আড়ালে_ভালোবাসি পার্ট_২৮
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||||
আকাশের প্রাণে চেয়ে জীবনের সব হিসাব মিলাতে ব্যাস্ত নিশাত তখনই পিছন কেউ কাধে হাত দেয়।
নিশাত পিছনে তাকিয়ে বলে
_”তাহলে আসছো আমি তো ভাবছি ভয় পেয়ে গেছো?
জয় মুচকি হেসে বলে
_”কিসের ভয়?তুমি আমার বেস্টফ্রেন্ড+ভাবী।ভয় পাবো কেনো?
_”হুম বুঝলাম।তোমাকে ডাকার কারণ কি জানো তো?
_”কেনো আবার শরীর ভালো না তাই তো?
নিশাত ভেংচি কেটে বলে
_”জি না।তুমি আরহানের সব থেকে আপনজন।আর আমার সব প্রশ্নের উত্তর একমাত্র তুমি দিতে পারবে।কোনো ভনিতা না করে সোজা কথার সোজা উত্তর দিলে খুশি হবো।
জয় হাসার চেষ্টা করে বলে
_”আমি কিছু জানিনা। জানলে তো বলবো।
_”দেখো এখন তুমি আমার দেবর হও।আর দেবরকে মারতে হাত কাপবে না।
_”আসলে আমার না একটা দরকারি কাজ পড়ে গেছে।আমি আসি কেমন
জয় চলে যেতে গেলে নিশাত বলে
_”ওহ বুঝছি তুমি চাও না আমি আর আরহান ভালো থাকি।আমাদের মধ্যে সব ভুল বুঝাবুঝি শেষ হোক।
জয় এগিয়ে এসে বলে
_”না আমি চাই আরহান ভালো থাকুক।আমার আব্বু আম্মুর পর আমি আরহান কে ভালোবাসি।ছেলেটা অনেক কষ্ট পেয়েছে তুমি প্লীজ ওকে আর কষ্ট দিও না।আমি তোমার কাছে হাত জোড় করে বলছি
_”দেবো না প্রমিজ দেবো না।কিন্ত আমি জানতে চাই।আরহানের কি হয়েছিল
জয় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_”সেদিন তুমি সেন্স হারানোর পর ওখানের লোক তোমার ফোনে দিয়ে আমাদের কাছে ফোন দেয়।আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখি তুমি সেন্স হারিয়ে আছো আর ওখানের লোকজন বলে আরহান পানিতে পড়ে গেছে।আমি দেরি না করে তোমাকে হসপিটালে পাঠিয়ে লোক দিয়ে আরহান কে খুঁজতে থাকি।অনেকসময় পর পেয়ে যাই ওকে হসপিটালে নিয়ে জানতে পারি ওর গুলি লেগেছে।ডান হাতে লাগার ফলে বেচে গেছে।আরহানের সেন্স ফিরার পর আমি বাড়ির সবাইকে বলতে গিয়ে জানতে পারি ঈশা মারা গেছে আর আরহান বলেছে ওকে কেউ মারার চেষ্টা করছে তাই ওর বাচার কথা যেনো কাউকে না বলি।তোমাকে বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু তুমি শুনোনি।তখন থেকে আরহান ওর বাবার ফ্ল্যাটে থাকে এই বাসার কথা কেউ জানে না।আমি আর আরহান মিলে প্রুফ খুজার চেষ্টা করছি।ঈশার খুনিকে আরহান ধরার জন্য গেছে আশা করি পেয়ে যাবো।জানিনা ওখানে কি হবে আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার পাশে থাকার জন্য আমায় যেতে দেয়নি।তুমি আরহান কে যেমন ভাবছো আরহান তেমন না ওর লাইফের ব্যাপারে তুমি কিছুই জানো না।আরহান যতই খারাপ হয়েছে শুধু পরিস্থিতির জন্য ওর জায়গায় যে কেউ থাকলে সুইসাইড করতো।শুধু তোমার জন্য ও ভালো হয়েছিল তোমাকে ভালোবেসে নিজের সব কিছু বদলে ফেলেছিল কিন্ত
নিশাত ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ।জয় আবার থেমে বলে
_”ওকে এখান থেকে দূরে নিয়ে যাও।জানিনা কে ওকে মারতে চেষ্টা করছে আবারও চেষ্টা করবে কি না জানিনা।ভালোবাসার অনেক জোড় তুমি চাইলে ওকে ভালোবাসা দিয়ে ভালো রাখতে পারবে।রাখবে তো ?
নিশাত মুচকি হেসে বলে
_”প্রমিজ করলাম ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।কফি খাবে
জয় মুচকি হেসে বলে
_”আমি বানাবো?
নিশাত দুষ্টুমি করে বলে
_”খাওয়া যাবে তো?
_”খেয়েই দেখো। আমি আসছি
নিশাত চোখের পানি মুছে ফেলে।কিছু অনুভূতি সবার আড়ালে প্রকাশ করতে ভালো লাগে।আরহান যাই হোক নিশাত কে খুব ভালোবাসে সেটা নিশাত খুব ভালো করে জেনে গেছে।
যে ছেলে নিজের সব কিছু ছেড়ে ভালোবাসার মানুষকে সাথে নিয়ে চলতে চায় সে কখনো কাউকে ঠকাতে পারে না।
_”আমি খুব বড়ো ভুল করেছি।সেই ভুলের শাস্তি কি করে পাবো তুমি তো দূরে গিয়ে বসে আছো।এত অভিমান একটু ভাঙ্গানোর সুযোগ দিলে না।
পেটে এক হাত রেখে নিশাত বিড়বিড় করে বলে
_”দেখছো তোমার আব্বু মাম্মামের উপর কত অভিমান করে আছে।আমাকে তোমাকে একা ফেলে চলে গেলো এটা কি ঠিক তুমি বলো!আসুক তারপর তুমি আর আমি মিলে ঢিসুম ঢিসুম করবো কেমন!
পিছন থেকে জয় কফি হাতে বলে
_”কার সাথে কথা বলছো?এখানে তো কেউ নেই।
নিশাত মুচকি হেসে বলে
_”কারোর দরকার নেই।আমার সোনামনি থাকলে চলবে।নালিশ করছিলাম আমার সোনামনিকে।কত বড় সাহস আমাদের একা রেখে চলে যায়।
জয় ঘাড় ঝাকিয়ে বলে
_”দেখো বাচ্চা ওর চাচ্চুর মত হবে।শান্ত, ভদ্র, কিউটের ডিব্বা!
নিশাত ভেংচি কেটে বলে
_”আহারে কত কিউট!দুই ভাই ভূতের মত দেখতে।
_”ওহ আচ্ছা তাই!এই নাও কফি খেয়ে রেডী হবে।আজ তোমাকে ডক্টরের কাছে দেখানোর কথা। আরহান বলে গিয়েছে।
নিশাত মন খারাপ করে বলে
_”কেনো?সে থাকলে কি খুব ক্ষতি হতো?সবাই এই সময় নিজের স্বামীকে কাছে চায় আর উনি অভিমান করে দূরে আছে।
_”চলে আসবে।দুই একদিনের মধ্যে।
নিশাত মন খারাপ করে পুরো কফিটা শেষ করলো। জয় আর কিছু বলল না।
জয় গাড়িতে বসে নিশাতের অপেক্ষা করছে।নিশাত বের হতে জয় একবার তাকিয়ে ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয়। নিশাত গাড়িতে বসতে বসতে বলে
_”এসি অন করতে হবে না প্রাকৃতিক বাতাস ভালো।তাড়াতাড়ি চলো।একটু পর জেম লেগে যাবে।
জয় গাড়ি চালানোর আগে একবার ফোন চেক করে দেখে একটা মেসেজ আসছে।
মেসেজে লিখা..
_”গাড়ি সাবধানে চালাস আর এসি অন করতে হবে না ওর সমস্যা হয়।ডক্টর দেখিয়ে একটা নদীর পাড় নিয়ে যাস মন ভালো হয়ে যাবে।নিস পাখি নদীর পাড় খুব পছন্দ করে।
জয় মেসেজটা দেখে মুচকি হাসে।নিশাতের চোখ এড়ালো না।নিশাত আড় চোখে তাকিয়ে বলে
_”হাসছো কেনো?আমাকে কি খারাপ লাগছে?
জয় মাথা ডানে বামে নাড়িয়ে বলে
_”একদম না আমার ভাবী+বেস্ট ফ্রেন্ড কে কি খারাপ লাগতে পারে।খুব সুন্দর লাগছে।আরহান থাকলে পাগল হয়ে যেতো।
নিশাত কিছু না বলে জানলার দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে।এই সময় আরহানকে খুব মিস করছে।
_”একটা বার কি আমাকে বলে যাওয়া যেত না?এত অভিমান!ভাঙ্গানোর ও সময় দিলেন না।(মনে মনে)
জয় একবার নিশাত কে দেখে গাড়ি চালানোর মনোযোগ দিলো।
এদিকে
আরহান মাত্র হোটেলে এসে পৌঁছাল।ফোনের টোন বেজে উঠায় ফোন হাতে নিয়ে দেখে নিশাতের ছবি।আজকে নিশাতের দিকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে।
আরহান আনমনে বলে
_”সবাই সত্যি বলে বিয়ের হবার পর আর বাচ্চা পেটে আসার পর মেয়েদের সুন্দর্য এমনি বেড়ে যায়।এই পিক দেখলে তো আমি থাকতে পারবো না।কতোটা কিউট লাগছে।সামনে থাকলে তো পাগল হয়ে যেতাম।
পাশ থেকে হোটেল বয় বলে
_”কিছু বললেন স্যার?
আরহান নিজেকে স্বাভাবিক করে শান্ত গলায় বলে
_”না কিছু না।আমার রুমটা দেখিয়ে দিলে ভালো হয় ।
_”জি স্যার
হোটেল বয় আরহান কে রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়। আরহান বেড়ে শুয়ে ফোন বের করে
_”এখনো খোঁজ নিতে হবে নাহলে অন্য কোথাও যেতে পারে।
আরহান কাউকে ফোন দেয়।
_”হুম কোথায় আছে এখন?
…..
_”আচ্ছা নজর রাখো আমি আসছি
আরহান ফোন কেটে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে
_”এখন আবার যেতে হবে।উফফ বিরক্তিকর!
একটু ফ্রেশ হয়ে আরহান বেরিয়ে যায়।
নিশাত কে ডক্টর দেখিয়ে বের হতে নিশাত বলে
_”আচ্ছা আরহান কি ফোন দেয়নি?পৌঁছে গিয়েছিল কি না একবার শুনতে পারলে ভালো হতো।
আমতা আমতা করে বলে।জয় মুচকি হেসে বলে
_”কথা বলবে?
নিশাত মাথা নাড়ায়। জয় ফোন দিতেই নিশাত অস্থির হয়ে কানে ধরে।
রিং হচ্ছে কিন্ত ধরছে না।আবার ফোন দিতেই আরহান ধরে বলে
_”জয় তোর সাথে আমি পরে কথা বলছি।ব্যাস্ত আছি রাখ
নিশাত কে কিছু বলতে না দিয়ে কেটে দেয়। নিশাত মন খারাপ করে ফোন দিয়ে দেয়।জয় বলে
_”কিহলো?
_”ব্যাস্ত আছে
নিশাত এর চোখ ছলছল করছে ।জয় বুঝতে পেরে বলে।
_”হয়তো ব্যাস্ত আছে।ফ্রী হলে ফোন করবে।চলো তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই
নিশাত চুপ করে হাঁটতে থাকে। জয় ও যায় ।
রাতে নিশাত শুয়ে আছে সারাদিন আরহান একবারও নিশাত কে ফোন করলো না।জয়ের সাথে কথা বলছে নিশাত ফোন ধরতেই কেটে দেয়।সেই কথা মনে উঠতেই নিশাতের চোখ ভিজে আসছে।
_”এত কি অভিমান যে একটু কথা বলা যেত না।ফোন দিলেই ব্যাস্ত ব্যাস্ত।আমার কথা কি একটুও মনে পড়ে না।কি নিষ্ঠুর!তোমার এই ইগনোর আমি মেনে নিতে পারছি না।
নিশাত না পারছে হাত পা ছুরে কান্না করতে।শিরীন রুমে এসে দেখে নিশাত নিজের সাথে বকবক করছে
শিরীন দুধ টেবিলে রেখে বলে
_”আফা আপনে একলা একলা কি কন?
নিশাত চুপ করে থাকে।শিরীন বলে
_”আফা স্যার ফোন করছিলো আপনি ঠিক মত খাচ্ছেন না সেটা আমি বলে দিয়েছি।
নিশাত এখন সোজা হয়ে বলে
_”আরহান ফোন করছিলো?কখন?আমাকে তো ফোন করেনি?
_”ল্যান্ড লাইনে ফোন করছিলো।বলছে ঠিক মত খেতে নাহলে বাড়ি এসে মাথায় তুলে আছার মারবে
_”তোকে বলছে তুই খা।আমাকে যেনো কিছু বলবি না।একবার আমার সাথে কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলো না। ধুর
_”আফা দুধ খেয়ে নেন।
নিশাত তেড়ে এসে বলে
_”তুই খা।নিয়ে যা এখান থেকে।নাহলে তোকে আর এটা কে এক সাথে বাইরে ফেলে দেবো
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে নিশাত কথাগুলো বলে।শিরীন বাইরে চলে যায়।
একটু পর এসে বলে
_”আফা স্যার আপনার লগে কথা বলবে।
নিশাত বিছানা থেকে নেমে বলে
_”দে
ফোন কানে ধরতেই আরহানের ঝাড়ি
_”কি সমস্যা কি তোমার?খাচ্ছো না কেনো?তোমাকে বলেছি না ঠিক মত খাবে।আমাকে আসতে হলে তোমার কপালে দুঃখ আছে।
নিশাত এবার কান্না করে বলে
_”দুঃখ তো এমনি আছেই।আপনি এমন কেনো হা?সবার সাথে কথা বলছেন আমার সাথে বললে কি হয়?নাকি এগো টে লাগছে।এত খারাপ কেনো আপনি? এই নাকি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।আসলে সব আপনার ঢং।সবার সামনে দেখান আমাকে ভালোবাসেন কিন্ত আসলে সব মিথ্যে।অসহ্য লোক।বাজে লোক।আমাকে একা রেখে গেছে।এখন আবার খোজ খবর ও নেয় না।আমাকে তো একবার এক্সপ্লেইন করার সুযোগ দিবেন।আরে সব সম্পর্কে তো ঝগড়া হয় তাই বলে কি দূরে যেতে হবে।এই সত্যি বলেন তো ওখানে কে আছে?আপনি কার সাথে লোটরপটর করতে গেছেন হুম?
একদমে কথাগুলো বলে ফেলে নিশাত।আরহান বড়ো একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে
_”হয়ে গেছে?নাকি এখনো বাকি আছে?হয়ে গেলে এখন পানির গ্লাস নিয়ে পানি খাও। যাও।
নিশাত এবার আরো রেগে যায়
_”আপনার কাছে আমার কথার কোনো দাম নেই?বুঝছি অন্য কারোর চক্করে পড়ছেন তাই না ?
_”shut up। চুপচাপ দুধ খেয়ে নাও।কথার যেনো নড়চড় না হয়।আমার বেবির কিছু হলে কিন্ত তোমার খবর আছে ।
_”শুধু বেবি আর বেবি।ওকে ফাইন বেবি থাকবে কিন্ত আমি থাকবো না তখন বুঝবে কেমন লাগে।হাজার বার কান্না করলে ও আসবো না।
নিশাত কান্না করতে করতে কথাগুলো বলে।আরহান এবার রেগে বলে
_”আমার মাথা গরম না করে যা বলছি করো।আমি আসলে একটা মার ও মাটিতে পড়বে না।
নিশাত কিছু বলে না।আরহান আবার বলে
_”যাও দুধ খেয়ে নাও।আর লক্ষ্মী মেয়ের মতো ঘুমিয়ে পরো।
নিশাত ফোন কেটে দিতে দেখে শিরীন দুধ হাতে দাড়িয়ে আছে। নিশাত আরহান কে বকতে বকতে খেয়ে নেয়।
দুইদিন পর
নিশাত ছাদে দোলনায় বসে বসে আরহানের সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে করছে।এই দুইদিন একবারও আরহান নিশাতের সাথে কথা বলে নি।নিশাত কতবার ফোন দিয়েছে কিন্ত আরহান এড়িয়ে গেছে ।
দোলনায় বসে নিরবে চোখের পানি ফেলে তখনই নিচ থেকে শিরিনের ডাক পড়ে।নিশাত চোখের পানি মুছে সিড়ি দিয়ে নামে।
আনমনে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যেতে নিলে সিড়ি ধরে নিজেকে সামলে নেয়।বুকে হাত দিয়ে ভাবতে থাকে আর একটু হলে কি হতো হটাৎ গালে সজোরে কিছু পড়ায় চোখ খুলে নিশাত।
চলবে
(গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।বাস্তবের সাথে মিলাবেন না।কাল গল্প অল্প একটু লিখছি কিন্ত এত মাথা ব্যাথা করছিলো লিখার শক্তি পাইনি।সাথে জ্বর আসছিল।দুঃখিত কাল না দেওয়ার জন্য।সারাদিন অ্যাসাইনমেন্ট করে বিকালের দিকে মাথা ব্যাথা করে ।গল্পটা কেমন হইছে জানাবেন)