সত্যি জানিয়ে দিয়েছে । কেনো! কেনো এটা করলো সে! শেষ সময়ে এসে এসব করার কি দরকার টা ছিল?
.
হাপাতে লাগলেন আফিয়া জান্নাত । ছোঁয়া বলল-
মা শান্ত হও তুমি ।
-তোরা আমাকে অশান্ত করে তুলিস না ।
দুই বোনই চুপচাপ বিয়েটা করে নে ।
.
ছোঁয়া বলল-
না করব আমি রাফসানকে বিয়ে, না করবে আপু রাদিবকে বিয়ে ।
-আচ্ছা! তো কি করবি তুই?
ওই তুষারের কাছে ফিরে যাবি?
কি মনেহয়? এতদিন পর যাবি আর সে নাচতে নাচতে মেনে নিবে তোকে??
-সে মেনে নেক না নেক! আমি এই বিয়েটা করছিনা ।
.
-ছোঁয়া একটু চোখটা বন্ধ করো তো!
.
তুষারের কথা শুনে হেসে ছোঁয়া বলল-
কেনো?
-করোই না!
.
ছোঁয়া চোখ বন্ধ করতেই তুষার নিচে হাটু গেড়ে বসে, ছোঁয়ার পায়ে নুপুর পরিয়ে দিতে লাগলো ।
ছোঁয়া চোখ খুলে বলল-
এই কি করছো তুমি?
-চোখ কেনো খুললে তুমি?
-তুমি কি করছো?
-নুপুর পরাচ্ছি ।
-এসব কেনো কিনতে গেলে তুমি?
-দামি কিছু নয়, ভালোবাসার উপহার ।
.
মিষ্টি হেসে ছোঁয়া বলল-
আজীবন রেখে দিব এই নুপুর জোড়া আমি ।
.
আগের স্মৃতি মনে পড়তেই দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেললো তুষার ।
ছোঁয়া তার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর, আর কাউকে ভালোবাসতে পারেনি সে । মেয়েরা যে ধোকাবাজ হয় । ভালোবাসতে ভয় হয় তার ।
আচ্ছা, ছোঁয়া কি সেই নুপুর জোড়া রেখেছে এখনো? নাকি তার সাথে সাথে সেই নুপুর জোড়াও ছুড়ে ফেলে দিয়েছে?
জানতে বড় ইচ্ছে হয় তুষারের, বড় ইচ্ছে হয় ।
.
.
আজ অনেকদিন পর তুষারের ফোন নাম্বারে ডায়েল করতে চলেছে ছোঁয়া । আজ তাকে সব সত্যিটা জানাবে সে । তুষার কি তাকে নিজের জীবনে ফিরিয়ে নিবে? ভয় হচ্ছে ছোঁয়ার ভীষণ…
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here