আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১৪

আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_১৪
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||

পাত্রপক্ষের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে নিশাত ।পাশেই নিশাতের কাকী নিশাতের হাত শক্ত করে ধরে আছে সবার অগোচরে

কিছুক্ষণ আগেই নিশাত কে দেখতে আসছে নিশাত রাজি না থাকায় অনেক মার খেতে হয় অবশেষে কাকার কথায় রাজি হতে বাধ্য হয় ।

আরো কিছুক্ষন বসে থাকতেই সামনে বসে থাকা মহিলাটা নিশাত কে কিছু প্রশ্ন করে নিশাত মাথা নিচু করে উত্তর দেয় । নিশাত এর কাকী নিশাত কে উপরে পাঠিয়ে দেয় । নিশাত এক দৌড়ে ঘরে চলে যায়। ঘরে ঈশা শুয়ে শুয়ে ফোনে গেম খেলছে নিশাত কে দেখে ভুবন ভুলানো হাসি দিলো

_” কিরে আপু তুই শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছি কেনো ? কাল কাকী মেরেছিল বলে তোকে নতুন শাড়ি দিছে কিন্ত আমাকে দেয়নি

ঠোঁট উল্টিয়ে ঈশা কথাটা বলল । নিশাত এর বুক ফেটে কান্না আসছে এত আদরের বোন । আদরের সব কিছু ছেড়ে নিশাত কে চলে যেতে হবে ভাবতেই নিশাতের কান্না আসছে কিন্ত ঈশার সামনে কান্না করা যাবে না নাহলে ঈশা অস্থির হয়ে যাবে । নিশাত নিজেকে সামলে ঈশার পাশে গিয়ে বসে মাথায় হাত রেখে শান্ত কণ্ঠে বলে

_” আমার সব কিছু তোর আর কি চাই ! আচ্ছা ইসু আমি যদি তোর থেকে দূরে চলে যাই তাহলে কি তুই থাকতে পারবি

নিশাত এর কথায় ঈশা কি বুঝলো কে জানে ফোনে গেম খেলতে খেলতে বললো

_” তুই আমাকে ছেড়ে কখনো যাবি না সেটা আমি জানি আর তোর বিয়ে হলেও আমাকে সাথে করে নিয়ে যাবি

কারণ দুলাভাই বলেছে তোর সাথে আমাকে ও নিয়ে যাবে কখনো আলাদা করবে না (মনে মনে )

নিশাত ঈশার পাশে বসে ওকে দেখতে লাগলো কেনো যেনো মনে হচ্ছে ঈশার কথাই ঠিক ।

_” সত্যি তো আমি তো ঈশা কে নিয়ে যেতে পারি আর যদি তারা ঈশা কে না মেনে নেয় তাহলে ঈশা কে নিয়ে আমি অনেক দূরে চলে যাবো হা এটাই ঠিক হবে । ভেবেছিলাম কখনো বিয়ে করবো না কিন্ত কাকার কথা রাখতে আজ আমাকে না চাইতে ও করতে হচ্ছে (মনে মনে )

ঈশা নিশাতের দিকে তাকিয়ে দেখে নিশাত আকাশ পাতাল ভাবতে ব্যাস্ত ।ঈশা নিশাত কে ধাক্কা মেরে বলে

_” কি রে আপু কি ভাবছিস এত ?

_” না কিছু না তুই বস আমি আসছি

নিশাত বাইরে উকি দিয়ে দেখে উনারা আছে কি না ভালো করে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই হটাৎ নিশাত এর কাকী নিশাত কে ডাক দেয়

নিশাত না চাইতে ও গুটি গুটি পায়ে নিচে যায় । কাকীর সামনে যেতেই নিশাতকে জড়িয়ে বলে

_” তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো রে এবার তুই রাজরানীর মত থাকবি

নিশাত এবার না পেরে কাকীর পায়ে পড়ে যায় ।কান্না কান্না করতে বলে

_” কাকী তুমি আমার মায়ের মত প্লীজ এমন করো না আব্বু আম্মুর পর তোমরা আমার আপনজন ইসু কে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না । ইসু আমি ছাড়া নিঃস্ব, আমি ছাড়া কোনো কাজ করতে পারে না প্লীজ এমন করো না

নিশাত এর কাকী নিশাত কে পা থেকে তুলে মুখ টিপে বলে

_” ঈশার জন্য কষ্ট হচ্ছে নাকি তোর সেই নগরের জন্য হুম । সব জানি আমি কাল রাতে তোর নগর ফোন দিয়েছিল আচ্ছা মত ঝেরেছি বলে কি wrong number শুন তোর আব্বু আমার উপর তোর সব দায়িত্ত্ব দিয়ে গেছে ।তোরা খারাপ পথে গেলে তোর আব্বুকে আমি কি জবাব দিবো তাই আমি যা বলছি তাই কর। ঈসাকে মাঝে মাঝে পাঠিয়ে দেবো আর এই নিয়ে আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না

কথাটা বলে ঈশার কাকী চলে যায় । নিশাত ওর কাকার দিকে তাকাতেই কাকা মুখ গম্ভীর করে বলে

_” ছেলে পক্ষ খুব ভালো । তোর জন্য একদম ঠিক ।পরিবার খুব ভালো। রোজ রোজ ঝাটা লাথি না খেয়ে চলে যা মা। মরার আগে তোকে সুখী দেখতে পারলে শান্তি পাবো না

নিশাত এর কাকা ও চলে যায় ।নিশাত ওখানেই বসে কান্না করতে থাকে

_” আমার খুশি তো তোমাদের মধ্যে থেকে । তোমাদের ছাড়া আমি কোথাও গিয়ে শান্তি পাবো না ইসু কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না

ঈশার ডাকে নিশাত এর কান্না বন্ধ হয়ে যায় । ঈশা চিল্লিয়ে বলছে _” আপু খুদা লাগছে কিছু খেতে দে

নিশাত চোখ মুখ মুছে রান্না ঘরে যায় ।

এদিকে
সকাল ১০টায় আরহান এর ঘুম ভেঙ্গে যায় । আরহান তাড়াতাড়ি করে রেডী হয়ে বের হতে যাবে তখনই পিছন থেকে আরহান এর আম্মু ডাক দেয়

_” কিরে কোথায় যাচ্ছিস ?

আরহান পিছু না তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে

_” কি বলবে সেটা বলো

_” বলতে তো অনেক কিছু চাই কিন্ত তোকে তো পাই না আচ্ছা যাই হোক শুন তোর আব্বুর ট্যুর এ যাচ্ছে আমি তো যাচ্ছি তুই ও চল আমাদের সাথে

_” সারাজীবন কখনো ভাবনি তাহলে আজকে কেনো দরদ দেখাতে আসছ ? লাগবে না তোমাদের ভালোবাসা আমি কোথাও যাবো না

_” তুই সব সো

আর কিছু বলতে পারে না আরহান গটগট করে বেরিয়ে যায় । আরহান এর আম্মু যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে ।

আরহান গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়। রাস্তায় জয়কে ফোন দিতেই জয় ফোন ধরে । আরহান রেগে বলে

_” কিরে তোর খবর কি ? শালা আজকে আমাকে ডাকলি না কেন ? কোথায় তুই নিশা কি ভার্সিটিতে আসছে আমি আসছি

আরহান এক দমে বলে ফেলে । ওপাশ থেকে জয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

_” আর কিছু ? বাবা রে কত কথা বলিস তুই এখন জানলাম যায় হোক আজ ভার্সিটিতে বন্ধ জানিস না । প্রিন্সিপাল এর ছেলে হয়েও জানিস না ভাই রে ভাই তুই তো

ওপাশ থেকে আরহান চিল্লিয়ে বলে

_” ভার্সিটি বন্ধ মানে কি? কে বন্ধ করতে বলছে তার মানে কি নিশা আসবে না কিন্ত আমাকে তো ওর সাথে অনেক কথা বলার আছে

_” থাক কাল বলিস এখন আমার সাথে দেখা কর

_” হুম আমি আসছি নিশা কে কিভাবে প্রপোজ করবো সেটা তুই আমাকে বলে দিবি

আরো কিছুক্ষন কথা বলে আরহান চলে যায় জয়ের সাথে দেখা করতে ।

নিশাত ছাদে অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে । ঈশা ছাদে এসেই নিশাত কে বলে

_” আপু তোকে অ্যাসাইনমেন্ট করতে দিয়েছি আর তুই বসে বসে দুলাভাই এর কথা ভাবছিস

ঈশার ডাকে নিশাত বাস্তবে ফিরে আসে । নিজেকে ঠিক করে আবার লিখায় মনোযোগ দেয় ।ঈশা পাশে বসে আপেল খাচ্ছে আর নিশাত কে দেখছে

_” আচ্ছা আপু তোর কি কিছু হইছে ?তোকে এমন যেনো লাগছে

_” নারে কিছু না কাল সারারাত জাগা তো তাই একটু ক্লান্ত লাগছে তুই যা

_” তাহলে তুই গিয়ে ঘুমা বাকিটা পরে করলে হবে

_” তোর তো কালকে জমা দিতে হবে তখন কি করবি ?

_” তাও ঠিক ওকে আমি একটু হেল্প করছি

নিশাত ঈশার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে

_” কিছু করতে হবে না চুপ করে বস আমি চুটকি মেরে সব করে দিচ্ছি

ঈশা তো পাশে চুপ করে বসার মেয়ে না বকবক করেই যাচ্ছে ।

৩দিন পর
আজ নিশাতের বিয়ে।বাড়ি সুন্দর করে সেজেছে। চারিদিকে মানুষ ভর্তি সবার মুখে হাসি শুধু একজনের মন অন্ধকারে ।এই কয়দিন নিশাত কারোর সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি। বাসা থেকে বের হবার অনুমতি ছিল না নিশাতের।সারাদিন চুপ কর থাকতো সব কিছু তার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছে। নিশাত ঘরে গুটি মেরে বসে আছে আশে পাশে মেয়েরা নিশাত কে ঘিরে হাসি তামাসা করছে । নিশাত চুপ করে বসে আছে এক দিনটার জন্য সব মেয়েদের কতো স্বপ্ন থাকে কিন্ত আজ যেনো নিশাতের সব স্বপ্ন ভাঙার দিন।

ঈশা নিজের মতো সেজে রাহুল এর পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছে কারণ রাহুল ঈশার চুল টেনে দৌড়ে পালিয়েছে । সেই থেকে ঈশা ছুটে বেড়াচ্ছে।

আর কিছুক্ষণের মধ্যে বিয়ে পড়ানো শুরু হবে । বর পক্ষের সব চলে আসছে । নিশাত এর কাকী মেহমান দের আপায়ন করছে । নিশাত এর কাকা প্যান্ডেল এর দিকটা দেখছে ।

দুইটায় বিয়ে পড়ানো শুরু করে কাজী এসে নিশাত কে কবুল বলতে বলে । নিশাত ঈশার হাত শক্ত করে ধরে আছে । সকাল থেকে ঈশা কে একবার ও পায়নি এখন ঈশা আসতেই নিজের সাথে বসিয়ে দেয় । সবাই জোরাজুরি করছে নিশাত এর কানে কোনো কথা যাচ্ছে ।

ঈশা কানে কানে বলে

_” আপু সবাইকে ডাকছে

ঈশার কথায় নিশাত ঈশার দিকে তাকিয়ে আশে পাশে তাকিয়ে দেখে সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে । নিশাত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে কবুল বলে দেয় তখনই নিশাতের চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি বের হয় । সবাই আলহামদুলিল্লাহ্ বলে উঠে

বিদায়ের সময় অন্য মেয়েরা কান্না করে কিন্ত নিশাত ওর কাকা কাকীর কে শুধু জড়িয়ে ধরে । নিশাত এর কাকী বলে।

_” আমি যা করছি তোর ভালো জন্য । দেখবি থি সুখী হবি ওখানেই সবাই তোকে খুব ভালোবাসবে

প্রতিউত্তর নিশাত কিছু বলে শুধু মাথা নাড়ায় ।

গাড়িতে নিশাত এর সাথে ঈশা বসে আছে।গাড়ি চলছে আপন গতিতে।অজানা জায়গায় যাওয়ার জন্য। নিশাত জানলার দিকে তাকিয়ে আছে হটাৎ রাস্তায় একজনকে দেখে চোখ আটকে যায় ।

চলবে

(অতীত কারোর ভালো লাগছে না শুনছি অল্প কিছু দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে একটু অপেক্ষা করুন । তবে সবার গঠনমূলক কমেন্ট আশা করছি এত কষ্ট করে লিখে কি লাভ হচ্ছে যদি না বলেন কেমন হচ্ছে ব্যাস এই টুকু তো চাই বেশি কিছু তো না ।

হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here