আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_২৪
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||
_” তোমার ঐ নোংরা হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করবে না। দূরে যাও আমার থেকে দূরে যাও
নিশাত পিছিয়ে যায়। নিশাত কে পিছিয়ে যেতে দেখে আরহান এগিয়ে আসতে আসতে বলে
_” নিশা পাখি প্লীজ পিছিয়ে যেয়ো না পড়ে যাবে। কি হইছে আমাকে বলো।আমি কিছু ভুল করছি ? আমাকে বলো।আমি সব ঠিক করে দেবো
_” আমার কাছে আসলে কিন্ত আমি এখান থেকে ঝাঁপ দেবো।তুমি কিন্ত আমাকে খুঁজে পাবে না।এগিয়ে আসবে না বলে দিলাম
আরহান ওখানেই দাড়িয়ে যায় ছলছল চোখে নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে । নিশাতের চোখে ও পানি। কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলে গেছে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে তবু ও বলছে
_” কি ক্ষতি করেছে আমার বোন তোমার সাথে? কি ক্ষতি করেছে বলো? কেনো এমন করলে? আমার বেচে থাকার শেষ সম্বল টুকু তুমি কেরে নিতে চাও কেনো?
নিশাত দুইকানে হাত দিয়ে চিৎকার করে কথাগুলো বলে।আরহান অবাক হয়ে প্রশ্ন করে
_” আমি ঈশার ক্ষতি করেছি ?
_” হা হা তুমি। তোমার জন্য আজ আমার বোনের এই অবস্থা কেনো করলে ? কেনো?
_” নিশা তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।আমি ঈশার ক্ষতি কেনো করবো ? ঈশা তো আমারও বোন ওকে কত
_” মিথ্যে সব মিথ্যে।তোমাদের দুইজনকে সেদিন আমি হোটেল থেকে বের হতে দেখেছিলাম।তুমি ঈশার রুমে গিয়েও ওকে কি সব বলছিলে
আরহান এখন মাথায় হাত দিয়ে দাড়ায়। আশে পাশে মানুষের সব নিজেদের কাজ করছে। এখানে কি হচ্ছে সেই সব নিয়ে ওদের মাথা ব্যাথা না।
_” নিশা তুমি আমাকে ভুল বুঝছ আমি তোমাকে বলছি সব বলছি
আরহান নিশাতের দুই বাহু ধরে বলে। নিশাত এক ঝটকায় হাত সরিয়ে চিৎকার করে বলে
_” ছুবে না তুমি আমায়।ঘৃনা করি আমি তোমাকে শুনতে পাচ্ছো ঘৃনা করি।আমি ভাবতেও পারিনি তুমি আমার ভালোবাসার এইভাবে সুযোগ নিবে।আমার জন্য আজ আমার ছোট বোনরে এই অবস্থা
আরহান নিশাতকে জড়িয়ে ধরে।নিশাত ছাড়াবার জন্য চেষ্টা করছে
_” নিশা পাখি প্লীজ এমন বলো না।প্রিয় মানুষের মুখে ঘৃনার কথা শুনার চেয়ে মরণ ভালো। আমি মরে যাবো নিশা এমন কথা বলো না
নিশাত নিজেকে ছাড়িয়ে আরহানের কলার ধরে বলে
_” কেনো এমন করলে? কি লাভ পেয়েছো? এতটা নিখুত অভিনয় কি করে পারলে? উফফ আমার সব অসহ্য লাগছে
_” নিশা পাখি আমি তোমাকে সব বলছি। আমার কথা একটু শুনো একটু শুনো
_” না তুমি এখন আমাকে কি বলবে? আমার বোনের কিছু হলে আমি তোমাকে কখনো মাপ করবো না কখনো না
আরহান নিশাতকে বুঝানোর চেষ্টা করছে নিশাত নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।দুইজন ব্রিজের কিনারায় চলে গেছে। এক পর্যায়ে আরহান ব্রিজ থেকে পড়ে যেয়ে রেলিং ধরতে গেলে নিশাত আরহানের হাত ধরে ।
আরহান মুচকি হেসে হাত আলগা করতে গেলে নিশাত বলে
_” কি করছো? পাগল হলে নাকি? পড়ে যাবে তো।আমার হাত ছেড় না।কেউ আছেন প্লীজ হেল্প
নিশাত চিৎকার করে সবাইকে ডাকছে। নিশাতের চিৎকারে আশে পাশে লোক নিজের কাজ রেখে ছুটে আসে।লোকগুলো আরহানকে ধরার আগে
আরহান মুচকি হেসে বলে
_” তুমি চাইলেও আমাকে ঘৃনা করতে পারবে না।ভেবে ও না ছেড়ে যাচ্ছি।আমার থেকে তোমার মুক্তি নেই কিছুতেই না।তুমি আমার উপন্যাসের অলিখিত পাতা যাকে আড়ালে রেখে জীবনের আসল মানে উপভোগ করতে চাই।
কথাটা বলে আরহান নিশাতের হাতে কিস করে।হাত ছেড়ে দেয়। আস্তে আস্তে নিচে অতল পানিতে তলিয়ে যায়
_” আরহানননননন
নিশাত চিৎকার করে সেইখানে ঢুলে পড়ে। আশে পাশে সবাই নিশাতের দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ কেউ ভিডিও করছে ।
তিনদিন
নিশাত এর সেন্স ফিরতেই পাগলামি শুরু করে। হাতে ক্যানাল লাগানোর।চিৎকার করে আরহানকে ডাকছে ।
নেহা জয় নিশাত কে সামলানোর চেষ্টা করছে কিন্ত কেউ নিশাতকে সামলাতে পারছে না ।
সালেহা বেগম ঘরে ঢুকে নিশাতের এমন পাগলামি দেখে নিশাতের গালে চর বসিয়ে দেয়।নিশাত গালে হাত দিয়ে কান্না করছে। সালেহা বেগম চিৎকার করে বলে
_” নেই! আরহান আর বেচে নেই। মারা গেছে।নিজের ছেলেকে হারিয়েছি এখন কি ছেলের শেষ অংশ কে হারাবো। আমার ছেলেকে তো বাঁচাতে পারলি না বলেছিলাম ছেলের খেয়াল রাখতে পারলি না তো।এখন আরহানের শেষ চিন্হ কে তো বাচিয়ে রাখ ।
নিশাত বিড়বিড় করে আরহানের নাম নিচ্ছিল।সালেহা বেগম এর শেষের কথায় নিশাত সালেহা বেগম দিকে তাকায়।
সালেহা বেগম নিশাতের চোখে ভাষা বুঝতে পেরে বলে
_” হা তুই মা হতে যাচ্ছিস।
আপনমনে নিশাতের হাত নিজের পেটে চলে যায়।চোখের পানির যেনো বাঁধ মানছে না ।চিৎকার করে বলে
_” ওহ আম্মু আমাকে আমার আরহান কে এনে দাও।ওকে ছাড়া আমি শূন্য। ও জানতে পারলে অনেক খুশি হবে।ওকে এনে দাও না প্লিজ এনে দাও।আমার সন্তান কি নিজের বাবার ভালোবাসা টুকু পাবে না কেনো হলো এমন? না না আমার আরহানের কিছু হতে পারে না। ও আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না
নিশাত কান্না করতে করতে মাটিতে বসে পড়ে।সালেহা বেগম শাড়িতে মুখ গুজে চলে যায়। দরজার আড়াল থেকে আমজাদ হাবিব নিজের চোখের পানি ফেলছে ।
নিজের সন্তানদের জন্য দিন না খেটে তাদের সব সুখ দিয়েছে কিন্ত আজ এই টাকা তার সন্তান কে ফিরিয়ে দিতে পারলো। নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে।এত সব যার জন্য করলো সে আজ নেই
নিশাত কে কেউ সামলাতে পারছে না।নিশাত জোড়ে জোড়ে কান্না করছে হটাৎ কি মনে করে বলে
_” ইসু কোথায় ? ও তো একবার ও আমার কাছে আসলো না।ঠিক আছে তো? শরীর কি অনেক দুর্বল?
জয়ের আর নেহার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে ।দুইজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে ।নেহা কিছু বলতে গেলে জয় বারণ করে
_” কিহলো বল ইসু কোথায়? চোখ দিয়ে কি কথা বলছিস ? আমাকে বলবি না ওকে ফাইন আমি নিজে যাচ্ছি । ঘরে আছে তো
নিশাত নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা ঈশার রুমে যায় ।গিয়ে দেখে ফাঁকা কেউ নেই ।
নিশাত ঈশার নাম ধরে ধরে ডাকছে ।নেহা বুঝাচ্ছে
_” নিশু প্লীজ শান্ত হও।এভাবে এত অস্থির হস না।তোর শরীরের আর এক জন বড়ো হচ্ছে ।তার কথা একটু ভাব
_” আগে বল আমার ইসু কোথায় ?
_” ঈশা আছে এখানেই আছে
_” না নেই কোথাও পাচ্ছি না কেনো?
নিশাত জয়ের কাছে যায়
_” তুমি তো আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড।বলো না ইসু কোথাও? ওকে পাচ্ছি না কেনো?
জয়ের পায়ের কাছে বসে কান্না করে নিশাত।জয় চোখ বন্ধ করে বলে
_” ঈশা আর নেই ।সেদিন আরহানের খবর শুনে আমরা সবাই ছুটে গিয়েছিলাম গিয়ে দেখি তুমি সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছো। আরহান কে অনেক খুজাখুজির পরও পাইনি।ফিরে এসে শুনি ঈশা যেই কেবিনে ছিল সেই কেবিন সহ দুইটা কেবিনে আগুন লেগে সবাই মারা গেছে। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে
নিশাত যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।চোখের পানি বন্ধ হয়ে গেছে।চুপ করে সামনে তাকিয়ে আছে ।নেহা নিশাতকে ঝাঁকাচ্ছে কিন্ত নিশাতের কোনো হেলদোল নেই।
হটাৎ নিশাত উঠে নিজের ঘরে যায়।জয় আর নেহা অবাক হয়ে দেখছে । নিশাত নিজের ঘরে গিয়ে টেবিলে আরহানের একটা ছবি হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে ।
নেহা পাশে দাড়াতেই নিশাত নেহার শরীরে ঢুলে পড়ে।
নিশাত এর সেন্স ফিরলে নিঃশব্দে কান্না করতে করতে আবার সেন্স হারাতো।নিশাতের শরীর অনেক ভেঙ্গে পড়ে।
সালেহা বেগম ডক্টরের সাথে কথা বললে।ডক্টর বলে এভাবে চলতে থাকলে কাউকে বাঁচানো যাবে না।বাচ্চাটাকে নষ্ট করলে হয়তো নিশাত কে বাঁচানো যাবে।
সালেহা বেগম ঠিক করে বাচ্চা টাকে নষ্ট করে নিশাত কে নতুন করে বিয়ে দিবে কিন্ত নিশাত রাজি না।অনেক বুঝানোর পর রাজি হয়।নিশাত নিজেও নিজের বোনের খুনীর বাচ্চা রাখতে চায়।নিশাত মনে মনে আরহানকে সব কিছুর জন্য দায়ী করছে।
নিশাত কে হসপিটালে নিয়ে যায় অপারেশন এর আগে নিশাত কি মনে করে অপারেশন করতে চায় না।জয় নিশাতকে নিয়ে আসে আর সবাই কে বলে যেনো নিশাতের বাচ্চা মারার কথা কেউ না ভাবে।
সেদিনের পর থেকে জয় নিশাতের দেখাশুনা করে।এভাবে দিন চলতে থাকে নিশাত ঠিক করে নেয় বাচ্চারা কে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবে কিন্ত নিশাতের কাকা কাকী এসে নিশাতকে অনেক বুঝায় তাদের সাথে যেতে নতুন করে সব শুরু করতে ।
অনেক বুঝানোর পরও নিশাত রাজি হয় না কেনো যেনো নিশাত আরহান কে অনুভব করে। আরহান যেনো ওর আশে পাশে আছে ।রাতে ঘুমাতে পারে না নিশাত ।
সবার জোরাজুরিতে নিশাত রাজি হয় বিয়েতে।
বিয়ের দিন সকালে নিশাত ঠিক করে নেয় সেখানে গিয়ে পালিয়ে যাবে।অন্য কাউকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে কিছুতেই মানবে না।
বিয়ে সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
বর্তমান
অতীতের কথা ভেবে চোখের পানি মুছতেই কারোর চিৎকারে কেপে উঠে।
আরহান চিৎকার করে বলে
_” ওখানেই কি দাড়িয়ে থাকবি? ইচ্ছা করছে এক্ষুনি মেরে ফেলেতে শুধু আমার বেবির জন্য কিছু বলতে পারছি না।৫মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে না আসলে আজ ভয়ানক কিছু হয়ে যাবে
আরহানের কথা যেনো নিশাতের কাছে বিষের মত লাগছে।নিশাত রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই
আরহান বলে
_” আমাকে কি রেডি করিয়ে দিতে হবে ?(চোখ লাল করে)
নিশাত রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ফ্রেশ হতে যায়।
ফ্রেশ হয়ে নিশাত বসে আছে।আরহান একবার ডেকে গেছে কিন্ত নিশাতের কোনো হেলদোল নেই।
আরহান অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ডাকতে এসে নিশাত কে দেখে মাথা গরম হয়ে যায়।
নিশাত অন্তঃসত্বা না হলে এতক্ষণে নিশাতকে চর দিতে একবারও ভাবতো না। আরহান নিজের রাগ কন্ট্রোল করে নিশাতের কাছে গিয়ে বলে
_” চলো খেতে চলো
নিশাত কোনো কথা বলে না।আরহান রেগে ফুলদানি আছার মারে ।নিশাত কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
কিছু না বলে ঘাট থেকে নেমে বাইরে যায়। আরহান নিজেকে ঠিক করে নিচে এসে দেখে নিশাত নেই ।
আরহান ভাবছে হয়তো ভয়ে খাবার খেতে আসবে কিন্ত আরহান তো ভুলে গেছে নিশাত is নিশাত।
আরহান ভালো করে খুঁজে দেখে নিশাত অন্য একটা রুমে দরজা লাগিয়ে বসে আছে ।
চলবে
(যেইভাবে অতীত শেষ করতে চাইছিলাম সেই ভাবে পারলাম না।এত চাপের মধ্যে গুছিয়ে লিখে পারিনি ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)