আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_২০
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||
আরহান পানি খেয়ে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে
_” are u sure?
নিশাত কনফিডেন্স হয়ে বলে
_” অফকোর্স এটাই আপনার শাস্তি
আরহান আবার পড়া শুরু করে এবার জোড়ে জোরে পড়ে।তো নিশাতের শর্ত হচ্ছে….
1. সকালে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তে হবে । নামাজ মিস করা যাবে না । ৫ওয়াক্ত পড়তে হবে আর নিশাত যখন কুরআন তেলোয়াত করবে পাশে বসে শুনতে হবে
2. ব্রেকফাস্ট নিশাত_ আরহান একই প্লেটে খাবে।
3.কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বা খুবই টেনশন হলে সবার আগে নিশাতকে বলতে হবে
4. দিনে কমপক্ষে ৭-৮ বার ফোন করতে হবে।
5. বাসায় আসার সময় হাতে অবশ্যই, অবশ্যই চকোলেট আর ফুল থাকতে হবে তাও এত্তোগুলো।
6. যথেষ্ট সময় দিতে হবে।
7. হুটহাট করেই ঘুড়তে নিয়ে যেতে হবে তা বাইকে হোক বা গাড়িতে হোক বা হুড তোলা রিকশায়।
8. মাঝে মাঝে এই বৃষ্টিভেজা দিনে তারা দুজন মিলে বৃষ্টিবিলাশ করবে আর তার সঙ্গী হয়ে ওঠবে গরম ধোঁয়া উঠানো চা।
9. এক সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার লাল গোলাপ বা বেলী ফুল দিয়ে সিরিয়াস ভাবে প্রপোজ করতে হবে।
10. কোনো রকমের নেশা করা যাবে না ।
11. বেশির ভাগ সময় নিশাতের সাথে চিপকে থাকতে হবে লাইক আঠা।অন্য মেয়ের দিকে তাকালে বাড়ি ঢুকতে দেবো না
12. খুব বেশি কিছু না কিন্ত সাধারণ জীবন যাপন করতে হবে । লাইক মিডিল ক্লাস হাজব্যান্ড ওয়াইফ।
13.নিশাতের মুড অফ থাকলে অবশ্যই গান গেয়ে তা ঠিক করতে হবে।
14. তারা হবে আনকোমন কাপল। এলকোহল বা সিগারেট যদি খায় তাহলে নিশাত কে ও দিতে হবে ।
15. ম্যাচিং শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে ঘুড়তে বের হতে হবে।
16. তারা অনেক Cuddle করবে, পিলো ফাইট, একসাথে বসে পপকর্ন খাওয়া আর কার্টুন দেখা, সব।
17.পরিবারের সবাইকে সম্মান করতে হবে।অকারণে রাগারাগি করা যাবে না ।ঝগড়া হলে দুইজন একসাথে সরি বলতে হবে
18. তারা প্রেম করবে। লাইক গার্লফ্রেন্ড & বয়ফ্রেন্ড।
19. কোন কাজ করার না থাকলে রুমের দরজা জানালা সব লক করে ধুমিয়ে গান ছেড়ে নাচবে।
20. মন খারাপ হলে বা কষ্ট হলে নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলতে হবে
21. তাকে অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক
অনেক অনেক অনেক বেশির থেকেও অনেক বেশিই ভালোবাসতে হবে।
আরহান খাতাটা রেখে নিশাতের দিকে তাকায়। নিশাত কলম মুখে দিয়ে তাকিয়ে আছে । আরহান নিশাতের দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে
_” তুমি না বললেও সব করতাম কিন্ত একটা মিস গেছে
_” কি সেটা বলেন আমি লিখে দিচ্ছি
আরহান নিশাতের গালে স্লাইট করতে করতে বলে
_” আদর ! সেটা তো বললে না বেশি বেশি আদর করতে
কথাটা বলে আরহান ধীরে ধীরে নিশাতের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । নিশাত তো কাপাকাপি শুরু করছে আজকাল আরহান কে বিরক্ত লাগে না । আশে পাশে থাকলে যেনো খুব ভালো লাগে ।
আরহান যতই এগিয়ে আসছে নিশাতের বুকের ভিতর ধুকধুক করতে থাকে । আরহান নিশাতের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোট মিলিয়ে নিলো। দুইজনে দুইজনার ভালোবাসাতে মিশে যেতে লাগলো।
আরহান যেই নিশাতের ওড়নায় হাত দেয় তখনি নিশাতের হুস ফিরে । নিশাত আরহানের হাত ধরে বলে
_” না এখন না সময় হোক আমি নিজে কাছে টেনে নেবো । তত দিন কি অপেক্ষা করতে পারবেন না ? মনের সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব শেষ করে আপনাকে আপন করতে চাই দেবেন কি একটু সময়?
আরহান মুচকি হেসে নিশাতের কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে নিশাতকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।
ফজরের আজান দিলে নিশাতের ঘুম ভেঙে যায় পাশে তাকিয়ে দেখে আরহান কি আনন্দে ঘুমাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে কতদিন পর শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে। নিশাত আরহানের চুল এলোমেলো করে দিয়ে উঠে অজু করতে যায়।
অজু শেষ করে এসে দেখে আরহান বসে আছে। নিশাত মুচকি হেসে বলে
_” শুভ সকাল তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন মসজিদে যান নামাজ পড়তে
আরহান চোখ ডলতে ডলতে বাথরুমে যায়। অজু করে পায়জামা পাঞ্জাবী পরে বাইরে এসে দেখে ওর আব্বু নামাজ পড়তে যাচ্ছে ।
আমজাদ হাবিব ছেলেকে দেখে মহাখুশি আনন্দের সহিত ছেলেকে নিয়ে নামাজ পড়তে গেল।
নিশাত নামাজে বসার আগে ইশা কে উঠিয়ে তারপর নামাজ পড়তে বসে। নিশাত নামাজ শেষ করে কোরআন পরছে সেই সময়ে আরহান ঘরের মধ্যে ঢুকলো
আরহান বিছনায় শুতে গেলে নিশাত চোখ রাঙিয়ে তাকায়। আরহান এর আর কি নিশাতের পাশে এসে কুরআন তেলোয়াত শুনতে থাকে ।
নিশাত অনেকক্ষণ ধরে আরহানের জন্য অপেক্ষা করছে। সেই সকালে আরহান ইন্টারভিউ দিতে গেছে এখনো আসেনি । নিশাত এর অনেক টেনশন হচ্ছে ।
আশার অবসান ঘটিয়ে ডোর বেল বেজে উঠল। 97 দৌড়ে দরজাটা খুলে দেখে আরহান দাঁড়িয়ে আছে চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।
নিশাত হাতের ব্যাগটা নিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় । আরহান কোন কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায় নিশাতের তো খুব টেনশন হচ্ছে চাকরিটা কি আদৌ হয়েছে?
নিশাত গুটি গুটি পায়ে রুমের মধ্যে যে দেখে আরহান কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে । নিশা পাশে বসে মাথায় হাত দিতে আরহান চোখ খুলে তাকায়।
শান্ত স্বরে বলে ওঠে
_” চাকরিটা কি হয়েছে? না হলে কোন সমস্যা নেই একটা নাহলে আর একটা হবে একবার না পারিলে দেখো শতবার। তাই বলে কি মন খারাপ করে থাকতে হবে
আরহাম সোজা উঠে বসে নিশাতের পাশে বসেই এক হাত দিয়েজড়িয়ে ধরে বলে
_” আমার চাকরি হলে তুমি খুশি না না হলে খুশি?
নিশাত আরহান এর কথায় নির্বাক হয়ে যায় অবাক চোখে আরহানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে
_” এটা কেমন প্রশ্ন আপনি চাকরি পাবেন এতে আমি খুশি হব না।কোন স্ত্রী কি স্বামীর সাফল্যে খুশি না হয়ে থাকে।
এবার গম্ভীর হয়ে নিশাতের চোখে চোখ রেখে বলে
_” আসলে তোমাকে কি করে বলব আমার চাকরিটা না হয়ে গেছে
নিশাতের চোখ টলমল করছে পানি পড়বে পড়বে আরহান হঠাৎ নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে
_” ইয়েস মাই প্রিন্সেস আমার চাকরি হয়ে গেছে। তোমার দোয়া কবুল হয়েছে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ আরহান কে ধাক্কা মেরে বুকে কিল ঘুষি মারতে থাকে
_” কুত্তা হারামী ! আরেকটু হলে আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছিল
আরহান নিশাতকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে ।
_” আমার শেরনি সহজে ভয় পাবে সেটা ত আমি ভাবিনি আর জামাই কে কেউ কুত্তা হারামী বলে
নিশাত বুকে চিমটি কেরে বলে
_” আমি বলি ।আর এই গুলো আপনাকে সহ্য করতে হবে
আরহান নিশাতকে উঠিয়ে কোলে নিয়ে চারিদিক ঘুরাতে থাকে। এই প্রথম নিশাত আরহান কে মন খুলে হাসতে দেখছে ।
নিশাত এর কাছে এই সময়টায় সবচেয়ে মধুর।নিশাতের মনে হচ্ছে সময়টা যেনো এখানেই থেমে যায়। নিশাত মুগ্ধ নয়নে আরহানের হাসি দেখছে আরহান হাসতে হাসতে নিশাতকে ঘুরাচ্ছে আর বলছে
_” নিশা পাখি আজ আমি খুব খুশি খুব খুব খুব। আমার মত খুশি কেউ নেই। আজ আমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করার প্রথম সিড়িতে পা দিয়েছি। দেখো নিশা পাখি আমি একদম তোমার মনের মত হয়ে যাবো । একটু অপেক্ষা করো নিশা পাখি একটু
নিশাত আরহানের দুই গালে হাত দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলে
_” তোমার জন্য ছাড়া কার জন্য করবো । তোমাতেই আমার নিশ্বাস প্রশ্বাস । তোমাতেই বাঁচার নতুন ইচ্ছা
আরহান এর খুশি দেখে কে । নিশাত কে নামিয়ে বলে
_” আমি তোমার জন্য আজ কিছু এনেছি । নিজের টাকা দিয়ে
নিশাত শুধু আরহান কে দেখছে । কে বলবে কয়েক মাস আগে একটা প্লে বয় ছিল আর এখন একজন সাধারণ মানুষের মত জীবন যাপন করে । নিজের বাবার টাকা পয়সায় কোনো অহংকার নেই ।
আরহান ব্যাগ থেকে চুড়ি আর মেহেন্দি বের করে নিশাতের হাতে দিলো। নিশাত চুপ করে দেখছে
কিছু সময় চুপ থেকে মুহুর্ত টাকে উপভোগ করার মধ্যে অনেক সুখ ।
প্রতিটি মেয়ের বাবার দেওয়া প্রথম উপহার আর স্বামীর দেওয়া প্রথম উপহার অমূল্য
আরহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলে
_” আজ আমি নিজে হাতে তোমাকে মেহেন্দি পড়িয়ে দেবো
নিশাত মুচকি হাসছে । আরহান নিশাত কে বসিয়ে সযত্নে নিশাতের হাতে মেহেন্দি পড়িয়ে দিচ্ছে আর নিশাত সে তো নিজের স্বামীকে দেখতে ব্যাস্ত
অনেকক্ষণ পর
আরহান নিশাত কে বলে
_” দেখো তো কেমন হইছে ?
নিশাত হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে যায় । আরহানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে
_” এটা আপনি দিয়েছেন ? কোথায় শিখলেন ?
আরহান চুল ঠিক করে বলে
_” আমি সব পারি বুঝেছেন mrs wife
নিশাত পাশে তাকিয়ে দেখে ইউটিউবে ভিডিও চলছে । নিশাত আড় চোখে তাকিয়ে বলে
_” সে তো দেখতে পাচ্ছি
আরহান মাথা চুলকিয়ে বলে
_” মেহেন্দি রাঙা হাত আমার খুব পছন্দের । সবসময় তো পারবো না কিন্ত মাঝে মাঝে তোমাকে মেহেন্দি পড়িয়ে মন ভরে দেখতে চাই
একজন স্ত্রীর স্বামীর মুখে এমন কথা শুনে নিজেকে সব থেকে বেশি সুখী মনে হয় । নিশাত এর বেলায় ও ব্যাতিক্রম নয় । নিশাত আরহান এর বুকে মুখ লুকায় ।
আরহান ও পরম আবেশে নিজের প্রেয়শী নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ।
_” কাল থেকে তোমাকে আর কেউ জ্বালাবে না ।কাল থেকেই অফিস join করতে হবে
নিশাত মন খারাপ করে বলে
_” কালই ?
আরহান মাথা দুলায় । নিশাত নিজেকে ঠিক করে বলে
_” কখন আসছেন ? আর আমি কিছু খেতে দেয়নি । আপনি গোসল করে নিন আমি খেতে দিচ্ছি
_” একদম না । তুমি হাত ধুবে না । আমি গোসল করে আসছি
আরহান যেতেই নিশাত পা তুলে মেহেন্দি দেওয়া দেখছে । কিছুটা বেকে গেছে কিন্ত নিশাতের কাছে সব থেকে সুন্দর হইছে । নিশাত এর আব্বু নিশাত কে ঈদের সময় মেহেন্দি দিয়ে দিতো সেই কথা মনে উঠতেই নিশাতের চোখ ভিজে যায় ।
নিজেকে সামলে সার্ভমেন্ট কে বলে খাবার দিতে ।
পরের দিন
সকাল থেকে নিশাত রান্না করছে । আজ আরহানের অফিসের প্রথম দিন । নিশাত টিফিন রেডী করছে তো একবার আরহান ডেকে এটা সেটা চাইছে । নিশাত পুরাই হিমশিম খাচ্ছে আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।
আরহান ওর আব্বুকে সালাম করে নিশাতের কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায় আর নিশাত যতক্ষণ পর্যন্ত আরহান কে দেখা যাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকিয়ে থাকে ।
ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় ঈশা কে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যায়। ভার্সিটিতে যেয়েও ভালো লাগছে না নিশাতের মনটা আরহান এর কাছে পড়ে আছে ।
নেহা ব্যাপার টা খেয়াল করে নিশাত কে কথার জালে ফাসাচ্ছে কিন্ত নেহা বার্থ । নিশাত শুধু হা না উত্তর দিচ্ছে
নেহা এবার বিরক্তি হয়ে বলে
_” তুই কি ভাইয়া কে ভালবেসে ফেলেছিস?
এর উত্তর নেহা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে তবুও নিশাত কে বাজিয়ে দেখতে চাইছে।
নেহার কথায় নিশাত ভাবতে থাকে । সত্যি কি ভালোবাসা নাকি অভ্যাস ।
চলবে
( সারারাত জেগে অ্যাসাইনমেন্ট করতে ভালো লাগছে না । আর কাল দেরি করে গল্প দেবো । স্কুলে গিয়ে নতুন অ্যাসাইনমেন্ট আনতে হবে আর এই ভালো দিতে হবে । বহুত প্যারায় আছি ব্রো কেমন হইছে জানাবেন। গঠনমূলক কমেন্ট না আসলে কালকে গল্প দেবো না )