আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_২৫

আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_২৫
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||

আরহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে

_” এই মেয়ে কখনো সোজা হবে না।এত ঘাড় তেড়া

আরহান দরজার কাছে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে।নিশাতের কোনো সাড়া না পেয়ে বলে

_” নিশা আমি জানি তুমি এখানে আছো।দরজা খুলো নাহলে আজ তোমার কপালে অনেক দুঃখ আছে। নিশা ওপেন দা ডর!

আরহান আরো কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে সরে আছে। একটু পিছিয়ে জোড়ে ধাক্কা দেওয়ার আগে নিশাত দরজা খুলে ।আরহান টাল সামলাতে না পেরে নিশাতকে নিয়ে ফ্লোরে পড়ে যায়।

এভাবে পড়াতে নিশাত অনেকটা ব্যাথা পায়।আরহান সে তো আরামে নিশাতের উপর আছে।নিশাত ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলে আরহানের হুস আসে।নিজে উঠে নিশাত কে উঠতে বলে।নিশাত কোনো মতে উঠে দাড়িয়ে আরহানের দিকে তাকায়।

চোখে পানি চিকচিক করছে ব্যাথাটা জড়সড় লেগেছে।আরহান বাকা হেসে বলে

_” ভালোই ভালোই খাবারটা খেলে এই অবস্থা হতো না কিন্ত না নিজের জেদ তো দেখাতে হবে।এত জেদ কই থেকে আসে

নিশাত ব্যাথার জন্য কান্না করার মতো অবস্থা তবুও দাতেদাত চেপে বলে

_” আমার জেদ থাকুক আর না থাকুক সেটা তোমাকে দেখতে হবে না।নিজের লিমিটে থাকো।ওভাবে দৌড়ে আসার কি দরকার নিজেকে কি ফিল্মের হিরো মনে করো।

_” ফিল্মের হিরো মনে করার দরকার নেই ।আমি এমনি ফিল্মের হিরোর মত দেখতে

ভাব নিয়ে কথাটা বলে। নিশাত একটু এগিয়ে গিয়ে পানির গ্লাস এনে আরহানের মুখে ছুড়ে মেরে বলে

_” এখন একদম ঠিক লাগছে।লাইক এ জোকার

নিশাত পাশ কেটে চলে যেতে গেলে আরহান হাত ধরে দেয়ালে চেপে ধরে। নিশাত ছাড়ার জন্য চেষ্টা করছে কিন্ত আরহান চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে।

_” খুব সাহস! অনেক সাহস দিয়ে ফেলেছি তাই না? নো প্রব্লেম আই উইল হ্যান্ডেল ইট!

_” সাহস কেউ দেয় না সেটা ভিতর থেকে আসে।আর আমার যে বরাবরই সাহস বেশি সেটা তো তোমার অজানা নয়।এখন ছাড়ো আমাকে।লাগছে আমার

নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে নিশাত।আরহান আরো জোড়ে চেপে।নিশাতের খুব কান্না পাচ্ছে একে তো মাজায় ব্যাথা পেয়েছে তার উপর এভাবে হাত ধরাতে খুব লাগছে।

_” লাগছে তাইনা! খুব লাগছে।লাগুক আমার ও লেগেছিল যখন তুমি আমাদের ভালোবাসার চিন্হ কে মেরে ফেলতে চেয়েছিলে।সেদিন যদি জয় একটু দেরি করে যেতো তাহলে কত কিছু হয়ে যেতো।

নিশাত অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো।আরহানের কথায় নিশাত আরহানের দিকে তাকায়।

আরহান চিৎকার করে বলে

_” হা জয় এতদিনের প্রতিটা কথা আমাকে বলেছে।সব জানি আমি।তুমি এতটা নিচে নেমে গিয়েছ যে নিজের সন্তান কে মেরে ফেলতে একবারও ভাবলে না ছি।রাগটা আমার উপর তাই বলে আমার সন্তান কে

আরহান নিশাতকে ধাক্কা দিয়ে অন্য দিকে ফিরে যায় । নিশাত নিরবে কান্না করছে

_” তুমি এতদিনে আমাকে চিনলে না।সবাই তোমাকে যা বুঝিয়েছে তুমি তাই বুঝে নিজের মনের মত কাহিনী বানিয়ে এত সব করলে।তুমি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভালোই করছিলে মরে গেলে ভালো হতো একলিস্ট তোমার ঘৃনা নিয়ে তো বাঁচতে হতো না।এত ঘৃনা আমার প্রতি।একটু বিশ্বাস নেই নিজের ভালোবাসার প্রতি

আরহান কথাটা বলে চলে যায়।নিশাত এবার চিৎকার করে বলে

_” কাকে বিশ্বাস করবো তোমাকে।যে মেয়েদের মন নিয়ে খেলতে পছন্দ করে।আর মারার কথা বলছ সেদিন আমি ধাক্কা দিয়েছিলাম কিন্ত তোমার হাত ধরেছিলাম তুমি ছেড়ে দিয়েছিলে। আমি আমার বাচ্চাকে মারতে চাইনি আমি নিজে বুঝতে পারছিলাম না

নিশাত পিছনে তাকিয়ে দেখে আরহান নেই। ওখানে বসে কান্না করতে থাকে।

আরহানের একটা ফোন আসাতে আরহান বাইরে যায়। কথা বলা শেষ করে এসে দেখে নিশাত ঐভাবে বসে কান্না করছে আর কিসব বিড়বিড় করে বলছে ।

আরহানের খুব ইচ্ছা করছে নিশাতকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি মুছে দিতে কিন্ত মাঝে মাঝে কাছে আসার জন্য একটু দূরে যেতে হয়।

আরহান ওখানেই দাড়িয়ে ধমক দিয়ে বলে

_” এখানে বসে নাটক না করে খেতে চলো।আমার বাচ্চা কি না খেয়ে থাকবে

নিশাত চোখ মুখ মুছে উঠে দাঁড়াতেই আরহান নিশাতকে কলে তুলে নেয়। নিশাত চোখ দুটো বড়বড় করে তাকিয়ে আছে।

আরহানের কোনো হেলদোল নেই সে সামনের দিকে হাটা ধরছে। নিশাত হা করে দেখছে আগের থেকে কালো হয়ে গেছে।পারফেক্ট সব কিছু চাই যার সে আজ এত অগোছালো। চুল গুলো উস্কখুস্ক হয়ে আছে।মুখে দাড়ি হয়েছে আগের থেকে অনেক গাঢ়।

আরহান নিশাতকে টেবিলে বসিয়ে মুখে খাবার পুড়ে দেয়।নিশাত হা করে আছে।আরহান চোখ রাঙিয়ে খেতে বলতে নিশাত চুপচাপ নিজে হাতে খেয়ে নেয়।

নিশাতের খাওয়া শেষ হলে আরহান ব্যাথার স্প্রে করে ।রেস্ট নিতে বলে চলে যায়।

আরহান একটা বাড়িতে সামনে এসে গাড়ি থামাতেই দুর থেকে জয়কে দেখা যাচ্ছে । আরহান মুচকি হেসে ভিতর গিয়ে বসে ।

জয় চিন্তিত হয়ে বলে

_”কেউ দেখেনি তো তোকে ?

আরহান মুখের মাস্ক খুলতে খুলতে বলে

_” না মাস্ক পড়া ছিল তো কেউ দেখতে পারেনি।আর দেখলেও কি

_” হুম বুঝলাম নিশাতের কি খবর?রেগে উল্টা পাল্টা বলিস নি তো? সব বুঝিয়ে বলেছিস

আরহান বাকা হেসে বলে

_” নিশাত ঠান্ডা মাথায় শুনার মত মেয়ে?ওকে ভালো ভাবে কোনো কিছু বলা যায়। ও যা করেছে তার শাস্তি ওকে পেতে হবে

_” দেখ তুই নিজে ভেবে দেখ নিশাতের তখন মাথা ঠিক ছিল না সবাই যা বলছে তাই বুঝে

_” চুপ তুই একদম কথা বলবি না। ও আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে পারতো না যে ঈশার সাথে কি হইছে।ওর বোকামির জন্য আমাকে ঈশা আজ আমাদের মধ্যে নেই।সব কিছুর জন্য নিশা দায়ী।আমাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ দেয়নি।আমার ভালোবাসা কে খুন করেছে

_” দেখ তুই ঠান্ডা মাথায় কাজ কর নিশাত

_” আমি ঠান্ডা মাথায় কাজ করছি ওকে শাস্তি পেতেই হবে।সেদিন যদি আমি ওর হাত না ছাড়তাম তাহলে দুইজনে এক সাথে মারা যেতাম।ওর জন্য সব করেছি আর ও আমাকে এখনো ভুল বুঝছে।থাক ওর মতো ওকে আমার ভালোবাসা বুঝানোর কোনো ইচ্ছা নেই।ওর জীবন বাঁচাতে প্ল্যান করে আবার ওকে বিয়ে করে এখানে আনছি।

_” আচ্ছা ঠান্ডা হো এখন বল তোর শরীর কেমন আছে ।সেদিন একটুর জন্য তোকে ফিরে পেয়েছি।সেদিন তুই ব্রিজের উপর থেকে পড়ার কথা শুনে আমরা ছুটে যাই।সবাই নিশাতকে নিয়ে হসপিটালে যায় তখন আমি লোক লাগিয়ে তোকে খুজে বের করি।একটু দেরি হলে কি হতো আল্লাহ জানে।তোর সেন্স ফেরার পর তোর কথা মত কাউকে বলিনি তোর বাচার কথা।তোর সুস্থ হওয়া পর্যন্ত নিশাতের খেয়াল রাখছিলাম।

আরহান সোফা ছেড়ে জয়কে জড়িয়ে ধরে বলে

_” তুই আমার নিজের ভাইয়ের মতো কাজ করলি। তুই না থাকলে আজ হয়তো আমি এখানে থাকতে পারতাম না আর না আমার স্ত্রী সন্তান থাকতো।খুব তাড়াতাড়ি আসল অপরাধীকে শাস্তি দিতে হবে। আরহান আবরার কে খুন করার চেষ্টা করেছে এত সহজে তো ছেড়ে দেবো না।তাদের দ্বিগুণ কষ্ট ফেরত দেবো সে যেই হোক না কেনো

আরহানের চোখ মুখ লাল হয়ে যায় মুহুর্তেই।জয় চুপ করে বসে আছে হটাৎ জয়ের ফোন বেজে উঠে

জয় ধরতেই ওপাশ থেকে কথা শুনে জয় আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে

_” সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে

_” তাহলে কার জন্য অপেক্ষা করছিস চল এখুনি

জয় কে আর কিছু বলতে না দিয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায় পিছন পিছন জয় ও যায়।

নিশাত ব্যাথার জন্য উঠতে পারছে না ।অনেকটা ব্যাথা পেয়েছে ।এই বাড়িতে কেউ নেই যাকে নিশাত বলবে ।যাওয়ার সময় আরহান দরজা আটকিয়ে গেছে ।

নিশাত পানি খাওয়ার জন্য পাশে হাত দিতে দেখে হট ওয়াটার ব্যাগ রাখা ।নিশাত সেটা হাতে নিয়ে মাজায় দেয়। এখন একটু ভালো লাগছে

নিশাত শুয়ে শুয়ে ঘরটার দিকে চোখ বুলাচ্ছে

_” আচ্ছা ওই বাড়িতে না গিয়ে এখানে আসলো কেনো?আব্বু আম্মু তো আমাকে একবার বলল না আরহান বেচে আছে নাকি ওরা জানেনা।এই সব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে আমাকে ?

নিশাত এইসব ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে।কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পরে।

আরহান সিগারেট খাচ্ছে।অলরেডী এক প্যাকেট শেষ করে ফেলছে।পাশে জয় একের পর এক কাউকে ফোন করছে ।সিগারেট এর শেষ টান দিয়ে আরেকটা ধরানোর আগেই জয় বলে

_”আর কত খাবি? আমরা যতটা সহজ ভাবছিলাম তত সহজ না।আগে থেকে কেউ জানত সিসিটিভি চেক করা হবে তাই তো নষ্ট করে দিয়েছে।

আরহান চোখ লাল করে বলে

_” যতই চালাক হোক না কেনো আমার হাত থেকে নিস্তার নেই।i will kill them । আমার জীবনটা যারা নষ্ট করে দিয়েছে তাদের সবাইকে কঠিন থেকে কঠিন মৃত্যু দেবো

গাড়ি ড্রাইভ করে জয়কে ওর বাসায় পৌছে দিয়ে।আরহান নিজের বাসায় দিকে রওনা দেয়। রাস্তায় নিশাতের জন্য ওষুধ কিনে নেয় ।

বাসায় এসে আরহান রুমে গিয়ে দেখে নিশাত গুটি মেরে বসে শুয়ে আছে ।এসির পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে আরহান নিশাতের মাথার কাছে বসলো।

নিশাত এর চোখের কোণায় পানি জমে দাগ হয়ে আছে।আরহান আলতো করে ছুয়ে দেয়।চোখের দুই পাতায় চুমু খায়।

_” একটু যদি বিশ্বাস করতে তাহলে আজ গল্প এমন হতো না।তুমি তো আমাকে ভালোবেসেছিলে কেমন ভালোবাসা তোমার যে অল্পতেই ভেঙ্গে গেলো।আমি আর তোমার পিছন ঘুরবো না তবে তোমাকে মুক্তিও দেবো না।
আরহান

নিশাত পিটপিট করে চোখ খুলতেই আরহান সোজা হয়ে বসে পড়ে।গম্ভীর কণ্ঠে বলে

_”আমার বাচ্চা কে এতক্ষণ না খাইয়ে রাখছো কোন সাহসে? এই অধিকার তোমায় কে দিয়েছে

নিশাত এর ব্যাথা অনেকটা কমে গেছে।উঠে ওয়াশরুমে যায়।আরহান ধরতে গেলে নিশাত হাত দিয়ে বলে

_”কোনো খুনীর স্পর্শ আমার চাই না

আরহানের হাত মুঠ হয়ে যায়।নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে খাবার আনতে যায়।

নিশাত বেরিয়ে দেখে আরহান নেই।তোয়ালে ভালো করে জড়িয়ে আলমারির কাছে যেতেই আরহান দরজা খুলে রুমে ঢুকে পড়ে।

নিশাত ড্রেস নিয়ে তাকাতেই আরহান কে দেখে করে চিৎকার দেয় ।

_” অসভ্য লোক একটা

কথাটা বলে নিশাত বাথরুমে চলে যায়।আরহান ওখানেই দাড়িয়ে হাসছে ।

নিশাত বাথরুমে গিয়ে আরহানকে বকতে লাগলো।

নিশাত রেডী হয়ে বের হয়ে আরহান কে বলে

_” দরজা লক করে আশা যায় না।অসভ্য লোক একটা যখন তখন রুমে চলে আসবে

_”দোষ তো তোমার দরজা বন্ধ করে ঢুকতে পারনি? আর এমন করছো যেনো প্রথমবার

আরহান মাথা চুলকিয়ে কথা বলে।নিশাত বোতল ফেলে মারে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই মারছে।

আরহান বাচার জন্য বালিশ ধরে রাখছে।নিশাত মারতে মারতে আরহানের কাছে যেতে গেলে পা বেঁধে পড়ে যেতে নিলে

চলবে

(গল্প লিখার জন্য আমার সময় দরকার।কালকে হয়তো দিতে পারবো না।বিরক্তি লাগছে আমার সব কিছু ।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আস্তে আস্তে সব কিছু কিলিয়ার করে দেবো একটু অপেক্ষা করুন )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here