আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_২২
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||
নিশাত রান্না করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। হটাৎ ঘাড়ে কারোর ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে নিশাত চমকে যায় । পরক্ষনেই বুঝতে পারে এটা আর কেউ না তার #আড়ালে_ভালোবাসা । নিশাত কেপে কেপে উঠছে ।
আরহান নিশাতের পেটের কাছে হাত দিয়ে ঘুরাচ্ছে আর ঘাড়ে ঠোঁট ছোঁয়াচে। নিশাত আরহানের পেটে কনুই দিয়ে ধাক্কা মারে। আরহান বিরক্ত হয়ে বলে
_” কি এই সব ? মুড নষ্ট করে দিলে
_” আরে আরে একটু তেই রাগ আমার শর্তে কিন্ত এটা লিখা ছিলো
_” তাই না
_” তবে আর একটা শর্ত অ্যাড করতে চাই
_” কি সেটা ?
_” এই যে আমার হাসব্যান্ড আমাকে নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াবে
_” ওকে মাই লাভ
নিশাত কে কোলে তুলে টেবিলের উপর বসিয়ে দেয়। নিশাত আপেল খেতে খেতে বলে
_” দেখা যাক কেমন রান্না করতে পারে আমার মিস্টার হাসব্যান্ড
_” যদি আমি জিতে যাই তাহলে তুমি প্রতিদিন আমাকে নিজে থেকে কিস দেবে রাজি ?
নিশাত একটু ভেবে বলে
_” ওকে ডান । দেখা যাক কিসের জন্য মিস্টার হাসব্যান্ড কি কি করতে পারে
_” নিশা পাখি কি জানে ? তার প্রেমের শহরে ডুবে গেছি পাগল প্রেমিক হয়ে। তাকে পাওয়ার জন্য মরতেও পারি
_” বাহ মেরি হাসব্যান্ড what a dailouge কিন্ত আপনার যে খাবার পুড়ে যাচ্ছে সেটা দেখছেন
আরহান খেয়াল করে দেখে সত্যি নিশাত যে তরকারি করেছিল সেটা পুড়ে গেছে । আরহান তাড়াতাড়ি করে নামিয়ে নেয়
_” না হেসে বল কি খাবে ?
_” যেটা আমার হাসব্যান্ড খাওয়াবে
_” তোমার তো বিরিয়ানি খুব পছন্দ । ওটাই করবো
আরহান ইউটিউব দেখে সব করছে আর নিশাত আরহান কে দেখতে ব্যাস্ত । এই দেখার যেনো কোনো শেষ নেই । মনে হয় সব সময় এভাবে দেখতে পারতো
আরহানের রান্না শেষ হলে আরহান নিশাত কে বসিয়ে খাইয়ে দেয় । আরহান ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন হইছে ?
নিশাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে গালে একটা ভালোবাসা দিয়ে বলে
_” বাহ আপনার হাতে তো জাদু আছে । প্রথম দিনে এত ভালো রান্না বাহ
_” প্রথম দিন না। ছোট থাকতে আমি আব্বু আর ও রান্না করতাম
_” ও টা কে ? (ভ্রু কুচকে )
_” তুমি তো খেলে এখন আমি খাবো খুব খুদা লাগছে । খাইয়ে দিবে নাকি
_” ওরে বাবা দিচ্ছি
নিশাত আরহান কে খাইয়ে দেয়।
বিকালে
নিশাতের শাশুড়ি আসে। আমজাদ হাবিব কে সালাম মিসেস সালেহা বেগম কে সালাম করে ।
সালেহা বেগম নিশাত কে উনার রুমে ডাকে । নিশাত যেয়ে ডাক দেয়
_” আম্মু আসবো ?
সালেহা বেগম ভিতরে আসতে বললো। নিশাত ভিতরে এসে দেখছে । সালেহা বেগম নিশাতের হাত ধরে বল
_” কোনটা পছন্দ ?
নিশাত কিছু বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকে । নিশাত কে চুপ থাকতে দেখে সালেহা বেগম বলে
_” বলো কোনটা পছন্দ ? দেখ তোমাকে আমি প্রথমে মেনে নিতে পারিনি কারণ আমি আমার ছেলেকে জানি সে কাউকে বিয়ে করে সংসার করবে সেটা আমার মনে হয়নি কিন্ত এত দিন এক সাথে আছো আমার ছেলেটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে তাই শাশুড়ি হিসেবে আমার কিছু দায়িত্ব আছে।
নিশাত মাথা নিচু করে বলে
_” এই গুলোর কোনো দরকার নেই আম্মু । আপনাদের ভালোবাসা থাকলে আমরা খুশি আর আরহান আমাকে এই এক বছরে অনেক কিছু দিয়েছে
_” টা বললে ত হয় না । তুমি আমার বাড়ির বউ তোমাকে ত কিছু দিতেই হয়
নিশাত আর কিছু বললো না । আরহানের আম্মু নিশাতের হাতে কিছু গহনা দেয় । নিশাত সেইগুলো মাথা নিচু করে নিয়ে ঘরে যায় ।
আরহান বসে গেম খেলছে। নিশাত কে আসতে দেখে মুচকি হাসে । ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে
_” হাতে ওইগুলো কি ??
_” আম্মু কিছু গহনা দিয়েছে সেইগুলো
আরহান ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে বলে।
_” তোমার গহনা পড়তে ভালো লাগে ?
_” তেমন একটা না ।
আরহান বিছনায় বসে মাথা নিচু করে বলে
_” মিথ্যা কেনো বলছো ? সব মেয়েরা সাজতে ভালোবাসে সেটা আমি জানি কিন্ত আমি এমন এক স্বামী যে আজ পযর্ন্ত তোমাকে কোনো সোনার কিছু দিতে পারলাম না ।
নিশাত গহনা গুলো রেখে আরহানের পাশে বসে কাধে মাথা রেখে বলে
_” তুমি আমাকে যা দিয়েছ কয়জন স্বামী দেয়। এই যে রোজ ফুল নিয়ে আসো এত এত সম্মান দিয়েছ । আমি বারণ করার পরও ইস্যুর খরচ দিচ্ছাও। আর সব থেকে ইম্পর্ট্যান্ট এত এত ভালোবাসা দাও
আরহান সোজা হয়ে নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
_” দামী দামী গিফ্ট তো দিতে পারি না
_” যা দিয়েছেন এটাই অনেক ।আমার ওইসব গহনা ভালো লাগে না । লাগল তো তোমাকে বলতাম । তুমি আল্লাহ দেওয়া বেস্ট গিফট আর কি চাই
নিশাত চট করে আরহানের গালে চুমু দিয়ে বসে ।আরহান বাকা হেসে বলে
_” আমি কিন্ত কারোর ঋণ রাখি না
নিশাত বুঝে যায় আরহান কি বলছে । আরহান নিশাতের পিঠে হাত দিয়ে নিজের আরো কিছু নিয়ে আসে । দুইজনের মধ্যে ২ইঞ্চি ফাঁক ।
নিশাত আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। অনেকক্ষণ পর যখন আরহানের কোনো রেসপন্স পায় না তখন
নিশাত চোখ খুলে দেখে । আরহান মিটমিট করে হাসছে
_” কি হলো ?
_” আমার ছোঁয়া যে তোমার এত ভালো লাগে সেটা আগে বললে হতো ।তাহলে এত দিন দূরে রাখতাম না
নিশাত লজ্জা পেয়ে চলে যেতে গেলে আরহান হাত ধরে ফেলে
_” ছাড়ো বাইরে যাবো
_” টা তো হচ্ছে না নিজে থেকে যখন আমার কাছে আসছো এখন তো ছাড়াছাড়ি হবে না ।
নিশাত কিছু বলতে পারছে না ওর নিশাত ঘনঘন হয়ে আসছে । আরহান নিশাতের হাতে চুমু খেতে থাকে । নিশাত চোখ বন্ধ করে সবটা অনুভব করছে । আরহান নিশাতের কানে কানে বলে
_” ভালোবাসি নিশা খুব ভালোবাসি তোমায়
নিশাত কে শেষ করার জন্য এই টুকুই যথেষ্ট।নিশাত কিছু বলার আগেই হটাৎ কাশির আওয়াজ আসে
নিশাত চোখ খুলে দেখে ঈশা দাড়িয়ে আছে। আরহান নিশাত দুইজনের দূরে সরে যায় ।
ঈশা হেসে বলে
_” সরি ডিস্টার্ব করার জন্য কিন্ত আপু আমার খুব খুদা লাগছে কিছু খেতে দে
নিশাত নিজেকে ঠিক করে বলে
_” এই তো দিচ্ছি দাড়া
নিশাত একবার আরহান এর দিকে তাকিয়ে ঈশা নিয়ে বাইরে যায় ।
বেশ কিছু দিন পর নিশাত নেহার সাথে একটা শপিংমলে আসছে । নিশাত আসছে না কিন্ত নেহা ও নাছোড়বান্দা ছাড়বে না । বাধ্য হয়ে নিশাত কে আসতে হয়। নেহা আর নিশাত শপিং শেষে বের হতেই নিশাতের চোখ সামনে গিয়ে আটকে যায় ।
রাস্তার ওই পাশে আরহান আর ঈশা একটা হোটেল থেকে বের হচ্ছে । নিশাত খুশি হয়ে ডাকতে গেলে খেয়াল করে দেখে ওরা একটা আবাসিক হোটেল থেকে বের হচ্ছে ।
ওদের দুইজনকে এই হোটেলে নিশাত আশা করেনি। নেহা কে বুঝতে না দিয়ে নিশাত নেহার সাথে চলে যায় ।
বাসায় গিয়ে দেখে ঈশা,আরহান দুইজনে আছে । নিশাত অবাক হবার ভান করে বলে
_” তুমি এই সময়ে ?
নিশাত এর কথায় যেনো আরহান আর ঈশা আকাশ থেকে পড়লো । আরহান মেকি হাসি দিয়ে বলে
_” আজ ভাবলাম ফ্যামিলির সাথে বসে খাবার খাবো তাই ছুটি নিয়ে চলে আসলাম
_” আর তুই কোথায় গিয়েছিলি ? (ঈশার দিকে তাকিয়ে )
ঈশা আরহানের দিকে তাকাও । ঈশা কাপাকাপা কণ্ঠে বলে
_” আপু তোকে ত বলেছিলাম যে আমি নোটস নিতে যাচ্ছি আর
ঈশা কে বাকিটা বলতে না দিয়ে আরহান বলে
_” তুমি কি আমাদের জেরা করবে? কখন এসেছি খুব খুদা লাগছে
নিশাত দুইজনের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। আরহান ও পিছন পিছন গেলো।
রাতে
আরহান কাজ করছে আর নিশাত আরহানকে দেখছে
_” আচ্ছা আরহান আমার কাছে মিথ্যে বললো কেনো ? নাকি আমি বুঝতে ভুল করছি । না না এই সব কি ভাবছি আরহান এমন না আর ও ঈশা কে নিজের বোনের মতো দেখে । আমি একটু বেশি ভাবছি (মনে মনে )
নিশাত এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে ।
মাঝ রাতে হটাৎ একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে নিশাত লাফ দিয়ে উঠে পড়ে । সাড়া শরীর কপিয়ে উঠছে
_” আমি এমন স্বপ্ন কেনো দেখলাম ? পানি পানি
নিশাত পাশে পানির জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নেয় । এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পর নিশাতের খেয়াল হয় আরহানের কথা । পাশে তাকিয়ে দেখে নেই । বারান্দায় ও নেই
_” এত রাতে কোথায় গেলো ?
নিশাত দরজা খুলে বাইরে আসে। ঈশার রুমের দিকে চোখ পড়তে দেখে আলো জ্বলছে ।
নিশাত এর মনে খটকা হয় ।কোনো কিছু না ভেবে ঈশার রুমে ঢুকতে গেলে বুঝতে পারে দরজা বন্ধ।
নিশাত ওখানেই দাড়িয়ে থাকে হটাৎ ঈশার কান্নার আওয়াজ পায় । নিশাত ডাকতে গেলে একটা কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় ।
আরহান বলছে
_” ইসু প্লীজ ঠান্ডা হও। কিছু হবে না কেউ জানতে পারবে না আমি তোমাকে প্রমিজ করছি কিছু হবে না ।
ঈশা কান্না করছে আর আরহান ঈশা কে সামলাচ্ছে । নিশাত আর শুনতে পারে না দৌড়ে নিজের ঘরে চলে আসে ।
বালিশের মুখ গুঁজে কান্না করছে। কিছুক্ষণ পর নিশাত বুঝতে পারে আরহান আসছে । নিশাত ঘুমের ভান ধরে থাকে ।
আরহান ঘরে এসে বাথরুমে যায় । ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ে । নিশাত কোনো টু শব্দ করে না
পরের দিন সকালে
সবাই খাবার টেবিলে বসে আছে । নিশাত ঈশার দিকে খেয়াল করে দেখে ঈশার চোখ ফুলা। নিশাত কিছু বলতে গিয়েও বললো না
আরহান অফিসে যেতেই নিশাত ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পরে ।
রাস্তায় আনমনে হাটছে কালকের রাতের ব্যাপারটা নিশাত কিছুতে মেনে নিতে পারছে না। এক মনে হচ্ছে নিশাতের ভুল। আরেক মনে হচ্ছে আরহান ভুল । দটনায় পড়ে গেছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না কাউকে বলতেও পারছে না ।
হটাৎ নিজের নাম ধরে ডাকায় পিছনে ফিরে তাকায় নিশাত । সামনে ব্যাক্তিটি নিশাতের দিকে এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বলে
_” কেমন আছো নিশাত ? আরহান কেমন আছে ?
নিশাত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ।
চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হইছে জানাবেন )