পর্ব ২৩
নীলাক্ষীর চক্ষু রক্তবর্ণ, গাল ফোলা ফোলা। মুখ দেখেই মনেহয় অনেক কান্নাকাটি করেছে। অম্লানের মনটা আবার এখন ভীষণ ভালো। ঘরে ঢুকে নীলাক্ষীকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘এসব বিষয় নিয়ে মন খারাপ করতে আছে পাগলী? এখানে তো দোষটা আমার। তাও আমার নিজেকে দোষী মনে হয় না। ভালোবাসা কি কোনো দোষ তুমি বলো?’
নীলাক্ষী বিষন্ন মুখে শুয়ে পড়ে। পিঠের ওপর এলিয়ে দেয় ঝলমলে চুল। অম্লান একহাতে ওকে টানতে টানতে বললো, ‘কি গো ভাত খেয়ে এসেই শুয়ে পড়লে যে? তুমি না আমাকে বলো খাওয়ার পর শুতে নেই?’
নীলাক্ষী তবুও ওপাশ ফিরে শুয়ে থাকে। অম্লান চুপচাপ বসে ভাবে কি করা যায়। তারপর সেও নীলাক্ষীর পাশে শুয়ে পড়ে। ফ্যালফ্যাল করে নীলুর ডাগর ডাগর চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকে। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে শীতকালীন রোদের মতো মিষ্টি হাসির ঝিলিক। নীলাক্ষী বেশিক্ষণ মন খারাপ করে থাকতে পারলো না। ফিক করে হেসে ফেললো।
বাদামী সংসার
মিশু মনি
অম্লানের নিত্যদিনের অভ্যেস হয়ে গেলো বাসায় ঢুকেই আগে মায়ের ঘরে যাওয়া। মা’র সাথে হাসিমুখে দু চারখানা কথা বলে তারপর অম্লান নিজের ঘরে ঢোকে। এভাবেই গড়াচ্ছিলো সময়। নীলাক্ষীর শ্রান্তিহীন যত্নে তার মনে জমাট বাঁধা কষ্টের স্মৃতিগুলো অনেকটাই ঝাপসা হয়ে এসেছে। অম্লান মনেমনে ভাবে এজন্যই গুরুজনরা বলেন, ছেলেমেয়েরা মনে আঘাত পেলে বিবাহের ব্যবস্থা করো। নতুন মানুষ পেলে সব দুঃখ ভুলতে পারবে।
নীলাক্ষী আলমারি খুলে জামাকাপড় গোছাতে ব্যস্ত। অম্লান শব্দহীন পায়ে পেছনে এসে দাঁড়ালো, ‘কি করছো নীলু?’
– ‘ জামা কাপড় গোছাচ্ছি।’
– ‘কোথাও যাবা?’
– ‘না।’
– ‘তাহলে আর গুছিয়ে কাজ নেই।’
– ‘উহু, কাজের সময় বিরক্ত কোরো না তো।’
অম্লান বিরক্ত করা বন্ধ করে দিয়ে বিছানার ওপর এসে বসে। নীলাক্ষীর ব্যস্ততা উপভোগ করতে থাকে। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ত রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে জীবন হয়ে উঠেছে পানসে। অনেকটা বৃক্ষহীন শুকনো মরুভূমির মতো। আজকাল কাজের চাপ দ্বিগুণ। কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার পর ক্লান্তিতে চোখে ঘুম নেমে আসে। নীলাক্ষীও ক্লান্ত হয়ে ফেরে বলে প্রেমের আলাপন খুব একটা জমে না। এরই মাঝে যা টুকটাক কথা হয়, তাই দিয়ে মন ভরে না অম্লানের। প্রেম এমন এক মিশ্রণ, যাতে একটা উপাদান কম হলেই আর সহ্য হয়না।
নীলাক্ষী সব কাপড় গোছানো শেষ করে অম্লানের শার্ট, প্যান্ট নিয়ে চললো ইস্ত্রি করতে। অম্লান বললো, ‘যাচ্ছো কোথায়?’
– ‘এগুলো ইস্ত্রি করে রাখি। সকালে কি পরে অফিস যাবা?’
– ‘আমার ওসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’
– ‘মাথাব্যথা থাকা দরকার।’
অম্লান নীলাক্ষীর পিছুপিছু আসতে আসতে বললো, ‘তুমি ইদানীং বউ বউ হয়ে যাচ্ছো। শাসন শিখেছো, রাগ দেখানো শিখেছো। কত কাজ বেড়েছে তোমার। অথচ আগে এসবের কিছুই বুঝতে না। সেই ভালো ছিলো মনে হচ্ছে।’
নীলাক্ষী রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে উত্তর দিলো, ‘সময়ের সাথে সাথে কতকিছু বুঝতে হয়। তুমি ঘরে থাকো। আমি ইস্ত্রি করে এক্ষুণি আসছি।’
– ‘আমিও যাই তোমার সাথে। লিভিংরুমে বসে থাকবো।’
– ‘দরকার নেই। তুমি প্রেম ভালো পারো এটা মানুষকে দেখাতে হবে না। প্রেমটা ঘরের ভেতর নিজের বউয়ের জন্য রাখো। বাইরে কাউকে দেখিয়ে লাভ নেই। বুঝলে?’
অম্লান বাক্য ব্যয় না করে ফিরে যায় ঘরের দিকে। নীলাক্ষী জামাকাপড় ইস্ত্রি করে ফিরে এলো। ড্রেসিং টেবিলের ওপর টুকিটাকি জিনিসপত্র গুলো এখন গোছাতে হবে। অম্লান বিরক্তির সুরে বললো, ‘আমি ঘুমিয়ে গেলে দেখবো কে তোমার সাথে কথা বলে।’
‘ঘুমাও।’
অম্লান বালিশে মাথা রেখে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইলো। নীলাক্ষী কাজে ব্যস্ত। ঠুকঠুক শব্দ নির্জনতা ভেঙে দিচ্ছে। অম্লান বললো, ‘বিয়ের তো অনেকদিন হয়ে গেলো।’
– ‘হ্যাঁ তো?’
– ‘একটা দিন ছুটি নিবা?’
– ‘কি জন্য?’
– ‘আমিও নেবো। বৃহস্পতিবারে ছুটি নিই চলো। তারপর একদিনের জন্য কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি।’
– ‘হঠাৎ?’
অম্লান বিরক্ত হয়ে উঠলো। উত্তর না দিয়ে চুপ করে শুয়ে থাকে। মেয়েরা বিয়ের পর যতই সময় এগোতে থাকে, ধীরেধীরে ততোই সাংসারিক হয় তো বটেই, পাশাপাশি আর সব মহিলাদের মতো প্রেমে উদাসীন হয়ে যায়। অথচ তারাই তাদের যৌবনকালে ছিলো হাস্যোজ্জ্বল, রোমান্টিক আর উচ্ছল। অম্লান কিছু না বলে মাথার পেছনে একটা হাত রেখে চুপ করে শুয়ে থাকে।
নীলাক্ষী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘বড় আপা অনেকদিন থেকে ডাকছে। আমি বাড়িতে যাইনা কতদিন। কোনো এক শুক্রবারে হয় আমাদের বাড়ি চলো নয়তো আপার বাসায় চলো। ছুটি নিয়ে অযথা ঘুরতে গিয়ে লাভ কি বলো?’
অম্লান একটা নিশ্বাস ফেলে বললো, ‘তুমি অনেকদিন বাড়ি যাও না। আগামী শুক্রবারে তোমাদের বাড়ি থেকেই ঘুরে আসি চলো। আব্বা আম্মা নিশ্চয় তোমাকে অনেক মিস করে।’
নীলাক্ষীর মুখখানা মুহুর্তেই বাবার বাড়ি যাওয়ার উচ্ছ্বাসে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। প্রদীপের আলোর ন্যায় জ্বলজ্বল করতে লাগলো। চোখে প্রেমময় আভাসের স্পর্শ। লাজুক হাসি ভরা মুখে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু এতে অম্লানের মনে একটুও প্রভাব ফেলতে পারলো না। অম্লান চেয়েছিলো একান্তই নীলাক্ষীকে নিয়ে সময় কাটাতে। বাবার বাড়ি যাবে অবশ্যই। কিন্তু এত কম সময় কাছে পেয়ে, এত অল্প ভালোবাসায় তার মন শান্ত হয় না, এ কথা কি করে বোঝাবে তাকে? অম্লান আর কথা বলে না, পাশ ফিরে শোয়। মনেমনে বলে, সব মেয়েরই একই বাতিক, বাবার বাড়ি আর বাবার বাড়ি। আর কি যাওয়ার জায়গা নেই নাকি? দেশে কত ট্যুরিস্ট স্পট, পার্ক, কত রেস্টুরেন্ট। সবসময় কেন অম্লানকেই বলতে হবে, চলো কোথাও যাই। সেও তো নিজে থেকে বলতে পারে, নাকি? কখনো তো ভুল করেও বললো না আসো একদিন সিনেমা দেখতে যাই। অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয় অম্লানের মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।
রাত বেড়ে গেলো, কভু ঘুম নেই চোখে। অনেক্ষণ জেগে থাকতে থাকতে অম্লান বিছানা ছেড়ে উঠে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। স্বামী স্ত্রী’র সম্পর্কটা খুব অদ্ভুতুড়ে। ছোট ছোট ব্যাপারেও মন ভালো হয়ে যায় আবার সামান্যতেই মনটা খারাপও হয়ে যায়।
অম্লান সিগারেট ধরায়। দূর থেকে দু একটা কুকুরের ঘেউঘেউ শব্দ ভেসে আসছে। হঠাৎ বেলকনিতে নীলাক্ষীর পায়ের শব্দ শুনে সিগারেট ফেলে দেয় অম্লান। নীলাক্ষী পাশে এসে দাঁড়ায়, ‘সিগারেট ফেলে দিলা কেন?’
অম্লান ভয় ভয় চোখে তাকায় নীলাক্ষীর দিকে। নীলাক্ষীর মুখ কঠিন। বললো, ‘কুড়িয়ে নাও, নিয়ে টানো।’
– ‘নাহ থাক।’
– ‘আরে নাও না। সমস্যা নেই। সিগারেট আড়ালে খেলেও তোমার ক্ষতি, সামনে খেলেও তোমারই ক্ষতি। আমার তো এতে লাভ লোকসানের কিছু নেই। অযথা আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখে লাভ কি বলো?’
অম্লান ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। মৃদু স্বরে বললো, ‘তোমার খারাপ লাগতে পারে, তাই।’
– ‘আমার তো কতকিছুই খারাপ লাগতে পারে।’
– ‘যেমন?’
– ‘কিছু না। আমি বৃহস্পতিবার ছুটি নিবো। কোথায় নাকি যাবা। তুমিও নিও।’
অম্লান কি বলবে বুঝতে পারে না। নিরুত্তর মুখে ভাষাহীন চোখে তাকিয়ে থাকে। তবে ভাষাহীন চোখ দুটো ধীরেধীরে একটা কিছু বলতে চায়। সম্ভবত, হাসিটাকে জোর করে চেপে রাখার বৃথা করছে। নীলাক্ষী জোরে একটা ঝাড়ি দিয়ে বললো, ‘হাসো।’
প্রথমে ভয় পেলেও পরে বিষয়টা বুঝতে পেরে হো হো করে হেসে উঠলো অম্লান। নীলাক্ষী অম্লানের বুকে মাথা রেখে গভীর আলিঙ্গনে আষ্ঠেপৃষ্ঠে রাখে ওকে।
.
অভিজাত কক্ষ। নরম বিছানা। মাখনের মত মসৃণ চাদর। কোমল বালিশে শুয়ে মনটা বেশ উড়ুউড়ু করছে প্রফুল্ল’র। গাজীপুরের একটা রিসোর্টে বান্ধবী রোদেলাকে সাথে নিয়ে বেড়াতে এসেছে। রিসোর্টে বিশেষ ডিসকাউন্ট চলছে। রোদেলাও বেশ কয়েকদিন ধরে বলছিলো নিজেকে সময় দেয়ার জন্য দু একদিন কোনো রিসোর্টে ঘুরে আসা দরকার। নরম বিছানায় শুয়ে প্রফুল্ল’র কেবলই মন আনচান করছে। মানব মন, বড়ই বিচিত্র কি না। এর মতিগতি বোঝা দায়।
মোবাইলের ডায়াল লিস্ট থেকে প্রফুল্ল সেই আগন্তুকের নাম্বার বের করে কল দেয়। আজকে একবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে ভেসে এলো একটা মসৃণ গলা, ‘হ্যালো।’
প্রফুল্ল গলা খাকাড়ি দিয়ে বললো, ‘মিস্টার অমুক বলবো?’
– ‘হা হা হা। জি বলতে পারেন। কেমন আছেন?’
প্রফুল্ল উত্তর দিলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’
– ‘আলহামদুলিল্লাহ?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘উমম। আপনার বয়ফ্রেন্ড মুসলিম ছিলো তাইনা?’
– ‘হুম। এখনও আছে।’
– ‘বয়ফ্রেন্ড এখনও আছে?’
– ‘নাহ। সে এখনও মুসলিম আছে। আমার বয়ফ্রেন্ড থাকলে কি আমি আপনাকে কল দিতাম?’
– ‘হা হা হা। বয়ফ্রেন্ড শূন্যতায় ভুগছেন, আমি কি প্রক্সি দিবো?’
– ‘নাহ। মন উড়ুউড়ু করছে তো। তাই কল দিলাম।’
– ‘খুব ভালো। তা, কেন উড়ুউড়ু করছে? আজ তো রেইনি ডে নয়, উইন্টারও নয়।’
প্রফুল্ল বিছানা ছেড়ে উঠে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো, ‘রিসোর্টে এসেছি।’
– ‘ওহ, এই ব্যাপার! খুব ভালো। আমিও বেশ কয়েকদিন ধরে ভাবছি কোথাও যাই। রিল্যাক্স দরকার।’
– ‘তাই? চলে আসুন না, ভাওয়ালে আছি। অসম্ভব সুন্দর একটা রিসোর্ট।’
– ‘তাই? এখনই চলে আসবো?’
আগন্তুকের গলা মধুমিশ্রিত। সাথে হালকা দুষ্টুমির মিশ্রণ। প্রফুল্ল হন্তদন্ত হয়ে বললো, ‘আরে, আপনি দুষ্টু আছেন দেখি। আমি বলতে চাইলাম ভাওয়ালে ঘুরে যেতে পারেন।’
– ‘ওহ আচ্ছা আচ্ছা। সরি, বোঝার ভুল হয়েছে। তো, আপনি কয়দিনের অবকাশে গেছেন?’
– ‘শনিবার সকালে চলে যাবো।’
– ‘কাল তো শুক্রবার। কাল অবশ্য আমার কাজ নেই।’
– ‘তো চলে আসুন না। আগন্তুকের চেহারা অন্তত দেখতে পারবো।’
– ‘চেহারা দেখার জন্য এত ইন্টারেস্ট?’
– ‘কেন নয়?’
– ‘তাহলে তো আসতেই হয়।’
– ‘সত্যি আসবেন?’
– ‘হ্যাঁ৷ সত্যি আসবো। আমি আগে দেখি রুম পাওয়া যায় কিনা। বুকিং দিয়ে তারপর আপনাকে ফোন দিচ্ছি। ওকে?’
– ‘ওকে।’
ছেলেটা কল কেটে দিলো। প্রফুল্ল মোবাইল হাতে নিয়ে পায়চারি করতে লাগলো বারান্দায়। গুণগুণ করে গাইতে লাগলো একটা দারুণ প্রেমের গান। হঠাৎ দূরে একটা ছেলের মুখ দেখে চমকে উঠলো রীতিমতো। অন্ধকার রাত। দূরে একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে মুহুর্তের জন্য একটা মুখ দেখা গেলো। ছেলেটা দেখতে অম্লানের মতো। অম্লান নিশ্চয় নয়। এই ছেলেটা বেশ মোটা। অম্লান তো শুকনা। তবে চেহারায় বেশ মিল। একটা ছোট নিশ্বাস ফেলে বারান্দায় রাখা ইজি চেয়ারে এসে বসে প্রফুল্ল।
মোবাইল বেজে উঠলো। প্রফুল্ল রিসিভ করে বললো, ‘হ্যালো।’
– ‘রুম বুকিং দিয়ে ফেলেছি।’
– ‘অনেক ফাস্ট আপনি।’
– ‘তা বলতে পারেন। আমি অনেক দ্বিধাহীন একটা মানুষ।’
প্রফুল্ল কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বললো, ‘আপনি দ্বিধাহীন?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘আপনি কি জানেন দ্বিধাহীন শব্দের প্রতিশব্দ কি?’
– ‘কি?’
– ‘প্রফুল্ল।’
– ‘মাই গড! সিরিয়াসলি?’
প্রফুল্ল নির্বিকার চিত্তে উত্তর দিলো, ‘হুম। আরও একটা মজার বিষয় কি জানেন?’
– ‘কি?’
– ‘প্রফুল্ল, দ্বিধাহীন এই দুটো শব্দের আরেকটা প্রতিশব্দ হচ্ছে অম্লান। ওটা আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের নাম ছিলো।’
ছেলেটা অনেক্ষণ সম্ভবত আশ্চর্য হওয়ার দরুণ কথা বলতে পারলো না। অনেক্ষণ পর হাসতে হাসতে বললো, ‘কি অদ্ভুত ব্যাপার।’
– ‘হ্যাঁ। আরেকটা সামান্য মজা যোগ করি?’
– ‘শিওর?’
– ‘একটু আগে অম্লানের মতো দেখতে একটা ছেলেকে দেখলাম। আমিতো শুরুতে ভেবেছিলাম ওটা অম্লানই।’
– ‘হা হা হা। হলে অবশ্য খারাপ হতো না। যদিও তাহলে আজ রাতে আর আপনার সাথে আমার ফোনালাপ হতো না, আর কালকে দেখাসাক্ষাৎ টাও হয়তো অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতো।’
প্রফুল্ল একটা নিশ্বাস ফেলে বললো, ‘বাদ দিন তো ওর কথা। বিয়েশাদি করে খুব সুখে আছে। ওকে দেখে আবারও আমি নস্টালজিক হয়ে সীমাহীন দুঃখে ভেসে যাবো এটা ভেবে বসবেন না।’
– ‘সেটা আমি এমনিতেও ভেবে বসবো না। আর ভাবলেও আমি জানি আপনি কি করতে পারবেন।’
– ‘হুহ। তাহলে কাল কখন রওনা দেবেন?’
– ‘সকালেই। হোটেলে চেক ইন করে একটা ঘুম দিবো।’
– ‘তারমানে ঘুম থেকে ওঠার পর আমার সাথে দেখা করবেন?’
ছেলেটা হাসতে হাসতে বললো, ‘আপনি চাইলে আমাকে রিসিভ করার জন্য রিসিপশনে অপেক্ষা করতে পারেন। হা হা হা।’
প্রফুল্ল হেসে পালটা উত্তর দিলো, ‘একটা কড়া ধন্যবাদ দেয়ার জন্য আমি এটুকু করতেই পারি।’
– ‘উহু, ধন্যবাদ টন্যবাদ নয়। ফর্মালিটি বাদ দিন।’
– ‘দিলাম। তাহলে আপনি সকালেই রওনা দিন। একসাথে দুপুরে খাবো।’
– ‘শাড়ি পরে ভাত খেতে পারেন?’
– ‘এটা কেমন প্রশ্ন?’
– ‘ইনডিরেক্টলি শাড়ি পরতে বললাম আরকি। হা হা হা।’
ছেলেটা এত সুন্দর করে হাসছে যে প্রফুল্ল না হেসে থাকতে পারলো না। দরজায় দাঁড়িয়ে রোদেলা অবাক হয়ে দেখছে প্রফুল্ল’র হাসি। কতদিন পর প্রিয় বান্ধবীএ এই সুন্দর হাসিটা দেখছে সে। প্রফুল্ল যেন সবসময় এরকম হাসিখুশিই থাকে।
চলবে..